নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় - অর্থনৈতিক নির্দেশকসমূহ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃতি | NCTB BOOK

পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে জেনেছি। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, তবে শিল্প খাত ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো অপর্যাপ্ত ও অনুন্নত।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার মূল কারণ নিহিত রয়েছে আমাদের ইতিহাসের গভীরে। আমাদের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিকভাবে এত অনগ্রসর এবং সমস্যা জর্জরিত, তার দুই শতাব্দীকাল বিস্তৃত একটি পটভূমি রয়েছে। এই পটভূমি রচিত হয়েছে প্রায় দুইশ' বছরব্যাপী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এবং ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসন আমলে। 

১. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার পটভূমি : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার মূল কারণ প্রায় দুইশ' বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ। স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিহাসকে ৪টি পর্বে ভাগ করা যায়- প্রাচীন বাংলা, মুসলিম শাসনামল, ব্রিটিশ শাসনকাল ও পাকিস্তানি আমল। প্রাচীন বাংলায় কৃষি উৎপাদনে প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্য ছিল। শিল্প ক্ষেত্রে ধাতব শিল্প, কাঠ শিল্প ও বস্ত্র শিল্প বিশেষ প্রসার লাভ করেছিল। মুসলিম শাসনামল ছিল বাংলার স্বর্ণযুগ। এ সময়ে কৃষি, শিল্প, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করেছিল। বাংলার শিল্পজাত পণ্য বিশেষত কত্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ সমাদৃত ছিল। কিন্তু ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পরে বাংলায় ইংরেজদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী অব্যাহতভাবে এদেশে শোষণ ও লুণ্ঠন চালায়। কৃষিক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারি প্রথা ও বাধ্যতামূলক নীলচাষ প্রবর্তনের ফলে কৃষি ও কৃষকসমাজ বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুসলিম শাসনামলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ছিল। প্রতিবেশী দেশসমূহসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতেও বাংলাদেশের বিস্তৃত রপ্তানি বাণিজ্য ছিল। কৃষিপণ্যের সাথে বাংলাদেশ শিল্পপণ্যেরও বড় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিগণিত হতো। ইংরেজরা সকল ব্যবসায়-বাণিজ্য নিজেদের কুক্ষিগত করে। এ সময় ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটার ফলে যত্রযুগের শুরু হয়। ইংল্যান্ডের কত্রকলে কম খরচে উৎপাদিত কর দিয়ে বাংলাদেশের বাজার দখল করার ফলে বাংলাদেশের বিশ্বখ্যাত বস্ত্রশিল্প ও অন্যান্য শিল্প ধ্বংস হয়। এভাবে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের শিল্পজাত পণ্যের বাজারে পরিণত হয়। এই ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলাদেশ কৃষি ও শিল্পপণ্য রপ্তানির পরিবর্তে শুধু কাঁচামাল রপ্তানিকারক অর্থনৈতিক নির্দেশকসমূহ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃতি দেশে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লেনদেনের ভারসাম্য বাংলাদেশে অব্যাহত ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে সঞ্চয় ও মূলধন গঠনের প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হয়।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশে বিভক্ত হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় পাকিস্তানি শাসনামল। পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। বর্তমানের বাংলাদেশ ছিল তদানীন্তন পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৪৭-১৯৭১ সময়কালে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে নানাভাবে শোষণ করে। চাকরি, সম্পদ বন্টন, বাজেট বরাদ্দ, সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগ, বৈদেশিক সাহায্যের অংশ প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে চরম বঞ্চনার শিকার হতে হয়। প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাধান্য ছিল। এভাবে দুইশ' বছরেরও বেশি সময় ধরে (১৭৫৭-১৯৭১) ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ চলার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি ধ্বংস হয়ে যায়। কৃষি, শিল্প, ব্যবসায় বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে এক সময়কার বিশ্বে অগ্রণী দেশ বাংলাদেশ একটি পরনির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশ এই পরনির্ভর অর্থনীতির উত্তরাধিকার লাভ করে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করার জন্য ভিত্তি প্রস্তুতেই আমাদের দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। অধিকন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক শাসনও আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবদ্ধক ছিল।

২. কৃষিক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতাসমূহ : আমাদের কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে। কৃষিকাজে উন্নত বীজ, সার, সেচ সুবিধা এবং আধুনিক চাষ প্রণালি প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে কৃষিকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট জনগণের একটি অংশের কাছে কৃষি সুবিধাগুলো এখনও পৌঁছেনি। কৃষি উন্নয়নের জন্য সুলভ কৃষিঋণ একটি বড় উপাদান। কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে বহু কৃষকের কাছে কৃষিঋণ এখনও সুগত নয়। কৃষিক্ষেত্রে অগ্রসরতার সবচেয়ে বড় প্রতিকথক অবকাঠামোর দুর্বলতা। সেচ সুবিধা, বীজ ও সারের অপর্যাপ্ততা এবং যথাসময়ে প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, বিদ্যুতের অভাব, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে পরিবহনের উচ্চ বায়, পণ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাত করে রাখার সুবিধার অভাবে উৎপাদন কম হয়। আবার উৎপাদন পর্যায় থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্যের ফলে প্রকৃত উৎপাদকেরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে তারা উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং নতুন উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হয় না। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে এসব প্রতিবন্ধকতা অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে।

বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে একটি বড় বাধা। প্রতিবছরই এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বন্যা, খরা, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি কারণে দুর্যোগকবলিত হয়। এসব দুর্যোগ কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির কারণ।

৩. শিল্পক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতাসমূহ : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাত ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে শিল্প খাতের মৌলিক বা ভিত্তিমূলক শিল্প (Basic Industries) নেই বলে শিল্প খাত খুব দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারছে না। ভারী শিল্প, যেমন- লোহা ও ইস্পাত শিল্প, ভারী যানবাহন শিল্প, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিষয়ক শিল্প ইত্যাদি প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।

অর্থনৈতিক অবকাঠামোর দুর্বলতাও শিল্পক্ষেত্রে অগ্রগতির একটি বড় বাধা। প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের অভাব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাসের উচ্চমূল্য, এগুলো উৎপাদন ও সরবরাহে অপর্যাপ্ততা, রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদির অপ্রতুলতা ও অনুন্নত অবস্থা নতুন শিল্প স্থাপন ও উৎপাদন বৃদ্ধির বড় প্রতিবন্ধক।ব্যাংক ঋণ সুবিধা শিল্প খাত উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় ঋণসুবিধা অপ্রতুল। নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে, এমন ঋণ সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ কম। এছাড়া ঋণ ব্যবস্থাপনাও খুব সুষ্ঠু নয়। দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি তথা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শিল্প খাতের উন্নয়নের অনুকূল নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমন- হরতাল, বিক্ষোভ, অবরোধ ইত্যাদি শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শ্রমিকদের আয় কমে যায়। উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে বাজারে প্রব্যের চাহিদা কমে ও শিল্পমালিকদের আয় কমে যায়। ফলে নতুন উদ্যোগ ও বিনিয়োগ করার প্রবণতাও হ্রাস পায়।

৪. আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ : আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় অর্থনৈতিক অবকাঠামোর দুর্বলতা ও অপর্যাপ্ততার বিষয়টি। প্রথমে ধরা যাক যোগাযোগের দিকটি। যোগাযোগের মধ্যে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। ইলেকট্রনিক যোগাযোগ সুবিধা এখনো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নাগালের বাইরে রয়েছে। পরিবহন (আকাশ, স্থল ও জলপথে) সুবিধার দুর্বলতা ও অপর্যাপ্ততার কারণে যাতায়াত ও পণ্য উৎপাদন ও বিপণন কাঙ্ক্ষিত গতি পায় না। জ্বালানি ও শক্তির ক্ষেত্রে গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ উভয়ই ত্রুটিপূর্ণ ও অপর্যাপ্ত। ফলে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনৈতিক অবকাঠামোর একটি বড় উপাদান মূলধন যোগানের জন্য উৎপাদন ও বিনিয়োগকারীদের ঋণ সুবিধা প্রদান। ব্যাংক ও অন্যান্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশের মোট ঋণ চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও বিনিয়োগ প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

এরপরে আসে সামাজিক অবকাঠামো প্রসঙ্গ। সামাজিক অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দেশের ব্যাপক জনগণের নিরক্ষরতা। শিক্ষিত ও সাক্ষর জনগণও দেশের উন্নয়নে আশানুরূপ অবদান রাখতে পারে না। এর কারণ শিক্ষা অনেকটাই পুঁথিগত ও জ্ঞানভিত্তিক। অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগের জন্য পর্যান্ত দক্ষতাও শিক্ষার্থীরা অর্জন। করতে পারে না। তবে বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থার এই দুর্বলতা, জনগণের সাক্ষরতার নিম্নহার এবং কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও জ্ঞানের অভাবের ফলে সাধারণ শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কম। এর সাথে পুষ্টিহীনতা ও সুস্বাস্থ্যের অভাব উৎপাদনশীলতা আরও কমিয়ে দেয়। শ্রমিক ও জনগণের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণের আগ্রহ ও সাধ্যও কম। এসব কিছুই অর্থনীতির সকল খাত বিশেষত শিল্পখাতের অগ্রসরতাকে অনেকটাই বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে।

তবুও সমাজের সকল ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারী এখনও অনগ্রসর। একক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসমূহের একটি যদিও নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, দেশের জনগণের অর্ধেকই নারী। এই পশ্চাৎপদতার ফলে নারীরা কর্মক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে। সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমনকি পারিবারিক তালিকা প্রস্তুত কর। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও নারীদের ভূমিকা খুব কম। এর ফলে ব্যাপকভাবে বাল্যবিবাহ, পারিবারিক সহিংসতা, অধিক সংখ্যক সন্তানের জন্মদানের ঘটনা ঘটছে।

আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকসমূহের মধ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিকল্পক জনসংখ্যাধিক্য ও এর থেকে সৃষ্ট অন্যান্য সমস্যা। জনসংখ্যাধিক্যের কারণে দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সকল ক্ষেত্রেই সরকারকে বাড়তি চাপ মোকাবিলা করতে হয়। জনসংখ্যা সমস্যা থেকে সৃষ্ট আরেকটি বড় সমস্যা বেকারত্ব। দেশের শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ বেকার বা অর্ধবেকার। এর ফলে মাথাপিছু আয় কম হয়। সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হারও নিম্ন। ফলে নতুন শিল্প স্থাপনের হারও কম বেকারত্ব অনেক সামাজিক সমস্যারও জন্ম দেয়। বেকার কিশোর ও তরুণেরা সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এতে সমাজজীবন পর্যুদস্ত হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল হয়ে পড়ে।

৫. সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতি : স্বাধীনতার পর নানা কারণে দেশের শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র দৃঢ় হয়ে উঠতে পারেনি। স্বাধীনতাউত্তর একটি বড় সময়কাল দেশে সামরিক শাসন চলেছে। প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল রেখে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ফলে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব, অসন্তোষ ও অস্থিরতা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মরতদের মধ্যে একটি বড় প্রভাবশালী অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এ দুর্নীতি, সামাজিক অস্থিরতা এবং সুশাসনের অভাবের কারণে দেশের শিল্প ও সেবা খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বর্তমান সরকার এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

৬. প্রকৃতিসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা : প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে একটি সাধারণ ঘটনা। বলা হয়, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ কবলিত দেশ। প্রধান প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে- বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, নদীভাঙন প্রভৃতি। এই দুর্যোগগুলো প্রধানত দেশের কৃষি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া বাড়িঘর, পথঘাট ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বিশেষত প্রতিবছর বন্যা ও নদীভাঙনে সীমিত কৃষি জমির এই দেশের বিপুল পরিমাণ জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি গবাদিপশু, মৎস্য ও পাখি সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এই ক্ষতিপূরণ দিয়েই প্রতিবছর আবার উৎপাদন কাজ শুরু করতে হয়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক উত্তরণের পদক্ষেপসমূহ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান প্রধান প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১. উন্নয়নের জন্য নীতিগত ভিত্তি প্রস্তুত করা যে কোনো জাতীয় উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য একটি নীতিগত ভিত্তি প্রয়োজন হয়। সরকার অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের জন্য জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন বা সংশোধন করে একটি উন্নয়ন কাঠামো প্রস্তুতের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রয়োজন হয়।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য বর্তমান সরকার পরিকল্পিত উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের আওতায় সরকার ঘোষিত 'রূপকল্প ২০২১'-এর আলোকে 'বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১' শীর্ষক পরিকল্পনা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। 'রূপকল্প ২০৩০' এবং 'রূপকল্প ২০৪১'কে সামনে রেখে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতোপূর্বে ছয়টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।

২. কৃষিক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ : কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের বড় বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়া, কৃষিঋণের অপর্যাপ্ততা, কৃষি উপকরণ, যেমন- বীজ, সার ও কীটনাশকের অপর্যাপ্ততা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা যেমন, সেচ সুবিধা ও বিদ্যুতের অভাব, উৎপাদিত পণ্য বিপণন সুবিধার অভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

সরকার বিবিধ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব বাধার মোকাবিলা করছে। এসব নীতির মধ্যে রয়েছে “জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি', 'জাতীয় বীজ নীতি', 'সমন্বিত সার বিতরণ নীতিমালা' এবং 'সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা'। এছাড়া 'জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯' অনুসারে কৃষি উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব নীতির আওতায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও হাওর এলাকায় পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষিজমির আওতা সম্প্রসারণ• কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা ও কৃষকদের কাছে এগুলোর সরবরাহ নিশ্চিতকরণ;

• দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও কৃষকদের কাছে সেচ যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি :

• উন্নতমানের উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ ইত্যাদি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ ;

• ফসল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা, কৃষিজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং সকল কৃষিজাত পণ্যের

ন্যায্যমূল্য ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা;

• জৈব সার ব্যবহারের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করে সারাদেশে ১৭ লক্ষ পরিবারের বসতভিটার চারদিকে জৈব সার, সবুজ সার ও জীবাণু সার উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে।
• 
• সার ব্যবহার সুষমকরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সারের আমদানি খরচের উপর ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা;

• ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রাখা ;

• সম্প্রতি বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংকে কৃষি ঋণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ।

৩. শিল্পক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদনে শিল্প খাতের অবদান ক্রমশ বাড়ছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য শিল্প খাতের প্রসার, ভারী বা মৌলিক শিল্প স্থাপন এবং এ খাতের সার্বিক উন্নয়ন জরুরি।

দেশের শিল্প খাতে বিরাজমান প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভারী বা মৌলিক শিল্পের অভাব, দুর্বা অবকাঠামো, মূলধন বা পুঁজি এবং শিল্পঋণের অপর্যাপ্ততা, উদ্যোগ গ্রহণের মানসিকতার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রভৃতি। এসব বাধা ও সমস্যার সমাধানে সরকার 'জাতীয় শিল্পনীতি ২০১০' ঘোষণা করেছে। এ নীতির গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে : উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা, নারীদের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার মূলধারায় নিয়ে আসা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ, শ্রমঘন, রপ্তানিমুখী ও আমদানিবিকল্প শিল্প স্থাপন, দেশের শিল্পায়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা, একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক শিল্প খাত গড়ে তোলা ইত্যাদি। এই জাতীয় শিল্পনীতি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

দেশের দ্রুত শিল্পায়ন নিশ্চিত করতে সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পাশাপাশি বৃহৎ তথ্য মৌলিক শিল্প স্থাপন ও প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শিল্পায়নের জন্য প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন পুঁজি বা মূলধন। পুঁজি বা মূলধনের প্রধান উৎস ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এজন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে শিল্পক্ষণ বৃদ্ধি ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে যেখানে দেশে শিল্পঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৩৮০৯৮.৫৫ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৬-২০১৭ সালে এই পরিমাণ ৩০০৬৭২.১৩ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ৮ গুণ বেশি। (উৎস : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৮)।

৪. সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর দুর্বলতা খুব বড় বাধা বা চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক অবকাঠামোর দুর্বলতার মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ ও গ্যাস-এর উপৎপাদন ও যোগানের অপর্যাপ্ততা। বিগত কয়েক বছরে এসবের উৎপাদন লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৮১৭৭ মেগাওয়াট। সরকার প্রণীত পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১০ অনুযায়ী ২০১৫ ও ২০২১-২০৩০ সাল নাগাদ বিদ্যুতের চাহিদা হবে যথাক্রমে প্রায় ১০,০০০, ১৯,০০০ 38,000 মেগাওয়াট। উক্ত চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনসমূহের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুসারে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ২৪,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদার কথা বিবেচনা করে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় ২০১৫ সালের শেষে

দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের কার্যক্রম চলমান ছিল। এছাড়াও ২০১৩ সাল নাগাদ গ্যাস আমদানির পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছিল। স্থল, রেল ও নৌপথ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষে সরকারের সংস্কার কার্যক্রম ও বিভিন্ন মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মোবাইল ফোন আছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশকে অগ্রগামী করে তুলতে সরকার নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য করে 'রূপকল্প ২০২১'- এর মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।

সামাজিক অবকাঠামোর দুর্বলতার মধ্যে নিরক্ষরতা, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা, শ্রমিকদের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব, জনসংখ্যাধিক্য, বেকারত্ব, শিক্ষা ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী সমাজের পশ্চাৎপদতা ও ক্ষমতায়নের অভাব, জনগণের স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ততা ইত্যাদি প্রধান। এসব বাধা অপসারণ করার লক্ষ্যে একটি নীতিগত ভিত্তি গড়ে তোলা হয়েছে। 'জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০', 'স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচি', এবং 'প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি'র দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে :

• প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ছাত্র ভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি এবং ঝরে পড়া রোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ;

• নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা;

• নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রী উপবৃত্তি প্রদান এবং বেতন মওকুফ সুবিধা প্রদান;

• নিরক্ষরতা দূরীকরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে ভর্তি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি বৃদ্ধির প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ

• প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৮ লক্ষ থেকে ৭৮ লক্ষে উন্নীত করা।

• বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন;

• বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ :

• বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, স্কুলসমূহে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা প্রবর্তন ও সম্প্রসারণের ব্যবস্থা।

• কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে মাদ্রাসাসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়সমূহে ভোকেশনাল কোর্স অন্তর্ভুক্তকরণ:

• মাধ্যমিক শিক্ষাকে জীবন ও কর্মমুখী করার লক্ষ্যে শিক্ষাক্রমে জীবন দক্ষতাসহ বিভিন্ন দক্ষতা অন্তর্ভুক্তকরণ; 

• স্বাস্থ্য সেবাকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে স্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ ও পুষ্টি সেবা প্রদানের ব্যবস্থা:

• তিন স্তর বিশিষ্ট (কমিউনিটি, ইউনিয়ন ও উপজেলা) উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তন।

৫. প্রকৃতিসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য পদক্ষেপসমূহ : প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো ও আবহাওয়া অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন থাকে। বহুসংখ্যক এনজিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করছে।

ত্রাণ ও পুনর্বাসন, খাদ্য, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসমূহ ও পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগ কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি) প্রকল্পের ২য় পর্যায় ২০১০- ২০১৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন করেছে এর আওতায় দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম সতর্কীকরণ, দুর্যোগের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি, ঝুঁকি হ্রাস, দুর্যোগ মোকাবিলায় জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি পদক্ষেপ গৃহীত ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে এ সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

Content added By