নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - সাহিত্য কণিকা (বাংলা) - কৃষি শিক্ষা | NCTB BOOK

বীজ উদ্ভিদের বংশবিস্তারের প্রধান মাধ্যম। সাধারণভাবে উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য যে অংশ ব্যবহার করা হয় তাকে বীজ বলে । বীজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে আমরা বীজকে দুইভাবে বুঝতে পারি । যথা-

ক) উদ্ভিদতত্ত্ব অনুসারে, উদ্ভিদের নিষিক্ত ও পরিপক্ক ডিম্বককে বীজ বলে । এ ধরনের বীজকে ফসল বীজ বা প্রকৃত বীজ বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজও বলে । যেমন:- ধান, গম, সরিষা, তিল, শিম, বরবটি, টমেটো, ফুলকপি, মরিচ, জিরা, ধৈঞ্চা, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি ।

খ) কৃষিতত্ত্ব অনুসারে উদ্ভিদের যে কোনো অংশ (মূল, পাতা, কাণ্ড, কুঁড়ি, শাখা) যা উপযুক্ত পরিবেশে একই জাতের নতুন উদ্ভিদের জন্ম দিতে পারে, তাকে বংশবিস্তারক উপকরণ বলে। এ ধরনের উপকরণকে কৃষিতাত্ত্বিক বীজ বা অঙ্গজ বীজও বলা হয় । যেমন : আমের কলম, আলুর কন্দ, মিষ্টি আলুর লতা, আখের কাণ্ড, পাথরকুচি গাছের পাতা, কাকরোলের মূল, গোলাপের ডাল ও কুঁড়ি, আনারসের মুকুট, কলাগাছের সাকার, আদা, হলুদ, রসুন, কচু ও সকল উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ । কাজেই দেখা যায় সকল উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ কৃষিতাত্ত্বিক বীজের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু সকল কৃষিতাত্ত্বিক বীজ উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজের অন্তর্ভুক্ত নয় ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা ধান, গম, মুলা, মরিচ ফসলের এবং আলু, আদা, গাঁদা ফুল ও মেহেদীর কাণ্ড ইত্যাদি সংগ্রহ করবে এবং শ্রেণিকক্ষে দলীয়ভাবে জমা দিবে ।

ফসল বীজ উৎপাদনের ধাপসমূহ

বীজ উৎপাদন একটি জটিল প্রক্রিয়া । উন্নতমানের বীজ পেতে হলে যথাযথ নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ উৎপাদন করতে হবে । ফসল উৎপাদনের জন্য যে সব ধাপ অতিক্রম করা হয় বীজ উৎপাদনের জন্যও সেভাবেই অগ্রসর হতে হবে। পার্থক্য হলো এই যে, বিভিন্ন ফসলের বীজ যেমন- ধান, পাট, গম, মুলা, মরিচ ইত্যাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ধাপসমূহের বিশেষ যত্নবান হতে হয় :

১। বীজ জমি নির্বাচন : বীজ উৎপাদনের জন্য উর্বর জমি নির্বাচন করা উচিত । জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত ও আলোবাতাসযুক্ত হতে হবে । নির্বাচিত জমিতে পূর্ববর্তী বছরে একই জাতের বীজের চাষ না হয়ে থাকলে আরও ভালো । নির্বাচিত জমিতে অন্তত ২% জৈব পদার্থ থাকা উচিত ।

২। বীজ জমি পৃথকীকরণ : বীজ উৎপাদনের জন্য নির্বাচিত জমি ও পার্শ্ববর্তী একই ফসলের জমির মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধান থাকতে হবে । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত শস্য বীজের সাথে যেন অন্য জাতের বীজের সংমিশ্রণ না ঘটে ।

৩। বীজ সংগ্রহ : বীজ সংগ্রহ বীজ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বীজ উৎপাদনের জন্য অবশ্যই প্রত্যায়িত বীজ সংগ্রহ করতে হবে । বীজ সংগ্রহের সময় নিম্নোক্ত তথ্য জেনে নিতে হবে ।

ক) জাতের নাম                                                                                  খ) বীজ উৎপাদনকারীর নাম ও নম্বর
গ) অন্য জাতের বীজের শতকরা হার                                                      ঘ) বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা
ঙ) বীজের আর্দ্রতা                                                                                     

উল্লিখিত তথ্যগুলো একটি গ্যারান্টি পত্রে ট্যাগ লিখে বীজের বস্তায় বা প্যাকেটে রাখা হয় ।

৪। বীজের হার নির্ধারণ : বীজের বিশুদ্ধতা, সজীবতা, অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা, আকার, বপনের সময়, মাটির উর্বরতা শক্তি এসব বিবেচনা করে হেক্টর প্রতি বীজের হার নির্ধারণ করা হয় ।

৫। নির্বাচিত জমি প্রস্তুতকরণ : এক এক জাতের বীজের জন্য জমির প্রস্তুতি এক এক রকম হয়ে থাকে । যেমন, রোপা ধানের বীজ উৎপাদন করতে জমি ভালোভাবে কর্দমাক্ত করে চাষ করতে হবে । আবার গমের বেলায় জমি শুকনো অবস্থায় ৪-৫ বার চাষ করে পরিপাটি করতে হবে । সার প্রয়োগের মাত্রাও এক এক বীজের জন্য এক এক রকম হবে ।

৬। বীজ বপন : নির্বাচিত ফসলের বীজ উপযুক্ত সারিতে বপন করতে হবে । বীজতলায় প্রতিটি বীজ সমান গভীরতায় বপন করা উচিত । কোন বীজ কত গভীরতায় বপন করতে হবে তা বীজের আকার, আর্দ্রতা ও মাটির উপর নির্ভর করে ।

৭। রগিং বা বাছাইকরণ : বীজ বপনের সময় যতই বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার করা হোক না কেন জমিতে কিছু কিছু অন্য জাতের উদ্ভিদ ও আগাছা দেখা যাবে। অনাকাঙ্ক্ষিত উদ্ভিদ তুলে ফেলতে হবে । তিন পর্যায়ে রগিং বা বাছাই করা হয় ।

ক । ফুল আসার আগে খ । ফুল আসার সময় গ । পরিপক্ক পর্যায়ে

৮। পরিচর্যা : বীজের উৎপাদনের জন্য খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় । নিচে কয়েকটি পরিচর্যার ধরন উল্লেখ করা হলো :

ক) সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা

খ) জৈব সার প্রয়োগ

গ) প্রয়োজনমতো সেচ দেওয়া

ঘ) বৃষ্টির পানি বা সেচের পানি জমলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা

ঙ) আগাছা পরিষ্কার করা

চ) রোগ ও পোকা দমন করা

ছ) সারের উপরি প্রয়োগ করা

৯। বীজ সংগ্রহ : বীজ পরিপক্ক হওয়ার পর পরই কাটতে হবে । তারপর মাড়াই করে ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে ।

বংশবিস্তারক উপকরণ উৎপাদনের ধাপসমূহ
বাংলাদেশে ফুল ও ফলের চারা অঙ্গজ পদ্ধতিতে উৎপাদনের প্রচলন খুব বেশি। কারণ এসব গাছের বংশবিস্তার প্রকৃত বীজের মাধ্যমে হলে ফুল ফল পেতে সময় বেশি লাগে ও মাতৃগাছের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না । এ ছাড়া অনেক ফসলের প্রকৃত বীজ দ্বারা বংশবিস্তার ঘটানোও সম্ভব নয় । অঙ্গজ পদ্ধতিতে মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, শাখা প্রভৃতি দ্বারা দ্রুত ও অল্প সময়ে চারা উৎপাদন সম্ভব । তাই এগুলো হলো ফসলের বংশবিস্তারক উপকরণ । কিছু কিছু ফসল যেমন- আনারস, কলা, আলু, আদা, হলুদ প্রভৃতির বংশবিস্তারক উপাদান সরাসরি রোপণ করা যায়। আবার কিছু ফসল যেমন- আম, লেবু, লিচু, জামরুল, গোলাপ ইত্যাদির বংশবিস্তারক উপাদান বিভিন্ন ধরনের কলম তৈরির মাধ্যমে প্রস্তুত করে ব্যবহার করা হয় । নিম্নে বংশবিস্তারক উপকরণ তথা কৃষিতাত্ত্বিক বীজ হিসাবে বীজ আলু উৎপাদনের ধাপসমূহ উল্লেখ করা হলো:

বীজ আলু উৎপাদন পদ্ধতি

জমি নির্বাচন ও তৈরি : বীজ আলুর ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সুনিষ্কাশিত বেলে দোআঁশ মাটি সর্বোত্তম । নির্বাচিত জমি অন্যান্য ফসল যেমন- মরিচ, টমেটো, তামাক ইত্যাদি সোলানেসি গোত্রভুক্ত ক্ষেত থেকে অন্তত ৩০ মিটার দূরে থাকতে হয় । ৫-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরা করে আগাছা মুক্ত করতে হবে । চাষ অন্তত ১৫ সেমি গভীর হতে হবে । মাটি বেশি শুকনো হলে প্লাবন সেচ দিয়ে মাটিতে ‘জো’ আসার পর আলু লাগাতে হবে ।

বীজ শোধন : হিমাগারে রাখার আগে বীজ শোধন না হয়ে থাকলে অঙ্কুর গজানোর পূর্বে বীজ আলু বরিক এসিড দিয়ে শোধন করে নিতে হবে (১ লি. পানি + ৩০ গ্রাম বরিক পাউডার মিশিয়ে বীজ আলু ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে পরে ছায়ায় শুকাতে হবে)।

বীজ প্রস্তুতি : বীজ আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে আস্ত আলু বপন করা ভালো, কারণ আস্ত বীজ রোপনের পর এগুলোর রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম । আলু কেটে লাগালে প্রতি কর্তিত অংশে অন্তত ২ টি চোখ অবশ্যই রাখতে হবে । আলু কাটার সময় বারবার সাবান পানি দ্বারা ছুরি বা বটি পরিষ্কার করা উচিত যাতে রোগ জীবাণু এক বীজ থেকে অন্য বীজে না ছড়ায় । বীজ আলু আড়াআড়িভাবে না কেটে লম্বালম্বিভাবে কাটতে হবে ।

মাটিতে ঔষধ প্রয়োগ : ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধের জন্য শেষ চাষের পূর্বে প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০ গ্রাম স্টেবল ব্লিচিং পাউডার বা ক্লোরোপিক্সিন মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া উত্তম ।

সার প্রয়োগ : দুটি কারণে আলুতে সুষম সার প্রয়োগ অত্যাবশ্যক । প্রথমত সুষম সার প্রয়োগ করলে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত বীজ আলুর গুণগত মান ভালো হয়। দ্বিতীয়ত গাছে কোনো খাদ্যোৎপাদনের অভাবজনিত লক্ষণ সৃষ্টি হলে ভাইরাস রোগের উপস্থিতি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় । বাংলাদেশে আলু চাষের জন্য নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, জিঙ্ক সালফেট, বরিক পাউডার জমিতে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়ার সময় প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে ।

সারের নাম প্রতি শতাংশে
পচা গোবর ৪০ কেজি
ইউরিয়া ১৪০০ গ্রাম
টিএসপি ৯০০ গ্রাম
এমওপি ১০৬০ গ্রাম
বরিক পাউডার/ বোরন সার ২৫ গ্রাম
জিঙ্ক সালফেট ৫০ গ্রাম
জিপসাম ৫০০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট  

বীজ হার ও রোপণ সময় : বীজ হার নির্ভর করে রোপণ দূরত্ব ও বীজের আকারের উপর । সাধারণত প্রতি হেক্টরে ১.৫ থেকে ২ টন বীজ আলুর প্রয়োজন (একরে ৬০০-৮০০ কেজি)।
রোপণ দূরত্ব

দূরত্ব আস্ত আলুর ক্ষেত্রে কাটা আলুর ক্ষেত্রে
লাইন থেকে লাইন দূরত্ব ৬০ সেমি ৬০ সেমি
বীজ থেকে বীজ দূরত্ব ২৫ সেমি ১০-১৫ সেমি

সেচ ব্যবস্থাপনা : মাটির আর্দ্রতার উপর ভিত্তি করে ২-৪ টি সেচ প্রদান করা উচিত । জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে বীজ আলুর অঙ্কুরোদগমের জন্য হালকা সেচ দেওয়া যেতে পারে, তবে সেচ বেশি হলে বীজ পচে যাবে । রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে কারণ ৩০ দিনের মধ্যে স্টোলন বের হতে শুরু করে । সাধারণত কেইলের ২/৩ ভাগ পানি দ্বারা ভিজিয়ে দিতে হবে ।

আগাছা দমন : রোপণের পর থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে । সাধারণত গাছ ছোট থাকাকালীন অবস্থায় আগাছা যথাসম্ভব দমন করে রাখতে হবে । এছাড়া বথুয়া জাতের আগাছা যা ভাইরাস রোগের বিকল্প বাহক হিসাবে কাজ করে তা অবশ্যই নির্মূল করে ফেলতে হবে ।

মাটি উঠিয়ে দেওয়া : ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করে সেচ দেওয়ার পর মাটিতে 'জো' আসলে ভেলি বরাবর মাটি উঠিয়ে দিতে হবে । পরবর্তীকালে প্রয়োজনবোধে আরও এক বার এমনভাবে ভেলি বরাবর মাটি উঠিয়ে দিতে হবে যাতে আলু বাহিরে না যায় এবং স্টোলন ও আলু মাটির ভিতরে থাকে ।

রগিং : চারা গজানোর পর থেকে রগিং শুরু করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ শিকড়সহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

রোগবালাই ও পোকা দমন

(ক) আলুর রোগ : আলুর রোগসমূহের মধ্যে মড়ক রোগ, ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ, দাঁদ রোগ, কাণ্ড পচা রোগ, ভাইরাসজনিত রোগ অন্যতম । নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও মেঘলা আকাশ আলুর জন্য ক্ষতিকর । এতে আলুর মড়ক রোগ (লেইট ব্লাইট) আক্রমণ বেশি দেখা যায় । আলু ফসলকে এ অবস্থা থেকে রক্ষা করার জন্য স্পর্শক (কন্টাক্ট) জাতীয় ছত্রাকনাশক নিয়মানুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে ।

খ) কাটুই পোকা : এ পোকার কীড়া আলুর প্রধান ক্ষতিকর পোকা । এরা গাছ কেটে দেয় এবং আলু আক্রমণ করে ।

  • খুব সকালে যে সব গাছ কাটা পাওয়া যায় সেগুলোর গোড়ার মাটি সরিয়ে পোকার কীড়া বের করে মারতে হবে ।
  • আক্রমণ তীব্র হলে অনুমোদিত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে ।

গ) জাব পোকা : জাব পোকা গাছের রস খায় এবং ভাইরাস রোগ ছড়ায় । বীজ আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে জাব পোকা দমন অত্যন্ত জরুরি। এজন্য গাছের পাতা গজানোর পর থেকে ৭-১০ দিন পর পর জাব পোকা দমনের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে । জাব পোকার আক্রমণ এড়াতে ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই আলু সংগ্রহ করা উত্তম ।

ফসল সংগ্রহ এবং পরিচর্যা : আধুনিক জাতে পরিপক্বতা আসতে ৮৫-৯০ দিন সময় লাগে । তবে বীজ আলুতে সংগ্রহের অন্তত ১০ দিন আগে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে ।

(ক) হাম পুলিং : মাটির উপরের গাছের সম্পূর্ণ অংশকে উপড়ে ফেলাকে হাম পুলিং বলে । আলু সংগ্রহের ৭-১০ দিন পূর্বে হাম পুলিং করতে হবে। এতে সম্পূর্ণ শিকড়সহ গাছ উপরে আসবে কিন্তু আলু মাটির নিচে থেকে যাবে । হাম পুলিং এর ফলে আলুর ত্বক শক্ত হয়, রোগাক্রান্ত গাছ থেকে রোগ বিস্তার কম হয় ও আলুর সংরক্ষণগুণ বৃদ্ধি পায়। বীজ আলুতে অবশ্যই হাম পুলিং করতে হবে, তবে খাবার আলুর বেলায় হাম পুলিং জরুরি নয় ।

(খ) আলু উত্তোলন : আলু উত্তোলনের পর পরই বাড়িতে নিয়ে আসা উত্তম । আলু তোলার পর কোনো অবস্থাতেই ক্ষেতে স্তূপাকারে রাখা যাবে না, কারণ ক্ষেতে আলু খোলা রাখলে তা বিভিন্ন প্রকার রোগ ও পোকা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে (যেমন-সুতলি পোকা ডিম পাড়তে পারে) ।

(গ) আলু সংরক্ষণ : আলু উত্তোলনের পর বাড়িতে এনে সাথে সাথে কাটা, দাগি ও পচা আলু আলাদা করে বেছে ফেলতে হবে । তারপর ৭-১০ দিন মেঝেতে আলু বিছিয়ে রাখতে হবে । অতঃপর আবারও দাগি ও পচা আলু বেছে বাদ দিয়ে ভালো আলু বস্তায় ভরে হিমাগারে পাঠাতে হবে । এছাড়া বীজ আলু উৎপাদনের আরও কয়েকটি পদ্ধতি আছে । যেমন-

(ক) টিস্যু কালচার পদ্ধতি
(খ) স্প্রাউট ও টপ শুট কাটিং পদ্ধতি
(গ) বিনাচাষে বীজ আলু উৎপাদন
(ঘ) আলুর প্রকৃত বীজ উৎপাদন ।

ফসল বীজের গুরুত্ব : ফসল উৎপাদনে ফসল বীজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যে সব ফসল কেবল বীজের মাধ্যমেই ফলানো সম্ভব সে ক্ষেত্রে উদ্ভিদের বংশরক্ষার্থে ফসল বীজের বিকল্প নেই । এছাড়াও-

১। ফসল বীজ ফসল উৎপাদনের মৌলিক উপকরণ ।
২। ফসল বীজ মানুষসহ পশু পাখির খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
৩। বিশুদ্ধ ফসল বীজ রোগ, পোকামাকড় ও আগাছা বিস্তার রোধ করে ।
৪ । ফসল বীজের মাধ্যমে উন্নত জাতের ফসল উৎপাদন সম্ভব । ৫ । ফসল বীজের মাধ্যমে উদ্ভিদের বংশধারা টিকে থাকে ।
৬। কোনো কোনো বীজ ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয় । ৭। ফসল বীজ অনেক শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।

বংশবিস্তারক উপকরণের গুরুত্ব : অধিকাংশ ফসলের বংশবিস্তার বীজ দ্বারা সম্ভব হয় না বা সম্ভব হলেও দীর্ঘসময়ের ব্যবধানে ফলন পাওয়া যায় । কাজেই জনবহুল কোনো দেশের জন্য ফসল দ্রুত পাওয়ার জন্য বংশবিস্তারক উপকরণ তথা কৃষিতাত্ত্বিক বীজের বিকল্প নেই । এতে উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড, শাখা, পাতা, শিকড়, কুঁড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে বংশবিস্তার করা হয় বলে মাতৃগুণাগুণ বজায় থাকে । একই গাছে একাধিক জাতের সংযোজন ঘটানো যায় । যেমন : মিষ্টি ও টক কুল একই গাছে এবং লাল, হলুদ, কালো ও সাদা ফুল একই গোলাপ গাছে ফোটানো সম্ভব । এছাড়াও এ উপকরণ ব্যবহার করে বীজবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । অল্প সময়ে ও কম খরচে সহজে ফুল, ফল পাওয়া যায় । কাজেই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা কৃষি উৎপাদনে ফসল বীজ সংগ্রহ করবে এবং বীজের বর্ণনা খাতায় লিখবে ।

 

Content added || updated By