নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - সাহিত্য কণিকা (বাংলা) - কৃষি শিক্ষা | NCTB BOOK

আমরা অষ্টম শ্রেণিতে চাষ উপযোগী ফসলের মধ্যে কেবল গম ফসল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছি । এ পরিচ্ছেদে আমরা ধান, পাট, সরিষা ও মাসকলাই এর জাত ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব ।

ধান চাষ

জমি নির্বাচন : বাংলাদেশে দানাজাতীয় ফসলের মধ্যে ধানের চাষ ও উৎপাদন সবচেয়ে বেশি । কারণ মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য হলো ভাত । ধানের ফলন সব জমিতে ভালো হয় না । মাঝারি নিচু ও নিচু জমিতে ধানের ফলন বেশি ভালো হয়। মাঝারি উঁচু জমিতেও ধান চাষ করা হয় । কিন্তু সেক্ষেত্রে পানি সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয় । এঁটেল ও পলি দোআঁশ মাটি ধান চাষের জন্য উপযোগী ।

ধানের জাতসমূহ : বাংলাদেশে তিন জাতের ধান আছে । যথা :

ক) স্থানীয় জাত : টেপি, গিরবি, দুধসর, লতিশাইল

খ) স্থানীয় উন্নতজাত : কটকতারা, কালিজিরা, হাসিকলমি, নাইজারশাইল, লতিশাইল, বিনাশাইল ইত্যাদি ।

গ) উচ্চফলনশীল (উফশী) জাত : বাংলাদেশে অনেক জমিতে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ধানের চাষ করা হয়ে থাকে । উফশী ধানের জাতগুলোর সাধারণ কতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকে । যেমন :

  • গাছ মজবুত এবং পাতা খাড়া ।
  • শীষের ধান পেকে গেলেও গাছ সবুজ থাকে ।
  • গাছ খাটো ও হেলে পড়ে না ।
  • খড়ের চেয়ে ধানের উৎপাদন বেশি ।
  • পোকা ও রোগের আক্রমণ কম হয় ।
  • অধিক কুশি গজায় ।
  • সার গ্রহণক্ষমতা অধিক এবং ফলন বেশি ।

উফশী ধানে যখন প্রয়োজনীয় বিশেষ গুণাগুণ, যেমন- রোগবালাই সহনশীলতা, স্বল্প জীবনকাল, চিকন চাল, খরা, লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ইত্যাদি সংযোজিত হয়, তখন তাকে আধুনিক ধান বলে । তাই সকল উফশী ধান আধুনিক নয়, কিন্তু সকল আধুনিক ধানে উফশী গুণ বিদ্যমান । বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে এ পর্যন্ত ধানের উফশী ৭৮টি জাত উদ্ভাবন করেছে । ধানের মৌসুম তিনটি । যথা- আউশ, আমন ও বোরো । ব্রি ধানের কতকগুলো অনুমোদিত জাত আছে যেগুলো আউশ ও বোরো দুই মৌসুমেই চাষ করা যায় । যেমন- বিআর ১ (চান্দিনা), বি আর ২(মালা), বিআর ৯(সুফলা), বিআর ১৪ (গাজী) । আবার বিআর ৩ (বিপ্লব) জাত সকল মৌসুমে চাষ করা যায় । নিম্নে তিন মৌসুমের অনুমোদিত জাতগুলোর সংখ্যা ও কিছু জাতের নাম উল্লেখ করা হলো :

ক) আউশ মৌসুমের জাত : শুধু আউশ মৌসুমেই চাষ করা হয় এরূপ জাত হলো ৮টি । এদের মধ্যে কয়টি বিআর ২০ (নিজামী), বিআর ২১ (নিয়ামত) ইত্যাদি । এ জাতগুলো আউশ মৌসুমে বপন ও রোপণ দুইভাবেই আবাদ করা যায় । এ মৌসুমে বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫-৩০ শে চৈত্র এবং চারা রোপণের জন্য চারার বয়স হবে ২০-২৫ দিন ।

খ) আমন মৌসুমের জাত : শুধু আমন মৌসুমেই চাষ করা হয় এরূপ জাত হলো ২৭টি । এদের কয়েকটি হলো বিআর ৫ (দুলাভোগ), বিআর ১১ (মুক্তা), বিআর ২২ (কিরণ), ব্রি ধান ৫৬, ব্রি ধান ৫৭ ও ব্রি ধান ৬২ ইত্যাদি । সবগুলো জাতই রোপণ পদ্ধতিতে চাষ করা হয় এবং রোপণের জন্য চারার বয়স হতে হবে ২৫-৩০ দিন ।

গ) বোরো মৌসুমের জাত : শুধু বোরো মৌসুমেই চাষ করা যায় এরূপ জাত হলো ১৬টি । এদের কয়েকটি হলো বিআর ১৮(শাহজালাল), ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ২৯, ব্রি ধান ৪৫, ব্রি ধান ৫০ (বাংলামতি), ব্রি হাইব্রিড ধান ১, ব্রি হাইব্রিড ধান ২ এবং ব্রি হাইব্রিড ধান ৩ ইত্যাদি । রোপণের জন্য চারার বয়স হতে হবে ৩৫-৪৫ দিন । এ ছাড়া ধান ফসলের আরও কিছু জাত আছে। যেমন : বৃষ্টিবহুল, খরা সহিষ্ণু, লবণাক্ততা-সহিষ্ণু, হাওর, ঠাণ্ডা-সহিষ্ণু জাত ইত্যাদি ।

বীজ বাছাই : কমপক্ষে শতকরা ৮০ ভাগ বীজ গজায় এরূপ পরিষ্কার, সুস্থ ও পুষ্ট বীজ বীজতলায় বপনের জন্য বাছাই করতে হবে । নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে বীজ বাছাই করা হয় ।
প্রথমে দশ লিটার পরিষ্কার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে প্রাপ্ত দ্রবণে ১০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দিলে পুষ্ট বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপুষ্ট ও হালকা বীজগুলো পানির উপর ভেসে উঠবে । হাত বা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো সরিয়ে নিলেই পানির নিচ থেকে ভালো বীজ পাওয়া যাবে । এ বীজগুলো পুনরায় পরিষ্কার পানিতে ৩-৪ বার ধুয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ইউরিয়া মেশানো পানি বীজতলায় সার হিসাবে ব্যবহার করা যায় ।

বীজ শোধন ও জাগ দেওয়া : বাছাইকৃত বীজ দাগমুক্ত ও পুষ্ট হলে সাধারণভাবে শোধন না করলেও চলে । তবে শোধনের জন্য ৫২-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (হাতে সহনীয়) তাপমাত্রার গরম পানিতে ১৫ মিনিট বীজ ডুবিয়ে রাখলে জীবাণুমুক্ত হয় । এছাড়া প্রতি কেজি ধান বীজ ৩০ গ্রাম কার্বক্সিন (১৭.৫%) + থিরাম (১৭.৫%) দ্বারাও শোধন করা যায় । শোধনকৃত বীজ বাঁশের টুকরি বা ড্রামে ২-৩ স্তর শুকনো খড় বিছিয়ে তার উপর বীজের ব্যাগ রেখে পুনরায় ২-৩ স্তর শুকনো খড় দিয়ে বা কচুপাতা দিয়ে ঢেকে ভালোভাবে চেপে তার উপর কোনো ভারী জিনিস দিয়ে চাপ দিয়ে রাখতে হবে । এভাবে জাগ দিলে আউশ ও আমন মৌসুমের জন্য ৪৮ ঘণ্টা বা দুই দিনে, বোরো মৌসুমে ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনে ভালো বীজের অঙ্কুর বের হবে এবং সেগুলো বীজতলায় বপনের উপযুক্ত হবে ।

বীজতলা তৈরি : ধানের চারা তৈরির জন্য সাধারণত চার ধরনের বীজতলা তৈরি করা হয় । যথা-

ক) শুকনো বীজতলা

খ) ভেজা বীজতলা

গ) ভাসমান বীজতলা

ঘ) দাপোগ বীজতলা উঁচু ও দোআঁশ মাটিসম্পন্ন জমিতে শুকনো বীজতলা এবং নিচু ও এঁটেল মাটি সম্পন্ন জমিতে ভেজা বীজতলা তৈরি করা হয়। আর বন্যাকবলিত এলাকায় ভাসমান ও দাপোগ বীজতলা তৈরি করা হয় । প্রচুর আলো বাতাস থাকে এবং বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে ডুবে যাবে না এমন জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে হয় । এখানে শুকনো ও ভেজা বীজতলা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

ক) শুকনো বীজতলা : বীজতলার জমি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। জমিতে ৪/৫টি চাষ ও ম‍ই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরা ও সমান করতে হবে । মাটিতে অবশ্যই রস থাকতে হবে প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে । এর আগে জমি থেকে আগাছা বেছে সরিয়ে ফেলতে হবে। জমি যদি অনুর্বর হয় জমিতে জৈব সার দিতে হবে । বীজতলায় রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই উত্তম ।

বীজতলার মাপ : এক শতক জমিতে দুই খণ্ডের বীজতলা তৈরি করা যায় । প্রতিটি বীজতলার আকার ১০ মিটার x ৪ মিটার জায়গার মধ্যে নালা বাদ দিয়ে ৯.৫ মিটার x ১.৫ মিটার হবে। বীজ তলার চারদিকে ২৫ সেমি জায়গা বাদ দিতে হবে এবং দুই খণ্ডের মাঝখানে ৫০ সেমি জায়গা নালার জন্য রাখতে হবে। বীজতলায় বীজ বোনার আগে বীজ জাগ দিতে হবে । বিভিন্ন জাতের ধানের অঙ্কুর বের হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়কাল দরকার । যেমন- আউশের জন্য ২৪ ঘণ্টা, আমনের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এক শতক বীজতলার জন্য ৩ কেজি পরিমাণ বীজ উল্লিখিত নিয়মে জাগ দিয়ে অঙ্কুরিত করতে হবে। এরূপ অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় বুনতে হবে । চারার পরিচর্যা ও অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য দুই বেডের মাঝের জায়গা থেকে মাটি উঠিয়ে দুই বেড়ে সমানভাবে উঠিয়ে দিতে হবে। এতে বেডগুলো উঁচু হয়। এরপর প্রতি বর্গমিটার বেডে ৬০-৮০ গ্রাম বীজ বেডের উপর সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বেডের উপরের মাটি বাঁশ বা কাঠের চ্যাপ্টা লাঠি দিয়ে সমান করতে হবে । দুই বেডের মাঝে সৃষ্ট নালা সেচ, নিষ্কাশন ও সার বা ঔষধ প্রয়োগের জন্য খুবই দরকার হয়।

খ) ভেজা বীজতলা : এক্ষেত্রে জমিতে পানি দিয়ে ২-৩টি চাষ ও মই দেওয়ার পর ৬-৭ দিন ফেলে রাখতে হয় । এতে জমির আগাছা, খড়কুটা ইত্যাদি পচে গিয়ে সারে পরিণত হয় । এরপর জমি আরও ২-৩ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি থকথকে কাদাময় করতে হয়। ভেজা বীজতলায় বীজ বাড়িতে গজিয়ে বোনা ভালো । এক্ষেত্রেও বীজতলার মাপ শুকনো বীজতলার মতোই ।

বীজতলার পরিচর্যা : পাখি যাতে বীজতলার বীজ খেতে না পারে সেজন্য বপনের সময় থেকে ৪-৫ দিন পর্যন্ত পাহারা দিয়ে পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বেড যাতে শুকিয়ে না যায় সেজন্য দুই বেডের মাঝের নালায় পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হয় । এরপর নালা থেকে প্রয়োজনীয় পানি বেডে সেচ দিতে হয় । বীজ তলায় আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হয় । রোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে তা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে । বীজ তলার চারাগুলো হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের পর চারাগুলো সবুজ না হলে গন্ধকের (সালফার) অভাব হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বীজতলায় প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে । অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বীজতলায় চারাগুলো ক্ষতি হতে পারে । তাই রাতে পলিথিন দ্বারা চারাগুলো ঢেকে দিনের বেলায় খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে । এতে চারার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে ।

চারা উঠানো
১। চারা তোলার পূর্বে বীজতলায় পানি সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নেওয়া উত্তম । এতে বীজতলার মাটি নরম হয়। ফলে চারা তুলতে সুবিধা হয়।
২। ধানের চারা পোকায় আক্রান্ত থাকলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে ।
৩। চারার গোড়া বা কাণ্ড যাতে না ভাঙে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
৪ । চারা তোলার পর তা ছোট ছোট আঁটি আকারে বেঁধে নিতে হয় ।

চারা বহন ও সংরক্ষণ : সরাসরি রোপণের ক্ষেত্রে-
১। বীজতলা থেকে রোপণের জন্য চারা বহন করার সময় পাতা ও কাণ্ড মোড়ানো যাবে না ।

২। ঝুড়ি বা টুকরিতে সারি করে সাজিয়ে পরিবহন করতে হয় ।

৩। বস্তাবন্দী করে কখনো ধানের চারা বহন করা যাবে না ।

৪ । চারা সরাসরি রোপণ সম্ভব না হলে চারার আঁটি ছায়ার মধ্যে ছিপছিপে পানিতে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে । জমি তৈরি : ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে কাদাময় ও সমান করে নিতে হবে । এক্ষেত্রে কোদাল দিয়ে জমির চারদিক ছেঁটে দিতে হবে ।

সার ব্যবস্থাপনা : ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই জমিতে সার দিতে হবে । এছাড়া উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত মাটি থেকে বেশি পরিমাণে খাদ্যোপাদান গ্রহণ করে বিধায় সার প্রয়োগ অত্যাবশ্যক । গোবর বা আবর্জনা পচা জাতীয় জৈব সার জমি তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । ইউরিয়া ব্যতীত সকল রাসায়নিক সার যেমন- টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, দস্তা প্রভৃতি জমিতে শেষ চাষ দেওয়ার আগে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণ করার পর ইউরিয়া সার ৩ কিস্তিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয় । ১ম কিস্তি চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর, ২য় কিস্তি ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ চারার গোছায় ৪-৫টি কুশি আসা অবস্থায় এবং শেষ কিস্তি ৪৫-৫০ দিন পর অর্থাৎ কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে।
নিচে শতক প্রতি জৈব সার, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও দস্তা সারের পরিমাণ দেওয়া হলো :

 সারের নাম  পরিমাপ
পচা গোবর বা কমপোষ্ট ২০ কেজি
ইউরিয়া ৩৬০-৮৪০ গ্রাম
টিএসপি ৩০০-৫০০ গ্রাম
এমওপি ১৬০-২৮০ গ্রাম
জিপসাম ২৪০-২৮০ গ্রাম
দস্তা ৪০ গ্রাম

শতকপ্রতি ২০ কেজি পচা গোবর সার বা কমপোস্ট দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায় । সার প্রয়োগের সাধারণ নীতিমালা : জাত ও মৌসুম ছাড়া সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও কিছু নীতিমালা মেনে চলতে হয় । যেমন: পাহাড়ের পাদভূমির মাটি ও লাল বেলে মাটিতে এমওপি সার দেড়গুণ দিতে হয় ।

১। গঙ্গাবাহিত পলিমাটি ও সেচপ্রকল্প এলাকার মাটিতে দস্তা সার বেশি পরিমাণে দিতে হয় ।
২। হাওর এলাকার মাটিতে প্রত্যেক সার কম পরিমাণে দিতে হবে ।
৩। স্থানীয় জাতের ধানে সারের পরিমাণ অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে ।

চারা রোপনঃ সমান  করা সমতল জমিতে জাত ও মৌসুম ভেদে ২৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপন করা ভালো । জমিতে ছিপছপে পানি রেখে দড়ির সাহায্যে সারি করে চারা রোপন করতে হবে । এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং এক গোছা থেকে অন্য গোছার দূরত্ব ১৫-২০ সেমি হওয়া দরকার । প্রতি গোছায় ২-৩ টি চারা রোপন করতে হবে ।দেরিতে রোপন করলে চারার সংখ্যা বেশি ও ঘন করে রোপন করতে হবে ।

পরিচর্যা

ক) সেচঃ জমি সমান হলে মুক্ত প্লাবন পদ্ধতিতে এবং ঢালু হলে আইললম্ব মুক্ত প্লাবন পদ্ধতিতে পানি সেচ দিতে হয় । বোরো ধান সম্পূর্ণভাবে সেচের উপর নির্ভরশীল । জমিতে ৫-৭ সেমি এর নিচে পানি থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয় । চারা রোপন করার পর ৬-৭ দিন পর্যন্ত ৩-৫ সেমি সেচ দিতে হবে । এতে আগাছা দমন হয় । এরপর কুশি উৎপাদন পর্যায়ে ২-৩ সেমি এবং চারার বয়স ৫০-৬০ দিন হলে ৭-১০ সেমি পরিমাণ পানি সেচ দেওয়া উত্তম । থোড় আসার সময় পানি সেচ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । দানা পুষ্ট হতে শুরু করলে আর সেচ দেওয়া প্রয়োজন হয় না ।

খ) আগাছা দমনঃ কমপক্ষে তিন বার ধানের জমিতে আগাছা দমন করতে হয় । যেমনঃ

  • চারা রোপন করার ১০-১৫ দিনের মধ্যে
  • প্রথম আগাছা দমনের পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে
  • থোড় বের হওয়ার পূর্বে

ধানক্ষেতে সাধারণত আরাইল, গইচা, শ্যামা প্রভৃতি আগাছার উপদ্রব হয় । এগুলো সরাসরি হাত/নিড়ানি দ্বারা ও ওষুধ প্রয়োগ করে দমন করতে হবে ।

গ) পোকা দমনঃ ধানক্ষেতে অনেক পোকার উপদ্রব হয় । এদের আক্রমনে ধানের ফলন অনেক কমে যায় । সাধারণত ধান ফসলে মাছরা পোকা, পামরি পোকা, বাদামি গাছ ফড়িং, গান্ধি পোকা, গল মাছি, শীষকাটা লেদা পোকা প্রভৃতি দেখা যায় ।

নিচে কয়েকটি পোকার পরিচিতি ও দমন পদ্ধতি বর্ণনা করা হলোঃ নিম্নলিখিত তালিকায় পোকার আক্রমণের লক্ষণসমূহ অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায় ।
তালিকা ১

পোকার নাম আক্রমনের লক্ষণসমূহ
১. মাজরা পোকা  ১) ধান গাছের মাঝডগা ও শীষের ক্ষতি করে, ২) কুশি অবস্থায় আক্রমণ করলে মাঝ ডগা সাদা হয়ে যায়, ৩) ফুল আসার পর আক্রমণ করলে ধানের শীষে সাদা চিটা হয়, ৪) সব ঋতুতেই কমবেশি আক্রমণ করে ।
২. পামরি পোকা  ১) পামরি পোকার কীড়া পাতার ভিতরে ছিদ্র করে সবুজ অংশ খায় ।
৩. গলমাছি
২) পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাতার সবুজ অংশ খুঁড়ে খুঁড়ে খায় বলে পাতা সাদা হয়ে যায় ।
৩ গল মাছি ১) গল মাছির কীড়া ধানগাছের বাড়ন্ত কুশিতে আক্রমণ করে এবং আক্রান্ত কুশি পিঁয়াজ পাতার মতো হয়ে যায় । ২) কুশিতে শীষ হয় না ।
৪ গান্ধি পোকা ১) গান্ধি পোকা ধানের দানায় দুধ সৃষ্টির সময় আক্রমণ করে । ২) বয়স্ক পোকার গা থেকে গন্ধ বের হয় ।
৫ বাদামি গাছ ফড়িং ১) ধানের গোড়ায় বসে রস চুষে খায়, ২) গাছ পুড়ে যাওয়ার রং ধারণ করে মরে যায়, একে হপার বার্ন বলে ।

তালিকা ২

পোকার নাম কীটনাশকের নাম
গান্ধি পোকা, পামরি পোকা, মাজরা পোকা, গলমাছি, ছাতরা পোকা, চুঙ্গী পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, পাতা শোষক পোকা, ক্লোরোপাইরিফস ৫০ বা ম্যালাথিয়ন ৫৭ বা ফেনিট্রথিয়ন ৫৭ বা ডায়াজিনন ৬০
বাদামি গাছ ফড়িং কার্বোফুরান ৩ জি/ ১০জি বা ডায়াজিনন ১৪
শীষকাটা লেদা পোকা ভেপোনা ১০০

রোগ দমন : ধান গাছের অনেক রোগ হয়। ছত্রাক, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবাণু রোগের কারণ । নিচে কয়েকটি ক্ষতিকর রোগের কারণ, লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-

রোগের নাম কারণ লক্ষণসমূহ দমনপদ্ধতি
১. ব্লাস্ট রোগ ছত্রাক ১) পাতায় ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। ২) দাগের চারদিকে গাঢ় বাদামি এবং মাঝের অংশ সাদা ছাই বর্ণের হয় ৩) অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে গিয়ে সম্পূর্ণ পাতা মরে যায়  ১) নীরোগ বীজ ব্যবহার করা ।
২) পটাশ জাতীয় সার উপরি প্রয়োগ করা ৩) বীজ শোধন করে বোনা ।৪) জমিতে পানি ধরে রাখা ।| ৫) জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করা।
৬) রোগ প্রতিরোধ জাত বিআর৩, বিআর ১৪, বিআর ১৫, বিআর ১৬, বিআর ২৪, ব্রি ধান ২৮ রোপণ করা।
২. টুংরো রোগ ভাইরাস ১) চারা রোপণের এক মাসের মধ্যে টুংরো রোগ দেখা দিতে  পারে । ২) আক্রমণের প্রথমে পাতার রংহালকা সবুজ, পরে আস্তে আস্তে হলদে হয়ে যায় ৩) গাছ টান দিলে সহজেই উঠে আসে ।
৪) কুশি হয় না ।
৫) প্রথমে দুই-একটি গোছায় এ রোগটি দেখা যায়, পরে ধীরে ধীরে আশেপাশের গোছায় ছড়িয়ে পড়ে ।
১) পাতা ফড়িং এ রোগ ছাড়ায়, তাই পাতা ফড়িং দমন করতে হবে । ২) রোগ প্রতিরোধীজাত যেমন- চান্দিনা, দুলাভোগ, ব্রি শাইল, গাজী, বিআর ১৬, বিআর ২২, ব্রি ধান ৩৭, ব্রি ধান ৩৯, ব্রি ধান ৪১, ব্রি ধান ৪২ চাষ করা।
৩) আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে সবুজ পাতা ফড়িং মেরে ফেলা । ৪) রোগাক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলা
৭) ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি স্প্রে করা ।

এছাড়া ধান ফসলে পাতা পোড়া রোগ, উফরা রোগ, খোল পোড়া রোগ, বাকানি রোগ, বাদামি দাগ রোগ, খোলপচা রোগ, স্মার্ট প্রভৃতি রোগ দেখা যায় ।

কাজ : শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দলীয়ভাবে ধান ফসলের বিভিন্ন উপকারী ও অপকারী কীটপতঙ্গ সংগ্রহ করে অ্যালবাম তৈরি করতে বলবেন । এক্ষেত্রে শিক্ষক কীটপতঙ্গ সংগ্রহের ও অ্যালবাম তৈরির নিয়মগুলো বলে দেবেন ।

ফসল কর্তন, মাড়াই ও সংরক্ষণ
শীষে ধান পেকে গেলেই ফসল কাটতে হবে। অধিক পাকা অবস্থায় ফসল কাটলে অনেক ধান ঝরে পড়ে, শীষ ভেঙে যায়, শীষকাটা লেদা পোকা এবং পাখির আক্রমণ হতে পারে । শীষের উপরের দিকে শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত ও স্বচ্ছ এবং নিচের অংশের ২০ ভাগ ধানের চাল আংশিক শক্ত ও স্বচ্ছ হলে ধান ঠিকমতো পেকেছে বলে বিবেচিত হবে । কাটার পর ধান মাঠে ফেলে না রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাড়াই করা দরকার । কাঁচা খলার উপর ধান মাড়াই করার সময় চাটাই, চট বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে । এভাবে ধান মাড়াই করলে ধানের রং উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকে । মাড়াইয়ের পর ধান ৩-৪ দিন পূর্ণ রোদে শুকাতে হবে । এবার ভালোভাবে কুলাদিয়ে ঝেড়ে সংরক্ষণ করতে হবে। যে পাত্রে ধান রাখা হবে তা পরিপূর্ণ করে রাখতে হবে । সংরক্ষণের সময় নিম/নিশিন্দা/বিষকাটালীর পাতা (গুঁড়া) মিশিয়ে দিলে পোকার আক্রমণ হয় না । তারপর পাত্রের মুখ শক্ত করে বন্ধ করতে হবে যেন ভিতরে বাতাস না ঢুকে ।
ফলন
আউশের চেয়ে আমনের, আবার আমনের চেয়ে বোরোর ফলন বেশি হয়ে থাকে । উল্লেখ্য স্থানীয় জাতের তুলনায় উফশী জাতের ফলন বেশি হয়ে থাকে । উফশী জাতের ধানের হেক্টরপ্রতি ফলন ৫-৬ টন এবং শতক (৪০ বর্গমিটার) প্রতি ২০-২৪ কেজি ।

কাজ : শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধান ফসল চাষের গুরুত্ব বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিতে বলবেন ।

পাট চাষ
বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি নদ-নদীর পলিবাহিত উর্বর সমতল ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে পাট জন্মে । বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, বার্মা, মিশর ও ব্রাজিল প্রভৃতি দেশেও পাট জন্মে । পাটের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে পাটশিল্প গড়ে উঠেছে ।

জমি নির্বাচন : উর্বর দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী । তবে বেলে ও এঁটেল মাটি ছাড়া সব জমিতেই পাট চাষ করা যায়। যে জমিতে বর্ষার শেষের দিকে পলি পড়ে সে জমি পাট চাষের জন্য উত্তম । তোষা পাট উঁচু জমিতে এবং দেশি পাট উঁচু ও নিচু দুই ধরনের জমিতেই চাষ করা যায় ।

চাষ উপযোগী পাটের জাতসমূহ : প্রত্যেকটি ফসলের এমন অনেক জাত আছে যেগুলোর মধ্যে ফলনশীলতা, পরিবেশগত উপযোগিতা, পোকা ও রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা, দৈহিক বৈশিষ্ট্য (আকার, আকৃতি ও বর্ণ), পুষ্টিমান, খাদ্যগুণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি গুণাবলি বিদ্যমান । তবে একই জাতে সব বৈশিষ্ট্যের সর্বোৎকৃষ্ট সমাবেশ ঘটানো সম্ভব হয় না । প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (BJRI) ১৭টি দেশি, ১৬টি তোষা বা বগী পাট, ২টি কেনাফ এবং ১টি মেস্তা জাতের পাট উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করেছে ।

দেশি পাটের জাতসমূহ : সিভিএল -১ (সবুজপাট), সিভিই-৩ (আশু পাট), সি সি-৪৫ (জো পাট), ডি - ১৫৪, এটম পাট -৩৮ ইত্যাদি দেশি পাটের জাত । 

তোষা বা বগী পাটের জাতসমূহ : ও-৪, ও- ৯৮৯৭ (ফাল্গুনি তোষা), সিজি (চিন সুরা গ্রিন) ইত্যাদি তোষা বা বগী পাটের জাত ।

কেনাফ জাতসমূহ : এইচ সি - ২ (জলি কেনাফ), এইচ সি – ৯৫ -

মেস্তাজাত : এইচ এস - ২৪ (টানী মেস্তা)

জমিচাষ : ফাল্গুন-চৈত্র মাসে দুইএক পশলা বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে পাটের জমি চাষ করতে হয় । রবি ফসল তোলার পর পরই জমি চাষ করা উচিত । ৫-৬টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটির ঢেলা ভেঙে সমান করতে হবে । পাটের বীজ ছোট বলে মাটির দলা ভেঙে মিহি করতে হবে এবং আগাছা থাকলে বা পূর্ববর্তী ফসলের শিকড় উঠিয়ে ফেলতে হবে, নতুবা বীজ আশানুরূপ গজাবে না ।

সার প্রয়োগ : পাটের জমিতে সঠিক সময়ে পরিমাণমতো জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে পাটের ফলন সহজেই বৃদ্ধি করা যায় । পাটের জমিতে সঠিক নিয়মে জৈব সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার পরিমাণে কম লাগবে । তবে মাটিতে দস্তা ও গন্ধকের অভাব অনুভূত না হলে জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট ব্যবহারের প্রয়োজন নেই ।

বীজ বপনের ৬-৭ সপ্তাহ পর সার প্রয়োগ : জমি নিড়ানি দিয়ে আগাছা মুক্ত করে ও-৯৮৯৭ জাত বাদে অন্যান্য জাতের বেলায় শতক প্রতি ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ও-৯৮৯৭ জাতের বেলায় শতক প্রতি ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া কিছু পরিমাণ শুকনো মাটির সাথে মিশিয়ে জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে ‘হো’ বা নিড়ানি যন্ত্রের সাহায্যে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । দ্বিতীয়বার ইউরিয়া সার দেওয়ার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন গাছের কচি পাতা ও ডগায় প্রয়োগকৃত সার না লাগে । সার প্রয়োগের সময় মাটিতে যেন পর্যাপ্ত রস থাকে ।

বীজ শোধন : বীজ বপন করার আগে শোধন করে নেওয়া উত্তম । প্রতি কেজি পাট বীজের সাথে রিডোমিল বা ক্যাপটান ৭৫% বালাইনাশক মিশিয়ে বীজ শোধন করে নেওয়া উচিত । বীজ বপনের সময় : সঠিক সময়ে পাটের বীজ না বুনলে গাছে অসময়ে ফুল আসে এবং ফলন কম হয়, পাটের গুণগত মানও কমে যায় । পাট জাতভেদে ১৫ই ফেব্রুয়ারি হতে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বোনা হয় ।

বীজ বপন পদ্ধতি ও বীজ হার : জমিতে পাট বীজ সারিতে ও ছিটিয়ে এ দুই উপায়ে বপন করা যায় । সারিতে বীজ বপন করলে বীজের পরিমাণ কম লাগে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি এবং সারিতে বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ৭-১০ সেমি আবার ছিটানো পদ্ধতিতে বুনলে বীজ বেশি লাগবে । বীজ যেন মাটির খুব গভীরে বোনা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । জমিতে “জো” আসলে বীজ বুনতে হবে ।

বীজ বপনের পর পরিচর্যা

চারা পাতলা করণ ও আগাছা দমন : চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর ঘন চারা থেকে দুর্বল চারাগুলো উঠিয়ে এবং সাথে সাথে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে । দ্বিতীয় বার ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে এবং শেষবার ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে ।

সেচ ও নিকাশ ব্যবস্থা : পাটের জমিতে খরা দেখা দিলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং জমিতে পানি জমে থাকলে তাকে নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে ।

পোকামাকড় দমন : পাট ক্ষেতে বিছা পোকা, উরচুঙ্গা, চেলে পোকা, ঘোড়া পোকা, মাকড় ইত্যাদির আক্রমণ হয়ে থাকে । নিচে কয়েকটি পোকার নাম, ক্ষতির লক্ষণ ও দমনের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো :

ক) বিছা পোকা

লক্ষণ : কচি ও বয়স্ক সব পাতাই খেয়ে ফেলে । স্ত্রী মথ পাটের পাতার উল্টা পিঠে গাদা করে ডিম পাড়ে । ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর প্রায় ৬-৭ দিন পর্যন্ত বাচ্চাগুলো পাতার উল্টা দিকে দলবদ্ধভাবে থাকে । পরে এরা সব গাছে ছড়িয়ে পড়ে । দলবদ্ধভাবে থাকা অবস্থায় কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে সাদা পাতলা পর্দার মতো করে ফেলে এবং আক্রান্ত পাতাগুলো দূর থেকেই সহজে দৃশ্যমান হয় । আক্রমণ ব্যাপক হলে এরা কচি ডগাও খেয়ে ফেলে ।

দমন পদ্ধতি

  • পাটের পাতায় ডিমের গাদা দেখলে গাদাসহ পাতা তুলে ধ্বংস করতে হবে।
  • আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে যখন ডিম থেকে বের হওয়া কীড়াগুলো দলবদ্ধভাবে থাকে, তখন পোকাসহ পাতাটি তুলে পায়ে পিষে, গর্তে চাপা দিয়ে অথবা অল্প কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে মারতে হবে ।
  • পাট কাটার পর শুকনো জমি চাষ করলে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা পুত্তলিগুলো বের হয়ে আসে যা পোকাখাদক পাখি খেয়ে ফেলে ।
  • বিছা পোকা যাতে আক্রান্ত ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে ছড়াতে না পারে সেজন্য আক্রান্ত ক্ষেতের চারদিকে প্রতিবন্ধক নালা তৈরি করে অল্প কেরোসিন মিশ্রিত পানি নালায় রাখতে হবে।
  • নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে ।

খ) উচুঙ্গা

লক্ষণ
জমিতে গর্ত করে দিনের বেলায় গর্তে বসবাস করে এবং সন্ধ্যা বেলায় গর্ত থেকে বের হয়ে চারা পাটগাছের গোড়া কেটে গর্তে নিয়ে যায়। এতে পাট ক্ষেত মাঝে মাঝে গাছশূন্য হয়ে যায় । অনাবৃষ্টির সময় আক্রমণ বেশি হয় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের পর আক্রমণ কমে যায় । পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাট গাছের শিকড় ও কাণ্ডের গোড়ার অংশ খায় ।

দমন পদ্ধতি
উরচুলা

  • প্রতিবছর যেসব জমিতে উরচুঙ্গার আক্রমণ দেখা যায় সেখানে সাধারণ পরিমাণের চেয়ে বেশি করে বীজ বপন করতে হবে।
  • আক্রান্ত জমিতে চারা ৮-৯ সেমি হওয়ার পর ঘন গাছ বাছাই করে পাতলা করতে হবে ।
  • সম্ভব হলে নিকটস্থ জলাশয় থেকে আক্রান্ত জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে । জমি চাষের সময় নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে ।
  • গর্তে কীটনাশক প্রয়োগ করে ।
  • কীটনাশক, বালাইনাশকের বিষটোপ প্রয়োগ করে ।

গ) ঘোড়া পোকা
লক্ষণ

  • ঘোড়া পোকা পাট গাছের কচি ডগা ও পাতা আক্রমণ করে।
  • ফলে কচি ডগা নষ্ট হয়ে যায় এবং শাখা-প্রশাখা বের হয় ।
  • ফলে পাটের ফলন ও আঁশের মান কমে যায় ।

দমন পদ্ধতি
চিত্র : ঘোড়া পোকা

  • পোকার আক্রমণ দেখা দিলে কেরোসিন ভেজা দড়ি গাছের উপর দিয়ে টেনে দিলে পোকার আক্রমণ কম হয় ।
  • শালিক বা ময়না পাখি ঘোড়া পোকা খেতে পছন্দ করে । তাই এসব পাখি বসার জন্য পাট ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চি এবং গাছের ডাল পুঁতে দিতে হবে ।
  • নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক ছিটাতে হবে ।

ঘ) চেলে পোকা
লক্ষণ
স্ত্রী পোকা চারা গাছের ডগায় ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা গাছের ভিতরে চলে যায় এবং সেখানে বড় হতে থাকে। ফলে গাছের ডগা মরে যায় এবং শাখা প্রশাখা বের হয়। গাছ বড় হলে পাতার গোড়ায় কাণ্ডের উপর ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ফলে ঐ জায়গায় গিটের সৃষ্টি হয়। পাট পচানোর সময় ঐ গিটগুলো পচেনা । আঁশের উপর কালো দাগ থেকে যায় । এতে আঁশের মান ও দাম কমে যায় । চিত্র : চেলে পোকা

দমন পদ্ধতি

  • বীজ বপনের আগে ও পাট কাটার পরে ক্ষেত্রের আশে পাশে যে সব আগাছা থাকে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
  • আক্রান্ত পাট গাছগুলো তুলে নষ্ট করে ফেলতে হবে ।
  • গাছের উচ্চতা ৫-৬ সেমি লম্বা হওয়ার পর নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে ।

মাকড়
পাটক্ষেতে দুই ধরনের মাকড় দেখা যায় । যথা- হলদে ও লাল মাকড় ।
লক্ষণ
হলদে মাকড় কচি পাতায় আক্রমণ করে পাতার রস চুষে খায়। এতে কচি পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় এবং পাতার রং তামাটে হয়ে যায়। হলদে মাকড় ফুলের কুঁড়িকেও আক্রমণ করে। ফলে কুঁড়ি ফুটতে পারে না। ফুলের পাপড়ির রং হলদে থেকে কালচে রঙের হয়ে যায় ও ঝরে পড়ে। এতে বীজের ফলনও কমে যায়। একটানা খরা বা অনাবৃষ্টির সময় এদের আক্রমণ বেশি দেখা যায় । লাল মাকড় একটু নিচের পাতা আক্রমণ করে ।

দমন পদ্ধতি

  • চুন ও গন্ধক ১৪২ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত পাট ক্ষেতে ছিটাতে হবে ।
  • কাঁচা নিমপাতার রস ২ঃ৫ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে ।

নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক ছিটাতে হবে ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলীয়ভাবে পাট ফসলের বিভিন্ন উপকারী ও অপকারী কীটপতঙ্গ সংগ্রহ করে অ্যালবাম তৈরি করবে । এক্ষেত্রে শিক্ষক কীটপতঙ্গ সংগ্রহের ও অ্যালবাম তৈরির নিয়মগুলো বলে দেবেন।

রোগ দমন : পাটে কাণ্ড পচা, কালোপট্টি, গোড়া পচা, শুকনা ক্ষত, ঢলে পড়া, ইত্যাদি রোগ দেখা দেয় । নিম্নে কয়েকটি রোগের লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো :

ক) কাণ্ড পচা রোগ : লক্ষণ : পাতা ও কাণ্ডে গাঢ় বাদামি রঙের দাগ দেখা দেয় । এ দাগ গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত যে কোনো অংশে দেখা দিতে পারে । দাগগুলোতে অসংখ্য কালো বিন্দু দেখা যায় । এ কালো বিন্দুগুলোতে ছত্রাক জীবাণু থাকে । কখনো কখনো আক্রান্ত স্থানে গোটা গাছই ভেঙে পড়ে । কেনাফ ও মেস্তা পাটে এ রোগ দেখা দিতে পারে ।

খ) কালো পট্টিরোগ : এ রোগের লক্ষণ প্রায় কাণ্ড পচা রোগের মতোই । তবে এতে কাণ্ডে কালো রঙের বেষ্টনীর মতো দাগ পড়ে । আক্রান্ত স্থানে ঘষলে হাতে কালো গুঁড়ার মতো দাগ লাগে। এ রোগে গাছ শুকিয়ে মারা যায় ।

গ) শুকনা ক্ষত : এ রোগটি শুধু দেশি জাতের পাটেই দেখা যায় । চারা অবস্থায় আক্রমণ করলে চারা মারা যায় । বড় গাছের কাণ্ডে কালচে দাগ পড়ে । আক্রান্ত স্থান ফেটে যায় এবং ক্ষতস্থানে জীবাণু সৃষ্টি হয় । এ জীবাণুগুলো বাতাসে উড়ে ফল আক্রমণ করে। আক্রান্ত ফল কালো ও আকারে ছোট হয় । এ রোগে গাছ মরে না, তবে আক্রান্ত অংশ শক্ত হয় । তাই পাট পচানোর পরেও আক্রান্ত স্থানের ছাল পাট কাঠির সাথে লেগে থাকে । এর আঁশ নিম্নমানের হয় ।
প্রতিকার/দমন ব্যবস্থা : কাণ্ড পচা, কালোপট্টি ও শুকনা ক্ষত এ তিনটি রোগই বীজ, মাটি ও বায়ুবাহী । এদের প্রতিকারের ব্যবস্থাও একই রকমের । যেমন :

 

  • পাট কাটার পর জমির আগাছা, আবর্জনা ও পরিত্যক্ত গাছের গোড়া উপড়িয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করতে হবে ।
  • নীরোগ পাট গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে ।
  • জমি থেকে সর্বদা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
  • রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে ।
  • রাসায়নিক বালাইনাশক ছিটাতে হবে ।

পাট-কাটা ও আঁটি বাঁধা
সঠিক সময়ে পাট না কাটলে পাটের গুপ ও ফলন উভয়ই কমে যায়। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে দেশি পাট এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে তোষা পাট কাটতে হয়। গাছে ফুল আসলে বুঝতে হবে পাট কাটার সময় হয়েছে। তাই পাট গাছ কাটার পরই এ সমস্ত গাছকে আলাদা করে প্রায় ১০ কেজি ওজনের আঁটি বাঁধা হয়। আঁটি বাঁধার পর সেগুলোকে ৩-৪ দিন জমিতেই স্তূপ করে রাখলে পাছের পাতাগুলো ঝরে যাবে। পাতাগুলো জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। পাটের পাতা ভালো সার । চিত্র : পাট কাটা ও আঁটি বাঁধা ।

পাট জাগ দেওয়া
প্রথমে ১০-১৫ টি আঁটি একদিকে পোড়া রেখে তারপর উল্টা দিকে গোড়া রেখে আরও আঁটি পানির উপর সাজাতে হবে একেই পাটের জাগ বলে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে জাগের উপর ৩০ সেমি ও নিচে ৫০ সেমি পানি থাকে। প্রতি ১০০টি আঁটির উপরে ১ কেজি ইউরিয়া ছিটিয়ে দিলে পাট তাড়াতাড়ি পচে ও পাটের আঁশের রং ভালো হয়। পাট জাগ দেওয়ার জন্য বিল, খাল বা নদীর মৃদু স্রোতযুক্ত পরিষ্কার পানি সর্বাপেক্ষা উত্তম। চিত্র : পার্ট ছাপ দেওয়া । 

জাগ ডুবানোর জন্য মাটির ঢেলা, কলাগাছ, আমগাছ ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এতে আঁ পাট পচনের সময় নির্ধারণ পাট গাছের আঁটি পানিতে ডুবানোর ১০-১১ দিন পর থেকেই পাটের পচন পরীক্ষা করতে হবে। সাধারণত জাগ থেকে ৪-৫ টি পাট গাছ টেনে বের করে যদি সহজে ছাল তথা আঁশ পৃথক করা যায় তবে বুঝতে হবে পাট গাছের পচন শেষ হয়েছে । গরম আবহাওয়ায় ১২-১৪ দিন এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ২০-২৫ দিনের মধ্যেই পাট পচে যায় । আঁশ ছাড়ানো ও পরিষ্কারকরণপচার পর গাছ থেকে দুইভাবে আঁশ ছাড়ানো যায় । যথা-

১) পানি থেকে প্রতিটি আঁটি উঠিয়ে এবং শুকনো জায়গায় বসে প্রতিটি গাছ থেকে আলাদাভাবে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়ার পর কতকগুলো পাট গাছের আঁশ একত্রে করে ধুয়ে নেওয়া হয় ।

২) হাটু বা কোমর পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে পাটের আঁটির গোড়ায় কাঠ বা বাঁশের মুগুর দ্বারা পিটানো হয় । পরে গোড়ার অংশ হাতে পেঁচিয়ে নিয়ে পানির উপর সমান্তরালভাবে সামনে পিছনে ঠেলা দিলেই অগ্রভাগের পাটকাঠি বের হয়ে যায় । পরবর্তীতে আঁশগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে আঁটি বেঁধে রাখা হয় । আঁশ শুকানো ও সংরক্ষণ বাঁশের আড় তৈরি করে তাতে প্রখর সূর্যালোকে পাটের আঁশ শুকানো হয় । আঁশ কম শুকালে ভিজা থাকে বিধায় পচন ক্রিয়া শুরু হয় । এতে আঁশের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায় । ফলে সঠিকভাবে পাটের আঁশ শুকিয়ে নেওয়ার পর সুন্দর করে আঁটি বেঁধে গুদামে সংরক্ষণ করতে হয় ।

ফলন
জাত ভেদে ফলনের তারতম্য হয় । তোষা পাটের তুলনায় দেশি পাটের ফলন সামান্য বেশি হয় ।

বাংলাদেশের পাট ফসলের গুরুত্ব
পাট একটি আঁশ জাতীয় ফসল। বাংলাদেশে উৎপাদিত অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে পাটের স্থান শীর্ষে । পাটের ব্যবহারিক উপযোগিতা, অর্থনৈতিক গুরুত্ব ইত্যাদি বিবেচনা করে পাটকে সোনালি আঁশ বলে অভিহিত করা হয় । পাট ফসলটি যে সময়ে জন্মায় সে সময় বৃষ্টি থাকে । তাই সেচের দরকার হয় না । পাট ফসলটি খরা ও জলাবদ্ধতা দুটোই সহ্য করতে পারে । কাজেই বাংলাদেশের যে সব এলাকায় সেচ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে এবং যেখানে মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত জমিতে পানি জমে থাকে, সেখানে ধানের চেয়ে পাট চাষ বেশি হয় । এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় ৩০০-৪০০ হাজার হেক্টর জমি আছে যেখানে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু পাট ছাড়া অন্য কোনো ফসল চাষ সম্ভব নয় । খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির কারণে পাট অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় । বাংলাদেশে দেশি ও তোষা এ দুই জাতের পাটের চাষ হয়। তবে দেশি জাতের তুলনায় তোষা জাতের পাটের চাষ বর্তমানে বেশি হচ্ছে । এর কারণ হলো পূর্বে যে সব এলাকায় দেশি পাটের চাষ হতো, তা ছিল নিচু এলাকা । বর্তমানে খাদ্য শস্যের চাহিদার জন্য ঐ সমস্ত এলাকা ধান চাষের আওতায় চলে গেছে । পাট চলে গেছে তুলনামূলকভাবে উঁচু ভূমি এলাকায় যেখানে বৃষ্টি নির্ভরতা বেশি । যাহোক পাট ফসল শুধু আঁশ হিসাবেই নয়, কৃষিজাত শিল্পে, ঔষধি শিল্পে, পরিবেশ সংরক্ষণে ও সবজি হিসাবে পাটের গুরুত্ব অপরিসীম ।শের রং কালো হয় । বাঁশের খুঁটির সাথে রশি দিয়ে বেঁধে, কিংবা পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে জাগ ডুবানো যায় । জাগ ঢাকার জন্য কচুরিপানা, ধানের খড় ব্যবহার করা যেতে পারে ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাট ফসল চাষের গুরুত্ব বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিবে ।

সরিষার চাষ
বাংলাদেশে তেল ফসল হিসাবে সরিষা, সয়াবিন, তিল, তিসি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী প্রভৃতির চাষ হয়ে থাকে । তবে এ দেশের মানুষ সরিষাকেই প্রধান ভোজ্য তৈল বীজ ফসল হিসাবে বেশি চাষ করে থাকে । নিম্নে সরিষা চাষ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

জমি নির্বাচন
সরিষা চাষের জন্য বেলে দোআঁশ অথবা পলি দোআঁশ মাটি উপযোগী। অতএব, সহজে পানি নিকাশ করা যায় এরূপ বেলে দোআঁশ বা পলি দোআঁশ মাটির জমি নির্বাচন করতে হবে।

জাত নির্বাচন
অনেক জাতের সরিষার চাষ হয় । নিম্নে সরিষার অনুমোদিত কতকগুলো জাতের নাম, যেমন- টরি-৭, কল্যাণীয়া, সোনালি সরিষা, সম্পদ, রাই সরিষা, বারি সরিষা-৮, সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৬ বারি ।

বপনের সময়
বাংলাদেশে সরিষা শীতকালীন ফসল। বিভিন্ন অঞ্চলের তারতম্য এবং জমির “জো” অবস্থা অনুসারে টরি-৭, কল্যাণীয়া, সোনালি সরিষা ও বারি সরিষা-৮ এর বীজ মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক মাস (অক্টোবর) পর্যন্ত বোনা যায় । বারি-১৪, বারি-১৫ ও বারি-১৬ এর বীজ আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে । চিত্র : ফুল ও বীজ সহ সরিষা গাছের ডাল।

জমি তৈরি
জমির প্রকারভেদ অনুযায়ী মাটির 'জো' অবস্থায় ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে জমি তৈরি করতে হবে । সরিষার বীজ ছোট বিধায় ঢেলা ভেঙে মই দিয়ে মাটি সমান ও মিহি করতে হবে। জমির চারদিকে নালার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে প্রয়োজনে সেচ এবং পানি নিকাশে সুবিধা হয় ।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জাত, মাটি ও মাটিতে রসের তারতম্য অনুসারে সরিষার জমিতে কমপোস্ট সার, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট, বোরাক্স/বোরিক এসিড ইত্যাদি সার সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হয় । ইউরিয়া সারের অর্ধেকসহ বাকি সব সার জমি প্রস্তুত করার সময় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকী অর্ধেক ইউরিয়া ফুল আসার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হয় । সার উপরি প্রয়োগের সময় মাটিতে রস থাকা দরকার ।

বীজের হার
সরিষার জাত টরি-৭, কল্যাণীয়া, সোনালি সরিষা ও বারি সরিষা-৮ এর জন্য প্রতি শতকে ২৮-৩২ গ্রাম বীজ লাগে । বপন পদ্ধতি সরিষার বীজ সাধারণত ছিটিয়ে বোনা হয়। বীজ ছোট বিধায় বোনার সময় জমিতে সমানভাবে ছিটানো কষ্টকর হয়। এজন্য বালি বা ছাই এর যে কোনো একটি বীজের সাথে মিশিয়ে বীজ ছিটালে জমিতে সমভাবে পড়ে। এতে জমির কোনো জায়গায় গাছ ঘন এবং কোনো জায়গায় পাতলা হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে । সারি করে সরিষার বীজ বোনা যায় । এতে সার, সেচ, নিড়ানি প্রভৃতি পরিচর্যা করতে সুবিধা হয় । এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব সাধারণত ২৫-৩০ সেমি রাখা হয় ও প্রতি সারিতে ৪-৫ সেমি দূরত্বে এবং ২-৪ সেমি গভীরতায় বীজ বপন করা হয় । মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে চারা গজাবে ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের নিকটস্থ সরিষা ফসলের ক্ষেত পরিদর্শন করবে এবং সরিষা ফসল উৎপাদনের ধাপগুলো লিখে দলীয়ভাবে জমা দিবে ।

পরিচর্যা
সরিষার জমিতে নিম্নলিখিতভাবে পরিচর্যা করা হয় ।

১) পানিসেচ : মাটির আর্দ্রতা পর্যাপ্ত থাকলে সরিষার জমিতে সেচের প্রয়োজন হয় না। মাটির আর্দ্রতা বুঝে ২-৩ টি সেচ দিলে বেশ ভালো ফলন হয় । প্রথম সেচ বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় সেচ গাছে ফল হওয়ার সময় দিলে ভালো হয় । বপনের পূর্বে যদি মাটি শুষ্ক থাকে তবে একটি হালকা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করা উচিত । সরিষা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না । তাই সেচের পানি জমিতে জমে থাকতে দেওয়া উচিত নয় ।

২) গাছ পাতলাকরণ : চারা খুব ঘন হলে পাতলা করে দিতে হবে । জমির কোথাও চারা না গজালে প্রয়োজনে সেখানে বীজ আবার বপন করতে হবে। পাতলাকরণের কাজটি চারা গজাবার ১০-১৫ দিনের মধ্যে করতে হবে ।

৩) আগাছা দমন : সরিষার জমিতে আগাছা দেখা মাত্র নিড়ানি দিয়ে তুলে ফেলতে হবে । চারা পাতলা করার সময়ই আগাছা দমন করা যায়। যে সব জমিতে অরোবাংকির আক্রমণ দেখা যায় সে সব জমিতে পর পর দুই বছর সরিষা চাষ না করাই ভালো ।

৪) রোগের কারণ, লক্ষণ ও দমন : সরিষা ফসলের প্রধান রোগ অল্টারনারিয়া রাইট বা পাতায় দাগ পড়া রোগ অন্যতম । এ রোগ দেখা দিলে গাছের পাতায় প্রথমে বাদামি পরে গাঢ় রঙের গোলাকার দাগ দেখা যায় । এ রোগের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে হলে প্রতিরোধ হিসাবে সঠিক নিয়মে বপন করা দরকার ।

৫) পোকা মাকড় দমন : সরিষার প্রধান ক্ষতিকারক পোকা হলো জাবপোকা । বাচ্চা ও পরিণত জাব পোকা সরিষার কাণ্ড, পাতা, পুষ্পমঞ্জুরি, ফুল ও ফল থেকে রস চুষে খায় ফলে গাছ দুর্বল হয়ে যায় । ফুল ও ফল ধারণ বাধাগ্রস্ত হয় । ফল কুঁচকে ছোট হয়ে যায় এবং শতকরা ৩০-৭০ ভাগ ফলন কম হতে পারে । জানুয়ারি মাসে আক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয় । জাব পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে সিঞ্চন যন্ত্রের সাহায্যে সরিষার ক্ষেতে ছিটাতে হবে ।

ফসল সংগ্রহ
যখন গাছের শতকরা ৭০-৮০ ভাগ সরিষার ফল খড়ের রং ধারণ করে এবং গাছের পাতা হলদে হয় তখনই ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময় । সকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শিশিরভেজা অবস্থায় ফসল সংগ্রহ করা উত্তম । মূলসহ গাছ টেনে তুলে অথবা কাঁচির দ্বারা কেটে ফসল সংগ্রহ করা যায় । তবে টেনে তোলাই ভালো ।

ফসল মাড়াই
ফসল সংগ্রহের পর ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে মাড়াই করতে হবে । কিছু কিছু অপুষ্ট বীজ থাকতে পারে । অপুষ্ট বীজগুলোকে আলাদা করতে হবে ।

বীজ শুকানো ও সংরক্ষণ
মাড়াই করার পর বীজ ঝেড়ে রোদে ভালোভাবে ৩-৪ দিন শুকিয়ে নেওয়ার পর শুষ্ক পাত্রে সংরক্ষণ করা উত্তম । সংরক্ষিত বীজ মাঝে মধ্যে শুকিয়ে আবার সংরক্ষণ করতে হয়। রোদে শুকানো বীজ গরম অবস্থায় সংরক্ষণ করলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় । তাই রোদে শুকানো বীজ ঠাণ্ডা করে প্লাস্টিক পাত্রে, টিনে বা ড্রামে রেখে মুখ ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে যেন পাত্রের ভিতরে বায়ু প্রবেশ করতে না পারে ।

ফলন

বাংলাদেশে সরিষার ফলন প্রতি শতকে প্রায় ৩ থেকে ৩.৫ কেজি।

সরিষা ফসলের গুরুত্ব
বাংলাদেশের ৩ প্রকার সরিষার চাষ হয়। যথা- টরি, শ্বেত ও রাই। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে ৪০-৪৪% তেল থাকে। সরিষার বীজ থেকে তৈল নিষ্কাশনের পর যে খৈল থাকে তাতে প্রায় ৪০% আমিষ এবং ৬৪% নাইট্রোজেন থাকে। সরিষার খৈল গরু, মহিষের জন্য খুবই পুষ্টিকর খাদ্য এবং উৎকৃষ্ট জৈব সার । এছাড়া রান্নার কাজে সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে । আবার সরিষার জমিতে কৃত্রিম উপায়ে অত্যন্ত অল্প খরচে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ করা যায়। এ জন্য সরিষাকে মধু উদ্ভিদও বলা হয় । কাজেই অর্থনৈতিক, ঔষধশিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে সরিষা ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরিষা ফসল চাষের গুরুত্ব বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিবে ।

মাসকলাই চাষ
বাংলাদেশে চাষকৃত ডাল ফসলের মধ্যে মাসকলাইয়ের স্থান চতুর্থ । দেশে মোট উৎপাদিত ডালের ৯-১১% আসে মাসকলাই থেকে। দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাসকলাইয়ের চাষ বেশি হয়ে থাকে । মাসকলাই একটি শক্ত ও খরা সহিষ্ণু ফসল যা উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। ডাল হিসাবে ছাড়াও এটি কাঁচাগাছ অবস্থায় পশুখাদ্য ও সবুজ সার হিসাবে বহুল ব্যবহৃত হয় । কাজেই ডাল ফসল হিসাবে মাসকলাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এবার আমরা মাসকলাই এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব ।

জমি নির্বাচন
সুনিষ্কাশিত দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি মাসকলাই চাষের জন্য উপযোগী। উঁচু থেকে নিচু সব ধরনের জমিতে মাসকলাই চাষ করা যায় যদি পানি জমে থাকার আশঙ্কা না থাকে। মাসকলাই উষ্ণ ও শুকনো জলবায়ুর ফসল । চিত্র : মাসকলাই


জাতসমূহ
বাংলাদেশে চাষকৃত মাসকলাইয়ের বেশ কিছু উন্নত ও স্থানীয় জাত রয়েছে । নিচে মাসকলাই এর কয়েকটি জাতের নাম দেওয়া হলো :

ক) উফশী জাত : পান্থ, শরৎ, হেমন্ত, বিনা মাস-১, বিনা মাস-২

খ) স্থানীয় জাত : রাজশাহী, সাধুহাটি

জমি তৈরি
মাসকলাই চাষের জন্যে খুব মিহিভাবে জমি তৈরির প্রয়োজন হয় না। জমি ও মাটির প্রকারভেদে ২-৩টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করে তৈরি করতে হয় ।

বীজ বপনের সময়
মাসকলাই বীজ ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বপন করা যায় ।

বীজ হার: নিচে মাসকলাই চাষের জন্য বীজ হার দেওয়া হলো :

উদ্দেশ্য বপন পদ্ধতি বীজ হার (গ্রাম/শতক)
বীজের জন্য ছিটিয়ে ১৪০-১৬০
  সারিতে ১০০-১২০
পশুখাদ্য বা সবুজ সারের জন্য ছিটিয়ে ২০০-২৪০

বীজ বপন পদ্ধতি
মাসকলাইয়ের বীজ ছিটিয়ে বা সারি করে বপন করা যায় । তবে বীজের জন্য সারিতে বপন করা ভালো । সারিতে বপন করার ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হয়। সারিতে বীজগুলো অবিরতভাবে ২-৩ সেমি গভীরে বীজ বপন করা হয়। ছিটানো পদ্ধতিতে শেষ চাষের সময় মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হয় ।

বীজ শোধন
বীজ বাহিত রোগ দমনের জন্য বীজ শোধন করে বপন করা দরকার ।

সার ব্যবস্থাপনা
মাসকলাই চাষে হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নরূপ :

সারের নাম সারের পরিমাণ (গ্রাম/শতক)
 ইউরিয়া  ১৬০-১৮০
 টিএসপি  ৩৪০-৩৮০
 এমওপি  ১২০-১৬০
 অণুবীজ সার  ১৬-২০

সার প্রয়োগের নিয়মাবলি
জমি তৈরির শেষ চাষের সময় সব সার প্রয়োগ করতে হবে । জীবাণুসার প্রয়োগ করা হলে ইউরিয়া সার প্রয়োগের দরকার হয় না । প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অণুবীজ সার প্রয়োগ করতে হবে ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের নিকটস্থ মাসকলাই ফসলের ক্ষেত পরিদর্শন করবে এবং মাসকলাই ফসল উৎপাদনের ধাপগুলো লিখে দলীয়ভাবে জমা দিবে ।

অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

  • চারা গজানোর পরে আগাছা দেখা দিলে ১৫-২০ দিন পর নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে ।
  • জলাবদ্ধতার আশঙ্কা থাকলে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে ।
  • বপনের পর জমিতে রসের পরিমাণ কম বা অভাব হলে হালকা সেচ দিতে হবে।
  • সেচের পর ‘জো’ অবস্থায় মাটির উপরের শক্ত স্তর ভেঙে দিতে হবে ।
  • ফসলের জমিতে পোকা ও রোগের আক্রমণ দেখা দিলে তা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে ।

রোগ ব্যবস্থাপনা

ক) মাসকলাইয়ের পাতার দাগ রোগ

রোগের কারণ ও বিস্তার
সারকোস্পোরা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগটি হয় । পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে । অধিক আর্দ্রতা ও উচ্চতাপে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে ।

রোগের লক্ষণ
আক্রান্ত পাতার উপর ছোট ছোট লালচে বাদামি গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে । আক্রান্ত অংশের কোষসমূহ শুকিয়ে যায় এবং পাতা ছিদ্র হয়ে যায় । আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায় ।

প্রতিকার
রোগ প্রতিরোধী জাতের (পান্থ, শরৎ ও হেমন্ত) মাসকলাই চাষ করতে হবে । আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে ।

খ) পাউডারি মিলডিউ রোগ

রোগের কারণ ও বিস্তার
ওইডিয়াম প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে । সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের অধিক প্রকোপ দেখা যায় । বীজ, পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে ।
রোগের লক্ষণ
পাতার উপর পৃষ্ঠে পাউডারের মতো আবরণ পড়ে । হাতে স্পর্শ করলে পাউডারের গুঁড়ার মতো লাগে ।

প্রতিকার
বিকল্প পোষক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। টিল্ট বা থিওভিট প্রয়োগ করতে হবে । রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে । ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করতে হবে ।

গ) হলদে মোজাইক ভাইরাস

রোগের কারণ ও বিস্তার মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে । আক্রান্ত বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে । সাদা মাছি এ রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে ।

রোগের লক্ষণ
কচি পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয় । আক্রান্ত পাতার উপর হলদে সবুজ দাগ পড়ে । দূর থেকে আক্রান্ত জমি হলদে মনে হয় ।

প্রতিকার
রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে। সাদা মাছি দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন স্প্রে করতে হবে । আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে । শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে । রোগ প্রতিরোধী জাতের মাসকলাইয়ের চাষ করতে হবে ।

পোকা ব্যবস্থাপনা
মাসকলাই ফসলে বিছা পোকার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে । এ পোকা পাতা, অপরিপক্ক সবুজ ফলের রস খেয়ে ফেলে । পাতাসহ সমস্ত গাছ সাদা জালিকার মতো হয়ে যায় । ফলে ফলন কমে যায় । এ পোকার আক্রমণ দেখা দিলে হাত দ্বারা সেগুলোকে সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে । আক্রমণ বেশি হলে পরিমাণ মতো সাইপারমেথ্রিন ইসি এক লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । এছাড়া গুদামজাত মাসকলাই ডাল পূর্ণবয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয়ই ক্ষতি করে থাকে । এ পোকা ডালের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খেতে থাকে। ফলে দানা হালকা হয়ে যায়। এর ফলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং খাওয়ার অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ে । গুদামজাত করার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে দানা শুকিয়ে দানার আদ্রর্তা ১২% এর নিচে আনতে হবে । বীজের জন্য টনপ্রতি ৩০০ গ্রাম ম্যালাথিয়ন বা সেভিন শতকরা ১০ ভাগ গুঁড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় ।

ফসল কাটা, মাড়াই ও গুদামজাতকরণ
খরিপ-১ মৌসুমে মে মাসের শেষ এবং খরিপ-২ মৌসুমে অক্টোবর মাসের শেষে ফসল সংগ্রহ করা হয় । পরিপক্ক হলে সকালের দিকে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। জাতের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী একবার বা ২-৩ বার ফসল সংগ্রহ করতে হবে । প্রথম দিকে পরিপক্ব ফল হাত দিয়ে এবং শেষবারের বেলায় কাঁচি দিয়ে গাছগুলো গোড়া থেকে কেটে নিতে হবে । গাছগুলো রোদে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা গরু দিয়ে মাড়াই করে বীজ সংগ্রহ করতে হবে । সংগৃহীত বীজ রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার ও ঠাণ্ডা করে মাটি বা টিনের পাত্রে মুখ বন্ধ করে গুদামজাত করতে হবে ।

ফলন
জাত ভেদে মাসকলাইয়ের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১.৫-২ টন হয়ে থাকে ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলীয়ভাবে ধান, পাট, সরিষা ও মাসকলাই ফসলের পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের একটি তালিকা তৈরি করে বিষয় শিক্ষকের নিকট জমা দিবে 

 

Content added || updated By