অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি - শব্দার্থ | NCTB BOOK

বাংলা ভাষায় কতগুলো শব্দ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ্য, বিশেষণ ও ক্রিয়া জাতীয় এই পদগুলো বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে। এগুলো একদিকে যেমন একটি শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে, অপরদিকে তেমনি বাক্যের সৌন্দর্য সাধন করে থাকে। যেমন :

 

১. কথা

উক্তি রবীন্দ্রনাথের কথা, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে। ' :

তর্ক এই ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে।

প্রতিশ্রুতি : তোমাকে আমি কথা দিলাম।

প্রস্তাব : তোমার কথায় আমি রাজি।

তিরস্কার : পড়া না পারায় স্যারের কাছে কথা শুনতে হলো।

প্রসঙ্গক্রমে : কথায় কথায় তোমার নামটি এসে গেল।

 

২. কান

শ্রবণ অঙ্গ : নোভা কানে দুল পরেছে।

বধির : লোকটি কানে শোনে না।

কর্ণগোচর : কথাটা বড় সাহেবের কানে পৌঁছেছে।

মনোযোগ : আমার কথায় কান দাও।

প্ৰকাশ : কথাটা পাঁচ কান করো না।

নির্লজ্জ : সানুর মতো দুকান কাটা লোক আর দেখি নি৷

 

৩. কাঁচা

অপক্ব : আমটি কাঁচা হলেও বেশ মিষ্টি।

অসিদ্ধ : কাঁচা দুধ সবার হজম হয় না।

অপূর্ণ : আমার কাঁচা ঘুমটি ভাঙালে কেন?

অদক্ষ : কাঁচা লোক দিয়ে বাড়ি বানিয়ো না।

অশুষ্ক : কাঁচা কাঠে আগুন জ্বলে না।

অপরিণত : এই শক্ত কাজের জন্য ছেলেটি বড্ড কাঁচা।

দুর্বল : ছেলেটি অঙ্কে কাঁচা।

 

৪. কাটা

ক্ষত : কাটা ঘায়ে আর নুনের ছিটা দিও না।

নষ্ট : পোকায় কাটা বইগুলো আর পড়ার মতো নেই।

চুরি : পরের গাঁট কাটা ওর স্বভাব।

ছোবল : সাপে কাটা লোকটিকে সবাই দেখতে এসেছে।

ছন্দপতন : তাল কাটা গান শুনতে ভালো লাগে নাকি?

 

৫. খাওয়া

ভোজন : আমার খাওয়া হয়েছে।

ঘুষ : মনির সাহেবকে সবাই টাকা খাওয়া অফিসার হিসেবেই চেনে।

বাধা : কাজের শুরুতেই ধাক্কা খাওয়া ভালো লক্ষণ নয়৷

দিব্যি : মাথা খাও, এখন যেও না।

তিরস্কার : শিক্ষকের কাছে ধমক খাওয়া বিথুর নিত্যদিনের অভ্যাস।

মানিয়ে চলা : সংসারে সবার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয়।

 

৬. গরম

উষ্ণ : এক কাপ খুব গরম চা দাও।

গ্রীষ্ম : বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গরমকাল

উগ্র : তোমার গরম মেজাজকে আমি ভয় পাই না।

অহংকার : দু নম্বরি টাকার গরমে রহিমের পা যেন মাটিতে পড়ে না।

চড়া : সরবরাহ কম থাকলে বাজার গরম থাকে।

শীত নিবারক : শীতকালে গরম কাপড় না হলে চলে না।

 

৭. গা

শরীর : রোমানার গায়ের রং ফর্সা।

গ্রাহ্য : তার কোনো কথাই আমি গায়ে মাখি না।

ঈর্ষা : পরের ভালো দেখলে কারো কারো গা জ্বলে।

পরিধান : গায়ে নতুন জামা দেখছি, কবে কিনলে?

আত্মগোপন : পুলিশ দেখে চোরটি গা-ঢাকা দিল।

অভ্যস্ত : মাস্তানদের দৌরাত্ম্য এখন গা সওয়া হয়ে গেছে।

 

৮. গলা

গ্রীবা : চিড়িয়াখানায় লম্বা গলার জিরাফ দেখেছি।

কণ্ঠ : তার সুরেলা গলার গান ভোলা যায় না।

প্রীতির ভাব : ওদের দুজনের বেশ গলায় গলায় ভাব।

বোঝা : পরের গলগ্রহ হয়ে থাকার ইচ্ছে আমার নেই।

অপমান : লোকটাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও।

 

৯. চাল

তণ্ডুল : ঘরে চাল বাড়ন্ত, খাবে কী?

ঘরের ছাদ : ফুটো চাল দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে।

আচার-ব্যবহার : তার চাল-চলন মোটেই ভালো নয় ৷

মতলব : সেলিম খুব গভীর জলের মাছ, তার চাল বোঝা কঠিন।

আড়ম্বর : রহিমের বাইরেই যত চাল, ভেতরে একেবারেই ফাঁপা।

ঘর-সংসার : চাল-চুলোর ঠিক নেই, তোমাকে মেয়ে দেবে কে?

 

১০. চোখ

আঁখি : আমরা চোখ দিয়ে দেখি।

দৃষ্টি পুলিশের চোখ আসামির দিকে।

ফাঁকি : চোরটি পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে গেল।

রোগ : রফিকের চোখ উঠেছে বলে ভীষণ কষ্টে আছে।

ভয় দেখানো : আমাকে চোখ রাঙিয়ে লাভ হবে না।

লজ্জা : তোমার চোখের চামড়া থাকলে আর আমার সামনে আসতে না।

 

১১. ছোট

কনিষ্ঠ : রবিন আমার ছোট ভাই।

নীচ : তোমার মতো ছোট মনের মানুষ আমি আর দুটো দেখি নি।

হীন : ছোট কাজ বলে কিছু নেই।

বিনীত : বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।

হেয় করা : জাতের কথা বলে কাউকে ছোট করা ঠিক না।

 

১২. ছাড়া

ত্যাগ : তার মতো সংসার ছাড়া লোক আমি আর দেখি নি।

মুক্তি : মাসুম আজই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।

শ্ৰীহীন : লক্ষ্মীছাড়া সংসারে ভালো কিছু চিন্তা করাই ভুল।

উচ্চস্বরে : গান শিখতে হলে ছাড়া গলায় প্রতিদিন রেওয়াজ করতে হবে।

ব্যতীত : সত্যের পথ ছাড়া মুক্তি নেই।

 

১৩. তাল

তবলার বোল : তবলায় তাল বেজেছে তাক ধিনা ধিন্‌ ধিন্

ছন্দহীন : তাল কাটা গান ভালো লাগে না।

ফল বিশেষ : ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে। '

ধীরে : বাড়ি তৈরির কাজ ঢিমা তালে চলছে।

মানিয়ে চলা : সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলার মেয়ে মিনি নয়।

 

১৪. তোলা

উত্তোলন : ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে।

উত্থাপন : কথাটা আমার তোলার কথা না, তুমি বল।

সংগ্ৰহ : সরকার যেকোনো ধরনের চাঁদা তোলা নিষিদ্ধ করেছে।

ছেঁড়া : গাছ থেকে ফুল তুলো না।

গ্রাহ্য করা : সে আমার কথা কানেই তুলল না।

 

১৫. ধরা

আটক : চোরটাকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে।

স্পর্শ : তোমার হাতখানা একবার ধরতে চাই।

ভালো লাগা : তার গল্পটি আমার মনে ধরেছে।

নির্ধারণ তুমি নিজে থেকে একটা দাম ধরে দাও। :

তোষামুদে : সংসারে ধামাধরা লোকের অভাব নেই৷

যন্ত্রণা : মাথাটা বড্ড ধরেছে।

 

১৬. নাক

নাসিকা : তিসা নাকে নথ পরেছে।

শব্দ করা : ঘুমের মধ্যে অনেকেই নাক ডাকে।

নিশ্চিন্ত : পরীক্ষা শেষ, এবার নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও৷

ক্ষতি : নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করে তোমার কী লাভ হলো?

অনধিকার চর্চা : আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না।

 

১৭. নাম

পরিচয় : তোমার নাম কী?

খ্যাতি : ক্রিকেট খেলে রাজন বেশ নাম করেছে।

খ্যাতিমান : তিনি একজন নামকরা উকিল৷

স্মরণ : সব সময় সৃষ্টিকর্তার নাম নেবে।

স্বল্পমূল্য : নামমাত্র দামে বাড়িটি বিক্রি হয়ে গেল।

উল্লেখ : একটা নদীর নাম বল

 

১৮. পাকা

পরিপক্ব : আমটি পাকা।

অকালপক্ব : ছেলেটির বয়স অল্প, কিন্তু কথায় পাকা।

নিপুণ : মিনা ইংরেজিতে পাকা।

দক্ষ : পাকা মিত্রি দিয়ে বাড়ি বানিয়েছি।

স্থায়ী : কাপড়টির রং পাকা।

পুরোপুরি : পাকা চল্লিশ দিন স্কুল ছুটি।

 

১৯. বড়

অগ্রজ : রাম আমার বড় ভাই।

দীর্ঘ : পদ্মা বাংলাদেশের বড় নদী।

ধনী : লোকমান সাহেব বড়লোক৷

অত্যন্ত : বড় বিপদে পড়ে তোমার কাছে এসেছি।

উন্নতি করা : বড় হও নিজের চেষ্টায়।

আত্মীয় : বাড়িতে বড় কুটুম এসেছে।

 

২০. বুক

বক্ষ : বাবার বুকে হঠাৎ ব্যথা উঠেছে।

সাহস : তোমার দেখছি খুব বুকের পাটা!

গর্ব : তোমার কৃতিত্বে আমাদের বুক ফুলে উঠেছে।

শান্তি : এসির বাতাসে বুকটা জুড়িয়ে গেল।

হতাশ : রিতা ফেল করেছে শুনে তার বাবার বুকটা যেন ভেঙে গেল।

ভীষণ কষ্ট : বন্ধুর মৃত্যুর খবরে আমার বুক ফেটে কান্না আসছিল।

 

২১. ভালো

কুশল : ভালো আছ তো?

মঙ্গল : ঈশ্বর সবার ভালো করুন৷

স‍ৎ : চৌধুরী সাহেব খুব ভালো লোক।

সুন্দর : মেয়েটির চেহারা এত ভালো যে কী বলব!

হিতবাক্য : ভালো কথা শুনলে তোমারই মঙ্গল

সুখবর : তোমার জন্য একটা ভালো খবর আছে।

 

২২. মন্দ

খারাপ : মন্দ লোকের সাথে মিশতে নেই।

অসৎ : মন্দ কাজের পরিণাম ভালো হয় না।

অশুভ : লোকটি মন্দভাগ্য নিয়েই জন্মেছে।

ধীরে ধীরে : জাহাজটি মন্দ মন্দ এগুচ্ছে।

দাম কমা : শেয়ার-বাজারে অধিকাংশ শেয়ারের দামই এখন মন্দা ৷

 

২৩. মাথা

মস্তক : তার মাথায় অনেক চুল।

প্রধান : তিনি এ গাঁয়ের মাথা ৷

প্ৰণাম : ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা। ’

সংযোগস্থলে : রাস্তার চৌমাথায় আমাদের বাড়ি।

পরিশ্রমে : শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করে৷

বুঝতে পারা : অঙ্কটি আমার মাথায় ঢুকছে না।

 

২৪. মুখ

শরীরের অঙ্গ : তোমার মুখটা ভীষণ সুন্দর।

কথা : ‘মুখে মধু অন্তরে বিষ। ”

সংযত : মুখ সামলে কথা বলো।

ক্ষমতা : ‘যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা। '

প্রবেশপথ : গলির মুখেই আমাদের বাড়ি।

সাহস : মুখ ফুটে কথাটা বলে ফেল।

 

২৫. মাটি

ধুলা / কাদা : ছেলেটি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে।

শান্ত / সরল : রফিক সাহেব একজন মাটির মানুষ।

বোকামি : শেয়ারের ব্যবসায় নেমে একেবারে মাটি খেয়েছি।

কবর : তাকে কোথায় মাটি দেওয়া হবে আমি জানি না।

নষ্ট : পড়াশুনা না করে জীবনটা মাটি করো না।

নাছোড়বান্দা : সরকারি কাজ পেতে হলে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয়।

 

২৬. রাখা

স্থাপন : বইগুলো জায়গামতো রাখো

গচ্ছিত : টাকাগুলো ব্যাংকে রেখে এসো।

আশ্ৰয় : আমাকে তোমার পায়ে রাখো প্রভু।

নামকরণ : ‘নাম রেখেছি বনলতা। ”

সম্মান : ছেলেটি বাবার নাম রেখেছে।

ফেলে আসা : টাকার থলিটি রেখে এসেছি।

 

২৭. লাগা

স্পর্শ : তোমার শরীরে কি আমার হাত লেগেছে।

থামা : নৌকাটি ঘাটে লেগেছে।

নিযুক্ত : সুমন কাজে লেগে গেছে।

শুরু : সূর্যগ্রহণ লাগার সময় হয়ে এসেছে।

শত্রুতা : কারও পিছনে লাগা ঠিক না।

 

২৮. লাল

রং : লাল জামাতে তোমাকে বেশ মানিয়েছে।

জেলখানা : মস্তানি করলে লালদালানে পাঠিয়ে দেব।

বন্ধ হওয়া : অসৎ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে তার ব্যবসায় লালবাতি জ্বলেছে।

ক্রোধ : আমাকে লালচোখ দেখিও না, আমি ভয় পাই না।

পুত্র : “আম্মা লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া। ”

 

২৯. লোক

মানুষ : রহিম সাহেব ভালো লোক।

জনসাধারণ : খারাপ কাজ করলে লোকনিন্দা শুনতে হয়৷

মৃত্যু : জসিম সাহেব গতকাল পরলোকগমন করেছেন।

মজুর : লোক দিয়ে কাজ করালে নজর রাখতে হয়।

গল্প : শিশুরা লোক-কাহিনি শুনতে ভালোবাসে।

 

৩০. সারা

সমগ্র / সব : সারা গ্রাম জুড়ে হৈচৈ পড়ে গেছে।

আকুল শিশুটি মাকে খুঁজে না পেয়ে কেঁদে সারা হলো।

মেরামত : নৌকার ফুটো সারা হয়েছে।

সমাপ্ত : যাক্, এতক্ষণে কাজটি সারা হয়েছে।

হয়রান / ক্লান্ত : রৌদ্রে ঘুরে ঘুরে সারা হয়েছি।

Content added || updated By