নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - গৃহসম্পদের ব্যবস্থাপনা | NCTB BOOK

গৃহ ব্যবস্থাপনায় অর্থকে বস্তুবাচক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থ বস্তুবাচক সম্পদগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান। মানবজীবনে অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের যে কোনো চাহিদা পূরণ করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় অর্থের। অর্থের বিনিময়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সেবা সংগ্রহ করি। অর্থকে সুষ্ঠু সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের অসীম চাহিদাগুলো সীমিত অর্থ দ্বারা পূরণ করা সম্ভব। অর্থ ব্যবস্থাপনা বলতে বোঝায় লক্ষ্য অর্জন বা চাহিদা পূরণ করতে অর্থকে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে। গৃহ ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলো অর্থ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন-চাহিদা পূরণ করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা, পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করা এবং সবশেষে মূল্যায়ন করা। পরিবার বিভিন্ন ভাবে আয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে। অন্যান্য সম্পদের মতো পরিবারের অর্থসম্পদও সীমিত। যেহেতু অর্থ একমাত্র বিনিময়ের মাধ্যম তাই অর্থ দিয়েই আমাদের সব চাহিদা পূরণের উপকরণগুলো সংগ্রহ করতে হয়। ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য আমরা অর্থ সঞ্চয় করতে পারি। মূল্যবান সম্পদকে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যয় করতে যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তা বাজেট নামে পরিচিত।

বাজেট

বাজেট হচ্ছে অর্থ ব্যয়ের পূর্বপরিকল্পনা। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট আয়ের ব্যয় সঞ্চয় করার পূর্বপরিকল্পনা হচ্ছে বাজেট। বাজেটে সম্ভাব্য আয়কে কোন কোন খাতে, কোন কোন সময়ে কী পরিমাণে ব্যয় করা হবে, তার লিখিত বিবরণ থাকে। সুপরিকল্পিতভাবে ব্যয় করলে মূল্যবান অর্থের অপচয় ঘটে না। অধিকন্তু আমাদের সব চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে

বাজেটের প্রয়োজনীয়তা

বাজেট অর্থ ব্যয়ের একটি চমৎকার কৌশল। বাজেট সীমিত অর্থে আমাদের সকল চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। বাজেটের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রয়োজনীয়তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো

  • বাজেট পরিবারের আয় ব্যয় সম্বন্ধে ধারণা দেয়।
  • পরিবারের অপচয় রোধ করে স্বচ্ছলতা আনয়নে সাহায্য করে।
  • ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে।
  • গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করে
  • বাজেট পরিবারের সদস্যদের মিতব্যয়ী হতে সাহায্য করে।
  • বাজেট করে অর্থ ব্যয় করলে সময় শক্তির সাশ্রয় হয়।
  • বাজেট পরিবারের সদস্যদের সকল চাহিদা পূরণ করে তাদের সন্তুষ্টি দিতে পারে।

বাজেটের খাত

প্রকৃত বাজেট প্রস্তুত করার সময় কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় করতে হবে সেগুলো স্থির করতে হয়। পারিবারিক জীবন যাপনের যেসব ক্ষেত্রে ব্যয় করতে হয়, সেগুলোই বাজেটের খাত হিসেবে পরিচিত। গুরুত্ব অনুযায়ী খাতগুলো সাজিয়ে নিয়ে প্রতিটি খাতের মধ্যে কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। খাতগুলো সাজানো হয় পরিবারের প্রয়োজনের গুরুত্ব অনুসারে। জীবনধারণের প্রয়োজনে সাধারণত খাতগুলো নিম্নোক্তভাবে সাজানো থাকে-

খাদ্য

ক) শুকনা বাজার, যেমনচাল, আটা, ডাল, চিনি, চা, সেমাই, বিভিন্ন শুকনা মসলা ইত্যাদি। খ) কাঁচাবাজার, যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ,

শাকসবজি, ফল ইত্যাদি।

বাসস্থান

ক) ভাড়া খ) বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, জ্বালানি খরচ ইত্যাদি ।

গ) নিজস্ব বাড়ির ট্যাক্স, মেরামত ও যত্নবাবদ ব্যয় ইত্যাদি।

ক) বস্ত্র ও পোশাক ক্রয় খ) পোশাক তৈরি ও মেরামত গ) বস্ত্র ধৌত ও ইস্ত্রি।

শিক্ষা

ক) স্কুল-কলেজের বেতন

খ) বই, খাতা, কলম, পেনসিল ইত্যাদি।

গ) গৃহশিক্ষকের বেতন।

চিকিৎসা

ক) চিকিৎসকের ফি খ) ওষুধ ও পথ্য

সদস্যদের ব্যক্তিগত কার্যাবলি

ক) ভাতা বা হাত খরচ খ) আমোদ-প্রমোদ ব্যয় ।

অন্যান্য খরচ

ক) মেহমানদারি খ) উপহার ও চাঁদা

গ) যাতায়াত

ঘ) খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন ইত্যাদি ।

ঙ) গৃহকর্মীর বেতন।

সঞ্চয়

ক) ভবিষ্যৎ তহবিল

খ) ব্যাংক, ইনসিউরেন্স, প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি।

কাজ – ‘প্রকৃত বাজেট সময় ও শক্তির সাশ্রয় করে- তোমার যুক্তিগুলো লিপিবদ্ধ কর। -

Content added || updated By