নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - গৃহসম্পদের ব্যবস্থাপনা | NCTB BOOK

বাজেট তৈরির কতকগুলো নিয়ম আছে, যা অনুসরণ করে প্রকৃত বাজেট তৈরি করা যায়। প্রতিটি কাজ যেমন নিয়ম মাফিক না করলে কাজগুলো সঠিক ও সুন্দরভাবে করা সম্ভব হয় না, তেমনি বাজেট করার সময় নিয়ম অনুযায়ী না করলে বাজেট যথার্থ এবং কার্যকরী হবে না। বাজেট তৈরি করার নিয়মগুলো নিচে বর্ণিত হলো-

  • বাজেট সাধারণত মাসিক ভিত্তিতে করা হয়। তাই মাসের সম্ভাব্য মোট আয় নির্ধারণ করে নিতে হবে। আয়ের হিসাব করার সময় পরিবারের সব রকম উৎসের দিকে নজর দিতে হবে। যেহেতু অর্থ দিয়ে বাজেট করতে হয়, তাই পরিবারের মোট আর্থিক আয় নির্ণয় করতে হবে।
  • যে সময়ের বাজেট করা হবে সে সময়ে পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবাকর্মের একটি তালিকা নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোকে প্রধান প্রধান খাতে শ্রেণিভুক্ত করে প্রত্যেক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দ্রব্যের নাম উল্লেখ করতে হবে।
  • তালিকাভুক্ত প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করার আগে সব জিনিসের বাজারদর সঠিকভাবে জানতে হবে। এরপর সবগুলোর মূল্য একত্রে বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মতামত নেওয়া ভালো। বিভিন্ন সদস্যদের কাছ থেকে দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যেতে পারে। ভালোভাবে না জেনে জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করলে বাজেট বাস্তবায়নে অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • আনুমানিক আয়ের সাথে ব্যয়ের একটা সমতা রক্ষা করতে হবে। মোট আয় জানার পর সম্ভাব্য ব্যয়ের টাকার পরিমাণের সঙ্গে হিসাব করে দেখতে হবে যেন আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমতা থাকে। ব্যয় যেন কখনোই আয়ের অংক থেকে বেশি না হয়। তবে পারিবারিক আয় বাড়িয়ে অথবা খরচের পরিমাণ কমিয়ে এ অবস্থার মোকাবিলা করা যায় ৷
  • কোন খাতে কতো ব্যয় করা যাবে তা নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত খাদ্য খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বাজেটে খাদ্য খাতে শতকরা ৪০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে নিম্নবিত্তের বাজেটে এ খাতে আয়ের শতকরা ৮০ ভাগ খরচ হতে পারে। আয় যত বাড়ে শতকরা হারে খাদ্য খাতে ব্যয়ও তত কমে যায়। সাধারণত সর্বনিম্ন বরাদ্দ দেওয়া হয়- সঞ্চয়, চিকিৎসা ইত্যাদি খাতে।
  • পরিশেষে বাজেটটিকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যেন তা বাস্তবায়ন করা যায়। কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখলে বাজেটকে বাস্তবমুখী করা যায়। যেমন- প্রত্যেক সদস্যের প্রয়োজনগুলোর দিকে খেয়াল রাখা, জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য কিছু বাড়তি অর্থ সব সময় হাতে রাখা, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের দিকে খেয়াল রাখা ইত্যাদি।

 

একটি মাসিক বাজেটের নমুনা দেওয়া হলো- পরিবারের মাসিক মোট আয়- ৩০,০০০/- টাকা

সদস্য সংখ্যা-৪ জন।

খাত

১। খাদ্য

ক) শুকনা বাজার

5000/- 1000/-

মোট খরচ (টাকা)

শতকরা হার %

80%

৩০%

খ) কাঁচাবাজার

২। বাসস্থান

ক) ভাড়া

খ) বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, জ্বালানি খরচ ইত্যাদি।

৩। ক

ক) বস্ত্র ও পোশাক ক্রয়

খ) পোশাক তৈরি ও মেরামত গ) বস্ত্র ধৌত ও ইস্ত্রি।

৪ ৷ শিক্ষা

ক) স্কুল-কলেজের বেতন

খ) বই, খাতা, কলম, পেনসিল ইত্যাদি।

গ) গৃহশিক্ষকের বেতন

সম্ভাব্য খরচ (টাকা)

১২,০০০/-

1000/- 2000/-

$,000/-

1000/- 800/- 200/-

১,৬০০/-

«.00%

1000/- 500/- 2000/-

3500/-

২০১৮

11.67%

 

৫। চিকিৎসা

800/-

ক) চিকিৎসকের ফি

200/-

600/-

খ) ঔষধ ও পথ্য

2%

৬। সদস্যদের ব্যক্তিগত কার্যাবলি

৩০০/- 800/-

ক) ভাতা বা হাত খরচ

খ) আমোদ-প্রমোদ ব্যয় ।

900/-

৭। অন্যান্য খরচ

800/-

2.33%

ক) মেহমানদারি

800/-

200/-

খ) উপহার ও চাঁদা

২২০০/-

9.00%

গ) যাতায়াত

200/-

1000/-

ঘ) খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন ইত্যাদি। ঙ) গৃহকর্মীর বেতন।

800/-

800/-

00,000/-

১.৩৩% ১০০%

৮। সঞ্চয়

800/-

00,000/-

১.৩৩% ১০০%

 

বিঃদ্রঃ বর্তমান সময়ের বাজার মূল্যের আলোকে বাজেটটি শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ব্যাখ্যা করবেন। মন্তব্য উল্লিখিত বাজেটটিতে আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ সমান। এ রকম বাজেটকে সুষম বাজেট বলে। যে বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়, তাকে বলে ঘাটতি বাজেট। এ ছাড়া বাজেটে যদি আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হয় সেটি হচ্ছে উদ্বৃত্ত বাজেট। উদ্বৃত্ত বাজেট হলো সবচেয়ে ভালো বাজেট। ঘাটতি বাজেট কখনোই কাম্য নয় ৷ কারণ এ রকম বাজেটে ঋণের বোঝা বাড়ে ৷

কাজ – অভিভাবকের সহায়তায় তুমি তোমার পরিবারের মাসিক বাজেট তৈরি কর।

 

Content added By