নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জা | NCTB BOOK

আসবাব নির্বাচনের পরবর্তী কাজ হলো সঠিকভাবে তা বিন্যাস করা। আসবাবপত্র বিন্যাস যে শুধু ঘর সাজানোর উদ্দেশ্যে করা হয়তা নয়। সঠিকভাবে আসবাব বিন্যাসের মাধ্যমে গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জাকে আকর্ষণীয়, আরামদায়ক সুবিধাজনক করে রাখা হয়। এর ফলে পরিবারের সদস্যদের আরাম মানসিক তৃপ্তি বাড়ে।

গ্রাম কিংবা শহরে সর্বত্রই অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জায় আসবাব বিন্যাসের কতিপয় নিয়ম মেনে চলতে হয়। যথা:

 প্রয়োজনীয় আসবাব বিন্যাস আসবাব বিন্যাসের প্রথমেই মনে রাখা প্রয়োজন যে কোনো ঘরেই অতিরিক্ত আসবাব রাখতে নেই। বাসগৃহের জন্য আসবাবপত্র বিন্যাসের সময় প্রথমে দেখতে হবে কক্ষটি কী কাজে ব্যবহার হবে। কক্ষের ব্যবহার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আসবাব রাখতে হবে। যেমন :

শয়ন কক্ষ খাট, ওয়ারড্রোব, আলনা, আলমারি ইত্যাদি।

বসার কক্ষ সোফাসেট, বেতের চেয়ার, টেবিল, সোকেস, বুকসেলফ ইত্যাদি।

খাবার কক্ষ ডাইনিং টেবিল, সোকেস, ফ্রিজ ইত্যাদি।

পড়ার কক্ষ বুকসেলফ, টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার ইত্যাদি।

  • ব্যবহারিক সুবিধা- আসবাবপত্র বিন্যাসের সময় আসবাবের ব্যবহারিক দিকটি বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি কক্ষের কাজ অনুযায়ী আসবাব সাজাতে হবে।
  • চলাচলের সুবিধা গৃহের মধ্যে চলাচল, কাজ সম্পাদনের সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে আসবাবপত্র সাজাতে হবে। ঘরের মধ্যে একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচলে যেন অসুবিধা না হয় কার্য সম্পাদনে যেন অতিরিক্ত চলাচল প্রয়োজন না হয় আসবাব বিন্যাসের সময় সে দিকে লক্ষ রাখতে হয়। যেমন: বুক সেলফটিকে পড়ার টেবিলের পাশেই রাখতে হয়। ঘরে ছোট শিশু থাকলে তাদের ক্রিয়াকলাপের প্রতি খেয়াল রেখে আসবাবপত্র সাজানো শ্রেয়। শিশুরা যাতে ঘরময় স্বাধীন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে সে বিষয়ে লক্ষ রাখা প্রয়োজন
  • কাজ অনুযায়ী আসবাব বিন্যাসআসবাব সজ্জা এমন হতে হবে যেন কাজের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ যে কক্ষে যে যে কাজ সম্পন্ন হয় তার সাথে সম্পর্কযুক্ত আসবাব স্থাপন করতে হয়।
  • আলো-বাতাস চলাচল সুবিধা আসবাবসমূহ এমনভাবে বিন্যাস করতে হবে যাতে দরজা-জানালা খুলতে এবং বন্ধ করতে কোনো অসুবিধা না হয়। ছাড়া গৃহের অভ্যন্তরে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও ব্যাহত হয়
  • দেয়াল ঘেষে বিন্যাস না করা- আসবাব বিন্যাসের সময় মনে রাখতে হবে যে টেবিল, চেয়ার, সোফা ইত্যাদি কখনো দেয়াল ঘেষে রাখতে নেই। দেয়াল হতে একটু সামান্য দূরত্বে স্থাপন করতে হয়। তা না হলে ঘষা লেগে দেয়ালের রং নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং আসবাবপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আসবাবপত্র বিন্যাসের মাধ্যমে কক্ষের গঠনগত ত্রুটি ঢেকে রাখা যায়।
  • গৃহসজ্জায় নতুনত্ব আনা- আসবাবপত্র বিন্যাস কখনো স্থায়ীভাবে একই জায়গায় করা উচিত নয়। এতে গৃহসজ্জায় একঘেঁয়েভাব চলে আসে। মাঝে মাঝে আসবাবপত্রের বিন্যাসে রুচির রদবদল করলে গৃহসজ্জায় নতুনত্ব আসে।
  • শিল্পনীতির প্রয়োগ আসবাব বিন্যাসের উপর গৃহসজ্জার সৌন্দর্য নির্ভর করে। এই শিল্পরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে গেলে শিল্প সৃষ্টির মূলনীতি যথাসমানুপাত, সামঞ্জস্য, ভারসাম্য, ছন্দ এবং প্রাধান্য বজায় রাখতে হয়। নিম্নে আসবাব বিন্যাসে শিল্পনীতির প্রয়োগ বর্ণনা করা হলো

 

. সমানুপাত (Proportion)- আসবাব বিন্যাসে ঘরের আকৃতির সাথে আসবাবপত্রের আকার নির্ধারন করা দরকার। বড় ঘরে বড় আসবাব ছোট ঘরের জন্য ছোট আসবাব মানানসই। আবার যেখানে বড় ছোট আসবাবের সংমিশ্রণ প্রয়োজন সেখানে বড় আসবাবের সঙ্গে সমতা রক্ষা করে ছোট দুই-তিনটি আসবাব একত্রে সাজানো যায়। আসবাবপত্রের পরস্পরের আকৃতির অনুপাত ঠিক হলে সমগ্র গৃহসজ্জার আসবাব বিন্যাসে পারস্পরিক মিত্রতা বা মিল হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

. ভারসাম্য (Balance) - আসবাবপত্র বিন্যাসে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজন আছে। কক্ষের একদিকের সঙ্গে অন্য দিকের আসবাবপত্রের, মাঝখানের কর্নারের আসবাবপত্রের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। ঘরের একদিকে বেশি অন্য দিকে কম আসবাব সংস্থাপন করলে ভারসাম্য রক্ষা হয় না। একটি কক্ষের দুই দিকের আসবাবের গুরুত্ব সমান হলে তাকে প্রত্যক্ষ ভারসাম্য বলে। অন্যদিকে একপাশের জিনিসে বেশি গুরুত্ব থাকলে অর্থাৎ বেশি সাজানো থাকলে তাকে অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য বলে। অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য গৃহসজ্জায় নতুনত্ব আকর্ষণ সৃষ্টি করে।

. সামঞ্জস্য (Harmony) - সবার সাথে সবার মিত্রতাকেই সামঞ্জস্য বলে। ঘরে কেবল দামি আসবাব, চিত্রকর্ম, সো-পিস থাকলেই হবে না। সবকিছুর সাথে একটা সামঞ্জস্য থাকতে হবে।

. ছন্দ (Rhythm)- আসবাব বিন্যাসে ছন্দ বজায় রাখা দরকার, এতে দৃষ্টি কক্ষের একটা আসবাবে আবদ্ধ না থেকে সহজ সাবলীল ভঙ্গিতে অন্য আসবাবে গিয়ে পৌঁছায়। কক্ষের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দৃষ্টি উঠানামা করে। দৃষ্টির এই উঠানামাই ছন্দ ছন্দের গতি আসবাব বিন্যাসে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। একঘেয়েমি দূর করে এবং নতুনত্ব আনয়ন করে।

ঙ. প্রাধান্য (Emphasis)- আসবাব বিন্যাসের অন্যতম নীতি হলো প্রাধান্য। প্রাধান্য বলতে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুকে বোঝায়। বসার ঘরে সুদৃশ্য সেন্টার টেবিলে ফুলদানিতে তাজা ফুলের সমারোহ, খাবার ঘরে টেবিলে বিভিন্ন ফলের সমারোহ, শোবার ঘরে সুদৃশ্য আসবাব বা কার্পেট ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজিয়ে প্রাধান্য সৃষ্টি করা যায়।

কাজ : তুমি তোমার কক্ষে আসবাব বিন্যাসে কী কী বিষয় লক্ষ রাখবে লেখ।

Content added By

Promotion