নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জা | NCTB BOOK

আসবাবপত্র নির্বাচন, বিন্যাসের পরই মানুষ চায় গৃহের মেঝে, দেওয়াল, পর্দা পুষ্প বিন্যাসের মাধ্যমে গৃহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে। সব কিছুর সামঞ্জস্য বিন্যাসই একটি গৃহকে অপরূপ করে তোলে। সুরুচির প্রকাশ ঘটায়

মেঝের আচ্ছাদন আমাদের দেশে ঘরের মেঝে সিমেন্টের বা সিমেন্টের সাথে রং মিশিয়ে মেঝে তৈরি করা হয়। গ্রামাঞ্চলে মাটির মেঝে থাকে। তবে আধুনিক বাড়িতে টাইলস বা মোজাইকের মেঝে দেখা যায়। শহরাঞ্চলে মেঝেতে কার্পেট ব্যবহার করা হয়। কার্পেট আসবাবের সাথে মানানসই হতে হবে। আমাদের দেশে ধুলা বেশি তাই ছোট আকারের কার্পেট ব্যবহার ভালো এতে যত্ন নিতে সহজ হয়।

দেয়াল সজ্জা প্রতিটি গৃহেরই বিভিন্ন কক্ষে ছবি বা চিত্রকর্ম দেখা যায়। গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জায় চিত্রকর্মের ভূমিকা অপরিসীম। খ্যাতনামা ব্যক্তির ছবি গৌরবের প্রতীক। মাতৃভূমির ছবি, প্রাকৃতিক দৃশ্য মনে প্রশান্তি আনে।

দেয়ালে ছবি টাঙানোর কিছু নিয়ম আছে। যেমন

  • ছবি টাঙানোর জন্য স্থান নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বড় দেয়ালে বড় ছবি বা ছোট ছোট কয়েকটি ছবি একত্রে টাঙানো যায়
  • ছবি দৃষ্টি বরাবর টানাতে হবে। বেশি উপরে বা নিচে ছবি টানালে সৌন্দর্য ফুটে উঠে না এবং দৃষ্টিনন্দন হয় না।
  • কক্ষের কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ছবি টানাতে হবে। বসার কক্ষে খ্যাতনামা ব্যক্তি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, খ্যাতনামা ব্যক্তির আঁকা ছবি রাখা যায়। খাবার ঘরে খাবারের ছবি, লিভিং রুমে পারিবারিক ছবি টাঙানো যায়। পারিবারিক ছবি শয়ন ঘরে রাখা রুচিসম্মত।
  • ছবি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শোপিস, ফুল, লতা-পাতা, ওয়ালমেট, পাটশিল্প, লোকশিল্প উপকরণ দিয়েও দেয়াল সজ্জা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে শিল্পনীতি অনুসরণ করা আবশ্যক

পর্দাপর্দা হচ্ছে দরজা, জানালার আচ্ছাদন। দেয়ালের রং, মেঝের আচ্ছাদন অন্যান্য আসবাবের সাথে

সামঞ্জস্য রেখে পর্দা নির্বাচন করা উচিত।

পর্দার প্রয়োজনীয়তা-

  • ঘরের  আব্রু রক্ষা করে
  • ঘরে শীতলতার ভাব আনে
  • ধুলাবালি থেকে কক্ষকে রক্ষা করে
  • কক্ষের সৌন্দর্য বাড়ায়

আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ তাই হালকা রংয়ের পর্দাই আমাদের জন্য উপযুক্ত। এতে করে শীতলতার সৃষ্টি হয়। তবে শীতের দিনে গাঢ় রংয়ের পর্দা ব্যবহার করা যায়। পর্দার কাপড়টি এমন হতে হবে যাতে যত্ন নেওয়া সহজ হয়।

পুষ্পবিন্যাস

পুষ্পবিন্যাস গৃহসজ্জার অন্যতম প্রধান অংশ। ফুল সাজানোর জন্য প্রয়োজন নানা ধরনের ফুলদানি বা পাত্র। এই পাত্রগুলো চীনামাটি, প্লাস্টিক, কাচ, বাঁশ, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি হতে পারে। ফুলদানি বা পাত্র গোলাকার, চ্যাপ্টা, ডিম্বাকৃতি বা চারকোনা হতে পারে।

 

পুষ্পবিন্যাসের নিয়ম

  • রংপুষ্পবিন্যাসের সময় খেয়াল রাখতে হবে ফুলের রংটি যেন সবাইকে আকর্ষণ করে।
  • রেখাফুলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার রেখা বা গড়ন। লিলি, রজনীগন্ধা ফুলের লম্বা ডাটা থাকে আবার গাঁদা, বেলি, গোলাপ এগুলো স্তুপাকারে সাজানোর উপযোগী।
  • শিল্পনীতিপুষ্পবিন্যাসে শিল্পনীতি অনুসরণ করলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। যেমন- ফুলদানির সাথে ফুলের সামঞ্জস্য থাকা বাঞ্চনীয়।
  • পুষ্পবিন্যাসের সময় ফুলের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে হয়। অর্থাৎ গাছে যেভাবে ফুল ফুটে থাকে সেভাবে ফুলকে সাজালে ভালো হয়
  • সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুলটিকে প্রাধান্য দিয়ে পুষ্পবিন্যাস করতে হয়। তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অন্যান্য ফুল, পাতা সাজাতে হবে।
  • ফুলদানির চেয়ে ফুলের প্রাধান্য বেশি হবে। ফুলদানির আকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পুষ্পবিন্যাস করতে হয়।
  • ফুলদানিতে যথেষ্ট পানি থাকতে হবে। পিনহোল্ডার ঢেকে পুষ্পবিন্যাস করতে হবে।
  • পুষ্পবিন্যাসের জন্য অনেক ফুলের প্রয়োজন হয় না। দুই একটা ফুলের সাথে ডাল, লতা, পাতা দিয়েও পুষ্প বিন্যাস করা যায়। পিন হোল্ডার ব্যবহার করে বাটি, প্লেটেও পুষ্পবিন্যাস করা যায়।
  • খুব ভোরে বা পড়ন্ত বেলায় গাছ থেকে ডালসহ ফুল কাটলে সেটা তাজা থাকে
  • পাত্রের পানির মধ্যে চিনি মেশালে ফুল অনেক বেশি সময় ধরে তাজা থাকে
Content added By