চোখের ও কানের নিম্নলিখিত অবস্থা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্রতিবন্ধিতার ধরন শনাক্ত এবং পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ

  • চোখের পাতা লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া। চোখের পাতার কিনারে শুষ্ক আস্তরণ।
  • চোখ থেকে তরল পদার্থ বের হওয়া ।
  • ঘন ঘন চোখ রগরানো ও চোখ কুঁচকানো।
  • বর্ণ চিনতে ভুল করা। বৰ্ণ উল্টা দেখা।
  • লেখার সময় অসম ফাঁক দেওয়া, সারি সোজা রাখতে না পারা।
  • কাছের বা দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া বা দেখতে না পারা ।

শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ -

  • কানের গঠনগত ত্রুটি বা বিকৃতি থাকলে কান পাকা রোগ ইত্যাদি সমস্যা থাকা ।
  • উচ্চারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা বা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের অসুবিধা বা কথা কম বলা ৷
  • কিছু শোনার সময় কানে হাত দিয়ে শোনার চেষ্টা করা। রেডিও, টিভি শোনার সময় শব্দ বাড়িয়ে দেওয়া বা কাছে গিয়ে শোনা।
  • কোনো প্রশ্ন বার বার করা বা এক প্রশ্নের অন্য উত্তর দেওয়া । কথা না বলে হাত ও মুখ ভঙ্গিমার মাধ্যমে বা ইশারায় ভাব বিনিময় করা।

প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ : প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিবন্ধী শিশু যাতে জন্মগ্রহণ না করে এবং শিশু জন্মগ্রহণের পর যাতে প্রতিবন্ধিতার শিকার না হয় সে দিকে সবার সচেতনতা প্রয়োজন। এই জন্য যা করণীয় তা হচ্ছে

গর্ভকালীন সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ – গর্ভকালীন মাকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে দেওয়া। পুষ্টিকর খাবার না খেলে অনেক ক্ষেত্রে শিশু পূর্ণাঙ্গ সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করে অথবা শিশু কম ওজনের হয়। এসব শিশু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। প্রতিবন্ধিতা রোধে গর্ভকালীন প্রথম মাসগুলোর পুষ্টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন আয়োডিনযুক্ত লবণ গ্রহণ শিশুর মানসিক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করে।

ঔষধ গ্রহণে সতর্কতা – গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ গ্রহণ ও মাদক, সিগারেট থেকে বিরত

থাকলে কিছু কিছু জন্মত্রুটি এবং মানসিক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ – বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা রোধ করতে হলে গর্ভধারণের আগে রুবেলা ভাইরাস বা জার্মান হাম প্রতিরোধক টিকা নিতে হবে। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের সকল মহিলাকে ধনুষ্টংকার থেকে রক্ষার জন্য টিটি টিকা দিতে হবে।

শিশু কিশোরকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া – ভিটামিন ‘এ সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে শিশুদের মধ্যে দৃষ্টি - প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয়। শিশুদের গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি, হলুদ ফলমূল খাওয়ালে এই প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা যায়। জন্মগ্রহণের পর পরই মায়ের প্রথম দুধ শিশুকে দিতে হবে এই দুধে কলেস্ট্রাম নামক হলুদ বর্ণের পদার্থ থাকে, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষা- ঘন বসতি অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গুরুতর প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টির

অন্যতম কারণ। তাই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা করতে হবে

বেশি বয়সে সন্তান ধারণ রোধবেশি বয়সে সন্তান গ্রহণ বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার অন্যতম কারণ। তাই বেশি বয়সে সন্তান ধারণ নিরুৎসাহিত করতে হবে

রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ রোধ ঘনিষ্ঠ রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ বন্ধ করতে পারলে সব ধরনের প্রতিবন্ধিতা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব

আঘাত রোগ সংক্রমণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ শিশুর কানে, চোখে, মাথায় আঘাত বা রোগ সংক্রমণ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন -পোকামাকড় ধ্বংস করার জন্য যেসব রাসায়নিক পদার্থ - ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম কারণ। সমাজের অনেক লোকই বিভিন্ন ঝুঁকি পূর্বসতর্কতামূলক ধারণা না নিয়েই সরাসরি জমিতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে পোকামাকড় নিধন করে। এর ফলে অনেকে দৃষ্টিহীন, পক্ষাঘাতগ্রস্ততার শিকার হয়

বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশ আমাদের দেশের অনেক শিশু বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে। যদিও দেশের শ্রম আইনে তা নিষিদ্ধ। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়, ফলে আগুনে পুড়ে যাওয়া, অঙ্গহানি, দৃষ্টিহানি হয়। মেরুদণ্ডে আঘাত বা মাথায় আঘাত পেয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়। আমাদের দেশে অনেক শিশু ধান মাড়াইয়ের সময় ধান ছিটে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়।

কাজ : প্রতিবন্ধিতা রোধে সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধিতে তোমাদের করণীয় সম্পর্কে ক্লাশে আলোচনা কর

Content added By