নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - খাদ্যের কাজ ও উপাদান | NCTB BOOK

শরীর গঠনে প্রোটিনের পরেই খনিজ পদার্থ বা ধাতব লবণের স্থান। দেহের উপাদানের প্রায় শতকরা ৯৬ ভাগ জৈব পদার্থ এবং ভাগ অজৈব পদার্থ বা খনিজ পদার্থ। দেহে প্রায় ২৪ প্রকার বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্লোরিন, ম্যাঙ্গনেশিয়াম, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, তাম্র, আয়োডিন, দস্তা, এলুমিনিয়ম, নিকেল ইত্যাদি খনিজ পদার্থ দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এগুলো খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। কোনো খাদ্যবস্তু পোড়ালে যে সাদা ছাই অবশিষ্ঠ থাকে, তাকে খনিজ পদার্থ বা অজৈব লবণ বলে। পরিমাণের মাপকাঠিতে এদের ভাগে ভাগ করা যায়

() প্রধান খনিজ লবণ অজৈব পদার্থের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গনেসিয়াম, গন্ধক প্রাণী দেহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবস্থান করে। এদের প্রধান খনিজ লবণ বলে

 

() লেশমৌল খনিজ লবণ লৌহ, আয়োডিন, ক্লোরিন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, তাম্র, কোবাল্ট, মলিবডেনাম ইত্যাদি খুব সামান্য পরিমাণ দেহের পুষ্টি কাজে অংশ নেয় বলে এসব মৌলকে লেশমৌল বলা হয়। কিন্তু এগুলো খুব সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হলেও এদের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

খনিজ পদার্থের কাজ

  • দেহ গঠন উপাদান হিসেবে কাজ করে
  • অভ্যন্তরীণ কাজসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে
  • কঠিন কোষকলা গঠন করে।
  • নরম কোষকলা গঠন করে।
  • দেহ তরল পদার্থের উপাদান গঠন করে।
  • মাংসপেশির সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্ত
  • জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
  • অক্সিজেন বহন করে।
  • এনজাইমের কাজে সহায়তা করে।

আমরা এখন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, আয়োডিন, জিংক, সোডিয়াম পটাশিয়াম নিয়ে আলোচনা করব। ক্যালসিয়াম- খনিজ লবণের মধ্যে দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। দেহের ১৯% ক্যালসিয়াম দাঁতে এবং হাড়ে এবং % থাকে রক্তে এবং দেহের জলীয় অংশে কোমল তত্তুতে ।

উৎস-

) প্রাণিজ উৎস দুধ ক্যালসিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন- দই, ছানা, পনির, মাওয়া, কাটাসহ ছোট মাছ হাড়ে ক্যালসিয়াম থাকে

খ) উদ্ভিজ উৎস সবুজ শাকসবজি, লবণ, কলমি শাক, ডাঁটা শাক, পুঁইশাক, লালশাক, ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। সবজির মধ্যে ঢেঁড়শ, ধুন্দুল, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম ইত্যাদি সবজি, ছোলা, মাষকলাই, মুগ, সয়াবিনে ক্যালসিয়াম থাকে।

কার্যকারিতা -

  • দাঁত হাড়ের গঠনে সহায়তা করা।
  • রক্ত জমাট বাঁধার কাজে সাহায্য করে। কোনো কোনো এনজাইমকে সক্রিয় করে।

অভাবের ফল -

রিকেটস্

রিকেটস্ আক্রান্ত শিশুর পায়ের এক্স-রে এর চিত্র

ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া পা

  • ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের পুষ্টি ব্যাহত হয়।
  • দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়
  • শারীরিক দুর্বলতা দেখা যায়
  • শিশুদের বর্ধন ব্যাহত করে।
  • ক্যলসিয়ামের দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতির ফলে শিশুদের রিকেট রোগ হতে পারে
  • বয়স্ক ব্যক্তিদের ওস্টিওম্যালেসিয়া নামক রোগ দেখা দেয়
  • শরীরের কাটা স্থান থেকে রক্ত পড়া সহজে বন্ধ হয় না।

ফসফরাস -দেহের খনিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরেই ফসফরাসের স্থান। আমাদের দেহে - জৈব অজৈব এই দুই ধরনের যৌগ হিসেবে ফসফরাস বিদ্যমান।

উৎস- প্রাণিজ উৎসের মধ্যে দুধ, ডিম, মাংস, যকৃৎ, মাছ এবং উদ্ভিজ উৎসের মধ্যে শাকসবজি, ডাল, ঢেঁকি ছাঁটা সিদ্ধ চাল, মটরশুঁটি, ফুলকপি, গাজর ইত্যাদিতে ফসফরাস পাওয়া যায়

কার্যকারিতা -

  • দেহে ক্যালসিয়াম ফসফরাসের কাজ সম্পর্কযুক্ত।
  • দাঁত হাড় গঠনে ক্যালসিয়ামের সাথে ফসফরাস
  • কাজ করে।
  • খাদ্যদ্রব্য থেকে দেহে শক্তি মুক্ত হতে সাহায্য করে।
  • দেহের জলীয় অংশের সমতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
  • কার্বোহাইড্রেট স্নেহ বিপাকে সহায়ক ভূমিকা রাখে
  • জীবকোষ সৃষ্টি দেহের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয়। দেহে কোনো কোনো অ্যানাজাইমের কাজে সহায়তা করে।
  • দেহে প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য ফসফরাস অপরিহার্য। স্নায়ুকোষের সুস্থতা রক্ষায় এর ভূমিকা রয়েছে।

অভাবজনিত অবস্থা সাধারণত ফসফরাসের অভাব খুব একটা দেখা যায় না

কাজ - ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের দেহে কী ধরনের অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয় তা বোর্ডে লেখ

 

Content added By