নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - আইন, স্বাধীনতা ও স্বাম্য | NCTB BOOK

আইনের উৎপত্তি বিভিন্ন উৎস থেকে হতে পারে । আইনের উৎসগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো ।

১. প্রথা : দীর্ঘকাল যাবৎ কোনো নিয়ম সমাজে চলতে থাকলে তাকে প্রথা বলে। রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে প্রথার মাধ্যমে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ হতো । রাষ্ট্র সৃষ্টির পর যেসব প্রথা রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে সেগুলো আইনে পরিণত হয়। যুক্তরাজ্যের অনেক আইন প্রথার উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে।

২. ধর্ম : ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মগ্রন্থ আইনের অন্যতম উৎস। সকল ধর্মের কিছু অনুশাসন রয়েছে যা ঐ ধর্মের অনুসারীরা মেনে চলে। এসব অনুশাসন সমাজ জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করে । ফলে এসব ধর্মীয় অনুশাসনের অনেক কিছুই পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে আইনে পরিণত হয় । যেমন- মুসলিম আইন, হিন্দু আইন প্রভৃতি । আমাদের দেশে পারিবারিক ও সম্পত্তি আইনের অনেকগুলো উপরে উল্লেখিত দুটি ধর্ম থেকে এসেছে ।

৩. আইনবিদদের গ্রন্থ : আমরা যখন গল্প, উপন্যাস কিংবা খবরের কাগজ পড়ি, কোনো শব্দের অর্থ বুঝতে সমস্যা হলে অভিধান ও বিশ্বকোষের সাহায্য নিই। ঠিক তেমনি, বিচারকগণ কোনো মামলার বিচারকার্য সম্পাদন করতে গিয়ে আইন সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় পড়লে তা সমাধানের জন্য আইন- বিশারদদের বিজ্ঞানসম্মত গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে এসব আইন ব্যাখ্যা করেন যা পরবর্তীকালে আইনে পরিণত হয়। যেমন- অধ্যাপক এ ভি ডাইসির ‘দ্যা ল অব দ্যা কনস্টিটিউশন' এবং উইলিয়াম ব্লাকস্টোনের ‘কমেনটরিজ অন দ্যা লজ অব ইংল্যান্ড' ।

৪. বিচারকের রায় : আদালতে উত্থাপিত মামলার বিচার করার জন্য প্রচলিত আইন অস্পষ্ট হলে বিচারকগণ তাদের প্রজ্ঞা ও বিচারবুদ্ধির উপর ভিত্তি করে ঐ আইনের ব্যাখ্যা দেন এবং উক্ত মামলার রায় দেন । পরবর্তীকালে বিচারকগণ সেসব রায় অনুসরণ করে বিচার করেন। এভাবে বিচারকের রায় পরবর্তীকালে আইনে পরিণত হয় । সুতরাং বলা যায়, বিচারকের রায় আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ।

৫. ন্যায়বোধ : আদালতে এমন অনেক মামলা উত্থাপিত হয় যা সমাধানের জন্য অনেক সময় কোনো আইন বিদ্যমান থাকে না। সে অবস্থায় বিচারকগণ তাদের ন্যায়বোধ বা বিবেক দ্বারা উক্ত মামলার বিচারকাজ সম্পাদন করেন এবং পরবর্তী সময়ে তা আইনে পরিণত হয় ।

৬. আইনসভা : আধুনিককালে আইনের প্রধান উৎস আইনসভা। জনমতের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন দেশের আইনসভা নতুন আইন প্রণয়ন করে এবং পুরাতন আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করে তোলে।

Promotion