নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা | NCTB BOOK

যে শাসন ব্যবস্থায় সরকারের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং কেন্দ্র থেকে দেশের শাসন পরিচালিত হয়, তাকে এককেন্দ্রিক সরকার বলে। এতে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন করা হয় না । এ সরকার ব্যবস্থায় আঞ্চলিক সরকারের কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই । রাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রদেশ বা প্রশাসনিক অঞ্চল থাকতে পারে। তবে তারা কেন্দ্রের প্রতিনিধি বা সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ, জাপান, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশে এককেন্দ্রিক সরকার প্রচলিত আছে ।
জোড়ায় কাজ : এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়ে একটি ধারণা মানচিত্র/চার্ট তৈরি কর ।


এককেন্দ্রিক সরকারের গুণঃ
এককেন্দ্রিক সরকারের বিশেষ কতগুলো গুণ আছে । যেমন-
১. সহজ সাংগঠনিক ব্যবস্থা: এককেন্দ্রিক সরকারের সংগঠন সরল প্রকৃতির । এতে কেন্দ্রের হাতে সব ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে । কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের কোনো ঝামেলা নেই । কেন্দ্রে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে সহজেই তা সমগ্র দেশে বাস্তবায়ন করা যায়। এ ছাড়া সারা দেশে অভিন্ন আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বলবৎ করা হয় । ফলে সাংগঠনিক সামঞ্জস্য থাকে ।

২. জাতীয় ঐক্যের প্রতীক: এই সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের ভিতরে বিভিন্ন প্রদেশ বা অঞ্চল থাকলেও তাদের কোনো স্বায়ত্তশাসন নেই । ফলে সারা দেশের জন্য একই প্রশাসনিক নীতি ও আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়,যা জাতীয় সংহতি ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে সহায়তা করে ।

৩. মিতব্যয়িতা: এককেন্দ্রিক সরকারে প্রশাসনিক ব্যয় কম । কারণ এতে কেবল কেন্দ্রে সরকার গঠন করা হয় । এখানে কেন্দ্রীয় সরকার সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হয়। স্তরে স্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রয়োজন হয় না বলে এতে খরচ কমে।

৪. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: কোনো আঞ্চলিক সরকারের সাথে পরামর্শ বা আঞ্চলিক স্বার্থ বিবেচনার দরকার হয় না বলে এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় । সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো জটিলতা তৈরি হয় না ।


৫. ছোট রাষ্ট্রের উপযোগী: এককেন্দ্রিক সরকার ভৌগোলিক দিক দিয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট ও অভিন্ন কৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রের জন্য বেশি উপযোগী । যেমন- বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ।

 

এককেন্দ্রিক সরকারের ত্রুটিঃ
এককেন্দ্রিক সরকারে সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি কতগুলো ত্রুটিও রয়েছে। যেমন-
১. কাজের চাপ: এককেন্দ্রিক সরকারে কেন্দ্রের হাতে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের উপর কাজের বেশি চাপ থাকে। সরকারের সব কাজ কেন্দ্রীয় সরকারকে করতে হয় বলে প্রশাসকগণ রুটিন কাজের চাপে জনহিতকর কাজের প্রতি প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারে না ।

২. স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশের অনুকূল নয়: এ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতার চর্চা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক পর্যায়ে জনগণের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না। ফলে স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে উঠার সুযাগ থাকে না ।

৩. স্থানীয় উন্নয়ন ও সমস্যার প্রতি অবহেলা: এককেন্দ্রিক সরকারে সারা দেশের জন্য অভিন্ন পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে, যার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। আবার অঞ্চলগুলো দূরে থাকার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় সমস্যাগুলো ঠিকভাবে বুঝতে ও সমাধান করতে পারে না ।


৪. বড় রাষ্ট্রের জন্য অনুপযোগী: বড় রাষ্ট্রের জন্য এককেন্দ্রিক সরকার সুবিধাজনক নয়। বড় রাষ্ট্রে এক অঞ্চলের সঙ্গে আরেক অঞ্চলের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম-বেশি পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় । এই পার্থক্যগুলো একত্রিত করে সবকিছু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে একা সামাল দেওয়া সম্ভব নয় । ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সরকারের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়ে। এ কারণে অঞ্চলগুলোর বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে ।


৫. কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতা : এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্ৰীভূত হওয়ার ফলে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতার সম্ভাবনা থাকে ।