নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন | NCTB BOOK

নির্বাচন কমিশন:
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পূর্ব শর্ত হচ্ছে কার্যকর নির্বাচনব্যবস্থা। অন্যকথায়, নির্বাচনের উপর জনগণের আস্থা। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা হচ্ছে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ । আর এই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ।

গঠন:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় নির্বাচন কমিশন গঠিত । এটি সাংবিধানিকভাবে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান । প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন কমিশনারসহ মোট পাঁচজন নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত । নির্বাচন কমিশনারগণকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন । নির্বাচন কমিশনের সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভাপতির কাজ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারের মেয়াদ তাদের কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বছর । নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কর্তব্য । নির্বাচন কমিশন সংবিধানে বর্ণিত নির্দেশনাবলি এবং দেশের নির্বাচনি আইন দ্বারা পরিচালিত হয় ।

নির্বাচন কমিশনের কার্যাদি সম্পন্ন করার জন্য নিজস্ব সচিবালয় রয়েছে । সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিয়ে সংসদ প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা খুবই জরুরি। নির্বাচন কমিশন এর জনবল ও আর্থিক ক্ষমতার জন্য সরকারের উপর নির্ভরশীল। তাই জনবল ও অর্থসংক্রান্ত ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা থাকা একান্ত আবশ্যক ।


ক্ষমতা ও কার্যাবলি:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯-এ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বর্ণিত হয়েছে । নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন পরিচালনা, নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ, ভোটারদের পরিচয়পত্র প্রদান,আইন কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য নির্বাচন (এর মধ্যে সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ) পরিচালনা এবং আনুষঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন । এছাড়া নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইকরণ, দল সম্পর্কিত নীতিমালা ও নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করাও নির্বাচন কমিশনের কাজ। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ করা। যেমন- বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি নির্বাচনি এলাকা রয়েছে। সেখান থেকে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ সদস্যগণ নির্বাচিত হন । ভৌগোলিক আয়তন ও ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনি এলাকা নির্ধারিত হয়। ভৌগোলিক এলাকাভিত্তিক ৩০০ আসন ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আরো ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে । এগুলো মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট । তাঁরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ সংসদ সদস্য কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন ।