নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা | NCTB BOOK

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা:

১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সম্পাদিত শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয় । পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত একটি অঞ্চল । এছাড়া মূলধারার বাঙালিরাও সেখানে বসবাস করে । এসব অঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা, যা সমাধানে প্রয়োজন বিভিন্ন পদক্ষেপ । এ ছাড়া এ অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীবন ধারা আলাদা হওয়ায় এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা। এ কারণে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এ তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি বিশেষ ধরনের জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ প্রবর্তন করা হয়। পূর্বে পরিষদের মেয়াদ ছিল ৩ বছর। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৫ বছর করা হয়েছে।

গঠন-কাঠামো ও প্রকৃতি:

প্রত্যেকটি জেলা পরিষদ ১ জন চেয়ারম্যান, ৩০ জন সাধারণ সদস্য এবং ৩ জন মহিলা সদস্যসহ সর্বমোট ৩৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এদের সকলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের মধ্যে পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় পক্ষের প্রতিনিধি থাকবে । জনসংখ্যার অনুপাত অনুযায়ী কার সংখ্যা কত তা নির্ধারিত হবে । অপরদিকে, মহিলা আসন ব্যতীত পাহাড়িদের জন্য রিজার্ভ আসন বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বণ্টন হবে । ৩ জন মহিলা সদস্যের মধ্যে ২ জন হবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এবং ১ জন হবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাইরের বা বাঙালি । চেয়ারম্যান অবশ্যই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্য থেকে হবে। সদস্যদেরআসনসংখ্যা দু'সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হলেও ভোটদান হবে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। সংরক্ষিত রিজার্ভ আসন ছাড়াও অন্য আসনে মহিলারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে । একজন সরকারি কর্মকর্তা পরিষদের সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন । পরিষদের কার্যকাল হবে ৫ বছর ।

কার্যাবলি:
পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যাবলি নিম্নরূপ :
১. স্থানীয় পুলিশ ও জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংরক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও উন্নতি সাধন;

২. জেলার স্থানীয় কর্তৃপক্ষসমূহের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সমন্বয়সাধন ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা দান;

৩. শিক্ষার উন্নয়ন ও বিস্তার এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ;

৪. স্বাস্থ্যরক্ষা, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন;

৫. কৃষি, বন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ;

৬. পশুপালন ও মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন;

৭. সমবায় আন্দোলনে উৎসাহ প্রদান;

৮. স্থানীয় শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার ;

৯. অনাথ ও দুস্থদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণসহ অন্যান্য সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড;

১০. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও এর বিকাশ সাধন । ক্রীড়া ও খেলাধুলার আয়োজন ও উন্নয়ন;

১১. যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি সাধন;

১২. পানি সরবরাহ ও সেচব্যবস্থার উন্নয়ন ;

১৩. ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ;

১৪. পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন;

১৫. স্থানীয় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন;

১৬. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রীতিনীতি, প্রথার আলোকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিরোধের বিচার ও মীমাংসা ।

আয়ের উৎস:
পরিষদের আয়ের উৎসের মধ্যে নিম্নে উল্লিখিত বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত-

ক. স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের উপর ধার্য করের অংশ ;

খ. ভূমি ও দালান কোঠার উপর হোল্ডিং কর;

গ. রাস্তা, পুল ও ফেরির উপর টোল;

ঘ. যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি ;

ঙ. পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের উপর কর;

চ. শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর হোল্ডিং কর ;

ছ. সামাজিক বিচারের ফি;

জ. লটারির উপর কর ;

ঝ. চিত্তবিনোদনমূলক কর্মের উপর কর;

ঞ. বনজ সম্পদের উপর রয়্যালটির অংশবিশেষ ;

ট. খনিজ সম্পদ অন্বেষণ বা উত্তোলনের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতিপত্র বা পাট্টা সূত্রে প্রাপ্ত রয়্যালটির অংশবিশেষ ;

ঠ. সরকার কর্তৃক পরিষদকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আরোপিত কোনো কর ।