নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - জাতীয় চেতনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় | NCTB BOOK

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙালির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন । এদিন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লক্ষ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন । এই ভাষণে তিনি ঘোষণা দেন—  “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। ... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর তারিখে প্রথম পাণ্ডুলিপিবিহীন এবং অলিখিত ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৭১ সালের ১৫ই মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান। ১৬ই মার্চ থেকে আলোচনা শুরু হয়। পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টোসহ পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকজন নেতা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকচক্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা এবং পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও রসদ আমদানি করে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া। ২৩শে মার্চ 'পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে' বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পাকিস্তানের পতাকার স্থলে স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৪শে মার্চ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে শেষ চেষ্টা করেন। কিন্তু ২৫শে মার্চ ইয়াহিয়া খান কোনো রকম ঘোষণা না দিয়েই সদলবলে ঢাকা ত্যাগ করেন এবং ঐ রাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। তারা ঢাকাসহ অন্যান্য শহরেও হাজার হাজার নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই রাতকে ইতিহাসে 'কালরাত্রি' হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

Content added By