নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন | NCTB BOOK

১. সাধারণ পরিষদ:

গঠন: সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের আইনসভার মতো । জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র সাধারণ পরিষদের সদস্য । সাধারণত বছরে একবার এ পরিষদের অধিবেশন বসে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের অনুরোধে বিশেষ অধিবেশন বসতে পারে। প্রত্যেক অধিবেশনের শুরুতে সদস্যদের ভোটে পরিষদের একজন সভাপতি নির্বাচিত হন । সাধারণ পরিষদে প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের একটিমাত্র ভোট দানের অধিকার আছে ।

কার্যাবলি:
বিশ্বশান্তি ও সহযোগিতা রক্ষায় এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাসহ মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করে । এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব নিয়োগ, নতুন সদস্য গ্রহণ, বাজেট পাস, সদস্য রাষ্ট্রের চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ, বিভিন্ন সংস্থার সদস্য নির্বাচন, নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এ পরিষদ সম্পাদন করে থাকে ।

 

২. নিরাপত্তা পরিষদ:

গঠন: নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘের শাসন বিভাগ স্বরূপ। নিরাপত্তা পরিষদ মোট ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত । এর মধ্যে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য । বাকি ১০টি অস্থায়ী সদস্য। স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হলো- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন। এরা বৃহৎ পঞ্চশক্তি নামে পরিচিত। অস্থায়ী সদস্যরা প্রতি দুবছরের জন্য নির্বাচিত হয় ।

কার্যাবলি:
জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী শাখা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদ । বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার মূল দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের। এ পরিষদ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করে। আগ্রাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে পারে । এ চেষ্টা ব্যর্থ হলে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে । তাছাড়া নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধ বন্ধের জন্য কোথাও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করতে পারে। মোটকথা, আন্তর্জাতিক শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল কাজ এ সংস্থাটি করে থাকে ।

 

৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ:
বিশ্বকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ পরিষদ গঠিত হয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।

গঠন:
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ মোট ৫৪টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। বছরে কমপক্ষে তিনবার এর অধিবেশন হয় । প্রত্যেক সদস্যের একটি করে ভোট দানের অধিকার আছে । সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে যেকোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।

কার্যাবলি:
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বেকার সমস্যার সমাধান খাদ্য, কৃষি ও শিক্ষার প্রসার, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, মৌলিক মানবাধিকার কার্যকর করা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমূলক কাজ করে । এছাড়া বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক বিষয়ে সাধারণ পরিষদে সুপারিশ প্রেরণ করা এ পরিষদের অন্যতম দায়িত্ব ।

 

৪. অছি পরিষদ:
বিশ্বের যেসব জনপদের পৃথক সত্তা আছে কিন্তু স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নেই এবং অন্য রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় তাকে অছি এলাকা বলে । এসব এলাকার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব জাতিসংঘের অছি পরিষদের ।

গঠন:
অছি এলাকার উপর শাসন ক্ষমতার অধিকারী জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে অছি পরিষদ গঠিত । এর কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নেই । অছি এলাকার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এর সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ।

কার্যাবলি:
অছি পরিষদের মাধ্যমে জাতিসংঘ বিশ্বের অনুন্নত অঞ্চলের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেয় । অছিভুক্ত অঞ্চলের উন্নতি এবং এলাকার অধিবাসীদের শিক্ষা প্রদান ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলাই হচ্ছে অছি পরিষদের দায়িত্ব । এছাড়া অছি এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অছি এলাকার জনগণের আবেদন ও অভিযোগ পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া এবং অছি এলাকা পরিদর্শনের মাধ্যমে বাস্তব অবস্থা দেখা ও প্রতিবেদন পেশ করা অছি পরিষদের কাজ ।

 

৫. আন্তর্জাতিক আদালত:
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিবাদ মীমাংসার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা হয়েছে । এর সদর দপ্তর নেদারল্যান্ডের দি হেগ শহরে অবস্থিত ।

গঠন:
আন্তর্জাতিক আদালত জাতিসংঘের বিচারালয়। পনেরজন (১৫) বিচারক নিয়ে এ আদালত গঠিত। বিচারকদের কার্যকাল নয় বছর। সাধারণ ও নিরাপত্তা পরিষদ মিলে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকদের নিয়োগ করে।

কার্যাবলি:
জাতিসংঘের যেকোনো সদস্য রাষ্ট্র অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিরোধ মীমাংসার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার প্রার্থনা করতে পারে। আদালত তার বিচারকার্য দ্বারা বিশ্বশান্তি রক্ষা করে। জাতিসংঘ সনদের অন্তর্ভুক্ত কোনো বিষয় নিয়ে মামলা হলে এবং জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পাদিত কোনো চুক্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলেও আন্তর্জাতিক আদালত তা মীমাংসা করে । এছাড়া সাধারণ ও নিরাপত্তা পরিষদ কোনো আইনের ব্যাখ্যা চাইলে আন্তর্জাতিক আদালত তার ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে ।

 

৬. জাতিসংঘ সচিবালয়:
সচিবালয় জাতিসংঘের প্রশাসনিক বিভাগ। বিশ্বশান্তি, সহযোগিতা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ এ শাখার মাধ্যমে সম্পাদিত হয় ।

গঠন:
জাতিসংঘ মহাসচিব, কয়েকজন উপমহাসচিব, অধস্তন মহাসচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে এ বিভাগ গঠিত । এর প্রধান কর্মকর্তা হলেন মহাসচিব । সাধারণ পরিষদ কর্তৃক তিনি পাঁচ বছরের জন্য
নির্বাচিত হন ।

কার্যাবলি:
জাতিসংঘ সচিবালয় জাতিসংঘের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করে। সচিবালয়ের মহাসচিবকে কেন্দ্র করে এর যাবতীয় কাজ আবর্তিত হয়ে থাকে । তিনি সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং অছি পরিষদের মহাসচিব হিসেবে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক আদালত ছাড়া সকল শাখায় লোক নিয়োগের দায়িত্বও তাঁর । সকল শাখার অধিবেশন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তাঁর । এছাড়া জাতিসংঘের বাজেট তৈরি, সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বিভিন্ন শাখার সভা আহ্বান, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা ও প্রতিবেদন তৈরি, অছি এলাকার রিপোর্ট তৈরি ইত্যাদি কাজ তাঁর নির্দেশনায় সম্পাদিত হয়ে থাকে । সাধারণ ও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দায়িত্ব তাঁর। জাতিসংঘের নির্দেশ অমান্যকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিনি যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করতে পারেন। মহাসচিব জাতিসংঘের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সচিবালয়ের অন্যান্যদের সহযোগিতায় তিনি এ ব্যাপক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকেন ।

Content added By

Promotion