On This Page
এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

যেকোনো জীবের মতো পোল্ট্রিও রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। যেহেতু পোল্ট্রি তার রোগ সম্পর্কে বলতে পারে না। তাই পোল্ট্রির সফল উৎপাদন নিশ্চিত করতে রোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। আর রোগ হয়ে গেলে এ চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল ও দুরুহ। রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করাই উত্তম । ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- 'Prevention is better than cure' অর্থাৎ 'প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অধিকতর শ্রেয়। লাভজনক পোল্ট্রি উৎপাদন পেতে হলে দক্ষ পোল্ট্রি টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে প্রতিপালন করাই উত্তম। এতে লাভবান হবে ব্যক্তি তথা জাতি, উন্নত হবে অর্থনৈতিক অবস্থা। পোল্ট্রি খামার দক্ষ পরিচালনার জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক ইকুইপমেন্ট (পিপিই)নির্বাচন ও সংগ্রহ, লক্ষণ দেখে রোগ সংক্রমণ নির্ণয়, রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ ও মুরগির খামারের জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

  • মুরগির বিভিন্ন রোগের লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারব
  • লক্ষণ দেখে রোগ সংক্রমণ নির্ণয় করতে পারব
  • রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব
  • মুরগির খামারের জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব

 

 

Content added By

৩.১ লেয়ার মুরগির রোগ-ব্যাধি (Laver Chicken Diseases)

জীবদেহ রোগ-ব্যাধির কারখানা এবং জীবমাত্রই রোগের কবলে পড়ে। অন্যান্য প্রাণিদের মত মুরগির রোগ হয়। মুরগীর মৃত্যুর হার খুব বেশি। একজন মুরগি পালনকারী কাছে রোগ একটা বিরাট সমস্যা । মৃত্যুর হার দেখে যেকোনো পালনকারী নিরুৎসাহ বোধ করাই স্বাভাবিক। তবে সতর্ক দৃষ্টি ও ভাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো যায়। মাত্র কয়েকটি রোগ ছাড়া অনেক রোগকে ভাল করা যায় না । তাই রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা দরকার। রোগাক্রান্ত মুরগিকে সরিয়ে ফেলাই ভাল। কঠিন রোগ-ভোগের পর মুরগী ভাল হয়ে গেলেও আগের বা স্বাভাবিক স্বাস্থ্য কোনো দিনই ফিরে পায় না এবং ডিমপাড়ার হারও উল্লেখ ভাবে কমে যায় । এছাড়া এদের মাধ্যমে ঝাঁকের অন্যান্য মুরগির মধ্যেও রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

 

Content added By

৩.১.১ রোগ সম্পর্কে ধারণা ও প্রকারভেদ (Disease Concepts and Types): 

রোগঃ পর্যাপ্ত খাদ্য ও উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়ার পরও যদি শরীরের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তবে তাকে রোগ বলে।

লেয়ার মুরগির অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রোগগুলোকে নিম্নরূপে শ্রেণিবিভাগ করা যায়:

  • সংক্রামক রোগ বা জীবাণুঘটিত রোগ (Contagious Disease) । 
  • পরজীবী ঘটিত রোগ (Parasitic Disease) । 
  • অপুষ্টিজনিত রোগ (Malnutritious Disease)।

১. সংক্রামক রোগ: 

যেসব রোগ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয় ও অসুস্থ পাখি থেকে সুস্থ পাখিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেগুলোকে সংক্রামক রোগ বলে। এদেরকে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়, যথা-

পরজীবীজনিত রোগ: 

পরজীবী এক ধরনের জীব যা অন্য জীব দেহে বসবাস করে জীবন ধারণ করে । যে জীবের দেহের উপর এরা জীবন ধারণ করে তাদেরকে হোস্ট বা পোষক বলে। কিছু পরজীবী আছে যারা পোষকের দেহের ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বসবাস করে ক্ষতিসাধন করে । এদেরকে দেহাভ্যন্তরের পরজীবী অন্তঃপরজীবী বলে। আবার কিছু পরজীবী আছে যারা পোষকের দেহের বাহিরের অঙ্গে বসবাস করে ক্ষতি সাধন করে। এদেরকে বহিঃদেহের পরজীবী বা বহিঃপরজীবী বলে। উভয় পরজীবী আক্রমনের ফলে পোল্ট্রি শিল্প ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এরা পাখির দেহে বসবাস করে পাখি কর্তৃক খাওয়া পুষ্টিকর খাদ্য নিজেরা খেয়ে ফেলে, ফলে আক্রান্ত পাখি পুষ্টিহীনতায় ভোগে। অনেক পরজীবী পাখির দেহে বসবাস করে রক্ত শুষে নেয়, ফলে আক্রান্ত পাখির দেহে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

পরজীবী দুই প্রকার: 

১. অন্তঃপরজীবী: কৃমি 

২.বহিঃপরজীবী: উকুন, আঠালি ও মাইটস

অপুষ্টি জনিত রোগ: 

গৃহপালিত পাখি পালনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হল পাখিকে সুষম খাদ্য প্রদান করা। পাখির মাংস ও ডিম উৎপাদন এবং দৈনিক বৃদ্ধি সাধনের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন । খাদ্যের মধ্যে যেকোনো খাদ্য উপকরণের অভাব হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে, ডিম ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়, এমনকি পাখির মৃত্যুও হতে পারে। 

অপুষ্টি জনিত রোগ: জেরোপথ্যালামিয়া, প্যারালাইসিস, পেরোসিস, ক্যানাবলিজম, রিকেট ইত্যাদি ।

 

 

Content added By

৩.১.২ লেয়ার মুরগির জীবাণু ঘটিত বিভিন্ন রোগের নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি (Names, causes, symptoms, treatment and prevention of various layer diseases):

Content added By

৩.১.২.১ ভাইরাসজনিত রোগসমূহ (Virul diseases) 

 

                      (ক) রাণীক্ষেত রোগ 

           Ranikhet/ New Castle diseases

রাণীক্ষেত মুরগির ভাইরাসজনিত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ। পৃথিবীর কমবেশি প্রত্যেক দেশে এ রোগের প্রকোপ রয়েছে। বাংলাদেশের মুরগির রোগগুলোর মধ্যে রাণীক্ষেত সবচেয়ে মারাত্বক ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর এ রোগে দেশের বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। এ রোগের ব্যাপকতা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে, মুরগি পালনের জন্য রাণীক্ষেত রোগ একটি প্রধান অন্তরায়। বয়স্ক অপেক্ষা বাচ্চা মুরগি এতে বেশি মারাত্বক আক্রান্ত হয়। সাধারনত শুষ্ক আবহাওয়ায়, যেমন- শীত ও বসন্তকালে এ রোগটি বেশি দেখা যায়। তবে, বছরের অন্যান্য সময়েও এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল নামক শহরে শনাক্ত করা হয়। তাই তাকে নিউক্যাসল ডিজিজ বলা হয়। তাছাড়া এ উপমহাদেশে ভারতের রাণীক্ষেত নামক স্থানে সর্বপ্রথম এ রোগটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে বলে এ রোগকে রাণীক্ষেত রোগ বলা হয় ।

রোগের কারণ: প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস নামক এক প্রজাতির প্যারামিরোভাইরাস এ রোগের কারণ।

রোগ সংক্রমণ - 

নিম্নলিখিতভাবে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-

  • বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত স্থান থেকে অন্যস্থানে জীবাণু ছড়াতে পারে। 
  • অসুস্থ বা বাহক পাখির সর্দি, হাঁচি-কাশি থেকে অন্যস্থানে জীবাণু ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত এবং অতিথি পাখি আমদানির মাধ্যমে। 
  • মৃত মুরগি বা পাখি যেখানে সেখানে ফেললে।
  • বন্য পশুপাখির মাধ্যমে।
  • পরিচর্যাকারী বা দর্শনার্থী মানুষের জামা, জুতো বা খামারের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। 
  • খাদ্য, পানি ও লিটারের মাধ্যমে।

রোগের লক্ষণ: রাণীক্ষেত রোগ প্রধানত তিন প্রকৃতির । যথা-

 ক.ভেলোজেনিক প্রকৃতির লক্ষণ 

খ.মেসোজেনিক প্রকৃতির লক্ষণ। 

গ. লেন্টোজেনিক প্রকৃতির লক্ষ ।

 

ক. ভেলোজেনিক প্রকৃতির লক্ষণ: এ প্রকৃতির রাণীক্ষেত রোগ সবচেয়ে মারাত্বক। এতে অনেক সময় অত্যন্ত দ্রুত জীবাণু সংক্রমনের ফলে লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই মুরগি মারা যেতে পারে। তবে তা না হলে নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। যেমন-

  • প্রথম দিকে আক্রান্ত পাখি দলছাড়া হয়ে ঝিমাতে থাকে । 
  • শরীরে কাঁপুনি হয়, ঘন ঘন শ্বাস গ্রহণ করে । 
  • সাদাটে সবুজ পাতলা পায়খানা করে ও দূর্বল হয়ে পড়ে। 
  • মুখ হা করে রাখে, কাশতে থাকে এবং নাকমুখ দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে।  
  • শরীর শুকিয়ে যায় । 
  • মাথার ঝুঁটি ও গলার ফুল কালচে হয় এবং চোখ মুখ ফুলে যায়। 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়, ডিমের খোসা পাতলা ও খসখসে হয়। তাছাড়া অপুষ্ট ডিম উৎপন্ন হয়।

খ. মেসোজেনিক প্রকৃতির লক্ষণ: মেসোজেনিক প্রকৃতিতে আক্রান্ত মুরগিতে রোগ লক্ষণ ততটা তীব্র নয়। তবে, নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায় :

  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।  
  • ডিম উৎপাদন কমে যায় । 
  • পাখির কাশি হয় ও মুখ হা করে নিঃশ্বাস নেয়। 
  • হলদে সবুজ রঙের পাতলা পায়খানা করে । 
  • জীবাণু আক্রমনের দুই সপ্তাহ পর স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। ফলে মাথা ঘুরায় ও পা অবশ হয়ে যায়। 
  • মাথা একপাশে বেঁকে যেতে পারে, কখনো বা মাথা দুপায়ের মাঝখানে চলে আসে অথবা অথবা সোজা ঘাড় বরাবর পিছন দিকে বেঁকে যেতে পারে।

গ. লেন্টোজেনিক প্রকৃতি লক্ষণ:

  • এতে মৃদু প্রকৃতির লক্ষণ প্রকাশ পায়। যথা- 
  • শ্বাসতন্ত্র কম আক্রান্ত হওয়ায় এ তন্ত্রের লক্ষণ কম প্রকাশ পায় ৷ 
  • সামান্য কাশি থাকে। 
  • কিছুটা ক্ষুধামন্দা ভাব থাকে । 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

 

রোগ নির্ণয়: 

ময়না তদন্তে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখেঃ

  • শ্বাসনালীতে রক্তাধিক্য ও রক্ত সঞ্চায়ন।
  • স্বরযন্ত্র ও শ্বাসনালীতে রক্তাক্ত হয় ।
  • প্লীহা বড় হয়ে যায়।
  • খাদ্য অন্ত্রে, বিশেষ করে প্রভেন্ট্রিকুলাস ও গিজার্ডে, রক্তক্ষরিত পচা ক্ষত দেখা দেয়।
  • অন্ত্রের শেষভাগে পাতলা সাদাটে মল ।

চিকিৎসা: 

এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, আক্রান্ত পাখিতে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনেমাইড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ০.০১% পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত পাখিকে দৈনিক ২/৩ বার খাওয়ানো যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধঃ 

রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধ দু'ধরনের টিকা ব্যবহার করা হয়। যথা- বি. সি. আর. ডি.ভি. এবং আর. ডি. ভি. । বি.সি.আর.ডি.ভি. এ টিকাবীক্ষের প্রতিটি শিশি বা ভায়ালে হিম শুষ্ক অবস্থায় ১ মি. লি. মূল টিকাৰীজ থাকে। প্রতিটি শিশির টিকাবীজ ৬ মি.লি. পরিশ্রুত পানিতে ভালোভাবে মিশাতে হয়। এরপর ৪ দিন ও ১৯ দিন বরসের প্রতিটি বাচ্চা মুরগির এক চোখে এক ফোটা করে ড্রপারের সাহায্য নিতে হবে।

আর. ডি. ভি.: এ টিকাবীজের প্রতিটি ভায়ালে ০.৩ মি.লি. মূল টিকাবীজ হিমশুষ্ক অবস্থায় থাকে। এ টিকা দু'মাসের অধিক বয়সের মুরগির জন্য উপযোগী। প্রথমে ভায়ালের টিকাবীজ ১০০ মি.লি. পরিশ্রুত পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর তা থেকে ১ মি.লি. করে নিয়ে প্রতিটি মুরগির রানের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। ছয় মাস পরপর এ টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

টিকা ছাড়া খামার থেকে রোগ দমনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। যথা- 

ক) রাণীক্ষেত রোগে মৃত পাখিকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটি চাপা দিতে হবে। 

খ) খামারের যাবতীয় সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন-আয়োসান, সুপারসেপ্ট ইত্যাদি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায়) দিয়ে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

 

                            (খ) গামবোরো রোগ (Gumboro Disease)

গামবোরো বাচ্চা মুরগির মারাত্বক সংক্রমণ রোগ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এ রোগের পাখির রোগ প্রতিরোধক অঙ্গ অর্থাৎ বার্সাল ফ্যাব্রিসিয়াস আক্রান্ত হয় বলে প্রতিরোধক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন এরা সহজেই অন্য যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই এ রোগকে বার্ড এইডস বা পোল্ট্রি এইডসও বলা হয়। এই রোগটি সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ডেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের গামবোরো জেলায় শনাক্ত করা হয় বলে একে গামবোরো রোগ বলে। কিন্তু এর মূল নাম ইনফেকশাস বার্সাইটিস বা ইনফেকশাস বার্সাল ডিজিজ । এ রোগে সাধারণত ২-৬ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের হার খুব বেশি (১০০% পর্যন্ত), তবে মৃত্যুহার খুব কম (৫-১৫%)। তবে কোনো কোনো সময় আক্রান্ত বাচ্চার ৫০% ও মারা যেতে পারে। এ রোগ থেকে সেরে ওঠা মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কমে যায় ।

রোগের কারণ: 

বিরনাভাইরিডি পরিবারের অন্তর্গত বিরনা ভাইরাসের সেরোটাইপ ১ এ রোগের জন্য দায়ী। এ ভাইরাসের দুটো স্ট্রেইন রয়েছে। যেমন- ক্লাসিক্যাল ও ভেরিয়েন্ট স্ট্রেইন।

সংক্রমণঃ 

  • একই ঘরে রাখা অসুস্থ বাচ্চার সংস্পর্শে সুস্থ বাচ্চা এলে। 
  • বাতাসের মাধ্যমে। 
  • কলুষিত লিটার, যন্ত্রপাতি মাধ্যমে। 
  • খাদ্য, লিটার, পোকামাকড়ের মাধ্যমে।
  • পরিচর্যাকারী বা দর্শণার্থীর জামা, জুতো ইত্যাদির মাধ্যমে।

গামবোরো রোগে আক্রার পাখিতে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়:

১) ক্ষুধামন্দা 

২) পালক উসকোখুশকো হয়ে যায়। 

৩) শ্লেষ্মাযুক্ত মল ত্যাগ করে, মলে রক্ত থাকতে পারে। এ মল মালদ্বারের চারপাশে আঠার মতো লেগে থাকতে পারে। 

৪) প্রথমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ও পরে তা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে আসে। 

৫) পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারণে পানিশুন্যতা দেখা দেয়। 

৬) পাখি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে যায়। 

৭) শরীরের সতেজতা নষ্ট হয় । 

৮) তীব্র রোগে পাখির শরীরে কাঁপুনি হয় ও অবশেষে মারা যায়। 

৯) বেঁচে যাওয়া পাখির দৈহিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় । 

১০) বাচ্চাগুলো একসঙ্গে ব্রুডার বা ঘরের এককোণে জড়ো হয়ে থাকে। 

১১) ক্রিম সবুজ রঙের ডায়রিয়া হয়।

রোগ নির্ণয়: 

নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়:

  • রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে। 
  • মৃত বাচ্চার ময়না তদন্তে প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে। এতে-
  • থাইমাস এবং বার্সা ফুলে যায় ও তাতে রক্তের ছিটা পাওয়া যায়। 
  • পা এবং উরুর মাংসে রক্তের বড় বড় ছিটা দেখা দেয়।

চিকিৎসা 
এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই । তবে আক্রান্ত পাখিগুলোকে ৩-৫ দিন স্যালাইন পানি (৫ লিটার পানি +২৫০ গ্রাম আখের গুড় + ১০০ গ্রাম লৰণ) পান করালে এদের পানিশূন্যতা রোধ হয়। এরা গায়ে শক্তি পার এবং রক্তপড়া বন্ধ হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ : 

রোগ প্রতিরোধই এ রোগ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পন্থা। এজন্য খামারে সবসময় সাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। ঘর, খাঁচা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক, যেমন ফরমালিন (ফরমালিনঃ পানি = ১৪৯), আয়োসান বা সুপারসেপ্ট দিয়ে ধৌত করতে হবে। বাংলাদেশে গামবোরোর বেশ কয়েক ধরনের টিকা আমদানি করা হয় যেমন:

* নবিলিস গামবোরো ডি ৭৮ 

* ভি১ বার্সা জি 

* বার ৭০৬

* গামবোরাল সিটি ইত্যাদি।

এগুলো প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায় নির্দিষ্ট বয়সে পাখিতে/মুরগিতে প্রয়োগ করতে হবে। তবে, ১০-১৪ দিন বয়সে প্রথমবার ও ২৪-২৮ দিন বয়সে বুষ্টার ডোজ হিসেবে চোখে ড্রপ বা মুখের মাধ্যমে পান করিয়ে এ টিকা প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

 

                                       (গ) মারেক্স রোগ (Murex Disease)

মারেক্স রোগ পাখির স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার সৃষ্টিকারী মারাত্বক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটি লিম্ফোপ্রলিফারেটিভ রোগ, যা পাখির ক্যান্সার। এ রোগে পাখির প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র, যৌন গ্রন্থি, চোখের আইরিস, পেশি ও ত্বক আক্রান্ত হয়। সাধারণত ৬-১০ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা মুরগি এবং বাচ্চা কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়। ১৯০৭ সালে সর্বপ্রথম হাঙ্গেরিতে মারেক নামে এক ব্যক্তি এ রোগটি আবিষ্কার করেন বলে তার নামানুসারে এ রোগের এরুপ নামকরণ করা হয়। অবশতা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে একে ফাউল প্যারালাইসিসও বলে।

রোগের কারণ 

হারপেসভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত হারপেস ভাইরাস ২ বা মারেক'স ডিজিজ ভাইরাস নামক ভাইরাস এ রোগের কারণ।

রোগ সংক্রমণ

  • বাতাসের সাহায্যে জীবাণু দেহে প্রবেশ করলে।
  • খাদ্যের ব্যাগ বা বস্তা, যন্ত্রপাতি, জামা-জুতা ইত্যাদির মাধ্যমে। 
  • আক্রান্ত পাখির লালা, শ্লেষ্মা, মল, পাখার ফলিকূল ইত্যাদির মাধ্যমে।
  • কীটপতঙ্গ, বিশেষ করে, ডার্কলিং বিটলের মাধ্যমে।

রোগের লক্ষণ 

অবশতা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আক্রান্ত পাখির জাত, বয়স ও ভাইরাসের স্ট্রেইনের ওপর এ রোগের লক্ষণ নির্ভর করে । সাধারণভাবে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়:

  • প্রাতীয় স্নায়ু আক্রান্তের ফলে এক পা, এক ডানা বা দুই পা, দুই ডানা অবশ হয়ে ঝুলে পড়ে।
  • ষাড়ের মাংসপেশি আক্রান্ত হলে মাথা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। 
  • আইরিস বা চোখের উপরের পাতা আক্রান্ত হলে পাখিতে অন্ধত্ব দেখা দেয়।

দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির হলে-

  • ক্ষুধামন্দা দেখা যায় । 
  • ফ্যাকাশে দেখায় । 
  • পাতলা পায়খানা হয় ।
  • ডিম উৎপাদন কমে যায়।
  • পাখি খোড়ায়, পা ও ডানা ইত্যাদি অবশ হয়ে যায়। 
  • হা করে নিঃশ্বাস নেয়। 
  • অনাহার ও পানি শূন্যতার কারণে পাখি মারা যায় ।

রোগ নির্ণয় 

ময়না তদন্তের মাধ্যমে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়:

  • বাসা ও থাইমাস ছোট হয়ে যাবে। 
  • প্রান্তীয় স্নায়ু যেমন- সারাটিক স্নায়ু মোটা হবে।
  • যেকোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গে এবং ফলিকুল বা গোড়ার টিউমার হবে। 
  • চোখের আইরিসের বর্ণের বিকৃতি ঘটবে

চিকিৎসা 

এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে মাধ্যমিক সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। 

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ

  • স্বাস্থ্যম্মত বিধি ব্যবস্থায় খামার পরিচালনা করা।
  • বিভিন্ন বয়সের মুরগি বা কোয়েল আলাদা আলাদা পালন করা। 
  • খামারে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা। 
  • সুস্থ মুরগির বাচ্চার টিকা প্রদান করা।

মারেক'স রোগ প্রতিরোধের জন্য বাচ্চা মুরগিতে টিকা প্রয়োগ করা সর্বোত্তম পন্থা। যেকোনো ধরণের ক্যানসারের বিরুদ্ধে এটি প্রথম উদ্ভাবিত টিকা। বাংলাদেশে মারেফ'স রোগের টিকা প্রস্তুত হয় না। তবে, বাজারে আমদানি করা টিকা কিনতে পাওয়া যায়। মারেক'স রোগের বিভিন্ন ধরণের টিকা রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে এইচ.টি.ভি.-১২৬ অর্থাৎ মারেক্সিন সি এ ভালো কাজ করে । এ টিকা একদিন বয়সের বাচ্চা মুরগিতে ০.২ মি.লি. মাত্রায় ঘাড়ের ত্বকের নিচে প্রয়োগ করা হয়।

 

 

                                       ঘ) এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (Avian Influenza)

 

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের কারণ: 

এটি ভাইরাসজনিত রোগ। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভাইরাস এরোগের কারণ। মানুষে ছড়ালে একে বার্ড ফ্লু বলে। মানুষে সংক্রমণের কারণে বার্ড ফ্লু বর্তমানে সর্বাধিক আলোচিত রোগ।

রোগের বিস্তার

  • রোগাক্রান্ত মুরসির প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শ, মুরগির মল, লালা ইত্যাদি ব্যবহৃত খাদ্য, পানি, যন্ত্রপাতি, পাত্র, ইত্যাদির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে। 
  • এছাড়া আক্রান্ত খামারের যানবাহন, ব্যক্তি, দর্শনার্থী ইত্যাদির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে ।

রোগের লক্ষণ:

  • মুরগির খাবার চাহিদা কমে যায়। 
  • চোখ, মাথা ও খুঁটি ফুলে যায় 
  • চোখে দিয়ে পানি পড়ে । 
  • শরীরের পালকবিহীন অংশে রক্ত জমে কালো হয়ে যায়। 
  • মুরগি দুর্বল হয়ে প্যারাইসিস হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত মুরগির শ্বাসকষ্ট হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সমর ঘড় ঘড় লক্ষ করে ।
  • ঝুঁটি বেগুনি রং ধারণ করে ।
  • সবুজ রঙের পাতলা পায়খানা দেখা যায় । 
  • আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়তে থাকে এবং মৃত্যুর হার ১০০% পর্যন্ত হতে পারে।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

শরীরের বিভিন্ন অংশে ও মাংসপেশিতে রক্তক্ষরণ দেখা যায়। চামড়ার নিচে, শ্বাসনালী, ফুসফুসে রক্তক্ষরণ ও মা দেখা যায়। সঠিকভাবে রোগ নির্ণরের জন্য ল্যাবে পাঠাতে হবে।

প্রতিরোধের উপায়: 

জৈব নিরাপত্তা সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। এছাড়া কোনো খামারে এ রোগ দেখা দিলে সম্মিলিতভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সমস্ত মুরগিকে ধ্বংস করতে হবে। কোনো ভাবেই আক্রান্ত মুরগি খামার থেকে বের করা যাবে না ।

 

                             (ঙ) ফাউল পক্স (Fowl Pox) 

পাখির বসন্ত বা ফাউল পক্স একটি ভাইরাসজনিত অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। সব বয়সের সব প্রজাতির পাখি এতে আক্রান্ত হতে পারে। পাখির বসন্ত একটি মারাত্মক রোগ। অসস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকতা লাভ করে । তখন মৃত্যু হার অত্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও ফাউল পক্স বলতে সব পাখির বসন্ত রোগকেই বুঝায় তথাপি বর্তমানে আলাদা নামেও, যেমন- পিজিয়ন পক্স, টার্কি পক্স, ক্যানারি পক্স প্রভৃতি ডাকা হয়। পৃথিবীর প্রায় পোল্ট্রি উৎপাদনকারী দেশেই বসন্ত রোগ দেখা যায়। এ রোগের পাখির দেহের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে উন্মুক্ত স্থানে এবং অভ্যন্তরীন অঙ্গে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লালচে নডিউল সৃষ্টি হয় যা বসন্তের গুটি নামে পরিচিত।

রোগের কারণঃ 

পরভিরিডি পরিবারের ফাউল পক্স ভাইরাস নামক ভাইরাস বসন্ত রোগের কারণ।

সংক্রমণ: নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। যথা-

  • রোগাক্রান্ত পাখির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে সুস্থ পাখিতে এ রোগ ছড়াতে পারে। 
  • ত্বকের ক্ষত বা কাটা ছেঁড়ার মাধ্যমে।
  • কিউলের ও অ্যাডিস মশার মাধ্যমে।
  • তাছাড়া কখনো কখনো রক্তশোষক মাছি, ক্লি ও আঠালির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

রোগের লক্ষণ:

বসন্ত রোগ প্রধানত দু'প্রকৃতিতে দেখা যায়। যথা-

ক. ত্বকীয় বা হেড ফর্ম প্রকৃতিঃ এ প্রকৃতিতে আক্রান্ত পাখির মুখমণ্ডলে বসন্তের গুটি দেখা যায়। আক্রান্ত পাখির ক্ষুধামন্দা, দৈহিক ওজন হ্রাস ও ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটিকে শুষ্ক বসন্তও বলা হয়।

 

খ. ডিপথেরিটিক প্রকৃতিঃ এ প্রকৃতিতে প্রথমে আক্রান্ত পাখির জিহ্বায় ক্ষত দেখা যায়। এ ক্ষত পরে শ্বাসনালী ও ফুসফুসে বিস্তার লাভ করে । ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণে অবশেষে পাখির মৃত্যু ঘটে। এ প্রকৃতির বসন্ত আর্দ্র বসন্ত নামে পরিচিত।

এ দু'প্রকৃতির বসন্ত আবার পাখিতে মৃদু ও তীব্র আকারে রোগের লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে ।

যেমন- মৃদু প্রকৃতির বসন্তেঃ 

*পাখির উম্মুক্ত ত্বকে বসন্তের ফোসকা দেখা যায়। এটিই এ প্রকৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য । 

* মুরগির ঝুটি, গলকম্বল, পা, পায়ের আঙ্গুল ও পায়ুর চারপাশে বসন্তের গুটি বা ফুসকুঁড়ি দেখা যায়। এগুলো কিছুটা কালচে বাদামি রঙের হয়। 

* চোখের চারপাশে বসন্তের ফুসকুঁড়ির ফলে চোখ বন্ধ হয়ে যায় ।

 

তীব্র প্রকৃতির বসন্তে:

  • দেহের মুখগহ্বর, স্বরযন্ত্র, শ্বাসনালী ও অন্ত্রের দেয়ালেও বসন্তের ক্ষত দেখা দিতে পারে। 
  • শ্বাসনালী আক্রান্তের ফলে পাখির শ্বাসকষ্ট হয় ও পাখি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় । 
  • এতে ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায় । 
  • এতে পাখির মৃত্যু হার ৫০% পর্যন্ত হতে পারে ।

রোগ নির্ণয়-

  • আক্রান্ত স্থানে প্রথমে ছোট ছোট লাল দাগ হয় । 
  • পরবর্তীতে যা বড় হয়ে পুঁজপূর্ণ হয়, পেঁকে ঘা সৃষ্টি করে । এ ঘায়ে শেষে মামড়ি সৃষ্টি হয় ও তা পরবর্তীতে খসে পড়ে ।

চিকিৎসা: 

এ রোগের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত ক্ষত জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন- মারকিউরিক্রোম) দিয়ে পরিষ্কার করে তাতে সকেটিল, সালফানিলামাইড বা অন্য কোনো জীবাণুনাশক পাউডার লাগালে সুফল পাওয়া যায়।

রোগ নিয়ন্ত্রণ 

রোগ প্রতিরোধের জন্য যথাসময়ে পাখিদের টিকা প্রদান করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের সৃষ্টি এবং মশা নিয়ন্ত্রণও জরুরি। বসন্ত প্রতিরোধের জন্য এ দেশে দু'ধরনের টিকা প্রয়োগ করা হয়। যথা- 

১। পিজিয়ন বক্স টিকা: এটি ৩ মি.লি. পরিশ্রুত পানির সাথে মিশিয়ে দু'সপ্তাহের বয়সের বাচ্চার ডানার পালকবিহীন অংশে বাইকৰ্ড প্রিকিং নিডল বা সূঁচ দিয়ে খোঁচা মেরে প্রয়োগ করা হয় ।

২। ফাউল পক্স টিকাঃ এ টিকা হিমত অবস্থায় ০.৩ মি.লি. মাত্রায় কাচের অ্যাম্পুলে থাকে। এ পরিমাণ টিকা পরিশ্রুত পানিতে মিশিয়ে দু'শ পাখিতে প্রয়োগ করা যায়। পিজিয়ন পক্স টিকার মতো এ টিকাও এ পদ্ধতিতে বাইকড প্রিকিং নিভল দিয়ে পাখির ডানার পালকবিহীন স্থানে ২-৩ বার বিদ্ধ করতে হবে । প্রতিবারই পরিশ্রুত পানিতে গুলানো টিকার নিডল চুবিয়ে নিতে হবে। এ টিকা প্রয়োগের ৫,৭ বা ১০ তম দিনে টিকাৰিক স্থানে বসন্তের গুটি দেখা গেলে এর কার্যকারিতা প্রমাণ হবে। এ টিকা একমাসের বেশি বয়সের পাখিকে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও বিদেশে প্রস্তুত বসন্ত রোগের টিকা পাওয়া যায়। যেমন- ওভোডিপথেরিন ফোর্ট (ইন্টারভেট) যা কোম্পানির নির্দেশমতো মাত্রার প্রয়োগ করা হয়। বছরে একবার পাখিতে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়।

 

 

                                  (চ) ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious Bronchitis)

করোনা ভাইরাস এ রোগের কারণ। সাধারণত বাচ্চা মুরগির এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাদা জাতের মুরগিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। মৃত্যুহার ১০-১৫% পর্যন্ত হতে পারে। বাচ্চা মৃত্যুর হার ৯০% হতে পারে।

রোগের বিস্তারঃ বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত মুরগি ও তার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।

রোগের লক্ষণ:

  • খামারে এ রোগের আক্রমণ হঠাৎ করে ঘটে ও প্রায় সকল মুরগি এক সাথে আক্রান্ত হয়। 
  • শ্বাসকষ্ট হয় ও মুখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। 
  • সকালে ও রাতে লক্ষণগুলো প্রকট হয়।
  • অনেক সময় পানির মত পাতলা ডাইরিয়া হয় । 
  • চোখের ঝিল্লি লাল হয়। 
  • ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায় ও ডিমের খোসা পাতলা ও অমসৃণ থাকে।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

শ্বাসনালীতে প্রচুর শ্লেষ্মা ও মৃদু রক্তরক্ষরণ দেখা দিবে। অস্বাভাবিক ডিমের কুসুম দেখা যাবে।

প্রতিরোধ: 

নিয়মমতো টিকা প্রদান করতে হবে এবং জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে হবে। 

চিকিৎসা: 

কার্যকরী চিকিৎসা নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ এড়াতে অ্যান্টিবায়োটিক (মাইক্রোনিড, ডক্সাসিল ভেট) নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

 

 

                   (ছ) ইনফেকশাস ল্যারিঙ্গোট্রাকিয়াইটিস (Infectious Laryngo tracheitis):

ভাইরাস ঘটিত এই রোগটির অপর নাম এভিয়ান ডিপথেরিয়া। ৮-১৬ সপ্তাহ বয়সে এবং ডিমপাড়া অবস্থায় যেকোনো সময় এ রোগের সংক্রমণ হয়। মৃত্যুহার ১০-১৬% ।

রোগের বিস্তার:

  • আক্রান্ত মুরগির শ্বাস-প্রশ্বাস বা দেহ নিঃসৃত পদার্থের সংস্পর্শের মাধ্যমে খামারে ব্যবহৃত জিনিস পত্রের মাধ্যমে । 
  • এ রোগে আক্রান্ত মুরগি সুস্থ হওয়ার পর তার থেকে রোগ ছড়াতে পারে ।

রোগের লক্ষণ:

  • শ্বাসনালীতে রক্তক্ষরণ ও শ্লেষ্মা জমার কারণে শ্বাসকষ্ট হয় । 
  • নাক ও চোখ দিয়ে পানি গড়াতে থাকে। 
  • আক্রান্ত মুরগি মুখ খোলা রাখে এবং অনেক সময় দু'পায়ের উপর ভর করে ঘাড় লম্বা করে হাঁ করে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে ।
  • ঘড় ঘড় শব্দ হতে থাকে। 
  • কোন লক্ষণ প্রকাশের আগেই আক্রান্ত মুরগির মৃত্যু হতে পারে ।

পোস্টমর্টেম লক্ষণঃ মুরগির শ্বাসনালীতে সাদা আঠালো তরল পদার্থ পাওয়া যায়। ফুসফুস রক্তের মত লাল হবে। 

চিকিৎসাঃ কার্যকরী চিকিৎসা নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ এড়াতে অ্যান্টিবায়োটিক (মাইক্রোনিড, ডক্সাসিল ভেট) নিৰ্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

 

                 (জ) এগ ড্রপ সিনড্রম ( Egg Drop Syndrom):

এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। শুধুমাত্র ডিম পাড়া মুরগিতে এ রোগ ক্ষতিসাধন করে । ডিম পাড়া মুরগি ডিম পাড়ার শুরুতে বা ডিম পাড়ার যে কোনো সময় ডিম্বাশয় আক্রান্ত হয়। ডিম পাড়ার সময় হঠাৎ করে ডিম উৎপাদন কমে যায় বলে এ রোগকে এপদ্রপ সিনড্রম বলে।

রোগের বিস্তার: 

আক্রান্ত মুরগির ডিম পাড়া শুরু করলে ভাইরাস নিঃসৃত হয় এবং ফ্লোরের অন্য মুরগিতে ছড়িয়ে পড়ে।

রোগের লক্ষণঃ

  • সর্বোচ্চ উৎপাদনের সময় ডিম পাড়া হঠাৎ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায় । 
  • ডিমের খোসার গুণগতমান খারাপ হয় ।
  • বাদামি ডিমের রং বিবর্ণ হয়।
  • আক্রান্ত মুরগির রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। 
  • খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়।
  • ডায়রিয়া দেখা যেতে পারে। 
  • পাতলা খোসার, নরম খোসার বা খোসাবিহীন ডিম পাড়তে দেখা যায়।

 

প্রতিরোধঃ 

ডিমপাড়া শুরুর পূর্বে টিকা প্রদান করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। ডিম সংগ্রহ ও বহনের ট্রে নিয়মিত জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।

চিকিৎসা: কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই।

 

 

 

Content added By

৩.১.২.২ ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগসমূহ:

(ক) সালমোনেলোসিস (Salmonellosis) 

সালমোনেলা গোত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট মুরগির রোগগুলোকে সালমোনেলোসিস বলে। যে কোনো বয়সের মুরগিই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তবে ১ দিন হতে ২ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। প্রধানত ডিমের মাধ্যমে বাচ্চাতে এ রোগ বিস্তার লাভ করে । মৃত্যুহার ১০০% পর্যন্ত হতে পারে। সালমোনেলা গুলোরাম নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা রোগটি হলে একে পুলোরাম রোগ বলে। সালমোনেলা গ্যালিলেরাম নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা রোগটি হলে একে ফাউল টাইফয়েড রোগ বলে।

রোগের লক্ষণ:

  • মুরগির বাচ্চার পাছা ভিজা থাকবে ও হলদে বর্ণের পাতলা পায়খানা করবে। 
  • বাচ্চা চি চি শব্দ করবে এবং মাথা একদিকে করে তাপের কাছে জমা হবে।
  • পাখা এলোমেলো হবে, চুপচাপ বসে ঝিমাবে । 
  • খাবারের প্রতি অনীহা থাকবে।
  • তীব্র পানি শুন্যতার কারণে মুরগি মারা যায়। 
  • মৃত বাচ্চার উদর গহ্বরে ডিমের কুসুম লেগে থাকে ।
  • বাড়ন্ত মুরগিতে খোঁড়া পা ও হাড়ের জয়েন্ট ফুলে উঠার কারণে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। 
  • মুরগির এক ভায়েন্ট ফুলে যায় ও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে।
  • ঝুঁটি সাদা হয়ে যায়।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

বাচ্চাতে কুসুম অশোষিত অবস্থায় থেকে যায়। বিকৃত ও বিবর্ণ ডিম দেখতে পাওয়া যায়।

প্রতিরোধ:

  • বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখতে হবে। 
  • বাহক মুরগি নিধন করতে হবে সালমোনেলা যুক্ত বাচ্চা দ্বারা খামার শুরু করতে হবে। 
  • নিয়মিত আইওসান মিশ্রিত পানি দ্বারা ঘর, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে ।

চিকিৎসা: 

ইএসবি ৩০% পাউডার বা কসুমিক্স প্লাস ১ লিটার পানিতে ১-২ গ্রাম মিশিয়ে ৩-৪ দিন খাওয়াতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শুধু অ্যান্টিবায়োটিক সালমোনেলা দূর করা সম্ভব নয়। সালমোনেলা কিলার (যেমন: বায়োট্ৰনিক এস ই) নিয়মিত ব্যবহারে রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

(খ) সংক্রামক সর্দি (Infectious Coryza)

সংক্রামক সর্দি বা ইনফেকশাস করাইজা মুরগির শ্বাসতন্ত্রের এর একটি মারাত্বক ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। সব বয়সের মুরগি এতে আক্রান্ত হলেও সাধাণত বয়স্ক মুরগি বেশি আক্রান্ত হয়। মুরগির মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ রোগকে ঠান্ডা লাগা, আনকমপ্লিকেটেড করাইজাও বলে। এ রোগ ১০০% পাখি আক্রান্ত হতে পারে, তবে মৃত্যু হার আনুপাতিক হারে অনেক কম।

রোগের কারণ:

 হিমোফিলাস গ্যালিনেরাম নামক এক প্রকার ক্ষুদ্র দণ্ডাকৃতির বা কক্রোব্যাসিলাই ব্যাকটেরিয়ার এ. বি. ও . টাইপ এ রোগ সৃষ্টি করে ।

সংক্রমণ পদ্ধতি: 

নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ সুস্থ পাখিতে সংক্রমিত হয়। যথা-

  • আক্রান্ত মুরগি সুস্থ মুরগির সংস্পর্শে আসলে। 
  • কলুষিত শ্লেম্মার যারা দুষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে । 
  • পাশাপাশি অবস্থিত মুরগির ঘরে বাতাসের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে।

রোগের লক্ষণ: 

করাইজা রোগে আক্রান্ত মুরগিতে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়। যথা:

  • মুখমণ্ডল ও মাথা ফুলে যায় । 
  • নাকমুখ দিয়ে পানি ঝরে। 
  • অক্ষিঝিল্লির প্রদাহ হয়ে চোখ ফুলে যায় ও আঠাযুক্ত হয়।
  • পলার ফুল বিবর্ণ হয়ে যায় ও ফুলে ওঠে। 
  • খাদ্য ও পানি পান করা বন্ধ হয়ে যায়। 
  • নাক দিয়ে শ্লেষ্মা করে।
  • কাঁশি হয় ও গলা দিয়ে ঘড় ঘড় শব্দ বেরোয়। 
  • শ্বাসকষ্ট হয়। 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন হ্রাস পায়। 
  • লক্ষণ প্রকাশের ২-৩ দিনের মধ্যেই আক্রান্ত পাখি মারা যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়:

  • রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে। 
  • নাকের ঝিল্লিপর্দা ও সাইনাসের শ্লৈষ্মিক প্রদাহ থাকে। 
  • অক্ষিঝিল্লির প্রদাহ, মুখমণ্ডল ও গলার ফোলা থাকে।

সংক্রামক সর্দি বা ইনফেকশাস করাইজার চিকিৎসা:

  • খাদ্যের সঙ্গে সালফাডাইমিথোক্সিন ও সালফাথায়জল ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে পুনঃচিকিৎসা দিতে হবে । 
  • তাড়াতাড়ি সুফল পেতে হলে ভেটেরিনারি সার্জনের নির্দেশিত মাত্রায় স্ট্রেপটোমাইসিন ইনজেকশন ও খাদ্যের সঙ্গে সালফোনেমাইড ওষুধ খাওয়াতে হবে।

 

রোগ প্রতিরোধ : 

নিম্নলিখিতভাবে সংক্রামক করাইজা রোগ প্রতিরোধ করা যায়। যথা-

  • খামারে স্বাস্থ্যসম্মত বিধিব্যবস্থা মেনে চলতে হবে ।
  • যেহেতু এ রোগ থেকে সেরে ওঠা পাখি রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে তাই পালনের জন্য বয়স্ক মুরগি না কিনে একদিন বয়সের বাচ্চা কেনা উচিত ৷
  • টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য ইনঅ্যাকটিভেটেড ইনফেকশাস করাইজা টিকা ব্যবহার করা। নেদারল্যান্ডের ইন্টারভেট কোম্পানি কর্তৃক প্রস্তুত এ টিকার নাম নভিভ্যাক করাইজা। প্রতিটি পাখির পেশি বা ত্বকের নিচে ০.৫ মি.লি. মাত্রায় টিকা প্রয়োগ করা হয়। প্রথমবার ৬ সপ্তাহ বয়সে ও দ্বিতীয়বার ৮ সপ্তাহ বয়সে টিকা প্রদান করলে ৮ মাস পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়। বাংলাদেশে করাইজার কোনো টিকা প্রস্তুত হয় না ।

 

(গ) নেক্রোটিক এন্টারাইটিস (Necrotic enteritis)

এন্টারাইটিস কথাটির অর্থ হলো অস্ত্রের প্রদাহ। নানা কারণে অন্ত্রে প্রদাহ হতে পারে। অস্ত্রে উত্তেজক পদার্থের উপস্থিতি বা বিভিন্ন জীবাণু ও পরজীবীর কারণে এন্টারাইটিস হয়। সাধারণত ২-৮ সপ্তাহ বয়সের মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়, তবে ১(এক) সপ্তাহ বয়সের বাচ্চাও আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে মৃত্যুর হার ৫-৫০% পর্যন্ত হতে পারে।

নেক্রোটিক এন্টারাইটিস রোগের কারণ: 

বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, (যেমন: সালমোনেরা, ই-কলাই ও ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারপ্রিনজেনস) ও প্রোটোজোয়া(ককসিডিয়া) এ রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী ।

রোগের লক্ষণ:

  • আক্রান্ত মোরগ-মুরগি ভীষণ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। 
  • প্রচন্ড ডায়রিয়া দেখা দেয়, লক্ষণ প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই অবস্থার দ্রুত অবনতি হয় এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু হয়।
  • অনেক সময় লাল রঙের গুড়ের মতো বিষ্ঠা হয় বা কক্সিডিওসিস বা রক্ত আমাশর হিসাবে ভুল হতে পারে। 
  • তাছাড়া অনেক সময় পানির মত পাতলা বিষ্ঠা হয় এবং বদ হজমকৃত খাদ্য বিষ্ঠা সাথে বেরিয়ে আসতে পারে।
  • মোরগ-মুরগির ডানা ঝুলে পড়ে, দাঁড়াতে পারে না। 
  • পালক উস্কো-খুস্কো হয়ে যায় । 
  • ঠোঁট দিয়ে লালা পড়ে। 
  • বুকের মাংস কালো হয়ে যায়।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

কলিজা বড় হয়ে যায়, হলুদাভ রং এর এবং রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। অস্ত্রে রক্তক্ষরণ হয় এবং গ্যাস জমে বেলুনের মতো ফুলে উঠে। অনেক সময় ক্ষুদ্রান্তে সাদা রঙের ঘা দেখা দেয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীর মোটা হয়ে যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধঃ-

বায়োসিকিউরিটি মেনে চলতে হবে। সংক্রমিত ঘর ও সরঞ্জাম ১:২০০ বা ১:৫০০ কস্টিক সোডা মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

  • ভাইরাস: ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদানের মাধ্যমে ভাইরাসজনিত রোগ দমন করা হয়। 
  • প্রোটোজোয়া: কক্সিডিয়া নামক প্রটোজোয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পোল্ট্রি খাদ্যে কক্সিডিয়া বিরোধী ঔষধ ও ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। 
  • ব্যাকটেরিয়া: এন্টারাইটিস সৃষ্টিকারী ২ ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে-

(ক) সালমোনেলা, ই. কলাই ইত্যাদি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া- খাদ্যে বিভিন্ন এসিডিফায়ার (সালমোনেলা কিলার), এন্টিবায়োটিক (সি.টি.সি./অক্সি-টেট্রাসাইক্লিন/ফুরাজলিডন/টাইলোসিন ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। 

(খ) ক্লস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেনস (Clostridium perfringens) : নামক গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি নেক্রোটিক এন্টাররাইটিস রোগটি দমনের জন্য আমরা কার্যকর তেমন কিছু ব্যবহার করি না। নেক্রোটিক এন্টারাইটিস যেকোনো বয়সের মোরগ-মুরগির হতে পারে। মৃত্যুহার লেয়ার মুরগির তুলনায় ব্রয়লার মুরগির বেশি। রোগটির সংক্রমণ কোনোরূপ পূর্ব লক্ষণ প্রকাশ না করেই ঘটতে পারে। পুরাতন লিটার পুনঃব্যবহার করলে রোগটি ছড়াতে পারে। পুরাতন লিটারের মধ্যে রোগটির স্পোর বা বীজ থাকার সম্ভাবনা বেশি।

চিকিৎসা: 

যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন- টেট্রাসাইক্লিন বা রেনামাইসিন এর যেকোনো একটি ঔষধ বিধি মোতাবেক পানির সাথে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।

 

(ঘ) কলিবেসিলোসিস (Colibacillosis)

ইসকারিসিয়া কলাই নামক এক প্রকার ব্যাটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহকে কলিবেসিলোসিস রোগ বলে । এই জীবাণুটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সব প্রাণির শরীরের ভিতরে ও বাইরের পরিবেশে যেমন- খাদ্য বা পানির ভিতর এই জীবাণু উপস্থিত থাকে। সময় সুযোগমত জীবাণুটি শরীরের ভেতর রোগ সৃষ্টি করে । শরীরের অন্য কোনো রোগের উপস্থিতিতে বা অন্য কোনো ধরনের কারণে শরীর যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখনই এই জীবাণু রোগ সৃষ্টি করে । আবহাওয়াগত বা অন্য কোনো কারণে বাতাসের আর্দ্রতা বা লিটারের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় 

সংক্রমণের উপায়ঃ

  • ডিম পাড়া মুরগির প্রজনন নালিতে জীবাণু বিদ্যমান থাকলে তা ডিমকে আক্রান্ত করতে পারে বা ঐ ডিম হতে যে বাচ্চা ফুটে তাকে সংক্রমিত করতে পারে। 
  • আক্রান্ত মুরগির সংস্পর্শে আসলে বা হাঁচি, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অন্য মুরগিতে ছড়াতে পারে ৷
  • ইনকিউবেটরের আর্দ্রতা বেশি থাকলে এবং যন্ত্রপাতির মধ্যে এই রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকলে সদ্য ফোটা বাচ্চার রোগ দেখা দিতে পারে । 
  • মোরগ-মুরগি স্থানাস্তর করার সময় পরিবহন বা অন্য কোনো ধকল পীড়নের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 
  • ঘরের মধ্যে এমোনিয়া গ্যাস জমে গেলে যে পীড়ন সৃষ্টি হয় তার ফলেও মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

রোগের লক্ষণঃ 

এ রোগের লক্ষণগুলো নির্ভর করে মুরগির কোনো অঙ্গে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করেছে তার উপর। যেমনঃ

১. অম্ল প্রদাহ (Enteritis):

  • পাতলা বিষ্ঠা হয়ে থাকে এবং পিছনের পালকে বিষ্টা লেগে থাকে। 
  • পালক উস্কো খুস্কো থাকে ।

২. কলিসেপটিসেমিয়া (Colisepticaemia):

  • হঠাৎ করে মোরগ-মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়ে ও নিস্তেজ হয়ে যায়। নড়চড়ায় অনীহাভাব প্রকাশ পায় । 
  • মৃত্যু হার বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । 
  • শরীরের ভিতর বিভিন্ন অঙ্গে রক্তকরণ দেখা দেয়।
  • ডিমের মাধ্যমে সংক্রমণ হলে ভ্রুণ মারা যায় বা বাচ্চা ফুটলেও রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং ৪- ৫ সপ্তাহ পর্যন্ত মৃত্যু হতে থাকে। 
  • যকৃতের মধ্যে সবুজ ক্ষত ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানার মতো দেখা যায় ।

৩. কলিগ্যানুলোমা (Coligranuloma): 

  • মুরগির যকৃত, অস্ত্র ইত্যাদির ঝিল্লীতে গুটিগুটি দানার মত দেখা যায় ।

৪. এয়ার স্যাক ডিজিজ (Air Sac Disease) : 

  • ৬-৭ সপ্তাহের ব্রয়লার মুরগিতে এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়। 
  • শ্বাসনালী ও শ্বাস থলির মধ্যে এই ইনফেকশন হয় বলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । 
  • হৃৎপিন্ড, যকৃত ও চোখে প্রদাহ দেখা দেয় ।

৫. প্যানঅপথ্যালমাইটিস ও সোলেন হেড ডিজিজ (Panonthalmitis & Swollen Head Disease):

  • কলি সেপ্টিসেমিয়া রোগে আক্রান্ত মুরগির চোখের ভিতর ও তার চারিধারে দধির মত অথবা পুঁজ জাতীয় পদার্থ জমা হয় বলে চোখ ফুলে যায় ও চোখ বন্ধ করে রাখে। কখনও কখনও চোখ অন্ধ হয়ে যায় । এটাই প্যানঅপথ্যালমাইটিস নামে পরিচিত ।
  • আবার দেখা যায় ব্রয়লার মুরগির চোখের চারিধারে পানি ও পুঁজ জমে ফুলে যায়। ফলে মনে হয় মাথা ফুলে গেছে। এটাকেই “সোলেন হেড ডিজিজ” বলে। এ সমস্ত মুরগি বার বার মাথা নাড়ে ও ঘাড় বাঁকিয়ে রাখে।

৬. চর্ম প্রদাহ (Dermatitis): 

  • চামড়ার নিচে জলপূর্ণ স্ফীতি ও মাংসপেশিতে রক্তক্ষরণ পরিলক্ষিত হয়। 
  • চামড়ার ঘা দেখা যেতে পারে ।

৭. সাইনোভাইটিস (Syovitis): 

  • রক্তের মাধ্যমে জীবাণু প্রবেশ করে হাড়ের জয়েন্ট বা অস্থি সন্ধিতে ইনফেকশন করে । 
  • সাধারণত বাচ্চা মুরগি আক্রান্ত হয়। ফলে অস্থি সন্ধি বা গীড়া ফুলে যায় ও মুরগি হাঁটতে পারে না ।

৮. ওফ্যালাইটিস (Omphalitis): 

  • নাভীর প্রদাহে বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়ে। 
  • অপেক্ষাকৃত উষ্ণ স্থানে বাচ্চারা জড়ো হতে থাকার প্রবণতা দেখা যায় । 
  • এই রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চার নাভীর ঘা শুকায় না এবং বাচ্চার মৃত্যু হয়।

 

প্রতিরোধের উপায়: 

  • জৈব নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে। 
  • ডিম ফোটানোর জন্য সুস্থ, নিরোগ ও জীবাণু মুক্ত ডিম বেছে নিতে হবে। 
  • কোনো রূপ ধকল বা পীড়নে আক্রান্ত হওয়া মাত্র ভেট বেট পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

চিকিৎসাঃ সিপ্রোফ্লক্স সলুশন ১ মিলি ১-২লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে । ডায়রিয়া হয় বিধায় খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হয় ।

 

 

(ঙ) ওফ্যালাইটিস/ন্যাভাল ইল (Neval III)

ওফ্যালাইটিস একটি ইসকারিসিয়া কলাই জীবাণুঘটিত রোগ তবে সংক্রামক নয়। ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে এ রোগটি মোরগ মুরগিকে আক্রমণ করে । ঘর বা লিটারের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে, হ্যাচারির ইনকিউবেটরের মধ্যে আর্দ্রতা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে, কোনো কারণে বাচ্চা অবস্থায় মুরগির পেটে থাকা ডিমের কুসুম অব্যবহৃত থাকলে, বাচ্চা অবস্থায় জীবাণুর সংস্পর্শে আসলে ওফ্যালাইটিস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা খুব বেশি বা কম হলে এবং পরিবহন জনিত পীড়নের কারণে মৃত্যু হার অধিক হয় ।

রোগের লক্ষণ:

  • মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত মুরগির বাচ্চা সাধারণত সুস্থ দেখায়। 
  • অসুস্থ বাচ্চার ঝিমুনি হয় ও মাথা ঝুলে পড়ে। 
  • আলো-তাপের উৎসের দিকে জড়ো হয়ে থাকে ।
  • নাভি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেটি লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। এ সময় সে স্থানে বাচ্চার ব্যাথা অনুভূত হয় । 
  • জন্ম হতে ১০-১৫ দিন বয়স পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে। মৃত্যু হার ১৫% পর্যন্ত হয় । 
  • বুকের চামড়ার নিচে ইডিমা (মাংস পেশিতে পচন ও পানি জমা) দেখা দিতে পারে ।

প্রতিরোধ 

হ্যাচারির ইনকিউবেটরের মাধ্যমে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোগের প্রতিরোধ ও বিস্তার রোধ করা সম্ভব। ইনকিউবেটরে পরিষ্কার ও ভালো ডিম বাহাই করতে বসাতে হবে। 

চিকিৎসা: টেট্রা-ডেট পাউডার অথবা ডক্সাসিল-ডেট পাউডার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।

 

(চ) ফাউল কলেরা (Fowl Cholera)

হাঁস-মুরগির কলেরা বা ফাউল কলেরা হাসমুরগির ও অন্যান্য গৃহপালিত ও বন্য পাখির একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমক রোগ। উচ্চ হারে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার এবং ভাররিরা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সব বয়সের পাখি এতে আক্রান্ত হতে পারে। হাঁসমুরগির ঘর স্বাস্থ্যসম্মত না হলে এবং ব্যবস্থাপনা ঘাটতি থাকলে এ রোগ মড়ক আকারে দেখা দেয়। সঠিকভাবে রোপ সনাক্ত করে চিকিৎসা করতে না পারলে মৃত্যু হার অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া এ রোগ একবার দেখা দিলে দমন করা মুশকিল হয়ে পড়ে। যদিও এ রোগকে ফাউল কলেরা বলে, কিন্তু ষ্টাভিয়ান পান্ডুরেপোসিস, অ্যাভিরাম হিমোরেজিক সেপ্টেলেমিরা ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। তবে হাঁসের ক্ষেত্রে রোগকে হাঁসের কলেরা বা ডাক কলেরা বলা হয়।

মুরগির কলেরা রোগের কারণ: 

পান্ডুরেলা মালটুসিডা নামক একপ্রকার গ্রাম নেগেটিভ ক্ষুদ্র দণ্ডাকৃতির বাইপোলার ব্যাকটেরিয়া এ রোগের একমাত্র কারণ।

 

মুরগির কলেরা রোগের সংক্রমণ : 

মুরগির কলেরা রোগের রোগ নিম্নলিখিতভাবে সংক্রমিত হয় । যথা- 

১. সংবেদনশীল মুরগির ঘরে কোনো বাহক মুরগি থাকলে বা প্রবেশ করলে। 

২. বন্য পাখি বা অন্যান্য বাহক প্রাণির সংস্পর্শে সংবেদনশীল পাখি আসলে। 

৩. একই ঘরের বা খামারের এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিম্নলিখিত ভাবে এ রোগ সংক্রমিত হয় । যথা-

ক. আক্রান্ত মুরগির নাকের সর্দির মাধ্যমে। 

খ. এ রোগের মৃত মুরগিকে ঠোকর দিলে। 

গ. কুলষিত পানির মাধ্যমে। 

ঘ. মানুষের জামা জুতো ঘরের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, টিকা প্রদানের যন্ত্রপাতি ইত্যাদির মাধ্যমে। 

ঙ. কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে আক্রান্ত মোরগ থেকে সুস্থ মুরগিতে ।

 

মুরগি ও অন্যান্য পাখিতে সাধারনত দু'প্রকৃতিতে কলেরার লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন: 

১. তীব্র প্রকৃতির লক্ষণ। 

২. দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির লক্ষণ ।

১. তীব্র প্রকৃতির লক্ষণঃ 

ক. হঠাৎ ধপ করে পড়ে মারা যায়। রোগের লক্ষণ প্রকাশের পূর্বে অর্থাৎ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই মারা যায় । 

খ. সবুজ রংয়ের পাতলা বিষ্ঠা ত্যাগ করে । অনেক সময় বিষ্ঠা ফেনাযুক্ত হয়। 

গ. নাক মুখ দিয়ে পানি পড়ে।

২. দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির লক্ষণ: 

ক. গলার ফুল ফুলে যায়। (বিশেষ করে মোরগের ক্ষেত্রে)।

খ. মাথার ঝুটি একেবারে কালো হয়ে যায় । 

গ. সন্ধিপ্ৰদাহ বা আৰ্দ্ৰাইটিস হয় এবং পা খোড়া হয়ে যায়। 

ঘ. ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়। দুই মাস পর্যন্ত অসুস্থ থাকে। 

ঙ. অবশেষে আস্তে আস্তে মারা যায়।

 

রোগ নির্নয় 

নিম্নলিখিত ভাবে হাঁস-মুরগির কলেরা রোগ নির্ণয় করা যায় । যথা: 

ক. রোগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে। 

খ. ময়নাতদন্তে বিভিন্ন অঙ্গের প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে। যথা:

১. অন্নের রক্তক্ষরণ 

২. বন্ধুতে ছোট ছোট সাদা দাগ । 

৩. হৃদপিণ্ডের বাহিরের সাদা অংশে রক্তের ফোঁটা। 

৪. মৃত মুরগির সমস্ত অঙ্গে রক্তক্ষরণ ও রক্তাধিক্য । 

৫. গবেষণাগারে জীবাণু কালচার করে ।

চিকিৎসা: 

কলেরা রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনেমাইট গ্রুপের ঔষধ উল্লেখিত মাত্রায় প্রয়োগ করে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। 

১.ফ্লুমেকুইন ১০% পাউডার ১গ্রাম/২ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫দিন আক্রান্ত পাখিকে পান করাতে হবে। 

২. মেইন ২০% সলুশন ১ মিমি /৪ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন আক্রান্ত পাখিকে পান করাতে হবে।

 

রোগ প্রতিরোধ 

১) কলেরা রোগ প্রতিরোধে নিজের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে 

ক) এই ভ্যাকসিন ৭৫দিন বয়সে ১ সি সি করে রানের মাংসে ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয় ।

খ) প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়ার ১৫ দিন পর পুনরায় ১ সি সি করে চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হয় । 

গ) তারপর ৬ মাস পরপর ১ সি সি করে চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হয় ।

২. সব সময় খামারের আশেপাশে জীবাণুনাশকের ব্যবহার বাড়ানো । 

৩. লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। 

৪. এক ঘরের যন্ত্রপাতি অন্য ঘরে নেয়ার সময় জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে জীবাণু মুক্ত করে নিতে হবে। 

৫. খামারে জৈব নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.১.২.৩ মাইকোপ্লাজমা দ্বারা সৃষ্ট রোগ

(ক) মাইকোপ্লাজমোসিস (Mycoplasmosis) 

মাইকোপ্লাজমা দ্বারা সৃষ্ট মুরগির রোগসমূহকে মাইকোপ্লাজমোসিস বলে। সাধারণত মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপ্টিকাম ও মাইকোপ্লাজমা সাইনোভি নামক জীবাণু মুরগির মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। সকল বয়সের মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে মৃত্যু হার সাধারণত কম তবে অন্য রোগে সৃষ্ট জটিলতার জন্য মৃত্যু হার ৩০% পর্যন্ত হতে পারে।

রোগের বিস্তার:

  • আক্রান্ত মুরগি ও ডিমের মাধ্যমে সুস্থ মুরগি বা বাচ্চাতে রোগটি হতে পারে । 
  • গৃহপালিত মুরগি, বন্যপ্রাণি, আটালী, ইঁদুর প্রভৃতির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে। 
  • রোগটির সংস্পর্শে আসা মানুষের হাত পা ও আক্রান্ত ফার্মের আসবাসপত্র, যন্ত্রপাতি বা পরিবহন যানের মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে

রোগের লক্ষণ:

  • চোখ দিয়ে পানি ও নাক দিয়ে লালা ঝরে, চোখে পুঁজ জমা হয়ে থাকে । 
  • গলায় ঘড় ঘড় শব্দ হয়। 
  • চোখের পাতা, মাথা, মুখ ও পায়ের গিরা ফুলে থাকে। 
  • যার জন্য খুড়িয়ে হাঁটে। 
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মুরগি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় । 
  • পায়ের তলায় ফুলে যায়, পুঁজ হতে পারে। বুকের মাংসে ফোসকা দেখা যায়।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

শ্বাসনালীতে প্রচুর হলুদাভ সর্দি (মিউকাস) জমে এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়। গিরার ক্রিমের মত আঠালো পদার্থ দেখা যায়।

প্রতিরোধ: 

রোগ ছাড়ানোর উপারগুলো ভালোভাবে জেনে সেগুলো সম্পর্কে সতর্কতামূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে । নিয়মিত টিকা দিতে হবে। মাইকোপ্লাজমা যুক্ত খামার থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। হ্যাচিং ডিম ইনকিউবেটরে রেখে ২-৩ ঘণ্টা ভাগ (৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দিয়ে ০.০৪% -০.১০ টাইলোসিন টারনেটি বা জেন্টামাইসিন দ্রবণের মধ্যে ২৫ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০-৩০ মিনিট রেখে দিলে ডিমের মধ্যেকার মাইকোপ্লাজমা জীবাণু মারা যায়। মুরগির শেডে অতিরিক্ত ধূলাবালি ও অ্যামোনিয়া গ্যাসের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

চিকিৎসা: 

টাইলোসিন টারট্রেট ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.১.২.৪ ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ সমূহ: 

(ক) এসপারজিলোসিস (Aspergillosis) 

এসপারজিলাস ফ্লেভাস নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট এ রোগকে এসপারজিলোসিস বলা হয়। মুরগির বাচ্চার ব্রুডিংকালীন সময়ে এ রোগ নিউমোনিয়া প্রকৃতির হয় বিধায় একে ব্রুডার নিউমোনিয়াও বলা হয়। এছাড়া অন্যান্য বয়সের মুরগির আক্রান্ত হতে পারে। পুষ্টির অভাবজনিত কারণে দুর্বল মুরগি এবং ৰাজক মুরগি এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ব্রুডিংকালীন সময়ে হলে ১০-৫০% মুরগি মারা যেতে পারে।

রোগের বিস্তার:

  • হ্যাচারিতে ডিম হতে বাচ্চা ফোটার পর বা ব্রুডার হাউজে ব্রুডিং এর সময় শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে এই ছত্রাকের স্পোর ফুসফুসে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। 
  • লিটার বেশি আর্দ্র হলে এই রোগের জীবাণু জন্ম নেয়। উক্ত স্পোর শ্বাসনালীতে যেরে রোগ সৃষ্টি করে ।

রোগের লক্ষণ:

  • শ্বাসকষ্ট হয় ও হাঁ করে নিঃশ্বাস গ্রহণ করে । 
  • নিঃশ্বাসের সময় খড় খড় শব্দ হয়। 
  • খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দুর্বল হয়ে যায়।
  • পিপাসা বেড়ে যাওয়ার ফলে বারবার পানি পান করে । 
  • বাচ্চা মুরগিতে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারা যায় ।
  • চোখে আক্রান্ত হলে চোখ ফুলে যায় ও চোখ দিয়ে সবসময় পানি পড়ে। 
  • মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে অবশ হওয়ার কারণে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না।

পোষ্টমর্টেম লক্ষণঃ 

শ্বাসনালী, কণ্ঠনালী ও ফুসফুসে সাত দানার মত সাদা বা হলুদাভ নডিউল দেখা যায়। ফুসফুসে ধূসর বর্ণের ফেনা পাওয়া যায় ।

প্রতিরোধ

  • হ্যাচারি যন্ত্র বাচ্চা ফোটানোর আগে ফিউমিগেশন করা উচিত। ছত্রাকমুক্ত ডিম বাচ্চা ফোটানোর আগে বেছে নিতে হবে। স্যাঁতস্যাঁতে বা বেশি শুকনা লিটার ব্যবহার করা উচিত না।
  • বেশি দিনের পুরনো ছত্রাকযুক্ত খাদ্য খাওয়ানো যাবে না, খাদ্য উপাদান মেশানোর পর বেশি দিন রাখা যাবে না। ময়লা আবর্জনামুক্ত শুকনা পরিবেশ রাখতে হবে। খাবার পাত্র ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। খাবারে নিয়মিত কপার সালফেট এবং মোল্ড বাইন্ডার যোগ করতে হবে।

চিকিৎসা: 

কোনো সঠিক চিকিৎসা নেই। মাইকোফিক্স প্লাস প্রতি কেজি খাদ্যে ১.৫ গ্রাম করে মিশিয়ে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে । অথবা নিষ্টাটিন জাতীয় ঔষধ খাবারে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে ।

 

(খ) আফলা-টক্সিকোসিস (Afla-toxicosis)

এটি মাইকোটক্সিন জনিত মারাত্মক রোগ। অ্যাসপাজিলাস নামক ছত্রাক থেকে এই মাইকোটক্সিন তৈরি হয় বা খাদ্যের মাধ্যমে বিশেষ করে সয়াবিন, ভূট্টা, চালের গুঁড়া ইত্যাদির মাধ্যমে খামারের মুরগিতে বিস্তার লাভ করে । নিম্নমানের খাদ্য (১৪% এর অধিক আর্দ্রতা), উপযুক্ত ভাবে গুদামজাত না করা, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ পোল্ট্রি খাদ্য মাইকোটক্সিন দ্বারা আক্রান্ত। সকল বয়সের মুরগি আক্রান্ত হতে পারে ।

রোগের বিস্তার:

  • খাদ্য যদি কোনো কারণে ভিজে যায় এবং সেভাবেই সংরক্ষণ করা হয়। 
  • খাদ্য মেশানোর পর বেশি দিন রাখা হয় এবং তা যদি মুরগিকে খাওয়ানো হয়।

রোগের লক্ষণ:

  • পালক ঠোকরাবে। 
  • পায়ের রং ফ্যাকাসে হবে ও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটবে। 
  • খাদ্যে অরুচি ও পাতলা পায়খানা হবে। মুখে ঘা দেখা দিবে । 
  • পালক উসকো-খুসকো হবে। 
  • ঝিমাবে ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিবে। 
  • শরীরের ওজন কমে যায় । 
  • পুষ্টি দ্রব্যের শোষণ হ্রাস পায় । 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে । 
  • পরবর্তীতে মুরগি মারা যাবে ।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: লিভার কালচে বর্ণের। চামড়ার নিচে রক্তের ফোঁটা। পেটের ভিতরে প্রচুর রক্ত পাওয়া যাবে।

প্রতিরোধ: 

খাবারে টক্সিন বাইন্ডার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত লিটার ও খাবার পরিবর্তন করতে হবে। মাঝে মাঝে খাবারে অফলাটক্সিন-এর পরিমাণ জানার জন্য ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে হবে। লিটার শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। পঁচা, ভেজা ও নষ্ট খাবার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পরিষ্কার খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে।

চিকিৎসা:

  • মাইকোফিক্স গ্লাস বা যেকোনো টক্সিন বাইন্ডার খাদ্যের মেশাতে হবে। 
  • পানিতে আখের গুড় ও কপার সালফেট মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। 
  • পঁচা খাদ্য খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে ।

 

 

Content added By

৩.১.২.৫ প্রোটোজোয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ : 

(ক) রক্ত আমাশয় (Cocellosis)

ককসিডিয়া নামক প্রোটোজোয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহকে ককসিডিওসিস বলে। অল্প বয়সের মুরগি বিশেষ করে ৪-৮ সপ্তাহের মুরগি এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে বেশি বয়সী মুরগিতেও কখনও কখনও এ রোগ দেখা দেয়। আমাদের দেশে আইমেরিয়া ট্রেনেলা ও আইমেরিয়া নেকাট্রিক্স নামে ২টি জীবাণু দ্বারা রক্ত আমাশয় হয়। মুরগির বাচ্চার মড়কের কারণগুলোর মধ্যে এই রোগ অন্যতম ।

রোগের লক্ষণ:

  • হঠাৎ করে খাদ্য ও পানি গ্রহণে অনীহা দেখাবে। 
  • পালক উসকো খুসকো হবে।
  • রক্ত মিশ্রিত চুনা পায়খানা করবে ও মলদ্বারের পালকগুলো পায়খানায় ভিজা থাকে। 
  • ৰাচ্চা চোখ বুজে এক জায়গার চুপ করে বসে থাকে।
  • শরীরে কাঁপুনি হয়। 
  • ঠোঁট,পা,খুঁটি ও পলার ফুল ফ্যাকাশে হয়ে যায় ।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

আক্রান্ত মুরগিতে রক্তমিশ্রিত বিষ্ঠা থাকে। অস্ত্রের আক্রান্ত স্থানে ক্ষত চিহ্ন দেখা যায় ও অন্ত্রের দেয়ালের বাইরে থেকে রক্ত আবরণের চিহ্ন দেখা যায়। সিকামে রক্ত মিশ্রিত তরল বিষ্ঠা থাকবে।

প্রতিরোধ:

  • স্বাস্থ্যসম্মত লিটার ও পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। 
  • মুরগির ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • বাড়ন্ত মুরগির সাথে বাচ্চা মুরগি রাখা যাবে না । 
  • পানির পাত্রের নিচের ও চারিপার্শ্বের লিটার প্রতিদিন উল্টে পাল্টে দিতে হবে। 
  • বাচ্চা মুরগির ঘরে কাজ করার পর বড় মুরগির ঘরে কাজ করতে হবে।
  • বিধি মোতাবেক ঘর পরিষ্কার ও লিটার পরিবর্তন করে নতুন ব্যাচে বাচ্চা তুলতে হবে। 
  • লিটার সব সময় শুষ্ক রাখতে হবে। ১০০ বর্গফুট জায়গায় ৫-৭ কেজি চুন ছিটিয়ে মিশিয়ে দিয়ে লিটার ওলট পালট করে দিলে লিটার শুষ্ক থাকবে। ফলে ককসিডিয়ার জীবাণুসহ অন্যান্য জীবাণু মারা যাবে।
  • প্ৰতি ১০০ কেজি খাদ্যে ৫০ গ্রাম বাজারে প্রাপ্ত ককসিডিওস্ট্যাট মিশিয়ে খাদ্যে ব্যবহার করতে হয়। 
  • জৈব নিরাপত্তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। 
  • টিকা ব্যবহার করে ও বাচ্চার ককসিডিওসিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

চিকিৎসা 

ইএসবি৩ (৩০%) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫-২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন পান করাতে হবে। 

যদি রোগ মুক্ত না হয় তবে ২দিন পর আবার ইএসবি৩ (৩০%) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫-২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩ দিন পান করাতে হবে।

এমবাজিন পাউডার ১.৫-২.০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন পান করাতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.১.২.৬ অন্যান্য রোগ: 

(ক) পেটে পানি জমা রোগ (Acytis):

এসাইটিস বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ব্রয়লার মুরগির একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগের কারণ একাধিক তবে রক্ত সংবহন তন্ত্রের ত্রুটির জন্যই শেষ পর্যন্ত এসাইটিস দেখা দেয়। যেকোনো বয়সের মুরগিই আক্রান্ত হতে পারে তবে ৫-৬ সপ্তাহের মুরগিই বেশি আক্রান্ত হয় ।

রোগের লক্ষণ:

  • সাধারণ ঝাঁকের ছোট মুরগিগুলোই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । 
  • পালক উসকো খুসকো হয় ।
  • ঝুঁটি ফ্যাকাসে ও কুচকানো থাকে । 
  • হাঁটা বা নড়াচড়ায় অনীহা দেখায় । 
  • শ্বাসকষ্ট হয় এবং পেট বড় হয়ে যায় ।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ: 

আক্রান্ত মুরগির পেটে হলুদাভ বা বাদামি রঙের পানি জমা হয়। হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যায়।

প্রতিরোধ:

  • বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ভালো থাকলে, ব্রয়লার প্রতি জায়গার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, সেড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও লিটার শুষ্ক থাকলে, দুপুরের দিকে ২-৩ ঘন্টা খাবার সরবরাহ বন্ধ রাখলে এবং পানিতে দ্রবণীয় মাল্টি ভিটামিন খাওয়ালে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। 
  • খাদ্যের সাথে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতি টনে ১২৫ গ্রাম হিসাবে ব্যবহার করতে হবে ।

চিকিৎসা: 

এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে খাবারের অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ ব্যবহার করলে এবং পি এইচ কন্ট্রোলার ১মিলি/ ২মিলি পানিতে ৫-৭ দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এনফ্লক্স- ভেট সলুশন ব্যবহার করলে রোগের প্রবণতা কমে।

 

 

Content added By

৩.২ মুরগির পুষ্টি উপাদানের অভাব জনিত রোগের নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ অপুষ্টিজনিত রোগ Name, cause, symptoms, treatment and prevention of malnutrition in chickens :

খাদ্যের যেকোনো এক বা একাধিক খাদ্যোপাদানের ঘাটতির কারণে লেয়ার মুরগির বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। নিচের লেয়ারে বিভিন্ন ভিটামিনসমূহের অভাবজনিত রোগ, তাদের চিকিৎসা ও প্রতিকারের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

 

Content added || updated By

৩.২.১ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ: 

                  (ক) ভিটামিন 'এ' এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin A deficiency disease)

কতদিন পর্যন্ত মুরগিগুলো এই ভিটামিনের অভাবে ভুগছে তার উপর ভিত্তি করে ভিটামিন-‘এ' এর অভাবে সৃষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়। বয়স্ক মুরগিতে লক্ষণ দেখা দিতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। কিন্তু মুরগিতে ২/৩ সপ্তাহে মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভিটামিন-‘এ' এর অভাবজনিত লক্ষণগুলো অবস্থা ও বয়স ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • চোখের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়, চোখের পাতা ফুলে যায় । 
  • নাক ও চোখ দিয়ে আঠার মতো জলীয় পদার্থ বের হয় এবং রাতকানা রোগ হয়। 
  • পায়ের হাঁটু ও চামড়ার হলুদ রং ফ্যাকাশে হয়ে যেতে থাকে । 
  • খাবার গ্রহণে আগ্রহ কমে যায় ও পালকের চাকচিক্য কমে যেতে পারে। 
  • মাথার ঝুঁটি, গলার ফুল নীলাভ ও শুষ্ক হয়। 
  • ঝুঁটি শুষ্ক ও ফ্যাঁকাশে হয়ে যায় । 
  • বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায় ।

অভাব নিরূপণ:

  • খাদ্যে ভিটামিন-এ'এর পরিমাণ সঠিক আছে কিনা তার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা। 
  • রক্তের সিরামে ভিটামিন এর পরিমাণ নির্ণয় করা । 
  • চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় কিনা তা লক্ষ্য করার মাধ্যমে এই ভিটামিনের অভাবজনিত অবস্থা নিরূপণ করা যায় ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা: 

খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন। শাকসবজি, ভুট্টা, গম, ছোট মাছ, ফলমূল, ফলমূলের খোসা, হাঙ্গর মাছের তেল খাওয়ালে ভিটামিন-এ' এর অভাব দূর হয়। লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিদিন বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন এ.ডি.ই. দ্রবণ প্রস্তুতকারকের নির্দেশমত খাদ্য বা পানির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ করতে হবে।

 

(খ) ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin D deficiency disease)

শরীরের হাড় এবং ডিমের খোসার গঠনের জন্য অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস-এর কার্যকারিতার জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত জরুরি। সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে বা খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে ভিটামিন ডি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে মুরগি খাবার হতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন ডি পায় না ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • পায়ের অস্থি নরম মোটা ও বাঁকা হয়ে যায়, ফলে মুরগি ঠিক মতো হাঁটতে পারে না। একে “রিকেট/অস্টিওম্যালেসিয়া” রোগ বলা হয়। 
  • ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে হাড় বাঁকা হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
  • ঠোঁট, হাড় ও পায়ের নখ নরম হয়ে যায়, ফলে মুরগি হাঁটুর উপর ভর দিয়ে চলে । 
  • দৈহিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে ও পাজর ফুলে যায় ।

রোগ নিরুপণ:

  • লক্ষণ দেখে রোগ নিরূপণ তথ্য ভিটামিন ডি এর অভাব বোঝা যায়। 
  • খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ পরিমাপ করে এবং
  • সন্দেহজনক মুরগিকে যদি ভিটামিন ডি সরবরাহ করে ভালো ফল লাভ করা যায় তাহলে বুঝতে হবে মুরপিগুলো ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছিল।

সতর্কতা: অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন ডি খাদ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োগ করলে মুরগির কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন কোম্পানির এ.ডি.ই. প্ৰৰণ নির্দেশমত খাওয়াতে হবে।
  • যেহেতু ভিটামিন ডিএর সাথে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত তাই একই সাথে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম এর প্রয়োজনীয় ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • খামারে ছোট বাচ্চাগুলোকে সম্ভব হলে দিনের কিছুটা সময় রোদ্রের সংস্পর্শে আসার সুযোগ দিলে এবং সকালবেলা মুরগির জন্য সূর্যালোকের ব্যবস্থা করলে ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত রোগের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।

 

                    (গ) ভিটামিন ই এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin E deficiency disease)

ভিটামিন ই এর অভাবে মুরগির এনসেফালোমেলাসিয়া, মাসকুলার ডিসট্রোফি, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি রোগ হতে পারে। খাদ্যে অপর্যাপ্ত সেলিনিয়ামের উপস্থিতি, বিভিন্ন উপকরণের সঠিক অনুপাতে মিশ্রণ না করা, তৈল জাতীয় খাদ্যের অক্সিডেশন ইত্যাদির কারণে ভিটামিন-ই এর অভাব হতে পারে। 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • আক্রান্ত হাঁটতে পারে না, পা টান করে ছেড়ে দেয়। 
  • বাচ্চার মাথার বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও জায়গাগুলো নরম হয়। এ রোগকে এনসেফালোমেলাসিয়া বলে ।
  • বুক ও উরুর মাংস শুকিয়ে যায়, একে মাসকুলার ডিসট্রোফি বলে। 
  • চামড়ার নিচে পানি জমার কারণে শরীর ফুলে যায়, একে 'অ্যাকজুডেটিভ ডায়াথেসিস'বলে ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

(ক) চিকিৎসার জন্য বাজারে প্রাপ্ত এ.ডি.ই. দ্রবণ প্রস্তুতকারকের নির্দেশমতো খাদ্য বা পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে । 

(খ) রোগ প্রতিরোধের জন্য সর্বদা খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মাত্রা বজায় রাখতে হবে। 

(গ) খাদ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তৈল জাতীয় খাদ্য সরবরাহ রাখতে হবে। 

(ঘ) সংরক্ষিত খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করতে হবে । 

(ঙ) প্রয়োজনীয় পরিমাণ খনিজ বিশেষত সেলেনিয়াম খাদ্যে মিশাতে হবে।

 

 

                    (ঘ) ভিটামিন কে এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin K deficiency disease)

এই ভিটামিনটি শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এর অভাব হলে ঠোঁট কাটার সময় বা সামান্য আঘাতে অধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার আমাশয় আক্রান্ত হলে পায়খানায় প্রচুর রক্ত দেখা যায়। খাদ্য ও পানিতে যদি সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয় তবে এই ভিটামিনটির মেটাবলিজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে অন্ত্রের মধ্যে ভিটামিন কে উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াসমূহ মরে যায়, ফলে দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে এ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্যদ্রব্য অনেক দিন সংরক্ষণ করলেও খাদ্যের উপস্থিত এই ভিটামিনটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় ।

অভাবজনিত লক্ষণ

  • এ ভিটামিনের ঘাটতির কারণে শরীরে কোথাও কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে, রক্ত পড়া বন্ধ হয় না। ফলে মুরগির মৃত্যু ঘটে।
  •  ঠোঁট কাটার পর অধিক সময় ধরে রক্ত ক্ষরণ হয় ফলে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়ে মুরগি মরে যেতে পারে । 
  • চামড়া ও মাংস পেশিতে রক্তপাত হয়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

ক) ঠোঁট কাটার কয়েক দিন পূর্ব হতে খাদ্যে ভিটামিন-কে সরবরাহ করা প্রয়োজন । 

খ) রক্ত আমাশয় এর চিকিৎসা চলাকালেও অতিরিক্ত ভিটামিন কে সরবরাহ করা প্রয়োজন। 

গ) সবুজ ঘাস, মাছের গুঁড়া শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ালে ঘাটতি দূর হয় । 

ঘ) চিকিৎসার জন্য খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে। 

ঙ) অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার সময় এবং তারপর কিছুদিন খাদ্য ভিটামিন কে সরবরাহ করতে হবে।

 

           (ঙ) ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin B, Thiamin deficiency disease)

পানিতে দ্রবণীয় এ ভিটামিনটির অভাবে খুব তাড়াতাড়ি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। খাদ্যে অধিক পরিমাণে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন বি-১ বিদ্যমান না থাকলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় । 

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • অরুচি এবং খাদ্য গ্রহণে অনীহা । 
  • দৈহিক ওজন হ্রাস । 
  • উসকো খুসকো পালক । 
  • দুর্বলতা এবং হাঁটতে অনীহা । 
  • ঝিমানো ভাব ।
  • ঘাড় বাঁকানো বা ঘুরিয়ে উল্টোভাবে রাখা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায় । 
  • কখনও কখনও মুরগি ঘাড় পিছনের দিকে বাঁকা করে উর্ধ্বমুখী হয়ে অবস্থান করে । একে “স্টার গেজিং” বলে ।

রোগ নির্ণয়:

  • লক্ষণ অনুযায়ী ভিটামিন বি-১ এর অভাবে ভুগছে। 
  • আক্রান্ত মুরগির খাদ্যে ভিটামিন বি-১ এর পরিমাণ গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে এরা আসলে ভিটামিন বি-১ এর অভাবে ভুগছে কিনা ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

১) পানি বা খাবারে ভিটামিন বি-১ সরবরাহ করা। প্রথম কয়েক দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থাৎ ১০-১৫ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। 

২) খুব অসুস্থ মুরগির জন্য আরও বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি-১ খাবারে সরবরাহ করা প্রয়োজন । 

৩) এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিদিন খাবারের সাথে ভিটামিন বি-১ মিশিয়ে দিতে হবে।

 

            (চ) ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লাভিন) এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin B, Riboflavin deficiency disease)

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং খাবার পানির পিএইচ (অম্লত্ব) ভিটামিন বি-২ কে নষ্ট করে ফেলতে পারে । তাই খাদ্যে এর অভাব দেখা দিতে পারে । 

অভাবজনিত লক্ষণ :

বাচ্চা অবস্থায় প্রথম কয়েক সপ্তাহ ও ভিটামিনটির অভাব হলে মুরগির মধ্যে-

  • দৈহিক দুর্বলতা ও অপর্যাপ্ত বৃদ্ধি হয়। 
  • শুকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিক পালক গজায় না । 
  • পাতলা পায়খানা হয় ।
  • তীব্র আক্রান্ত মুরগির পা অবশ হয়ে গিয়ে বুকের উপর ভর দিয়ে হাঁটে। 
  • প্রায় সময় ও ভিটামিনের অভাবে পায়ের অবশতাজনিত রোগ দেখা যায় যাকে ‘কার্ল-টো- প্যারালাইসিস’বলে । এক্ষেত্রে দুই পা দু'দিকে অর্থ্যাৎ সামনের দিকে এক পা চলে পিছনের দিকে চলে যায় ফলে পাগুলি অচল হয়ে যায় । তাই তারা হাঁটতে পারে না এবং না খেয়ে মৃত্যুবরণ করে।
  • ব্রিডার মুরগি হলে ডিম হতে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় এবং ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায় ।

রোগ নিরূপণ :

 রোগের লক্ষণ দেখে ভিটামিন বি-২ সরবরাহ করলে যদি লক্ষণগুলো দ্রুত চলে যায় তবে বুঝতে হবে মুরগিগুলো ঐ ভিটামিনের অভাবে ভুগছিল ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

১) খাদ্যের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি-২ থাকা দরকার । 

২) মাঝে মাঝে পানিতে অন্যান্য ভিটামিনের সাথে ভিটামিন বি-২ সরবরাহ করা প্রয়োজন, যাতে এই ভিটামিনের অভাব না হয় । 

৩) আক্রান্ত মুরগিগুলোকে আলাদা ভাবে রেখে ভিটামিন বি-২ খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায় ।

 

(ছ) ভিটামিন বি-৬(পাইরিডক্সিন)এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin B Pyridoxine deficiency disease)

খাবারের মধ্যে অধিক পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকলে এবং অনুযায়ী ভিটামিন বি-৬ এর স্বল্পতা থাকলে সাধারণত এ ভিটামিনটির অভাবজনিত সমস্যা দেখা যায় । কারণ এটি প্রোটিনের বিপাকে সাহায্য করে । 

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা বা অরুচি, উসকো খুসকো পালক ইত্যাদি । 
  • দৈহিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত বা কম হওয়া । 
  • প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় । 
  • গুরুতর আক্রান্ত মুরগিগুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে ছুটাছুটি করতে থাকে এবং সব শেষে খিঁচুনি দেখা যায় এবং মৃত্যু হয়।

রোগ নির্ণয়: 

খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ নির্ণয় করে ও রোগের লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণার ভিত্তিতে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে ঐ ঝাঁকের মুরগিগুলি ভিটামিন বি-৬ এর অভাবে ভুগছিল ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা: 

১) লক্ষণ প্রকাশ পেলে খাবারের বা পানির সাথে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করে এ রোগের লক্ষণ প্রশমিত করা যায় । 

২) নিয়মিত পরিমাণমত ভিটামিন বি-৬ খাবারের সাথে সরবরাহ করলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় না।

 

                                      (জ) বায়োটিন এর অভাবজনিত রোগ (Biotin deficiency disease)

অধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে বায়োটিন সৃষ্টিকারি জীবাণু মরে গিয়ে কিংবা খাদ্যের মধ্যে বায়োটিনের পরিমাণ কম হলে অথবা খাদ্যে বায়োটিন নষ্টকারি কোনো পদার্থের উপস্থিতি থাকলে মুরগিতে এটার অভাবজনিত বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চা মুরগির শরীরের অসাড়তার হাত থেকে রক্ষার জন্য এ ভিটামিনটির বিশেষ প্ৰয়োজন । 

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • পালক ভেঙে ঝুলে পড়া ও পরে হাড় বাঁকা হয়ে যেতে পারে। 
  • অনেক সময় চোখের পাতা বুজে থাকে বা চোখ বন্ধ হয়ে যায় । 
  • বাচ্চা মুরগির পায়ের নিচে, মুখের কোণায় এবং চোখের পাতায় কড়া পড়ে যেতে পারে। 
  • ডিমের ভিতরে বাচ্চা মরে যায়। 
  • ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় ৷

রোগ নির্ণয় : 

১) লক্ষণ দেখে বায়োটিন প্রয়োগের ফলে যদি চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে মুরগির বায়োটিনের অভাবে ভুগছিল । 

২) খাদ্যস্থিত বায়োটিনের পরিমাণ এবং রোগের লক্ষণ দেখে সমন্বয় করে ও রোগ নির্ণয় করা যায় ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

১) খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ বায়োটিন মিশাতে হবে। 

২) রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে পানিতে অতিরিক্ত বায়োটিন মিশাতে হবে।

৩)খাদ্য বা পানিতে অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার পরিহার করতে হবে । 

৪) খাদ্যস্থিত বায়োটিনের পরিমাণ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যাতে খাদ্যে বায়োটিনের অভাব না হয় ।

 

                  (ঝ) কলিন এর অভাবজনিত রোগ (Colin deficiency disease)

মোরগ-মুরগির শরীরে বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপে কলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শারীরিক অসাড়তা দূর ও শরীরের বৃদ্ধির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের বিভিন্ন টিস্যু বা কলার গঠনে এবং স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । মুরগির খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে কলিন সরবরাহ করা বাঞ্ছনীয় ।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • পায়ের হাড় নরম ও বাঁকা হয়ে মুরগি অসাড় হয়ে যায় । 
  •  দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে । 
  • ব্রিডার মুরগির কলিজায় অতিরিক্ত চর্বি ও রক্তক্ষরণজনিত লক্ষণ দেখা দেয় ৷ 
  • ব্রিডার মুরগির মৃত্যুর হার বেড়ে যায়, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায় ফলে ডিম পাড়াও কমে যায় ।

রোগ নির্ণয় 

লক্ষণ দেখে এবং পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এছাড়াও খাদ্যস্থিত কলিন বৃদ্ধি করে যদি ফল পাওয়া যায় তবে ধরতে হবে কলিনের অভাব ছিল। 

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: 

খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ সয়াবিন মিল, গম ভাঙা, ফিস মিল ইত্যাদি থাকায় মোরগ-মুরগিতে কলিনের অভাব সাধারণত হয় না। কারণ সয়াবিন মিল ও ফিসমিলে প্রচুর পরিমাণে কলিন থাকে। বাজারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যে কলিন বা কলিন ক্লোরাইড পাওয়া যায়, তা প্রয়োজন মত খাবারে মিশিয়ে দিতে হবে। তবেই কলিনের অভাজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব ।

 

(ঞ) ভিটামিন বি ১২ (সায়ানো-কোবালামিন) এর অভাবজনিত রোগ Vitamin B12 (cvano-cobalamin) deficiency disease

শরীরের কোষের নিউক্লিক অ্যাসিড তৈরিতে, শর্করা ও চর্বির বিপাকীয় প্রকিয়ায় ভিটামিন বি-১২ সাহায্য করে । তন্ত্রের বিভিন্ন জীবাণু এই ভিটামিনটি তৈরি করে বিধায় এই ভিটামিনটির অভাবজনিত রোগ খুব কম দেখা দেয় এবং খাদ্যে এর প্রয়োজন অত্যন্ত নগণ্য। লিটারে পালিত মোরগ-মুরগির এই ভিটামিনের অভাব হওয়ায় সম্ভাবনা কম। যদি মোরগ-মুরগিকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অত্যধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয় তবে এই ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে । 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দৈহিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় । 
  • মৃত্যুর হার বেড়ে যায় এবং ডিম থেকে ডিম ফোটার হার কমে যায় । 
  • ডিমের মধ্যে বাচ্চার মৃত্যু ঘটতে পারে ।

রোগ নির্ণয় : 

অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ইতিহাস, লক্ষণ ইত্যাদি দেখে ভিটামিন বি-১২ দিয়ে চিকিৎসা দিলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে মুরগিতে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব ছিল ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ

১) লক্ষণ দেখা দিলে পানি বা খাবারের সাথে ভিটামিন বি-১২ সরবরাহ করতে হবে। 

২) সুস্থ অবস্থায় মাঝে মাঝে পানির সাথে ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে।

 

          (ট) ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রোগ (Vitamin C deficiency disease)

স্ট্রেস বা পীড়ন প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর উপাদান হিসেবে ভিটামিন সি ব্যবহার হয়ে থাকে। মোরগ-মুরগি ভিটামিন সি যথেষ্ট পরিমাণে নিজেরাই উৎপাদন করতে পারে। দৈহিক বৃদ্ধি, বীর্য উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন রকম বিষক্রিয়া, বিশেষত কিছু খনিজ লবণের বিষক্রিয়ার হাত থেকে মোরগ-মুরগিকে রক্ষা করার ক্ষমতা ভিটামিন সি এর রয়েছে। খাদ্যে ভিটামিন সি এর অভাব থাকলে বা মোরগ-মুরগি অত্যধিক গরম আবহাওয়ায় থাকলে বা পীড়ন (স্ট্রেস) সৃষ্টি হলে মোরগ-মুরগির ভিটামিন সি এর অভাব দেখা দিতে পারে। 

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় । 
  • দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায় ৷ 
  • খাদ্য হজম কম হয়।
  • পীড়নের মধ্যে পড়লে সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে অর্থাৎ পীড়ন সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায় 
  • মোরগ-মুরগির বিশেষত মোরগের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি মেশাতে হবে। 
  • মোরগ-মুরগির ঘরের মধ্যে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পীড়ন হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে পানির সাথে অতিরিক্ত ভিটামিন সি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। 
  • ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ও পরে কয়েকদিন ভিটামিন সি সরবরাহ করতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.২.২ খনিজ পদার্থের অভাবজনিত রোগ (Mineral deficiency disease) 

(ক) ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর অভাবজনিত রোগ Diseases due to deficiency of calcium and phosphorus

আমিষ, শ্বেতসার, চর্বি এবং ভিটামিনের মতো পাখির খাদ্যে খনিজ পদার্থের একান্ত প্রয়োজন। পাখির দৈহিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য রক্ষা এবং প্রজননের জন্য খনিজ পদার্থ অত্যাবশ্যক। তবে অধিক পরিমাণে খনিজ পদার্থ বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে । তাই পরিমিত পরিমাণ খনিজ পদার্থ খাদ্যের সাথে সরবরাহ করতে হয়। 

কাজ:

  • পাখি/মুরগির দেহের অস্থি গঠন, ডিমের খোসা তৈরিতে খনিজ পদার্থ অত্যাবশ্যক। 
  • দেহের অম্ল-ক্ষারত্ব সমতা রক্ষা করে । 
  • খনিজ শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্যে বিপাকে সাহায্যে করে ।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • ঠোঁট নরম ও বাঁকা হয়। 
  • ডিমের খোসা নরম ও পাতলা হয় 
  • খোসা ছাড়া ডিম দেয়। 
  • অস্থির গঠন ঠিক মতো হয় না। 
  • রক্ত জমাট বাঁধে না। 
  • রিকেট রোগ ও কেজ লেয়ার ফ্যাটিগ রোগ হয়। 
  • বাচ্চা ফোটার হার কমে যায়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  • মাছের গুঁড়া, ঝিনুক, হাড়, দানা শস্য, পালং শাক ইত্যাদি মুরগির খাদ্যে সরবরাহ করলে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় ।
  • মুরগির খাদ্যের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে বাচ্চা মুরগিতে ২.২ঃ১। 
  • মুরগির খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে- বাড়ন্ত মুরগিতে ২.৫ঃ১ । 
  • মুরগির খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে ডিমপাড়া মুরগিতে ৯৪১।

 

(খ) সোডিয়াম এর অভাবজনিত রোগ (Diseases due to deficiency of Sodium) 

সোডিয়ামের কাজঃ

  • দেহের অম্ল-ক্ষারত্ব সমতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। 
  • অস্থি গঠন করে ।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না । 
  • ক্যানাবলিজম রোগ হয় । 
  • হাড় নরম হয়। রক্ত পাতলা হয় । 
  • ডি-হাইড্রেশন দেখা দেয় ও মৃত্যু ঘটে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা: খাদ্যে সাধারণ লবণ সরবরাহ করে এর অভাব দূর করা যায়।

 

(গ) জিংক এর অভাবজনিত রোগ (Diseases due to deficiency of Zinc ) 

জিংকের কাজঃ

  • পাখির দৈহিক বৃদ্ধি, পালক গজানো ও ডিম উৎপাদনের জন্য জিংক প্রয়োজন । 
  • অস্থির গঠনে জিংক প্ৰয়োজন ।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না । 
  • পালক কম গজায় ও পায়ের চামড়া উঠে যায় । 
  • পায়ের হাড় খাটো ও মোটা হয় । 
  • মুরগি ঠোকরা ঠুকরি করে ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা:

  • মুরগির খাদ্যে জিংকের বা জিংক সমৃদ্ধ উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে ।

 

ঘ) সেলেনিয়াম এর অভাবজনিত রোগ (Diseases due to deficiency of Selenium) 

সেলেনিয়ামের কাজঃ

  • সেলেনিয়াম হচ্ছে গ্লুটাথায়োন পারোক্সিডেজ ( Glutathion Peroxidase) নামক এনজাইমের অংশ যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • ডিম বসানোর ৪র্থ দিনে ভ্রুণের মৃত্যু হয়। 
  • চামড়ার নিচে পানি জমে । 
  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না ৷
  • রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা:

  • ছোলা জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে বা খাদ্যে সেলেনিয়াম যুক্ত করলে এর অভাব দূর হয় ।

 

ঙ) লৌহ ও কপার এর অভাবজনিত রোগ (Diseases due to deficiency of Iron and Cupper)

অভাবজনিত লক্ষণ

  • রক্তশূণ্যতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হয় । 
  • লাল পালক এর রং ফ্যাকাশে হয় । 
  • স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।

প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ 

শাকসবজি, ঘাস, মাছের গুঁড়া ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। খাদ্যে ফেরাস সালফেট ও কপার সালফেট সংযোজন করতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.৩ লেয়ার মুরগির টিকাদান কর্মসূচি (Laver Chicken Vaccination Program):

টিকা বীজ হচ্ছে রোগের প্রতিরোধক যা রোগের জীবাণু বা জীবাণুর অ্যান্ট্রিজেনিক উপকরণ দ্বারা তৈরি করা হয়। পাখির দেহের ভিতর রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য টিকাবীজ প্রয়োগ করতে হয়। টিকা বীজ প্রয়োগের ফলে দেহের ভিতর রক্ত বা রক্তরসে একপ্রকার ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামক আমিষ পদার্থ তৈরি হয়, যাকে অ্যান্টিবডি বলা হয়। এ অ্যান্টিবডিই হচ্ছে রোগ প্রতিরোধক পদার্থ। এজন্য কৃত্রিম উপায়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে সুনির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে টিকা প্রদানের যে সিডিউল তৈরি করা হয় তাই টিকাদান কর্মসূচি ।

 

 

Content added By

৩.৩.১ ভ্যাকসিন/ টিকা 

জীবিত বা মৃত বা অর্ধমৃত অনুজীব বা অনুজীব নিঃসৃত বিষ বা এনজাইম যা শরীরে প্রবেশ করানোর পর নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে তাই ভ্যাকসিন। কৃত্রিম উপায়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পদ্ধতিকে ভ্যাকসিনেশন বলে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা হয়।

 

Content added By

৩.৩.২ ভ্যাকসিনেশনের নিয়মাবলী:

  • সঠিক মান ও জাতের ভ্যাকসিন নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
  • যে ভ্যাকসিন যে বয়সে দেয়ার নিয়ম সে বয়সেই দিতে হবে। 
  • ভিন্ন ভিন্ন মোড়কে/ বোতলে তৈরি দুই বা ততোধিক ভ্যাকসিন এক সাথে দেয়া যাবে না । 
  • ভ্যাকসিন গুলানো, মাত্রা ও প্রয়োগ করতে প্রস্তুতকারকের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। 
  • প্রস্তুতকারকের নির্দেশ অনুযায়ী ভ্যাকসিন রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • ভ্যাকসিন গুলানোর সময় পরিশ্রুত পানি ব্যবহার করতে হবে। 
  • ভ্যাকসিন প্রয়োগের সরঞ্জামাদি কোনক্রমেই কোনো রাসায়নিক বস্তু/ওষুধ/জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করা যাবে না। 
  • পানিতে ফুটিয়ে সরঞ্জামাদি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 
  • রোগাক্রান্ত বা পীড়ন অবস্থায় ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না । 
  • ভাইরাল ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় গুলানো ভ্যাকসিন ঠান্ডা স্থানে রেখে প্রয়োগ করতে হবে ।
  • ভ্যাকসিন প্রয়োগের তিন দিন পূর্বে থেকে তিন দিন পর পর্যন্ত প্রতি ৫ লিটার পানিতে ১ গ্রাম করে ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ডব্লিউ.এস. মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  • গুলানো ভ্যাকসিন ১-২ ঘন্টা সময়ের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। 
  • ভোরবেলা অথবা বিকাল বেলা অথবা রাত্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে । 
  • একটি ঘরের সকল পাখিকে একই সময়ে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  • খাবার পানির মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে পানিতে যাতে ক্লোরিন না থাকে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
  • ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ভ্যাকসিনের ভায়াল মাটির গভীর গর্তে পুঁতে রাখতে হবে অথবা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে হবে।
  • ভ্যাকসিন অবশ্যই থার্মোফ্লাঙ্কের মধ্যে বরফ দিয়ে তার মধ্যে পরিবহন করতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.৩.৩ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার কারণ The reason for the loss of effectiveness of the vaccine 

বিভিন্ন কারণে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন-

  • ভ্যাকসিনেশনে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, নিডল, ড্রপার যদি জীবাণুমুক্ত না হয়। 
  • ভ্যাকসিনের মাত্রা যদি নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে খুব কম বা খুব বেশি হয়।
  • ক্লোরিনযুক্ত পানিতে ভ্যাকসিন গুলানো হলে । 
  • নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের জন্য নির্দিষ্ট ডায়লুয়েন্ট (পানি) ব্যবহার না করলে ।
  • ভ্যাকসিন যদি শরীরের মধ্যে ঠিকভাবে প্রবেশ না করে । 
  • বুস্টার ডোজ না দিলে ।
  • মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাকসিন ব্যবহার করলে। 
  • নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ বা পরিবহন না করলে। 
  • রোগাক্রান্ত পাখিতে ভ্যাকসিন প্রদান করলে।
  • খাদ্যে মাইকো টক্সিন এবং আফলা টক্সিন থাকলে । 
  • পীড়নকালে ভ্যাকসিন দিলে । 
  • জীবিত জীবাণু দ্বারা তৈরি ভ্যাকসিনের জীবাণুর মৃত্যু ঘটলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় ।

 

 

Content added By

৩.৩.৪ ভ্যাকসিনেশনের বিভিন্ন উপায় (Different ways of vaccination) 

দু'টি পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যায়- 

ক) একক ভ্যাকসিনেশন 

(খ) সম্মিলিত ভ্যাকসিনেশন।

(ক) একক ভ্যাকসিনেশনের বিভিন্ন উপায় 

১. চামড়ার নিচে বা মাংসপেশিতে: সাধারণত ঘাড়ের বা পাখার চামড়ার নিচে এবং রানের বা বুকের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়া হয় । 

২. চোখ বা নাকের ছিদ্রের মাধ্যমে: নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের জন্য নির্দিষ্ট আকারের ড্রপারের সাহায্যে ১ চোখে বা নাকের এক ছিদ্র পথে ১ ফোঁটা ভ্যাকসিন দেয়া হয়। 

৩. ঠোঁট ডোবানোর মাধ্যমে: নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দ্বারা ভ্যাকসিন গুলিয়ে তার মধ্যে নাকের ছিদ্র পর্যন্ত ঠোঁট ডুবিয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। 

৪. ক্ষত তৈরির মাধ্যমে: রানের কোনো স্থানে কয়েকটি পালক উঠালে একটি ছোট ক্ষত তৈরি হয়। এই ক্ষতস্থানে ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি দ্বারা লেপে দিলে ভ্যাকসিনেশন হয়ে যায় ।

(খ) সম্মিলিত ভ্যাকসিনেশনের উপায় 

১.খাবার পানির সাথে: এই পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন ক্লোরিনমুক্ত পানি/পাতিত পানি/বৃষ্টির পানির সাথে মিশিয়ে ঐ পানি মুরগিকে পান করানো হয়। এ পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে-

  • পাখিকে ৩ ঘণ্টাকাল পানি না দিয়ে তৃষ্ণার্ত করে ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি দিতে হবে। 
  • ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি পাত্রে ২-৩ ঘণ্টা সময় থাকতে হবে।
  • ভ্যাকসিন ব্যবহারের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে মিশ্রিত করতে হবে। 
  • সকালে বা বিকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার সময় ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি দিতে হবে।

 

২. স্প্রে ভ্যাকসিনেশন 

পরিষ্কার, ক্লোরিন ও জীবাণুমুক্ত পানিতে/পাতিত পানিতে ভ্যাকসিন মিশিয়ে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ৩-৩.৫ ফুট উপর থেকে বাচ্চার উপর স্প্রে করতে হবে। ভ্যাকসিন স্প্রে করার সময় দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

 

 

 

Content added By

৩.৪ লেয়ার মুরগির বিভিন্ন ধরনের কৃমি সংক্রমণ, লক্ষণ ও তার প্রতিকার Laver chicken different types of worm infections, symptoms and its remedies

Content added By

৩.৪.১ পরজীবীজনিত রোগ (Parasitic Diseases): 

পরজীবী বা প্যারাসাইট এক ধরনের ক্ষুদ্র জীব যা অন্য জীব অর্থাৎ মানুষসহ পশুপাখির দেহে বসবাস করে জীবনধারণ করে । যে জীবের দেহের এরা জীবনধারণ করে তাদেরকে হোস্ট বা পোষক বলে। কিছু পরজীবী আছে যারা পোষকের দেহের ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বসবাস করে ক্ষতিসাধন করে । এদেরকে দেহাভ্যন্তরের পরজীবী বলে। আবার কিছু পরজীবী আছে যারা পোষকের দেহের বাইরের অঙ্গে বসবাস করে ক্ষতিসাধন করে । এদেরকে বহিঃদেহের পরজীবী বলে। উভয় ধরনের পরজীবীর আক্রমণের ফলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভারে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এরা পাখি/মুরগির দেহে বাস করে পাখি/মুরগির কর্তৃক খাওয়া পুষ্টিকর খাদ্য নিজেরা খেয়ে ফেলে, ফলে আক্রান্ত পাখি/মুরগির পুষ্টিহীনতায় ভোগে ৷ অনেক পরজীবী আছে যারা পাখি/মুরগির দেহে বাস করে রক্ত শুষে নেয়, ফলে আক্রান্ত পাখি/মুরগির দেহে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। যেকোনো পরজীবী দ্বারা পাখি/মুরগি আক্রান্ত হোক না কেন, এদের আক্রমণের ফলে আক্রান্ত পাখি/মুরগির দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে এবং ডিম উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। এছাড়াও এক ধরনের পরজীবী আছে যাবা আক্রান্ত পাখি/মুরগির দেহ থেকে সুস্থ পাখি/মুরগির দেহে সংক্রামক রোগের জীবাণু সংক্রমিত করে থাকে। কাজেই পোল্ট্রি শিল্প থেকে কাঙ্খিত উৎপাদন পেতে হলে পরজীবীজনিত রোগব্যাধি প্রতিরোধ অপরিহার্য ।

 

 

Content added By

৩.৪.২ দেহাভ্যন্তরের পরজীবী (Internal Parasite): 

পাখি/মুরগির দেহে দেহাভ্যন্তরের পরজীবী বা অন্তঃপরজীবীর আক্রমণ নির্ভর করে পাখি/মুরগির পালন পদ্ধতি, ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যবিধির ওপর। পাখি/মুরগির বাসস্থান যদি স্বাস্থ্যসম্মত হয় এবং পালন ব্যবস্থাপনা যদি বিজ্ঞানভিত্তিক হয়, তাহলে এ ধরনের পরজীবীর আক্রমণ বহুলাংশে কমে যায়। খাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন করলে সাধারনত পরজীবীর আক্রমণ খুব কম হয়। দেহাভ্যন্তরে পরজীবী আক্রমণের ফলে পাখি/মুরগির দেহে যেসব ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায় তা নিম্নরুপ :

  • কোষ বা কলার গঠন নষ্ট হয়ে যায়। 
  • পোষকের খাদ্য খেয়ে ফেলার কারণ পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। 
  • সংক্রামক রোগের জীবাণু ছড়ায় ।
  • খাদ্যনালি বন্ধ করে রাখে, ফলে আক্রান্ত পাখি মারা যায়। 
  • পরজীবী টক্সিন বা বিষ তৈরি করে যা পোষকের দেহের জন্য ক্ষতিকর। 
  • ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণ দেখা যায় ।

বিভিন্ন প্রজাতির দেহাভ্যন্তরের পরজীবী বা অন্ত পরজীবীঃ 

পরজীবী মুরগির দেহ আক্রান্ত করতে পারে। এগুলোর মধ্যে আমাদের দেশে মুরগির গোলকৃমি এবং ফিতাকৃমির আক্রমণ সবচেয়ে । বেশি।

 

 

Content added || updated By

৩.৪.২.১ বড় গোলকৃমি (Large Roundworm): 

Ascardia galli (অ্যাসক্যারিডিয়া গ্যালি) হচ্ছে মুরগির বড় গোলকৃমি যা ক্ষুদ্রান্ত্রে আক্রান্ত করে ।

জীবনচক্রঃ 

পরিপক্ক স্ত্রী গোলকৃমি পাখির ক্ষুদ্রান্ত্রে ডিম পাড়ে। কৃমির ডিম মুরগির মলের সাথে বের হয়ে আসে। বাইরের আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার ফলে ডিমের মধ্য লার্ভা জন্মায়। আস্তে আস্তে লার্ভা পরিপক্ক হয়। খাদ্য অথবা পানির সাথে পরিপক্ক লার্ভা মুরগির দেখে প্রবেশ করে । ২১ দিনের মধ্যে ক্ষুদ্রান্ত্রে পরিপক্ক কৃমিতে রূপান্তরিত হয়।

কৃমির বিস্তার 

একটি পরিপক্ক স্ত্রী কৃমি কয়েক হাজার ডিম দেয়। লার্ভা সম্বলিত ডিমই হচ্ছে মারাত্বক। পরিবেশের মধ্যে কৃমির ডিম কয়েক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মানুষের ব্যবহৃত জামা, জুতো, খামারের যন্ত্রপাতি ইত্যাদির মাধ্যমে এসব ডিম এক খামার থেকে অন্য খামারে ছড়াতে পারে। এরপর খাদ্য বা পানির মাধ্যমে এগুলো মুরগির দেহে সংক্রমিত হয়।

বড় গোলকৃমি আক্রান্তের লক্ষণ 

আক্রান্ত মুরগিতে নিম্নবর্ণিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। যেমন-

  • দৈহিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটা। 
  • খাদ্য কম খাওয়া । 
  • পালক উসকো খুশকো হয়ে যাওয়া।
  • পাতলা পায়খানা হওয়া । 
  • শরীর রুগ্ন হওয়া এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয় । 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া।

চিকিৎসা: 

পাইপারজিন গ্রুপের যে কোনো একটি কৃমিনাশক, যেমন- পাইপারজিন সাইট্রেট, পাইপারজিন অ্যাডিপেট বা পাইপারজিন ডাই-হাইড্রো-ক্লোরাইড খাদ্য বা পানির সাথে নির্দিষ্ট মাত্রায় মিশিয়ে খালি পেটে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। কৃমিনাশক হিসেবে লেভামিজল ব্যবহার করা যেতে পারে ।

প্রতিরোধ : 

নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চললে মুরগিতে লোগকৃমির আক্রমণ হবে না । যথা-

  • নির্দিষ্ট সময় পরপর নির্ধারিত মাত্রায় কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করাতে হবে । 
  • সব সময় মুরগিকে সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  • বাসস্থানের লিটার সব সময় শুষ্ক রাকতে হবে। 
  • বাচ্চা ও বাড়ন্ত মুরগির সাথে বয়ষ্ক মুরগি পালন করা যাবে না ।
  • ঘরে মুরগি পালনের পূর্বে জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে বাসস্থান ও আশেপাশের এলাকা ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
  • খাদ্য ও পানির সাথে যাতে মুরগির পায়খানা না লাগতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

 

Content added By

৩.৪.২.২ ছোট গোলকমি (Small Roundworm):

মুরগির ছোট গোলকৃমির না হচ্ছে হেটারেকিস গ্যালিনেরাম। এদেরকে সিকাল কৃমিও বলা হয়ে থাকে । এ ধরনের কৃমি সাধারনত মুরগির খাদ্যনালির সিকাম নামক অংশে বাস করে ।

জীবনচক্রঃ 

পায়খানার সাথে এ কৃমির ডিম বাইরে বের হয়ে আসে। বাইরের আবহাওয়ায় ডিম থেকে লার্ভা হয়। খাদ্য বা পানির সাথে মুরগির দেহে এ লার্ভা প্রবেশ করে । অতঃপর ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে মুরগির সিকামে এরা পরিণত কৃমিতে রূপান্তরিত হয় ।

কৃমির বিস্তার : 

মানুষের ব্যবহৃত জামাকাপড়, খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বন্য পশুপাখি প্রভৃতির মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে কৃমির ডিমের বিস্তার ঘটে। তাছাড়া খাদ্য ও পানির মাধ্যমেও এ কৃমির ডিম সুস্থ মুরগিতে প্রবেশ করে ।

 

ছোট গোলকৃমি আক্রান্তের লক্ষণ 

ছোট গোলকৃমি আক্রমণের ফলে মুরগির দেহে বে সব লক্ষণ দেখা যায় তা হলো-

  • বাদামি রঙের পাতলা পায়খানা হওয়া ।
  • ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া।
  • খাদ্য খাওয়া কমে যাওয়া।
  • ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়া।
  • পালক উসকো খুশকো হয়ে যাওয়া।

চিকিৎসা 

পাইসারজিন গ্রুপের যেকোনো একটি কৃমিনাশক খাদ্য বা পানিতে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

প্রতিরোধ 

এ কৃমি প্রতিরোধ ব্যবস্থা বন্ধ গোলকৃমি প্রতিরোধের মতোই।

 

 

 

Content added || updated By

৩.৪.২.৩ সুতাকৃমিঃ

মুরগির সুতাকৃমি হচ্ছে ক্যাপিলারিয়া গণের অন্তর্ভূক্ত বেশ কয়েক প্রজাতির গোলকৃমি। এদেরকে চুলকৃমি বলা হয়। ক্যাপিলারিয়া অ্যানুস্যাটা মুরগির খাচ্চनাগি বা ইসোফেগাস ान বা न এবং ক্যাপিলারিয়া জ্বৰ সিগন্যাটা ক্ষুদ্ৰায়ে বসবাস করে । উভয় ধরণের কৃমির ডিমই মুরগির পায়খানার সাথে ৰেৱ হয়ে আসে। ডিমের মধ্যে লার্ভা জন্মায়। এর লার্ভা সম্বলিত ভিম কেঁচো খেয়ে ফেলে। কেঁচোর দেহের ভিতরে লার্ভা বৃদ্ধি লাভ করে। মুরগি যখন কেঁচো খায়, তখন কৃমির এ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত লার্ভা কেঁচোর দেছ থেকে মুরগির দেহে চলে আসে এবং পরিণত কৃমিতে স্বগাথারিক হয়।

কৃমির বিস্তার 

মানুষের ব্যবহৃত জামাকাপড়, খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বন্য পশুপাখি প্রভৃতির মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কৃমির ডিমের বিস্তার ঘটে। খাদ্য অথবা পানির মাধ্যমেও সংক্রমিত হয় ।

লক্ষণ

আক্রান্ত পাখির দেহে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়। যথা-

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না। 
  • দৈহিক ওজন একেবারে কমে যায়।
  • পালক উসকো খুশকো দেখায় । 
  • পাতলা পায়খানা হয়। 
  • রক্তশূন্যতা দেখা দেয় । 
  • অবশেষে পাখি মারা যায়।

চিকিৎসা 

নিম্নলিখিতভাবে আক্রান্ত পাখির চিকিৎসা করা যায়। যথা-

  • পানির সাথে নির্দিষ্ট মাত্রায় লেভামিজল মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায় । 
  • পাইপারজিন গ্রুপের কৃমিনাশকও প্রয়োগ করা যেতে পারে।

প্রতিরোধ 

সুতাকৃমির প্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্যান্য গোলকৃমির প্রতিরোধ ব্যবস্থার মতোই।

 

 

 

Content added By

৩.৪.২.৪ ফিতাকৃমি (Tape Worm)

মুরগির মলের সাথে পরিণত বয়সের কৃমির অংশ বা সেগমেন্ট বের হয়ে আসে। কৃমির সেগমেন্টের মধ্যে ডিম থাকে। বিভিন্ন পোকামাকড়, যেমন শামুক, পিঁপড়া, মাছি ইত্যাদি কৃমির ডিম খেয়ে ফেলে। এদের দেহে ডিম থেকে কৃমির লার্ভা জন্মায়। মুরগি কৃমি আক্রান্ত শামুক, পিঁপড়া, মাছি ইত্যাদি খেয়ে ফেললে কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়।

ফিতা কৃমির বিস্তার : 

বিভিন্ন ধরনের পোকা মাকড়ের মাধ্যমে এদের বিস্তার ঘটে।

লক্ষণ

 এ ধরনের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে পাখির দেহে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো-

  • দৈহিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটা। 
  • খাদ্য গ্রহণে অনীহা । 
  • পালক উসকো খুশকো হয়ে যাওয়া । 
  • পাতলা পায়খানা হওয়া । 
  • রক্তশূন্যতা দেখা দেয়া ।

চিকিৎসা 

নির্দিষ্ট মাত্রায় ডাইবিউটাইল-টিন-ডাইলাইউরেট পানি অথবা খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে মুরগির দেহ থেকে ফিতাকৃমি সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যায়।

প্রতিরোধ 

নিম্নলিখিতভাবে ফিতাকৃমির আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। যথা-

  • মুরগির বাসস্থানে সঠিক স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বাসস্থানের আশেপাশে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে পোকামাকড় ধ্বংস করে ফেলতে হবে। 
  • মাঝে মধ্যে চিকিৎসার অর্ধেক মাত্রায় কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।

 

 

Content added By

৩.৪.৩ দেহের বহি:পরজীবী (External Parasite)

যেসব পরজীবী মুরগির দেহের বাইরের অংশ আক্রান্ত করে তাদেরকে বহিঃপরজীবী বা বহিঃদেহের পরজীবী বলে । যেমন-উকুন,আঠালি,মাইট এবং ফ্লি ইত্যাদি। এরা বেশির ক্ষেত্রেই মুরগির চামড়া এবং পালকের মধ্যে বসবাস করে । এ ধরনের পরজীবী পাখির দেহে কামড় দেয়,রক্ত শুষে নেয় এবং অনেক সময় ক্ষতের সৃষ্টি করে । আমাদের দেশের গরম আবহাওয়া এদের আক্রমণের অনুকূলে। যেকোনো মুরগি পালনে এলাকায় এদের আক্রমণ দেখা যায়। খাঁচা বা লিটার যে পদ্ধতিতেই পালন করা হোক না কেন, এদের আক্রমণ সব জায়গায়ই বিরাজমান ।

 

 

Content added || updated By

৩.৪.৩.১ উকুন (Lice)

এরা মুরগির বুক, পেট ও পাখার নিচের পালক ও ত্বকের সাথে শক্তভাবে লেগে থাকে। কামড়ানি ও শোষক এ দু'ধরণের উকুনের মধ্যে কামড়ানি উকুন মুরগিকে আক্রান্ত করে । উকুন তালের সম্পূর্ণ জীবনচক্র মুরগির মধ্যেই সম্পন্ন করে । পাখির দেহ ছাড়া এরা ছয় ঘন্টার বেশি বাঁচতে পারে না। এরা মুরগির পালকের মধ্যে ডিম দেয়। দু'সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে উকুনের বাচ্চা হয় এবং পরবর্তীতে পরিপূর্ণ উকুনে পরিণত হয়।

উকুনের আক্রমণের মুরগির দেহে যেসব লক্ষণঃ 

ক) উকুন চামড়ার উপরের অংশে কামড় দেয়, তাই মুরগি ঠোট দিয়ে শরীরের মধ্যে চুলকায়। 

খ) মুরগির মধ্যে অস্থিরতা প্রকাশ পায়। 

গ) চামড়া নষ্ট হয়ে যায় 

ঘ) মুরগি পালক খেয়ে ফেলে। 

ঙ) ডিম উৎপাদন কমে যায়।

প্রতিরোধ ও দমন 

নিম্নলিখিতভাবে পাখিতে উকুনের আক্রমণ প্রতিরোধ ও দমন করা যায়। যথা-

ক) মুরগির ঘরে যাতে বন্য পাখি ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

খ) মুরগির দেহে উকুন দেহে উকুন আছে কিনা তা প্রতিদিন যাচাই করতে হবে। 

গ) সুস্থ মুরগির ঘরে উকুন আক্রান্ত মুরগি ঢুকতে দেয়া যাবে না। 

ঘ) একই ব্যক্তিকে সুস্থ ও আক্রান্ত মুরগির ঘরে কাজ করতে দেয়া যাবে না। 

ঙ) যে এলাকাতে প্রতিবছর উকুনের আক্রমণ দেখা দেয়, সে এলাকার মুরগির ঘরে মাঝে মধ্যে উকুননাশক স্পে করতে হবে।

চিকিৎসা: 

ম্যালাথিয়ন, কার্বারাইল, ফেনক্লোরোফস নামক কীটনাশক নির্দিষ্ট মাত্রায় পানিতে বা বালিতে মিশিয়ে গোসল বা ধূলিয়ান করতে দিতে হবে।

 

 

Content added By

৩.৪.৩.২ আঠালি 

আঠালি মুরগির দেহ থেকে রক্ত শোষণ করে। রক্ত শোষণের পর দেহ থেকে নিচে নেমে আসে। যৌন মিলনের পর মারা যায়। স্ত্রী আঠালি মুরগির ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ডিম দেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের করে। লার্ভা থেকে লিম্ফ এবং লিম্ফ থেকে পূর্ণাঙ্গ আঠালিতে পরিনত হয়। রাতের বেলায় মুরগির দেহ থেকে রক্ত শোষণ করে। 

আঠালি আক্রমনে মুরগির দেহে যেসব লক্ষণ

১) আঠালি কর্তৃক মুরগির রক্ত শুষে খাওয়ায় মুরগির রক্তশুন্যতা দেখা দেয়।

২) মুরগির মধ্যে অস্থিরতা প্রকাশ পায়।

 

 

 

Content added By

৩.৫ খামারের জৈব নিরাপত্তা (Farm blosecurity) 

জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য :

  • বহিরাগত রোগজীবাণুর যেমন: রাণীক্ষেত রোগ, বার্ড ফ্লু জাতীয় রোগের কবল থেকে খামার রক্ষা করা।
  • মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগ ও জীবাণু যেমন- সালমোনেলা থেকে খামারকে রক্ষা করা । 
  • খামারের সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান ।
  • রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় কমানো, লাভজনক উপায়ে খামার গড়ে তোলা, জনস্বাস্থ্যের প্রতি ঝুঁকি কমানো ।

 

নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখলে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে মেনে চলা যাবে (Biosecurity measures can be strictly adhered to by paying attention to the following issues) 

১. খামারের স্থান নির্বাচন:

  • পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বি করে ঘর তৈরি করতে হবে। 
  • চারিদিকে খোলা মেলা, প্রচুর আলো-বাতাস চলাচলের সক্ষম এমন স্থান বেছে নিতে হবে।
  • লোকালয় থেকে দূরে, কিন্তু খামারের পণ্য বিপণনের ভালো যোগাযোগ সুবিধা সম্পন্ন ও শহর থেকে অনতি দূরে খামারের স্থান নির্বাচন করতে হবে ।
  • খামারে পর্যাপ্ত পানি ও বিদ্যুতের সুবিধা থাকতে হবে। 
  • অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে খামার স্থাপন করতে হবে।

২. রোগ জীবাণুর উৎস ও প্রতিরোধের উপায় নির্বাচন:

  • বাহক পাখি/মুরগি, বাইরে থেকে আমদানিকৃত জীবাণুবাহী ডিম ও ১ দিন বয়সের বাচ্চা, আক্রান্ত ডিম ও পাখি/মুরগি, মানুষের হাত পা ও পোশাকাদি, ধুলবালি, পালক, বিষ্ঠা, ও জৈব বর্জ্য, বন্যপাখি, শিকারি জীবজন্তু, ইঁদুর ইত্যাদি।
  • দূষিত পানি, খাদ্য, বাতাস ইত্যাদি । 
  • রোগ জীবাণু যুক্ত যন্ত্রপাতি যথা-ট্রাক, খাঁচা, ডিমের পাত্র ইত্যাদি।

 

রোগ বিস্তার প্রতিরোধের উপায়: 

(ক) যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ-

  • যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের জন্য খামারের প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখতে হবে। 
  • সব ধরণের দর্শনার্থী প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • খামারের কর্মীদের খামারে ব্যবহৃত জুতা ও পোশাকাদি আলাদা রাখতে হবে এবং খামারের বাইরে বের করা যাবে না । 
  • খামারে প্রবেশের পূর্বে ও পরে হাত পা জীবাণুনাশক দিয়ে ধুতে হবে ও শরীরের বহিরাংশে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।
  • খামারের বন্য প্রাণি, পোষাপাখি ও অন্যান্য জীবজন্তু প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 
  • এক খামারে একই বয়সের মুরগি পালন করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে একটি ঘরে একই বয়সের মুরগি রাখতে হবে।

(খ) খামারে অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ:

  • দর্শনার্থীদের জন্য একটি তথ্য বই সংরক্ষণ করতে হবে। খামার পরিদর্শনকারীর নাম-পরিচয়, সাক্ষাৎকারের তারিখ-সময় ইত্যাদি তথ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ করে খামারের নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • খামারকর্মী ও খামার পরিদর্শনকারী বহিরাগত উভয়কেই কাজ করার সময় বা খামার পরিদর্শনের সময় জীবাণুমুক্ত জুতা ও পোশাকাদি পরিধান করতে হবে। খামার পরিদর্শন ও কাজের শেষে পুনরায় এদের জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক।
  • উপকরণ সরবরাহকারী বাস/ট্রাক ড্রাইভার ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদেরও উপরোক্ত উপায়ে যথাসম্ভব জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে। 
  • বন্যপাখি নিয়ন্ত্রণের জন্য খামার ঘরের চারদিকে আলো বিকিরণকারী অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল বেঁধে দিতে হবে।

গ) চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর তৎপরতা:

  • পোল্ট্রি খামারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা অথবা চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মীকে জৈব-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে।
  • প্রতিটি আলাদা শেডে ঢুকার পূর্বে ও পরে জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে হাত-পা ধৌত করতে হবে। সম্ভব হলে আলাদা অ্যাপ্রন, হাত পায়ের মোজা ও মাথার আবরণী ব্যবহার করতে হবে।
  • খামারে নিয়োজিক কর্মীবৃন্দ খামারে প্রবেশকারী যানবাহন, তাদের চালক ও সংশ্লিষ্ট সহায়ক কর্মীবৃন্দের যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন।
  • ময়না তদন্ত করার জন্য বাতাসের অনুকুলে এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেখান থেকে বাতাসের মাধ্যমে খামারে জীবাণু প্রবেশের কোনে সম্ভাবনা নেই। ময়না তদন্ত শেষে স্থানটি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে ।

৩. নিয়মিত টিকা প্রয়োগ: 

খামারে মোরগ-মুরগিকে টিকা প্রয়োগের রোগ-মুক্ত রাখা একটি আধুনিক, জটিল ও অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। আধুনিক কালে পোল্ট্রি শিল্পের সাফল্য সময়মত ও সফলভাবে টিকা প্রয়োগ ছাড়া সম্ভব নয় । তাই টিকা প্রয়োগ কালে সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করা বাঞ্ছনীয় ।

টিকা প্রদানের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-

  • হ্যাচারির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীকে ১ দিন বয়সী বাচ্চার প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে খামারিদের ধারণা দিতে হবে। মায়ের বা বাচ্চার শরীরের এন্টিবডি টাইটার লেভেল নির্ণয় করে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বাচ্চার টিকা প্রদান কর্মসূচি নির্ণয় করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হ্যাচারির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।
  • সঠিকভাবে উৎপন্ন, সংরক্ষিত, পরিবাহিত টিকা প্রদান করতে হবে।
  • আমাদের দেশের স্থানীয় পর্যায়ে আক্রমণকারী জীবাণুর স্ট্রেইন সম্বন্ধে ভালোভাবে ধারণা নিয়ে সেই অনুযায়ী টিকা প্রদান করতে হবে। অপরিচিত স্ট্রেইন দ্বারা প্রস্তুত টিকা প্রদান করলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণিভেদে টিকা প্রদানের সঠিক মাধ্যম অনুসারে টিকা প্রদান করতে হবে। যেমন- জীবন্ত টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে খাবার পানি, স্প্রে বা চোখে ফোঁটা প্রদানের মাধ্যমে ও মৃত জীবাণু দ্বারা প্রস্তুতকৃত টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে ।
  • অসুস্থ মুরগিকে টিকা প্রয়োগ না করাই ভালো । 
  • টিকা প্রদানের পূর্বে ভিটামিন এ, ডি ও ই ব্যবহার করা ভালো । 
  • টিকা প্রদানের পর ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম ব্যবহার করা ভালো ।

৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা :

  • প্রতি সপ্তাহে মুরগির খাদ্য ও পানি গ্রহণের পরিমাণ, ওজন ইত্যাদি পরিমাপ করতে হবে ও প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য বা পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে হবে ।
  • সঠিকভাবে আলো প্রদান করতে হবে ।
  • কোনোরূপ রোগ লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথেই নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাঃ

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা লাভজনক খামারের পূর্বশর্ত। তাই খামারের ভেতরের ও বাইরের চারিদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। মেঝে বা লিটার পদ্ধতির ঘরের ক্ষেত্রে প্রতি ব্যাচে নতুন লিটার দেয়া ও ঘর সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা উচিত। খামারের সকল যন্ত্রপাতি, যেমন- মুরগির খাঁচা, ডিম রাখার পাত্র, খাবার ও পানি পাত্র ইত্যাদি নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

বছরে অন্তত: একবার শেডসহ সকল যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুতে হবে অথবা ফিউমিগেশন করে পরিষ্কার করতে হবে। খামার পরিষ্কার রাখার জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে-

  • খামারে ব্যবহৃত পুরোনো লিটার যথাসম্ভব নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে হবে। অপসারণ কালে ব্যবহৃত লিটার দ্বারা কোনোভাবেই যেন খামারের পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। 
  • সমস্ত ঘর ঝাড় দিতে হবে। খামারের প্রতিটি অংশ, যেমন- মেঝে, বৈদ্যুতিক পাখা, বাল্ব সহ অন্যান্য সরঞ্জাম, দরজা জানালার মাঝে থাকা ধুলাবালি, মাকড়সার জাল প্রভৃতি পরিষ্কার করতে হবে। নষ্ট বাল্বের জায়গায় নতুন বাল্ব লাগাতে হবে।
  • শেডের ভিতরে জীবাণুনাশক স্প্রে করলে ঘরের পিছন দিকে স্প্রে করা শুরু করে সামনের দিকে এসে শেষ করা উচিত। ঘরের ভেতরে প্রথমে ছাদ, পরে দেয়াল এবং সবশেষে মেঝেতে স্প্রে প্রয়োগ করার নিয়ম ।
  • শুকনো মেঝেতে অন্তত চার ইঞ্চি পুরু, শুষ্ক, শোষণক্ষম লিটার ছড়িয়ে দিতে হবে। লিটার হিসাবে ধানের তুষ সর্বোত্তম ।
  • লিটারে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হলে কীটনাশক নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় প্রয়োগ করা যায়। কীটনাশক ও জীবাণুনাশক একত্রে ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে কীটনাশক দেয়ালে স্প্রে করা যেতে পারে।
  • ঘরের চারপাশে পর্দা হিসাবে পলিথিন বা নাইলনের বস্তা ব্যবহার না করে চটের বস্তা ব্যবহার করা উচিত। খাঁচা পদ্ধতির ঘরের ক্ষেত্রে প্রতি ব্যাচ বাড়ন্ত মুরগি পালন শেষে সমস্ত ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা অতীব জরুরি। লেয়ারের ক্ষেত্রে প্রতিটি ফ্লক উঠানোর পূর্বে সমস্ত ঘর ও যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।

 

৬. স্বাস্থ্য সম্মত ও আদর্শ খাদ্য প্রদান: 

বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যেমন-সালমোনেলোসিস ও ছত্রাকজনিত যেমন-এসপারজিলোসিস, আফলা টক্সিকোসিস রোগের জীবাণু খামারের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। সত্যিকারের ভালো খাবার বলতে জীবাণুমুক্ত ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্যকে বুঝায় । 

৭. মুরগির ঘরের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনাঃ 

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংসকারী জীবাণুনাশক অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রাতেই বেশি কার্যকর। বাতাসের তাপমাত্রা ৭০° ফা. এর উপরে এবং আর্দ্রতা ৭৫% এর উপরে থাকলে ফরমালডিহাইড গ্যাস সবচেয়ে কার্যকর। 

ক) ক্লোরক্স (সোডিয়াম হাইপো ক্লোরাইড দ্রবণ): ১ কন্টেইনার ক্লোরক্স দিয়ে ৮০ লিটার জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরি করা যায়। বাঁশের তৈরি মুরগির ঘরের মেঝে, চালা ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ক্লোরক্স খুবই কার্যকরী। 

খ) ভায়োডিন (আয়োডিন দ্রবণ): ১ বোতল ভায়োডিন ১০% সলিউশন দিয়ে ৫ লিটার জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরি করা যায়। গামবোরো ভাইরাস মারা, হাত পা জীবাণুমুক্ত এবং মুরগির জন্য আয়োজিন যৌগ ক্লোরক্স হতে উত্তম ।

গ) চুন দিয়ে মাঁচার নিচের মাটি জীবাণুমুক্ত করা খুবই জরুরি। ১০০-২০০ মুরগি পালন উপযোগী একটি ঘরের মাঁচার নিচের মাটি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ২০ কেজি পাউডার চুন ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশাতে হবে ।

 

৮. বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং পানির পাত্রের সঠিক ব্যবস্থাপনাঃ 

১) পান করার জন্য মুরগির খামারে টিউবওয়েলের পানি অথবা বাতাস দূষিত নয় এমন এলাকার সঠিক উপায়ে রাখা বৃষ্টির পানি অথবা পৌর কর্তৃপক্ষ সরবরাহকৃত পানি অথবা ছাঁকা অথবা ১০০ লিটার পানির সাথে অন্তত: ৩০০ মি. গ্রা. ক্লোরিন পাউডার মিশ্রিত করে ৩-৬ ঘণ্টা সংরক্ষণ করার পর সেই পানি সরবরাহ করা উচিত । 

২) শেডে মুরগি থাকা অবস্থায় সপ্তাহে একবার বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাই কার্ব) প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে ড্রিংকার, বাল্ব ও পাইপ লাইনে আঠালো বস্তু জমতে পারবে না। পানির সাথে অ্যান্টিবায়োটিক বা ভিটামিন দেয়ার ঠিক পূর্বেই বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি পরিচালনা করতে হবে। প্রতি গ্যালন মজুদ দ্রবণের সাথে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা দিতে হবে। 

৩) লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পালনে পানি সরবরাহের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

 

৯. নতুন ব্যাচের ব্যবস্থাপনাঃ 

পুনরায় মুরগি বা বাচ্চা তোলার পূর্বে ঘর এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী হয়েছে কিনা যাচাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন-

১) সমস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ/সরবরাহ লাইন পরীক্ষা করতে হবে। মেরামতের প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ভাবে করতে হবে। 

২) মুরগির খাঁচা, খাদ্য পাত্র, পানির পাত্র, মেঝে, দেয়াল ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য উচ্চ চাপযুক্ত পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। 

৩) পানির পাত্র ও সরবরাহ লাইন প্রয়োজন মেরামত করতে হবে । 

৪) থার্মোমিটার, থার্মোস্ট্যাট, গ্যাস ব্রুডার, স্টোভ ইত্যাদি ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। 

৫) আগের ব্যাচের মুরগির বিষ্ঠা পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে অথবা কম্পোস্ট বা জৈব সার তৈরির কাজে লাগাতে হবে । 

৬) মুরগির খাঁচা, খাদ্যপাত্র, পানির পাত্র, মেঝে, দেয়াল ইত্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। 

৭) টিন, লোহা বা তামার তৈরি দ্রব্যসমূহ জীবাণুনাশক দেয়ার কয়েক ঘন্টা পর ধৌত করে ফেলতে হবে। 

৮) দ্রব্যসমূহ ভালোভাবে শুকানোর পর নতুন বাচ্চা তুলতে হবে।

 

 

 

Content added By

জব ০৫ঃ লেয়ার খামারে টিকাদান পদ্ধতি

পারদর্শিতার মানদণ্ডঃ

  • টিকাদান সূচি সংগ্রহ করা 
  • প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাচামালের তালিকা তৈরি করা 
  • তালিকা মোতাবেক যন্ত্রপাতি ও মালামাল সংগ্রহ করা
  • টিকাদানের জন্য প্রস্ততিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা 
  • টিকা প্রদান সম্পন্ন করা 
  • টিকাদান পরবর্তী ধকল প্রশমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE)

 

(খ) প্রয়োজনীয় মালামাল ( Raw Materials)

 

(গ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুইপমেন্ট ও মেশিন)

 

(ঘ) কাজের ধারাঃ

১. প্রথমে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামসমূহ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল স্টোর হতে সংগ্রহ করো। 

২. তালিকা অনুসারে সুরক্ষা সরঞ্জামাদি যথানিয়মে পরিধান করো। 

৩. টিকা প্রদানের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে নাও । 

৪. বিশ্বস্ত উৎস হতে টিকাবীজ সংগ্রহ করি। 

৫. সূচি মোতাবেক সুস্থ বাচ্চার শেষে যাও। 

৬. টিকা প্রদানের সময় হলে দিনের ঠান্ডা অংশে (সকাল বা সন্ধ্যা) হারাযুক্ত স্থানে টিকাবীজ প্রস্তুতকারীর নির্দেশ মোতাবেক ডায়লুয়েন্ট বা পাতিত পানির সাথে মিশ্রিত করো। 

৭. এরপর বাচ্চা/মুরগিকে সঠিক ভাবে ধরে আরতে আন ও নিম্নলিখিত ভাবে টিকা প্রদান করো।

 

৭. বিসিআরডিভি টিকা প্রদান

 

৭.২ আরডিভি টিকা প্রদান

 

৭.৩ গামবোরো রোগের টিকা প্রদান:

 

৭.৪ ফাউল পক্স রোগের টিকা প্রদান:

 

৭.৫ ফাউল কলেরা রোগের টিকা প্রদান

৮. টিকাদানকৃত বাচ্চাকে পৃথক রাখ। 

৯. পরমকালে ১ঘন্টা ও শীতকালে ২ঘন্টার মধ্যে টিকাদান শেষ করো। 

১০. অবশিষ্ট টিকা ও তায়াল মাটিতে পুতে ফেল।

১১. পুনর্ব্যবহারযোগ্য বস্ত্রপাতি জীবাণুযুক্ত করে সংরক্ষণ করো।

 

সতর্কতাঃ

  • নির্দিষ্ট মাত্র বেশি/কম কোনো টিকা প্রদান করা যাবে না। 
  • দিনের ঠান্ডা অংশে এবং বড় খামারের ক্ষেত্রে রাতে টিকাদান সম্পন্ন করতে হবে। 
  • অবশিষ্ট টিকা ও অয়াল মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

ব্যবহারিক শেষে কাজ

  • ভাইরাল টিকা কত তাপমাত্রায় সংরক্ষন করবে তার একটি তালিকা তৈরী করা। 
  • টিকা প্রদানের পূর্বে বিবেচ্য বিষয়গুলোর তালিকা তৈরী করা

 

 

 

Content added By
Please, contribute to add content into প্রশ্নমালা (নমুনা প্রশ্ন).
Content

১. ভাইরাস জনিত দুটি রোগের নাম লিখ । 

২. সংক্রামক রোগ কী? 

৩. রাণীক্ষেত রোগের কারণ কী? 

৪. গামবোরো রোগের কারণ কী? 

৫. এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের কারণ কী? 

৬. সোলেন হেড ডিজিজ কাকে বলে? 

৭. স্টার গেজিং কাকে বলে । 

৮. কার্ল-টো-প্যারালাইসিস কাকে বলে? 

৯. বুস্টার ডোজ কাকে বলে?

 

 

 

Content added By

১. রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ লেখ । 

২. গামবোরো রোগের লক্ষণ লেখ । 

৩. ওফ্যালাইটিস রোগের লক্ষণ লেখ । 

৪. কলেরা রোগের লক্ষণ লেখ। 

৫. মাইকোপ্লাজমা রোগ প্রতিরোধ কীভাবে করা যায়? 

৬. আফলা টক্সিকোসিস রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি লেখ । 

৭. রক্ত আমাশয় রোগ প্রতিরোধের উপায় লেখ ৷ 

৮. এ্যাসাইটিস রোগের লক্ষণ লেখ। 

৯. ভিটামিন সি এর অভাব জনিত লক্ষণ লেখ । 

১০. গোলকৃমি সংক্রমণ, লক্ষণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি লেখ ।

 

 

 

Content added By

১. রাণীক্ষেত রোগের কারণ, সংক্রমণ পদ্ধতি, লক্ষণ, রোগপ্রতিরোধ ও চিকিৎসা বর্ণনা করো । 

২. গামবোরো রোগের কারণ, সংক্রমণ পদ্ধতি, লক্ষণ, রোগপ্রতিরোধ ও চিকিৎসা বর্ণনা করো । 

৩. ইনফেকশাস করাইজা রোগের কারণ, সংক্রমণ পদ্ধতি, লক্ষণ, রোগপ্রতিরোধ ও চিকিৎসা বর্ণনা করো । 

৪. এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের কারণ, সংক্রমণ পদ্ধতি, লক্ষণ, রোগপ্রতিরোধ ও চিকিৎসা বর্ণনা করো। 

৫. লেয়ারের টিকাদান কর্মসূচি উল্লেখ কর । 

৬. জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি এমন রোগ প্রতিরোধে গৃহীত প্রয়োজনীয় জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।

 

 

 

Content added By

Promotion