এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মতো হাঁসেরও খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। জীবন ধারনের জন্য খাদ্য অপরিহার্য। শরীরের প্রয়োজনীয় তাপ শক্তি উৎপাদন, ক্ষরপুরণ, বৃদ্ধি সাধন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বা হাঁসকে খাওয়ানো হয় তাই খাদ্য। হাঁসকে যে সব খাবার খেতে দেয়া হয় সেগুলো পরিবর্তিত হয়ে ডিম ও মাংস তৈরি হয়। সুতরাং অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে হাঁসকে সুষম খাদ্য খেতে দিতে হয়। আধুনিক বাণিজ্যিক হাঁসের খামারের মোট খরচের পর ৭০% খাদ্য খরচ হয়। তাই একজন হাঁসের খামারের মালিক তিনি যত ছোট বা বড় খামারই পরিচালনা করুন না কেন হাঁসের খাদ্য সম্পর্কে তার একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক।

এই অধ্যায় শেষে আমরা-

  • হাঁসের খাদ্য উপকরণসমূহ সনাক্ত করতে পারব; 
  • বাড়না হাঁসের জন্য সুষম খাদ্য প্রস্তুত করতে পারব; 
  • ডিম পাড়া হাঁসের জন্য সুষম খাদ্য প্রস্তুত করতে পারব;
  • মাংসজাত হাঁসের জন্য সুষম খাদ্য প্রত করতে পারব ; 
  • হাঁসের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারব।

 

 

Content added By

২.১ হাঁসকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্য-

  • হাঁস পালন করে অধিক ডিম ও মাংস পেতে হলে হাঁসকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। 
  • হাঁসের খামার পরিচালনা করে আত্মকর্মসংস্থান করা যায় ।
  • জাতিকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হলে মাংস ও ডিম উৎপাদন করা প্রয়োজন। পুষ্টিকর খাদ্যই মানুষকে কর্মঠ করতে পারে। আর কর্মঠ মানুষই নিজের ভাগ্য ও জাতীয় উন্নয়ন আনয়ন করতে পারে।
  • হাঁস মানুষের পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারে যদি মানুষ হাঁসকে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে পারে ।
  • উভয় প্রাণিই পুষ্টিকর খাদ্য চায়, তবে পার্থক্য হচ্ছে মানুষ যা খেতে পারে না তা হাঁস খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং মানুষের জন্য উৎকৃষ্ট আমিষ উৎপাদন করে।

 

 

Content added By

২.২ সুষম খাদ্য 

যে সব খাদ্য মিশ্রণে হাঁসের দৈহিক প্রয়োজন মিটানো ও উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ ও সঠিক অনুপাতে সব পুষ্টি উপাদান থাকে সেই খাদ্য মিশ্রণকে সুষম খাদ্য বলা হয় ।

সুষম খাদ্যের সুফল-

  • পরিমানমত খাদ্য গ্রহণ করে । 
  • শারীরিক বৃদ্ধি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হয়ে থাকে । 
  • মাংস বৃদ্ধি ঘটে 
  • ডিম পাড়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। 
  • ডিমের আকার বড় হয় । 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।

সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য-

  • একটি হাঁসের বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি থাকতে হবে। 
  • সুষম খাদ্যে সাধারণত গড়ে ৫০-৬০% শর্করা, ২০% আমিষ এবং ১৫-২৬% চর্বি থাকতে হবে। 
  • পৌষ্টিক নালীর পেরিস্টলিক ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও ছোবড়া ভুষি অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
  • সুষম খাদ্যে অবশ্যই খনিজ পদার্থ যেমন; ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম থাকতে হবে ।
  • সুষম খাদ্যে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। 
  • সুষম খাদ্য অবশ্যই সহজপ্রাচ্য হতে হবে।
  • সুষম খাদ্য উপাদান সহজলভ্য ও আনুপাতিক হারে সন্তা হতে হবে।

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • খাদ্য কাকে বলে? 
  • হাঁসকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্য লেখ। 
  • সুষম খাদ্যের সুফল লেখ। 
  • সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য লেখ।

 

 

Content added By

২.৩ খাদ্য উপাদানের কার্যাবলি

অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান ৬ (ছয়) টি যথা : 

১) শর্করা বা শ্বেতসার 

২) আমিষ বা প্রোটিন 

৩) স্নেহ বা চৰ্বি 

৪) খাদ্যপ্ৰাণ বা ভিটামিন 

৫) খনিজ পদার্থ ও 

৬) পানি ৷

 

শর্করা জাতীয় খাদ্য উপকরণের কাজ-

  • হাঁসকে যে সকল খাদ্য খেতে দেওয়া হয় তার প্রায় ৫০-৬০ ভাগই শর্করা। এটা দেহের সর্বাধিক শক্তির চাহিদা পূরণে সক্ষম।
  • শর্করা জাতীয় খাদ্য অন্ত্রের বিচলনের মাধ্যমে কোষ্ঠ কাঠিন্য দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। 
  • শর্করা জাতীয় খাদ্য জারিত হয়ে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে যা সজীব বস্তুর জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদনে প্রয়োজন ।
  • যকৃত ও পেশীতে শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় ।

চর্বি বা তেল জাতীয় খাদ্য উপকরণের কাজ-

  • হাঁসকে যে খাদ্য সরবরাহ করা হয় তাতে ১৫-২৫ ভাগই চর্বি বা তৈল জাতীয় পদার্থ । 
  • তৈল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য উপাদানের সাথে ভিটামিন এবং অপরিহার্য তৈল/চর্বি জাতীয় পদার্থ গৃহীত হয়ে শরীর বৃদ্ধির কাজে অংশ নেয়। 
  • এ সব উপাদানে এ, ডি, ই, কে (Vitamin - A, D, E, K) জাতীয় ভিটামিন দ্রবীভূত থাকতে পারে। 
  • হাঁসের বিভিন্ন অংগে বিশেষত চামড়ার নিচে চর্বি জাতীয় খাদ্য সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনে খাদ্যের অভাব পূরণ এবং দেহের ক্ষয় নিবারণ করে । 
  • দেহের কর্মশক্তি ও উত্তাপশক্তি বৃদ্ধি করাই চর্বির প্রধান কাজ ।

 

আমিষ জাতীয় খাদ্য উপকরণের কাজ- 

হাঁসের খাদ্যের শতকরা ১৮-২২ ভাগ আমিষ ।

  • আমিষ বা প্রোটিন প্রোটোপ্লাজমের অন্যতম উপাদান । 
  • দেহের ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করা আমিষের প্রধান কাজ । 
  • আমিষ ডিম ও মাংস উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখে । 
  • পেপসিন, ট্রিপসিন প্রভৃতি জারক রস নিঃসরণের জন্য আমিষ অপরিহার্য।
  • আমিষ অপরিহার্য এমাইনো এসিডের চাহিদা পূরণ করে । 
  • রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে । 
  • নিউক্লিও প্রোটিনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে ।

খাদ্যপ্রাণ/ভিটামিন জাতীয় খাদ্য উপকরণের কাজ- 

ভিটামিন এমন এক বিশেষ ধরনের জৈব যৌগ যা প্রাণীদেহে খুবই অল্প পরিমানে প্রয়োজন কিন্তু এর অভাবে দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। এরা বিপাকীয় কার্যাবলীতে জৈব প্রভাবক এর ভূমিকা পালন করে ।

হাঁসের দেহের প্রয়োজনীয় কয়েকটি খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিনের নাম, উৎস ও প্রয়োজনীয় কার্যাবলী দেওয়া হলো-

 

মিনারেল/খনিজ জাতীয় খাদ উপকরণের কাজ -

  • প্রাণিদেহের রক্ত ও অন্যান্য তরল পদার্থের গঠনগত ধর্ম বজায় রাখে । 
  • প্রাণিদেহের অস্থি গঠনে সহায়তা করে।
  • পালক, নখ তৈরিতে সহায়তা করে। 
  • ইনসুলিন নামক প্রাণরস গঠন করতে প্রয়োজন হয় । 
  • ইহা হাড় গঠনে সহায়তা করে ।

পানির কাজ- 

কোন জীবই পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই পানির অপর নাম জীবন। জীবকোষের প্রোটোপ্লাজমে ৬৫- ৯৫% পানি থাকে। হাঁসের খামারে সরবরাহকৃত পানির গুণগতমান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরবরাহকৃত পানি স্বাভাবিক তাপের ও স্বাদের, পরিষ্কার ও রোগ জীবাণুমুক্ত হতে হবে যাকে বিশুদ্ধ পানি বলে। পানির pH ৫-৭ এর মধ্যে থাকা বাঞ্চনীয়।

  • পানি পিপাসা নিবারণ করে । 
  • দেহকে সতেজ রাখে। 
  • দেহের তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • বিভিন্ন খাদ্যবস্তু হজম ও শোষণে সাহায্য করে। 
  • দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • দেহের তরল পদার্থের pH এর মান নিয়ন্ত্রণ করে ।
  • খাদ্যবস্তু থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিকণা দেহের কোষে পৌঁছাতে সাহায্য করে । 
  • জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে । 
  • পানি উত্তম দ্রাবক হিসেবে কাজ করে।

হাঁসের পানি গ্রহণের পরিমাণ প্রভাবিত করার বিষয়সমূহ 

একটি হাঁস যে পরিমাণ খাবার গ্রহণ করে স্বাভাবিক নিয়মে এর দ্বিগুণ পানি গ্রহণ করে থাকে। যে সমস্ত বিষয় হাঁসের পানি গ্রহণকে প্রভাবিত করে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

  • বেশি শক্তি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে বেশী পানি গ্রহণ করে থাকে। 
  • আমিষযুক্ত খাদ্য গ্রহণ যথা সয়াবিন, মাংস, শুটকি মাছ, হাঁড়ের গুড়া খেলে হাঁস পানি বেশী খায়। 
  • খাবারে আঁশ জাতীয় খাদ্য উপাদানের পরিমাণ বাড়লে পানির প্রয়োজনীয়তা বাড়ে ।
  • ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে আদর্শ তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। এই তাপমাত্রার উপরে প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পানি গ্রহণের পরিমান ৭% বেড়ে যায় । 
  • পানির Ph ৫ এর নিচে নেমে গেলে বা ৭ এর বেশি বেড়ে গেলে পানি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়।
  • পানি সরবরাহের পদ্ধতির উপরও পানি গ্রহণ অনেকাংশে নির্ভর করে। ট্রাফ সিস্টেমে প্রতিদিন ২৫০ মিলি পানি লাগে যেখানে নিপল ড্রিংকার পদ্ধতিতে ১৬৬ মিলি পানি লাগে ৷
  • বয়সের কম বেশীর জন্য পানি গ্রহণ কম বেশী হতে পারে। । 
  • উৎপাদনের উপর নির্ভর করে পানি গ্রহণ কম বেশী হতে পারে। 
  • তাপমাত্রা কমে গেলে পানি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান কয়টি ও কী কী? 
  • শর্করা জাতীয় খাদ্য উপকরণের ভূমিকা লেখ । 
  • আমিষ জাতীয় খাদ্য উপকরণের ভূমিকা লেখ । 
  • ভিটামিন জাতীয় খাদ্য উপকরণের ভূমিকা লেখ ।

 

 

Content added || updated By

২.৪ হাঁসের বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ

হাঁস মুক্ত পদ্ধতিতে হাওড়-বাওড়, নদীনালা, খালবিল থেকে বিভিন্ন রকম উপকরণ খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে । আবদ্ধ ও অর্ধ-আবদ্ধ অবস্থায় হাঁসকে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের মাধ্যমে সুষম খাদ্য বা রেশন তৈরি করে খেতে দিতে হয়।

মুক্ত অবস্থায় যে সমস্ত খাদ্য উপকরণ প্রকৃতি থেকে পেয়ে থাকে সেগুলো হলো- ছোট শামুক, ঝিনুক, ছোট মাছ, আগাছা, ক্ষুদিপানা, বর্ষার শুরুতে বৃষ্টি শুরু হলে গর্ত থেকে বের হয়ে আসা ছোট ছোট কাঁকড়া, ধান কাটার মৌসুম শেষে ঝরে পড়া ধান ইত্যাদি।

যখন হাঁসগুলোকে সুষম খাদ্য তৈরি করে খাদ্য বা রেশন সরবরাহ করতে হয়, তখন যে সমস্ত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা হয় সেগুলো নিম্নরূপ :

  • গম গুড়া 
  • ভুট্টা গুড়া 
  • চালের কুঁড়া
  • সয়াবিন মিল বা সয়াবিন বীজ সিদ্ধ 
  • তিলের খৈল বা বাদাম খৈল
  • শুটকি মাছের গুঁড়া বা ঝিনুক বা শামুকের ভেতরের মাংস 
  • ঝিনুক চূর্ণ 
  • লবণ

এছাড়া প্রোটিনের উৎস হিসেবে প্রোটিন কনসেনট্রেট এবং ভিটামিন মিনারেলের উৎস হিসেবে ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স বাজারে পাওয়া যায় যা ক্রয় করে সুষম রেশনে ব্যবহার করা যায় ।

খাদ্য উপাদান প্রাপ্তির উৎসসমূহ

চাল : চাল এবং চালের উপজাত দ্রব্যাদি হাঁসের জন্য সহজপাচ্য ও সহজলভ্য শর্করা জাতীয় খাবার। খুদ বা ভাঙা চালের মূল্য তুলনামুলকভাবে কম। তাই বাচ্চা হাঁস ও ডিমপাড়া হাঁসের জন্য খুদ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় । খুদের মধ্যে আমিষ এবং ভিটামিন বি-২ থাকে। খুদে গড়ে ১০-১২% আমিষ, ১৩% চর্বি এবং ১১-১২% আঁশ থাকে ৷

ভুট্টাঃ ভুট্টা সুস্বাদু ও সহজপাচ্য হওয়ার হাঁস বেশ পছন্দ করে। হাঁসের খাদ্য হিসেবে ভুট্টা খুবই জনপ্রিয়। হলুদ হুটার মধ্যে ভিটামিন-এ এর পরিমাণ অধিক থাকে। ভুট্টা ছোট ছোট করে ভেঙে বা গুঁড়ো করেও হাঁসের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

গম : গমকে অনেকে হাঁসের আদর্শ খাদ্য বলে মনে করেন। গম সুস্বাদু এবং সহজপাচ্য। তদুপরি অন্যান্য দানাদার খাদ্যের তুলনায় আমিষের পরিমাণ অধিক। গমে সন্তোষজনক পরিমাণ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। গম ভাঙা ও গমের ভূসি হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

যৰ : অন্যান্য দানা শস্যের সাথে মিশিয়ে ফাকে হাঁসের খাদ্য হিসেবে দেয়া যায়। যবে আঁশের পরিমা অধিক। অতিরিক্ত যব খাওয়ালে হাঁসের চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়।

জোয়ার: জোয়ারে ভুট্টার তুলনার আমিষের পরিমাণ অধিক। জোরারের খোসা শক্ত বলে একে ভেঙ্গে ঋড়ো করে দেয়া প্রয়োজন। একক ভাবে ব্যবহার না করে অন্যান্য খাদ্যের সাথে মিশিয়ে সরবরাহ করা উত্তম।

গোল আলু: বাজারে আলুর যখন দাম কম থাকে তখন গমের বদলে আলু হাঁসের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে শর্করার পরিমান প্রায় ২০%। আলু সিদ্ধ করে দানাদার খাদ্যের সাথে অল্প পরিমাণে দেয়া যায় ।

শাকসবজি : বেগুন, মিষ্টি আলু, লাউ, কুমড়া এবং অন্যান্য সবজির খোসা ও অন্যান্য পরিত্যক্ত অংশ সেদ্ধ করে হাসকে খেতে দেয়া । এসব খাদ্য ভিটামিন সমৃদ্ধ। বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, বীট, পালং শাক, পুঁইশাক, নটেশাক, মূলা প্রকৃতির পাতা কুঁচি কুচি করে কেটেও হাঁসকে খেতে দেয়া যায়। এসব খা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ।

চালের মিহি কুঁড়া : চালের কুঁড়া মানের একটি উফুট খাবার। এতে চালের গুঁড়া থাকার ফলে শর্করার পরিমাণ অধিক। কুঁড়া সহজপাচ্য। কুঁড়া খাওনোর আগে দেখে নিতে হবে তা ভেজা বা ছত্রাক আক্রান্ত কি না।

গমের ভূষি : গমের দানার মোটা অংশই ব্যবহৃত হয় ভূমি হিসেবে। গমের ভূষির মধ্যে পড়ে ১৬% আমিষ থাকে। গম ও ভূট্টার তুলনায় রে তুমি আমি মানের। একে নিয়াসিন ও স্থায়ামিনের পরিমাণ অধিক। ভিমপাড়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৫% গণের ছবি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

ফিস মিল বা শুটকি মাছের গুঁড়া : মাছ এবং তার বর্জ্য পদার্থকে শুকিয়ে চূর্ণ করে অথবা অন্য কোনো উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে প্রাপ্ত দ্রব্যই ফিস মিল। এতে আমিষের পরিমাণ ৪৫-৫৫%। হাঁসের জন্য ফিস মিল একটি আদর্শ খাদ্য। বাচ্চা হাঁসে মাছের আঁশটে গন্ধ দূর করার জন্য অল্প পরিমাণে ফিস মিল ব্যবহার করতে হবে।

মিট মিল : মিট মিল হল শুকানো চূর্ণীকৃত মাংস বা মাংসের অংশ। এতে আমিষের পরিমাণ ৫০-৫৫%। মিট মিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিদ্যমান। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনও থাকে।

কেঁচো মিল : কেঁচো থেকে তৈরি খাদ্যকেই বলা হয় কেঁচো মিল। ফিস মিল, মিট মিল, বোন মিল প্রভৃতির বিকল্প হিসেবে কেঁচো মিল ব্যবহার করা যায়। এতে অশোধিত আমিষের পরিমাণ ৫৯.৪৭% ।

হাড়ের গুঁড়া ও মাংসের অবশিষ্টাংশ : খুর, শিং ও হাড় ব্যতিত প্রাণীর দেহের মাংসের অবশিষ্টাংশ শুকিয়ে ও গুঁড়ো করে এ খাদ্য পাওয়া যায়। এতে আমিষের পরিমাণ ৫৫%, খনিজ পদার্থের পরিমাণ ৪%। হাড়ের গুঁড়া ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ। উত্তমরূপে পরিশোধন করার পর এগুলো হাঁসের খাদ্যের সাথে মেশানো হয়।

রক্তের গুঁড়া বা ব্লাড মিল : কসাইখানা থেকে পশুর রক্ত সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে চূর্ণ করা হয়। তবে এদেশে পর্যাপ্ত পশু রক্ত পাওয়া যায় না। এর মধ্যে আমিষের পরিমাণ প্রায় ৭৫-৮০%। এতে সামান্য পরিমাণে খনিজ পদার্থও থাকে। বাচ্চা হাঁসের খাদ্যে ব্লাড মিল দেয়া অনুচিত।

পোল্ট্রির শুকনা বিষ্টা : এতে অশোষিত আমিষ থাকার ফলে এটি চালের কুঁড়ার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিমপাড়া হাঁসের ক্ষেত্রে রেশনে যথাক্রমে ৫-১০% হারে এটি ব্যবহার করা যায়।

সয়াবিন মিল : সয়াবিন ভালো করে সিদ্ধ করে শুকানোর পর গুড়ো করে বা তেল বের করে নেয়ার পর মিল হিসেবে মুরগিকে খাওয়ানো যায়। এতে প্রায় ৪৫% আমিব ব্যতীত সামান্য পরিমাণে চর্বি ও পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন থাকে।

তিলের খৈল : এতে আমিষের পরিমাণ ৪০-৪৫% ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ২.৩%। তিলের খৈল হাঁসের অন্য একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য। চীনা বাদামের খৈল ও তিলের খৈল অর্ধেক পরিমাণে মিশিয়ে হাঁসের খাদ্য তৈরি করা যায়।

সরিষার খৈল : সরিষা থেকে তেল নিষ্কাশনের পর যে অংশ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় সরিষার খৈল। এতে ৩৭-৪০% আমিষ, ০.৬% ক্যালসিয়াম এবং ১.০% ফসফরাস থাকে। বিশেষ দ্বাদ ও সুগন্ধের কারণে হাঁস এ খৈল পছন্দ করে।

চীনা বাদামের খৈল : চীনা বাদামের খৈল সুস্বাদু। অন্যান্য খাদ্যের সাথে চীনা বাদামের খৈল মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করা যায়। এতে আমিষ ৪৬.৫%, চর্বি বা স্নেহ পদার্থ ৪%, ক্যালসিয়াম ০.২৮% এবং ফসফরাস ১.২৮% থাকে।

নারিকেলের খৈল : এ খৈলে আমিষের পরিমাণ ২০-২৫%। তবে বেশি দিনের পুরাতন খৈল হাঁসের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কিছুদিন রেখে দিলেই খৈলে ছত্রাক জন্মায় এবং খাবারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

শামুক ও ঝিনুক খোসা: শামুক ও ঝিনুকের খোসা গুঁড়ো করে অন্যান্য খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।। তবে এ খাদ্য সর্বোচ্চ ১-৩% হাঁসের খাদ্যের সাথে মেশানো উচিত। ঝিনুকের গুঁড়ায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৩৭-৩৮%।

চুনা পাথর : ক্যালসিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস হলো চুনা পাথর। হাঁসের খাদ্যে ২-৪% হারে ব্যবহার করা যায়। এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৩৮%। এটি হাঁসের হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বোন মিল : এটি একটি শুষ্ক খাদ্য। হাড়কে বায়ু চাপের উপস্থিতিতে বাষ্প ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয় । হাঁসের খাদ্যের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।

সাধারণ খাদ্য লবণ : হাঁসের খাদ্যে অল্প পরিমাণে লবণ যোগ করা হলে হাঁসের দৈহিক বৃদ্ধি ও খাদ্য ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এটি সোডিয়াম ও ক্লোরাইডের প্রধান উৎস। তবে হাঁসের খাদ্যে অধিক মাত্রায় লবণ যোগ করা ঠিক নয়। খাবারের সাথে ০.৫% মাত্রায় লবণ যোগ করতে হয়। লবণ হাঁসের পানি গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া লবণ হাঁসের খাদ্যকে সুস্বাদু করে ও হজমে সাহায্য করে।

 

অনুসন্ধানমূলক কাজ 

তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন একটি হাঁসের খামার পরিদর্শন কর। খামারে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণগুলোর সাথে পরিচিত হও এবং সেগুলোতে কোন ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তার তালিকা প্রস্তুত | করে মতামত দাও। (একটি খাদ্য উপকরণের নামসহ বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের নমুনা নিম্নে দেওয়া হলো)

 

 

 

Content added || updated By

২.৫ মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁসের খাদ্যাভ্যাস:

এ পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্যই হাঁসের খাদ্যের প্রধান উৎস। এরা পরিত্যক্ত শস্যকণা, জলজ আগাছা, ক্ষুদিপানা, পোকামাকড়, কচি সবুজ ঘাস, পাতা, ঝিনুক, শামুক, ছোট মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে ও বংশবিস্তার করে থাকে। তবে এসব হাঁসকে নিয়মিত অল্প পরিমাণে ধান বা গম, চাউলের কুঁড়া, গমের ভূষি, রান্নাঘরের ও খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ সরবরাহ করা যায়। এরা বাড়ির আঙিনায় ও আশেপাশে চড়ে বেড়ায় এবং খাদ্য সংগ্রহ করে খায় ।

হাওড়-বাওড় এলাকায় জলাশয়ে পানি থাকে বছরে সর্বোচ্চ ৮/৯ মাস। এই সময়ে কৃষকগণ হাঁসকে বাড়তি খাবার দেয় না। তারা হাঁসকে মুক্ত অবস্থায় সারাদিন জলাশয়ে ছেড়ে দেয়। জলাশয় থেকে হাঁস তাদের খাদ্য যেমন- শেওলা, শামুক, ঝিনুক, ছোট মাছ, আগাছা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি গ্রহণ করে তাদের খাবারের ৭০-৮০ শতাংশ চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খামারিগণ শুধু কিছু পরিমাণ ধান, গম, কুঁড়া, হাঁসকে খেতে দেয়। অনেকেরই হাঁসের সুষম খাদ্য তৈরি, খাওয়ানোর পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণাই নেই। তাই এসব হাঁসের ডিম উৎপাদন কমে যায়।

বিল ও হাওড়ের নিকটবর্তী খামারিগণ হাঁসগুলোকে বিল ও হাওড় হতে চড়িয়ে নিয়ে আসেন তখন সামান্য পরিমাণে খাদ্য ও পানি খেতে দিলে ভালো হয়। কারণ এই খাদ্য সারাদিন খাদ্য সংগ্রহ ও অন্বেষণের পর সন্ধ্যার সময় তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে উৎসাহিত করে।

চর এলাকায় বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন নিচু জলাশয়ে বা কর্দমাক্ত এলাকায় হাঁসগুলোকে নিয়ে খেতে দেয়া হয়। সেখান থেকে কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। ধান কাটার মৌসুম শেষ হলে তাদের মাঠে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, সেখান থেকে সারাদিন ঝরে পড়া ধান খুঁজে খুঁজে খায়। কমপক্ষে মাঠে ২-৩ মাস প্রচুর ধান থাকে যা খেয়ে হাঁস কোনো সুষম খাদ্য ছাড়াই প্রচুর ডিম দিতে পারে। মাঠের ঝরা ধান যখন ফুরিয়ে আসে তখন থেকে অল্প অল্প সুষম খাদ্য খাওয়ানো উচিত। এপ্রিলের দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে ছোট কাঁকড়া গর্ত থেকে বের হয়ে আসে এবং সেখানে শামুক ঝিনুক পাওয়া যায়, তা হাঁস অন্বেষণ করে গ্রহণ করে এবং পরে বর্ষাকাল চলে আসে এবং ধান কাটার মৌসুম শুরু হওয়া পর্যন্ত কোনো সুষম খাদ্য ছাড়াই প্রচুর ডিম দিয়ে থাকে ।

হাঁস মুক্ত পদ্ধতিতে জলাশয়ে চড়ে বিভিন্ন সময়ে খাদ্য উপকরণ সংগ্রহ করে গ্রহণ করাই হল হাঁসের খাদ্যাভ্যাস।

 

 

Content added By

২.৬ হাঁসের বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমান 

সুষম খাদ্য প্রস্তুতির জন্য ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণসমূহের পুষ্টিমানের শতকরা হার নিচের ছকে লিপিবদ্ধ করা হল-

                     হাঁসের বিভিন্ন বয়সে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান

 

 

 

Content added || updated By

২.৭ হাঁসের সুষম খাদ্য প্ৰস্তুতি

খামারের দৈনন্দিন খরচের প্রায় ৬৫-৭০% ব্যয় হয় খাদ্যের জন্য। তাই সুষম খাদ্য তৈরিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

  • খাদ্যে হাঁসের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পরিমাণমত থাকতে হবে। তাই সুষম খাদ্য তৈরির পূর্বে খাদ্য উপকরণসমূহের পুষ্টিমান জানতে হবে। 
  • সুষম খাদ্য তৈরির পূর্বে হাঁসের জাত, বয়স ও ওজন জানতে হবে।
  • প্রস্তুতকৃত খাদ্যে কোনো প্রকার পঁচা বা দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার পরিহার করতে হবে। 
  • খাদ্য উপকরণ সহজলভ্য হতে হবে।
  • প্রস্তুতকৃত খাদ্য সহজপাচ্য হতে হবে। 
  • প্রস্তুতকৃত খাদ্য হাঁসের জন্য পছন্দনীয় হতে হবে । 
  • তৈরিকৃত খাদ্য শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে এবং ৬-৭ দিনের মধ্যেই ব্যবহার করা উত্তম ।

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব-

হাঁসকে সুষম খাদ্য প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি হাঁসকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করা না হয়, তবে যে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে তার কারণে হাঁসের নানা রকমের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সুষম খাদ্য সরবরাহের সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ-

  • হাঁসের উৎপাদন (যেমন- ডিম, মাংস, বাচ্চা ফোটার হার, সুস্থ সবল বাচ্চা) বৃদ্ধি পায় । 
  • পুষ্টির অভাবজনিত রোগ ও অন্যান্য রোগ কম হয়। 
  • খামারে লাভ বেশি হয় । 
  • খামারে হাঁস দ্রুত বেড়ে উঠে । 
  • উৎপাদিত ডিম এবং মাংসের গুণগতমান ভালো হয় । 
  • হাঁসের মৃত্যুর হার হ্রাস পায় ।

হাঁসের সুষম খাদ্য তালিকা 

হাঁসের সুষম খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করার সময় নিম্নলিখিত শর্তগুলোর প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে:

ক) প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান 

যে বয়সের হাঁসের জন্য খাদ্য তালিকা তৈরি করা হবে, উক্ত হাঁসের চাহিদা অনুযায়ী সবকটি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান পরিমাণমত আছে কি না হিসাব করে দেখতে হবে। 

খ) পুষ্টিমান 

আদর্শ পুষ্টিমান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মান অনুযায়ী হাঁসের বয়স অনুপাতে আমিষ, বিপাকীয় শক্তি, চর্বি, আঁশ জাতীয় পদার্থ, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যামাইনো এসিড এর পরিমাণ যতদুর সম্ভব সঠিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। 

গ) আমিষ ও বিপাকীয় শক্তির অনুপাত 

আমিষ ও বিপাকীয় শক্তির অনুপাত স্বীকৃত মান অনুযায়ী সঠিক না হয়ে কম বেশি হলে হাঁসের দেহে চর্বি জমে মোটা হয়ে যেতে পারে বা পুষ্টির অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া এদের মধ্যে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সুতরাং খাদ্য তালিকা তৈরির সময় আমিষ ও বিপাকীয় শক্তির অনুপাত যথটা সম্ভব স্বীকৃত মানের কাছাকাছি হতে হবে ।

ঘ) সস্তা ও সহজলভ্য 

খাদ্য তালিকায় ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণগুলো অবশ্যই সহজলভ্য হতে হবে। খামারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বা নিকটস্থ বাজারে যে ধরনের খাদ্য উপকরণ অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় এবং মূল্য কম, যতটা সম্ভব ঐ সমস্ত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। আদর্শ মান অনুযায়ী খাদ্য তালিকার সকল উপাদান ঠিক রেখে স্থানীয়ভাবে সস্তা উপকরণ ব্যবহার করে যতটা সম্ভব খাদ্য মূল্য কমিয়ে রাখতে হবে। 

ঙ) সুস্বাদু ও রুচিকর খাদ্য 

সুষম খাদ্য তৈরির সময় অধিক আঁশযুক্ত এবং অরুচিকর খাদ্য উপকরণ যথাসম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, নারিকেলের খৈল, সয়াবিনের খৈল, ইপিল-ইপিল পাতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে হাঁসের খাদ্যের জন্য কিছুটা অরুচিকর হওয়ায় বা কোনো কোনো উপকরণে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকায় অত্যন্ত সাবধানতার সাথে এবং পরিমাণমত ব্যবহার করতে হয়। খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য উপকরণের সমন্বয়ে খাদ্য মিশ্রণ সুস্বাদু করার চেষ্টা করতে হবে। 

চ) সঠিক মিশ্ৰণ 

প্রতিটি খাদ্য উপকরণ যাতে ভালোভাবে মিশানো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শস্যদানা জাতীয় খাদ্য উপকরণ যেমন গম, ভুট্টা ইত্যাদি ভালোভাবে গুঁড়া করতে হবে। তা না হলে ভিটামিন খনিজ প্রিমিক্স বা ব্যবহৃত ঔষধ সমভাবে মেশানো কঠিন হবে । 

ছ) খাদ্য উপদানবিহীন অন্যান্য উপকরণ

সুষম খাদ্যকে রোগ জীবাণুর আক্রমণ হতে এবং পঁচনের হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং হাঁসের দ্রুত শরীর বৃদ্ধি বা উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়তার জন্য বিশেষ ধরনের ঔষধ, হরমোন, এন্টি অক্সিডেন্ট খাদ্যের সাথে পরিমাণমত মিশানো যেতে পারে ।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ 

  • মুক্ত অবস্থায় পালনে হাঁস যে খাদ্যগুলো সংগ্রহ করে তার একটি তালিকা প্রস্তুত কর। 
  • হাঁসের বিভিন্ন বয়সে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানের একটি তালিকা প্রস্তুত কর। 
  • হাঁসের সুষম খাদ্য নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়গুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত কর।

 

সুষম খাদ্য তালিকা তৈরির সাধারণ নিয়ম- 

সুষম খাদ্য তালিকা প্রণয়নের সময় নিম্নলিখিত হারে পুষ্টি উপাদানসমূহ মিশাতে হবে

১. শক্তি প্রধান/শর্করা জাতীয় খাদ্য (৬০% হতে ৭০% ভাগ) 

(ক) শস্যদানা জাতীয় খাদ্য বিশেষ করে গম, ভুট্টা, যব, জই, জোয়ার এবং (

খ) শস্যদানার উপজাত বিশেষ করে ভূষি বা কুঁড়া, গমের ভূষি, চাউলের কুঁড়া, ডালের ভূষি ইত্যাদি

এক বা একাধিক খাদ্য উপকরণ মিলে ৬০% হতে ৭০% ভাগ পর্যন্ত খাদ্য মিশ্রণে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ জাতীয় খাদ্য উপকরণ হতে প্রচুর পরিমানে তাপ শক্তির পাশাপাশি অন্যান্য উপাদানও কম বেশি পাওয়া যায়।

 

২. আমিষ জাতীয় খাদ্য (২০% হতে ৩০% ভাগ) 

আমিষ জাতীয় খাদ্য উপকরণ দুইটি উৎস থেকে পাওয়া যায়। যথা- 

ক) উদ্ভিদজাত উৎস 

খ) প্রাণিজ উৎস

হাঁসের খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাদ্য উপকরণসমূহ হল- 

ক) উদ্ভিদজাত আমিষ উপকরণসমূহ - সয়াবিন মিল, তিলের খৈল, বাদাম ও সরিষার খৈল ইত্যাদি। 

খ) প্রাণিজ আমিষ উপকরণসমূহ - ফিস মিল, ব্লাড মিল, প্রোটিন কনসেনট্রেট, ফিদার মিল এক বা একাধিক উপকরণ ৫%-১৫% পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

৩. খনিজ জাতীয় উপকরণ (২-৯% ভাগ) 

খাদ্য তালিকায় খনিজ উপাদান বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্য মিশ্রণের সাথে বয়স ভেদে ২-৯% ভাগ পর্যন্ত ঝিনুকের গুড়া, হাঁড়ের গুড়া, চুনাপাথরের গুড়া বা ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট যোগ করতে হয়। 

৪. লবণ 

খাদ্য সহজে হজম হওয়া ও রুচিবৃদ্ধির জন্য খাদ্য মিশ্রণের সাথে হাঁসের বয়স ভেদে বা বিভিন্ন স্তরে ০.২৫- ১% ভাগ পর্যন্ত লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৫. ভিটামিন 

খাদ্য মিশ্রণের সাথে হাঁসকে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণের অভাব পূরণের জন্য ২-৩% সবুজ শাকসবজি বা ০.২৫-০.৩% ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ ছাড়াও খাদ্য মিশ্রণের সাথে খাদ্য উপাদানবিহীন উপকরণ যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি পরিমাণমত ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, প্রতিটি খাদ্য উপকরণ ব্যবহারের সময় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রার কম বা বেশি খাদ্য যাতে ব্যবহার না হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে খাদ্য উপকরণ কম বা বেশি ব্যবহার হলে হাঁসের মধ্যে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে । সুষম খাদ্য তৈরির সময় পুষ্টির উৎস অনুসারে খাদ্য উপকরণ যোগ করার নিয়ম- 

১. শক্তির উৎসের জন্য : শস্যদানা ও এর উপজাত ৬০-৭০% ২. আমিষের জন্য : 

ক) প্রাণিজ আমিষের উৎস ৫-১৫% 

খ) উদ্ভিদ আমিষের উৎস ১৮-২২

৩. খনিজ মিশ্রণ : ২-৯%

৪. ভিটামিন : প্রিমিক্স ও ১০০ কেজি মিশ্রিত খাদ্যে ৩ কেজি পাতা জাতীয় শাকসবজি।

হাঁসের সুষম খাদ্য তৈরির ধাপ : 

১) প্রথমে ঘরের মেঝে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। 

২) যে সকল খাদ্য উপাদান অধিক পরিমাণে লাগে যেমন- ভুট্টা, গম, কুঁড়া, সয়াবিন মিল, প্রোটিন কানসেনট্রেট সেগুলো ওজন করতে হবে ও মেঝেতে ঢালতে হবে। 

৩) খাদ্য উপাদান প্রতিটি ঢালার পর হাত দিয়ে সমান করে ছড়িয়ে দিতে হবে। 

৪) পরিমাণে কম লাগে এমন উপাদান (ভিটামিন, ডিসিপি, লাইসিন, মিথিওনিন, লবণ, খনিজ মিশ্রণ) ওজন করে একসঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে। 

৫) এ মিশ্রণকে পূর্বের খাদ্য উপাদানের স্তুপের উপর সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। 

৬) এর পর হাত দিয়ে বা মেশিনের সাহায্যে ৩-৪ বার খাদ্য ভালোভাবে মেশাতে হবে। 

৭) সমস্ত মিশ্রণকে বস্তায় ভরে মজুদ করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে হবে। 

৮) এ ধরনের মিশ্রিত খাদ্যকে ম্যাশ খাদ্য বলে ।

 

সুষম খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন :

  • রেশন ফরমুলেশনের পূর্বে অবশ্যই উপকরণের পুষ্টিগত গুণাগুণ এবং ভৌত অবস্থা পরীক্ষা করতে হবে। 
  • ভেজা ছত্রাকযুক্ত, দলাপাকা এবং দূষিত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না ।
  • খাদ্যে জলীয় অংশের পরিমাণ কখনও ১২ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না । 
  • ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে এবং অপরিচ্ছন্ন স্থানে খাদ্য মিশ্রণ করা যাবে না ।
  • খাদ্য তৈরির পর অধিক সময় ধরে খাদ্য মাটিতে বা মেঝেতে ফেলে রাখা যাবে না । 
  • খাদ্য প্রস্তুতকারীকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

 

 

 

Content added || updated By

২.৮ সুষম খাদ্য সংরক্ষণ :

  • খাদ্য গুদামে সঠিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে যা খাদ্যকে আর্দ্র হওয়া থেকে মুক্ত করবে। 
  • খাদ্য বস্তা মেঝে/ মাটিতে না রেখে কিছুটা উঁচুতে তাক বা মাচা করে রাখতে হবে । 
  • খাদ্য বস্তা দেয়াল ঘেঁষে রাখা উচিত নয় । 
  • খাদ্য গুদাম বিষাক্ত পোকামাকড়, ইঁদুর এবং কীটপতঙ্গ মুক্ত হতে হবে।
  • বৃষ্টির পানি যেন খাদ্য গুদামে না প্রবেশ করে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 
  • সরাসরি রোদের আলো থেকে দূরে শুষ্ক স্থানে খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে। 
  • খাবারের বস্তার মুখ খোলা থাকলে বাতাসে অধিক আর্দ্রতার কারণে ছত্রাক জন্মাতে পারে সে জন্য মুখ বন্ধ রাখতে হবে।
  • খাবার খোলা অবস্থায় মাটিতে স্তুপ আকারে রাখা সঠিক নয়, কারণ স্তুপে অধিক তাপ উৎপাদন হয়ে খাদ্যের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় । 
  • খাদ্যের সাথে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক ব্যবহারের অন্তত ২৪ ঘন্টা পর সেই খাদ্য ব্যবহার করতে হবে।
  • খাবারের পাত্রে হাঁস যাতে পায়খানা করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  • মিশ্রিত খাদ্য বেশি দিন রাখা যাবে না, তিন দিনের বেশি খাদ্য একবারে তৈরি করা যাবে না । 
  • হাঁসের খাদ্য ও ডিম একত্রে রাখা যাবে না ।

বয়স অনুযায়ী হাঁসের খাদ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 

১. স্টার্টার রেশন : ০-৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত হাঁসকে এই খাদ্য দেয়া হয় ৷ 

২. গ্রোয়ার রেশন : ৯-২০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত হাঁসকে এই খাদ্য দেয়া হয় । 

৩. ফিনিশার রেশন: ২০ সপ্তাহ বয়স থেকে এর উপরের বয়স পর্যন্ত এই খাদ্য দেয়া হয় । 

নিচে স্টার্টার, গ্রোয়ার ও ফিনিশার রেশন তালিকার নমুনা দেয়া হল-

 

১. স্টার্টার রেশন (০-৮ সপ্তাহ) বাচ্চার খাদ্য তৈরির নমুনা - ১

           নমুনা - ২

উপরোক্ত তৈরি খাবারে প্রায় ২০% আমিষ এবং ২৭০০ কিলোক্যালরি/কেজি শক্তিমান থাকবে।

 

২. গ্রোয়ার রেশন (৯-২০ সপ্তাহ) বাড়ন্ত বাচ্চার খাদ্য তৈরির নমুনা-১

             নমুনা- ২

উপরোক্ত তৈরি খাবারে প্রায় ১৮% আমিষ এবং ২৭০০ কিলোক্যালরি/কেজি শক্তিমান থাকবে।

 

৩. ফিনিশার খাদ্য (২০ সপ্তাহ থেকে উপরের বয়সের জন্য) হাঁসের খাদ্য তৈরির নমুনা- ১

                নমুনা-২

উপরোক্ত তৈরি খাবারে প্রায় ১৬% আমিষ এবং ২৮০০ কিলোক্যালরি/কেজি শক্তিমান থাকবে ।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • সুষম খাদ্য তৈরিতে খাদ্য উপকরণ ব্যবহারের সর্বোচ্চ মাত্রা উল্লেখ কর। 
  • হাঁসের জন্য সুষম খাদ্য তৈরির ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে লেখ। 
  • প্রস্তুতকৃত সুষম খাদ্য সংরক্ষণের জন্য কী কী পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হয় তা লেখ । 
  • ডিমপাড়া হাঁসের জন্য ৫০ কেজি ওজনের সুষম খাদ্য তৈরির নমুনা প্রস্তুত কর।

 

 

Content added By

২.৯ হাঁসের খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতি :

হাঁসের খাদ্য সরবরাহের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সূচি প্রয়োজন। সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন একই সময়ে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। উন্মুক্ত অবস্থায় হাঁস পালন করা হলে হাঁসকে সকাল বেলায় জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। জলাশয় থেকে সারাদিন খাদ্য সংগ্রহ করে খেয়ে থাকে। সন্ধ্যাবেলা ঘরে তোলার সময় কিছু খাবার প্রদান করা হয়। অপরদিকে আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালন করলে শুধুমাত্র প্রদানকৃত খাবারের উপর নির্ভর করে চলতে হয়। সে কারণে হাঁসকে তার বয়স ও উৎপাদন এর উপর ভিত্তি করে সুষম রেশন প্রদান করা হয় ।

                  ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের বয়স অনুযায়ী দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ

 

                     বিভিন্ন বয়সের মাংস উৎপাদনকারী হাঁসের দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ

 

হাঁসকে দুই প্রকারে খাদ্য তৈরি করে খাওয়ানো হয়। যথা: 

১. ম্যাশ আকারে খাদ্য তৈরি করে খাওয়ানো 

২. পিলেট আকারে খাদ্য তৈরি করে খাওয়ানো

ম্যাশ খাদ্য 

খাদ্য উপকরণসমূহ একত্রে মিশিয়ে যে দানাদার বা গুঁড়া খাদ্য তৈরি করা হয় তাকে ম্যাশ খাদ্য বলে। ম্যাশ খাদ্য পোল্ট্রি ফিড মিলে বা হাতে তৈরি করা যায়। ম্যান খাদ্য হাতে প্রস্তুত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে খাদ্যের সবগুলো উপকরণ যেন ভালোভাবে মিশে যায়।

পিলেট খাদ্য 

পিলেট খাদ্য কারখানার এক করা হয়। পিলেটার মেশিন কিনে ক্ষুদ্র পরিসরে নিজেরাই খাদ্য নত করতে পারি। এই জাতীয় খাদ্য হাতে ছত করা যায় না। পিলেট খাদ্য হাঁসের জন্য অধিকতর উপযোগী। এতে খাদ্য অপচয় কম হয়।

আজকাল বাজারের তৈরি সিলেট জাতীয় খাদ্য কিনতে পাওয়া যায়। তবে এসব খাদ্য ব্যবহারের পূর্বে এদের গুণাগুণ, উপকরণের মান এবং কতদিন পূর্বে তৈরি তা অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। খাদ্য ৭(সাত) দিনের বেশি নামজাত করা যাবে না, তাহলে ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • হাঁসকে কোন কোন সময়ে খাদ্য প্রদান করতে হয়। 
  • বয়স অনুযারী ডিমপাড়া হাঁসের খাদ্য প্রদানের পরিমানের একটি তালিকা কর। 
  • বয়স অনুযারী মাংসজাত হাঁসের খাদ্য প্রদানের পরিমানের একটি তালিকা প্রস্তুত কর। 
  • ম্যাশ খাদ্য ও পিলেট খাদ্য ব্যবহারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।

 

 

 

Content added By

জব ০৪ ঃ হাঁসের খাদ্য উপকরণসমূহ সনাক্তরণ

পারদর্শিতার মানদণ্ড: 

১) হাঁসের রেশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ সনাক্ত করা 

২) খাদ্য উপকরণ সমূহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি তথ্য সনাক্ত করা 

৩) খাদ্য উপকরনসমূহের গুণগত মান নিশ্চিত করা

 

        (ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

 

                 (খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

 

                       (গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)

 

কাজের ধারাঃ

১. বাজার ও বিভিন্ন উৎস থেকে হাঁসের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণসমূহ সংগ্রহ কর।

২. খাদ্য উপকরণসমূহের সঠিক পুষ্টিমান বই পুস্তক, ম্যাগাজিন, জার্নাল বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করো। 

৩. খাদ্য উপাদানসমূহের উৎকৃষ্ট মান যেমন- দানাদার অবস্থা, আর্দ্রতা, পদ, বৰ্ণ ইত্যাদি সঠিক ভাবে আছে কি না যাচাই করো।

বাংলাদেশে সাধারনত নিম্নলিখিত খাদ্য উপাদান সমুহ হাঁসের খাদ্য তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। যাদের পুষ্টিমানের তালিকা নিম্নে প্রদান করা হল-

এছাড়াও পোল্ট্রি খাদ্যে বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম ভিটামিন ও খনিজ উৎস, ছত্রাক ও টক্সিন বাইন্ডার, এনজাইম, কৃত্রিম এমাইনো এসিড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। যেমন- 

ক) ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স, জি এস, ডব্লিউ এস এবং এল 

খ) ছত্রাক বাইন্ডার- মোল্ড ষ্টপ, সরবাটক্স 

গ) টক্সিন বাইন্ডার-ডট, ইএসবি-৩ 

ঘ) কৃত্রিম অ্যামাইনো এসিড- লাইসিন, মিথিওনিন 

ঙ) ইলেকট্রোলাইট ইত্যাদি

৪. প্রতিটি উপাদানের পুষ্টিমান সঠিকভাবে জেনে নিয়ে মান ও ব্যবহার অনুযায়ী গ্রুপে ভাগ করে লিপিবদ্ধ কর। 

৫. এরপর প্রতিটি খাদ্যউপাদানের নমুনা পৃথকভাবে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের জারে রেখে তার গায়ে নাম লিখে রাখ । 

৬. কাজ শেষে কক্ষটি পরিস্কার করে খাদ্য উপাদানসহ প্লাস্টিকের জারগুলো সুন্দর ভাবে শুল্ক ও ঠান্ডা জায়গায় সাজিয়ে রাখ ।

 

সতর্কতাঃ 

১. কোন ভাবেই ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্য উপকরণ সংগ্রহ করা যাবে না। 

২. নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে খাদ্যের পুষ্টি উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে। 

৩. খাদ্য উপকরণসমূহ সঠিকভাবে লেবেলিং করে শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে যাতে সহজে নষ্ট না হয় ।

 

 

Content added By

জব ০৫ : ডিমপাড়া হাঁসের সুষম খাদ্য প্রস্তুতকরণ

পারদর্শিতার মানদণ্ড: 

১) ডিমপাড়া হাঁসের রেশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ সনাক্ত করা 

২)খাদ্য উপকরণসমূহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি তথ্য সনাক্ত করা 

৩) খাদ্য উপকরণসমূহের মিশ্রণে ডিমপাড়া হাঁসের জন্য সুষম রেশন প্রস্তুত করা

 

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

 

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

 

(গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)

 

কাজের ধারা: 

১) তালিকা অনুযায়ী পুষ্টিমানের খাদ্য উপাদানের তালিকা সংগ্রহ কর। 

২) বয়স ও উৎপাদন অনুযায়ী পুষ্টিমানের তালিকা মোতাবেক সুষম রেশন ফরমুলেশন কর। 

৩) খাদ্য উপাদানসমূহ তালিকা মোতাবেক মেপে পৃথক পৃথক পাত্রে রাখ।

৪) কম পরিমানে ব্যবহৃত খাদ্য উপাদানসমূহ একত্রে ভালভাবে মেশাও ৷ 

৫) এরপর কম পরিমাণে ব্যবহৃত উপাদানসমূহ পর্যায়ক্রমে বেশী পরিমাণে ব্যবহৃত উপাদানসমূহের সাথে মেশাও। 

৬) খাদ্য উপাদান মেশানো শেষ হলে পুনরায় ভালভাবে উল্টে পাল্টে মিশিয়ে দাও যাতে সকল উপাদান সমভাবে মিশ্রিত হয় । 

৭) তৈরিকৃত খাদ্য ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় বস্তায় সংরক্ষণ কর ও হাঁসকে খেতে দাও ।

ডিমপাড়া হাঁসের নমুনা খাদ্য তালিকা প্রস্তুত কর

১. স্টার্টার রেশন (০-৮ সপ্তাহ) বাচ্চার খাদ্য তৈরির নমুনা - ১

নমুনা -২

উপরোক্ত তৈরি খাবারে প্রায় ২০% আমিষ এবং ২৭০০ কিলোক্যালরি/কেজি শক্তিমান থাকবে।

 

২. গ্রোয়ার রেশন (৯-২০ সপ্তাহ) বাড়ন্ত বাচ্চার খাদ্য তৈরির নমুনা - ১

নমুনা- ২

উপরোক্ত তৈরি খাবারে প্রায় ১৮% আমিষ এবং ২৭০০ কিলোক্যালরি/কেজি শক্তিমান থাকবে ।

 

৩. ফিনিশার খাদ্য (২০ সপ্তাহ থেকে উপরের বয়সের জন্য) হাঁসের খাদ্য তৈরির নমুনা- ১

নমুনা- ২

উপরোক্ত তৈরি খাবারে প্রায় ১৬% আমিষ এবং ২৮০০ কিলোক্যালরি/কেজি শক্তিমান থাকবে ।

 

সতর্কতাঃ 

১) প্রতিটি সতেজ খাদ্য উপাদান ব্যবহার করতে হবে। 

২) টক্সিন বাইন্ডার মিশ্রণ সুষম ও যথোপযুক্ত মাত্রায় হতে হবে। 

৩) মিশ্রিত খাদ্য ৭-১০ দিনের বেশী সংরক্ষণ করে রাখা যাবে না ।

 

 

 

Content added By

জব ০৬ : মাংসজাত হাঁসের খাদ্য প্রস্তুতকরণ

পারদর্শিতার মানদণ্ড: 

১) মাংসজাত হাঁসের রেশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ সনাক্ত করা 

২) খাদ্য উপকরণসমূহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি তথ্য সনাক্ত করা 

৩) খাদ্য উপকরণসমূহের মিশ্রণে মাংসজাত হাঁসের জন্য সুষম রেশন প্রস্তুত করা ।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

 

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি :

গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)

কাজের ধারা 

১) তালিকা অনুযায়ী পুষ্টিমানের খাদ্য উপাদানের তালিকা সংগ্রহ করো। 

২) বয়স ও উৎপাদন অনুযায়ী পুষ্টিমানের তালিকা মোতাবেক সুষম রেশন ফরমুলেশন করো। 

৩) খাদ্য উপাদানসমূহ তালিকা মোতাবেক মেগে পৃথক পৃথক পাত্রে রাখ । 

৪) কম পরিমাণে ব্যবহৃত খাদ্য উপাদানসমূহ একত্রে ভালভাবে মিশাও।

৫) এরপর কম পরিমাণে ব্যবহৃত উপাদানসমূহ পর্যায়ক্রমে বেশী পরিমানে ব্যবহৃত উপাদানসমূহের সাথে মেশাও। 

৬) খাদ্য উপাদান মিশানো শেষ হলে পুনরায় ভালভাবে উল্টেপাল্টে মিশিয়ে দাও যাতে সকল উপাদান সমভাবে মিশ্রিত হয় । 

৭) তৈরিকৃত খাদ্য ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় বস্তায় সংরক্ষণ কর ও হাঁসকে সরবরাহ কর ।

মাংসজাত হাঁসের নমুনা খাদ্য তালিকা 

১. স্টার্টার রেশন (০-২ সপ্তাহ) বাচ্চার খাদ্য তৈরি

 

২. গ্রোয়ার রেশন (৩-৮ সপ্তাহ) বাচ্চার খাদ্য তৈরি

 

৩. ফিনিশার রেশন (৯-২০ সপ্তাহ) হাঁসের খাদ্য তৈরি

 

সতর্কতাঃ 

১) প্রতিটি সতেজ খাদ্য উপাদান ব্যবহার করতে হবে । 

২) টক্সিন বাইন্ডার মিশ্রণ সুষম ও যথোপযুক্ত মাত্রায় হতে হবে । 

৩) মিশ্রিত খাদ্য ৭-১০ দিনের বেশী সংরক্ষণ করে রাখা যাবে না ।

 

 

Content added By
Please, contribute to add content into অনুশীলনী.
Content

১. খাদ্য কী? 

২. হাঁসের খামারে দৈনন্দিন খরচের শতকরা কত ভাগ খরচ খাদ্যের জন্য প্রয়োজন হয়? 

৩. তৈরিকৃত খাদ্য কতদিন সংরক্ষণ করা যায়? 

৪. আমিষ জাতীয় খাদ্যের উৎসের নাম লেখ । 

৫. ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ জাতীয় খাদ্যের উৎসের নাম লেখ।

 

 

Content added By

১. অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান কয়টি ও কী কী? 

২. অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানের কাজ লেখ । 

৩.খাদ্য উপাদান প্রাপ্তির উৎস লেখ । 

৪.সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য লেখ। 

৫. সুষম খাদ্যে খাদ্য উপকরণ ব্যবহারের সর্বোচ্চ মাত্রা লেখ ।

 

 

Content added || updated By

১. সুষম খাদ্য তৈরির বিবেচ্য বিষয়সমূহ উল্লেখ করো । 

২.ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের বয়স অনুযায়ী দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ 

৩. কীভাবে হাঁসের জন্য সুষম রেশন প্রস্তুত করতে হয় তা লেখ। লেখ । 

৪. ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের জন্য ফিনিশার রেশন তৈরী কর (বিপাকীয় শক্তি ২৮০০ কিলোক্যালরী/কেজি এবং আমিষ ২০%)।

 

 

Content added By