এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

২.৭ হাঁসের সুষম খাদ্য প্ৰস্তুতি

খামারের দৈনন্দিন খরচের প্রায় ৬৫-৭০% ব্যয় হয় খাদ্যের জন্য। তাই সুষম খাদ্য তৈরিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

  • খাদ্যে হাঁসের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পরিমাণমত থাকতে হবে। তাই সুষম খাদ্য তৈরির পূর্বে খাদ্য উপকরণসমূহের পুষ্টিমান জানতে হবে। 
  • সুষম খাদ্য তৈরির পূর্বে হাঁসের জাত, বয়স ও ওজন জানতে হবে।
  • প্রস্তুতকৃত খাদ্যে কোনো প্রকার পঁচা বা দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার পরিহার করতে হবে। 
  • খাদ্য উপকরণ সহজলভ্য হতে হবে।
  • প্রস্তুতকৃত খাদ্য সহজপাচ্য হতে হবে। 
  • প্রস্তুতকৃত খাদ্য হাঁসের জন্য পছন্দনীয় হতে হবে । 
  • তৈরিকৃত খাদ্য শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে এবং ৬-৭ দিনের মধ্যেই ব্যবহার করা উত্তম ।

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব-

হাঁসকে সুষম খাদ্য প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি হাঁসকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করা না হয়, তবে যে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে তার কারণে হাঁসের নানা রকমের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সুষম খাদ্য সরবরাহের সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ-

  • হাঁসের উৎপাদন (যেমন- ডিম, মাংস, বাচ্চা ফোটার হার, সুস্থ সবল বাচ্চা) বৃদ্ধি পায় । 
  • পুষ্টির অভাবজনিত রোগ ও অন্যান্য রোগ কম হয়। 
  • খামারে লাভ বেশি হয় । 
  • খামারে হাঁস দ্রুত বেড়ে উঠে । 
  • উৎপাদিত ডিম এবং মাংসের গুণগতমান ভালো হয় । 
  • হাঁসের মৃত্যুর হার হ্রাস পায় ।

হাঁসের সুষম খাদ্য তালিকা 

হাঁসের সুষম খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করার সময় নিম্নলিখিত শর্তগুলোর প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে:

ক) প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান 

যে বয়সের হাঁসের জন্য খাদ্য তালিকা তৈরি করা হবে, উক্ত হাঁসের চাহিদা অনুযায়ী সবকটি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান পরিমাণমত আছে কি না হিসাব করে দেখতে হবে। 

খ) পুষ্টিমান 

আদর্শ পুষ্টিমান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মান অনুযায়ী হাঁসের বয়স অনুপাতে আমিষ, বিপাকীয় শক্তি, চর্বি, আঁশ জাতীয় পদার্থ, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যামাইনো এসিড এর পরিমাণ যতদুর সম্ভব সঠিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। 

গ) আমিষ ও বিপাকীয় শক্তির অনুপাত 

আমিষ ও বিপাকীয় শক্তির অনুপাত স্বীকৃত মান অনুযায়ী সঠিক না হয়ে কম বেশি হলে হাঁসের দেহে চর্বি জমে মোটা হয়ে যেতে পারে বা পুষ্টির অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া এদের মধ্যে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সুতরাং খাদ্য তালিকা তৈরির সময় আমিষ ও বিপাকীয় শক্তির অনুপাত যথটা সম্ভব স্বীকৃত মানের কাছাকাছি হতে হবে ।

ঘ) সস্তা ও সহজলভ্য 

খাদ্য তালিকায় ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণগুলো অবশ্যই সহজলভ্য হতে হবে। খামারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বা নিকটস্থ বাজারে যে ধরনের খাদ্য উপকরণ অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় এবং মূল্য কম, যতটা সম্ভব ঐ সমস্ত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। আদর্শ মান অনুযায়ী খাদ্য তালিকার সকল উপাদান ঠিক রেখে স্থানীয়ভাবে সস্তা উপকরণ ব্যবহার করে যতটা সম্ভব খাদ্য মূল্য কমিয়ে রাখতে হবে। 

ঙ) সুস্বাদু ও রুচিকর খাদ্য 

সুষম খাদ্য তৈরির সময় অধিক আঁশযুক্ত এবং অরুচিকর খাদ্য উপকরণ যথাসম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, নারিকেলের খৈল, সয়াবিনের খৈল, ইপিল-ইপিল পাতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে হাঁসের খাদ্যের জন্য কিছুটা অরুচিকর হওয়ায় বা কোনো কোনো উপকরণে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকায় অত্যন্ত সাবধানতার সাথে এবং পরিমাণমত ব্যবহার করতে হয়। খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য উপকরণের সমন্বয়ে খাদ্য মিশ্রণ সুস্বাদু করার চেষ্টা করতে হবে। 

চ) সঠিক মিশ্ৰণ 

প্রতিটি খাদ্য উপকরণ যাতে ভালোভাবে মিশানো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শস্যদানা জাতীয় খাদ্য উপকরণ যেমন গম, ভুট্টা ইত্যাদি ভালোভাবে গুঁড়া করতে হবে। তা না হলে ভিটামিন খনিজ প্রিমিক্স বা ব্যবহৃত ঔষধ সমভাবে মেশানো কঠিন হবে । 

ছ) খাদ্য উপদানবিহীন অন্যান্য উপকরণ

সুষম খাদ্যকে রোগ জীবাণুর আক্রমণ হতে এবং পঁচনের হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং হাঁসের দ্রুত শরীর বৃদ্ধি বা উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়তার জন্য বিশেষ ধরনের ঔষধ, হরমোন, এন্টি অক্সিডেন্ট খাদ্যের সাথে পরিমাণমত মিশানো যেতে পারে ।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ 

  • মুক্ত অবস্থায় পালনে হাঁস যে খাদ্যগুলো সংগ্রহ করে তার একটি তালিকা প্রস্তুত কর। 
  • হাঁসের বিভিন্ন বয়সে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানের একটি তালিকা প্রস্তুত কর। 
  • হাঁসের সুষম খাদ্য নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়গুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত কর।

 

সুষম খাদ্য তালিকা তৈরির সাধারণ নিয়ম- 

সুষম খাদ্য তালিকা প্রণয়নের সময় নিম্নলিখিত হারে পুষ্টি উপাদানসমূহ মিশাতে হবে

১. শক্তি প্রধান/শর্করা জাতীয় খাদ্য (৬০% হতে ৭০% ভাগ) 

(ক) শস্যদানা জাতীয় খাদ্য বিশেষ করে গম, ভুট্টা, যব, জই, জোয়ার এবং (

খ) শস্যদানার উপজাত বিশেষ করে ভূষি বা কুঁড়া, গমের ভূষি, চাউলের কুঁড়া, ডালের ভূষি ইত্যাদি

এক বা একাধিক খাদ্য উপকরণ মিলে ৬০% হতে ৭০% ভাগ পর্যন্ত খাদ্য মিশ্রণে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ জাতীয় খাদ্য উপকরণ হতে প্রচুর পরিমানে তাপ শক্তির পাশাপাশি অন্যান্য উপাদানও কম বেশি পাওয়া যায়।

 

২. আমিষ জাতীয় খাদ্য (২০% হতে ৩০% ভাগ) 

আমিষ জাতীয় খাদ্য উপকরণ দুইটি উৎস থেকে পাওয়া যায়। যথা- 

ক) উদ্ভিদজাত উৎস 

খ) প্রাণিজ উৎস

হাঁসের খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাদ্য উপকরণসমূহ হল- 

ক) উদ্ভিদজাত আমিষ উপকরণসমূহ - সয়াবিন মিল, তিলের খৈল, বাদাম ও সরিষার খৈল ইত্যাদি। 

খ) প্রাণিজ আমিষ উপকরণসমূহ - ফিস মিল, ব্লাড মিল, প্রোটিন কনসেনট্রেট, ফিদার মিল এক বা একাধিক উপকরণ ৫%-১৫% পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

৩. খনিজ জাতীয় উপকরণ (২-৯% ভাগ) 

খাদ্য তালিকায় খনিজ উপাদান বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্য মিশ্রণের সাথে বয়স ভেদে ২-৯% ভাগ পর্যন্ত ঝিনুকের গুড়া, হাঁড়ের গুড়া, চুনাপাথরের গুড়া বা ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট যোগ করতে হয়। 

৪. লবণ 

খাদ্য সহজে হজম হওয়া ও রুচিবৃদ্ধির জন্য খাদ্য মিশ্রণের সাথে হাঁসের বয়স ভেদে বা বিভিন্ন স্তরে ০.২৫- ১% ভাগ পর্যন্ত লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৫. ভিটামিন 

খাদ্য মিশ্রণের সাথে হাঁসকে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণের অভাব পূরণের জন্য ২-৩% সবুজ শাকসবজি বা ০.২৫-০.৩% ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ ছাড়াও খাদ্য মিশ্রণের সাথে খাদ্য উপাদানবিহীন উপকরণ যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি পরিমাণমত ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, প্রতিটি খাদ্য উপকরণ ব্যবহারের সময় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রার কম বা বেশি খাদ্য যাতে ব্যবহার না হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে খাদ্য উপকরণ কম বা বেশি ব্যবহার হলে হাঁসের মধ্যে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে । সুষম খাদ্য তৈরির সময় পুষ্টির উৎস অনুসারে খাদ্য উপকরণ যোগ করার নিয়ম- 

১. শক্তির উৎসের জন্য : শস্যদানা ও এর উপজাত ৬০-৭০% ২. আমিষের জন্য : 

ক) প্রাণিজ আমিষের উৎস ৫-১৫% 

খ) উদ্ভিদ আমিষের উৎস ১৮-২২

৩. খনিজ মিশ্রণ : ২-৯%

৪. ভিটামিন : প্রিমিক্স ও ১০০ কেজি মিশ্রিত খাদ্যে ৩ কেজি পাতা জাতীয় শাকসবজি।

হাঁসের সুষম খাদ্য তৈরির ধাপ : 

১) প্রথমে ঘরের মেঝে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। 

২) যে সকল খাদ্য উপাদান অধিক পরিমাণে লাগে যেমন- ভুট্টা, গম, কুঁড়া, সয়াবিন মিল, প্রোটিন কানসেনট্রেট সেগুলো ওজন করতে হবে ও মেঝেতে ঢালতে হবে। 

৩) খাদ্য উপাদান প্রতিটি ঢালার পর হাত দিয়ে সমান করে ছড়িয়ে দিতে হবে। 

৪) পরিমাণে কম লাগে এমন উপাদান (ভিটামিন, ডিসিপি, লাইসিন, মিথিওনিন, লবণ, খনিজ মিশ্রণ) ওজন করে একসঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে। 

৫) এ মিশ্রণকে পূর্বের খাদ্য উপাদানের স্তুপের উপর সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। 

৬) এর পর হাত দিয়ে বা মেশিনের সাহায্যে ৩-৪ বার খাদ্য ভালোভাবে মেশাতে হবে। 

৭) সমস্ত মিশ্রণকে বস্তায় ভরে মজুদ করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে হবে। 

৮) এ ধরনের মিশ্রিত খাদ্যকে ম্যাশ খাদ্য বলে ।

 

সুষম খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন :

  • রেশন ফরমুলেশনের পূর্বে অবশ্যই উপকরণের পুষ্টিগত গুণাগুণ এবং ভৌত অবস্থা পরীক্ষা করতে হবে। 
  • ভেজা ছত্রাকযুক্ত, দলাপাকা এবং দূষিত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না ।
  • খাদ্যে জলীয় অংশের পরিমাণ কখনও ১২ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না । 
  • ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে এবং অপরিচ্ছন্ন স্থানে খাদ্য মিশ্রণ করা যাবে না ।
  • খাদ্য তৈরির পর অধিক সময় ধরে খাদ্য মাটিতে বা মেঝেতে ফেলে রাখা যাবে না । 
  • খাদ্য প্রস্তুতকারীকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

 

 

 

Content added || updated By