এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কবুতরের রোগ প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে। এ ছাড়া ঘরে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বাজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালাসমূহ মেনে চলতে হবে।

স্বাস্থ্যসম্মত খামার ব্যবস্থাপনা 

খামার হতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খামার ব্যবস্থাপনা বা খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বেশিরভাগ রোগই খামার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খামার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে একদিকে যেমন বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে অন্য দিকে তেমনি মানসম্পন্ন বাচ্চা উৎপাদন হবে এবং অধিক লাভবান হওয়া যাবে। স্বাস্থ্যসম্মত খামার ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়গুলো নিচে তালিকাবদ্ধ করা হলো :

১. সঠিকভাবে সেড তৈরি করতে হবে যেন পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ এবং বায়ু চলাচল করতে পারে । 

২. উপরে বর্ণিত উপায়ে সঠিক মাপে খোপ তৈরি করতে হবে । 

৩. কবুতর উঠানোর আগে খামারসহ ব্যবহার্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পর পানির সাথে কার্যকরী জীবাণুনাশক যেমন- ০.২-০.৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ কোম্পানি কর্তৃক নির্দেশ মোতাবেক মিশিয়ে খামারে সংরক্ষণ করতে হবে। 

৪. সুস্থ সবল কবুতর সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বাহ্যিক পরজীবী নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে কবুতরকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কবুতরের মুখ এ দ্রবণে ডুবানো যাবে না। হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে দিতে হবে। অন্তঃপরজীবী প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাতে হবে।

৫. জীবাণুমুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। বিশেষ করে খাবার যাতে কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত না হয়। অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত খাবারের মাধ্যমে অ্যাসপারজিলোসিস ও বিষক্রিয়াসহ জটিল রোগ হতে পারে। 

৬. কবুতরের খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানির পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য সুপারসেপ্ট অথবা হেলামাইড ব্যবহার করা যেতে পারে । 

৭. খামারে মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিবার খামারে প্রবেশ করার পূর্বে এবং খামার থেকে বের হওয়ার সময় হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 

৮. খামারে যাতে বন্যপাখি ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণি প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কেননা বন্যপ্রাণি ও ইঁদুর দ্বারা রাণীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা ও সালমোনেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ রোগ খামারে আসতে পারে। 

৯. শেড এবং খোপ নিয়মিত পরিষ্কার করে খামারের ভেতরের পরিবেশ অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে। 

১০. কোনো কবুতর অসুস্থ হলে দ্রুত আলাদা করে ফেলতে হবে। অসুস্থ বা মৃত কবুতর অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে কারণ জেনে অন্যান্য জীবিত কবুতরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে । 

১১. খামারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মোকাবিলা করতে হবে।

টিকা প্রদান 

খামারে রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবুতরের প্রজননকালীন সময়ে প্যারেন্ট কবুতরগুলোকে রাণীক্ষেত রোগের ইনএকটিভেটেড (মৃত টিকা) প্রয়োগ করা উত্তম। টিকা প্রয়োগের কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পর বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করতে হবে। তবে বাচ্চা কবুতর উড়তে শেখার সাথে সাথেও টিকা প্রয়োগ করা যায়। জীবিত বা ইনএকটিভেটেড (মৃত) উভয় টিকাই প্রয়োগ করা যায়। জীবিত টিকা চোখে এবং মৃত টিকা চামড়ার নিচে বা মাংস পেশিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম টিকা (জীবিত) প্রয়োগের কমপক্ষে ১৫ দিন পর দ্বিতীয় টিকা বা বুস্টার ডোজ দিতে হবে।

 

 

Content added By