এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

কোয়েলের বিভিন্ন রোগব্যাধি

কোয়েলের রোগ নেই বললেই চলে। তবে সংক্রামক ব্রংকাইটিস ককসিডিওসিস এবং সালমোনেলোসিস রোগ হতে পারে। বাচ্চা ফোটার ১ম দুই সপ্তাহ বয়স বেশ সংকটপূর্ণ। এ সময় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কোয়েলের বাচ্চার যত্ন নিতে হয়। অব্যবস্থাপনার কারণে কোয়েলের বাচ্চা মারা যায় তবে বয়স্ক কোয়েলের মৃত্যুহার খুবই কম।

কোয়েলের বিভিন্ন রোগের কারণ, বিস্তার, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিকার আলোচনা করা হল :

কোয়েলের সংক্রামক ব্রংকাইটিস রোগ 

এটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে মোরগ-মুরগি ও কোয়েলের এ রোগ হয়ে থাকে ৷ বাচ্চা কোয়েলে এ রোগটি বেশি হয় এবং তীব্রভাবে হতে পারে ।

রোগ বিস্তার: 

আক্রান্ত পাখির শ্লেষা এবং মলের সাহায্যে রোগজীবাণু বিস্তার লাভ করে।

রোগ লক্ষণ: 

১. রোগ জীবাণু শ্বাসনালীর অভ্যন্তরে আক্রমণ করে বিধায় শ্বাসনালী শোঁ শোঁ শব্দ এবং মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। 

২. ডিম দেয়া কোয়েলের ডিম দেয়া কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। 

৩. নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা 

কোয়েলের সংক্রামক ব্রংকাইটিস রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তবে নটিল ১ সি সি ২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

 

কোয়েলের ককসিডিওসিস রোগ 

কোয়েলের ককসিডিওসিস একটি মারাত্মক রোগ। বিশ্বে প্রায় সবদেশেই পাখিতেই এ রোগ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। সব বয়সেই কোয়েলের এই রোগ হতে পারে। ককসিডিয়া নামক প্রটোজোয়া যারা সৃষ্ট রোগসমূহকে ককসিডিওসিস বলে।

রোগের বিস্তারঃ 

১. খাদ্য ও পানির মাধ্যমে জীবাণুর সিস্ট কোরেলের দেহে প্রবেশ করে। 

২. খামারে কর্মরত কর্মীদের পোশাক, জুতা, হাত, পায়ের মাধ্যমে বাইর থেকে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। 

৩. ইঁদুর, তেলাপোকা, বাইরের হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য প্রাণীর সংস্পর্শ থেকেও এ রোগ দেখা দিতে পারে।

 

রোগের লক্ষণ : 

১. রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা দেখা দেয়।

২. হঠাৎ করে খাদ্য এবং পানি খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ঝাঁক থেকে পৃথক হয়ে ঝিমানো শুরু করে। 

৩. ধীরে ধীরে পালক ছেড়ে দেয়, দুর্বল হয়ে পড়ে। 

৪. ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, উৎপাদন কমে যায় ৷

চিকিৎসা: 

সালফার জাতীয় ঔষধের ব্যবহার করে চিকিৎসা করা যেতে পারে। ই.এস.বি ১ গ্রাম ১০ লিটার পানির সাথে বা সুপার কক ১ সিসি ১০ লিটার বিরুদ্ধ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে ৫-৭ দিন দিনে দুবার করে ।

প্রতিকার: 

১. বাচ্চা কোয়েলকে সবসময় বয়স্ক কোয়েল থেকে আলাদা রাখতে হবে। 

২. খাবার পাত্র, পানির পাত্র নিয়মিত পরম পানি বা জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। 

৩. খাবারের আশে পাশে যাতে ইঁদুর, পোকামাকড় বাস না করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। 

৪. প্রতিকার হিসেবে প্রথম বয়সেই ঔষধের প্রতিষেধক মাত্রা নিয়মিত প্রয়োগ করতে হবে। 

৫. খামারে রোগ দেখা দিলে, অসুস্থ বাচ্চা আলাদা করে ফেলতে হবে। 

৬. খামার পরিচর্যাকারীকে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে খামারে প্রবেশ করতে হবে। 

৭. লিটার শুকনা রাখতে হবে।

 

কোয়েলের সালমোনেলোসিস রোগ 

কোরেলের সালমোনেলোসিস রোগের কারণ : সালমোনেলা গোত্রভুক্ত ব্যাকটেরিয়া এ রোগের কারণ।

রোগ বিস্তার: 

আক্রান্ত পাখির ডিমের মাধ্যমে এবং খাবার পানি, খামারে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, কর্তব্যরত শ্রমিক ও আগমনকারি অন্যান্য লোকজন, খাদ্য সরবরাহের গাড়ি, বন্যপ্রাণি ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।

লক্ষণ፡ 

১. হলুদ বা সবুজ রঙের আঠালো পাতলা পায়খানা করে। 

২. চোখ বুজে ঝিমাতে ।

৩. পা এবং পারের পিড়া ফুলে যায় ও ব্যথা হয়।

প্রতিকার: 

সালমোনেলা ভ্যাকসিন দেয়া যেতে পারে। আক্রান্ত গুলোকে সুপারমেড টি এস-১, ১ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়ালে বা ক্ষণেকুইন ১০% ১ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

 

কোয়েল খামারে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা 

১. কোয়েলকে কোনো রকম প্রতিষেধক টিকা দেয়ার প্রয়োজন নেই। 

২. মাঝে মাঝে সালমোনেলোসিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন হয়। 

৩. বিভিন্ন বয়সের কোরেল আলাদা রাখতে হবে। 

৪. খামার পরিদর্শক নিয়ন্ত্রিত হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে খামারে প্রবেশের অনুমতি পাবে। 

৫. অন্য কোনো পাখি বা প্রাণির কোয়েল ঘরে প্রবেশ নিষেধ করতে হবে। 

৬. অসুস্থ পাখিকে সুস্থগুলো থেকে আলাদা রাখতে হবে। 

৭. মৃত পাখি পুড়িয়ে অথবা মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। 

৮. কোয়েলের ঘরের ভেতর এবং বাইরে রোগ প্রতিরোধক ঔষধ (সুপারসেন্ট, হোমাইড) দ্বারা স্প্রে করতে হবে।

 

 

 

Content added By