এসএসসি(ভোকেশনাল) - জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস-২ - জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস-২ | NCTB BOOK

পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তার সবই কোনো না কোনোভাবে আসে সূর্য থেকে। সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে উদ্ভাবন করা হয়েছে সৌরকোষ বা সোলার দেন। সোলার সেল দুই ধরনের অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক। সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে গাছের সবুজ পাতায় যে প্রক্রিয়া খাদ্য উৎপাদিত হয়, সৌরকোষের কার্যক্রম অনেকটা ভার মতোই। সৌর কোষে থাকে সূর্যালোক থেকে শক্তি সংগ্রাহক (Light Harvesting) অণু বা উপাংশ। সোলার প্যানেল ফটোভোল্টায়িক এনার্জি কনভার্সন পদ্ধতিতে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে সৌরশক্তি সরাসরি সোলার সেলের মাধ্যমে একমুখী বৈদ্যুতিক প্ৰবাৰ (Direct Electric Current, DC current) উৎপন্ন করে। সোলার সেল হিসেবে p-টাইপ এবং এ-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টালের জাংশন ব্যবহার করা হয়। সিলিকন এক ধরনের অর্ধপরিবাহী (Semiconductor) পদার্থ যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় আধানের বাহক হিসেবে কাজ করে ইলেকট্রন ও হোল (ইলেকট্রনের শূন্যতা)। p-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টালে হোল (Hole) এবং n-টাইপ ক্রিস্টালে ইলেকট্রনের আধিক্য থাকে।

চিত্র-৩.১ বিদ্যুৎ উৎপন্ন পদ্ধতি

পি-এন (p-1) জাংশন এলাকায় অর্থাৎ p-টাইপ এবং n-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টাল যেখানে মিলিত হয়, সেই জায়গায় ইলেকট্রন হোলের সাথে মিলিত হয়ে বাহুক শূন্য অবস্থার সৃষ্টি করে। একারণে পি-এন (p-1) জাংশন বরাবর রোধ অনেক বেশি হয়। পি-এন (p-1) আংশনের একপাশে নেগেটিভ চার্জ এবং অপরপাশে পজিটিভ চার্জের ঘনত্ব বেশি থাকায় জাংশন বরাবর একটি বিভব ঢালের (Potential gradient) সৃষ্টি হয়। পি-এন (p-1) জাংশনের উপর আলো পড়লে আলোক শক্তি ইলেকট্রন ও হোলকে (p-1) জাংশনের বিভব চালের বিপরীতে স্থানান্তর ঘটায়। এই প্রক্রিয়ায় কিছু কাজ সম্পন্ন হয় যা বিদ্যুৎ শক্তি হিসেবে সঞ্চিত হয়। সঞ্চিত বিদ্যুৎ শক্তির পরিমাণ আলোর তীব্রতা ও আলোকিত ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। সৌরকোষ বা সোলার সেলের সাহায্যে দিনের বেলা সঞ্চয়ক কোষ বা সেকেন্ডারি সেল চার্জ করে রাখা হয় এবং রাতে ব্যবহার করা হয়। এক বর্গ সেন্টিমিটার সোলার সেল থেকে সর্বোচ্চ ২০-৪০ মিলি অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট পাওয়া যায়। প্রতিটি সোলার সেলে ০.৫ ভোল্ট থেকে ১০ ভোল্ট ডিসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ সোলার সেলে উপাদান ও সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে। একাধিক সোলার সেল প্রয়োজনমতো সিরিজ বা প্যারালাল সংযোগ করে ভোল্টেজ ও কারেন্ট বাড়ানো যায়।

৩.১.১ সৌরশক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের দেশ সৌরশক্তি ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানে প্রায় সারা বছরই সূর্যের আলো পাওয়া যায়। এছাড়া সোলার সেলে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সহজে স্থাপন করা যায় এবং এগুলোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ ও খরচ কম। সোলার সেল ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ হয় না এবং দুর্ঘটনা ঘটে না। এসব কারণে আমাদের মত জনবহুল দেশে সোলার সেল ব্যবহারের প্রচলন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমাদের প্রাকৃতিক শক্তির উৎস খুবই সীমিত। সুতরাং সম্ভাব্য সবক্ষেত্রে সোলার প্যানেল ব্যবহার করলে জাতীয় সম্পদের উপর চাপ কমবে। সোলার ওভেন ব্যবহার করে সহজেই রান্নার কাজ করা যায়। অন্যান্য গৃহস্থালী কাজেও সোলার সেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো দরকার।

৩.১.২ সোলার প্যানেল সিস্টেমের প্রধান প্রধান অংশ

সোলার প্যানেল সিস্টেমের প্রধান অংশগুলো নিম্নরুপ :

(ক) সোলার প্যানেল (Solar panel )

(খ) ব্যাটারি (Battery)

(গ) ইনভার্টার (Inverter)

(ঘ) চার্জ নিয়ন্ত্রক (Charge controller)

(ঙ) বৈদ্যুতিক লোড (Electric load)

(ক) সোলার প্যানেল (Solar panel ) 

চিত্র-৩.২ সোলার প্যানেল

সোলার প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সোলার সেল। মূলত সৌর শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরের মূল উপাদান সোলার সেল নামে পরিচিত। আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে সোলার সেল তৈরি করা হয়। সোলার সেল বা সোলার প্যানেলের বৈশিষ্ট্য হলো এর উপর সূর্যের আলো পড়লে সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া যায় । সোলার সেলে ডিসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বাজারে বিভিন্ন সাইজের সোলার প্যানেল পাওয়া যায়। একাধিক সৌর প্যানেলকে বৈদ্যুতিক ভাবে সংযোগ করে একটি কাঠামোর উপর স্থাপন করলে সামগ্রিক ব্যবস্থাকে সৌর প্যানেল বলে। একটি সৌর প্যানেল হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মান নির্ভর করে উক্ত প্যানেলের সোলার কোষের আয়তন ও সংখ্যার উপর। সাধারণত সৌর প্যানেলে ৩৬ টি সৌর কোষ সিরিজে যুক্ত থাকে। প্রতিটি সৌর কোষে ০.৫৬ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। একটি সৌর প্যানেলের ৩৬ টি ০.৫৬ ভোল্ট যোগ করলে উৎপন্ন বৈদ্যুতিক ভোল্টেজের পরিমাণ হয় ১৯ থেকে ২১ ভোল্ট । অন্য দিকে কারেন্ট এর মান নির্ভর করে সৌর কোষগুলোর আয়তনের উপর। দুই ধরনের প্যানেল রয়েছে 

(ক) সৌর-তাপ প্যানেল ও 

(খ) ফটো ভোল্টাইক বা পিভি প্যানেল।

(খ) ব্যাটারি (Battery)

সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সৌর শক্তিকে সুবিধাজনক অন্য কোনো শক্তিরুপে সজ্জিত করে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা যায়। এ কাজে সচরাচর লেড এসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারীতে কতকগুলো ইলেকট্রো কেমিক্যাল সেল বা কোষ থাকে যার একটির সাথে অন্যটি সিরিজে বা প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারির সেল হলো ব্যাটারির মূল উপাদান। ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে সস্তি রাখা হয়। বিশেষ ব্যবস্থার রাসায়নিক শক্তিকে আবার বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। সফর বাড়ানোর জন্য ব্যাটারি ব্যাংক ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারি ব্যাংক হলো অনেকগুলো ব্যাটারির সমষ্টি। এই ব্যাটারিগুলো সিরিজ প্যারালালে সংযোগ করা যায়। ভোল্টেজ বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে সিরিজে সংযোগ দিতে হয় এবং কারেন্ট বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে প্যারালালে সংযোগ দিতে হয়।

চিত্র-৩৩ ব্যাটারি ব্যাংক

(গ) ইনভার্টার (Inverter)

সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সাধারণত ভিসি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই বিদ্যুৎ শক্তি দিয়ে চার্জ কন্ট্রোলারের মাধ্যমে ব্যাটারি ব্যাংকে রাসায়নিক শক্তি সঞ্চয় করা হয়। আমরা বসত-বাড়িতে সাধারণত এসি লোড ব্যবহার করি। একারণে ডিসি কারেন্টকে এসিতে কনভার্ট করতে হয়। ইনভার্টারের সাহায্যে ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত (Convert) করা হয়। ৩.৪ ও ৩.৫ নং চিত্রে ইনভার্টার দেখানো হয়েছে।

চিত্র-৩.৫ ইনভার্টার

(ঘ) চার্জ নিয়ন্ত্রক (Charge controller) 

চার্জ নিয়ন্ত্রক ব্যাটারিতে জমাকৃত বিদ্যুৎ এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যাটারির জীবনকাল সংরক্ষণ করে। এটি শক্তি রূপান্তরের প্রধান ইউনিট হিসেবে কাজ করে। চার্জ কন্ট্রোলার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ব্যাটারীকে অতিরিক্ত চার্জ এবং ডিসচার্জ হওয়া থেকে রক্ষা করে। চার্জ নিয়ন্ত্রক সার্কিটকে ব্যাটারী এবং প্যানেলের সঙ্গে প্যারালালে সংযোগ করা হয়। এছাড়াও চার্জ কন্ট্রোলার শর্ট সার্কিট হওয়া থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করে। সোলার হোম সিস্টেমকে মনিটরিং করার জন্যও চার্জ কন্ট্রোলার এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

চিত্র-৩.৬ সোলার চার্জ নিয়ন্ত্রক (Solar Charge Controller)

(ঙ) বৈদ্যুতিক লোড (Electric Load )

বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী যেমন টিভি, বাতি, ফ্যান, কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যালকুলেটর, সেচযন্ত্র ইত্যাদি চালনার জন্য উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক কোনো ডিভাইসকে ব্যাটারির বা পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে যুক্ত করলে যন্ত্রটির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এগুলোকে লোডবলে। অর্থাৎ যা ব্যাটারি বা অন্য কোনো উৎস থেকে বিদ্যুৎ শক্তি খরচ করে তাকে লোড বলে। লোড সাধারণত দুই প্রকার: এসি লোড ও ডিসি লোড। আবার লোডের ধরনের উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক লোডকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

১। রেজিস্টিভ লোড (Resistive load): যেমন বাতির ফিলামেন্ট একটি ডিসি লোড কারণ ইহা বিশুদ্ধ রেজিস্টিভ লোড (ইহাতে কোন ইন্ডাকটিভ রিয়াকট্যান্স বা ক্যাপাসিটিভ রিয়াকট্যান্স নাই)। এছাড়াও স্থির রেজিস্ট্যান্স, পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স, সোল্ডারিং আয়রন, থার্মাল ওভার লোড রিলে ইত্যাদি রেজিস্টিভ লোড। 

২। ইন্ডাকটিভ লোড (Inductive load): সার্কিটে বিশুদ্ধ ইন্ডাক্টর সংযুক্ত থাকলে ইন্ডাকটিভ রিয়াকট্যান্সের কারণে এসি বা পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ প্রবাহে বাঁধার বা রোধের সম্মুখীন হয়, কিন্তু ডিসি বা স্থির মানের কারেন্টের জন্য এই রোধের পরিমাণ শূন্য। এসব ক্ষেত্রে লোডের মান ব্যবহৃত এসি কারেন্ট এর কম্পাংকের সমানুপাতিক (X1=2rfL)। এসি লোড সৃষ্টি করে এমন কয়েকটি বস্তু হলো চোক কয়েল, ফ্যান, মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।

৩। ক্যাপাসিটিভ লোড (Capacitive Lond) : ক্যাপাসিটর বা কনডেলার, ক্যাপাসিটর ব্যাংক, সিনক্রোনাস মোটর ও ফেইজ অ্যাডভানসার ইত্যাদি।

ডিক্স-৩.৮ বৈদ্যুতিক লোড 
Content added || updated By