এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

শতাব্দীকাল থেকেই আমাদের দেশের চিংড়ি প্রাকৃতিক পরিবেশে লালিত-পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চিংড়ি সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম হলেও অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ সম্পদের গুরুত্ব আজ নানা প্রশ্নের সম্মুখীন। উপকূলীয় এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর এক উল্লেখযোগ্য অংশ বছরের প্রায় ৬ থেকে ৮ মাস বাগদা চিংড়ির পোনা ধরার কাজে নিয়োজিত। এক গবেষণায় দেখা যায়, সুন্দরবন অঞ্চলের কৃষক পরিবারের ৭০-৭৫ শতাংশ সদস্য পোনা ধরার মৌসুমে পোনা ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কাজেই বলা যায়, পোনা সংগ্রহের ফলে দুস্থ বিধবা মহিলারা অনেকাংশেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ থেকে এই অতিরিক্ত আয়ের ফলে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থায় কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা দেখা দিয়েছে।

উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি চাষ, ধান চাষ ও লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভূমির ব্যবহার নিয়ে গ্রামীণ জনপদে অনেক সময় সামাজিক কলহ-বিবাদের সৃষ্টি হয়। চিংড়ি চাষ অত্যন্ত লাভজনক বিধায় চিংড়ি বড় করার জন্য চিংড়ি চাষিরা খামারের লোনা পানি ধান চাষকালীন সময়েও আটকিয়ে রাখে ফলে ক্রমান্বয়ে চিংড়ি চাষের জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ধানের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, এমনকি ধান চাষিদের আমন বীজতলাও নষ্ট হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দরিদ্র বর্গাচাষি ও প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা অঞ্চলে একই জমিতে ধান ও চিংড়ি চাষ এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে একই জমিতে লবণ ও চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। কক্সবাজার অঞ্চলে পানির লবণাক্ততা অধিক বিধায় ধান চাষ সুবিধাজনক নয়। এসব জমিতে নভেম্বর-এপ্রিল মাসে লবণ উৎপাদিত হয়।

চিংড়ি চাষের জমিতে আপাত দৃষ্টিতে ধানের উৎপাদন কিছুটা কমে গেলেও চিংড়ি চাষই উৎপাদন হ্রাসের একমাত্র কারণ নয়। বরং চিংড়ি চাষিদের ধান চাষের জন্য দেরিতে জমি ছেড়ে দেয়া, দেরিতে ধানের বীজ রোপন করা কিংবা আগাম ধান কেটে নেয়া প্রভৃতি কারণে ধানের স্বাভবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

Content added By