এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

চিংড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পুকুরের তলদেশের গভীর কাদার স্তর চিংড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ। চিংড়ি চাষ পদ্ধতি অধিক সম্পূরক খাদ্য নির্ভর হওয়ার কারণে পুকুরের তলদেশে গভীর কাদার সৃষ্টি হয়। এ কারণে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রতি বছর ফসল আহরণের পরপরই বা পুনরায় চিংড়ির পোনা মজুদের পূর্বেই পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হয়। চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অধিক সার, খাদ্যে বর্জ্য পদার্থ ও প্ল্যাংকটন উৎপাদন সমৃদ্ধ পুকুর ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে ভাল নয়। কেননা এ ধরনের পুকুরের তলদেশে বর্জ্য পদার্থ অধঃক্ষেপনের মাধ্যমে অবায়বীয় গভীর পাঁকের সৃষ্টি হয়। অধিক অবায়বীয় জৈব্য পদার্থ সমৃদ্ধ পুকুর চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধির ও উৎপাদনের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও এধরনের অধঃক্ষেপনকৃত পদার্থের কারণে চিংড়ি ও অন্যান্য জীবভরের মৃত্যু ও বিলুপ্তি হতে পারে বা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। এ কারণেই চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রথমেই পুকুরের মাটির প্রকৃতি, পূর্ববর্তী বছরের উৎপাদনে পরিবেশগত বাধাসমূহ নির্ণয় করে পুকুর প্রস্তুতির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। নিচে পুকুর প্রস্তুতির ধাপসমূহ উল্লেখ করা হলো-

ক. পুকুরের পানি বের করে ফেলা: চিংড়ি ও মাছ আহরণের পর পুকুরের পানি সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয়াই উত্তম। এ সময় পুকুরের তলদেশ, ঢাল ও নালার অবস্থা, ব্লুইস গেট প্রভৃতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পুকুর প্রস্তুতির কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়, যাতে পুকুরের ভৌত অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হয়। পুকুরের তলদেশের কালো মাটি পুকুর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রধান বাধাস্বরূপ। চিংড়ি আহরণের পরপরই প্রেসার পাইপের মাধ্যমে তীব্র স্রোতে বা বেগে পানি বার বার প্রবেশ ও বের করার মাধ্যমে কালো মাটি অপসারণ করা যেতে পারে। এ কাজটি পুকুরের পানি বের করে দেয়ার সাথে সাথে করতে হবে। যাতে পুকুরের মাটি সূর্যালোকে শক্ত হয়ে যেতে না পারে। বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কাজটি করলে বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে পিএল মজুদ করা সম্ভবপর হয় এবং এপ্রিল-মে মাসে ভাইরাসের সংক্রমণের পূর্বেই ফসল আহরণ করা সম্ভবপর হবে।

চিত্র-২.৪: চিংড়ি খামারের পানি অপসারণ

খ. পুকুর শুকানোঃ পুকুরে জলস্রোত দিয়ে বা প্রম নির্ভর পদ্ধতিতে পুকুরের তলদেশের বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে ফেলার পর ১০-১৫ দিন সূর্যালোকে পুকুর এমনভাবে শুকাতে হয়, যাতে পুকুরের তলদেশের মাটিতে ২৫-৩০ সেমি গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয়। পুকুরের তলদেশের গভীর অঞ্চল শুকানোর ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন পাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিতে হবে-

  • পুকুরের তলার মাটি এমনভাবে শুকাতে হবে যেন মাটিতে ফাটল ধরে এবং কোথাও ভেজা ভেজা বা জলীয় উপাদান না থাকে।
  • শুকানোর পর দৃশ্যমান আবর্জনা দূর করতে হবে, ফলে তলার মাটি পরিষ্কার হবে জীবাণু মারা যাবে।
  •  মাটি শুকানোর পর অতিরিক্ত কাঁদা, স্তূপীকৃত জৈব পদার্থ, দুপ যুক্ত কালো মাটি ঘের থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত।
  •  পুকুর/ঘের এর তলা ভালো ভাবে সমতল করে নিতে হয় এবং পানি নিগর্মণ পথের দিকে কিছুটা ঢালু রাখতে হবে।
  •  অধিক উৎপাদন পেতে হলে পুকুর/ষের খামার ভালোভাবে শুকাতেই হবে।

চিত্র-২.৫: চিংড়ি নামারের তলদেশ শুকানো ও সমতলকরণ

তাছাড়া পুকুরের ভিতরের অংশ থেকে মাটি কেটে পুকুরের চারপার্শ্বে শক্ত মজবুত, প্রশস্থ ও দৃঢ়ভাবে পাড় তৈরি করতে হবে। চারিপার্শ্বের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতার চেয়ে প্রধান বাঁধের উচ্চতা কমপক্ষে ৩ ফুট বেশি করতে হবে।

গ. ভনদেশের মাটি চাষ পুকুরের মাটি শুকানোর পর ১০-১৫ সেমি গভীর তলদেশের মাটি লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে ৩-৫ বার চাষ করতে হয়। এক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ সমৃদ্ধ স্থানসমূহ অধিক গভীর করে চাষ দেয়ার প্রয়োজন হয়। সাধরণত চাষের গভীরতা পুকুরের তলদেশের চাষের ক্ষেত্রে ট্রাক্টর, দেশীয় প্রচলিত পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

ঘ. পাড় মেরামত ও বেড়া দেয়া: মের প্রস্তুত করার পূর্বেই পাড় মেরামত করা প্রয়োজন। পাড়ে কোন গর্ভ থাকলে তা বন্ধ করে ফেলতে হবে। পাড় ভালা থাকলে তা মাটি দিয়ে ভালভাবে মেরামত করে নিতে হবে। সম্ভব হলে পাড়ে ঘাস লাগানো যেতে পারে। পাড়ের গর্ভ বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া পুকুরের চারদিকে বেড়া দিতে হবে, যাতে কাঁকড়া, সাপ, ব্যাঙ, কুঁচে, শামুক এবং জীবাণুবাহক অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে। এর ফলে খামারের জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

পুকুরের পাড় মেরামত                                     পুকুরের চারপাশে বেড়া দেয়া

চিত্র-২.৬: পুকুরের পাড় মেরামত ও বেড়া দেয়া 

Content added By