এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

চুন হলো ক্যালসিয়ামযুক্ত অজৈব যৌগ যা অম্লত্ব হ্রাস বা প্রশমনে, প্রাণীর দৈহিক কাঠামো গঠন ও রোগজীবাণু ধ্বংস করতে সহায়তা করে। চুনের মধ্যে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়ামের ঋনাত্বক আরন থাকে বা পানির অম্লত্বকে নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে।

চুন প্রয়োগের উপকারিতা: পুকুরে চুন প্রয়োগ করলে একসঙ্গে অনেকগুলো উপকার পাওয়া যায়। এর প্রধান প্রধান গুণাবলি নিচে উল্লেখ করা হলো:

ক) চুন চিংড়ি চাষের পরিবেশ অর্থাৎ মাটি ও পানির অম্লত্ব ও ক্ষারত্বকে নিরপেক্ষ করে। পানির পিএইচ চিংড়ি চাষের অনুকূলে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পানির পিএইচ ৭.৫-৮.৫ এর মধ্যে থাকলে সেই পুকুরের চিংড়ির বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হয়। 

খ) চুন প্রয়োগের ফলে পুকুরের মাটি থেকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকারক উপাদানসমূহ তথা খনিজ পদার্থ (যা পানির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক) অতি সহজেই মুক্ত হয়ে পানিতে মিশে। ফলে পুকুরের স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায়, যা চিংড়ির প্রাকৃতিক খাবার তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

গ) চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর, এমন ধরনের রোগ বিস্তারের উৎস, রোগজীবাণু ও রোগজীবাণু পরিবাহক পরজীবীসমূহকে চুন ধ্বংস করে তথা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।

ঘ) চুন পানিতে বিদ্যমান অতিরিক্ত জৈবকণা ও কাদাকে অধঃক্ষেপ না করে পানিকে পরিষ্কার রাখতে তথা দূর করতে সহায়তা করে। পুকুরে পর্যাপ্ত আলোর অনুপ্রবেশ নিশ্চিত হয়, ফলে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়।

ঙ) চুন পুকুরের তলদেশে সঞ্চিত দূষিত গ্যাসসমূহ দূর করে।

চ) চুনের ক্যালসিয়াম চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধিতে বিশেষ করে প্রজননকালে ভ্রুণের বর্ধনে ও খোলস গঠনে সহায়তা করে।

ছ) চুন পানিতে প্রয়োগকৃত সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। পানির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তথা পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য ফাইটোপ্লাংকটন ও জুপ্লাংকটন তৈরি করে পানির বর্ণ সবুজ করতে সহায়তা করে।

জ) চুন প্রয়োগের ফলে জৈব পদার্থসমূহ ভেঙে গিয়ে মাটি ও পানির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

ঝ) প্রয়োজনীয় উপকারী জীবাণুর বংশ বৃদ্ধিতে জৈব পদার্থসমূহের সুষ্ঠু পচনের জন্য চুন সহায়তা করে।

ঞ) সালোকসংশ্লেষণের জন্য পর্যাপ্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরির মাধ্যমে চুন পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতার মাত্রা কমিয়ে আনে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধির মাধ্যমে চুন পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

ট) চুন প্রয়োগের ফলে জৈব পদার্থের পচন ক্রিয়া দ্রুত হয় এবং পুকুরের তলদেশ থেকে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস বের করে দেয়। ফলশ্রুতিতে পুকুরের তলার মাটি নিরপেক্ষ হয়।

ঠ) চুন পুকুরের পানিতে বিদ্যমান অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আয়নের ক্ষতিকর প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় এবং এদের বিষক্রিয়া নষ্ট করে দেয়। এর ফলে পুকুরের স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। 

ড) চুন প্লাংকটনের বৃদ্ধির জন্য কাদায় আবদ্ধ ফসফরাসকে মুক্ত করে দেয়।

ঢ) চুন মাটি ও পানির মধ্যে সালফিউরিক অ্যাসিডের মত অত্যন্ত ক্ষতিকারক পদার্থের স্থায়ী বন্ধ হওয়াকে প্রতিরোধ করে। 

ণ) চুন বাফার (কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর সংরক্ষণাগার) হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ চুন এর বাফারিং প্রক্রিয়ায় পুকুরের পানির কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর সাথে মিশে ক্যালসিয়াম বাইকার্বোনেট তৈরি করে এবং এই ক্যালসিয়াম বাইকার্বোনেট বাফার হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও বাইকার্বোনেট পুকুরের পিএইচকে স্থির অবস্থায় রাখতে সহায়তা করে। 

চুনের প্রকারভেদ: বাজারে বিভিন্ন ধরনের চুন পাওয়া যায়, যেমন- পাথুরে চুন, পোড়া চুন, কলিচুন ইত্যাদি। এছাড়াও শামুক ও ঝিনুকের খোলস পুড়িয়ে এক ধরনের চুন পাওয়া যায়। তবে এগুলো চিংড়ি চাষের পুকুরে ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায় না। নিচের সারণিতে চুনের প্রকারভেদ ও উৎস উল্লেখ করা হলো: 

সারণি: চুনের প্রকারভেদ ও উৎস 

ক্রম 

চুনের নাম

উৎস

০১পাথুরে চুন খনিতে প্রাপ্ত, বাজারে পাওয়া যায় না
০২পোড়া চুনখনিতে প্রাপ্ত, পোড়ানোর পর বাজার পাওয়া যায়
০৩কলি চুনপোড়া চুন আর্দ্রতাযুক্ত হয়ে বা পানিতে গোলানোর পর প্রাপ্ত চুন
০৪ডলোমাইট প্রক্রিয়াজাতকৃত যৌগ চুন
০৫ জিপসামপ্রক্রিয়াজাতকৃত যৌগ চুন

প্রয়োগ মাত্রা: পুকুরের তলদেশের মাটির প্রকারভেদ, পুকুরের বয়স, পানির পিএইচ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের ওপর চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ভর করে। কাদা মাটি, এঁটেল মাটি ও লাল মাটির পুকুরে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে একটু বেশি চুন প্রয়োজন হয়। পুকুর দীর্ঘদিন আগাছা ও পচা আবর্জনায় পূর্ণ থাকলে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে চুন বেশি দরকার হয়। সাধারণত শতাংশ প্রতি এক কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হয়। পোড়া চুনের ক্ষমতা পাথুরে চুনের দ্বিগুণ এবং কলিচুনের ক্ষমতা পাথুরে চুনের দেড় গুণ। নিচে পিএইচ এর ওপর ভিত্তি করে চুন প্রয়োগের মাত্রা দেয়া হলো

পিএইচ মান

৩-৫ এর মধ্যে

৫-৬ এর মধ্যে

৬-৭ এর মধ্যে

পোড়া চুনের পরিমাণ

৬ কেজি/শতাংশ

৪ কেজি/শতাংশ

১-২ কেজি/শতাংশ

প্রয়োগ পদ্ধতি: পুকুর তৈরির সময় প্রয়োজনীয় চুন একটি মাটির চাড়ি বা গামলার মধ্যে কমপক্ষে ১২-২৪ ঘন্টা আগে গুলে নিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় চুন পাড়সহ সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন ব্যবহারের সময়কাল হলো চাষ দেয়ার ২-৩ দিন পর অথবা বিষ প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর 

   শুকনো ঘেরে চুন প্রয়োগ                            পানি ভর্তি ঘেরে চুন প্রয়োগ

চিত্র-২.১২: পুকুরে চুন প্রয়োগ

 

সতর্কতা 

  • পোড়া চুন এবং কলি চুন অত্যন্ত ক্ষারীর তাই এটি ব্যবহারে পিএইচ দ্রুত বেড়ে যায়, এজন্য পুকুর শুকানো অবস্থায় তা ব্যবহার করা নিরাপদ।
  • চুন ব্যবহারের সময় নাক ও মুখ গামছা দিয়ে বেধে নিতে হবে।
  • বাতাসের অনুকূলে চুন ছিটাতে হবে।
  • চুল গুলানোর সময় তাপ সৃষ্টি হয় সেজন্য প্লাস্টিকের বালতিতে চুল গুলানো যাবে না।
  • চুন শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
  • ব্যবহারের পর পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।


 

পিএইচ (pH) 

পিএইচ হচ্ছে কোনো দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্বের ঋণাত্মক লগারিদম। সহজ ভাষায় পিএইচ হচ্ছে কোনো বস্তুর অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের পরিমাপক। পানির পিএইচ বলতে পানির অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের অবস্থা বুঝায়। পিএইচ ০ থেকে ১৪ পর্যন্ত বিস্তৃত। পানির পিএইচ যদি ০-৭ এর মধ্যে থাকে তবে তা অগ্নীয়। এই অম্লীয় পানিতে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বেশি থাকে। আবার পিএইচ যদি ৭-১৪ এর মধ্যে থাকে তবে ভা ক্ষারীয়। এই ক্ষারীয় পানিতে অক্সাইড জায়নের পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু বিশুদ্ধ পানিতে উপরোক্ত উভয় আয়নের পরিমাপ সমান সমান থাকার ফলে পানির গুণাগুণ নিরপেক্ষ বা প্রশম হয়। অর্থাৎ পিএইচ যদি থাকে তবে ভাদ্বারা নিরপেক্ষ মান নির্দেশিত হয়।

চিংড়ি চাষে পিএইচ-এর প্রভাব: চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনার সাথে পিএইচ মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত চিংড়ি চাষের জন্য মৃদু ক্ষারীয় পানি অর্থাৎ পানির পিএইচ ৭.৫-৮.৫ এর মাঝে হলে সবচেয়ে ভালো। পানির পিএইচ ৪ এর নিচে নেমে গেলে অর্থাৎ পানি খুব বেশি অম্লীয় হয় তাহলে চিংড়ি বাঁচতে পারে না। কারণ তখন পানিতে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার পানি যদি খুব বেশি ক্ষারীয় হয় অর্থাৎ পিএইচ মান ৯.৫ এর বেশি হয় তাহলে চিংড়ি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। কারণ এই অবস্থায় পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকে না। শুধু তাই নয় এই অবস্থায় পানিতে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই দুটো অবস্থাই চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর। পিএইচ মান ১১ এর উপরে গেলে চিংড়ি মারা যায়। চিংড়ি চাষে ভালো ফল পেতে হলে মাছ চাষিকে অবশ্যই পুকুরের পানির পিএইচ মান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পিএইচ মান কাঙ্ক্ষিত মানের চেয়ে কম বেশি হলে সম্ভাব্য কারণসমূহ জেনে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। অম্লীয় ও ক্ষারীয় পানির উৎস ও তার প্রভাব নিচে আলোচনা করা হলো:

অম্লীয় পানির উৎসসমূহ হলো-

ক) মাটিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে বা জৈব পদার্থ বেশি হলে পানিতে অম্লীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়।

খ) উষ্ণ আর্দ্র অঞ্চলে অধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির সাথে চুন মাটির অভ্যন্তরে তলিয়ে যায়, ফলে অম্লীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়।
গ) বিভিন্ন কলকারখানার আবর্জনা পানিতে পতিত হয়ে পানির অম্লত্ব বাড়াতে সহায়তা করে।

চিংড়ি চাষে অম্লীয় পানির প্রভাব-

ক) পিএইচ মান ৫ এর নিচে থাকলে অভিস্রবণের মাধ্যমে চিংড়ি দেহের রক্ত থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড আয়নসমূহ বের হয়ে যায়। চিংড়ি পর্যায়ক্রমে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড আয়ন হারানোর ফলে রক্তের গঠন ঠিক রাখতে না পেরে দুর্বল হয়ে পরিশেষে মারা যায়। পানিতে ক্যালসিয়াম কম থাকলে এ ক্ষতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে।

খ) শরীর থেকে প্রচুর বিজল বা মিউকাস বের হয় এবং চিংড়ি ধীরে ধীরে তার কর্মক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, খাদ্য গ্রহণ ও খাদ্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে চিংড়ি মারা যায়।

গ) চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও অনেক সময় খাবারের রুচি হারিয়ে ফেলে।

ঘ) চিংড়ি আঘাতপ্রাপ্ত হলে সহজে ঘা সারে না।

ঙ) পানিতে অম্লত্বের পরিমাণ বেশি হলে চিংড়ির প্রজনন অঙ্গের বৃদ্ধি অসম পর্যায়ের হয়ে থাকে, যা ডিম পরিস্ফুটন বা পোনা উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে।

চ) পুকুরের পানিতে সহজে চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হতে পারে না।

ছ) পানিতে অক্সিজেন থাকা সত্বেও চিংড়ি তা গ্রহণ করতে পারে না ফলে চিংড়ি পানির উপর ভেসে উঠে ও পরিশেষে মারা যায়।

ক্ষারীয় পানির উৎসসমূহ হলো-

ক) ক্যালসিয়াম ও সিলিকা সমৃদ্ধ মাটি।

খ) পুকুরের পানি ঘন সবুজ হলে অত্যাধিক সালোকসংশ্লেষণের জন্য দিনের বেলায় পানির পিএইচ মান সামান্য বেড়ে যায়। ফলে পানি ক্ষারীয় হতে পারে।

চিংড়ি চাষে ক্ষারীয় পানির প্রভাব-

ক) পানির পিএইচ মান ১১ এর বেশি হলে চিংড়ির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে।

খ) পিএইচ মান বেড়ে গেলে চিংড়ির চোখের লেন্স এবং কর্ণিয়া নষ্ট হয়ে যায়, পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পায়, অসমোরেগুলেশান ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে চিংড়ি দুর্বল হয়ে মারা যায়। চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খাবারে রুচি কমে যায়। অনেক সময় চিংড়ি প্রজনন ক্ষমতাও কমে যায়।

পানির পিএইচ মান পরীক্ষাকরণ:  পানি অম্লীয় না ক্ষারীয় তথা পানির পিএইচ মান কত তা পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। নিচে কিছু পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।

ক) লিটমাস কাগজ: লিটমাস কাগজ পানিতে ডুবানোর পর কাগজের রং যদি লাল হয়ে যায়, তবে তা অম্লীয় পানি এবং যদি নীল হয়ে যায় বা লিটমাস কাগজের রঙের কোনো পরিবর্তন না হয় তবে তা ক্ষারীয় পানি।

(খ) ডিজিটাল পিএইচ মিটার: আধুনিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল পিএইচ মিটারের সাহায্যে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে পানির পিএইচ পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।

গ) পিএইচ পেপার: পিএইচ পেপার একটি গোলাকার চাকতির ভিতর পেচানো থাকে। পেচানো অংশ থেকে এক টুকরো (১ ইঞ্চি পরিমাণ) কাগজ নিয়ে ৩০ সেকেন্ড পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর পানি থেকে উঠালে কাগজের রং পরিবর্তিত হবে। রং বদলানো কাগজটিকে চাকতির গায়ে আঁকা বিভিন্ন রংয়ের সাথে মিলিয়ে দেখলেই ঐ পানির পিএইচ বুঝা যাবে অর্থাৎ পানিতে ডুবানোর পর ঐ কাগজের পরিবর্তনকৃত রং চাকতির গায়ে আঁকা যে রঙের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হবে সেখানে লিপিবন্ধ পিএইচ মানই হবে ঐ পানির পিএইচ মান। পানির পিএইচ মান দেখে পুকুরের জন্য কোন ধরনের চুন লাগবে তা নির্ধারণ করা যায়।

মাটির পিএইচ পরীক্ষা পদ্ধতি

কোন পুকুরের তলা থেকে এক মুঠ (প্রায় ২০ গ্রাম) মাটি নিয়ে খুব ভালোভাবে শুকিয়ে গুঁড়া করে পাউডার বানাতে হবে। এই পাউডারের দ্বিগুণ পরিমাণ পরিষ্কার ফোটানো ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে খুব ভালোভাবে নেয়ে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। পরদিন সকালে পিএইচ কাগজ দিয়ে থিতানো পানির পিএইচ পরীক্ষা করতে হবে। প্রাপ্ত পিএইচ হবে পরীক্ষিত পুকুরের মাটির পিএইচ।

পিএইচ কমে গেলে বা পানি অগ্নীয় হলে করণীয় :
যে কোন কারণে পুকুরের পানির পিএইচ কমে যেতে পারে। যদি কোনো কারণে পিএইচ মান কমে যায় তাহলে জাতীয় পানিতে শতাংশ প্রতি ১ কেজি পোড়া ফুল প্রয়োগ করতে হবে। চুলের পরিমাণ নগ্নতা বা পানির পিএইচ এর উপর নির্ভরশীল।

পিএইচ বেড়ে গেলে বা পানি ক্ষারীয় হলে করণীয় : অপ্রত্যাশিতভাবে পানির পিএইচ বেড়ে গেলে পিএইচ কমানোর নির্মিত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন প্রাথমিকভাবে তেঁতুল গোলানো পানি বা তেঁতুল/সজনের পাতা ভেজানো পানি দিতে হবে। তবে শতাংশ প্রতি ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।

ক্ষারত্ব ও খরতা

ক্ষারত্ব ও খরতা হলো পানিতে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের আয়নের পরিমাপক।

ক্ষারত্ব: সাধারণত ক্ষারত্ব হলো কার্বোনেট, বাইকার্বোনেট ও হাইড্রোক্সিল আয়নের পরিমাপক। পুকুরে এর মাত্রা ২০ মিগ্রা/ লিটার এর নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়।

খরতা: সাধারণত খরতা হলো ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আয়নের পরিমাপক। যা প্রকাশ করা হয় ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দিয়ে। মোট খরতার পরিমাণ মোট ক্ষারত্বের সাথে সম্পর্কিত। পানির খরতা ২০ মিগ্রা/লিটার এর কম হলে পানির বাফার ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায় এবং চিংড়ির জন্য তা বিশেষভাবে ক্ষতিকর। সাধারণভাবে বলা যায় যে, ভালো জলাশয়ের খরতা ৪০-২০০ মিগ্রা/লিটার এর মধ্যে হওয়া উচিত।

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষারত্ব ও খরতার প্রভাব: চিংড়ি চাষের জন্য হালকা খর পানি সবচেয়ে ভালো। ক্ষারত্ব ও খরতার মান ২০ মিগ্রা/লিটার এর কম ও ৩০০ মিগ্রা/লিটার এর বেশি হলে পানির বাফারিং ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পানির পিএইচ দ্রুত উঠানামা করে। পুকুরে সার দিলে তা কার্যকর হয় না। ক্ষারত্ব ৩০০ মিগ্রা/লিটার এর বেশি হলে পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা (ফাইটোপ্লাংকটন) হ্রাস পায়। কারণ তখন সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকে না। চিংড়ি সহজেই অম্লতা ও অন্যান্য ধাতুর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।

হার্ডনেস: হার্ডনেস-এর দ্বারা পানিতে দ্রবীভূত ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম লবণসমূহের মাত্রা বুঝায়। হার্ডনেস মাছ/চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে।

Content added By