এসএসসি(ভোকেশনাল) - জেনারেল মেকানিক্স- ১ - জেনারেল মেকানিক্স -১ | NCTB BOOK

মেশিন টুলস হলো শক্তি চালিত যান্ত্রিক ব্যবস্থা যা কাটিং টুলের সাহায্যে ওয়ার্কপিস থেকে নির্ধারিত পরিমাণ ধাতু অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আকার, আকৃতি ও মসৃণতা প্রদানে ব্যবহৃত হয়। যেমন-

লেদ মেশিন (Lathe Machine): একটি লেদ মেশিন হলো একটি মেশিন টুল যা একটি ঘূর্ণায়মান ওয়ার্কপিস থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ কেটে বস্তুকে প্রয়োজন অনুযায়ী আকৃতি প্রদান করে। লেদ মেশিন দ্বারা সাধারণত একটি একমুখো কাটিং টুল এর সাহায্যে স্পিন্ডলের সাথে সংযুক্ত চাকে বাঁধা অবস্থার ঘুরন্ত কার্যবস্তুকে কেটে প্রধানত সিলিন্ড্রিক্যাল, কোনিক্যাল, ফেসিং ইত্যাদি জব ও স্ফলু-থ্রেড তৈরি করা যায়।

শেপার মেশিন (Shaper Machine) শেপার মেশিন মূলত অনুভূমিক, উল্লম্ব ৰা সমতল পৃষ্ঠ উৎপাদন করার জন্য ব্যবহৃত মেশিনের একটি পারস্পরিক ধরনের। শেপারটি র‍্যামে একক পয়েন্ট কাটার সরঞ্জামটি ধরে রাখে এবং ওয়ার্কপিসটি টেবিলে স্থির থাকে।

চিত্র-২.৫১ শেপার মেশিন

প্ল্যানার মেশিন (Planer Machine) : প্ল্যানার মেশিন ভারী যন্ত্রাংশ বা ওয়ার্কপিসে সমতল পৃষ্ঠ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। ওয়ার্কপিস টেবিলের উপর স্থাপন করা হয় এবং কাটিং টুল স্থির থাকে, টেবিল ওয়ার্কপিসসহ চলাচল করে অপ্রয়োজনীয় ধাতু কেটে ফেলে ইঙ্গিত আকৃতি প্রদান করে থাকে।

চিত্র-২.৫২ প্ল্যানার মেশিন

পেডেস্টাল ড্রিল মেশিন (Pedestal drill machine): পেডেন্টাল ড্রিল মেশিন হলো এক ধরনের পাওয়ার টুল যা ওয়ার্কশপের মেঝেতে সি.সি. ফাউন্ডেশন করে নাট-বোল্টের মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা হয়। এই মেশিনকে পিলার ড্রিল মেশিনও বলা হয়। এটিকে ওয়ার্কশিসের পুরুত্ব অনুযায়ী ওয়ার্কবেক্ষকে সমন্বয় করা যায়। মেশিনটিতে মোটর ব্যবহার করে উচ্চ গতিতে ড্রিল টি রোটেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়, ওয়ার্কপিসে হোল বা ছিদ্র করা যায়। 

মিলিং মেশিন (Milling Machine ) : মিলিং মেশিন একটি কাটিং টুল (Milling Cutter) ঘোরানোর মাধ্যমে একটি ষাভ জবের টুকরো থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলে প্রয়োজনীয় আকৃতি প্রদান করে থাকে। সিলিং মেশিনে সাধারণত উল্লম্ব বা অনুভূমিক, ফ্ল্যাট এবং অনিয়মিত পৃষ্ঠগুলি মেশিনিং করা হয়। পিয়ার, প্লাইন, ব্রেড, স্লট, ইত্যাদি তৈরি করতে ও ধাতব ওয়ার্কপিসের মধ্যে ড্রিং এবং বোরিং করতে মিলিং মেশিন ব্যবহার করা হয়।

পেডেস্টাল গ্লাইডার (Pedestal Grinder machine): পেডেস্টাল গ্রাইন্ডার লেন এবং সিলিং মেশিনে ব্যবহৃত উচ্চ-গতির ইস্পাত কাটার জন্য কাটিং টুলকে তীক্ষ্ণ করতে ব্যবহার করা হয়।

বোরিং ও হোনিং মেশিন (Boring and Honing Maching): বোরিং মেশিনে একটি বোরিং টুল দিয়ে বিদ্যমান ভিন্ন গুলিকে বড় কর হয় এবং হোনিং প্রক্রিয়ায় ওয়ার্কপিস মসৃণ করা ও সারফেস ফিনিস করা হয়।

পাওয়ার হ্যাকস মেশিন (Power Hacksaw): পাওয়ার হ্যাকস মেশিন ধাতু কর্তন করতে ব্যবহৃত হয়। অ্যালুমিনিয়াম, পিতল, এবং হালকা স্টিল এবং অন্যান্য খাতব কার্যবস্তু পাওয়ার হ্যাকস-এর মাধ্যমে কর্তন করতে সক্ষম।

ব্র্যান্ড-স মেশিন (Band naw): একটি ব্যাঙ্ক- স হলো একটি পাওয়ার-স মেশিন যার একটি দীর্ঘ ধারালো ব্লেড থাকে যা বন্ধু বা মেটাল কাটার জন্য দুই বা ততোধিক চাকার সাথে বেস্ত করা থাকে । ধাতু কাটিং করার সময় এই ব্রেড কনটিনিউয়াস ভাবে চলতে থাকে।

২.৪. 'ইনসট্রুমেন্ট পরিচিতি

ইনসট্রুমেন্ট সুলভ কোনো প্যারামিটার পরিমাপের জন্য বা কোনো প্যারামিটার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন- তাপমাত্রা ও চাপ পরিমাপ করা ইত্যাদি এবং ভালভ দিয়ে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি। বিশেষ যন্ত্রগুলি প্রসেস প্যারামিটার পরিমাণ বা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

২.৪.১. ইনস্ট্রুমেন্টের প্রকারভেদ

ইনস্ট্রুমেন্ট দুই ধরনের

১. অ্যানালগ বা মেনুয়্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট

২. ডিজিট্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট

২.৪.২. ম্যানুয়্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট (Manual Instrument) 

যে সকল ইনস্ট্রুমেন্ট মাগগ্রহণ করতে, মাপ জানতে, ও মাপ পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয় সেসকল ইনস্ট্রুমেন্টকে মেজারিং ইনট্রুমেন্টস বলা হয়। মেজারিং ইনস্ট্রুমেন্ট এর মধ্যে যেসকল টুলস সাধারণত মাপ পরীক্ষা করার কাজে ব্যবহার করা হয় তাদেরকে আলাদাভাবে টেস্টিং টুলস বলা হয়। যেমন- ট্রাই-স্কয়ার, কম্বিনেশন-স্কয়ার, বিভেল-প্রোট্রাক্টর, স্ট্রেইট-এজ, স্টিল-রুল ইত্যাদি। মেজারিং ইনস্ট্রুমেন্ট এর মধ্যে যেসকল ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরি করা বস্তু কাজের উপযোগী কিনা, এর মাপ গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে আছে কিনা ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করার কাজে ব্যবহৃত হয়, সে সকল মেজারিং ইনট্রুমেন্টসমূহকে পেজ বলা হয়। যেমন- প্লাগ-গেজ, রিং-গেজ, স্ন্যাপ-গেজ, রেডিয়াস-গেজ, ইন্ডিকেটিং হোল-গেজ, স্ক্রু-পিচগেজ, ফিলার-পেজ ইত্যাদি।

২.৪.৩. বিভিন্ন অ্যানালগ বা ম্যানুয়্যাল মেজারিং ইনস্ট্রুমেন্ট

- ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স (Vernier Calipers): ভার্নিয়ার ক্যালিপার হলো একটি সূক্ষ্ম পরিমাপক ও পরীক্ষণ যন্ত্র, যার সাহায্যে কোনো বস্তুর বা ওয়ার্কপিসের ভিতর, বাহির এবং গভীরতার মাপ সূক্ষ্মভাবে নেওয়া যায় বা পরীক্ষা করা যায়। এটির দুটি আউটসাইড 'জ' এবং দুটি ইনসাইড 'জ' থাকে। প্রতি জোড়া ‘জ’মিলিত অবস্থায় ভার্নিয়ার স্কেলের একপার্শ্ব বিম বা প্রধান স্কেলের সাথে শূন্য দাগে অবস্থান করে। ভার্নিয়ার ক্যালিপার দ্বারা কোনো প্রকার অতিরিক্ত হিসাব ছাড়াই একপার্শ্ব দিয়ে আউটসাইড এবং অপর পার্শ্ব দিয়ে ইনসাইড মাপ গ্রহণ করা যায়। তাছাড়া কোনো কোনো ভার্নিয়ার ক্যালিপারের মাথার দিকে ডেপথ প্রব থাকে যার সাহায্যে একই স্কেলের মাধ্যমে গভীরতার মাপও নেওয়া যায়।

চিত্র-২.৬০ ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স

মাইক্রোমিটার (Micrometer): মাইক্রোমিটার এক প্রকার সরাসরি বা প্রত্যক্ষ স্থাপনযন্ত্র । একে মাঝে মাঝে ক্ষু-গেজও বলা হয়। স্থির নাটের ভেতর দিয়ে ক্ষু-প্রড কাটা দন্ড বা বোল্টের যাওয়া আসা নীতির উপর ভিত্তি করে মাইক্রোমিটার তৈরি করা হয়। নাটের ন্যায় ক্রিয়াশীল অংশকে বিষল এবং বোস্টের ন্যায় ক্রিয়াশীল অংশকে ব্যারেল বলা হয়। ব্যারেলের উপর রৈখিক স্কেল দাগাংকিত থাকে যাকে প্রধান স্কেল বলা হয়। বিষলের বিডেল বা ঢালু প্রান্তে বৃত্তাকার স্কেল বা দিঘল স্কেল থাকে। এই দুই দাগ বিবেচনা করে মেজারমেন্ট নেয়া হয়।

ভার্নিয়ার বিভেল প্রোট্র্যাক্টর (Vernier Bevel Protractor): সাধারণ বিভেল প্রোট্যাক্টরের-এর সাহায্যে এক ডিগ্রীর চেয়ে কম কোনো কোপ পরিমাপ করা যায় না। কিন্তু ভার্নিয়ার বিভেল প্রোট্যান্টর-এর সাহায্যে সাধারণত এক ডিগ্রীর ১/১২ অংশ বা ৫ মিনিট কোণ পর্যন্ত পরিমাপ করা যায়। এটিকে ইউনির্ভাসেন বিষে প্রোট্র্যাক্টর ও বলা হয়। কৌণিক পরিমাপক যন্ত্রের মধ্যে এটি সুক্ষ্মভাবে কোণ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি অত্যন্ত মূল্যবানও প্রয়োজনীয় যন্ত্র।

সাইন বার (Sin Bar): সাধারণত প্রোট্যাক্টর বা ভার্নিয়ার বিভেল প্রোস্টাক্টর-এর সাহায্যে যেসকল বস্তু বা যন্ত্রাংশের কোণের পরিমাপ সুক্ষ্মভাবে নেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে সাইन বার ব্যবহৃত হয়।

স্পিরিট লেভেল (Spirit Level): স্পিরিট মেডেল হলো একটি পরীক্ষা করার যন্ত্র যা একটি সারফেস লেভেন পরীক্ষা করা হয়। এটিতে একটি প্লাস্টিক, কাঠ বা মাতৰ ফ্ৰেম থাকে যার মধ্যে একটি বায়ু বুদবুদ সহ তরল ভরা একটি কাচের নগ থাকে।

ট্রেড গ্যাজ (Thread gauge): কোনো বস্তুর বাহিরের বা ভিতরের তলে স্কু- থ্রেড করা থাকলে উহার পিচ কত অথবা উহাতে প্রতি ইঞ্চিতে কয়টি ক্ষু-থ্রেড বর্তমান থাকে, উহা জানার জন্য ক্ষু-পিচ গেজ ব্যবহৃত হয়। এই গেজ দ্বারা ইঞ্চি ও মিলিমিটার সংক্রান্ত উভয় প্রকার প্লেডেরই মাগ নির্ণয় করা যায়।

ডায়াল ইন্ডিকেটর (Dial Indicator) : ওয়ার্কশপে ডায়াল ইন্ডিকেটর একটি অতি প্রয়োজনীয় ডিভাইস হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি দ্বারা কোনো যন্ত্রাংশের সমতলতা ও মসৃণতা নির্ভুলভাবে পরীক্ষা করা যায়, কোনো জবকে মেশিনে নিখুঁতভাবে টাল ভেলে আবদ্ধ করা যায়, গোলাকার জবের এককেন্দ্রিকতা নির্ণয় করা যায়, অভি সুক্ষ্ম ও সঠিকভাবে অবকে কেন্দ্রীভূত করে বাধা যায় ।

চিত্র-২.৬৬ ডায়াল ইন্ডিকেটর

ওয়ার গেজ (Wire Gauge): ওয়্যার পেল ওয়ান বা ভারের ব্যাস সুক্ষ্মতাৰে পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ওয়্যার গেজের প্লেটের চাকতিকে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারের পর পরিষ্কার নরম ও পাতলা কাপড় দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে উত্তম রূপে তেল বা পাতলা করে গ্রীজ লাগিয়ে যথাস্থানে রাখতে হবে।

২.৪.৪ ডিজিট্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট 

যে সমস্ত ইনস্ট্রুমেন্টে মেজারমেন্ট নেয়ার ক্ষেত্রে ডিজিটাল রিডার ব্যবহৃত হয় সেই ইনট্রুমেন্টকে ডিজিটাল ইনট্রুমেন্ট বলে।

চিত্র-২.৬৮ ডিজিট্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস

এখানে কতিপয় ডিজিটাল ইনস্ট্রুমেন্টস এর সচিত্র পরিচিতি দেওয়া হলো-

টেকোমিটার (রিভলিউশ্যান- কাউন্টার RPM গেজ): এটি এমন একটি যন্ত্র যা মোটর বা অন্যান্য মেশিনের শ্যাফট বা চাকের ঘূর্ণন পত্তি পরিমাপ করে।

ইনফ্রারেড থার্মোমিটার : এটি এমন একটি ডিভাইস যা কপাল থেকে নির্গত ইনফ্রারেড আলোর তীব্রতা শনাক্ত করে মানুষের দেহের তাপমাত্রাকে পরিমাপ করতে সক্ষম। এটি পরিমাপ করা তাপকে এলসিডি স্ক্রিনে ডিজিটাল সংখ্যায় সুক্ষ্মভাবে পাঠ দিয়ে থাকে।

মাল্টিমিটার  (Multimeter): এটি অ্যাভোমিটার (AVO meter) নামেও পরিচিত। এটি একটি ইলেকট্রনিক পরিমাপ যন্ত্র, যেখানে বিভিন্ন পরিমাপের কাজ একটি ইউনিটে একত্রিত থাকে। একটি সাধারণ মাল্টিমিটার বিভৰ (Voltage), প্রবাহ (Current) এবং রোধ ( Resistance) পরিমাপ করতে পারে।

এয়ার ফ্লো মিটার: এই মিটার দিয়ে কোনো নলের ভিতর দিয়ে বাতাসের প্রবাহ বা গ্যাসের প্রবাহ পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

ডিজিটাল ক্যালিপার্স: এটি ভার্নিয়ার কালিপার্সের মেজারমেন্ট ডিজিট্যাল রিডারে প্রকাশ করে। আলাদা ভাবে কোনো হিসাব করার প্রয়োজন হয় না।

Content added || updated By