এসএসসি(ভোকেশনাল) - উইভিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

কাপড় তৈরির জন্য যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তাই সুতা (Yarn)। যে সুতা দ্বারা কাপড় তৈরি করা হয় উক্ত কাপড়ের গুণাবলি কিছুটা সুতার গুণাবলির উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ সুতা কাপড়ের গুণাবলিকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে । একটি সুতার গুণাবলির আদর্শ মান বজায় থাকলেই কেবল তা দ্বারা কাঙ্ক্ষিত মানসম্পন্ন কাপড় তৈরি করা যায়। বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুতার ভালো গুণের উপরই উৎপাদিত কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি করবে ।

ওভেন কাপড় তৈরির জন্য সাধারণত ২ সিরিজ সুতার প্রয়োজন। এক সিরিজ টানা সুতা ও অপর সিরিজ পড়েন। সুতা। এই দুই সিরিজ টানা ও পড়েন সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে ওভেন কাপড় তৈরি করে। পাশাপাশি লুপ গঠনের মাধ্যমে নিটেড কাপড়ও জমাট বাঁধিয়ে ফেলটেড কাপড় প্রস্তুত করা হয়। ওভেন কাপড় তৈরির জন্য ব্যবহৃত টানা ও পড়েন সুতার গুণাগুণ ভিন্ন থাকে। সাধারণত টানা সুতার শক্তি বেশি ও পড়েন সুতার শক্তি কম থাকে। স্পিনিং, ওয়ান্ডিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত সুতা বিভিন্ন প্যাকেজ আকারে পাওয়া যায়। যেমন কোন (Cone), স্কুল (Spool), চিজ (Cheese), হ্যাংক (Hank) ইত্যাদি। যা বস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।

সুতার সংজ্ঞা (Definition of yarn) - 
নির্দিষ্ট নিয়মে টেক্সটাইল ফাইবারকে টুইস্ট দিয়ে যথেষ্ট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট দ্রব্য তৈরি করা হয়। যার দৈর্ঘ্যের তুলনায় ব্যাস খুবই নগণ্য এবং পর্যাপ্ত শক্তিসম্পন্ন এইরূপ দ্রব্যকে সুতা বা ইয়ার্ন বলা হয় ।

সুতার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Yarn ) - 
ওভেন ও নিটেড কাপড় প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত সুতার নিম্নলিখিত গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন ।

কাউন্ট (Count)-
কাপড় তৈরির জন্য ব্যবহৃত সুতা চাহিদা মোতাবেক সঠিক কাউন্টের হতে হবে।

সুসমতা (Uniformity)- 
সুতা অবশ্যই সুসম হতে হবে নতুবা উৎপাদিত কাপড় সুসম অর্থাৎ ভালো মানের হবে না।

শক্তি (Strength)- 
সুতার প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পাশাপাশি শক্তির সমতা থাকতে হবে ।

সুতার মোটা ও চিকন জায়গা (thick and thin place)-
 সুতার মোটা ও চিকন জায়গা ও স্লাব কম থাকতে হবে।

হেয়ারিনেস (Hairiness ) - 

সুতায় হেয়ারিনেস কম থাকতে হবে। অতিরিক্ত হেয়ারিনেস কাপড়ের মান খারাপ করে।

সুতার গিঁট (Knot)- 
সুতার গিঁট আদর্শ ধরন ও আকারের হতে হবে। যাতে উক্ত সুতা দ্বারা কাপড় বয়নের সময় উক্ত সুতা সাটেলের মধ্য দিয়ে সহজেই অতিক্রম করতে পারে।

পরিষ্কার (Clean)- 
কাপড় তৈরির জন্য ব্যবহৃত সুতা অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে।

সুতার প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা (Relative humidity)- 
সুতায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ আর্দ্রতা থাকতে হবে। নতুবা কাপড় বয়নের সময় সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পাবে।

সুতার শ্রেণি বিভাগ (Classification of yarn) - 
সুতাকে সাধারণত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 
১) স্ট্যাপল সুতা (Staple yarn) 
২) ফিলামেন্ট সুতা (Fillament yarn)

স্ট্যাপল সুতা (Staple yarn) - 
এক্ষেত্রে সুতা তৈরির জন্য এবং তৈরি সুতা পাকানোর জন্য ফাইবারের দৈর্ঘ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত প্রকৃতি থেকে যে সমস্ত ফাইবার পাওয়া যায়, তা স্ট্যাপল আকারে পাওয়া যায় (শুধু রেশম ব্যতীত)। তবে কৃত্রিম ফিলামেন্ট হিসেবে পাওয়া ফাইবারকে প্রয়োজনমতো কেটে ছোট ছোট টুকরো অর্থাৎ স্ট্যাপল আকারে নিয়ে স্ট্যাপল সুতা তৈরি করা হয়। টেক্সটাইল ফাইবারের স্ট্যাপল লেংথ ১ সেন্টিমিটারের কম হয় না। স্ট্যাপল ফাইবার সাধারণত প্রাকৃতিক, কৃত্রিম ও ফিলামেন্ট টো হিসেবে পাওয়া যায়। স্ট্যাপল ফাইবারের তৈরি সুতাকেই স্পান ইয়ার্ন বলা হয়।

ফিলামেন্ট সুতা (Fillament yarn) - 
দীর্ঘ অবিচ্ছিন্ন ফাইবারকে ফিলামেন্ট সুতা বলা হয়। ফিলামেন্ট দুইভাবে ব্যবহার হয়। মনো ফিলামেন্ট ও মাল্টি ফিলামেন্ট। যদি এককভাবে একটি ফিলামেন্টকে সুতা হিসেবে ব্যবহার করা হয় তা মনো ফিলামেন্ট। আবার একাধিক ফিলামেন্টকে একত্রিতভাবে বা পাক দিয়ে সুতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তখন একে মাল্টি ফিলামেন্ট বলে।

প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত শুধু রেশম ফাইবারকেই ফিলামেন্ট আকারে পাওয়া যায়। কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে তৈরি সকল প্রকার ফাইবার রাসায়নিক পদার্থ থেকে উৎপত্তি। প্রতিটি ফাইবার স্পিনারেট এর ছিদ্র দ্বারা লম্বা ও অবিচ্ছিন্নভাবে তৈরি হয় অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে তৈরি স্পিনারেট থেকে টেনে বের করা হয়। এ ফাইবারগুলোকে ফিলামেন্ট বলা হয়।

উইভিং -এ ব্যবহৃত সুতার গুণাগুণ- 

• সুতাকে অবশ্যই সুষম হতে হবে। 
• সুতাকে অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। 
• কাপড় বয়নের সময় এবং ঘর্ষণ এ যাতে অতিরিক্ত সুতা ছিড়ে না যায় সে রকম মজবুত অবশ্যই হতে হবে।
• সুতার গিঁট আদর্শ ধরন ও আকারের হতে হবে। যাতে শানা ও মাকুর মধ্য দিয়ে সহজেই অতিক্রম করতে পারে। 
• টানা সুতায় মাড় দিতে হবে এবং মাড়ের পরিমাণ এমন হতে হবে যাতে বয়নের সময় শানা ও ঝাপের ঘর্ষণ হতে টানা সুতাকে রক্ষা করতে পারে । 
• টানা সুতা লুমের বিমে সমান্তরাল আকারে জড়াতে হবে যাতে প্রতিটি সুতায় সমান টান থাকে। 
• প্রতিটি টানা সুতা সঠিক দৈর্ঘ্যের হতে হবে এবং সেখানে কোনো ছেঁড়া সুতা থাকা চলবে না । 
• সুতা অবশ্যই স্থিতিস্থাপক গুণসম্পন্ন হতে হবে। 
• পড়েন সুতাকে অবশ্যই যথাসম্ভব গিঁট মুক্ত হতে হবে। 
• সুতাকে অবশ্যই কম হেয়ারিনেস হতে হবে।

সুতার ত্রুটি (Yarn faults)-

সুতায় সাধারণত নিম্নলিখিত ত্রুটি দেখতে পাওয়া যায়।
• স্লাব ( Slub)
• র্স্নাল (Snarl) 
• সফট ইয়ার্ন (Soft Yarn) 
• ওয়েল স্টেইন ইয়ার্ন (Oil stain yarn) 
• ক্র্যাকার্স (Crackers ) 
• ব্যাড পিসিং (Bad Piecing) 
• হেয়ারিনেস (Hairiness ) 
• কিটি ইয়ার্ন (Kitty yarn) ফরেইন ম্যাটারস (Foreign matters ) 
• থিক অ্যান্ড থিন প্লেস ( Thick and thin place ) 
• নেপি ইয়ার্ন (Neppy yarn) 
• স্পান ইন ফ্লাই (Spun in fly) ওয়েলি স্লাব (Oily slub ) 
• কর্ক স্ক্রু (Cork screw yarn)

স্মাৰ (Slub ) - 
সাধারণের চেয়ে অনেক মোটা গুচ্ছ ফাইবারযুক্ত সুতা যাতে পাক কম থাকে।

পরিণতি- 

• পরবর্তী প্রসেসে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ খারাপ দেখায় কোথাও কোথাও গর্ত দৃষ্টিগোচর হয়। 
• রংকৃত কাপড়ে শেডের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।

কারণ- 

• মেশিনের অংশে একত্রে ফ্লাই জমা হয়ে সুতার সাথে জড়িয়ে যায়। 
• কার্ডিং যথাযথ না হলে।
• খারাপ পিসিং হলে। 
• টপ রোলার ক্লিয়ারার ঠিকমতো কাজ না করলে।
• প্রতিকার - মেশিনের পৃষ্ঠদেশ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
• কার্ডিং মেশিনে যাতে যথাযথ কার্ডিং হয় তার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। 
• সঠিক পিছিং করতে হবে। টপ রোলার ক্লিয়ারার যাতে সঠিকভাবে কাজ করে তার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।

 

র্স্নাল (Snarl)-

সুতায় টুইস্ট দেওয়ার পর পরিমিত টেনসনে না রাখার ফলে এরূপ স্নার্স -এর সৃষ্টি হয়।

পরিণতি- 

• পার্শ্ববর্তী সুতার সাথে জড়িয়ে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশে ক্ষতি সাধন করে । 
• রঙিন কাপড়ের শেডের তারতম্যের সৃষ্টি করে।

কারণ- 
• প্রয়োজনীয় পাকের চেয়ে বেশি পাক প্রদান করলে। 
• যদি খুব বড় লম্বা চিকন সুতা থাকে।

প্রতিকার- 

• সুতায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ পাক প্রদান করতে হবে। 
• চিকন সুতা কমানোর লক্ষ্যে ড্রাফটিং জোন ঠিক রাখতে হবে। 
• সুতা তৈরির পর কন্ডিশনিং করতে হবে। 
• সুতা যথাযথ টেনশনে রাখতে হবে।

সফট ইয়ার্ন (Soft Yarn)- 
সুতার কম পাকের কারণে দুর্বল দৃষ্টিগোচর হয়।

পরিণতি- 
• সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায় । 
• ডাইং -এর পর শেডের তারতম্য দেখা দেয়।

কারণ - 

• টেপ টিলা ও জকি পুলি ময়লাযুক্ত থাকলে 
• স্পিন্ডেলে ববিন বসানো সঠিক না হলে। 
• সুতায় পাক কম দিলে

প্রতিকার -

• টেপ সঠিকভাবে লাগোনো ও পুলি পরিষ্কার রাখতে হবে। 
• স্পিডেলে ৰবিন সঠিকভাবে বসাতে হবে। 
• সুভায় পাক যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে ।

ওরেল স্টেইন ইয়ার্ন (Oll stain yarn)- 
সুতার তৈলের দাগ থাকা।

পরিণতি -

• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ খারাপ হওয়া ।
• কাপড়ের উপর কালো দাগ পড়া

কারণ -

• বিভিন্ন মুভিং পার্টস ওভারহেড গুলি ইত্যাদিতে ওয়েলিং -এর সময় সতর্ক না থাকলে । 
• ময়লা ও তৈলাক্তযুক্ত হাত দ্বারা পিছিং করলে। 
• সুভা ও সুতার প্যাকেজ হ্যান্ডলিং -এ সতর্ক না হলে।

প্রতিকার- 

• সুতা ও সুতার প্যাকেজ হ্যান্ডলিং -এ সতর্ক হতে হবে। 
• শুরেগিং করার সময় সতর্ক হতে হবে

ক্র্যাকারস (Crackers)-

খুব ছোট ছোট ফার্ল -এর মতো এবং স্প্রিং-এর মতো দেখতে সুভাকে ক্র্যাকারস বলে।

পরিণতি- 

• ওয়াইভিং -এ সুভা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• পলিয়েস্টার ও কটন ব্লেন্ডেড সুতায় বেশি দেখা যায়।

কারণ -

• যদি মাত্রাতিরিক্ত বড় ও ছোট দৈর্ঘ্যের আঁশের মিক্সিং করা হয়। 
• রোলার সেটিং খুব কাছাকাছি হলে। 
• কটন সুতায় বেশি পাক দিলে।

প্রতিকার - 

• কাছাকাছি দৈর্ঘ্যের আঁশের সাথে মিক্সিং করতে হবে। 
• রোলার সেটিং সঠিকভাবে করতে হবে। 
• সুতার পাক যথাযথ হতে হবে।

ব্যাড পিসিং (Bad Piecing)- 

খারাপভাবে পিছিং করার কারণে সুতায় মোটা অংশ বৃদ্ধি পায়। 

পরিণতি- 

• পরবর্তী প্রক্রিয়ায় সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায় । 
• হার্ড ওয়েস্ট বৃদ্ধি পায়। 

কারণ-

• স্পিনারের অবিভক্ততার অভাবের কারণে পিছিং -এ ডাবল সুতার কারণে সুতায় মোটা অংশ বৃদ্ধি পায়। 
• সুতায় গিড়া দেওয়ার পরিবর্তে পাক দিয়ে ছিঁড়ে দিলে । 

প্রতিকার- 

• সঠিকভাবে পিছিং করতে হবে। 
• স্পিনিং ফ্রেমে সেপারেটর রাখতে হবে।

হেয়ারিনেস (Hairiness ) -
মূল সুতার স্ট্রাকচারের সাথে আলগা আঁশের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে।

পরিণতি- 

• ওয়াইন্ডিং -এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ অসম হয়। 
• পলিয়েস্টার কটন ব্লেন্ডেড কাপড়ে গুটি গুটি বিড -এর সৃষ্টি হয়। 

কারণ- 

• কাছাকাছি গুণাগুণসম্পন্ন আঁশের মিশ্রণ না হলে । 
• স্পিনিং ফ্রেমে ভাঙা রিং ও হালকা ট্রাভেলার ব্যবহার করলে। 
• আর্দ্রতা কম, রোলার সেটিং কাছাকাছি এবং স্পিন্ডেলের গতি বেশি হলে। 

প্রতিকার- 

• মিক্সিং -এ সতর্ক থাকতে হবে। 
• স্পিনিং-এ রিং ট্রাভেলার ইত্যাদি যথাযথ থাকতে হবে। 
• আপেক্ষিক আর্দ্রতা যথাযথ রাখতে হবে। 
• রোলার সেটিং, স্পিন্ডেলের গতি নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। 

কিটি ইয়ার্ন (Kitty yarn) - 
ট্রাস, পাতার টুকরা, ভাঙা বীজ, কালো দাগ ইত্যাদি সুতার মধ্যে থেকে যাওয়া।

পরিণতি- 

• কাপড় খারাপ হবে 
• ডাইং এর সময় কাপড়ের ক্ষতি হতে পারে নিটিং -এ নিডেল ভেঙে যেতে পারে। । 
 • ওয়াইন্ডিং-এ খারাপ ফলাফল আসতে পারে। 

কারণ- 

• ব্লো-রুম ও কার্ডিং -এ ক্লিনিং যথাযথ না হলে । 
• খুব বেশি ট্রাস যুক্ত তুলা ব্যবহার করলে। 

প্রতিকার- 

• ব্লো-রুম ও কার্ডিং -এ ক্লিনিং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। 
• আর্দ্রতা যথাযথ রাখা নিশ্চিত করতে হবে।

ফরেইন ম্যাটারস (Foreign matters ) -
ধাতুর টুকরো, পাটের আঁশ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি সুতায় পাওয়া যায়।

পরিণতি- 

• ওয়াইন্ডিং-এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠে গর্ত ও দাগ তৈরি হয়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

কারণ- 

• ট্রাভেলারের হ্যান্ডলিং যথাযথ না হলে। 

• মিক্সিং -এ প্রস্তুতি যথাযথ না হলে। 

প্রতিকার- 

• মিক্সিং-এর প্রস্তুতিতে ফরেন ম্যাটার দূর করতে হবে। 
• ব্রো-রুমে ম্যাগনেটিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ধাতুর টুকরা দূর করতে হবে।

থিক এন্ড পিন প্লেস (Thick and thin place ) - 
সুতার মধ্যে মোটা ও চিকন থাকা

পরিণতি- 

• ওয়াইন্ডিং-এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ খারাপ দেখায়। 
• নিটিং -এ কাপড় ভালো হয় না।

কারণ- 

• টপ ও বটম রোলার এক্সসেনট্রিক হলে। 
• টপ রোলারের প্রেসার সঠিক না হলে। 
• অ্যাপ্রোন খারাপ হলে। 
• গিয়ার হুইলের দাঁত ভাঙা থাকলে। 

প্রতিকার- 

• টপ ও বটম রোলারের এক্সসেনট্রিক দূর করতে হবে। 
• টপ রোলারের প্রেসার সঠিক রাখতে হবে। 
• অ্যাপ্রোন ও গিয়ার পরিবর্তন করে নতুন লাগাতে হবে

নেপি ইয়ার্ন (Neppy yarn)- 
সুতার সাথে ছোট গুটি আকারে নেপ জড়িয়ে থাকে। 

পরিণতি - 

কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ খারাপ দেখায়। 

কারণ- 

• ব্রো-রুমে যথাযথ ওপেনিং না হলে। 
• সেটিং সঠিক না থাকার কারণে কার্ডিং যথাযথ না হলে। 
• কম মাইক্রোনিয়ার যুক্ত কটন ব্যবহার করলে। 
• ব্লো-রুমে বাইপাসে খুব বেশি ইউ (U) টার্ন থাকলে । 

প্রতিকার- 

* রো-রুমের ওপেনিং সঠিক করতে হবে। 
* সেটিং সঠিক করে যথাযথ কার্ডিং করতে হবে। 
* ম্যাচিউর কটন ব্যবহার করতে হবে। 
* ব্রো-রুমের বেশি ইউ টার্ন কমাতে হবে।

স্পান ইন ফ্লাই (Spun in fly)- 
সুতা টুইস্ট দেওয়ার সময় ফ্লাই উড়ে এসে সুতার পৃষ্ঠে লেগে যায়।

পরিণতি- 

* ওয়াইন্ডিং বিভাগে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায় । 

কারণ- 

* মেশিনের বিভিন্ন অংশের ফ্লাই জমা থাকলে । 
* যথাযথ ক্লিনিং না হলে। 
* হিউমিডিফিকেশন প্লান সঠিক কাজ না করলে।

প্রতিকার- 

• মেশিনারি সর্বক্ষণ পরিষ্কার রাখতে হবে। 
• ওভারহেড ক্লিনিং সঠিক রাখতে হবে। 
• হিউমিডিফিকেশন যথাযথ করতে হবে। 

ওয়েলি স্লাব (Oily slub)- 

• সুতার পৃষ্ঠে ওয়েল যুক্ত স্লাব থাকলে ।

পরিণতি -

• পরবর্তী প্রসেসে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায় । 
• কাপড় খারাপ হয়।
• রংকরণে শেডের ভারতম্য হয়। 

কারণ- 
• মেশিনের পৃষ্ঠে তৈলযুক্ত ফ্লাই সুতার গায়ে লেগে গেলে । 
• ওয়েলিং ও লুব্রিকেটিং সিস্টেম খারাপ হলে। 

প্রতিকার- 

• সুতা উৎপাদন চলাকালীন সময়ে যাতে ফ্লাই সুতার পৃষ্ঠে লেগে না যায় তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 
• ওয়েলিং ও লুব্রিকেটিং যথাযথভাবে করতে হবে।

কর্ক ইয়ার্ন (Cork screw yarn) - 
ডাবল সুতা অর্থাৎ একটি সুতা সোজা ও অপরটি পেঁচানো থাকে।

পরিণতি

• ওয়াইন্ডিং-এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• উৎপাদিত কাপড় খারাপ দেখায়। 

কারণ- 

• রিং-এ একটি রোভিং -এর স্থলে দুটি রোভিং ফিড করলে। 
• রিং ফ্রেমে সুতা উৎপাদনের সময় পার্শ্ববর্তী সুতা জড়িয়ে গেলে

প্রতিকার-

• রোভিং ফিডিং যথাযথ করতে হবে।
• নিউমোফিল সংগ্রহ ও বাতাসের প্রবাহ সঠিক কিনা তা পরীক্ষা করে যথাযথ রাখতে হবে।

সুতার ত্রুটির উপর নির্ভর করে গ্রেডিং- 

উপরে উল্লিখিত সুতার বিভিন্ন প্রকার ত্রুটিসমূহ বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট লটের উপর সুতার গ্রেডিং করা হয়। এই গ্রেডিং সাধারণত মিল থেকে মিল কিছুটা আলাদা করে হিসাব করা হয়। ইহা ছাড়াও ক্রেতার চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে সুতার গ্রেডিং করা হয়। তবে, সাধারণ নিয়মে সুতার লক্ষণীয় ত্রুটি বিশ্লেষণ করে সুতাকে নিম্নলিখিত গ্রেডিং-এ ভাগ করা হয়েছে।

  • গ্রেড-এ (Grade - A ) কোনো বড় নেপ থাকতে পারবে না। তবে সুতা অতিরিক্ত হেয়ারি নয় এরকম সুষম সুতা। 
  • গ্রেড-বি (Grade 8 ) কোনো বড় নেপ থাকতে পারবে না তবে ছোট নেপ কিছুটা গ্রহনযোগ্য। 
  • গ্রেড সি ( Grade-C ) কিছুটা অনিয়মিত সুতা, কিছু কিছু বড় ও ছোট নেপ থাকতে পারে। অন্যান্য অপদ্রব্যও সুভার মধ্যে কিছুটা থাকতে পারে। 
  • গ্রেড-ডি (Grade D) কিছু স্লাব, অনেক নেপ, অনেক মোটা চিকন থাকতে পারে। সর্বোপরি সুতার বহিরাবরণ সুন্দর নয় । এমন সুতা গ্রহণযোগ্য। 

সুতার লট নম্বর- 

যে কোনো স্পিনিং ইন্ডাস্ট্রিতে সুতার উৎপাদন একটি নির্দিষ্ট ব্যাচ বা লট হিসেবে উৎপাদিত হয়। এক একটি লটে এক এক ধরনের কাউন্ট বা পরিমাণ থাকে। সাধারণত ক্রেতার চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে ব্যাচ নির্ধারণ করা হয়। স্পিনিং বিভাগে রিং ফ্রেম থেকে উক্ত নির্দিষ্ট লটের সুতা উৎপাদন হওয়ার সাথে সাথে আলাদাভাবে ওয়াইন্ডিং বা রিলিং বিভাগে পাঠানো হয়। ওয়াল্ডিং বা রিলিং বিভাগের কর্মকর্তাগণ উক্ত লটের সুতা দ্বারা আলাদা কোন বা হ্যাংক তৈরি করে। সাধারণত রঙিন সুতা বা মার্ক দ্বারা সুতার লট আলাদাভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। উৎপাদিত কোন বা হ্যাংককে পরে বান্ডিল বা বেইল তৈরি করা হয়। বান্ডিল বা বেইল তৈরি করার পর উক্ত বান্ডিল বা বেইল -এর পৃষ্ঠে বেইল মার্ক প্রদান করা হয়। বেইল মার্কে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মার্কিং ও বিভিন্ন সতর্কতার কথা উল্লেখ থাকে। যার কিছু প্রতীক (Symbol) দ্বারা উল্লেখ করা থাকে। এভাবে বান্ডিল বা বেইলকে লট আকারে আলাদা আলাদাভাবে রপ্তানি অথবা ক্রেতার কাছে পাঠানো হয়। নিচে একটি বান্ডিলের নমুনা দেওয়া হলো। 

ক্রমিক নং-: *** 
কাউন্ট : ৮০/১• কম্বড কটন 
মোট ওজন : ৫০.৩৭ কেজি (১১১ পা.) 
নিট ওজন : ৪৫.৩৬ কেজি (১০০ পা.) 
উৎপাদনের তারিখ : ******** 
কোন/হ্যাংক সংখ্যা ৪০টি কোন। 

বিভিন্ন লটে সুতা মিশে যাওয়ার অসুবিধাসমূহ- 

• মিশ্রিত সুতা দ্বারা কাপড় প্রস্তুত করলে উক্ত কাপড়ের মান খারাপ হবে যা ব্যবহার বা রপ্তানি করার উপযোগী হবে না। 
• নিম্নমানের সুতার লটের মধ্যে উচ্চমানের সুতা মিশে লটের মান খারাপ হবে। পাশাপাশি মিল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
• মিশ্রিত সুতা দ্বারা কাপড় তৈরি করলে উক্ত কাপড়ে নিম্নমানের বা উচ্চমানের সুতার বারের সৃষ্টি হবে 
• যা কাপড়ের মানের জন্য হুমকিস্বরূপ। 
• মিশে যাওয়ার পর মিক্সিং সুতা শনাক্ত করা গেলেও তা পুনরায় আলাদা করা কষ্টসাধ্য । কাজেই উক্ত উৎপাদিত সুতা অপচয় মাত্রা বৃদ্ধি করে।

Content added || updated By