এসএসসি(ভোকেশনাল) - উইভিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

স্কাওয়ারিং (Scouring) 
কাপড় থেকে অপদ্রব্য যেমন- তেল, চর্বি, মোম ও সাইজিং এর সময় ব্যবহার স্টার্চ বাদে অন্যান্য উপাদান সহ রাসায়নিক দ্রব্য দূর করাই স্কাওয়ারিং এর কাজ। প্রকৃতপক্ষে টেক্সটাইল দ্রব্যাদি থেকে প্রাকৃতিক এবং যোগকৃত অপদ্রব্য দূর করা, কাপড়ের শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া অর্থাৎ ব্লিচিং, ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিসিং প্রসেসের জন্য উপযোগী করে তৈরি করাই স্কাওয়ারিং ওয়েট প্রসেসের উদ্দেশ্য। সর্বোপরি স্কাওয়ারিং-এর পর কাপড় পরিস্কার হয়, পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিসিং এর উপযোগী হয় ।

স্কাওয়ারিং এর সংজ্ঞা (Scouring) 
যে প্রক্রিয়ায় অ্যালকালি অথবা ডিটারজেন্ট যোগে টেক্সটাইল দ্রব্যাদি থেকে তেল, চর্বি, মোম ও অপদ্রব্য দূর করা হয় এবং টেক্সটাইল দ্রব্যাদিকে পরিষ্কার ও পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় তাকে স্কাওয়ারিং বলে ।

স্কাওয়ারিং এর উদ্দেশ্য (Objectives of Scouring) 
• টেক্সটাইল দ্রব্যাদি হতে প্রাকৃতিক ও অন্যান্য অপদ্রব্য দূর করা । 
০ টেক্সটাইল দ্রব্যের পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। 
০ অ্যালকালি সহযোগে কাপড়কে পরিষ্কার করা। 
০ পরবর্তী প্রক্রিয়ার অর্থাৎ ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিসিং এর জন্য কাপড়কে উপযোগী করে তোলা।

স্কাওয়ারিং এর প্রয়োজনীয়তা 
১. টেক্সটাইল দ্রব্য হতে প্রাকৃতিক এবং যোগকৃত তেল, চর্বি, মোম ও অন্যান্য অপদ্রব্য দূর করা । 
২. টেক্সটাইল দ্রব্যের পানি পছন্দ করার বৈশিষ্ট্য দান করা । 
৩. টেক্সটাইল দ্রব্যের ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলি অপরিবর্তিত রেখে তার শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা । 
৪. ব্লিচিং প্রক্রিয়ার সাহায্যে প্রাকৃতিক রং দূর করার ক্ষেত্রে কাপড়কে উপযোগী করে তোলা । 
৫. অ্যালকালি সহযোগে কাপড়কে পরিষ্কার করা। 
৬. সেলুলোজের কোন ক্ষতি না করে নন সেলুলোজিক পদার্থ দূর করা । 
৭. কাপড়কে প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করা যাতে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে কেমিক্যালের সাশ্রয় হয় ও উৎপাদন খরচ কমাতে সাহায্য করে। 
৮. পরবর্তী ব্লিচিং, ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিসিং এর জন্য কাপড়কে উপযোগী করে তোলা অর্থাৎ স্কাওয়ারিং দ্বারা কাপড়ের ডাইং, প্রিন্টিং এর কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়।

ক্ষাওয়ারিং এর উপাদান 
০ সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড 
০ ইমালসিফাইং এজেন্ট 
০ ডিটারজেন্ট 
০ ওয়েটিং এজেন্ট ।

স্কাওয়ারিং পদ্ধতি (Process of Scouring) 
সাধারণত তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করে স্কাওয়ারিং এর কাজ সম্পন্ন করা হয়। 
১. স্যাপনিফিকেশন (Saponificaion) 
২. ইমালসিফিকেশন (Emulsificaion) 
৩. ডিটারজেন্সি (Detergency )

বর্ণনা 
স্যাপনিফিকেশন (Saponification) 
উদ্ভিজ তেল, প্রাণীজ এবং খনিজ তেল পানিতে দ্রবণীয় নয়। কেননা তেল ও পানি একে অপরকে পছন্দ করে না। কাপড়ের সাইজিং দ্রব্যাদির মধ্যে তেল জাতীয় পদার্থ থাকে ফলে কাপড় পানি অপছন্দকারী স্বভাবের হয়। অর্থাৎ কাপড়কে পানিতে ভিজালেও তার ফাইবারের মধ্যে পানি প্রবেশ করতে পারে না। তেল কাপড়কে পানিতে ভিজতে বাঁধা প্রদান করে । যা পরবর্তী প্রসেসে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি করে । এ অবস্থায় কাপড় থেকে তেল জাতীয় পদার্থ দূর করার প্রয়োজন হয় ।

তেলকে পানিতে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্বারা তাপ দিলে ফ্যাটি অ্যাসিড অর্থাৎ স্টিয়ারিক অ্যাসিড ও গ্লিসারিন পাওয়া যায়। গ্লিসারিন দ্রবণীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সাথে বিক্রিয়ায় তার সোডিয়াম লবণ অর্থাৎ সাবান তৈরি করে যা পানিতে দ্রবণীয় এ বিক্রিয়াকে স্যাপনোফিকেশন বলে। ফলে পানিতে অদ্রবণীয় তেল দ্রবণীয় বস্তুতে পরিণত হয়।

ইমালসিফিকেশন (Emulsification ) 
সাইজিং দ্রব্যের মোম ও খনিজ তেল স্যাপনিফিকেশন দ্বারা দূর করা যায় না। মোম হল উচ্চতর ফ্যাটি অ্যালকোহল এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের এস্টার। এই মোম এবং খনিজ তেল ইমালসিফিকেশনের মাধ্যমে দূর করা হয়। ইমালসিফাইং এজেন্ট এর সাহায্যে পানিতে স্থিরভাবে ছড়ানো-ছিটানো দ্রব্য ( অপদ্রব্য) পৃথক করাকেই ইমালসিফাইং বলে। এ প্রসেস কটন সাওয়ারিং এর সময় ব্যবহার করা হয়। যেখানে নন স্যাপনিফায়াবল তেল এবং মোমকে ইমালসিফাইং এজেন্টের মাধ্যমে দূর করে। সাধারণত সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ওয়েটিং এজেন্টের সাথে সাবানই (ওয়াশিং সাবান) হলো ভালো ইমালসিফাইং ।

ডিটারজেন্সি (Detergency ) 
স্যাপনিফিকেশনের সাহায্যে উদ্ভিদ তেল এবং ইমালসিফাইং এর মাধ্যমে মোম ও খনিজ তেল দূর করার পরও কাপড়ে সাইজিং দ্রব্য হিসেবে চায়না ক্লে ও অন্যান্য শক্ত অপদ্রব্য যার মধ্যে ডাস্ট ও জট থাকে তা দূর করার প্রয়োজন হয় । তেল, খনিজ তেল এবং মোম দূর হওয়ার পর এ সমস্ত বাইন্ডিং দ্রব্যাদি লুজ হয়ে পড়ে এবং তা উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রয়োগে কাপড় হতে অপসারিত হয় । কাপড় পরিত্যাগ করে তা স্কাওয়ারিং দ্রবণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে এবং পুনরায় কাপড়ের অন্য অংশে জমা হয়। এ ধরনের অপদ্রব্য পূনরায় জমা হওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য স্কাওয়ারিং দ্রবণে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয়। যা এ ধরনের শক্ত পার্টিকেলকে কাপড়ের পৃষ্ঠে জমা হতে বাধা দেয়। সাবান হলো একটি উৎকৃষ্ট ডিটারজেন্ট ।

একটি ভালো ডিটারজেন্ট অবশ্যই একটি ভালো ওয়েটিং এজেন্ট । যদি কিয়ার বয়লারে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয় তবে অন্য কোন ওয়েটিং এজেন্ট ব্যবহার করার প্রয়োজন নাই। সুতারাং কাওয়ারিং এর সময় যথাযথ ডিটারজেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

স্কাওয়ারিং পদ্ধতির বর্ণনা 
বর্তমানে স্কাওয়ারিং করার জন্য বহু উন্নতমানের মেশিন আবিষ্কার হয়েছে। স্কাওয়ারিং এর মূল উপাদান হলো অ্যালকালি । সুতরাং অ্যালকালি দ্বারা তিনভাবে কাওয়ারিং পদ্ধতি বিবেচনা করা যেতে পারে । 
১। লাইম অ্যাসিড সোডা অ্যাস পদ্ধতি (Lime acid soda ash process) 
২। কস্টিক সোডা পদ্ধতি (Causic soda process) 
৩। সাবান সোডা অ্যাস ট্রিটমেন্ট ফর কালার শুভস্ (Soap soda ash treatment for colour goods)

১। লাইম অ্যাসিড সোডা অ্যাস পদ্ধতি (Lime acid soda ash process ) 
এ পদ্ধতিতে কাপড়কে ২-৪% মিল্ক অব লাইম (ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড) দ্রবণে ডুবানো হয়। তারপর কিয়ারে প্রচুর ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সান্নিধ্যে কাপড়কে ২০ পাউন্ড /বর্গ ইঞ্চি চাপ এবং ১২৫° সে. তাপমাত্রায় কয়েক ঘণ্টা বয়েলিং করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত স্যাপনিফিয়াবল তেল ও মোম অপদ্রবর্ণীয় ক্যালসিয়াম সাবানে পরিবর্তিত না হয়। পেকটোসেস এবং পেকটিন অ্যাসিডে হাইড্রোক্সাইড হয়ে অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম পেকটেড আকারে থাকে। প্রোটিন ও অ্যামিনো যৌগ হাইড্রোক্সাইড হয়ে দ্রবীভূত হয়। কাপড়কে ধৌত করে এ সমস্ত দ্রবণীয় অপদ্রব্য দূর করা হয় । তারপর কাপড়কে ২০° w টোয়াডেল হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দ্রবণে পাইল করে রাখা হয় । ক্যালসিয়াম সাবান ও পেকটেড দ্রবণীয় ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড পরিবর্তিত হয় এবং মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ও পেকটিক অ্যাসিড এবং দ্রবণীয় পদার্থগুলো ধৌত করে দূর করা হয়। পরবর্তীতে কাপড়কে রেজিন সাবানের উপস্থিতিতে সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবণ দ্বারা উত্তপ্ত করা হয় । এ বয়েন্সিং প্রক্রিয়ার ফ্যাটি অ্যাসিড এ পেকটিক অ্যাসিড উভয় দ্রুত সোডিয়াম কার্বনেট দ্বারা দ্রবীভূত হয় যা সহজে ধৌত করে দূর করা যায় ।

২। কস্টিক সোডা পদ্ধতি (Caustic soda process) 
স্কাওয়ারিং সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ডিসকন্টিনিউয়াস প্রসেসে কস্টিক সোডাকে মূল স্কাওয়ারিং কেমিক্যাল হিসেবে ব্যবহার করে কিয়ার বয়লার নামক যন্ত্র দ্বারা কটন কাপড় স্কাওয়ারিং করা হয় । কিয়ার হলো কাস্ট আয়রন বা স্টেইনলেস স্টিলের একটি বিশেষ ধরনের পাত্র। যার ক্ষমতা ৫০০ পাউন্ড থেকে ৫ টন পর্যন্ত, তবে ৩ টন ক্ষমতা সম্পন্ন কিয়ার বেশি ব্যবহার হয়। এ যন্ত্রে কাপড়ের ওজনের শতকরা ২ থেকে ৫ ভাগ কস্টিক সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবনে কটন কাপড় বরেল করলে কাপড়ের ভিতরের অপদ্রব্য দূর হয়ে যায় ।

এছাড়া কস্টিক সোডা স্কাওয়ারিং কেমিক্যাল হিসেবে ব্যবহার করে কন্টিনিউয়াস পদ্ধতিতে এ কটন কাপড় স্কাওয়ারিং করা হয়। এর মধ্যে জে-বক্স ও ভ্যাপার লক পদ্ধতি অন্যতম জে বক্স মেশিন দেখতে ইংরেজি 'J' অক্ষরের মতো। এটি স্টেইনলেস স্টীল বা সিরামিকের তৈরি বিশেষ ধরনের পাত্র বিশেষ। যার প্রতি দিনের উৎপাদন প্রায় ৪০ টন। এ জে- বক্সে কাপড়ের ওজনের শতকরা ৫ থেকে ৯ ভাগ কস্টিক সোডা ব্যবহার করে কটন কাপড় স্কাওয়ারিং করে অপদ্রব্য দূর করা হয় । ভ্যাপার লক পদ্ধতি একটি আধুনিক স্কাওয়ারিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অত্যন্ত কম সময়ে কটন কাপড়কে তার ওজনের শতকরা ৫ থেকে ৯ ভাগ কস্টিক সোডা ব্যবহার করে স্কাওয়ারিং করা হয়।

৩। সাবান সোডা অ্যাস ট্রিটমেন্ট ফর কালার গুডস্ (Soap soda ash treatment for colour goods) 
কালারড ওভেন কাপড়ের স্কাওয়ারিং এর জন্য আধুনিক পদ্ধতি হলো সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবণ দ্বারা স্কাওয়ারিং। এতে সাধারণত কাপড়ের ওজনের শতকরা ২.৫ ভাগ সোডিয়াম কার্বনেট ব্যবহার করা হয় । অথবা সাবান দ্বারা বা সোডিয়াম কার্বনেট ও সাবান মিশ্রিত দ্রবণ দ্বারা ও উইনচ্ মেশিন ওপেন কিয়ারে কম চাপে স্কাওয়ারিং করা হয় ।

কিছু কিছু কাপড়ে সাদা সুতার সাথে টানা ও পড়েন রঙিন সুতা ব্যবহার করা হয়। আর এ জন্য কাপড়ে রঙিন ডিজাইন তৈরি হয় । এ ধরনের বুননকৃত কাপড়ে স্কাওয়ারিং ও ব্লিচিং প্রয়োজন হয়। কেননা বুননের সময় কাপড়ে বা সুতার ময়লা অপদ্রব্য, তেল বা মেশিনের দাগ লাগতে পারে না। এ ধরনের কালারড সুতার রং নির্বাচনে সীমাবন্ধতা রয়েছে।

স্কাওয়ারিং (Scouring) 
কাপড়কে অ্যালকালি দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে পানি দ্বারা ওয়াশ করার পরও পুরোপুরি অ্যালকালি মুক্ত হয় না, যা পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর। কাজেই স্কাওয়ারিং পদ্ধতির থেকে যাওয়া অ্যালকালি দূর করার জন্য বা কাপড়কে প্রশমিত (Neutralisation) করার জন্য পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCI) বা পাতলা সালফিউরিক এসিড (H2SO4) দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতিকে সাওয়ারিং বলে।

ব্লিচিং (Bleaching) 
ডিসাইজিং ও স্কাওয়ারিং পদ্ধতিতে কাপড় হতে স্টার্চ জাতীয় পদার্থ, চর্বি, মোম ও অন্যান্য অপদ্রব্য দূর করা হয় এবং কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু কাপড়ে টেক্সটাইল নিজস্ব রং অর্থাৎ প্রাকৃতিক রং পূর্ববর্তী পদ্ধতিতে দূর হয় না, যা দূর করার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে ব্লিচিং বলে। রিচিং এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে কাপড়ের প্রাকৃতিক রং (Natural colour) দূর করে ধবধবে সাদা করা হয়। যাতে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় । তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন অতিরিক্ত ব্লিচিং না হয়ে যায় । অতিরিক্ত ব্লিচিং কাপড়ের সেলুলোজকে ভেঙ্গে দেয় অর্থাৎ কাপড়কে দুর্বল করে ফেলে। ফলে কাপড় টেকসই হয় না এমনকি নষ্ট (Damage) হয়ে যেতে পারে ।

ব্লিচিং এর সংজ্ঞা (Definition of Bleaching ) 
যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেক্সটাইল সামগ্রী হতে প্রাকৃতিক রং জাতীয় পদার্থ দূর করে ধবধবে সাদা করা হয় তাকে ব্লিচিং বলে।

ব্লিচিং এর উদ্দেশ্য (Objectives of Bleaching) 
১. কাপড় হতে প্রাকৃতিক রং জাতীয় পদার্থ দূর করা। 
২. কাপড়কে স্থায়ী ধবধবে সাদা করা। 
৩. কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা অধিক বৃদ্ধি করা। 
৪. পরবর্তী প্রক্রিয়া যেমন- ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিসিং এর উপযোগী করে তৈরি করা।

ব্লিচিং এর প্রকারভেদ (Classification of Bleaching ) 
ব্লিচিং সাধারণত দুই প্রকার। যথা- 
১। হ্যান্ড ব্লিচিং (Hand Bleaching) 
২। মেশিন ব্লিচিং (Machine Bleaching)

ব্লিচিং (Bleaching) এজেন্ট এর উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়- 
১। অক্সিডাইজিং এজেন্ট দ্বারা ব্লিচিং (Bleaching by Oxidizing Agent ) 
২। রিডিউসিং এজেন্ট দ্বারা ব্লিচিং (Bleaching by Reducing Agent) 

রাসায়নিক ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়- 
১। হাইপোক্লোরাইড ব্লিচিং (OCl Bleaching) 
২। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্লিচিং ( H2O2 Bleaching) 
৩। সোডিয়াম ক্লোরেট ব্লিচিং (NaClO, Bleaching )

অক্সিডাইজিং ব্লিচিং এজেন্ট এর তালিকা (List of Oxidizing Bleaching Agent ) 
০ ক্লোরিন গ্যাস (CH2) 
০ ওজন (O3) 
o হাইড্রোজেন পার অক্সাইড (H2O2) 
০ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড (NaOCl) 
০ ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইড [Ca(OCl)2] 
০ ব্লিচিং পাউডার [Ca(OCl)Cl ] 
০ সোডিয়াম পার অক্সাইড (Na2O2) 
০ পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4) 
০ সোডিয়াম ডাইক্রোমেট (Na2Cr2O7) 
০ পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট (K2Cr2O7) 
০ পটাসিয়াম ক্লোরেট (KCIO3)

রিডিউসিং ব্লিচিং এজেন্ট (List of Reducing Bleaching Agent) 
০ হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) 
০ সালফারডাই অক্সাইড (SO2) 
০ সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4) 
০ ফেরাস সালফেট (FeSO4) 
০ টিটেনাস ক্লোরাইড (iCl2 ) 
০ স্টেনাস ক্লোরাইড (SnCl2 ) 
০ হাইড্রোজেন (H2) 
০ কার্বন (C) 
০ কার্বন মনোক্সাইড (CO) 
০ জিঙ্ক ডাস্ট (Zn)

ব্লিচিং এর পদ্ধতি - 
ব্রিচিং সাধারণত দুই ধরনের। যথা- 
১। হ্যান্ড ব্লিচিং (Hand Bleaching) 
২। মেশিন ব্লিচিং (Machine Bleaching)

১। হ্যান্ড ব্লিচিং (Hand Bleaching ) । 
কোন প্রকার মেশিন বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ছাড়া যদি হাতের সাহায্যে খোলা বা ঢাকনাসহ পাত্রে কাপড় বা সুতাকে ব্লিচিং করা হয় তবে তাকে হ্যান্ড ব্লিচিং বলে। আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের পূর্বে এ ধরনের হ্যান্ড ব্লিচিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। বর্তমানে হ্যান্ড লুমে বা ক্ষুদ্র আকারের ডাইং, প্রিন্টিং এবং টেক্সটাইল সাদৃশ্য শিল্পে অর্থাৎ যেখানে ছোট আকারের (Small scale) সুতা বা কাপড় ব্লিচিং এর প্রয়োজন হয় সে সব ক্ষেত্রে হ্যান্ড ব্লিচিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে ব্লিচিং প্রক্রিয়া মেশিনের মতো নিখুঁত হয় না। হ্যান্ড ব্লিচিং প্রক্রিয়া বিশেষ করে কটনের ক্ষেত্রে সাধারণত সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড, ব্লিচিং পাউডার এবং হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার হয়। তবে দাম বেশি থাকার জন্য সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইডে বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতিরেকে ব্যবহার হয় না। ব্লিচিং পাউডার এবং হাইড্রোজেন পার অক্সাইড হ্যান্ড ব্লিচিং এ অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়।

প্রথমে অল্প পানিতে ভালোভাবে ব্লিচিং পাউডার মিশানো হয়। এরপর আস্তে আস্তে পানি যোগ করে একে ছেকে পরিস্কার অংশটুকু ব্লিচিং পাউডারের দ্রবণ হিসেবে লওয়া হয়। কটন ব্লিচিং এর জন্য সাধারণত ব্লিচিং পাউডারের দ্রবণ ২ থেকে ৩ ডিগ্রি টোরাডেল নিতে হয়। ব্লিচিং এর দ্রবণ ২০ থেকে ২৫° সে. তাপমাত্রায় করা ভালো। ব্লিচিং করার সময় সাধারণত কক্ষ তাপমাত্রায় করা হয়। তবে খারাপ ধরনের কটন ব্লিচিং এর জন্য কখনও কখনও দ্রবণ সামান্য গরম করা হয়ে থাকে। ব্লিচিং পাত্রে কটন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় ডুবিয়ে রাখতে হয় । তবে এ সময় মাঝে মাঝে কটন উল্টিয়ে দিতে হয়। ব্লিচিং এর সময় কটন যাতে সম্পূর্ণরূপে দ্রবণে ডুবে থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় বায়ুর অক্সিজেন কটনকে অত্যধিক নরম করে ফেলবে।

ব্লিচিং ক্রিয়া শেষ হলে কটনে যথেষ্ট পরিমাণ চুন জাতীয় পদার্থ থাকে যা পানিতে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় পাতলা অ্যাসিড দ্রবণে ধৌত করা হলেই চুন জাতীয় পদার্থের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়াকে সাওয়ারিং বলে।

এসিড ক্রিয়ার পর কটনকে ঠান্ডা পানিতে ধৌত করা হয়। ফলে কটন থেকে অ্যাসিড দূরীভূত হয়। এ প্রক্রিয়ায় দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন অন্যথায় কটনে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২। মেশিন ব্লিচিং ( Machine Bleaching)
বর্তমানে ব্লিচিং করার জন্য অনেক উন্নত এবং আধুনিক মেশিন আবিষ্কার হয়েছে। এসব মেশিন দ্বারা অত্যন্ত কম সময়ে সহজেই ব্লিচিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। তবে এটি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরনের আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন ব্যবহার করা হয় না। এ আধুনিক ব্লিচিং মেশিন দ্বারা একদিকে যেমন কম সময়ে উৎপাদন দেওয়া যায় অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকায় বিভিন্ন ধরনের কাপড় নিখুঁত ব্লিচিং করা যায়। তবে এ ধরনের মেশিনে তাপমাত্রা, সময় ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ক্ষতিও হতে পারে।

Content added || updated By

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 
১. স্কাওয়ারিং কী? 
২. স্কাওয়ারিং পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কী? 
৩. স্কাওয়ারিং এ ব্যবহার মূল কেমিক্যালের নাম কী লেখ? 
৪. স্যাপনিফিকেশন বলতে কী বুঝায়? 
৫. ব্লিচিং প্রক্রিয়ায় কাপড় থেকে কি দূর করা হয়? 
৬. ব্লিচিং এর প্রকারভেদ লেখ?
৭. তিনটি রিডিউসিং এজেন্ট এর নাম লেখ?
৮. সাওয়ারিং এর সংজ্ঞা দাও? 
৯. ব্লিচিং এ ব্যবহার মূল কেমিক্যালের নাম লেখ?
১০. সাওয়ারিং এ ব্যবহার কেমিক্যালের নাম লেখ?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 
১. স্কাওয়ারিং এর উদ্দেশ্য লেখ?
২. যে কোন ৫টি অক্সিডাইজিং এজেন্টের নাম লেখ?
৩. সাওয়ারিং এর জন্য কেমিক্যালস্ ব্যবহার করা হয় তার নাম লেখ?
৪. ব্লিচিং এর উদ্দেশ্য কি? 
৫. গ্রে কাপড় থেকে তেল, চর্বি, মোম ও অপদ্রব্য দূর করার জন্য টেক্সটাইলের কোন প্রসেস ব্যবহার করা হয় এবং তাতে কি উপকার হয়? 

রচনামূলক প্রশ্ন 
১। স্কাওয়ারিং এর সংজ্ঞাসহ প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর?
২। হ্যান্ড ব্লিচিং ও মেশিন ব্লিচিং এর পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর? 
৩। যে কোন এক প্রকার স্কাওয়ারিং পদ্ধতির বর্ণনা দাও?
৪ । কটন কাপড় ব্লিচিং পদ্ধতির আলোচনা কর?
৫। স্কাওয়ারিং এবং ব্লিচিং এর মাধ্যমে কাপড়ের কী কী গুণ বৃদ্ধি পায় তা আলোচনা কর?

Content added By