এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

অন্যান্য প্রাণীর মতই সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও দৈহিক বৃদ্ধির জন্য চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। চিংড়ির অধিক উৎপাদন পাওয়ার লক্ষ্যে পুকুর/ঘেরে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি বাহির থেকে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা অপরিহার্য। সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগের ফলে চিংড়ির দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধির পাশাপাশি অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চিংড়ি প্রতিপালনের জন্য উচ্চ মাত্রায় আমিষ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করা আবশ্যক।

চিংড়ির খাদ্যে আমিষের পরিমাণ কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হতে হবে। চিংড়ি পোনা থেকে শুরু করে আহরণ পর্যন্ত নির্ধারিত খাদ্য তালিকা অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। আবহাওয়ার পরিবর্তন, পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়া, পিএইচ, এ্যালকালিনিটি, লবণাক্ততা, ইত্যাদির তারতম্য ও খোলস পরিবর্তনের ওপর চিংড়ির খাদ্য গ্রহণ নির্ভর করে। লিফ্ট নেট দিয়ে পরিমিত খাদ্য গ্রহণ ও চিংড়ির স্বাস্থ্য নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে। সম্পুরক খাদ্য ও ভাল ব্যবস্থাপনায় এক কেজি চিংড়ি উৎপাদনের জন্য ১.৩-১.৫ কেজি খাদ্য প্রয়োজন পড়ে। সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের উপকারিতা-

১) অধিক ঘনত্বে চিংড়ি চাষ করা যায়;

২) চিংড়ির মৃত্যুহার অনেকাংশে কমে যায়,

৩) চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়;

৪) চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়;

৫) অল্প সময়ে চিংড়ি বিক্রয় উপযোগী হয়; এবং

৬) অল্প আয়তনের জলাশয় হতে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়।

চিংড়ির খাদ্য গ্রহণ, খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ, বিভিন্ন জৈব ও পারিবেশিক অবস্থার কারণে ভিন্ন হয়। তাই খাদ্য প্রয়োগের সময় নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনা করতে হবে-

১) চিংড়ির গড় ওজন;

২) পানির তাপমাত্রা;

৩) প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা;

৪) খাদ্যে পুষ্টির পরিমাণ, স্বাদ ও পানিতে দ্রবণের স্থায়িত্বশীলতা

৫) খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি (কতবার, সময় ও পরিমাণ) এবং খাদ্য গ্রহণের হার পর্যবেক্ষণ ;

৬) খামার পরিচালনাকারীর জ্ঞান ও দক্ষতা, এবং

৭) চিংড়ির খোলস পাল্টানোর সময়, অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা এবং খাদ্য গ্রহণের ধরন।

খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান না থাকলে চিংড়ি চাষে নিম্নোক্ত সমস্যাসমূহের সম্মুখীন হতে হয়- 

১) চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি ধীরে হবে;

২) বিভিন্ন উপাদানের অভাবের কারণে দেহে অস্বাভাবিকতা দেখা দিবে;

৩) চাষকালিন সময় দীর্ঘায়িত হবে ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে ও উৎপাদন কমে যাবে; 

৪) চিংড়ি রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

খাদ্য প্রয়োগের হার কম হলে, সাধারণত নিম্নোক্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়:

১) সকল চিংড়ি সমানভাবে খাদ্য গ্রহণ করতে পারবে না;

২)চিংড়ি সমহারে বৃদ্ধি না হওয়ায় বিভিন্ন আকারের হবে;

৩) স্বজাতিভোজিতা (ক্যানাবলিজম) বৃদ্ধি পাবে,

৪) রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, এবং

৫) সর্বোপরি উৎপাদন হ্রাস পাবে এবং খামার মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাদ্য প্রয়োগ করলে:

 ১) অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ করলে অব্যবহৃত খাদ্য পঁচে পানি নষ্ট করে পরিবেশ দূষিত করবে;

২) মাটি ও পানির চাষপোযোগী উপাদানসমূহের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে;

৩) চিংড়ির বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে, এবং

৪) চিংড়ি রোগাক্রান্ত হয়ে ব্যাপক মড়ক হতে পারে।

Content added By

Promotion