এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

আমাদের দেশে চিংড়ি সম্পদ বিপণনের ক্ষেত্রে এখনো কোনো ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি বলেই প্রতীয়মান হয়। মূলত চিংড়ি উৎপাদনকারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, পরিবহণ ব্যবস্থা, সম্পদ সংরক্ষণ সুযোগ-সুবিধা ও মধ্য-সুবিধাভোগীদের (ফড়িয়া, আড়তদার, বেপারী) ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। খুব কম পরিমাণ চিংড়িই চিংড়ি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রেতার হাতে পৌঁছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মধ্য- সুবিধাভোগীদের একটা ধারাবাহিক পর্যায়ের মাধ্যমে তা বাজারে আসে। আমাদের দেশে চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়া ধারাবাহিক পর্যায় বা ধাপসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো :

ক. চিংড়ি উৎপাদনকারী ও আহরণকারী বা জেলে সম্প্রদায়

চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় সাধারণত দু'টি উৎস থেকে সরাসরি বাজারে চিংড়ি আসে, যেমন- খামারে উৎপাদিত চিংড়ি (পুকুর, স্বাদুপানির জলাশয় ও উপকূলবর্তী চিংড়ি খামার) এবং প্রাকৃতিক জলজসম্পদ থেকে আহরিত চিংড়ি (নদী-নালা, খাল-বিল, সমুদ্র উপকূলীয় জলাশয়)। চিংড়ি উৎপাদনকারী ও আহরণকারী বা জেলে সম্প্রদায় অনেক সময় সরাসরিভাবে চিংড়ি বিপণন করে থাকে।

খ. মধ্যস্বত্বভোগী (দালাল, ফড়িয়া, নিকারী)

আহরিত চিংড়ি ও মাছ কোন কোন ক্ষেত্রে সরাসরি বাজারে বিক্রয় হলেও উৎপাদক বা আহরণকারী কর্তৃক বাজার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেই বললেই চলে। অধিকাংশ আহরিত চিংড়ি দালাল বা নিকারীদের মাধ্যমে বড় ব্যবসায়ী বা আড়তদারের নিকট এসে পৌঁছে। কখনো কখনো দালালদের মাধ্যমে সরাসরি খুচরা বিক্রয়কারীর নিকট পৌঁছে থাকে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে চিংড়ি আহরণের ক্ষেত্রে নিকারী মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চিংড়ি আহরণকারীদের (জেলে) অগ্রিম ধার দিয়ে থাকে। ফলে আহরণকারীগণ চুক্তিভিত্তিক ধার্যকৃত মূল্যে উৎপাদিত মাছ বিক্রয় করতে বাধ্য থাকেন। এক্ষেত্রে প্রকৃত চিংড়ি উৎপাদক বা আহরণকারীরা যেমন- আহরিত চিংড়ির প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হন, তেমনি পরোক্ষভাবে ক্রেতারাও অধিক মূল্যে চিংড়ি ক্রয় করে থাকেন। এক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরাই উৎপাদিত চিংড়ি বিপণনের মাধ্যমে অধিক লাভবান হয়ে থাকে।

গ. চালানী

চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় এরা হল প্রকৃত মৎস্য ব্যবসায়ী বা মহাজন। এরা নিকারি বা দালালদের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন এলাকা থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করে মহাজন বা শহরের বড় ব্যবসায়ীদের নিকট পৌঁছে দিয়ে থাকেন। দালাল বা নিকারীরা এদের কাছ থেকে মূলধন ও সংরক্ষণ উপকরণ পেয়ে থাকেন।

ঘ. আড়তদার

চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় চালানী, দালাল বা চিংড়ি উৎপাদনকারী ও আহরণকারীদের মাধ্যমে আহরিত চিংড়ি আড়তদারের কাছে পৌঁছায়। আড়ত বলতে মূলত আধুনিক সুযোগা-সুবিধা সম্বলিত চিংড়ি সংরক্ষণ ও বিক্রয় কেন্দ্রকে বুঝানো হয়। এখান থেকেই মাছ বা চিংড়ি উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রয় করা হয়। বিক্রীত টাকার ওপর আড়তদার নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেয়ে থাকেন। কমিশনের পরিমাণ এলাকাভেদে ও আড়তের সুযোগ-সুবিধা অনুসারে বিভিন্ন হয়ে থাকে। মূলত আড়তদার পাইকারি বিক্রেতার নিকট চিংড়ি বিক্রয় করে থাকেন।

চিত্র ৪.৭: বাংলাদেশের সাধারণ চিংড়ি বিপণন প্ৰক্ৰিয়া

ঙ. পাইকারী বিক্রেতা

পাইকারী বিক্রেতা দর কষাকষির মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতার কাছে মাছ বিক্রয় করে। খুচরা বিক্রেতা ভোক্তা বা ক্রেতার কাছে মাছ বা চিংড়ি পৌঁছে দেন। এ ক্ষেত্রেও দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় রপ্তানি একটি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা হিসেবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশও ইতোমধ্যে বিশ্ব বাজারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু এ উন্মুক্ত বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলকে ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী চিংড়ির গুণগতমান উন্নতকরণের লক্ষ্যে চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়াকে অধিকতর কার্যক্ষম করতে হবে। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপসমূহের মধ্যে বিরাজমান সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করা প্রয়োজন এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে চিংড়ি বিপণন নীতিমালা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

Content added By

Promotion