এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

আদিকাল থেকেই মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য পরিবহণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। কাঠের বাক্স, চামড়া ও কাপড়ের ব্যাগ, মাটির পাত্র ও বান্ডিল তৈরির জন্য রশি ব্যবহার করা হয়। প্যাকিং করার উদ্দেশ্য হলো যথাযথ সংরক্ষণ, সুষ্ঠ পরিবহণ ও হ্যান্ডলিং-কে সহজতর করা ও সর্বোপরি পণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। মৎস্য পণ্য পরিবহণ করার জন্য বর্তমানে ধাতুর তৈরি পাত্রের সাথে সাথে গ্লাস, কাগজ ও প্লাষ্টিক দ্বারা তৈরি পাত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্যাকিং প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ 

ক) প্যাকিং প্রযুক্তি এমন হবে যাতে চর্বির জারণ বন্ধ হয়

খ) হিমায়িত মৎস্য পণ্য পানিমুক্ত করা বন্ধ করবে যাতে ফ্রোজেন অবস্থায় গঠন ঠিক থাকে।

গ) ব্যাক্টেরিয়া জনিত ও রাসায়নিক পচন বন্ধ করবে। 

ঘ) চিংড়ি থেকে গন্ধ বের হওয়া বন্ধ করবে।

তাজা চিংড়ি প্যাকিং: তাজা চিংড়ি সাধারণত প্লাস্টিক বাক্স বা খাদযুক্ত বাক্সে প্যাকিং করা হয়। প্লাস্টিক বাক্স অধিক ব্যবহৃত হচ্ছে কারণ প্লাস্টিক বাক্স হালকা, শক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত। চিংড়ি বাক্স নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়াদি বিবেচনায় নেয়া উচিত-

ক) বাক্সের আকার এমন হবে যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিংড়ি রাখা যায়।

খ) চিংড়িতে পূর্ণ বাক্স যাতে খুব সহজেই পরিবহণ করা যায়।

গ) বাক্স ব্যবহারের পর সহজেই পরিষ্কার করা যায়। 

ঘ) চিংড়ি থেতলে যাওয়া, পচন, পরিবেশ দূষণ ও ছোটখাটো চুরি থেকে রক্ষা পাবে। 

ঙ) বাক্সের আকৃতি এমন হবে যাতে বাক্সের ভিতরের চিংড়ির পরিমাণ সহজেই নির্ণয় করা যায়। 

চ) চিংড়ি সহজেই বিক্রয় কেন্দ্রে প্রদর্শন করা যায়।

ছ) যদি বরফ ব্যবহৃত হয় তবে বরফ গলিত পানি বের হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। 

জ) সর্বোপরি বাক্স তৈরির উপকরণ সহজপ্রাপ্য ও কম দামী হতে হবে।

পাইকারী বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্যাকিং: এক্ষেত্রে তাজা মাছ ও ফ্লোজেন চিংড়ি প্যাকিং করা হয়। সাধারণত রেসিন করা কাগজের মন্ডের বাক্স ব্যবহৃত হয়। তবে ফাইবার বোর্ড বাক্স ও করুগেটেড বোর্ড কার্টুন বেশি ব্যবহৃত হয়, কারণ এগুলোর উপর পলিথিনে আবৃত থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে অধিক পূর্ণতার জন্য পলিস্টাইরিন লাইনিং ব্যবহৃত হয়।

ব্লক ফ্রোজেন প্যাকিং: এ পদ্ধতিতে চিংড়ি (খোলস ছাড়ানো) ফাইবার বোর্ড কার্টুন দিয়ে প্যাকেট করা হয়। সমস্ত প্যাকেটটি প্লেট ফ্রোজেন করা হয়। প্যাকেট শক্ত হওয়াতে পণ্যকে রক্ষা করে এবং শক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্লক ফ্রোজেন প্যাক খুব সহজেই স্টোর ও পরিবহণ করা যায়। এ পদ্ধতির অসুবিধা হলো প্যাকেটের একটা চিংড়ি বের করতে হলে সমস্ত বরফ গলাতে হয়।

আইকিউএফ (Individual Quick Freezing - IQF): প্যাকেট করা বস্তুর বৈশিষ্ট্য হলো ফ্রোজেন, গ্রেজড ও পলিথিন দ্বারা আবৃত বাক্সে ভর্তি। এ পদ্ধতিটি খুব উপযোগী কারণ খুব সহজেই খুচরা বিক্রির জন্য নুতুনভাবে প্যাকেট করা যায়। সরবরাহকারীদের নিকটও খুব উপযোগী কারণ প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা যায়। আইকিউএফ পদ্ধতিতে খোলস ছাড়ানো চিংড়ি ও মাছ প্যাকেট করা হয়।

লেয়ারড প্যাক: পলিকোটেড ফাইবার বোর্ড বাক্স দ্বারা প্যাক করা হয়। ফিলেটগুলো পলিথিন লেয়ার দ্বারা পৃথক করা এবং প্রয়োজন অনুসারে ফিলেটগুলো আলাদা করা যায়। লেয়ারড প্যাক, আইকিউএফ প্যাকের চেয়ে গাদাগাদি করে রাখা, গুদামজাত করা ও পরিবহণ করা সহজ।

স্যাটার প্যাকিং: সাধারণত হোটেল ও রেস্তোরায় মৎস্যজাত পণ্যের এই প্যাকেটগুলো ব্যবহৃত হয়, কারণ সমস্ত প্যাক থেকে ডিফ্রোস্টিটিং ছাড়া ফিলেটগুলো আলাদা করা যায়।

সারণি: সচারচর ব্যবহৃত প্যাকিং পাত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ

বাগদা চিংড়ি পরিবহণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে-

ক) পরিবহণের সময় ও দূরত্ব অনুসারে প্রয়োজনীয় বরফ ব্যবহার করতে হবে, যাতে গন্তব্য স্থানে পৌছার পরও চিংড়ির গায়ে বরফ থাকে।

খ) হোগলার চাটাই, ছালার চটে মুড়িয়ে বাঁশ নির্মিত ঝুড়িতে ও বরফবিহীন অবস্থায় চিংড়ি পরিবহণ পরিহার করা।

গ) ইনসুলেটেড/ তাপ নিরোধক পাত্র বা প্লাস্টিকের ঝুড়িতে বরফ মিশ্রিত করে চিংড়ি পরিবহণের ব্যবস্থা
করা।

ঘ) পরিবহণকালে পাত্র বা বাক্সে চিংড়ি রাখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে উপরের চিংড়ির চাপে বা বাক্সের ভালা লাগাবার সময় অধিক চাপ না পড়ে। অধিক চাপে নিচের চিংড়ি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, কেননা চিংড়ির মাংসপেশী অন্যান্য উচ্চতর প্রাণীর চাইতে নরম।

ঙ) ডিপো থেকে পরিবহণের ভাড়া সাশ্রয়ের প্রতি অধিক গুরুত্ব না দিয়ে ট্রাকে বরফ সহকারে চাটাই বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে যতদ্রুত সম্ভব চিংড়ি কারখানায় স্থানান্তর করা।

চ) অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের বরফ ব্যবহার করে খোলা ট্রাকে স্তুপাকারে অধিক পরিমাণ চিংড়ি পরিবহণ না করা। পরিবহণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

ছ) চিংড়ি বোঝাই ট্রাকে চাটাই বা ত্রিপলের উপর ট্রাকের সাহায্যকারীরা অবাধে চলাফেরা করার ফলে চিংড়ি থেতলে যায়, নরম হয়, সতেজতা হারায় এবং পচনকারী অণুজীব দ্বারা সহজেই সংক্রমিত হয়। চাটাই বা ত্রিপলের উপর দিয়ে ট্রাকের সাহায্যকারীরা অবাধে চলাফেরা করতে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা।

Content added By