On This Page
এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

একটি হ্যাচারি তৈরির ক্ষেত্রে তিনটি নির্ধারক রয়েছে। এগুলো হলো- অভীষ্ট প্রজাতি (Target species), উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা (Production target), এবং আর্থিক যোগান (Financial investment)।

Content added By

হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে অভীষ্ট প্রজাতি চিহ্নিত করতে হবে ও বাজারের চাহিদা এবং আর্থিক যোগানের ওপর ভিত্তি করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে, যা হ্যাচারির নকশা তৈরির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। হ্যাচারির প্রকারভেদ সাধারণত হ্যাচারির কার্যকরী প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থনৈতিক দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। হ্যাচারির আকার বা আয়তনের ওপর ভিত্তি করে তিনভাগে ভাগ করা হয়।

Content added By

এটি এমন একটি হ্যাচারি যা চাষি তার নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে বা অতিরিক্ত শ্রমের জন্য নিজ পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পরিচালনা করে। মূল লক্ষ্য হলো হ্যাচারিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা উৎপাদন করা যা দিয়ে নিজের চাহিদা মিঠানোর পাশাপাশি প্রতিবেশি চাষিদের কাছে বিক্রি করা। এটি সাধারণত ১০০০ বর্গমিটারের মধ্যে হয়ে থাকে। পোনা উৎপাদনের পরিমাণও কম হয়। বছরে ৪০-৫০ লক্ষ পোস্ট লার্ভার বেশি হয়না এবং ২ জন কারিগরী কর্মী দ্বারা হ্যাচারি পরিচালিত হয়। এ ধরনের হ্যাচারির মূলধন বিনিয়োগের জন্য সাধারণত ২০-২৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়। হ্যাচারিতে ব্যবহৃত চৌবাচ্চার আয়তন ১০ টনের কম হয়। কম ঘনত্বে অপরিশুদ্ধ পানি ব্যবহৃত হয়। তাই পোনা বাঁচার সম্ভাবনা ০- ৯০%। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এ ধরনের হ্যাচারির অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

Content added By

এইসব হ্যাচারি বিনিয়োগকৃত মূলধন, হ্যাচারির আকার, হ্যাচারির উৎপাদন ক্ষমতা এবং পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে ছোট আকারের হ্যাচারির চেয়ে তুলনামূলকভাবে বড়। তবে হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ছোট আকারের হ্যাচারির মতই। বছরে পোস্ট লার্ভা উৎপাদনের পরিমাণ ১.০-২.০ কোটি এবং তিনজন কারিগরী কর্মী, ৩-৪ জন শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে পরিশোধিত পানি বেশি ঘনত্বে ব্যবহার করা হয়। পোনা বাঁচার হার প্রায় ৪০% বা তার কম। ছোট সমবায় সমিতি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এ ধরনের হ্যাচারিগুলো সাধারণত তাদের সদস্য চাষিদের প্রয়োজনীয় বাগদা চিংড়ির পোনা সরবরাহ করে থাকে।

Content added By

বড় আকারের হ্যাচারি পরিচালনার জন্য বড় কর্পোরেশন, সরকারি সংস্থা বা সমবায় প্রকল্পের সহায়তা প্রয়োজন হয়। এ হ্যাচারিগুলো বাণিজ্যিকভাবে পোনা উৎপাদন এবং সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে মূলধন কয়েক লক্ষ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চিংড়ি পোনা উৎপাদন করা হয়। সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকে এবং সর্বোচ্চ ৬ জন কারিগরী কর্মী এবং ৬-১০ জন শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত হয়। বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ২.০ কোটির বেশি হতে পারে। এখানে পোনা বাঁচার হার সর্বোচ্চ প্রায় ৬০ শতাংশ।

Content added By

বাগদা চিংড়ির হ্যাচারি সফলভাবে পরিচালনার জন্য স্থান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্যিকভাবে বাগদা হ্যাচারি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে লোনাপানির প্রয়োজন তাই সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী স্থানে বাগদা হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত। নির্বাচিত স্থানে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাগদা চিংড়ি হ্যাচারির স্থান নির্বাচনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত -

Content added By

ব্রুড চিংড়ি বাগদা হ্যাচারির প্রাণ। তাই যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে রুড চিংড়ি পাওয়া যাবে সেখানে বাগদা চিংড়ির হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত।

Content added By

সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী স্থানে বাগদা চিংড়ির হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত কারণ পোনা উৎপাদনের জন্য ২৮-৩২ পিপিটি লবণাক্ত সমৃদ্ধ লোনাপানি প্রয়োজন। ব্রুড চিংড়ি প্রতিপালন ও বাগদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের জন্য লোনাপানির নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার।

সারণি: বাগদা হ্যাচারির পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ

 

Content added By

হ্যাচারিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করার জন্য স্বাদুপানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাই হ্যাচারি স্থাপনের সময় স্বাদুপানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

Content added By

এমন জায়গায় হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে যেখানে কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ, শহরের নর্দমার দূষিত পানি, কৃষি জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ঔষধ, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ইত্যাদি যাতে হ্যাচারির পানি দূষিত করতে না পারে।

Content added By

অত্যধিক বৃষ্টির কারণে হ্যাচারির পানির গুণাগুণ যেমন- পানির তাপমাত্রা, পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন এবং বিশেষ করে লবণাক্ততার তারতম্য হতে পারে যা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করতে পারে তাই হ্যাচারি স্থাপনের ক্ষেত্রে অতি বৃষ্টিজনিত এলাকা পরিহার করতে হবে।

Content added By

হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে এবং স্থান নির্বাচনের সময় মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ সরাসরি মাটির গুণাগুণের ওপর নির্ভর করে। তাই যেখানে হ্যাচারি স্থাপন করা হবে সেই এলাকার ভূ-প্রকৃতি বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া ভূ-প্রকৃতির ওপর হ্যাচারির নির্মাণ খরচ অনেকাংশে নির্ভর করে।

Content added By

হ্যাচারি নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ পরিবহণ, হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেণু ও পোনা সরবরাহ, ব্রুড চিংড়ি পরিবহণ এবং খাবার সরবরাহের জন্য ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে এমন স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত।

Content added By

সুষ্ঠভাবে হ্যাচারি পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ থাকা জরুরি। তাই বিদ্যুতের সুব্যবস্থা রয়েছে এমন স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে। হ্যাচারি পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক।

Content added By

দক্ষ জনশক্তি ছাড়া লাভজনকভাবে হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই দক্ষ জনশক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত।

Content added By

হ্যাচারির উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য হ্যাচারিতে ব্যবহৃত ঔষধ, যন্ত্রপাতি, ব্রুড চিংড়ি, পোস্ট লার্ভা, খাদ্য, আর্টিমিয়া ইত্যাদি সহজেই পাওয়া যায় এমন স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহজেই সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে।

Content added By

এমন এলাকায় চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে যেখানে কৃষি বা অন্যান্য ফসলের ফলন বা চাষ হয় না। অন্যথায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা বা পরিবেশগত প্রতিকূলতার সৃষ্টি হতে পারে।

Content added By

হ্যাচারির কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য জনবলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। এতে চুরিসহ অন্যান্য বিপদের আশঙ্কা থাকে না।

Content added By
Please, contribute to add content into বাগদা চিংড়ি হ্যাচারির বিভিন্ন অংশের সাথে পরিচিতি.
Content

বাগদা চিংড়ির কৃত্রিম প্রজনন থেকে শুরু করে চিংড়ি চাষ পর্যন্ত লোনা পানির সুব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ অতি জরুরি। তাই প্রতিটি হ্যাচারির পানি ব্যবস্থাপনা এবং খরচ কমানোর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ সেচযন্ত্র বাধ্যতামূলকভাবে থাকা উচিত। হ্যাচারিতে লোনা এবং মিঠাপানি উত্তোলন করে নির্দিষ্ট ট্যাংকে মজুদ করা হয়। পরবর্তীকালে মজুদকৃত ট্যাংক থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়।

Content added By

হ্যাচারিতে যন্ত্রপাতি পরিচালনা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উৎপাদন উপকরণ সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য। এয়ার ব্লোয়ার, পাম্প, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি চালু রাখার জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের উৎস থাকতে হবে। এছাড়াও যেসব এলাকায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে সেসব এলাকার হ্যাচারিতে নিজস্ব জেনারেটর থাকা প্রয়োজন।

Content added By

পানিতে পর্যাপ্ত দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্ব বজায় রাখার জন্য সর্বদা বায়ু চলাচল অপরিহার্য। প্রজননক্ষম চিংড়িকে বাঁচিয়ে রাখা, জীবন্ত খাবার (live food) উৎপাদন, লার্ভার লালন-পালন প্রভৃতি কাজের জন্য কৃত্রিম বায়ু প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যাসের পিভিসি পাইপের মাধ্যমে প্রতিটি ট্যাংকে কৃত্রিমভাবে বায়ু সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। পিভিসি পাইপের মুখে সরু প্লান্টিকের পাইপ ও এয়ার স্টোন ব্যবহার করে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এতে পানির তাপমাত্রা ও অ্যামোনিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

Content added By

বাগদা হ্যাচারিতে লোনাপানি সংগ্রহের পর নির্দিষ্ট ট্যাংকে মজুদ রাখা হয়। ট্যাংকের আকার ও আয়তন নির্ভর করে পোনা উৎপাদনের পরিমাণের ওপর। উত্তোলিত পানি সরাসরি ব্যবহার না করে প্রথমে জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়।

Content added By

 মজুদকৃত লোনা পানিতে প্রচুর পরিমাণে বালি এবং ভাসমান ও ঝুলন্ত (suspended) পদার্থ থাকে। এজন্য পরিস্রাবক (filter) স্থাপন করা জরুরি। পরিস্রাবক হলো এমন এক ধরনের সূক্ষ যন্ত্র যা রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানির মধ্যে বিদ্যমান দূষিত পদার্থ ও জীবাণু অপসারণ করে। পানি পরিস্ফুত করতে বিভিন্ন ধরনের পরিস্রাবক ব্যবহার করা যায়। যেমন-

ক) বালি, কংকর দিয়ে তৈরি পরিস্রাবক

খ) চাপ প্রয়োগকৃত বালি দিয়ে নির্মিত পরিস্রাবক

গ) কার্টিজ পরিস্রাবক

ঘ) ইউভি পরিস্রাবক

ঙ) কার্বন পরিস্রাবক ইত্যাদি।

চিংড়ির হ্যাচারিতে একটি বালি ছাকুনি স্থাপন করা প্রয়োজন। ছাকুনি ব্যবস্থাটি মজুদ ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে নির্মাণ করা যেতে পারে। সামুদ্রিক পানিতে প্রচুর জীবাণু থাকে যা ছাকুনির মাধ্যমে নির্মূল বা ধ্বংস করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে পানিকে সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং মজুদ ট্যাংকে জমা রাখা হয়। 

Content added By

পরিপক্ককরণ ট্যাংক হলো এমন এক ধরনের কংক্রিটের তৈরি চৌবাচ্চা যেখানে প্রজননক্ষম স্ত্রী এবং পুরুষ বাগদা চিংড়িকে প্রজনন ক্ষেত্র থেকে সংগ্রহের পর সংরক্ষণ করা হয়। এখানে স্ত্রী ও পুরুষ বাগদা চিংড়িকে প্রজননক্ষম করে তোলার চেষ্টা চালানো হয়। প্রথমদিকে এদেরকে শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ও স্কুইডের মাংস খেতে দেয়া হয়। এতে চিংড়ির প্রজনন ক্ষমতা বাড়ে। চিংড়ির ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অনেক সময় স্ত্রী চিংড়ির একটি চোখ অপসারণের কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। এসময় স্ত্রী ও পুরুষ বাগদা চিংড়িকে একসাথে রাখা হয়। প্রজননক্ষম বাগদা চিংড়িকে পীড়নমুক্ত রাখতে ট্যাংকটি কালো শীট দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এসময় ট্যাংকে পরিষ্কার পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃত্রিম বায়ু প্রবাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। ট্যাংকের ধারণক্ষমতা সাধারণত ৮-১৬ টন পর্যন্ত হতে পারে।

Content added By

প্রজনন ট্যাংক হলো এমন এক ধরনের চৌবাচ্চা যেখানে প্রজননক্ষম স্ত্রী বাগদা চিংড়িকে প্রজনন না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ধরে রাখতে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রজননক্ষম চিংড়ি প্রজনন ট্যাংকে স্থানান্তরের পূর্বে লক্ষ্য রাখতে হবে যে স্ত্রী চিংড়ি খোলস পাল্টিয়েছে কি-না। এ ট্যাংকের আকার সাধারণত ১.৫ টন পর্যন্ত হতে পারে।

Content added By

 সদ্য ডিম ফোটানো লার্ভা পালনের জন্য যে ট্যাংক ব্যবহার করা হয় তাকে লার্ভি পালন ট্যাংক বলে। হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনের পরিমাণের ওপর এ ট্যাংকের আকার ও আয়তন নির্ভর করে। ট্যাংকের আকার বর্গাকার, গোলাকার বা আয়তাকার হয়ে থাকে। এ ট্যাংকে পিএল-১ থেকে পিএল-১৫ পর্যন্ত পালন করা যায়। তবে অনেক সময় কোন কোন হ্যাচারিতে বিভিন্ন স্তরের লার্ভি প্রতিপালনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আয়তনের ট্যাংক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত লার্ভি প্রতিপালন ট্যাংকের আয়তন ২ থেকে ৪০ টন পর্যন্ত হতে পারে।

Content added By

প্লাংকটন হলো পানিতে থাকা এক ধরনের জীব যা স্রোতের বিপরীতে নিজেদেরকে চালিত করতে অক্ষম। প্লাংকটন অনেক ছোট বড় জলজ প্রাণির খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিটোসেরাস (Chaetocerus), স্কেলোটোমা (Skeletoma), নাভিকুলা (Navicula), রটিফেরা (Rotifera) প্রভৃতি এই ট্যাংকে চাষ করা হয়। এসব প্লাংকটন বাগদা পোনার জীবনচক্রের প্রথম পর্যায়ে খাবার হিসেবে সরবরাহ করা হয়। এটি চিংড়ির খাদ্য হিসেবে একটি চমৎকার সংযোজন এবং পোনার বিকাশের জন্য সর্বোত্তম উৎস।

Content added By

আর্টিমিয়া চিংড়ির জন্য দ্রুত বর্ধনশীল খাদ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এদের ডিমগুলো লবণাক্ত হ্রদ থেকে সংগ্রহ করার পর শুকনো করে মৎস্য খামারে পাঠানো হয়। শুষ্ক আর্টিমিয়ার ডিম কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। প্রয়োজনের সময় ডিম ফুটে নগ্নি উৎপাদন করা হয়। নগ্নি উৎপাদনের জন্য কোণাকৃতির ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। এসময় মৃদু লবণাক্ত পানিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম দিয়ে প্রচন্ড বায়ু প্রবাহ চালু করা হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডিম ফুটে নগ্নি বের হয়। যা বাগদা চিংড়ির পোনার খাবার হিসেবে সরবরাহ করা হয়।

Content added || updated By

হ্যাচারি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। এসব যন্ত্রপাতি যন্ত্রের সাথে সংরক্ষণ করা দরকার। হ্যাচারির উৎপাদন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিম্নলিখিত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন 

অণুবীক্ষণ যন্ত্ৰ (Microscope) 

টিস্যু হোমোজিনাইজার (Tissue homogenizer) 

ক্যামেটর (Catheter)

থার্মোমিটার (Thermometer) 

রিফ্লাক্টোমিটার (Reflactometer) 

ডিসেন্ডিং বক্স (Dissociating box)

ডিপ ফ্রিজার (Deep freezer) 

এ্যামেটর (Aemator) 

অক্সিজেন সিলিন্ডার (Oxygen cylinder)

মাপন যন্ত্র (Balance) 

সেন্ট্রিফিউজ (Centrifuge)

সিরিজ (Syringe) 

পিএইচ মিটার (pH meter)

অক্সিজেন মিটার (Oxygen meter) 

রেফ্রিজারেটর (Refrigerator) 

জেনারেটর (Generator) 

বৈদ্যুতিক চুলা (Electric heater)

দ্য সেক্কি ডিস্ক (Secci disc)  

প্লাংকটন গণনাকারী এস আর সেল (Plankton counting S.R. cell)

ব্লেন্ডার (Blender) 

ডেসিকেটর (Dedicator)

হেক করাত (Hack saw)

ক্যালকুলেটর

আগুন নিভানোর যন্ত্র

 বিভিন্ন মেসের জাল

হেক কীট (Hack kit)

ট্রলি/পিক আপ ভ্যান

কম্পিউটার

হাত জাল

আসবাবপত্র

অফিস সরঞ্জামাদি

এছাড়াও গবেষণাগারে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচের সামগ্রী যেমন- বিকার, বিভিন্ন ধরনের পেট্রিডিস, কনিক্যাল ফ্লাস্ক, ওয়াচ গ্লাস, ম্যাগনিফাইং গ্লাস, টেস্টটিউব, পিপেট ইত্যাদি থাকা অত্যন্ত দরকার।

Content added By

হ্যাচারিতে পোনার উৎপাদন সচল রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য সামগ্রী ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির সরবরাহ সবসময় থাকা দরকার-

ক) আর্টিমিয়া

খ) আর্টিমিয়া ফ্লেক

গ) প্লাংকটন বীজ

ঘ) প্লাংকটন উৎপাদক সারসমূহ 

ঙ) এনক্যাপসুলেটেড খাদ্য

চ) স্পিরুলিনা খাদ্য

ছ) ফরমালিন

জ) পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট

ঝ) ব্লিচিং পাউডার

ঞ) ম্যালাকাইট গ্রিন

ড) কৃত্রিম প্লাংকটন

ট) আয়োডিন পলিমার

ঢ) এ-৩০-জুমসাইড

ঠ) সোডিয়াম থায়োসালফেট

ণ) এন্টিবায়োটিকস ইত্যাদি

Content added By

প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ বাগদা চিংড়ি সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো মার্চ থেকে নভেম্বর মাস। চিংড়ি সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে আনার পর এগুলোকে প্রথম ৪-৭ দিন নির্দিষ্ট ট্যাংকে রেখে অভিযোজিত করা হয়। হ্যাচারিতে আনার পর ২৫-৫০ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে এদের জীবাণুমুক্ত করা হয়। পরিপক্ক ট্যাংকের প্রতি বর্গমিটারে ১০০-২০০ গ্রাম ওজনের ২-৭টি চিংড়ি ১:১ (স্ত্রী: পুরুষ) অনুপাতে মজুদ করা হয়। স্ত্রী চিংড়ির ওজন কমপক্ষে ৬৩-৬৮ গ্রাম এবং পুরুষ চিংড়ির ওজন কমপক্ষে ৩৫-৪০ গ্রাম হওয়া উচিত। ট্যাংকের ৬০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হয়। এসময় চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা হয়।

Content added By

পরিপক্ক ট্যাংকে ৭-৮ দিন রাখার পর সন্ধ্যায় পানি কমিয়ে স্ত্রী চিংড়ির ডিম্বকোষের উন্নতি লক্ষ্য করা হয় যা বাইরে থেকেই দেখা যায়। অন্যদিকে পরিপক্ক পুরুষ চিংড়ির পঞ্চম চলনপদের পোড়ায় পুংজনন ছিদ্রে শুক্রকীটের মোড়ক (spermatophores) দেখা যায়। ডিম্বাশয়ের পূর্ণতা নির্ভর করে ডিম্বাশয়ের আকার, রং ও ডিম্বানুর মাপের ওপর। পরিপক্ক স্ত্রী চিংড়ির ডিম্বাশয়কে ৫টি দশায় ভাগ করা যায়।

ক) অপরিণত/অপরিপক্ক পর্যায় (Immature stage): এ অবস্থায় ডিম্বানু খুব ছোট থাকে। ডিম্বাশয় পাতলা ও স্বচ্ছ থাকে। তবুও পিঠের খোলসের ভিতর নিয়ে ডিম্বানু দেখা যায় না। ভিমের গড় আকার ০.০২৮ মিমি হয়।

খ) উন্নয়নশীল পর্যায় (Early developing stage): এ পর্যায়ে ডিম্বাশয় এর পরিপক্কতা শুরু হয়। ডিম্বাশয়ে স্বচ্ছ থেকে হালকা জলপাই রঙের লম্বা ফিতার মত ডিম্বানু দেখা যায় যা খোলসের বাইরে থেকে পরিলক্ষিত হয়। এসময় ডিমের গড় আকার ০.০৭৮ মিমি হয় ।

 গ) প্রায় পরিপর পর্যার (Nearly ripe stage): ডিম্বাশয় এর রং ঘন হতে থাকে এবং হালকা নীল বর্ণ ধারণ করে। ডিম্বাশয়ের দুই পার্শ্ব বর্ধিত হয়ে কিছুটা ডায়মন্ড বা প্রজাপতির আকার ধারণ করে। ভিমের গড় আকার ০১৮৮ মিমি হয়।

ঘ) পরিপক্ক পর্যায় (Ripe stage): এ সময় ডিম্বাশয় সম্পূর্ণরূপে পরিপক্কতা লাভ করে। উদর অঞ্চল প্রার সম্পূর্ণ স্থান দখল করে ডিম্বাশয় বর্ষিত হয়। গাঢ় সবুজ রঙের পরিপূর্ণ ভায়ন বা প্রজাপতির আকার ধারণ করে। ডিমের গড় আকার হয় ০.২৩১ মিমি।গ

ঙ) পরিপক্ক পরবর্তী পর্যায় (Spent ripe stage): এ পর্যায়ে ডিম ছেড়ে ডিম্বাশয় পুনরায় প্রথম দশার জাকার ধারণ করে। তবে অনেক সময় আংশিক ডিম ছেড়ে দ্বিতীয় দশার মতো দেখায়। এ পর্যায়ে সাদা রং পরিলক্ষিত হয় তবে স্বচ্ছ নয়। একটি পরিপক্ক স্ত্রী চিংড়ির বছরে ভিন্ন ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩.০ থেকে ৭.৫ লক্ষ। 

বাগদা চিংড়ির প্রজনন ক্রিয়া: সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক বাগদা চিংড়ির প্রজনন গভীর সমুদ্রে রাত্রিকালে সম্পন্ন হয়। প্রথমে পুরুষ চিংড়ির ওপর স্ত্রী চিংড়ি সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। এরপর একে অপরকে অক্ষীয়দেশ বরাবর আকড়ে ধরে এবং পুরুষ চিংড়ি স্ত্রী চিংড়ির দেহের নিচে সমাপ্তরালভাবে অবস্থান করে। শেষ পর্যায়ে পুরুষ চিংড়ি তার উদরের অংশ বাকিয়ে “ট” আকৃতির বেষ্টনী তৈরি করে। এভাবে তাদের মিলন সংঘটিত হয় যা ৩-৪ মিনিট স্থায়ী হয়। 

Content added By

বাগদা চিংড়ির প্রজনন ক্রিয়া সম্পন্ন হলে স্ত্রী বাগদাকে আলাদা ট্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। সাধারণত একটি ট্যাংকে একটি স্ত্রী বাগদা চিংড়িকে অথবা ৩০০ লিটার এর ট্যাংকে ২-৩ টি স্ত্রী বাগদা চিংড়িকে রাখা হয়। স্থানান্তরের পূর্বে নিশ্চিত করতে হয় যে মিলন ঘটেছিল কি-না। স্ত্রী চিংড়ির থেলিকামে স্পার্মাটোফোরের উপস্থিতি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়। এসময় স্পনিং ট্যাংকের পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সে. এর কাছাকাছি রাখা হয়। পানির লবণাক্ততা সাধারণত ২৮-৩০ পিপিটি রাখা হয়। সর্বক্ষণের জন্য একটি বায়ু সঞ্চালন যন্ত্র, তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র এবং পানি গরম করার যন্ত্র সংযুক্ত রাখা হয় এবং উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা হয়।

সাধারণত রাত ১.০ থেকে ২.০ টার মধ্যে স্ত্রী বাগদা চিংড়ি ডিম ছাড়ে। স্ত্রী চিংড়ি তার তৃতীয় ভ্রমণ পদের গোড়ায় অবস্থিত জননেন্দ্রিয় পথে ডিম ছাড়ে এবং একই সাথে থেলিকাম থেকে শুক্রকীট মুক্ত করে এবং সাঁতারের মাধ্যমে ডিমগুলো ছড়াতে সাহায্য করে। ডিম ছাড়তে ২-৭ মিনিটের মতো সময় লাগে। এরপর স্ত্রী বাগদাকে তুলে অন্য ট্যাংকে স্হানান্তর করা হয় এবং ডিম ফুটতে সময় দেয়া হয়। ১২-১৫ ঘন্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। প্রাথমিকভাবে এসব লার্ভাকে খাবার দেয়া হয় না। এরা ১০-১৫ মিমি আকার ধারণ করার পর এদেরকে লার্ভা ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফাইটোপ্লাংকটন ও জুপ্লাংকটন খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করা হয়। 

Content added By

লার্ভা হলো চিংড়ির ডিম ফুটে বের হবার পর প্রাথমিক দশা। লার্ভা তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায় অতিক্রম করে। যথা- নপ্রির ৬টি ধাপ, প্রোটোজোয়াল ৩টি ধাপ এবং মাইসিসের ৩টি ধাপ। নগ্নি থেকে প্রোটোজুইয়া হতে ৪৮ ঘন্টা সময় লাগে এবং মাইসিস হতে ৬ দিন সময় লাগে। এরপর মাইসিস থেকে পোস্ট লার্ভা হতে আরও ৩ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ ডিম ফোঁটা থেকে পোস্ট লার্ভা হতে ৯ দিনের মতো সময় ব্যয় হয়। এ পর্যায়ে এদেরকে খাদ্য হিসেবে ফাইটোপ্লাংকটন এবং জুপ্লাংকটন সরবরাহ করা হয়। 

Content added By

ডিমের নিষিক্তকরণ এর পর লার্ভা হয় এবং লার্ভা পরবর্তী দশাকে পোস্ট লার্ভা বলে। প্রজননের সময় থেকে পোস্ট লার্ভা পর্যন্ত পৌছাতে এক মাসেরও বেশি সময় প্রয়োজন। এদেরকে নার্সারি ট্যাংকে প্রতিপালন করা হয়। পিএল-৬ বা পোস্ট লার্ভা ষষ্ঠ দিনে পৌঁছে গেলে এদেরকে কোকুন, ঝিনুক এর মাংসের কিমা খাওয়ানো হয়। দিনে ৩-৪ বার কৃত্রিম খাদ্যের সাথে এসব খাবারের মিশ্রণ তৈরি করে খাওয়ানো হয়। এসময় পানির গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ৩০-৪০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করা আবশ্যক। এতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্ব এবং অ্যামোনিয়ার কম ঘনত্ব (০.১ পিপিএম) এর সম্পৃক্ততা বজায় থাকে। অতিরিক্ত খাদ্য, বিপাকীয় বর্জ্য এবং মৃত শৈবাল অপসারণের জন্য ট্যাংকের নিচে নিয়মিত সাইফনিং এর ব্যবস্থা করা হয়। লবণাক্ততার পার্থক্য ৩-৪ হলে পোস্ট লার্ভা মারা যেতে পারে। তাই লবণাক্ততা ৩০-৩২ পিপিটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

Content added By

সাধারণত চিংড়ির লার্ভাকে ফাইটোপ্লাংকটন, জুপ্লাংকটন, ডেট্রিটাস, পলিকেট, ছোট ক্রাস্টেসিয়ান সরবরাহ করা হয়। তবে নগ্নি অবস্থায় এরা খাবার গ্রহণ করে না কেননা তাদের নিজেদের শরীরের কুসুম থলি থেকে তারা পুষ্টি গ্রহণ করে। প্রোটোজোয়া পর্যায়ে খাবার গ্রহণ শুরু হয়। তবে বয়সের সাথে সাথে এদের খাদ্য পছন্দ পরিবর্তিত হয়। প্রাথমিকভাবে এরা ফাইটোপ্লাংকটন পছন্দ করলেও পরবর্তীতে অন্যান্য খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। লার্ভার বিভিন্ন খাদ্য তালিকা নিম্নরূপ-

  • প্রাথমিকভাবে এককোষী শৈবাল (Algae) অথবা ঈস্ট (Yeast) জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করা হয়।
  • প্রোটোজোয়া থেকে মাইসিস দশায় উত্তরণের সময় রটিফার, ডায়াটম (Chaetoceros sp Tetraselmis sp; Skeletonema sp) ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়।
  • পোস্ট লার্ভায় উত্তরণের সময় আর্টিমিয়া, ডিমের কুসুম, সয়াবিন পাউডার, ঈষ্ট, শৈবাল একত্রে মিশিয়ে খাদ্য তৈরি করে লার্ভাকে প্রদান করা হয়। আর্টিমিয়ার পরিবর্তে মাছের কিমাও ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় আর্টিমিয়ার সাথে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড যোগ করে প্রদান করা হয়। এতে খাদ্যের পুষ্টিগুণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। সামপ্রতিক সময়ে কৃত্রিম খাদ্যের প্রচলন বেড়েছে। যেমন-

 ক) জমাট শুকনো খাদ্য- Spirulina পাউডার (Freeze dried feed)

খ) Microparticulate বা ক্ষুদ্রকণায় পরিণত যৌগিক খাদ্য।

গ) Microencapsulated diet (অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড সমৃদ্ধ আর্টিমিয়া)।

Content added By

প্রাণিজ জীবন্ত খাদ্য চিংড়ির লার্ভার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক খাদ্য উপাদান কারণ লার্ভার পাচনতন্ত্র অসম্পূর্ণ এবং এতে এনজাইমের অভাব রয়েছে। তারা লার্ভা অবস্থায় নিজস্ব প্রয়োজনীয় পুষ্টি তৈরি করতে সক্ষম নয়। তাই জীবন্ত খাবার সরবরাহের মাধ্যমে লার্ভার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা হয়। তাই হ্যাচারিতে জীবন্ত খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা রাখা হয়। এতে খরচও কমে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যেরও যোগান হয়। রটিফার, আর্টিমিয়া, কপিপোডসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিজ খাদ্যের উৎপাদন করা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিজ খাদ্য চাষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন চৌবাচ্চা বা পরিবেশ দরকার। লোনা ও মিঠা উভয় পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। এসব ট্যাংক সাধারণত ১-২০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। হ্যাচারির প্রয়োজন অনুযায়ী এসব ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। জীবন্ত খাদ্য চাষের পর এগুলোকে সংরক্ষণ করার মত সুযোগ সুবিধা রাখা হয় যেন পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায়। তবে আর্টিমিয়ার ব্যবহার সুপরিচিত এবং সহজবোধ্য হিসেবে বিবেচিত। এসব প্রাণিজ খাদ্য পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। হ্যাচারিতে চিংড়ির সর্বোত্তম ফলন নিশ্চিত করার জন্য মাইক্রোএলজি, ডায়াটম, ডেট্রিটাস সহ অন্যান্য প্রজাতির খাদ্যও চাষ করা হয়।  

Content added By

পরিবেশের সর্বোত্তম অবস্থা বজায় রাখতে চাষকৃত বাগদা চিংড়ির বেঁচে থাকার জন্য এবং ফলনের সর্বাধিক বৃদ্ধির জন্য দৈনন্দিন পরিচর্যা আবশ্যকীয়। যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিচর্যা করা হয় সেগুলো নিম্নরূপঃ

ক) পানির গুণগতমান পর্যবেক্ষণ 

  • লবণাক্ততা: সাধারণত বাগদা চিংড়ির স্পনিং বা প্রজননের জন্য পানির লবণাক্ততা ৩০-৩৬ পিপিটি পর্যন্ত থাকতে হয়। ভাল প্রজননের জন্য পানির লবণাক্ততা ৩০-৩২ পিপিটি নিশ্চিত করতে হবে। তবে লার্ভার প্রাথমিক পর্যায়ে বৃদ্ধির জন্য লবণাক্ততা কম থাকলে লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। যদিও লবণাক্ততার আকস্মিক পরিবর্তনে লার্ভার মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিয়মিত পানির লবণাক্ততা পর্যবেক্ষণ জরুরি।
  • তাপমাত্রা: যে কোন প্রজাতির বিপাকীয় কার্যক্রমে তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। যেমন- ২৪ ডিগ্রি সে., তাপমাত্রার নিচে বাগদা চিংড়ির ডিম ফুটে না। আবার অন্যদিকে ২৬-৩১ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। তাপমাত্রার ধীরে ধীরে পরিবর্তন চিংড়ির জন্য প্রাণঘাতী নয়। তবে হঠাৎ ২ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে তা চিংড়ির জন্য মারাত্মক হতে পারে। এজন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যাবশ্যকীয়।
  • দ্রবীভূত অক্সিজেন: দ্রবীভূত অক্সিজেন লার্ভা পালনের জন্য অন্যতম উপাদান। যদি বায়ু চলাচল মাত্র এক ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা হয় তবে লার্ভার মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই সার্বক্ষণিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
  • পিএইচ (pH) এবং নাইট্রোজেন যৌগ: সমুদ্রের পানির পিএইচ সাধারণত ৭.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে থাকে। পানির অ্যামোনিয়ার সাপেক্ষে ট্যাংকের পরিবেশের পরিবর্তনের মূল সূচকই হল পিএইচ। যখন পানির পিএইচ এর মান বেশি হয় তখন তা পানির অ্যামোনিয়ার (NH3) বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে যা লার্ভার জন্য বিষাক্ত। তবে অ্যামোনিয়াম (NH4) লার্ভার ফুলকা ঝিল্লির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। তাই এটি লার্ভার জন্য ঝুকিপূর্ণ নয়। তবে অ্যামোনিয়াম (NH4) এর ঘনত্ব ১.৫ পিপিএম এবং NH3 এর ঘনত্ব ০.১ পিপিএম এর বেশি যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা যায়।

খ) খাদ্য ও খাদ্য পরিকল্পনা

প্রথম পর্যায়ে প্রোটোজোয়ার পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না এবং তারা খাদ্যের সন্ধান করতে পারে না। এসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। প্রোটোজোয়ার খাদ্য হিসেবে ট্যাংকে ডায়াটম চাষ করলে অনেক সময় এদের অধিক ফলন হয় যা লার্ভার চলাচলে বাধা হয়ে দাড়ায়। অন্যদিকে ডায়াটমগুলো পরেরদিন সহজেই নষ্ট হয়ে যায় এবং পানির গুণগত মানকে নষ্ট করে। অক্সিজেনের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। তাই নিয়মিত ডায়াটমের ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করতে হয়। ডায়াটমের রং বাদামী হয়ে গেলে, নতুন ডায়াটম যোগ করতে হয় যাতে লার্ভার পর্যাপ্ত খাবারের ঘাটতি না থাকে। পোস্ট লার্ভার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্টিমিয়াসহ আরও অন্যান্য খাদ্য উপাদান যোগ করা হয়। এতে লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। প্রতি ১০,০০০ পোস্ট লার্ভার জন্য ৫০ গ্রাম আর্টিমিয়া নিশ্চিত করতে হয়। গ্রীষ্মকালে ডায়াটমের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে ট্যাংকের ওপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয় অথবা ট্যাংকের কিছু অংশের পানি অপসারণ করে পুনরায় নতুন লবণাক্ত পানি দিয়ে ট্যাংক পূর্ণ করা হয়। এভাবে বাগদা চিংড়ির খাদ্য প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করা হয়।

অন্যান্য পরিচর্যা

  • চৌবাচ্চার তলদেশ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়।
  • হ্যাচারিতে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ও পানি জীবাণুমুক্ত করা।
  • হ্যাচারির পানি প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পরিবর্তন করা।
  • হ্যাচারির কর্মচারীদের এ্যাপ্রোন পরিধান করে কাজ করা উচিত।
  • ট্যাংকগুলো সর্বক্ষণ পলিথিন দ্বারা ঢেকে রাখা ভালো। শুধু খাদ্য সরবরাহ এবং ঔষধ প্রদানের সময় পলিথিন সরিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
  • নিয়মিত ভাইরাল, ফাংগাল ও ব্যাকটেরিয়াল ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
Content added By

যেসব রোগের সংক্রমণে বাগদা চিংড়ির চাষ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলো হলো ভাইরাল, ব্যকটেরিয়াল ও ফাংগাল সংক্রমণ। রোগ সংক্রমণের প্রধান কারণগুলো হলো-

  • নিয়মিত পানি পরিবর্তন না করা 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেনের ঘাটতি
  • হ্যাচারির যন্ত্রপাতি অপরিষ্কার রাখা
  • পরিশোধিত পানি ব্যবহার না করা
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের সরবরাহ নিশ্চিত না করা।

উপরোক্ত কারণগুলোর সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে হ্যাচারিতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে। হ্যাচারিতে যেসকল রোগ দেখা দেয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

Content added By

চিংড়ি চাষের সবচেয়ে ক্ষতিকর জীবাণুগুলোর মধ্যে আলোকদায়ক জীবাণু একটি। চিংড়ির বহিত্বক বা অস্ত্রে অথবা অন্যান্য অঙ্গে হয়ে থাকে। চিংড়ি বেশি মাত্রায় এ রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রথমে যকৃত ও অগ্নাশয় গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে এবং পরিশেষে দেহের বিভিন্ন স্থানে গর্ত তৈরির মাধ্যমে আক্রান্ত করে। Vibrio harveyi, V. splendidus প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী।

লক্ষণ

১) যকৃত ও অগ্নাশয় গ্রন্থি বাদামী বর্ণ ধারণ করে।

২) অগ্নাশয় গ্রন্থি ছোট হয়ে যায়।

৩) দেহে গর্ত দেখা যায় এবং পরিশেষে উপাঙ্গের উপরের অগ্রভাগ পচন ধরে।
 

প্রতিকার

১) Quinoline antibiotic ব্যবহার করা হয়।

২) মাইক্রোএলজি, ব্যাকটেরিওফাজ ও প্রোবায়োটিক এর ব্যবহার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে পারে।

৩) প্রতিদিন ৮০% পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি যোগ করতে হবে।

Content added By

হ্যাচারিতে ভাইরাসের আক্রমণ বেশি হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পোনা মারা যায়। সংক্রমণ রোধে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। বাগদা চিংড়ির ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিম্নরূপ: 

ব্যাকুলো (Baculovirus penaei) ভাইরাস

এ ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করা এবং ভালভাবে বর্ণিত একটি ভাইরাস। এটি তাইওয়ানে প্রথম শনাক্ত করা হয়। এটি চিংড়িকে প্রথমে প্রোটোজুইয়্যা ধাপে এবং পরে মাইসিস ধাপে আক্রান্ত করে। বেশিরভাগ সময় ৯০% পোনা মারা যায়।

লক্ষণ

১) হেপাটোপ্যানক্রিয়াস এবং মিডগাট এপিথেলিয়াল কোষে একাধিক গোলাকার ছোট সাদা পাইপের মত দেখা যায়।

২) চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়।
 

প্রতিকার

১) এ রোগের কোনো নির্দিষ্ট বা সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত পোনাকে কিমা করা ওয়েস্টার (oyester) এর মাংস খাওয়ানো হয়।

২) পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু সঞ্চালক ব্যবহার করে তাদের পরিচর্যা করা হয়।

৩) হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে।

৪) সংক্রমণ রোধ করতে ডিম এবং নগ্নিকে ৩ ঘন্টা যাবৎ পরিষ্কার লবণাক্ত পানিতে ধৌত করে তারপর ট্যাংকে স্থানান্তর করতে হবে।

Content added By

এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ যা প্রায় সব বাগদা চিংড়ির হ্যাচারিতে আক্রমণ ঘটায়। সংক্রামক জীবাণু হলো Phycomycetus fungi, Lagenidium sp., Sirolpidium sp., Phythium; Leptolegonia mania প্রভৃতি।

লক্ষণ
১) আকস্মিক মৃত্যু ঘটে এবং মৃত্যুর হার ২০-১০০%।

২) লার্ভার দেহে প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিকার

১) লার্ভার ট্যাংক জীবাণুমুক্তকরণ, পানি পরিস্রাবণ, ক্লোরিনেশন করা উচিত।

২) বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যায়। যেমন: ০২ পিপিএম (ইফান (Treflan)। 

৩) ১-১০ পিপিএম ফরমালিন ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৪)  NaCl, KCI, MgCl এর মিশ্রণে ব্যবহৃত ঔষধ Legenidium এর আক্রমণকে হ্রাস করে।

৫) ২০ পিপিএম পরিষ্কারক সাবান গুড়া (Detergent) দিয়ে ডিম জীবাণুমুক্তকরণ করা যেতে পারে।

Content added By

ক্লোরামফেনিকল, সারাফ্লক্সাসিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন প্রায়শই বাগদা চিংড়ির এন্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে অধিক পরিমাণে ব্যবহারে প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়। ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার না করাই উত্তম এতে লার্ভার ক্ষতি হয়। প্রতিষেধক ঔষধ এবং এদের প্রয়োগ মাত্রা নিম্নরুপ:

ঔষধ

মাত্রা

অক্সিটেট্রাসাইক্লিন

অক্সোলিনিক এসিড

ফিউরাসল (Furasol )

জেনটিন ভায়োলেট (Gentin violet)

ফরমালিন (Formalin )

১০-২০ পিপিএম

০.১-০.৫ পিপিএম

১.০-২.৫ পিপিএম

০.১-০.২ পিপিএম

২৫-৫০ পিপিএম

 

Content added By

জৈব নিরাপত্তা হলো পানিতে চাষযোগ্য সকল মাছ, চিংড়ি, অন্যান্য জলজ প্রাণির রোগ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে হ্যাচারি, খামার এসব জায়গা থেকে নির্দিষ্ট জীবাণুগুলো বাদ দেয়ার কৌশল। বাগদা চিংড়ি চাষে প্রাসঙ্গিক ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে, সেগুলো হ্রাস করার জন্য উপযুক্ত জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা উচিত।

ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি

  • হ্যাচারিতে প্রবেশের সময় এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং প্রতিটি প্রবেশপথে হাত পা ডুবিয়ে রাখতে হবে। যা প্যাথোজেনিক লোড কমাতে সহায়তা করে।
  • ক্লোরিন বা ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানিতে পা ডোবানোর ব্যবস্থা রাখা উচিত।
  • চাষের স্থানে প্রবেশাধিকার ন্যূনতম সংখ্যক ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
  • দর্শনার্থীদের সংখ্যা ন্যুনতম রাখতে হবে। চেক ট্রে ব্যবহারের পর পরিষ্কার করা উচিত।
  • মৃত ও দুর্বল চিংড়ি নিয়ে কাজ করার সময় অত্যন্ত সাবধানে কাজ করতে হবে। এগুলো থেকে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
  • পাখি ও অন্যান্য প্রাণির চলাচল রোধে বেড়া স্থাপন জরুরি। কারণ এসব থেকে রোগজীবাণু ছড়ায়।
  • নির্দিষ্ট প্যাথোজেনযুক্ত চিংড়ির জাত, রোগসৃষ্টিকারী এজেন্টগুলোর জন্য তাদের বিকাশ ও পর্যবেক্ষণের জন্য ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিগুলো সাম্প্রতিক চিংড়ি চাষ শিল্পের উন্নয়নে বিশাল অবদান রাখে। এ
  • কটি জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার শারীরিক এবং এতদসংশ্লিষ্ট উপাদানগুলোতে লঙ্ঘন ঘটলে রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূলের জন্য জরুরি পরিকল্পনা আবশ্যক।
  • চিংড়ির খাবারে প্রোবায়োটিক মিশিয়ে খাবারের গুণগতমান বাড়ানো যায় যা রোগজীবাণুর আক্রমণকে হ্রাস করে।
  • হ্যাচারিতে জীবাণুমুক্ত পরিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত। এতে বায়োসিকিউর চিংড়ি উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবেশগতভাব টেকসই এবং অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর প্রযুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।
Content added By
  • বাগদা চিংড়ির প্রতিটি হ্যাচারিতে সাধারণত শক্তিশালী কর্মদক্ষতা সম্পন্ন সেচ মেশিন থাকে। সেচ মেশিনের সাহায্যে মাটির নিচ থেকে পানি তোলা হয় এবং মজুদ ট্যাংকে মজুদ করা হয়। পানি মজুদ ট্যাংক সাধারণত একটু উঁচুতে নির্মাণ করা হয় যাতে সহজে সেচ মেশিন দ্বারা পানি তোলা যায় । পানি সঞ্চয় ট্যাংকের ক্ষমতা লার্ভা পালন ট্যাংকের কমপক্ষে ২০% হওয়া উচিত। এ ট্যাংকগুলো কংক্রিট দ্বারা নির্মাণ করা হয় যেন পানির অধিক চাপ ধারণ করতে পারে। লোনা পানি ও মিঠা পানির মজুদ ট্যাংক ভিন্ন ভিন্ন হয়।
  •  মজুদ করার পর পানিকে পরিস্রুত করার জন্য পরিস্রাবকের ব্যবস্থা থাকে। যেখানে ছোট বড় বালিকণা, ঝুলন্ত পদার্থসহ সকল জীবাণু অপসারণ করে। তবে কিছু বিষাক্ত জীবাণু ধ্বংস করতে রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়। এতে চিংড়ির পোনার রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। নিয়মিত পরিস্রাবকটি পরিষ্কার করতে হয়। পরিস্রাবকের নিচের অংশে জমাকৃত ডেট্রাইটাসগুলো সহজেই ধুয়ে ফেলতে হয়। এতে পরবর্তীতে পানি ঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
  • প্রতিটি ট্যাংকে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ঘনত্ব নিশ্চিত করার জন্য সার্বক্ষণিক বায়ু চলাচল ব্যবস্থা অপরিহার্য। এতে পানির তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং অ্যামোনিয়ার ঘনত্বও হ্রাস পায়। রোটারি ব্রোয়ার, রুট ব্লোয়ার, এয়ার কম্প্রেসর ইত্যাদি বায়ু সঞ্চালক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হ্যাচারির জন্য রুট ব্লোয়ার বেশি উপযুক্ত কারণ এটি সহজে ভাঙ্গে না, ব্যবহারে কম জটিল এবং তৈলাক্ত পদার্থ তৈরি করে না।
  •  হ্যাচারিতে সার্বক্ষণিক বায়ু সঞ্চালনের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য জেনারেটর স্থাপন করা হয়। যার সাথে এই বায়ু সঞ্চালন মেশিনগুলো সংযুক্ত থাকে। এতে বিদ্যুৎ ব্যাহত হলেও বায়ু সঞ্চালন মেশিনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয় এবং বায়ু চলাচল অব্যাহত থাকে।
  •  পানির তাপমাত্রা, পিএইচ, লবণাক্ততা, অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব, অক্সিজেনের ঘনত্ব এসব নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। 
Content added By

যে কোনো হ্যাচারি তৈরির সময় প্রাথমিকভাবে যে ট্যাংকগুলো নির্মাণ করা হয় সেগুলো হলো- প্রজনন ট্যাংক, মজুদ ট্যাংক, লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক, পোস্ট লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক, মিঠা ও লবণাক্ত পানির ট্যাংক, পরিশুদ্ধ পানির ট্যাংক, ব্রুডস্টক প্রতিপালন ট্যাংক ইত্যাদি।

ডিমওয়ালা চিংড়ি প্রতিপালন ট্যাংক: সংগৃহীত চিংড়ি হ্যাচারিতে আনার পর এই ট্যাংকে এদের প্রতিপালন করা হয়। ট্যাংকের আকৃতি গোলাকার, বর্গাকার বা আয়তাকার হতে পারে। উচ্চতা সাধারণত ১.২-২.০ মিটার এবং ধারণ ক্ষমতা ৫-৪০ টন হয়। হ্যাচারির পোনা উৎপাদনের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ট্যাংকের আকার ও আয়তন বিভিন্ন হয়ে থাকে। প্রতিটি ট্যাংকে পানি অপসারণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে করে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করে পুনরায় নতুন পানি যোগ করা যায়।

প্রজনন ট্যাংক: এ ট্যাংকগুলো সমতল বিশিষ্ট অথবা কোণাকার তল বিশিষ্ট হতে পারে। ফাইবার গ্লাস, প্লাস্টিক, প্লাস্টিক গ্লাস সিট ইত্যাদি দ্বারা তৈরি করা হয়। এদের পানি ধারণ ক্ষমতা ৫০ লিটার থেকে ১.৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। লবণাক্ততা ২৮-৩২ পিপিটি এবং তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সে. এর কাছাকাছি রাখতে হয় এবং সবসময় পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক: সদ্য ডিম ফোটানো লার্ভা প্রতিপালনের জন্য দুই ধরনের ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। একটি ছোট আয়তনের অন্যটি বড় আয়তনের। তবে আমাদের দেশে সাধারণত ৩ টন ধারণ ক্ষমতার লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। নগ্নিকে খাবার প্রদান করা হয় না। তবে প্রোটোজোয়া পর্যায়ে পৌঁছানোর পর থেকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইটোপ্লাংকটন, ঈষ্ট, এলজি, ডায়াটম এসব সরবরাহ করা হয়। ডায়াটমের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা অপসারণের ব্যবস্থাও করতে হয়। নিয়মিত পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। পানির নিয়ামকগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা উচিত এতে পানির গুণগতমান বজায় থাকে।

পোস্ট লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক: পোন্ট লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংকগুলোতে একটি স্তর হিসেবে পলিথিন জাল প্রদান করা হয়। লার্ভা পালনের এই পর্যায়ে পানির গুণগতমান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসময় ৩০- ৪০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করা হয়, এতে অক্সিজেনের ঘনত্ব, অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব (০.১ পিপিএম এর কম) নিশ্চিত করা যায়। অতিরিক্ত খাদ্য, বিপাকীয় বর্জ্য ও মৃত শৈবাল অপসারণের জন্য ট্যাংকের নিচের পানি সাইফনিং করা হ্যাচারির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নিয়মিত কাজ। লালন পুকুরের ৫০% পানি নিষ্কাশন হয়ে গেলে ২-৩ ঘন্টার জন্য সমুদ্রের পানির অবিরাম প্রবাহ বজায় রাখা হয়। এতে আটকে থাকা কঠিন কণাগুলো নিষ্কাশন হয় এবং পানির স্বচ্ছতা বজায় থাকে। যখন ট্যাংকের নিচে পলি জমে পুরু স্তর হয় তখন পোস্ট লার্ভাগুলোকে অন্য ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয়। পোস্ট লার্ভাকে রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।

জীবন্ত খাদ্য চাষ ট্যাংক: এই ট্যাংকগুলো সাধারণত ১-২০ টনের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে হ্যাচারির চিংড়ি চাষের পরিমাণের ওপর এই ট্যাংকগুলোর আয়তন নির্ভর করে। এগুলো ফাইবার গ্লাস, পলিথিন, পাতলা কাঠ, কংক্রিট প্রভৃতি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। চাষের প্রাণিগুলোকে নিয়মিত খাবার প্রদান করা হয় এবং ট্যাংকগুলোতে পানি সরবরাহ ও অপসারণের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলো পরিষ্কার করা হয়, এতে ফলন বৃদ্ধি পায়। 

Content added || updated By

লার্ভার সর্বশেষ ধাপ হলো পোস্ট লার্ভা। এসময় বাগদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভাগুলোকে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চায় স্থানান্তর করা হয় এবং এসব চৌবাচ্চার আকার ও আয়তন লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকের সদৃশ হয়ে থাকে। পোস্ট লার্ভাকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক, কৃত্রিম ও জীবন্ত খাদ্য সরবরাহ করা হয়। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আর্টিমিয়া জাতীয় প্রাণিকণা দেয়া হয়। এছাড়াও ডায়াটম, মাইক্রোএলজি, জমাট শুকনো খাদ্য ( Spirulina powder), মাইক্রোএনক্যাপসুলেটেড আর্টিমিয়া, শামুক, উচ্ছিষ্ঠ মাছের কিমা ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে বাগদা চিংড়ির পোনার দ্রুত বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি যোগ করতে হয়। ফলে ট্যাংকের পানির তাপমাত্রা, অক্সিজেনের ঘনত্ব, অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে থাকে।

পানির গুণগতমান রক্ষা করতে সার্বক্ষণিক বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক। এছাড়াও রোগ জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক। উপরোক্ত ব্যবস্থাপনাগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে বাগদা চিংড়ির সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব। 

Content added || updated By

Promotion