এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

শুধু পানির মধ্যেই চিংড়ির পরিবেশ সীমাবদ্ধ নয় বরং মাটির গুণাগুণের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। কারণ মাটি পানিকে ধারণ করে রাখে। এক্ষেত্রে দোআঁশ মাটি ঘের নির্মাণের ক্ষেত্রে উত্তম। কারণ দোআঁশ মাটির পানি ধারণক্ষমতা ও উর্বরতা বেশি। দোআঁশ মাটির পানিতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে লাল মাটির ঘের বা পুকুরের পানি অধিকাংশ সময় ঘোলা থাকে। বেলে মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা খুবই কম। তবে এঁটেল মাটি ও লাল মাটিতে চিংড়ি চাষ করা যেতে পারে। তাছাড়া পানির গুণগত মানের ওপর চিংড়ি চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই পানিতে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন ও সালফার গ্যাসের পরিমাণ সর্বোত্তম পর্যায়ে রাখা উচিত। অন্যথায় চিংড়ির মহামারী দেখা দিতে পারে। জৈব পদার্থ সরল রাসায়নিক পদার্থে রূপান্তরের জন্য ঘেরে যথেষ্ট পরিমাণ সূর্যের আলো নিশ্চিত করতে হবে। পানির দূষণ চিংড়ির মহামারীর অন্যতম কারণ। যেমন- পানিতে অব্যবহৃত খাবার, নোংরা জৈব সার, অধিক গুল্ম আগাছা, বৃষ্টি বিধৌত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ইত্যাদির উপস্থিতি। তবে সুষ্ঠু চাষ ব্যবস্থাপনার অভাবে চিংড়িতে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে।

চিংড়ির ভাইরাসজনিত রোগের কোন চিকিৎসা না থাকায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম। যেমন- উত্তম উপায়ে ঘের তৈরি, পিসিআর পরীক্ষিত পোনা মজুদ, পরিমিত হারে সার ও খাবার প্রয়োগ ইত্যাদি। রোগ প্রতিরোধে তিনটি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি যেমন- চিংড়ি (হোস্ট), জীবাণু ও পরিবেশ। চিংড়ি হঠাৎ কোনো ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হলে এবং তাৎক্ষণিকভাবে (২-৩ দিনের মধ্যে) চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হলে খামারের সব চিংড়ি মারা যেতে পারে। সুতরাং চিংড়িকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষার্থে নিম্নে বর্ণিত

বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত-

ক. সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত ও কৌলিতাত্ত্বিক গুণগত মানের পোনা ছাড়তে হবে।

খ. পরিমিত মাত্রায় সুষম খাবার প্রদান করতে হবে। 

গ. পানির গুণগত মানের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে এবং পরিবর্তন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঘ. পুকুরের তলদেশ পরিষ্কার রাখা ও পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ঙ. পুকুরে কোন রোগের আক্রমণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগের শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

চ. পানির গুণগতমান নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেমনঃ পিএইচ, স্বচ্ছতা, পানির তাপমাত্রা ইত্যাদি।

 ছ. পরিমাণ মতো অক্সিজেন সরবরাহে পেডেল হুইলের ব্যবস্থা করতে হবে।

জ. পরিমিত পরিমাণে সার প্রদান করতে হবে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদিত হয়।

 

Content added By

পানির গুণাগুণ রক্ষায় নিম্নবর্ণিত বিষয়ের ওপর বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন:

ক) তাপমাত্রা: যে কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রেই বিপাক ক্রিয়ায় তাপমাত্রা পুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তেমনি চিংড়ির বিপাক ক্রিয়ায়ও তাপামাত্রার গুরুত্ব অপরিসীম। চিংড়ির বৃদ্ধির জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল ২৮-৩২ ডিগ্রি সে.। ৩৫ ডিগ্রি সে. এর বেশি ও ২৫ ডিগ্রি সে. এর কম তাপমাত্রায় চিংড়ি দুর্বল হয়ে মৃত্যুবরণ করে। পানির তাপমাত্রা যদি ১৩ ডিগ্রি সে. এর নীচে ও ৩৪ ডিগ্রি সে. এর উপরে হলে চিংড়ির ব্যাপক মহামারী দেখা যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাবার ও সার প্রয়োগ কম বা বেশি করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পরিবর্তন করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সনাতন ও হালকা উন্নত পদ্ধতির চাষের পুকুরে গভীরতা সর্বদা ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খামারের ভেতরে চারদিকে কোনাকুনি নালা থাকা প্রয়োজন। নার্সারির পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ৪-৬% এলাকায় কচুরিপানা রাখা যেতে পারে।

খ) দ্রবীভূত অক্সিজেন: বাগদা চিংড়ির অক্সিজেন চাহিদা বেশি হওয়ায় চিংড়ি চাষের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি চাষের জন্য অক্সিজেনের আদর্শ পরিমাপ হল ৫-৭ পিপিএম।

সারণি: বাগদা চিংড়ি চাষে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের প্রভাব

তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও বায়ুচাপের ওপর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ভর করে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের উৎস হল বাতাস ও সালোকসংশ্লেষণ। রাত্রিকালে উদ্ভিদের শ্বাস গ্রহণ, প্রাণীকূলে শ্বাস গ্রহণ ও পচনশীল জৈব পদার্থের পচন এর কারণে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে থাকে। পানিতে অক্সিজেন হ্রাসের কারণে চিংড়ির ক্ষুধামন্দা, দৈহিক ক্লেশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত, শ্বাস প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি এবং মারা যায়। সাধারণত মেঘলা দিনে, খুব গরম পড়লে এবং মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত পুকুরে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। পুকুরে অক্সিজেন হ্রাসের লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ-

১। চিংড়ি পানির উপরিভাগে এসে খাবি খাবে।

২। পুকুরে বুদবুদ আকারে গ্যাস উঠতে দেখা যায়।

৩। পানির উপর স্বরের মতো বুদবুদ জমা হয়।

৪। চিংড়ি এদিক ওদিক ছুটাছুটি করবে।

৫। মরা মাছের মত চিংড়ি পানির উপরে ভেসে উঠবে ও ফুলকা ছেড়ে যাবে।

সারণি: বিভিন্ন তাপমাত্রায় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ

রাতের বেলায় আলো না থাকায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে কিন্তু চিংড়ি অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। তাই ভোরের দিকে অক্সিজেন সংকট দেখা যায়। আবার যে পুকুরে ফাইটোপ্লাংকটন বেশি থাকে সেখানে দিনের ভাগে আলোর উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হওয়ায় বিকালের দিকে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে।
নিম্নোক্ত উপায়ে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়-

  • পানির উপরিভাগে ঢেউ সৃষ্টি করে বা পানি আন্দোলিত করে।
  • সাঁতার কেটে বা বাঁশ পিটিয়ে বা হাত দিয়ে পানি ছিটিয়ে।
  • পাম্প দিয়ে নতুন পানি সরবরাহ করে।
  • প্যাডেল হুইল এ্যারেটর স্থাপন করে কৃত্রিম বাতাস সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে ঘেরের চার কর্ণারে একটি থেকে অন্যটি ৩০-৩৫ মিটার দূরে স্থাপন করতে হবে। 

গ) পানির লবণাক্ততা: লবণাক্ততার কারণে দক্ষিণাঞ্চল চিংড়ি চাষের উপযোগী। লোনা পানিতে চিংড়ির ভাল উৎপাদন হয়। সাধারণত ৮-১৪ পিপিটি লবণাক্ত পানি বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী। একটানা প্রখর সূর্যতাপের কারণে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেশি হয়। পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ২৫ পিপিটি এর বেশি হলে পানি সরবরাহ করে লবণাক্ততার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রিফ্লাক্টোমিটারের সাহায্যে পানির লবণাক্ততার পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।

ঘ) অ্যামোনিয়া (NH3): জলজ প্রাণীর বিপাক ক্রিয়া ও পুকুরে পুঞ্জিভূত জৈব পদার্থের পচন থেকে অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। উচ্চ অ্যামোনিয়া জলজ প্রাণির জন্যে সব থেকে বিষাক্ত পদার্থ। পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.০৫ মিলিগ্রাম/ লিটার এর বেশি হলে মাছের ফুলকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আয়নিত অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.১ পিপিএম এর বেশি হলে বৃদ্ধির হার অর্ধেক এ নেমে আসে। পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ পানির পিএইচ এর সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন- পানির পিএইচ বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রং তামাটে বা কালচে রংয়ের হয় ফলে চিংড়ির ছোটাছুটি বেড়ে যায় এবং চিংড়ি মারা যায়। অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণে চিংড়ির মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে। সার ও খাদ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিকার হিসেবে প্রতি শতাংশে ২০০-২৫০ গ্রাম জিওলাইট দিতে হবে।

ঙ) নাইট্রাইট (NO2); নাইট্রাইটের পরিমাণ বেড়ে গেলে চিংড়ির দেহে অক্সিজেন সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয় এবং বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। এতে চিংড়ি বাদামী রং ধারণ করে এবং খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। নিরাপদ চিংড়ি চাষের জন্য নাইট্রাইটের মাত্রা ০.১ পিপিএম এর নীচে রাখা জরুরি। প্রতিকার হিসেবে চিংড়ির ঘনত্ব হ্রাস ও পানি পরিবর্তন করে ২৫০ মিলিগ্রাম/লিটার হারে লবণ দিতে হবে।

চ) নাইট্রেট (NO3): নাইট্রেট খুব বিষাক্ত নয় বরং শেওলার পুষ্টি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে নাইট্রেটের উচ্চ ঘনত্বের সংস্পর্শে থাকলে চিংড়ির অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য ছোট হয়, ফুলকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হেপাটোপ্যানক্রিয়াস এ ক্ষত সৃষ্টি হয়। নাইট্রেটের পরিমাণ ২০ পিপিএম এ রাখা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে উত্তম।

ছ) খরতা ও ক্ষারত্ব: খরতা ও ক্ষারত্বের মধ্যে সামঞ্জস্যতা নষ্ট হলে পানির নিরপেক্ষকরণ ক্ষমতা কমে যায় এবং পিএইচ এর স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় ফলে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাধ্যগ্রস্ত হয় এবং চিংড়ির বৃদ্ধি কমে যায়। খরতা ও ক্ষারত্বের মান ৪০-২০০ মিলিগ্রাম/লিটার চিংড়ি চাষের জন্য উত্তম। ঘের/পুকুর তৈরির সময় গড়ে শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া ছাই ব্যবহারে পানির ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

জ) পিএইচ (pH): চিংড়ি চাষে পুকুরের পানির পিএইচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ঘেরের পানির পিএইচ সকালের দিকে ৭.৫-৮.৫ চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপকারী।

সারণি: চিংড়ির ওপর পানির পিএইচ এর প্রভাব

ঝ) কার্বন-ডাই অক্সাইড: দিনের বেলায় কার্বন ডাই অক্সাইড কম থাকে কারণ সালোকসংশ্লেষণে কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহৃত হয় এবং রাতের বেলায় বৃদ্ধি পায়। পানিতে ৬০ মিলিগ্রাম/লিটার কার্বন ডাই অক্সাইড থাকলে চিংড়ি বাঁচতে পারে। কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পেলে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়।

ঞ) হাইড্রোজেন সালফাইড হাইড্রোজেন সালফাইড যেকোন জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হাইড্রোজেন সালফাইডের যে কোন পরিমাণ চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর। সাধারণত যখন পানির পিএইচ কম থাকে তখন হাইড্রোজেন সালফাইড বিষাক্ত হয়। পানি পরিবর্তন ও মাঝে মাঝে চুন প্রয়োগের মাধ্যমে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। 

Content added By
  • চিংড়ি পুকুরের পাড়ের কাছে বিচ্ছিন্ন ও অলস অবস্থায় ঘোরা ফেরা করা।
  •  খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিলে বা একবারে বন্ধ করলে খাদ্যনালী শূন্য থাকলে।
  • ফুলকায় কালো বা হলদে দাগ পড়লে বা অস্বাভাবিক রং দেখা দিলে।
  • চিংড়ির ফুলকায় পচন দেখা দিলে।
  • চিংড়ির খোলস নরম হলে।
  • হাত-পা বা মাথার উপাঙ্গে পচন ধরলে।
  • চিংড়ির খোলস এবং মাথায় সাদা সাদা দাগ দেখা দিলে।
  • চিংড়ি হঠাৎ বা ধীরে ধীরে মারা গেলে।
  • খোলস ফ্যাকাশে ও শক্ত হয়।
  • পদ উপাঙ্গের আকৃতি অস্বাভাবিক হলে। স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হলে।
  • চিংড়ির দেহ নোংরা হলে বুঝতে হবে চিংড়ি ফাউলিং দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
  • চিংড়ির পোনা উৎপাদনের সময় ডিম অস্বচ্ছ থাকলে ও ডিম ফোটলে।

 

Content added By

রোগাক্রান্ত চিংড়ির রোগের লক্ষণ ছাড়াও যে সব বাহ্যিক পর্যবেক্ষণ দ্বারা খামারে রোগের আক্রমণ প্রত্যক্ষ
করা যায়-

  • খামারে পানির বর্ণ কালচে ও পানির উপরে বুদবুদ সৃষ্টি হলে।
  • হঠাৎ খামারের সব চিংড়ি মারা যাওয়া।
  • পানিতে হাইড্রোজেন সালফাইড বা পঁচা ডিমের গন্ধ সৃষ্টি হলে। 
  • শক্ত কোন বস্তুর সাথে চিংড়ির শরীর ঘর্ষণ করলে।
  • পানির পিএইচ এর সামঞ্জস্যতা নষ্ট হলে।
  • হঠাৎ পানির লবণাক্ততা অনেক বেশি কমে গেলে রোগের আক্রমণ হতে পারে।
  • পানির তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে বেড়ে গেলে।
Content added By

চিংড়ির রোগের প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ-

১) পরিবেশের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলির পরিবর্তনজনিত কারণ

ক) ভৌত গুণাবলীর পরিবর্তন

  •  তাপমাত্রা অত্যধিক হলে বা অনেক কম হলে।
  • পুকুরে/ঘেরে পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পৌঁছালে।
  • পানির স্বাভাবিক রং আকস্মিক বিনষ্ট হলে।
  • অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বাইরের দূষিত পানি প্রবেশ করলে চিংড়ি রোগক্রান্ত হতে পারে।

খ) রাসায়নিক গুণাবলীর পরিবর্তন

  • দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম/লিটার এর কম হলে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হবে।
  • ১-২ পিপিএম এর বেশি মাত্রায় দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড উপস্থিত থাকলে।
  • শিল্পকারখানার বর্জ্য, কৃষি জমির কীটনাশক ঘেরে বা পুকুরে প্রবেশ করলে।
  • পানির লবণাক্ততা অধিক বেড়ে গেলে বা কমে গেলে।
  • পানিতে দ্রবীভূত বিষাক্ত গ্যাসমূহ যেমন- অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, নাইট্রাইট প্রভৃতি এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে

গ) জৈবিক গুণাবলীর পরিবর্তন

  • ঘেরে চিংড়ির মজুদ ঘনত্ব অধিক হলে।
  • প্লাংকটনের ঘনত্ব কমে গেলে।
  • অনুজীবঘটিত রোগের আক্রমণে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হতে পারে। যেমন- ভাইরাসজনিত রোগ, ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ ইত্যাদি।
  • প্রোটোজোয়া বা এককোষী প্রাণিঘটিত রোগ।
  • অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরজীবীঘটিত রোগ।

২) খাদ্যের অভাবজনিত কারণ

  •  চিংড়ির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী খাদ্য উপাদান নির্ধারণ না করলে।
  • প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে না হওয়া।
  • পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য সংরক্ষণ না করা। 
  • খাদ্যের সঠিক গুণগতমান বজায় না রাখা।
  • শরীরের ওজন অনুপাতে খাদ্য প্রয়োগ না করা।

৩) প্রযুক্তি বাস্তবায়নগত অসুবিধা

  • সময়মত সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য প্রয়োগ না করা।
  • সঠিকভাবে পোনা অভ্যস্তকরণ না করা।
  • পোনা সঠিকভাবে পরিবহণ না করা।
  • রোগাক্রান্ত দুর্বল পোনা মজুদ করা।
  • সময়মত পানি পরিবর্তন না করা।
  • সঠিক সময়ে রোগ শনাক্তকরণ এবং প্রতিকার না করা। 
Content added By

বাগদা চিংড়িতে সাধারণত চার ধরনের রোগ দেখা যায়-

ক) ভাইরাসজনিত রোগ: ভাইরাস এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈবকণা বা অনুজীব যা জীবিত কোষের ভিতরে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। চিংড়ি চাষের সমস্যাগুলোর মধ্যে ভাইরাসজনিত রোগ অন্যতম। চিংড়ি চাষে ভাইরাসের আক্রমণে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং আমাদের দেশে ভাইরাসের কারণে চিংড়ির ব্যাপক মহামারী দেখা যায়। চিংড়ির ক্ষেত্রে প্রধান ভাইরাসজনিত রোগ গুলো হলো- White Spot Syndrome Virus (WSSV), Yellow Head Virus (YHV), Baculovirus penaei (BP), Monodon baculovirus (MBV), Infectious Myonecrosis Virus (IMNV), Hepatopancreatic Parvovirus (HPV)

খ) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ: আদিকোষী অনুজীবদের একটি বিরাট অধিজগৎ ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গঠিত। ব্যাকটেরিয়া আণুবীক্ষণিক জীব যা খালি চোখে দেখা যায় না। চিংড়ির দেহে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ব্যাকটেরিয়া চরম ক্ষতিকর রোগ হিসেবে দেখা যায়। রোগ সৃষ্টিকারী প্রধান ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতিসমূহ হলো- Vibrio parahaemolyticus, V. harveyi, V. vulnificus, V. damsela, Aeromonas spp., Flavobacterium spp., alginalyticus প্রভৃতি। বাগদা চিংড়িতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগগুলো হলো- Filamentous bacterial disease, Necrotising Hepatopancreatitis (NHP, Mycobacteriosis, Chitinolytic bacterial shell disease, Rickettsial infection প্রভৃতি।

গ) পরজীবীঘটিত রোগ: বিভিন্ন প্রকার এককোষী ও বহুকোষী পরজীবী আছে যারা চিংড়ির রোগ সৃষ্টি করে। এই পরজীবীগুলো চিংড়ির ত্বকের সাথে লেগে থেকে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করে। ফুলকাতে আক্রমণ করে চিংড়ির ওজন কমিয়ে দেয় এবং অবশেষে মৃত্যু ঘটায়। Black / Brown gill disease হয়ে থাকে Zoothamnium, Epistylis, Vorticella প্রোটোজোয়ার জন্য। Gregarine disease হয়ে থাকে অ্যানিলিড পরজীবী Nematopsis spp. এর জন্য এবং Cotton shrimp এর জন্য দায়ী Agmasoma sp

ঘ) ছত্রাকজনিত রোগ: ছত্রাক প্রধানত চিংড়ির লার্ভা পর্যায়ে বেশি আক্রমণ করে। সাধারণত চিংড়ির ফুলকাতে আক্রমণ করে এবং শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। ফলে চিংড়ি মারা যায়। প্রধান সংক্রামক প্রজাতিগুলো গুলো- Lagenidium callinectes, L. marina, Sirolpidium spp. Pythium spp, Fusarium solani, Fusarium incarnatum প্রভৃতি। 

Content added By

ক) ভাইরাসজনিত রোগ

১) হোয়াইট স্পট বা চায়না ভাইরাস রোগ (White spot syndrome baculovirus-WSBV)

  • চিংড়ি পাড়ের কাছে জড়ো হয়।
  • গায়ে, মাথায়, খোলসে সাদা সাদা স্পট দেখা যায়।
  • নীল বা লালচে রং ধারণ করে।
  • খোলসের নিচে সাদা ক্যালসিয়াম লবণ জমা হয়ে স্পষ্ট হয়।
  • সাধারণত ঘেরের সব চিংড়ি ৩-৭ দিনের মধ্যে মারা যায়।

চিকিৎসা

  • এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই।
  • এই রোগে আক্রমণের ফলে ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত খামার পরিদর্শন করতে হবে।
  • রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার সাথে সাথে চিংড়ি আহরণ শুরু করতে হবে।
     

২) সংক্রামক হাইপোডার্মাল এবং হেমাটোপয়েটিক নেক্রোসিস (Infectious hypodermal and hematopoietic necrosis -IHHN)

 লক্ষণ

  • সংক্রমিত চিংড়ি কম খাদ্য গ্রহণ করে, নরখাদকতা দেখায়।
  • পেটের পেশী অস্বচ্ছ হয়।
  • কিউটিকুলার রুক্ষতা দেখা যায়।
  • কিউটিকুলার বিকৃতি।
  • বিকৃত রোস্ট্রাম একপাশে বৃদ্ধি।
  • জুভেনাইল ও সাব অ্যাডাল্টদের অনিয়মিত বৃদ্ধি।
     

চিকিৎসা

  • IHHN-এর জন্যে কোনো কার্যকরী টিকা দেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়নি।
  • পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে ঝুঁকি কমাতে হবে।
  • সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব ।
     

৩) মনোডন ব্যাকুলোভাইরাস (Monodon Baculovirus MBV)
 

লক্ষণ

  • তীব্র MBV, হেপাটোপ্যানক্রিয়েটিক টিউবুল এবং মিউপাট এপিথেলিয়ার ক্ষতি ঘটায়।
  • অঙ্গের কর্মহীনতা এবং সেকেন্ডারী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
  • জুভেনাইল চিংড়ির উচ্চ মৃত্যু ঘটে। 
  • যকৃত, অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি ও খাদ্যনালীতে এ ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায়।

চিকিৎসা

  • কোন পরিচিত চিকিৎসা নেই।
  • ব্রুড ষ্টকের মল থেকে ডিম ও নগ্নি (Nauplii) এর দূষণ এড়াতে হবে।
  • ভাইরাস বহনকারী পোস্ট লার্ভা খামারে ব্যবহার করা যাবে না।
  • সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।
     

৪) মস্তক হলুদ রোপ

লক্ষণ

  • যকৃত ও অগ্নাশয় গ্রন্থি ফ্যাকাশে হওয়া।
  • প্রথম দিকে বেশি খাবার খায় এবং পরে হঠাৎ খাবার বন্ধ করে দেয়।
  • সেফালোথোরাক্সের রং হলুদ হবে, শরীরের রং ব্লিচ করবে।
  • পুকুরের কিনারায় জমা হতে দেখা যায়।

চিকিৎসা

  • সুষ্ঠু খামার ব্যবস্থাপনার ফলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
  • পুকুরের তলদেশ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ব্লিচিং পাউডার / চুন দিয়ে ভালো করে মাটি শোধন করে নিতে হবে।

খ) ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ

১) নেক্রোটাইজিং হেপাটোপ্যানক্রিয়াটাইটিস (Necrotising hepatopancreatitis (NHP)

লক্ষণ

  •  চিংড়ির অলসতা দেখা যায় এবং স্বাভাবিক চলাফেরা কমে যায়।
  • হেপাটোপ্যানক্রিয়াস ফ্যাকাশে এবং ক্ষীণ হয়ে যায়।
  • খাদ্য গ্রহণে অনীহা এবং পরিপাকনালী খাদ্য শূন্য থাকে ।
  • চিংড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।
  • স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়।

চিকিৎসা

  • এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।
  • খামারে যাতে এই রোগ আসতে না পারে তার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • পিসিআর পরীক্ষা করা পোষ্ট লার্ভা মজুদ করতে হবে।
  • পোষ্ট লার্ভা এর মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখতে হবে।
  • খামারের জৈব নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।
     

২) কালো ফোটা রোগ (Black spot disease)

লক্ষণ

  • শরীরে বাদামী থেকে কালো রঙের ক্ষত দেখা যায়।
  •  কিউটিকল, এপেন্ডেজ ও ফুলকায় এক বা একাধিক ক্ষতস্থান দেখা যায়। 
  • ছোট ক্ষতস্থান দিয়ে শুরু হলেও পরে দ্রুত বড় হয়ে যায়।
  •  খোলস সহজে ভেঙ্গে যায়।

চিকিৎসা

  • নাইট্রেট এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রোবায়োটিক দিতে হবে।
  • আক্রান্ত চিংড়িকে ২০ পিপিএম মাত্রায় ফরমালিন অথবা ০.৩ পিপিএম মাত্রায় মেলাকাইট গ্রিন এ ১২ ঘন্টা চুবিয়ে রাখতে হবে।
  • পানি পরিবর্তনের মাধ্যমে জৈব পদার্থের পরিমাণ হ্রাস করতে হবে।

৩) লেজ পঁচা রোগ (Tail rot disease)

  • লেজের কিনারা বিবর্ণ হয়ে যায়।
  • চিংড়ি চলাফেরা বন্ধ করে দেয়।
  • লেজের মাংসপেশীতে ক্ষয় ও পচন হয়।
  • চিংড়ির লেজ কালো বর্ণ ধারণ করে এবং নিচের দিকে হেলে পড়ে।

চিকিৎসা

  •  এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। যেমন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রতি কেজিতে ২-৩ গ্রাম, ১০-১২ দিন। 
  • ১৫ পিপিএম মাত্রায় ফরমালিন বা ০.৩ পিপিএম মাত্রায় মেলাকাইট গ্রিন দ্রবণের মধ্যে চিংড়িকে ১০-১২ ঘন্টা রাখতে হবে।

৪) ব্যাকটিরিয়াল সেপ্টিসেমিয়া (Bacterial septicemia)

লক্ষণ

  • সাঁতারে অস্বাভাবিকতা দৃষ্টিগোচর হয়।
  • ক্রোমাটোফোরের প্রসারণ ও প্লিওপোডগুলোতে লাল রঙের পরিবর্তন ঘটে।

চিকিৎসা

  •  পানি পরিবর্তনের মাধ্যমে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে এ রোগের প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
  •  এন্টিবায়োটিকের সাথে উচ্চ মাত্রায় আমিষযুক্ত খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে

৫) কালো দাগ রোগ (Black spot / shell disease)

লক্ষণ

  •  চিংড়ি খোলস, লেজ ও ফুলকায় কালো দাগ হয়।
  • খোলসের গায়ে ছিদ্র হয়।
  • পরবর্তীতে ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চিংড়ি মারা যায়।
  • খোলসের নীচে চ্যাপ্টা কালো দাগ দেখা যায়।
  • লেজের মাংসপেশীতে আঁচড়ের মত দাগ দেখা যায়।

চিকিৎসা

  • প্রতি কেজি খাদ্যে ২-৩ গ্রাম হারে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ৭-১০ দিন ধরে প্রয়োগ করতে হবে। 
  •  চাষকালীন সময়ে নিয়মিত পানি পরিবর্তনসহ সুষম খাদ্য ও সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • পুকুরের কাদা তুলে চুন/ সার দিয়ে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে।

গ) পরজীবীজনিত রোগ

১) ইপিকম্মেন্সাল রোগ (Epicommensal disease)

লক্ষণ

  •  দেহ মাটি জাতীয় পদার্থ দিয়ে আবৃত থাকে।
  • দেখতে বিবর্ণ দেখায়।
  • শ্বসন প্রক্রিয়া, চলাফেরা ও খোলস পরিবর্তনে বাধার সৃষ্টি হয়।

চিকিৎসা

  • খামারের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে।
  • ফরমালিন (১৫-৫০ পিপিএম) ও মেলাকাইট গ্রিন (০.৫-১.০ পিপিএম) দ্রবণে চিংড়িকে রাখতে হবে।
  • চুন প্রয়োগ করতে হবে

২) ইন্টারোসাইটোজোন হেপাটোপেনাই (Enterocytozoon hepatopenai, EHP)

লক্ষণ

  • মৃত্যু ঘটায় না কিন্তু চিংড়ির বৃদ্ধি ব্যাপকভাবে সীমিত করে।
  •  গ্যাসট্রোইনটেষ্টিনাল ট্রাক্ট এ সাদা বর্ণ দেখা যায়।
  • পুকুরের পানিতে সাদা রংয়ের মল ভেসে থাকে।

চিকিৎসা

  •  খামারের জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে (লাইফ ফিডের জীবাণুমুক্তকরণ)।
  • পুঞ্জিভূত জৈব পদার্থের অপসারণ করতে হবে।
  • সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক নেই।

ঘ) ছত্রাকঘটিত রোগ

১) ফুলকা পঁচা রোগ (Gill not disease)

লক্ষণ

  • ফুলকায় ময়লা জমে, শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায় এবং দুর্গন্ধ হয়।
  • দেহের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
  • ফুলকা পঁচে ও ফুলে যায়।
  •  ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়।

চিকিৎসা

  • প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন তিন মাস পরপর দিতে হবে।
  • আক্রান্ত চিংড়িকে ০.৫-০.৮ পিপিএম মাত্রার মেলাকাইট গ্রিন দ্রবণে রাখতে হবে।
  • ৫০ পিপিএম ফরমালিন দ্রবণে ১ ঘন্টার জন্য ডুবিয়ে রাখতে হবে।

২) ছত্রাক রোগ (Fungal disease)

লক্ষণ

  • চিংড়ির ফুলকায় ফোঁটা ফোঁটা দাগ দেখা যায়। এতে খোলস নষ্ট হয়ে যায়। 
  •  হ্যাচারিতে পোস্ট লার্ভা বেশি আক্রান্ত হয়।
  • ফুলকার ল্যামিলা নষ্ট হয়ে যায়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস এ ব্যাঘাত ঘটে।

চিকিৎসা

  • ঘেরের তলা ভালোভাবে শুকিয়ে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
  • আক্রান্ত চিংড়িকে আলাদা করতে হবে।
  • অক্সালিক এসিড দ্রবণে ০.১-০.৫ পিপিএম মাত্রায় ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে।

৩) কালো ফুলকা রোগ (Black gill disease)

  • ফুলকায় কালো দাগ ও পচন দেখা যায়। 
  • শ্বাস-প্রশ্বাস এ ব্যাঘাত ঘটে।
  • খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা যায়।
  • বড় চিংড়িতে বেশি হয় এবং বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে।

চিকিৎসা

  • হাইড্রোজেন সালফাইড ও অন্যান্য জৈব পদার্থের জন্য ঘেরের তলায় যে গ্যাস হয় তা আচড়িয়ে বা হররা টেনে মুক্ত করতে হবে।
  • পানি পরিবর্তন করতে হবে।
  •  প্রতি কেজি খাদ্যে ২০০০ মিলিগ্রাম হারে এসকরবিক এসিড মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

৪) ফুসেরিয়াম রোগ (Fusarium sp.)

লক্ষণ

  • মাইসেলিয়াল বৃদ্ধির কারণে লোকোমোটরি অসুবিধা হয়।
  • ফুলকার ফাউলিং হয়।
  • ফুলকার আশেপাশে ক্ষত দেখা যায়।
  •  পেরিওপোড, ইউরোপোড ও লেজে লালচে বর্ণ দেখা যায়।

চিকিৎসা

  • ঘেরের তলা পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নিয়মিত পানি পরিবর্তন করতে হবে।
  • মিথাইল ব্লু ০.১-১.১ পিপিএম মিশ্রিত দ্রবণে ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।
  • Gentian violet দ্রবণ ১-২ পিপিএম মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।

ঙ) অপুষ্টিজনিত রোগ

১) খোসা নরম রোগ (Soft shell disease)

লক্ষণ

  • ক্যালসিয়ামের অভাবে এ রোগ হয়।
  • খোলস বদলানোর ২৪ ঘন্টা পরেও শক্ত হয় না ।
  • বৃদ্ধি কম হয় এবং মাংসপেশীতে কালচে বর্ণ ধারণ করে।
  • ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সেকেন্ডারী ইনফেকশন হতে পারে।

চিকিৎসা

  •  ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
  • প্রতি শতাংশ পানিতে ১ কেজি পরিমাণ পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
  • প্রতি কেজি খাদ্যে ভিটামিন সি ২০০০ মিলিগ্রাম হারে ১ মাস প্রয়োগ করতে হবে।

২) দেহ খিচুনি রোগ (Body cramp disease)

লক্ষণ

  • কোয়াগুলোটিভ নেক্রোসিস দেখা যায়।
  •  চিংড়ির মাংশপেশী সংকুচিত হয়।
  •  দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়।
  • অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও পুষ্টির অভাবে এ রোগ হয়।

চিকিৎসা

  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • খাবারের সাথে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম সরবরাহ করতে হবে।
  • দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫ পিপিএম রাখতে হবে।

চ) বিবিধ রোগ

১) চিংড়ির গায়ে শেওলাজনিত সমস্যা (Extrenal fouling of shrimp)

লক্ষণ

  • গায়ে শেওলা জমে থাকে।
  • শেওলা জমায় খোলস বদলাতে পারে না।
  •  দৈহিক বৃদ্ধি কম হয় এবং আস্তে আস্তে মারা যায়।
  • চিংড়ির দেহ ও খোলস নীল বর্ণ ধারণ করে ।

চিকিৎসা

  • পানির গভীরতা বাড়াতে হবে।
  • পোস্ট লার্ভার মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে
  • চুন/সার ও খাদ্য সীমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

২) বুদবুদ রোগ (Gas bubble disease)

লক্ষণ

  • ফুলকা ও চোখের বলে ছোট ছোট গ্যাসের বুদবুদ দেখা যায়।
  • গ্যাসের কারণে ভাসমান সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত উল্টো সাঁতার কাটে।
  • রক্ত নালী ও অঙ্গসমূহের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়।

চিকিৎসা

  • আক্রান্ত চিংড়িকে উচ্চ চাপের গভীর জলে (কমপক্ষে ১মিটার) রাখতে হবে।
  •  পুকুরের তলদেশ আন্দোলনের মাধ্যমে অথবা হররা টেনে গ্যাস মুক্ত করতে হবে।
Content added By
  • চিংড়ির ঘেরের আকার ছোট করতে হবে।
  • ঘেরে আলাদা নার্সারির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • পোনা মজুদ ঘনত্ব একর প্রতি ৩-৪ হাজারের মধ্যে রাখতে হবে।
  • ঘেরভুক্ত আলাদা নার্সারিতে চিংড়ির পোনা ২-৩ সপ্তাহ প্রতিপালন করতে হবে।
  • প্রতিপালনের পর চিংড়ি ঘেরের মধ্যে নালা কেটে বের করে দিতে হবে।
  • ঘের প্রস্তুত করার সময় পরিমিত পরিমাণ চুন (শতাংশে ১ কেজি) প্রয়োগ করতে হবে।
  • চাষের সময় পানি বদলের পর প্রতি শতাংশে ৫০-১০০ গ্রাম কার্বনেট চুন দিয়ে শোধন করতে হবে।
  • ঘেরের পানির গভীরতা ৩-৪ ফুট রাখতে হবে।
  • ১৫ দিন বা ১ মাস পরপর বর্জ্য পানি বের করে নতুন পানি প্রবেশ করাতে হবে। 
  • রাক্ষুসে মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য চিংড়িভুক প্রাণী সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • সুস্থ সবল চিংড়ির পোনা মজুদ করতে হবে।
  • খামার জলজ আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • কোন সমস্যা হলে নিকটস্থ মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে সঠিক ঔষুধ সঠিক মাত্রায় সঠিক সময় দিতে হবে।
Content added By

১। পটাশ (KMnO4)

২। কপার সালফেট (Copper sulphate)

৩। ম্যালাকাইট গ্রিন (Malachite green

৪। মিথিলিন ব্লু (Methylene blue

৫। টিমসেন (Timsen )

৬। ফরমালিন (Formalin )

৭। অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Aluminium oxide)

৮। ব্লিচিং পাউডার (Bleaching powder)

৯। প্রোটোজোয়াসাইড (Protozoacide)

১০। বায়ো অ্যাকুয়া (Bio aqua )

১১। ট্রাফলান (Trafian)

 

এন্টিবায়োটিক

১। পলিমিক্সিন (Polymixin)

২। ইরিথ্রোমাইসিন (Erythromycin)

৩। অক্সিটেট্রাসাইক্লিন (Oxytetracycline)

৪। সারাফ্লোক্সাসিন (Sarafloxacin)

৫। সালফোনামাইড (Sulphonamide)

৬। কুইনোলোন (Quinolone)

৭। অ্যালবাজিন (Albazin

৮। টেট্রাসাইক্লিন (Tetracycline)

৯। ক্লোরামফেনিকল (Chloramphenicol

১০। মেট্রোনিডাজল (Metronidazole)
 

নিষিদ্ধ এন্টিবায়োটিক

১। সালফামেথোক্সাজল (Sulfamethoxazole)

২। ফিউরাজলিন (Furazolidone )

৩। ক্লোরামফেনিকল (Chloramphenicol

৪। নাইট্রোফুরান (Nitrofuran

৫। নিওমাইসিন (Neomycin)

৬। নালিডিক্সিক এসিড (Nalidixic acid)

Content added By

ক) গভীরতাজনিত সমস্যা: চিংড়ি চাষে নার্সারিতে পানির গভীরতা ০.৬-০.৭ মিটার এবং পালন ঘেরে ১.০- ১.৫ মি. হওয়া উচিত।

খ) পানির উপর সবুজ ফাইটোপ্লাংকটন স্তর বেশি জৈব সার প্রয়োগে পানিতে ফাইটোপ্লাংকটন অনেক বেশি জন্মায়। ফলে পুকুরের পানির উপর সবুজ মোটা কাথার মতো স্তর দেখা যায়। সবুজ স্তর দূর করার জন্য প্রতি শতকে ১৫ গ্রাম (৩-৫ ফুট গভীরতা) তুঁতে প্রয়োগ করতে হবে।

গ) ইউগ্লেনাজনিত স্তর: ইউগ্লেনা নামক বহুকোষী প্রাণিতে ক্লোরোফিল নামক উপাদান থাকায় সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে লালচে বাদামী বর্ণ ধারণ করে। ইউগ্লেনা স্তরের উপর প্রতি কেজিতে ২০০ মিলি হারে পাথুরে চুন পানির সাথে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।

ঘ) আয়রনজনিত স্তর: পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে আয়রনজনিত স্তর তৈরি হয়ে থাকে। এটি সবসময় লালচে বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। আয়রনজনিত স্তর দূর করার জন্য পুকুরে প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম চুন এবং ৫০-১০০ গ্রাম হারে ফিটকিরি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঙ) আগাছা নিয়ন্ত্রণ: যে কোনো ধরনের জলজ আগাছা আধা নিবিড় চিংড়ি চাষে একটি বিশেষ সমস্যা। তাই দৈনিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কায়িক শ্রম দ্বারা আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

চ) পানিতে শামুক ঝিনুকের প্রকোপ/উপদ্রব বেশি পরিমাণ শামুক ঝিনুকের উপস্থিতি লক্ষ্য করলে শক্ত ডালপালা বা তালপাতা পুকুরের পানিতে পুতে দেওয়া যেতে পারে। এসব ডালে শামুক আশ্রয় নিলে পাড়ে ভুলে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া শামুক নিয়ন্ত্রণের জন্য পুকুরে ব্লাক কার্প মাছ ছাড়া যেতে পারে,কারণ এরা খাবার হিসেবে শামুক গ্রহণ করে থাকে।

ছ) অবাঞ্ছিত মাছসহ রাক্ষুসে মাছ দূরীকরণ: পুকুরে বার বার জাল টেনে যত দূর সম্ভব সকল অবাঞ্ছিত মাছ ধরে ফেলতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সব মাছ ধরে ফেলার জন্য প্রতি শতক আয়তন ও প্রতি ফুট পানির গড় গভীরতার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম হারে রোটেনন প্রয়োগ করতে হবে।

জ) কাঁকড়ার উপদ্রব: যদি ঘেরের পানিতে কাঁকড়ার উপদ্রব হয় তাহলে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।

Content added By