এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

ক) ভাইরাসজনিত রোগ

১) হোয়াইট স্পট বা চায়না ভাইরাস রোগ (White spot syndrome baculovirus-WSBV)

  • চিংড়ি পাড়ের কাছে জড়ো হয়।
  • গায়ে, মাথায়, খোলসে সাদা সাদা স্পট দেখা যায়।
  • নীল বা লালচে রং ধারণ করে।
  • খোলসের নিচে সাদা ক্যালসিয়াম লবণ জমা হয়ে স্পষ্ট হয়।
  • সাধারণত ঘেরের সব চিংড়ি ৩-৭ দিনের মধ্যে মারা যায়।

চিকিৎসা

  • এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই।
  • এই রোগে আক্রমণের ফলে ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত খামার পরিদর্শন করতে হবে।
  • রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার সাথে সাথে চিংড়ি আহরণ শুরু করতে হবে।
     

২) সংক্রামক হাইপোডার্মাল এবং হেমাটোপয়েটিক নেক্রোসিস (Infectious hypodermal and hematopoietic necrosis -IHHN)

 লক্ষণ

  • সংক্রমিত চিংড়ি কম খাদ্য গ্রহণ করে, নরখাদকতা দেখায়।
  • পেটের পেশী অস্বচ্ছ হয়।
  • কিউটিকুলার রুক্ষতা দেখা যায়।
  • কিউটিকুলার বিকৃতি।
  • বিকৃত রোস্ট্রাম একপাশে বৃদ্ধি।
  • জুভেনাইল ও সাব অ্যাডাল্টদের অনিয়মিত বৃদ্ধি।
     

চিকিৎসা

  • IHHN-এর জন্যে কোনো কার্যকরী টিকা দেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়নি।
  • পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে ঝুঁকি কমাতে হবে।
  • সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব ।
     

৩) মনোডন ব্যাকুলোভাইরাস (Monodon Baculovirus MBV)
 

লক্ষণ

  • তীব্র MBV, হেপাটোপ্যানক্রিয়েটিক টিউবুল এবং মিউপাট এপিথেলিয়ার ক্ষতি ঘটায়।
  • অঙ্গের কর্মহীনতা এবং সেকেন্ডারী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
  • জুভেনাইল চিংড়ির উচ্চ মৃত্যু ঘটে। 
  • যকৃত, অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি ও খাদ্যনালীতে এ ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায়।

চিকিৎসা

  • কোন পরিচিত চিকিৎসা নেই।
  • ব্রুড ষ্টকের মল থেকে ডিম ও নগ্নি (Nauplii) এর দূষণ এড়াতে হবে।
  • ভাইরাস বহনকারী পোস্ট লার্ভা খামারে ব্যবহার করা যাবে না।
  • সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।
     

৪) মস্তক হলুদ রোপ

লক্ষণ

  • যকৃত ও অগ্নাশয় গ্রন্থি ফ্যাকাশে হওয়া।
  • প্রথম দিকে বেশি খাবার খায় এবং পরে হঠাৎ খাবার বন্ধ করে দেয়।
  • সেফালোথোরাক্সের রং হলুদ হবে, শরীরের রং ব্লিচ করবে।
  • পুকুরের কিনারায় জমা হতে দেখা যায়।

চিকিৎসা

  • সুষ্ঠু খামার ব্যবস্থাপনার ফলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
  • পুকুরের তলদেশ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ব্লিচিং পাউডার / চুন দিয়ে ভালো করে মাটি শোধন করে নিতে হবে।

খ) ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ

১) নেক্রোটাইজিং হেপাটোপ্যানক্রিয়াটাইটিস (Necrotising hepatopancreatitis (NHP)

লক্ষণ

  •  চিংড়ির অলসতা দেখা যায় এবং স্বাভাবিক চলাফেরা কমে যায়।
  • হেপাটোপ্যানক্রিয়াস ফ্যাকাশে এবং ক্ষীণ হয়ে যায়।
  • খাদ্য গ্রহণে অনীহা এবং পরিপাকনালী খাদ্য শূন্য থাকে ।
  • চিংড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।
  • স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়।

চিকিৎসা

  • এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।
  • খামারে যাতে এই রোগ আসতে না পারে তার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • পিসিআর পরীক্ষা করা পোষ্ট লার্ভা মজুদ করতে হবে।
  • পোষ্ট লার্ভা এর মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখতে হবে।
  • খামারের জৈব নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।
     

২) কালো ফোটা রোগ (Black spot disease)

লক্ষণ

  • শরীরে বাদামী থেকে কালো রঙের ক্ষত দেখা যায়।
  •  কিউটিকল, এপেন্ডেজ ও ফুলকায় এক বা একাধিক ক্ষতস্থান দেখা যায়। 
  • ছোট ক্ষতস্থান দিয়ে শুরু হলেও পরে দ্রুত বড় হয়ে যায়।
  •  খোলস সহজে ভেঙ্গে যায়।

চিকিৎসা

  • নাইট্রেট এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রোবায়োটিক দিতে হবে।
  • আক্রান্ত চিংড়িকে ২০ পিপিএম মাত্রায় ফরমালিন অথবা ০.৩ পিপিএম মাত্রায় মেলাকাইট গ্রিন এ ১২ ঘন্টা চুবিয়ে রাখতে হবে।
  • পানি পরিবর্তনের মাধ্যমে জৈব পদার্থের পরিমাণ হ্রাস করতে হবে।

৩) লেজ পঁচা রোগ (Tail rot disease)

  • লেজের কিনারা বিবর্ণ হয়ে যায়।
  • চিংড়ি চলাফেরা বন্ধ করে দেয়।
  • লেজের মাংসপেশীতে ক্ষয় ও পচন হয়।
  • চিংড়ির লেজ কালো বর্ণ ধারণ করে এবং নিচের দিকে হেলে পড়ে।

চিকিৎসা

  •  এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। যেমন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রতি কেজিতে ২-৩ গ্রাম, ১০-১২ দিন। 
  • ১৫ পিপিএম মাত্রায় ফরমালিন বা ০.৩ পিপিএম মাত্রায় মেলাকাইট গ্রিন দ্রবণের মধ্যে চিংড়িকে ১০-১২ ঘন্টা রাখতে হবে।

৪) ব্যাকটিরিয়াল সেপ্টিসেমিয়া (Bacterial septicemia)

লক্ষণ

  • সাঁতারে অস্বাভাবিকতা দৃষ্টিগোচর হয়।
  • ক্রোমাটোফোরের প্রসারণ ও প্লিওপোডগুলোতে লাল রঙের পরিবর্তন ঘটে।

চিকিৎসা

  •  পানি পরিবর্তনের মাধ্যমে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে এ রোগের প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
  •  এন্টিবায়োটিকের সাথে উচ্চ মাত্রায় আমিষযুক্ত খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে

৫) কালো দাগ রোগ (Black spot / shell disease)

লক্ষণ

  •  চিংড়ি খোলস, লেজ ও ফুলকায় কালো দাগ হয়।
  • খোলসের গায়ে ছিদ্র হয়।
  • পরবর্তীতে ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চিংড়ি মারা যায়।
  • খোলসের নীচে চ্যাপ্টা কালো দাগ দেখা যায়।
  • লেজের মাংসপেশীতে আঁচড়ের মত দাগ দেখা যায়।

চিকিৎসা

  • প্রতি কেজি খাদ্যে ২-৩ গ্রাম হারে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ৭-১০ দিন ধরে প্রয়োগ করতে হবে। 
  •  চাষকালীন সময়ে নিয়মিত পানি পরিবর্তনসহ সুষম খাদ্য ও সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • পুকুরের কাদা তুলে চুন/ সার দিয়ে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে।

গ) পরজীবীজনিত রোগ

১) ইপিকম্মেন্সাল রোগ (Epicommensal disease)

লক্ষণ

  •  দেহ মাটি জাতীয় পদার্থ দিয়ে আবৃত থাকে।
  • দেখতে বিবর্ণ দেখায়।
  • শ্বসন প্রক্রিয়া, চলাফেরা ও খোলস পরিবর্তনে বাধার সৃষ্টি হয়।

চিকিৎসা

  • খামারের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে।
  • ফরমালিন (১৫-৫০ পিপিএম) ও মেলাকাইট গ্রিন (০.৫-১.০ পিপিএম) দ্রবণে চিংড়িকে রাখতে হবে।
  • চুন প্রয়োগ করতে হবে

২) ইন্টারোসাইটোজোন হেপাটোপেনাই (Enterocytozoon hepatopenai, EHP)

লক্ষণ

  • মৃত্যু ঘটায় না কিন্তু চিংড়ির বৃদ্ধি ব্যাপকভাবে সীমিত করে।
  •  গ্যাসট্রোইনটেষ্টিনাল ট্রাক্ট এ সাদা বর্ণ দেখা যায়।
  • পুকুরের পানিতে সাদা রংয়ের মল ভেসে থাকে।

চিকিৎসা

  •  খামারের জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে (লাইফ ফিডের জীবাণুমুক্তকরণ)।
  • পুঞ্জিভূত জৈব পদার্থের অপসারণ করতে হবে।
  • সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক নেই।

ঘ) ছত্রাকঘটিত রোগ

১) ফুলকা পঁচা রোগ (Gill not disease)

লক্ষণ

  • ফুলকায় ময়লা জমে, শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায় এবং দুর্গন্ধ হয়।
  • দেহের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
  • ফুলকা পঁচে ও ফুলে যায়।
  •  ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়।

চিকিৎসা

  • প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন তিন মাস পরপর দিতে হবে।
  • আক্রান্ত চিংড়িকে ০.৫-০.৮ পিপিএম মাত্রার মেলাকাইট গ্রিন দ্রবণে রাখতে হবে।
  • ৫০ পিপিএম ফরমালিন দ্রবণে ১ ঘন্টার জন্য ডুবিয়ে রাখতে হবে।

২) ছত্রাক রোগ (Fungal disease)

লক্ষণ

  • চিংড়ির ফুলকায় ফোঁটা ফোঁটা দাগ দেখা যায়। এতে খোলস নষ্ট হয়ে যায়। 
  •  হ্যাচারিতে পোস্ট লার্ভা বেশি আক্রান্ত হয়।
  • ফুলকার ল্যামিলা নষ্ট হয়ে যায়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস এ ব্যাঘাত ঘটে।

চিকিৎসা

  • ঘেরের তলা ভালোভাবে শুকিয়ে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
  • আক্রান্ত চিংড়িকে আলাদা করতে হবে।
  • অক্সালিক এসিড দ্রবণে ০.১-০.৫ পিপিএম মাত্রায় ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে।

৩) কালো ফুলকা রোগ (Black gill disease)

  • ফুলকায় কালো দাগ ও পচন দেখা যায়। 
  • শ্বাস-প্রশ্বাস এ ব্যাঘাত ঘটে।
  • খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা যায়।
  • বড় চিংড়িতে বেশি হয় এবং বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে।

চিকিৎসা

  • হাইড্রোজেন সালফাইড ও অন্যান্য জৈব পদার্থের জন্য ঘেরের তলায় যে গ্যাস হয় তা আচড়িয়ে বা হররা টেনে মুক্ত করতে হবে।
  • পানি পরিবর্তন করতে হবে।
  •  প্রতি কেজি খাদ্যে ২০০০ মিলিগ্রাম হারে এসকরবিক এসিড মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

৪) ফুসেরিয়াম রোগ (Fusarium sp.)

লক্ষণ

  • মাইসেলিয়াল বৃদ্ধির কারণে লোকোমোটরি অসুবিধা হয়।
  • ফুলকার ফাউলিং হয়।
  • ফুলকার আশেপাশে ক্ষত দেখা যায়।
  •  পেরিওপোড, ইউরোপোড ও লেজে লালচে বর্ণ দেখা যায়।

চিকিৎসা

  • ঘেরের তলা পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নিয়মিত পানি পরিবর্তন করতে হবে।
  • মিথাইল ব্লু ০.১-১.১ পিপিএম মিশ্রিত দ্রবণে ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।
  • Gentian violet দ্রবণ ১-২ পিপিএম মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।

ঙ) অপুষ্টিজনিত রোগ

১) খোসা নরম রোগ (Soft shell disease)

লক্ষণ

  • ক্যালসিয়ামের অভাবে এ রোগ হয়।
  • খোলস বদলানোর ২৪ ঘন্টা পরেও শক্ত হয় না ।
  • বৃদ্ধি কম হয় এবং মাংসপেশীতে কালচে বর্ণ ধারণ করে।
  • ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সেকেন্ডারী ইনফেকশন হতে পারে।

চিকিৎসা

  •  ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
  • প্রতি শতাংশ পানিতে ১ কেজি পরিমাণ পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
  • প্রতি কেজি খাদ্যে ভিটামিন সি ২০০০ মিলিগ্রাম হারে ১ মাস প্রয়োগ করতে হবে।

২) দেহ খিচুনি রোগ (Body cramp disease)

লক্ষণ

  • কোয়াগুলোটিভ নেক্রোসিস দেখা যায়।
  •  চিংড়ির মাংশপেশী সংকুচিত হয়।
  •  দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়।
  • অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও পুষ্টির অভাবে এ রোগ হয়।

চিকিৎসা

  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • খাবারের সাথে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম সরবরাহ করতে হবে।
  • দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫ পিপিএম রাখতে হবে।

চ) বিবিধ রোগ

১) চিংড়ির গায়ে শেওলাজনিত সমস্যা (Extrenal fouling of shrimp)

লক্ষণ

  • গায়ে শেওলা জমে থাকে।
  • শেওলা জমায় খোলস বদলাতে পারে না।
  •  দৈহিক বৃদ্ধি কম হয় এবং আস্তে আস্তে মারা যায়।
  • চিংড়ির দেহ ও খোলস নীল বর্ণ ধারণ করে ।

চিকিৎসা

  • পানির গভীরতা বাড়াতে হবে।
  • পোস্ট লার্ভার মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে
  • চুন/সার ও খাদ্য সীমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

২) বুদবুদ রোগ (Gas bubble disease)

লক্ষণ

  • ফুলকা ও চোখের বলে ছোট ছোট গ্যাসের বুদবুদ দেখা যায়।
  • গ্যাসের কারণে ভাসমান সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত উল্টো সাঁতার কাটে।
  • রক্ত নালী ও অঙ্গসমূহের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়।

চিকিৎসা

  • আক্রান্ত চিংড়িকে উচ্চ চাপের গভীর জলে (কমপক্ষে ১মিটার) রাখতে হবে।
  •  পুকুরের তলদেশ আন্দোলনের মাধ্যমে অথবা হররা টেনে গ্যাস মুক্ত করতে হবে।
Content added By