On This Page
এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

অতীতে আমাদের দেশের উপকূলীয় কিছু কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিক উৎস হতে পোনা সংগ্রহ করে সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু হয়। কিন্তু ব্যাপক আকারে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাপ পোনা প্রাকৃতিক উৎস হতে সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় সরকারি পর্যায়ে চাঁদপুরে প্রথম গলদা চিংড়ির গৃহাশন হ্যাচারির সূচনা করা হয়। পরবর্তীতে সরকারি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু প্রতিষ্ঠান গলদা চিংড়ির হ্যাচারী পরিচালনার মাধ্যমে চিংড়ির প্রজননের মাধ্যমে গলদা চিংড়ির পিএল উৎপাদন করছে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

  •  গলদা চিংড়ির হ্যাচারির স্থান নির্বাচন করতে পারব,
  • হ্যাচারির নকশা ও ভৌত অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ করতে পারব,
  • গলদা চিংড়ির হ্যাচারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতির তালিকা তৈরী করতে পারব, 
  • হ্যাচারী পরিচালনার বিভিন্ন ধরনের ট্যাংক ব্যবস্থাপনা করতে পারব,
  • হ্যাচারিতে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে পারব, এবং
  •  হ্যাচারিতে লার্ভার স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও রোগ জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
Content added By

যে কোন প্রকারের হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে অভিষ্ট প্রজাতি চিহ্নিত করতে হবে এবং বাজারের চাহিদা এবং আর্থিক যোগানের ভিত্তিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে যা হ্যাচারির নকশা তৈরিতে আবশ্যক ভূমিকা রাখে। একটি হ্যাচারি তৈরির ক্ষেত্রে তিনটি নির্ধারক রয়েছে, যেমন:-

  • অভিষ্ট প্রজাতি (Target species
  • উৎপাদন লক্ষ্য (Production target)
  • আর্থিক যোগান স্তর (Financial investment

হ্যাচারির প্রকারভেদ সাধারণত হ্যাচারির প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থনৈতিক দক্ষতার উপর ভিত্তি করেই হওয়া উচিত। সাধারণত পলদা চিংড়ির হ্যাচারিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

ক) ছোট আকারের হ্যাচারি

এই প্রকারের হ্যাচারি মৎস্য চাষি তার নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে নিজ পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হলো তার নিজের হ্যাচারিতে নিজের খামারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা উৎপাদন করা এবং সামান্য কিছু প্রতিবেশি চাষীদের কাছে বিক্রি করা। এটি সাধারণত ১,০০০ বর্গমিটারের মধ্যে হয়ে থাকে এবং পোনা উৎপাদনের পরিমাণও কম হয়। এ সকল হ্যাচারিতে বছরে মাত্র ৫ মিলিয়ন পোষ্ট লার্ভার বেশি হয়না এবং ২ জন কারিগরী কর্মী দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ধরণের হ্যাচারির মূলধন বিনিয়োগের জন্য সাধারণত ১০-১৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়। এই প্রকার হ্যাচারিতে ব্যবহৃত চৌবাচ্চার আয়তন ১০ টনের কম হয়। কম ঘনত্বে অপরিশুদ্ধ পানি ব্যবহৃত হয়। ভাই পোনা বাঁচার সম্ভাবনা ০-৯০%। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এই ধরণের হ্যাচারির অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

খ) মাঝারি আকারের হ্যাচারি

এইসব হ্যাচারির পুঁজি বিনিয়োগ, হ্যাচারির আকার, হ্যাচারির উৎপাদন ক্ষমতা এবং পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে ছোট আকারের হ্যাচারির চেয়ে তুলনামূলকভাবে বড়। তবে হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ছোট আকারের হ্যাচারির মতই। বছরে উৎপাদনের পরিমাণ ১০-২০ মিলিয়ন পোস্ট লার্ভা এবং তিনজন কারিগরী কর্মী ও ৩- ৪ জন শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে পরিশোধিত পানি বেশি ঘনত্বে ব্যবহার করা হয়। পোনা বাঁচার হার প্রায় ৪০% বা তার কম। কোন কোন ক্ষেত্রে ছোট সমবায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই ধরণের হ্যাচারিগুলো সাধারণত তাদের সদস্য চাষিদের প্রয়োজনীয় গলদা চিংড়ির পোনা সরবরাহ করে থাকে।

গ) বড় আকারের হ্যাচারি

বড় আকারের হ্যাচারি পরিচালনার জন্য বড় কর্পোরেশন, জাতীয় সংস্থা বা সমবায় প্রকল্পের সহায়তা প্রয়োজন হয়। এই হ্যাচারিগুলো বাণিজ্যিকভাবে পোনা উৎপাদন এবং সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে মূলধন কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চিংড়ি পোনা উৎপাদন করা হয়। সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকে এবং সর্বোচ্চ ৬ জন কারিগরী কর্মী এবং ৬-১০ জন শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত হয়। বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ৩০ মিলিয়নেরও বেশি হতে পারে। এখানে পোনা বাঁচার হার সর্বোচ্চ প্রায় ৬০ শতাংশ। 

Content added By

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত একটি গলদা চিংড়ির হ্যাচারি স্থাপনের উদ্দেশ্যে উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থায়ীভাবে ব্যয়বহুল বাণিজ্যিক হ্যাচারি স্থাপন করার পূর্বে স্থান নির্বাচনের জন্য দূরদর্শীতার সাথে বিভিন্ন বিষয়াদি বিবেচনা করা প্রয়োজন। হ্যাচারি স্থাপনের লক্ষ্যে উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা উচিত।

Content added By

হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সময়ে গুণগত মানসম্পন্ন ও পরিপক ব্রুড প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকা অত্যাবশ্যক। বাণিজ্যিক হ্যাচারি পরিচালনায় সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত ব্রুড চিংড়ি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর সহজ প্রাপ্যতার উপরে হ্যাচারির বাণিজ্যিক সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বা চাষের জলাশয় থেকে পরিপক্ক ব্রুড চিংড়ি সংগ্রহ করা যেতে পারে অথবা ব্রুড চিংড়ি উৎপাদনের উপযোগী হ্যাচারি সংলগ্ন জলাশয় থাকলে নির্ধারিত সময়ে সেখানে রুড উৎপাদনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে।

Content added By

সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী স্থানে গলদা চিংড়ির হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত, কারণ পোনা উৎপাদনের জন্য ২৮-৩২ পিপিটি লবণাক্ত সমৃদ্ধ লোনা পানির প্রয়োজন হয়। ব্রুড চিংড়ি প্রতিপালন ও গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের জন্য লোনা পানির নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার।

সারণি-১: গলদা চিংড়ি হ্যাচারির পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ

উপাদান-      উপযুক্ত পরিমাণ

তাপমাত্রা -                   ২৪-৩১°সে
পিএইচ -                    ৭.৫-৮.৫ 
পানির লবণাক্ততা -          ২৮-৩৩ পিপিটি
দ্রবীভূত অক্সিজেন -          >৫ পিপিএম
ক্ষারকত্ব -                    <১০০ পিপিএম
মোট ক্ষারত্ব -                  ৪০-১০০ পিপিএম

নাইট্রাইট-নাইট্রোজেন -        <০.০২ মিগ্রা/লি.
ঘোলাত্ব -                         <৫০ এফটিইউ  
লৌহ -                             <০.০১ পিপিএম

দস্তা -                          <০.২৫ পিপিএম
তামা -                         <০.১ পিপিএম
পারদ -                        <০.০১ পিপিএম
ক্যাডমিয়াম -                    ০.১৫ পিপিএম
ভারী ধাতু -                         <০.০১ পিপিএম
হাইড্রোজেন সালফাইড -                <০.১ পিপিএম
জৈব অক্সিজেন চাহিদা (বিওডি) -      <১.০ মিগ্রা/লি (৫ দিন)
আন আয়োনাইজড অ্যামোনিয়া -       <০.১ পিপিএম 

Content added By

চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য মানসম্মত লোনা পানি (ব্রাইন) এবং স্বাদু পানির প্রয়োজন হয়। সমুদ্রের কাছাকাছি হ্যাচারি স্থাপন করা সম্ভব না হলে হ্যাচারি পরিচালনার উপযোগী ব্রাইন ভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে আনা হয়। ব্রাইন সংগ্রহের উৎস থেকে দূরবর্তী স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করা হলে ব্রাইনের পরিবহনজনিত ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু স্বাদু পানি হ্যাচারি সংলগ্ন এলাকা থেকেই সংগ্রহ করা হয়। হ্যাচারি স্থাপনের পূর্বে তাই ব্রাইন অপেক্ষা স্বাদু পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হয়। হ্যাচারি স্থাপনের জন্য এমন কোন স্থান নির্বাচন করা সমীচীন নয়, যেখানে ব্রাইন এবং স্বাদু পানি উভয়ই পরিবহন করার প্রয়োজন হয়। স্বাদু পানি ভূগর্ভস্থ বা ভূ-উপরিস্তরের হতে পারে। হ্যাচারিতে ব্যবহারের উপযোগী স্বাদু পানির রাসায়নিক গুণাগুণ নিম্নরুপ হওয়া বাঞ্ছনীয়:

প্যারামিটার  ---------- মাত্রা
পিএইচ ------------- ৭.০-৮.৫ 
লৌহ -------------<০-২ পিপিএম
ক্ষারত্ব-------------৮০-১০০ পিপিএম 

দ্রবীভূত অক্সিজেন -------------->৫ পিপিএম
নাইট্রাইট নাইট্রোজেন ------------ ০.১পিপিএম (যত কম তত ভালো)
নাইট্রেট নাইটোজেন ------------ ২০ পিপিএম (যত কম তত ভালো)
অ্যামোনিয়া ---------------- ০.১ পিপিএম (যত কম তত ভালো
ক্লোরিন -----------মুক্ত
ভারী ধাতু -------------<০.০১ পিপিএম
আর্সেনিক -------------<০.০১ পিপিএম
হাইড্রোজেন সালফাইডমুক্ত
কীটনাশক মুক্ত

Content added By

গলদা হ্যাচারির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দূষণমুক্ত না হলে হ্যাচারিতে আকস্মিক যে কোনো রাসায়নিক বা জীবাণুঘটিত দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই হ্যাচারি স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনের প্রাক্কালে উক্ত এলাকা দূষণমুক্ত কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। শিল্প-কলকারখানা, ইটের ভাটা, রাইস মিল, কাঁচা বাজার, সুপার মার্কেট ইত্যাদির কাছাকাছি স্থানের পরিবেশ সর্বদা দূষণযুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্প- কলকারখানার অশোধিত বর্জ্য পদার্থ এবং কালো ধোঁয়া পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। এরূপ বর্জ্য পদার্থের কারণে আশপাশের স্বাদু পানির গুণাগুণ দূষিত থাকে। তাই হ্যাচারি স্থাপনের জন্য এরূপ স্থান নির্বাচন থেকে যতদূর সম্ভব বিরত থাকাই সমীচীন।

Content added By

অত্যধিক বৃষ্টির কারণে হ্যাচারির পানির গুনাগুণ, যেমন- পানির তাপমাত্রা, পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন এবং বিশেষ করে লবণাক্ততার তারতম্য হতে পারে যা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য হ্যাচারি স্থাপনের ক্ষেত্রে অতি বৃষ্টিজনিত এলাকা পরিহার করতে হবে।

Content added By

গলদা হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে এবং স্থান নির্বাচনের সময় মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ সরাসরি মাটির গুণাগুণের উপর নির্ভর করে। তাই যেখানে হ্যাচারি স্থাপন করা হবে সেই এলাকার ভূ-প্রকৃতি বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া ভূ-প্রকৃতির উপর হ্যাচারির নির্মাণ খরচ অনেকাংশে নির্ভর করে।

Content added By

চিংড়ি হ্যাচারির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলে উৎপাদিত পোনা বাজারজাতকরণে অপরিসীম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিবহনজনিত কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেলে হ্যাচারির বাণিজ্যিক উৎকর্ষ সাধনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ব্রাইন সংগ্রহ, ব্রুড চিংড়ি সংগ্রহ, হ্যাচারির উপকরণাদি সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের সুবিধার্থে উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থাযুক্ত স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করা আবশ্যক ।

Content added By

হ্যাচারি এলাকায় ২২০ ও ৪৪০ ভোল্টের নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। বিদ্যুৎ ব্যতীত একটি গলদা চিংড়ি হ্যাচারি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করা সহজসাধ্য নয়। তাই হ্যাচারি স্থাপনের পূর্বে সেখানে ১-ফেজ (২২০ ভোল্ট) এবং ৩-ফেজ (৪৪০ ভোল্ট) বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। বিকল্প হিসেবে এয়ার ব্লোয়ার চালানোর জন্য ডিজেল ইঞ্জিন ও জেনারেটর থাকা আবশ্যক।

Content added By

দক্ষ জনশক্তি ছাড়া লাভজনকভাবে হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই দক্ষ জনশক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত।

Content added By

হ্যাচারির উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য হ্যাচারিতে ব্যবহৃত ঔষধ, যন্ত্রপাতি, ব্রুড শ্রিম্প, পিএল এর খাদ্য আর্টেমিয়া ইত্যাদি সহজেই পাওয়া যায় এমন স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহজেই সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে।

Content added By

এমন এলাকায় চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে যেখানে কৃষি বা অন্যান্য ফসলের ফলন বা চাষ হয় না। অন্যথায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা বা পরিবেশ গত প্রতিকূলতার সৃষ্টি হতে পারে।

Content added By

সফলভাবে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার জন্য এলাকার সামাজিক পরিস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং নৈতিক সমর্থন ব্যতীত কোনো প্রকার উৎপাদন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। পলদা চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন ও পরিচালনায় যেহেতু বড় অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, তাই হ্যাচারি স্থাপনের পূর্বে বিনিয়োগকৃত পুঁজির নিরাপত্তার বিষয়টি সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা উচিত। হ্যাচারি এলাকার সামাজিক পরিস্থিতি, চুরি ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, ধর্মঘট, রাজনৈতিক ও অন্যান্য অস্থিরতা সে স্থানে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন, পরিচালনা ও পোনা বিপণন কর্যক্রমকে ব্যাহত করবে। তাই এরূপ সমস্যা সংকুল স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত নয়।

Content added By

হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা সঠিকভাবে বিপণনের জন্য হ্যাচারির বাণিজ্যিক উপযোগিতা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তাই উৎপাদিত পোনার বাজার প্রাপ্তির বিষয়টি হ্যাচারি স্থাপনকালেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে। গলদা চিংড়ি চাষ এলাকার কাছাকাছি যেখানে মূল চাষ মৌসুমে গলদা চিংড়ি পোনার চাহিদা রয়েছে সেসব এলাকায় হ্যাচারি স্থাপন করা হলে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পিএল বিপণনের সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি পিএল-এর পরিবহনজনিত পীড়নের সম্ভবনা থাকে না ।

Content added By

গলদা চিংড়ির হ্যাচারিতে সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন, ধারণক্ষমতা ও ব্যবহারের উপযোগীতার ওপর এর উৎপাদন সফলতা নির্ভর করে। হ্যাচারির ধরন, হ্যাচারি পরিচালনা পদ্ধতি, উৎপাদন ক্ষমতা এবং উৎপাদন এলাকার পরিবেশের সাথে অবকাঠামোর পার্থক্য বা পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং, একটি হ্যাচারি নির্মাণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রেখে অভিজ্ঞ নকশাকার দিয়ে এর নকশা তৈরি করে নিতে হবে। নকশা তৈরির সময় নিম্নোক্ত বিষয় সমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

১. নির্বাচিত এলাকার ভৌগলিক সুবিধা

২. পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ

৩. উৎপাদন উপকরণ সংগ্রহের সুবিধা

৪. স্থানীয় জনগনের গ্রহণযোগ্যতা ও সম্পৃক্ততা

৫. হ্যাচারিতে কর্মরত শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা

৬. হ্যাচারি পরিচালনার ঝুঁকিসমূহ অপসারণ বা কমানোর সুবিধা

৭. হ্যাচারির বর্জ্য নিষ্কাশন ও আবর্জনা অপসারণের সুবিধা এবং

৮. জীব নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের সুবিধা।

Content added By

গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভৌত অবকাঠামো সঠিকভাবে এবং সঠিক ধারণক্ষমতা সম্পন্নভাবে নির্মাণ করা না হলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এবং হ্যাচারি পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। হ্যাচারিতে কর্মরত কর্মচারীদের ব্যবহার উপযোগিতার কথা বিবেচনায় রেখে সঠিক ডিজাইন এবং আয়তনের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভৌত অবকাঠামোর ডিজাইন এবং আয়তন নিম্নলিখিত বিষয়ের উপরে নির্ভর করে-

১. ভূমির আকার, আয়তন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও অবস্থানগত সুবিধা

২. মূলধন বিনিয়োগের সামর্থ্য

৩. উৎপাদনযোগ্য চিংড়ির প্রজাতি

৪. হ্যাচারির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা, পোনার বাজার ও ব্রুড চিংড়ির প্রাপ্যতা, এবং

৫. হ্যাচারি পরিচালনায় দক্ষ জনবল।

উপরোল্লিখিত বিষয়াদির প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত একটি আদর্শ গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে নিম্নলিখিত ভৌত সুবিধা থাকা প্রয়োজন।

Content added By

গলদা চিংড়ি হ্যাচারির ভবনটি খোলামেলা জায়গায় হওয়া প্রয়োজন। ইটের সাধারণ গাঁথুনির উপরে অ্যাসবেস্টস অথবা ফাইবার শিটের ছাউনী দেয়া হলে ভবনের অভ্যন্তরে পরিচালিত উৎপাদন কাজে পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংকে প্রচুর আলো পড়ার প্রয়োজন হয়। তাই অ্যাসবেস্টসের ছাউনীর ক্ষেত্রে এলআরটি-এর ঠিক উপরে স্বচ্ছ ফাইবার শিট স্থাপন করে ট্যাংকে আলো পড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হ্যাচারি ভবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন উৎপাদন ট্যাংকসমূহ ছাড়াও আর্টিমিয়া হ্যাচিং এর ব্যবস্থা, ল্যাবরেটরি, অফিস, স্টোর, ফিডরুম, ওয়াশরুম ইত্যাদির সংস্থান রাখতে হবে। তাই নির্মাণকালে এমনভাবে এর নকশা প্রণয়ন করতে হয় যেন বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে যাতায়াতে কোনো সমস্যা না হয়, অথচ হ্যাচারির জীব-নিরাপত্তা ব্যাহত হয় না।

Content added By

গলদা চিংড়ির হ্যাচারি পরিচালনা করতে হলে সারা মৌসুমেই লবণ পানির প্রয়োজন হয়। তাই প্রথমেই লবণ পানি মজুদ করে রাখতে হয়। যে সব এলাকায় কেবলমাত্র বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ব্রাইন পাওয়া যায় (লবণ তৈরির মাঠ বা বিশেষ ভাবে হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য উৎপাদিত ব্রাইন) সে এলাকা থেকে ব্রাইন সংগ্ৰহ করে মজুদ ট্যাংকে রাখতে হয়। এ ট্যাংক মাটির উপরে বা মাটির নিচে বা অর্ধেক মাটির নিচে স্থাপন করা যায়। এ ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের দ্বারা নির্মাণ করে পানি প্রবেশ ও বাহির এবং পরিষ্কার করার পাইপলাইন রাখতে হবে।

Content added By

ভূগর্ভস্থ পানি দ্বারা গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে স্বাদু পানির চাহিদা মিটানো হয়। এ জন্য টিউবওয়েল, পাম্পমেশিন ও পাম্প হাউস প্রয়োজন। হ্যাচারির দৈনিক পানির চাহিদার উপর নির্ভর করে টিউবওয়েলের পাইপের ব্যাস, পাম্পের শক্তি ও পাম্প হাউসের আয়তন নির্ধারণ করা যেতে পারে।

Content added By

এ ট্যাংকে স্বাদু পানির সাথে ব্রাইন মিশ্রিত করে নির্ধারিত বা ঈদিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি তৈরি করা হয় এবং ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত করে পানি শোধন করা হয়। এ ট্যাংকের আয়তন ও সংখ্যা হ্যাচারির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার উপর নির্ভরশীল। হ্যাচারিতে দৈনিক পানি ব্যবহারের চাহিদার উপরে নির্ভর করে অন্তত ৫ দিনের চাহিদা মিটাতে পারে এরূপ আয়তনের পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শোধন ট্যাংক নির্মাণ করা উচিত। ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য ১৫-২০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংকই উপযোগী। এ ট্যাংক মূল হ্যাচারি ঘরের বাইরে থাকতে পারে। মিশ্রণ ট্যাংক RCC ঢালাই নির্মিত হলে ভালো হয়। খরচ কমানোর জন্য ইটের গাঁথুনি দিয়েও এ ট্যাংক নির্মাণ করা যেতে পারে।

Content added By

এ ট্যাংকে বালি, কাঠকয়লা, কাঁকর, নুড়িপাথর, ঝিনুক, ইত্যাদি দিয়ে পানি ছাকনি বা ফিল্টার তৈরি করা হয়। পানিতে উপস্থিত সকল প্রকার অদ্রবর্ণীয় কণা, ভাসমান পদার্থ, বিভিন্ন প্রাণির ডিম, লার্ভা ইত্যাদি এমনকি সকল প্রোটোজোয়া, ফাংগাস এবং অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এ ফিল্টারের সাহায্যে পৃথক করা সম্ভব। হ্যাচারির পানির চাহিদানুযায়ী প্রতি ঘন্টায় কতটুকু পানি ফিল্টার করতে হবে তা নির্ধারণ করে এর আয়তন এবং ধারণক্ষমতা ও সংখ্যা নির্ণয় করতে হয়।

Content added By

হ্যাচারির উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এর উৎপাদন ট্যাংকে একবারে অনেক পানি সরবরাহের প্রয়োজন হতে পারে। তাই প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের উদ্দেশ্যে শোধিত ও পরিশ্রুত পানি প্রয়োজনীয় পরিমাণে জমা রাখার জন্য এ ধরনের ট্যাংকের প্রয়োজন হয়। হ্যাচারিতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পানির ৩-৫ গুণ পানি এ সমস্ত ট্যাংকে মজুদ রাখলে হ্যাচারি পরিচালনা সহজতর হয়।

Content added By

শোধিত ও পরিশ্রুত মিশ্রিত পানি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে সহজে উৎপাদন ট্যাংকে প্রবাহিত করার জন্য ওভারহেড ট্যাংকের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের ট্যাংক সাধারণত সিমেন্ট-কংক্রিটের নির্মিত হয়ে থাকে এবং এর নির্মাণ ব্যয় কিছুটা ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। ওভারহেড ট্যাংকের সাহায্যে গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে দৈনিক পানি পরিবর্তনকালে লার্ভা পালন ট্যাংকে পানি সঞ্চালনের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

Content added By

বাইরে থেকে সংগৃহীত ব্লুড বা ডিমওয়ালা চিংড়ি এই ট্যাংকে শোধন করা হয়। সাধারণত ০.৫-১ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংক এ কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাজের সুবিধার্থে স্থায়ী অবকাঠামো অপেক্ষা ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিকের স্থানান্তরযোগ্য ট্যাংক এ কাজে ব্যবহার করা হয়।। 

Content added By

ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়া পর্যন্ত পরিপক্ক স্ত্রী গলদা চিংড়িকে এ ট্যাংকে রেখে প্রতিপালন করা হয়। হোল্ডিং ট্যাংক দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত- বাইরে থেকে ডিমওয়ালা চিংড়ি এনে একটি পৃথক চৌবাচ্চায় রাখতে হয়। পরে এ চৌবাচ্চা থেকে যেসব চিংড়ির ডিম ধূসর বর্ণের হবে সেই চিংড়ি দ্বিতীয় হোল্ডিং ট্যাংকে রাখা হয়। একটি ট্যাংকেও এ কার্যক্রম সম্পাদন করা যায় তবে পৃথক ট্যাংক ব্যবহার হ্যাচারি পরিচালনার সহায়ক ও স্বাস্থ্য সম্মত।

Content added By

এই ট্যাংকে পরিপক্ষ স্ত্রী গলদা চিংড়ি রাখা হয় এবং এখানে এর ডিম ফুটে লার্ভা হয়। অনেক হ্যাচারিতে ব্রুড হোল্ডিং ট্যাংককে হ্যাচিং ট্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে আলাদা হ্যাচিং ট্যাংক ব্যবহার করা স্বাস্থ্য সম্মত। এ কাজে স্থায়ী অবকাঠামো অপেক্ষা PVC ট্যাংক ব্যবহার করা সুবিধাজনক। হ্যাচিং ট্যাংক লম্বাকৃতি বা গোলাকার হতে পারে। এখানে ডিম ফুটার পরে লার্ভা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সংযোগ করা যায়। তবে এর ধারণক্ষমতা ৫০০ লিটার থেকে ১ টনের মধ্যে হলে ভালো হয়।

Content added By

এই সমস্ত ট্যাংকে সদ্য ফোটা লার্ভা মজুদ করা হয় এবং পিএল হওয়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত প্রতিপালন করা হয়। ট্যাংকের আকার উপ-বৃত্তাকার, গোলাকার অথবা বর্গাকার হতে পারে। ট্যাংক পরিষ্কার করা ও তাতে খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য গোলাকার ট্যাংক অধিকতর সুবিধাজনক। এ ধরনের ট্যাংকের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে খাদ্য পরিবেশন করা এবং পরিষ্কার করা সহজতর। ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য গলদা চিংড়ি হ্যাচারির লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংক সাধারণত ৩ টন থেকে ৫ টনের মধ্যে হয়ে থাকে। ছোট হ্যাচারির জন্য ১-২ টন পানিধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিক ট্যাংকও ব্যবহার করা যায়।

Content added By

পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা কালে এলআরটি-এর সাথে বায়োফিল্টার ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে। এলআরটি সংলগ্ন বায়োফিল্টার ট্যাংক সাধারণত এলআরটি-এর আয়তনের ২৫% হয়ে থাকে। এ ট্যাংক নির্মাণকালে এলআরটি-এর সাথে বায়োফিল্টার ট্যাংকের মধ্যে পানি পুনঃসঞ্চালনের বিভিন্ন সুবিধার সংস্থান রাখতে হবে। প্রতিটি এলআরটি-এর জন্য পৃথক বায়োফিল্টার ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সম্প্রতি বায়োফিল্টারের মাধ্যমে পানি পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বিধায় বর্তমানে অধিকাংশ আধুনিক হ্যাচারিতে এ ট্যাংক নির্মাণ করা হয় না।

Content added By

লার্ভা পিএল পর্যায়ে রূপান্তরিত হওয়ার পরে এদের প্রতিপালনের পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে যায় বিধায় তখন এদের পৃথক নার্সারি ট্যাংকে প্রতিপালন করার প্রয়োজন হয়। এ কাজে স্থায়ী অবকাঠামো ব্যবহার করা যায়। তবে এলআরটি হিসেবে ব্যবহৃত ট্যাংকও পরিষ্কার করে নিয়ে এ কাজে ব্যবহার করা যায়। নার্সারি ট্যাংকের ডিজাইন ও আয়তন এলআরটি-এর অনুরূপ হতে পারে।

Content added By

হ্যাচারিতে উৎপাদন কাজের সাথে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে এমন ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের তৈরি হলে এসব ট্যাংকের ভিতরের দেয়ালে মেরিন এ্যাপক্সি পেইন্টের প্রলেপ লাগানো প্রয়োজন। অন্যথায় সিমেন্টের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছিদ্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া পরবর্তীতে ট্যাংকের পানিতে এসে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এর ফলে যে কোনো সময় উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষতিকর রোগজীবাণু যাতে ট্যাংকের পানির সংস্পর্শে এসে কোনো প্রকার সংক্রমণের সৃষ্টি করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে উৎপাদন-ট্যাংকের ভিতরের অংশে এ্যাপক্সি মেরিন পেইন্টের প্রলেপ দেয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন ট্যাংকের কোথাও এ রঙের প্রলেপ উঠে না যায়। এমন হলে সম্পূর্ণ ট্যাংকের এ্যাপক্সি প্রলেপ তুলে ফেলে নতুনভাবে পেইন্ট করতে হবে।

Content added By

গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে লার্ভা পিএল-এর খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও অন্যান্য কাজের জন্য একটি পৃথক কক্ষ থাকা আবশ্যক। এ কক্ষটি আলো-বাতাসযুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

Content added By

গলদা চিংড়ির লার্ভার রূপান্তর এবং এলআরটি-তে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের উপযোগিতা পরীক্ষা ও সংরক্ষণ, আর্টিমিয়া পর্যবেক্ষণ এবং অনুরূপ অন্যান্য পরীক্ষামূলক কাজের জন্য অবশ্যই একটি ল্যাবরেটরি ইউনিট থাকা প্রয়াজন।

Content added By

গলদা চিংড়ি লার্ভাকে প্রতিদিন খাদ্য হিসেবে আর্টিমিয়া নল্লি সরবরাহ করতে হয়। তাই চাহিদা অনুযায়ী আর্টিমিয়া নল্লি হ্যাচিং-এর জন্য আর্টিমিয়া ট্যাংক ব্যবহার করতে হয়। এ জাতীয় ট্যাংক সিমেন্ট-কংক্রিটের হতে পারে। তবে ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিকের স্থানান্তরযোগ্য ট্যাংক হলে তা পরিষ্কার করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে সংরক্ষণ করা সহজ হয় ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখা সুবিধাজনক হয়।

Content added By

এখানে পিএল বিক্রির আগে তাকে খাপ খাওয়ানো এবং পরিবহনের উদ্দেশ্যে উপযুক্তভাবে প্যাকিং করার জন্য আলাদা একটি শেড থাকতে হবে। তাছাড়া এ শেডে বিক্রয়ের জন্য পিএল রাখার সুবিধা, প্যাকিং এর জন্য প্রয়োজনীয় পানি রাখার সুবিধা, পোনা ও অক্সিজেন দেয়ার সুবিধা, ক্রেতার বিশ্রাম এবং বসার সুবিধা ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। এ এলাকায় ট্রাক বা অন্য কোনো যানবাহন সহজে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য রাস্তা ও অন্যান্য ভৌত সুবিধা নির্মাণ করতে হবে।

Content added By

হ্যাচারির সামগ্রিক হাইজিন বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার উদ্দেশ্যে এর উপযোগী নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি উৎপাদন ইউনিট থেকে বর্জ্য পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশন করা না হলে হ্যাচারির জীব নিরাপত্তা ব্যাহত হবে এবং এ ক্ষেত্রে উন্নত গুণগতমাণ সম্পন্ন স্বাস্থ্যবান পিএল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। হ্যাচারির প্রত্যেকটি উৎপাদন ইউনিট থেকে বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ঢালসম্পন্ন নর্দমা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে একটি কেন্দ্রীয় নর্দমায় মিলিত হয় এবং এখান থেকে সম্পূর্ণ হ্যাচারির বর্জ্য পানি একটি পৃথক ট্যাংকে শোধনের জন্য জমা হয়। জমাকৃত বর্জ্যপানি এ ট্যাংকে শোধনের পূর্বে বাইরে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যাবে না।

Content added By

হ্যাচারির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি এ ইউনিটে স্থাপনপূর্বক পরিচালনা করা হয়। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ব্রোয়ার, জেনারেটর, সাবমার্সিবল হিটারের জন্য অটো থার্মো-কন্ট্রোল প্যানেল বোর্ড, ইউডি স্টেরিলাইজার, কার্টিজ ফিল্টার, বিদ্যুতের মিটার ও প্রধান সুইচ ইত্যাদি। হ্যাচারিতে শব্দদূষণ এবং ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানির কারণে দূষণের সম্ভাব্যতা পরিহার করার উদ্দেশ্যে জেনারেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হ্যাচারির বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোর সাথে মানানসই অবস্থানে পরিকল্পিত ভাবে এসব যন্ত্রপাতি স্থাপন করা না হলে হ্যাচারি পরিচালনার কাজ জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিতে পারে।

Content added By

একটি বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে উন্নত গুণগতমান সম্পন্ন পিএল উৎপাদন ও বিক্রয়ের কাজকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে আরও কিছু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা প্রয়োজন হয়। এসব অবকাঠামো সরাসরি উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত না হলেও হ্যাচারির সার্বিক বাণিজ্যিক উৎকর্ষ সাধনে এসব অবকাঠামোর যথেষ্ট গুরুত্ব রযেছে। এসব অবকাঠামোগুলো হচ্ছে (১) অফিস রুম, (২) স্টোর রুম, (৩) রেস্ট রুম বা গেস্ট হাউস (৪) কর্মচারী, টেকনিশিয়ান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক পৃথক আবাসিক সুবিধা এবং আবাসিক ইউনিটসমূহের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক নর্দমা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা, (৫) গার্ড শেড, (৬) গ্যারেজ এবং গাড়ি পার্কিং এর স্থান (৯) গেইট, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও প্রাঙ্গণ বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি। এসব অবকাঠামোর ডিজাইন, আয়তন ও অন্যান্য সুবিধা সংযোজনের বিষয়টি হ্যাচারির চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপরে ভিত্তি করে নির্মাণ করতে হবে।

Content added By

যে সকল হ্যাচারির আঙ্গিনায় পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে সে সকল হ্যাচারিতে এ ধরনের পুকুর নির্মাণ ও ব্যবহার হ্যাচারি, পরিচালনার জন্য সুবিধাজনক এবং এতে হ্যাচারি পরিচালনা বেশ লাভজনক। হ্যাচারি সংলগ্ন স্থানে ব্রুড পালনের পুকুর থাকলে যথা সময়ে নিজস্ব হ্যাচারিতে ব্যবহারের জন্য ব্রুড চিংড়ি পাওয়া নিশ্চিত করা যায়। তাছাড়া অবিক্রিত পিএল হ্যাচারি সংলগ্ন নার্সারি পুকুরে প্রতিপালন করে জুভেনাইল পর্যায়ে বড় করে ও বিক্রয় করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। নার্সারি পুকুরের আয়তন ১০-২০ শতক হতে পারে এবং পানির গড় গভীরতা ৬০-৭০ সেমি রাখা যেতে পারে। রুড পালন পুকুরের আয়তনও হ্যাচারিতে ব্রুড চিংড়ির চাহিদা এবং ব্যবস্থাপনা কৌশলের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করতে হবে। এ সকল পুকুরের পানির গড় গভীরতা ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত রাখা যেতে পারে।

Content added By

আধুনিক গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির স্পেসিফিকেশন, মডেল, কার্যক্ষমতা, আকার আকৃতি ও ব্যবহার পদ্ধতির উপর সম্যক ধারণা না থাকলে সুষ্ঠুভাবে হ্যাচারি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। গলদা হ্যাচারিতে বহুল ব্যবহৃত ও অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির পরিচিতি, স্পেসিফিকেশন ও ব্যবহার বিধি এবং কাজ নিচে উল্লেখ করা হলো - 

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পেসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১এয়ার ব্রোয়ার৫/১০ অশ্বক্ষমতা (৩-ফেজ/ ৪৪০সকল ট্যাংকে বায়ু সঞ্চালন
চালু রাখা, এটি হ্যাচারির শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র
০২ডিজেল ইঞ্জিন১০/১৫/২০ অশ্বক্ষমতাআপদকালীন এয়ার রোয়ার
চালানোর জন্য ব্যবহৃত
০৩জেনারেটর১৫/২০ কেভি এ/২২০-৪৪০ ভোলট, সিঙ্গেল ও থ্রি-ফেজআপদকালীন বিদ্যুৎ সরবরাহ চলমান রাখা
০৪স্বাদু পানির পাম্প১/২ অশ্ব ক্ষমতা ১.৫/৩” ব্যাসভূগভস্থ পানি উত্তোলন ও সরবরাহ
০৫সাবমার্সিবল পাম্প১.৫/০.৫'' অশ্বক্ষমতা / ১ ফেজ ২২০ ভোল্টএ্যারেশন ও হ্যাচারির বিভিন্ন অংশে পানি সরবরাহ
০৬ব্যাটারি অপারেটর এ্যারেটর৯-১২ ভোল্টমাদার চিংড়ি পরিবহনকালে
বায়ু সঞ্চালন এ্যারেটর
০৭ইমরাশন হিটার (থার্মোস্ট্যাটসহ)১/২/৩/ কিলোওয়াট ২২০ / ৪৪০ ভোল্টলার্ভা/পিএল ট্যাংকের ২৮- ৩১° সে. তাপমাত্রা স্থির রাখার জন্য
০৮ইমরাশন হিটার (থার্মোস্ট্যাটসহ)লার্ভা/পিএল ট্যাংকের ২৮- ৩১° সে. তাপমাত্রা স্থির রাখার জন্য
০৯ রিফ্লাক্টোমিটারএ-১০০/ জাপান অরিজিনপানির লবণাক্ততা পরিমাপ
১০স্প্রিং ব্যালান্স১০-২০ কেজি পর্যন্তসুক্ষ্ম ওজন পরিমাপ
১১ইলেকট্রোনিক ডিজিটাল ব্যালেন্স০.০১ গ্রাম ২০০ গ্রাম পর্যন্তসুক্ষ্ম ওজন পরিমাপ
১২ডায়াল ব্যালান্স৫০০ গ্রাম ১০ কেজি পর্যন্তখাদ্য উপকরণ,আর্টিমিয়া সিস্ট, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ইত্যাদি পরিমাপ
১৩ব্লেন্ডারলার্ভার সম্পূরক খাদ্য (কাস্টার্ড) তৈরি
১৪অটোমেটিক ইমার্জেন্সি ল্যাম্প ও এলার্ট হর্ণরোয়ার হাউজের জন্য
১৫আর্টিমিয়া হ্যাচিং ট্যাংকএফআরপি (ঢাকনাসহ) ৪০০/৫০০ লিটারআর্টিমিয়া ও স্ফুটন
১৬ডিপ ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর১০ সিএফটিখাদ্য সংরক্ষণ (কাস্টার্ড  আর্টিমিয়া ইত্যাদি)
১৭এয়ারকুলার১.৫ টনতাপমাত্রা অনুকুলে রাখার জন্য
১৮স্টিম কুকারমাঝারি আকারেরকাস্টার্ড তৈরি

 

খ. আবশ্যকীয় সরঞ্জামাদি

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পেসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১নাইলন রশিবিভিন্ন সাইজপ্যাকিং, ইমারজেন্সি সংযোগ মেরামত ইত্যাদি
০২ রাবার ব্যান্ডপ্রতি প্যাকেট ১০০টি প্রতি ব্যাগ ১০০ প্যাকেট পিএল প্যাকিং ইত্যাদি
০৩ পলিথিন ব্যাগ৩০ সেমি × ২০ সেমি ২৪ সেমি × ৩৬ সেমিপিএল পরিবহন
০৪ ফিল্টার সামগ্রী (কাঠ, কয়লা, নুড়ি পাথর, বালি ঝিনুকের খোসা ইত্যাদি)পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত ও শুকনাবালি ফিল্টারের উপাদান
০৫পানি সঞ্চালনের পাইপ১ ইঞ্চি/১.৫ ইঞ্চি /১ ইঞ্চি ডায়ামিটার।হ্যাচারির বিভিন্ন ট্যাংকে পানি সঞ্চালন
০৬পিভিসি সাইফন ফিল্টার এবং পাইপ - ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার 
০৭ফিল্টার কাপড়৫৬/১০০/১০০ মেসশোধন ও পরিশ্রুত পানি ছাঁকনের জন্য 
০৮পিএল গণনার বাটি ও চামুচসাদা ম্যালামাইনের ও মাঝারী আকারপিএল দেখা ও গণনার কাজে ব্যবহৃত হয় 
০৯প্লাস্টিক বালতি, মগ, জগ, বাটি ইত্যাদিছোট, বড় ও মাঝারী আকারলার্ভি, পিএল ইত্যাদি সংগ্রহ ও স্থানান্তর, পানি ভরা ও নিষ্কাশন ইত্যাদি
১০অক্সিজেন সিলিন্ডারমাদার ও পিএল পরিবহনের । সময় এবং LRT তে অক্সিজেন সরবরাহ

 

গ. আবশ্যকীয় পাইপ ও ফিটিংস সামগ্রী

ক্রম  যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পেসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১ পিভিসি পাইপ

২.৫/৩/৪.৫ ইঞ্চি

০.৫/১/১.৫ ইঞ্চি 

পানি সরবরাহ লাইন বায়ু সঞ্চালন
০২ জিআই পাইপ১.৫/১/০.৭৫ / ইঞ্চিঐ 
০৩ পিভিসি ফিটিংসএলবো/রিডিউসার সকেট থ্রেডপানি সরবরাহ লাইন বায়ু সংযোগ
০৪ পিভিসি গেইট ভাল্ব০.৭৫/১/১.৫/২.৫/৫ ইঞ্চি বায়ু ও পানি সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ
০৫পলিভিনাইল অ্যাডহেসিভসংযোগ
০৬ ড্রিল মেশিন, হেক্সো ব্লেডপাইপ, রড ইত্যাদি ছিদ্রকরণ ও কাটার জন্য

 

ঘ. বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পসিফিকেশন/মডেল/আকার কাজ 
০১বাল্ব ও টিউব লাইটটিউব-৪০ ওয়াট, বাল্ব-৬০/১০০/২০০ ওয়াটহ্যাচারি প্রাঙ্গণ আলোকিতকরণ, আর্টিমিয়া ফুটানো এবং লাৰ্ভি বাছাই
০২সুইচ, প্রাগ, সকেট ইত্যাদি  বৈদ্যুতিক সংযোজন
০৩ফিউজ কাটআউট স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন
০৪অ্যাডহেসিভ টেপ লাইন সংযোজন
০৫ অটো সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন

 

ঙ. বায়ু সঞ্চালন সরঞ্জামাদি

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১এয়ার সুইচছোট/বড় ক্যালিবারবায়ু সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ
০২এয়ার স্টোনবুদবুদ তৈরী
০৩এয়ার কানেক্টরT Shapeসংযোগ সাধন
০৪লীড ওয়েট এয়ার স্টোন-কে তলায় স্থির রাখে

 

চ. আবশ্যকীয় নেট ও ব্যাগ

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ 
০১ লার্ভা ক্যাচ নেট১৫ ডায়া এবং ১৫০ মেসআর্টিমিয়া নগ্নি ধরা
০২পিএল ক্যাচ নেট১৫ ইঞ্চি ভাষা এবং ৫৬ মেসLRT থেকে পিএল ধরা ও স্থানান্তর
০৩আর্টিমিয়া ক্যাচ নেট১৫ ইঞ্চি ডায়া এবং ১০০/১২০ মেসআর্টিমিয়ার নগ্নি সংগ্রহ
০৪আর্টিমিয়া ক্যাচ ব্যাপ১৮ ইঞ্চি /৩৬ ইঞ্চি/ ১০০/২০ মেসআর্টিমিয়ার সিন্ট ধৌতকরণ
০৫মাদার ক্যাচ নেটলম্বা হাতলযুক্ত ডিপ নেটমাদার ধরা
০৬পলি প্রোপাইলিন ফিল্টার
ব্যাগ
(৩০ সেমি × ৮৫ সেমি) ১/৫/১০পরিশ্রুত পানি ছাকন 

 

ছ. ল্যাবরেটরি সরঞ্জামাদি

ক্রম যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদিস্পসিফিকেশন/মডেল/আকারকাজ
০১কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ লার্ভার স্টেজ ও রোগ জীবাণু পর্যবেক্ষণ
০২গ্লাস স্লাইড ও কভার স্লিপ ঐ 
০৩গ্রিফেন বিকার১০/৫০/১০০/২৫০/৫০০/১০০০ মিলিআটিমিয়া নল্লি সংগ্রহ, পর্যবেক্ষণ, লার্ভা পর্যবেক্ষণ, রাসায়নিক পরীক্ষা ইত্যাদি 
০৪গ্যাজুয়েড সিলিন্ডার১০/৫০/১০০/২৫০/৫০০/১০০০ মিলিরাসায়নিক সামগ্রি মাপার
কাজে ব্যবহৃত হয়
০৫টেস্ট টিউব, কনিক্যাল ফ্ল্যাক্স, ফ্ল্যানেল, পিপেট ড্রপার ইত্যাদি ঐ 
০৬ডিসপোজেবল গ্লোভস্ রোগ সংক্রমণ রোধকল্পে হাতে পরিধান করা
০৭সেফটি গজ দুর্ঘটনায় ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ
০৮ম্যাগনিফাইং গ্লাস আর্টিমিয়া সিস্ট, নগ্নি ও লার্ভি পর্যবেক্ষণ
০৯ফিল্ড টেস্ট কিট (ক্লোরিন, PH, ক্ষারত্ব, হার্ডনেস, অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট, নাইট্রাইট ইত্যাদি) স্বাদু ও লবণ পানির প্যারামিটারের মাত্রা নির্ণয়
১০১০ দ্রবীভূত অক্সিজেন কীট উৎপাদনে ট্যাংকের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা নির্ণয়

 

Content added || updated By

জীবমাত্রই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অন্যান্য প্রাণির মত চিংড়ির পিএলও বিভিন্ন রোগসৃষ্টিকারী উপাদান (Causa tive Agent) এর মাধ্যমে রোগাক্রান্ত হতে পারে। রোগসৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও এককোষী প্রাণি উল্লেখযোগ্য। হ্যাচারিতে রোগ বলতে ডিমওয়ালা চিংড়ি, লার্ভা ও পিএল-এর রোগকেই বুঝায়। হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা সম্পৰ্কীয় ত্রুটি ও অপরিচ্ছন্নতার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই হ্যাচারি পরিচালনায় সর্বদা মনে রাখতে হবে যে “রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই উত্তম। সে জন্য হ্যাচারির অভ্যন্তরে মূলত পানি, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি এবং সরবরাহকৃত খাদ্যের গুণগতমান বজায় রাখা ও জীবাণুমুক্ত রাখা একান্ত আবশ্যক।

রোগ প্রতিরোধে গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও ঔষধপত্রের নাম নিচে দেয়া হলো:

  • ব্লিচিং পাউডার (৬০-৬৫% ক্লোরিন)
  • সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড (তরল)
  • ফরমালিন (ল্যাব গ্রেড)
  • সোডিয়াম থায়োসালফেট
  • সোডিয়াম বাই-কার্বনেট
  • অক্সিটেট্রা সাইক্লিন
  • টেফলন
  • প্রিফুরান
  • EDTA (Ethylene Di-amino Tetra acetic Acid)
  • এ্যাকোয়াকালচার প্রোবায়োটিক
  • ঝুমসাইড/প্রোটোজুয়াসাইড
  • মিথিলিন ব্লু
  • ভিটামিন প্রিমিক্স/মাল্টিভিটামিন/ভিটামিন সি।
Content added By

লার্ভা ও পিএল-এর দ্রুত বৃদ্ধি, দেহের ক্ষয়পূরণ ও পুষ্টির অভাবজনিত রোগ নিরাময়ের জন্য সময়মতো সঠিক পরিমাণে সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করা হয়। হ্যাচারিতে ব্যবহৃত সম্পূরক খাদ্য প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

১. জীবিত খাদ্য আর্টিমিয়া।

২. তৈরি খাদ্য: কাস্টার্ড ও ফরমুলেটেড (এনক্যাপসুলেটেড) ফিড।

Content added By

আর্টিমিয়া এক প্রকার ক্ষুদ্র প্রাণিকণা এবং প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্রান্টাসিয়া যা চিংড়ির লার্ভার জন্য জীবন্ত প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

Content added By

কাস্টার্ড হলো বিভিন্ন উপকরণের সমন্বয়ে তৈরি এক প্রকার সম্পূরক খাবার যা জীবিত খাবার আটিমিয়ার পাশাপাশি লার্ভার জন্য সরবরাহ করা হয়।

১ কেজি কাস্টার্ড তৈরির ফর্মুলা নিচে দেয়া হলো।

ক্রম ------------উপকরণ------------পরিমাণ

১ ---------------গুড়া দুধ------------৩৫০ গ্রাম

২---------------ডিম----------------৩৫০ গ্রাম

৩ --------------কর্ণ ফ্লাওয়ার------------১০০ গ্রাম

৪------------ মাছ/চিংড়ি/ শ্রিম্প মিট-----------২১০ গ্রাম

৫------------কড লিভার অয়েল-----------১৭ মিলি

৭------------আগার পাউডার-----------১২ গ্রাম

৮----------অক্সিটেট্রাসাইক্লিন-------------১ গ্রাম

Content added || updated By

বর্তমানে গলদা চিংড়ির লার্ভার জন্য উপযোগী বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতকৃত ফরমুলেটেড খাদ্য বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে পিলেট খাদ্য, মাইক্রো-পার্টিকুলেট খাদ্য এবং মাইক্রো-এ্যানক্যাপসুলেটেড খাদ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ ও পদ্ধতি সম্পর্কে কৌটার গায়ে নির্দেশাবলি অনুসরণ করা উচিত। এসব খাদ্যের মধ্যে মাইক্রো-এ্যানক্যাপসুলেটেড খাদ্য ট্যাংকে প্রয়োগের পর দীর্ঘসময় এর অভ্যন্তরস্থ পুষ্টি উপাদান ধরে রাখতে সক্ষম। তাছাড়া এসব খাদ্যের দ্বারা ট্যাংকের পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। গলদা চিংড়ি লার্ভার জন্য প্রস্তুতকৃত ফরমুলেটেড খাদ্য নির্বাচনের সময় খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি লার্ভার বয়স এবং মুখবিহারের মাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সতর্কতার সাথে খাদ্যকণার আকার নির্ধারণ করতে হবে।

Content added || updated By

প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ গলদা চিংড়ি সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো মার্চ থেকে নভেম্বর মাস। চিংড়ি সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে আনার পর এগুলোকে প্রথম ৪-৭ দিন নির্দিষ্ট ট্যাংকে রেখে অভিযোজিত করা হয়। হ্যাচারিতে আনার পর ২৫-৫০ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে এদের জীবাণুমুক্ত করা হয়। পরিপক্ক ট্যাংকের প্রতি বর্গমিটারে ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ২-৭টি চিংড়ি ১:১ (পুরুষ: স্ত্রী) অনুপাতে মজুদ করা হয়। স্ত্রী চিংড়ির ওজন কমপক্ষে ৬৩-৬৮ গ্রাম এবং পুরুষ চিংড়ির ওজন কমপক্ষে ৩৫-৪০ গ্রাম হওয়া উচিত। ট্যাংকের ৬০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হয়। এসময় চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা হয়।

Content added By

পরিপক্ক ব্রুড চিংড়ি ট্যাংকে ৭-৮ দিন রাখার পর সন্ধ্যায় পানি কমিয়ে স্ত্রী চিংড়ির ডিম্বকোষের উন্নতি লক্ষ্য করা হয় যা বাইরে থেকেই দেখা যায়। অন্যদিকে পরিপক্ক পুরুষ চিংড়ির পঞ্চম চলনপদের গোড়ায় পুংজনন ছিদ্রে শুক্রকীটের মোড়ক (spermatophores ) দেখা যায়। ডিম্বাশয়ের পূর্ণতা নির্ভর করে ডিম্বাশয়ের আকার, রং এবং ডিম্বানুর মাপের ওপর। পরিপক্ক স্ত্রী চিংড়ির ডিম্বাশয়কে ৫টি দশায় ভাগ করা যায়।

ক) অপরিণত/অপরিপক্ক পর্যায় ( immature stage): এই অবস্থায় ডিম্বানু খুব ছোট থাকে। ডিম্বাশয় পাতলা ও স্বচ্ছ থাকে। ডিমের গড় আকার ০.০২৮ মিমি হয়।

খ) উন্নয়নশীল পর্যায় (early developing stage): ডিম্বাশয় এর পরিপক্কতা শুরু হয়। ডিম্বাশয় স্বচ্ছ থেকে হালকা জলপাই রঙের লম্বা ফিতার মত ডিম্বানু দেখা যায়। যা খোলসের বাইরে থেকে পরিলক্ষিত হয়। এসময় ডিমের গড় আকার ০.০৭৮ মিমি হয়।

গ) প্রায় পরিপক্ক পর্যায় (nearly ripe stage): ডিম্বাশয় এর রং ঘণ হতে থাকে এবং হালকা লাল বর্ণ ধারণ করে। ডিম্বাশয়ের দুই পার্শ্ব বর্ধিত হয়ে কিছুটা ডায়মন্ড বা প্রজাপতির আকার ধারণ করে। ডিমের গড় আকার হয় ০.১৮৮ মিমি হয়।

ঘ) পরিপক্ক পর্যায় (ripe stage): এ সময় ডিম্বাশয় সম্পূর্ণরূপে পরিপক্কতা লাভ করে। উদর অঞ্চল প্রায় সম্পূর্ণ স্থান দখল করে ডিম্বাশয় বর্ধিত হয়। গাঢ় লাল বা খয়েরি রঙের পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে। ডিমের গড় আকার হয় ০.২৫০ মিমি।

ঙ) পরিপক্ক পরবর্তী পর্যায় (spent ripe stage): এই পর্যায়ে ডিম ছেড়ে ডিম্বাশয় পুনরায় প্রথম দশার আকার ধারণ করে। একটি পরিপক্ক স্ত্রী চিংড়ির বছরে ডিম ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩-৭.৭৫ লক্ষ।

গলদা চিংড়ির প্রজনন ক্রিয়া: সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক গলদা চিংড়ির প্রজনন গভীর সমুদ্রে রাত্রিকালে সম্পন্ন হয়। প্রথমে পুরুষ চিংড়ির ওপর স্ত্রী চিংড়ি সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। এরপর একে অপরকে অঙ্কীয়দেশ বরাবর আকড়ে ধরে এবং পুরুষ চিংড়ি শ্রী চিংড়ির দেহের নিচে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। শেষ পর্যায়ে পুরুষ চিংড়ি তার উদরের অংশ বাকিয়ে “ট” আকৃতির বেষ্টনী তৈরি করে। এভাবে তাদের মিলন সংঘটিত হয় যা ৩-৪ মিনিট স্থায়ী হয়। 

চিত্র-২.১ঃ স্ত্রী চিংড়ির ডিম্বাশয়ের পরিপক্কতার দুইটি পর্যায়

Content added || updated By

গলদা চিংড়ির প্রজনন ক্রিয়া সম্পন্ন হলে স্ত্রী গলদাকে আলাদা ট্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। সাধারণত একটি ট্যাংকে একটি স্ত্রী গলদা চিংড়িকে অথবা ৩০০ লিটার এর ট্যাংকে ২-৩ টি স্ত্রী গলদা চিংড়িকে রাখা হয়। স্ত্রী চিংড়ির খেলিকামে স্পার্মাটোফোরের উপস্থিতি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়। এসময় স্পনিং ট্যাংকের পানির তাপমাত্রা ৩০° ° সে এর কাছাকাছি রাখা হয়। পানির লবণাক্ততা সাধারণত ২৮-৩০ পিপিটি রাখা হয়। সর্বক্ষণের জন্য একটি বায়ু সঞ্চালন যন্ত্র, তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র এবং পানি গরম করার যন্ত্র সংযুক্ত রাখা হয় এবং উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা হয়।

সাধারণত রাত ১-২ টার মধ্যে স্ত্রী গলদা চিংড়ি ডিম ছাড়ে। স্ত্রী চিংড়ি তার তৃতীয় ভ্রমণ পদের গোড়ায় অবস্থিত জননেন্দ্রিয় পথে ডিম ছাড়ে এবং একই সাথে খেলিকাম থেকে শুক্রকীট যুক্ত করে এবং সাঁতারের মাধ্যমে ডিমগুলো ছাড়াতে সাহায্য করে। তিন ছাড়তে ২-৭ মিনিটের মতো সময় লাগে। এরপর স্ত্রী গলদা কে তুলে অন্য ট্যাংকে স্হানান্তর করা হয় এবং ডিম ফুটতে সময় দেয়া হয়। ১২-১৫ ঘন্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। প্রাথমিকভাবে এসব লার্ভাকে খাবার দেয়া হয়না। এরা ১০-১৫ মিমি আকার ধারণ করার পর এদেরকে লাভা ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফাইটোপ্লাংকটন ও দুপ্লাংকটন খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করা হয়।

Content added By

লার্ভা হলো চিংড়ির ডিম ফুটে বের হবার পর প্রাথমিক দশা। লার্ভা তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায় অতিক্রম করে। যথা- নপ্রির ৬টি ধাপ, প্রোটোজোয়াল ৩টি ধাপ এবং মাইসিসের ৩টি ধাপ। নগ্নি থেকে প্রোটোজুইয়া হতে মাইসিস এবং এরপর মাইসিস থেকে পোষ্ট লার্ভা হতে প্রায় ২৫-৩০ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ ডিম ফোঁটা থেকে পোষ্ট লার্ভা হতে ৩০ দিনের মতো সময় ব্যয় হয়। এ পর্যায়ে এদেরকে খাদ্য হিসেবে আর্টিমিয়া নল্লি সরবরাহ করা
হয়।

Content added By

ডিমের নিষিক্তকরণ এর পর লার্ভা হয় এবং লার্ভা পরবর্তী দশাকে পোস্ট লার্ভা বলে। প্রজননের সময় থেকে পোস্ট লার্ভা পর্যন্ত পৌছাতে এক মাসেরও বেশি সময় প্রয়োজন। এদেরকে নার্সারি ট্যাংকে প্রতিপালন করা হয়। পোস্ট লার্ভা ষষ্ঠ দিনে পৌঁছে গেলে এদেরকে কোকুন, ঝিনুক এর মাংসের কিমা খাওয়ানো হয়। দিনে ৩-৪ বার কৃত্রিম খাদ্যের সাথে এসব খাবারের মিশ্রণ তৈরি করে খাওয়ানো হয়। এসময় পানির গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ৩০-৪০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করা আবশ্যক। এতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘনত্ব এবং অ্যামোনিয়ার কম ঘনত্ব (০.১ পিপিএম) এর সম্পৃক্ততা বজায় থাকে। অতিরিক্ত খাদ্য, বিপাকীয় বর্জ্য এবং মৃত শৈবাল অপসারণের জন্য ট্যাংকের নিচে নিয়মিত সাইফনিং এর ব্যবস্থা করা হয়। লবণাক্ততার পার্থক্য ৩-৪ হলে পোস্ট লার্ভা মারা যেতে পারে। তাই লবনাক্ততা ১০-১২ পিপিটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

Content added || updated By

সাধারণত চিংড়ির লার্ভাকে ফাইটোপ্লাংকটন, জুপ্লাংকটন, ডেট্রিটাস, পলিকিট, ছোট ক্রাস্টেসিয়ান সরবরাহ করা হয়। তবে নগ্নি অবস্থায় এরা খাবার গ্রহণ করেনা কেননা তাদের নিজেদের শরীরের কুসুম থলি থেকে তারা পুষ্টি গ্রহণ করে। প্রোটোজোয়া পর্যায়ে খাবার গ্রহণ শুরু হয়। তবে বয়সের সাথে সাথে এদের খাদ্য পছন্দ পরিবর্তীত হয়।

Content added By

প্রানীজ জীবন্ত খাদ্য চিংড়ির লার্ভার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক খাদ্য উপাদান কারণ লার্ভার পাচনতন্ত্র অসম্পূর্ণ এবং এতে এনজাইমের অভাব রয়েছে। তারা লার্ভা অবস্থায় নিজস্ব প্রয়োজনীয় পুষ্টি তৈরি করতে সক্ষম নয়। তাই জীবন্ত খাবার সরবরাহের মাধ্যমে লার্ভার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা হয়। তাই হ্যাচারিতে জীবন্ত খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা রাখা হয়। এতে খরচও কমে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যেরও যোগান হয়। রটিফার, আটেমিয়া, কপিপোডসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিজ খাদ্যের উৎপাদন করা হয়। উৎপাদন সচল রাখতে হ্যাচারি কর্মীদের সবসময় প্রতিটি ট্যাংকে নজর রাখা প্রয়োজন।

Content added By

পরিবেশের সর্বোত্তম অবস্থা বজায় রাখতে চাষকৃত গলদা চিংড়ির বেঁচে থাকার জন্য এবং ফলনের সর্বাধিক বৃদ্ধির জন্য দৈনন্দিন পরিচর্যা আবশ্যকীয়। যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিচর্যা করা হয় সেগুলো নিম্নরূপঃ

Content added By
  • লবণাক্ততা: সাধারণত গলদা চিংড়ির স্পনিং বা প্রজননের জন্য লবণাক্ততা ৩০-৩৬ পিপিটি পর্যন্ত থাকতে হয়। ভাল প্রজননের জন্য পানির লবণাক্ততা ৩০-৩২ পিপিটি নিশ্চিত করতে হবে। তবে লার্ভার প্রাথমিক পর্যায়ে বৃদ্ধির জন্য লবণাক্ততা কম থাকলে লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। যদিও লবণাক্ততার আকস্মিক পরিবর্তনে লার্ভার মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিয়মিত পানির লবণাক্ততা পর্যবেক্ষণ জরুরী।
  • তাপমাত্রা: যে কোন প্রজাতির বিপাকীয় কার্যক্রমে তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। যেমন- ২৪°সে তাপমাত্রার নিচে গলদা চিংড়ির ডিম ফুটে না। আবার অন্যদিকে ২৬-৩১° °সে তাপমাত্রায় লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। তাপমাত্রার ধীরে ধীরে পরিবর্তন চিংড়ির জন্য প্রাণঘাতী নয়। তবে হঠাৎ ২° ° সে তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে তা চিংড়ির জন্য মারাত্মক হতে পারে। এজন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যাবশ্যকীয়।
  • দ্রবীভূত অক্সিজেন: দ্রবীভূত অক্সিজেন লার্ভা পালনের জন্য অন্যতম উপাদান। যদি বায়ু চলাচল মাত্র এক ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা হয় তবে সকল লার্ভার মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই সার্বক্ষণিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
  •  পিএইচ (pH) এবং নাইট্রোজেন যৌগ: সামুদ্রিক পানির pH সাধারণত ৭.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে থাকে। পানির অ্যামোনিয়ার সাপেক্ষে ট্যাংকের পরিবেশের পরিবর্তনের মূল সূচকই হল pH । যখন pH এর মান বেশি হয় তখন তা পানির অ্যামোনিয়ার (NH3) বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে যা লার্ভার জন্য বিষাক্ত। তবে অ্যামোনিয়াম (NH4) লার্ভার ফুলকা ঝিল্লির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। তাই এটি লার্ভার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে অ্যামোনিয়াম (NH4) এর ঘনত্ব ১.৫ পিপিএম এবং NH3 এর ঘনত্ব ০.১ পিপিএম এর বেশি যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা যায়।
Content added By

প্রথম পর্যায়ে প্রোটোজোয়ার পরিপূর্ণ বিকাশ হয়না এবং তারা খাদ্যের সন্ধান করতে পারে না। এসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। প্রোটোজোয়ার খাদ্য হিসেবে ট্যাংকে ডায়াটম চাষ করলে অনেক সময় এদের অধিক ফলন হয় যা লার্ভার চলাচলে বাধা হয়ে দাড়ায়। অন্যদিকে ডায়াটমগুলো পরেরদিন সহজেই নষ্ট হয়ে যায় এবং পানির গুণগত মানকে নষ্ট করে। অক্সিজেনের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। তাই নিয়মিত ডায়াটমের ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করতে হয়। ডায়াটমের রঙ বাদামী হয়ে গেলে, নতুন ডায়াটম যোগ করতে হয় যাতে লার্ভার পর্যাপ্ত খাবারের ঘাটতি না থাকে। পিএলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্টেমিয়াসহ আরও অন্যান্য খাদ্য উপাদান যোগ করা হয়। এতে লার্ভার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। প্রতি ১০,০০০ পিএলের জন্য ৫০ গ্রাম আটেমিয়া নিশ্চিত করতে হয়। গ্রীষ্মকালে ডায়াটমের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে ট্যাংকের ওপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয় অথবা ট্যাংকের কিছু অংশের পানি অপসারণ করে পুনরায় নতুন লবনাক্ত পানি দিয়ে ট্যাংক পূর্ণ করা হয়। এভাবে গলদা চিংড়ির খাদ্য প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করা হয়।

Content added By
  • চৌবাচ্চার তলদেশ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়।
  •  হ্যাচারিতে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ও পানি জীবাণুমুক্ত করা।
  •  হ্যাচারির পানি প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পরিবর্তন করা।
  • হ্যাচারির কর্মচারীদের অ্যাপ্রন পরিধান করে কাজ করা উচিত।
  • ট্যাংকগুলো সর্বক্ষণ পলিথিন দ্বারা ঢেকে রাখা ভালো। শুধু খাদ্য সরবরাহ এবং ঔষধ প্রদানের সময় পলিথিন সরিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
  • নিয়মিত ভাইরাল, ফাংগাল এবং ব্যাকটেরিয়াল ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
Content added By

যেসব রোগের সংক্রমন হলে গলদা চিংড়ি চাষ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলো হলো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাস ঘটিত সংক্রমন। রোগ সংক্রমনের প্রধান কারণগুলো হলো-
নিয়মিত পানি পরিবর্তন না করা পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেনের ঘাটতি,

  •  হ্যাচারির যন্ত্রপাতি অপরিষ্কার রাখা,
  • পরিশোধিত পানি ব্যবহার না করা, ও
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের সরবরাহ নিশ্চিত না করা।

উপরোক্ত কারণগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে হ্যাচারিতে রোগ সংক্রমনের ঝুঁকি কম থাকে। হ্যাচারিতে যেসকল রোগ দেখা দেয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

Content added By

চিংড়ি চাষের সবচেয়ে ক্ষতিকর জীবাণুগুলোর মধ্যে আলোকদায়ক জীবাণু একটি। চিংড়ির বহিঃত্বক বা অগ্রে অথবা অন্যান্য অঙ্গে হয়ে থাকে। চিংড়ি বেশি মাত্রায় এ রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রথমে যকৃত এবং অগ্ন্যাশয় গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে এবং পরিশেষে দেহের বিভিন্ন স্থানে গর্ভ তৈরির মাধ্যমে আক্রান্ত করে। Vibrio harveyi, V. splendidus প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী।

লক্ষণঃ

১) যকৃত ও অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি বাদামী বর্ণ ধারণ করে।

২) অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি ছোট হয়ে যায়।

৩) দেহে গর্ত দেখা যায় এবং পরিশেষে উপাঙ্গের উপরের অগ্রভাগ পচন ধরে।

প্রতিকারঃ

১) Quinoline antibiotic ব্যবহার করা হয়।

২) মাইক্রোএলজি, ব্যাকটেরিওফাজ এবং প্রোবায়োটিক এর ব্যবহার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন কমাতে পারে।

৩) প্রতিদিন ৮০% পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি যোগ করতে হবে।

Content added By

হ্যাচারিতে ভাইরাসের আক্রমন বেশি হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সকল পোনা মারা যায়। সংক্রমন রোধে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী। গলদা চিংড়ির ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিম্নরূপ:

Baculovirus penaei (BP) ব্যাকুলো ভাইরাস এই ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এটি তাইওয়ানে প্রথম সনাক্ত করা হয়। এটি চিংড়িকে প্রথমে প্রোটোজুইয়্যা ধাপে এবং পরে মাইসিস ধাপে আক্রান্ত করে। বেশিরভাগ সময় ৯০% পোনা মারা যায়।

লক্ষণঃ

১) হেপাটোপ্যানক্রিয়াস এবং মিডগাট এপিথেলিয়াল কোষে একাধিক গোলাকার ছোট সাদা পাইপের মত দেখা যায়।

২) খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়।

প্রতিকারঃ

১) এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট বা সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত পোনাকে কিমা করা ওয়েস্টার (oyester) এর মাংস খাওয়ানো হয়।

২) পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু সঞ্চালক ব্যবহার করে তাদের পরিচর্যা করা হয়।

৩) হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে।

৪) সংক্রমন রোধ করতে ডিম এবং নগ্নিকে ৩ ঘন্টা যাবৎ পরিষ্কার লবণাক্ত পানিতে ধৌত করে তারপর ট্যাংকে স্থানান্তর করতে হবে।

Content added By

এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ যা প্রায় সব গলদা চিংড়ির হ্যাচারিতে আক্রমন ঘটায়। সংক্রামক জীবাণু হলো Phycomycetus fungi, Lagenidium sp., Sirolpidium sp., Phythium; Leptolegonia mania প্রভৃতি।

লক্ষণ:

১) আকস্মিক মৃত্যু ঘটে এবং মৃত্যুর হার ২০-১00%।

২) লার্ভার দেহে প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিকার :

১) লার্ভার ট্যাংক জীবাণুমুক্তকরণ, পানি পরিস্রাবণ, ক্লোরিনেশন করা উচিত।

২) বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যায়। যেমন: ০২ পিপিএম ফোন (treflan)। 

৩) ১-১০ পিপিএম ফরমালিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪) ২০ পিপিএম পরিষ্কারক সাবান গুঁড়া (detergent) দিয়ে ডিম জীবাণুমুক্তকরণ করা যেতে পারে।

৪) NaCl, KCl, MgCl এর মিশ্রণে ব্যবহৃত ঔষধ Legenidium এর আক্রমনকে হ্রাস করে।

প্রতিষেধক ঔষধ ও প্রয়োগমাত্রা
ক্লোরামফেনিকল, সারাফ্লক্সাসিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং এনরোফ্লক্সাসিন প্রায়শই গলদা চিংড়ির এন্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে অধিক পরিমাণে ব্যবহারে প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়। তবে ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার না করাই উত্তম এতে লার্ভার ক্ষতি হয়। প্রতিষেধক ঔষধ এবং এদের প্রয়োগ মাত্রা নিম্নরূপ:

ঔষধ ------------------মাত্রা

অক্সিটেট্রাসাইক্লিন------------১০-২০ পিপিএম
অক্সোলিনিক এসিড -------------- ০.১-০.৫ পিপিএম
ফিউরাসল (Furasol) ------------ ১.০-২.৫ পিপিএম
জেনটিন ভায়োলেট (Gentin violet) --------- ০.১-০.২ পিপিএম
ফরমালিন (Formalin) ------------ ২৫-৫০ পিপিএম

Content added By

জৈব নিরাপত্তা হলো পানিতে চাষযোগ্য সকল মাছ, চিংড়ি, অন্যান্য জলজ প্রাণির রোগ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে হ্যাচারি, খামার এসব জায়গা থেকে নির্দিষ্ট জীবাণুগুলো বাদ দেয়ার কৌশল। গলদা চিংড়ির হ্যাচারিতে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে, সেগুলো হ্রাস করার জন্য উপযুক্ত জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা উচিত।

ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি

  • হ্যাচারিতে প্রবেশের সময় এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং প্রতিটি প্রবেশপথে পা ডুবিয়ে প্রবেশের জন্য ফুট বাথ রাখতে হবে। যা প্যাথোজেনিক লোড কমাতে সহায়তা করে ।
  • ক্লোরিন বা ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানিতে পা ডোবানোর ব্যবস্থা রাখা উচিত।
  • চাষের স্থানে প্রবেশাধিকার ন্যূনতম সংখ্যক ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
  • দর্শনার্থীদের সংখ্যা ন্যূনতম রাখতে হবে।
  • ট্রে ব্যবহারের পর পরিষ্কার করা উচিত।
  •  মৃত এবং দুর্বল চিংড়ি নিয়ে কাজ করার সময় অত্যন্ত সাবধানে কাজ করতে হবে। এগুলো থেকে জীবাণু সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে। 
  • পাখি এবং অন্যান্য প্রাণির চলাচল রোধে বেড়া স্থাপন জরুরী। কারণ এসব থেকে রোগজীবাণু ছড়ায়।
  • নির্দিষ্ট প্যাথোজেনযুক্ত চিংড়ির জাত, রোগসৃষ্টিকারী এজেন্টগুলোর জন্য তাদের বিকাশ ও পর্যবেক্ষণের জন্য ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিগুলো সাম্প্রতিক চিংড়ি চাষ শিল্পের উন্নয়নে বিশাল অবদান রাখে।
  • একটি জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক এবং ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলোতে লঙ্ঘন ঘটলে রোগ
  • নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূলের জন্য জরুরী পরিকল্পনা আবশ্যক ।
  •  চিংড়ির খাবারে প্রোবায়োটিক মিশিয়ে খাবারের গুণগতমান বাড়ানো যায় যা রোগজীবাণুর আক্রমনকে হ্রাস করে।
  •  হ্যাচারিতে জীবাণুমুক্ত পরিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত। এতে বায়োসিকিউর চিংড়ি উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবেশগতভাব টেকসই এবং অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর প্রযুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।
Content added By

বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত পানি একটি গলদা চিংড়ি হ্যাচারির অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই পানির গুণাগুণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কাজ গলদা চিংড়ি হ্যাচারির অন্যতম প্রধান কাজ হিসেবে স্বীকৃত। হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের কাজে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি বা ব্রাইন এবং স্বাদু পানি উভয়ের প্রয়োজন রয়েছে। অনেক সময়ে প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত লবণাক্ত পানি বা ব্রাইন এবং স্বাদু পানির বেশকিছু গুণাগুণ গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন কাজের অনুকূল থাকে না। তখন উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে উক্ত পানি উৎপাদন কাজের অনুকূল করে ব্যবহার করা হয়। এসব ব্যবস্থাপনা কাজকে সামগ্রিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনা বলা হয়। গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে পানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

Content added By

সাধারণত ৮০ পিপিটি অপেক্ষা অধিক লবণাক্ততা সম্পন্ন সমুদ্রের পানিকে ব্রাইন বলা হয়। সাধারণত সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা এ মাত্রা কম থাকে। তাই সাধারণত লবণ চাষের ক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা হয়। একটি লবণ ক্ষেত্রকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. আধার (Reservoir)

২. ঘনীভবনকারক (Condensor)

৩. ফটিকীকারক (Crystalizer)

গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার উদ্দেশ্যে ঘনীভবনকারক ক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা হয়। সমুদ্রের পানিকে ঘনীভূত করে লবণ উৎপন করা হয়ে থাকে। ঘনীভবনের সাথে সাথে সাগরের পানি থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস লবণ, মাইনর লবণ এবং মেজর লবণের উপস্থিতির পরিমাণ কমতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সাধারণ লবণ (NaCl) অবশিষ্ট থাকে। তাই এ পানি যত ঘনীভূত হতে থাকে, ততই এর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেস লবণের পরিমাণ কমতে থাকে। অথচ গলদা চিংড়ির জীবনচক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে এসব ট্রেস লবণের গুরুত্ব রয়েছে। তাই গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার কাজে ১০০-১২০ পিপিটি অপেক্ষা বেশি অপরিসীম লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন ব্যবহার করা উচিত নয়।

ব্রাইনের প্রাপ্তিস্থান: চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী উপজেলায় সমুদ্রের পানিকে ঘনীভূত করে লবণের চাষ করা হয়। তাই এসব উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ সুবিধার উপরে নির্ভর করে চকরিয়া বা বাঁশখালী উপজেলার লবণক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা যায়। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলাধীন মুন্সীগঞ্জ থেকেও ১০০ পিপিটি ব্রাইন সগ্রহ করা যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ব্রাইন সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত সময়।

স্বাদুপানি সংগ্রহ: গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উপযুক্ত। কিন্তু মাঝে মাঝে ভূগর্ভস্থ পানির খরতা এবং বিভিন্ন প্রকার ধাতব যৌগের উপস্থিতি ব্যবস্থাপনাযোগ্য পর্যায়ে থাকে না। তখন এ পানি পরিত্যাগ করে ভূপৃষ্ঠের পানিকে উপযুক্ত পদ্ধতিতে শোধন করে হ্যাচারি পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা যায়।

ব্রাইন ও স্বাদু পানির গুণাগুণ:

গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার উপযোগী ব্রাইন ও স্বাদু পানির কিছু গুরুত্বপূর্ন গুণাগুণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

ক্রম গুণাগুণের বিবরণসমুদ্রের পানি/ব্রাইনস্বাদু পানি
০১লবণাক্ততা২৮-৩২% (সমুদ্রের পানি)০.০৫% 
০২তাপমাত্রা২৮-৩২° সেন্টিগ্রেড২৮-৩১° ° সেন্টিগ্রেড
০৩দ্রবীভূত অক্সিজেন>৪ পিপিএম>৪ পিপিএম
০৪পিএইচ৭.৫-৮.২৭.৫-৮.২ 
০৫খরতা (হার্ডনেস)১০০-২০০ পিপিএম৮০-১০০ পিপিএম
০৬অ্যালকালিনিটি১০০-২০০ পিপিএম১৫-১৪০ পিপিএম
০৭লৌহ<০.১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
০৮অআয়নিত এ্যামোনিয়া <০.১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
০৯নাইট্রেট-নাইট্রোজেন<০.২ পিপিএম<০.২ পিপিএম
১০নাইট্রাইট-নাইট্রোজেন<০.২ পিপিএম<০.২ পিপিএম
১১ক্লোরিন০ ০ 
১২হাইড্রোজেন সালফাইড<০.০০৩ পিপিএম<০.২ পিপিএম
 ভারী ধাতু<০.০০১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
Content added By

গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্রাইনের সাথে পরিমাণমত স্বাদুপানি মিশ্রিত করে লার্ভা প্রতিপালন, আর্টিসিয়া হ্যাচিং এবং রুড প্রতিপালনের উপযোগী নির্ধারিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি প্রস্তুত করা হয়। এ কাজে নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্রাইনের পরিমাণ = মিশ্রিত পানির প্রত্যাশিত লবণাক্ততা × প্রয়োজনীয় মিশ্রিত পানির পরিমাণ = ব্রাইনে লবণাক্ততা।

উদাহরণ: ১
১০০ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন থেকে ৬ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ১০ টন পানির প্রস্তুত করার জন্য ব্রাইন প্রয়োজন= ৬ পিপিটি × ১০ টন = ১০০ পিপিটি=০.৬ টন

অতএব স্বাদু পানি প্রয়োজন ১০ টন ০.৬ টন = ৯.৪ টন।

উদাহরণ: ২
১০০ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন থেকে ১২ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ১০ টন পানি প্রস্তুত করার জন্য ব্রাইন প্রয়োজন= ১২ পিপিটি × ১০ = ১০০ পিপিটি= ১.২ টন। 

অতএব স্বাদু পানি প্রয়োজন = ১০ টন- ১.২ টন= ৮.৮ টন।

Content added By

মিশ্রিত পানি থেকে লৌহ দুর করার পাশাপাশি পানিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে এর সাথে ১৫ পিপিএম মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার (৬০-৬৫% সক্রিয় ক্লোরিন উপাদান) প্রয়োগ করতে হবে। ব্লিচিং পাউডারে ক্লোরিনের উপস্থিতির কারণে জীবাণু প্রতিরোধে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আবার ব্লিচিং পাউডার একটি শক্তিশালী অক্সিডাইজিং এজেন্ট (Oxidizing agent) হওয়ায় পানি থেকে লৌহ মুক্তকরণে এর ব্যাপক কার্যকারিতা রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ১৫ পিপিএম মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করে উত্তমরূপে বায়ুসঞ্চালন (strong aceration) করা হলে ব্লিচিং পাউডারের হাইপাক্লোরাইডের সাথে পানিতে থাকা লৌহের বিক্রিয়ায় FeCl2 এর ঘন লাল তলানি সৃষ্টি হয়। পরে বায়ু সঞ্চালন বন্ধ করা হলে এ তলানী ধীরে ধীরে তলায় জমা হয় এবং পানি সম্পূর্ণরূপে লৌহমুক্ত হয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৩-৫ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। এরূপ পদ্ধতিতে লৌহমুক্ত কারার পরে উৎপাদন কাজে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে ক্লোরিনের অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া এরূপ পদ্ধতিতে লৌহমুক্ত করার পরে পানি উৎপাদন ট্যাংকে সঞ্চালনের পূর্বে অধঃক্ষিপ্ত লাল বর্ণের তলানি যেন কোনোভাবেই ঢুকতে না পারে তা নিশ্চত করা জন্য ট্যাংকে পানির প্রবেশমুখে পলিপ্রোপাইলিনের ব্যাগ-ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক্লোরিনের সংস্পর্শে যেমন বিভিন্ন রোগজীবাণুর মৃত্যু ঘটে, তেমনি পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতির কারণে চিংড়ির ডিম, লার্ভা বা পিএল এমনকি ডিমওয়ালা চিংড়িরও মৃত্যু হতে পারে, ডিমওয়ালা চিংড়ির প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে অথবা হ্যাচিং-এর হার কমে যেতে পারে। তাছাড়া অবশিষ্টাংশের উপস্থিতির কারণে গলদা চিংড়ির লার্ভা বা পিএল বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ক্লোরিন মিশ্রিত পানি ব্যবহারের পূর্বে উত্তমরূপে ক্লোরিনযুক্ত করে নেয়া প্রয়োজন। উৎপাদন কাজে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে এর অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পানিকে ক্লোরিনযুক্ত করা যায়।

বায়ু সঞ্চালনের সাহায্যে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ব্লিচিং পাউডার/ক্লোরিন মিশ্রিত পানিতে উচ্চগতিতে বায়ু সঞ্চালন করা হলে প্রাথমিকভাবে পানিতে ক্লোরিনের বিষক্রিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় পানি ধীরে ধীরে ক্লোরিনযুক্ত হতে থাকে এবং ১-৩ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ক্লোরিনমুক্ত হয়ে পড়ে।

সূর্যালোকের সাহায্যে ক্লোরিনমুক্তকরণ: প্রখর সূর্যালোকে ক্লোরিনযুক্ত পানির ক্লোরিনের বিষক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে রোগজীবাণু দ্রুত ধ্বংস হয়। পরবর্তীতে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরিন মুক্তকরণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। সূর্যালোকের উপস্থিতি অপেক্ষা অনুপস্থিতিতে পানি ক্লোরিনমুক্ত হতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয়।

উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ক্লোরিনযুক্ত পানিকে প্রখর সূর্যালোকের নিচে রেখে উত্তমরূপে বায়ু সঞ্চালন করা হলে ক্লোরিনমুক্ত হওয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতপক্ষে হ্যাচারিতে এভাবেই ক্লোরিনযুক্ত পানিকে ক্লোরিনযুক্ত করা হয়ে থাকে।

সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহারে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ক্লোরিনযুক্ত পানিতে সুর্যালাকের উপস্থিতিতে বায়ুসঞ্চালন করে সেখানে উপস্থিত প্রতি ১ পিপিএম ক্লোরিনের জন্য ১ পিপিএম মাত্রায় সোডিয়াম বায়োসালফেট প্রয়োগ করা হলে পানি দ্রুত ক্লোরিনমুক্ত হয়। সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহারের ২/৩ ঘন্টার মধ্যেই উক্ত পানিকে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে লার্ভা বা পিএল-এর উপরে অতিরিক্ত সোডিয়াম থায়োসালফেটের কিছু ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহার কম করাই উত্তম।

Content added By

বালির ফিল্টার গলদা চিংড়ি হ্যাচারির জন্য অত্যাবশ্যক একটি অংশ। শুধু বালির ফিল্টারের সাহায্যে একটি বাণিজ্যিক চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা করা সম্ভব। বালির ফিল্টারে ভাইরাস ও কয়েক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার রোগজীবাণু, প্রোটোজোয়া, অদ্রবণীয় ভারী বা হালকা জৈব ও অজৈব কণা, ফাইটোপ্লাংকটন, জুপ্লাংকটন, সামুদ্রিক প্রাণি বা উদ্ভিদ, এদের ডিম, লার্ভা বা অন্য যে কোনো পর্যায়, বালিকণা, কর্দমরেণু ইত্যাদি আটকে যায়। বালির ফিল্টার স্থাপনের জন্য ১.৫ মিটার উচ্চতার ট্যাংক উপযোগী।

বালির ফিল্টারে প্রধান পরিস্রাবক মাধ্যম হিসেবে চিকন বালি (১০-১৫ মাইক্রন) ও কাঠকয়লা এবং পানি সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে মোটা দানার বালি বা সিলেট স্যান্ড ও নুড়ি পাথর ব্যবহার করা যায়। একই ট্যাংকে একটির পরে একটি মাধ্যমের স্তর সাজিয়ে এ ধরনের ফিল্টার গঠন করা যেতে পারে। আবার বৃহদায়তনের হ্যাচারিতে একসাথে প্রচুর পরিশ্রুত পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে সারিবদ্ধ কয়েকটি ট্যাংক ব্যবহার করে বিভিন্ন মাধ্যম পর্যায়ক্রমে সাজানো যেতে পারে। পরিস্রাবক মাধ্যমের স্তর যত বেশি হয়, পানির পরিস্রাবণও তত ভালো হয়। যেভাবেই সাজানো হাকে না কেন, পর পর সাজানো পরিস্রাবক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত ধীর গতিতে (শুধু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে) পানির প্রবাহ সৃষ্টি করে পরিস্রাবণ করাই হলো এর মূল কর্মপদ্ধতি। এ ফিল্টারে পানি পরিস্রাবণের গতি আরও ধীরে এবং পরিশ্রুত পানির মান অধিকতর নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পরিস্রাবক মাধ্যম সমূহকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীত দিক থেকে সাজিয়ে ব্যাক-ওয়াশের সাহায্যে পানি প্রবাহিত করা যেতে পারে। পরিশ্রুত পানির চাহিদার উপরে নির্ভর করে বালির ফিল্টারের আকার ছোট বা বড় করা যায়। আবার একটি মাত্র ফিল্টারের পরিবর্তে একাধিক ফিল্টার নির্মাণ করে পর্যায়ক্রমে একটির পরে একটি ব্যবহার করা যায়।

নলকূপ থেকে সংগৃহীত ভূগর্ভস্থ পানি পরিস্রাবণের জন্য বালির ফিল্টার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। স্বাদু পানির উৎস হিসেবে ভূপৃষ্ঠের পানি (নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদি) ব্যবহার করা হলে তা অবশ্যই বালির ফিল্টারের সাহায্যে পরিস্রাবণ করে ব্যবহার করতে হবে।

চিত্র-২-২: বাণির ফিল্টার এর ডায়াগ্রাম

Content added || updated By

এটি একটি বালির ফিস্টার। বর্তুলাকার এফআরপি চ্যাংকের অভ্যন্তরে রক্ষিত বালির মধ্য দিয়ে মানানসই শক্তির পাম্পের সাহায্যে পানি যুক্ত গতিতে প্রবাহিত করে ফিল্টার করা হয়। ২০-৫০ মাইক্রন আকৃতির বালি এ ফিল্টারের একমাত্র পরিধানক মাধ্যম। আকার এবং শক্তির তারতম্যের উপরে নির্ভর করে এ ধরনের ফিস্টারের সাহায্যে প্রতি মিনিটে ২৫০-৫০০ মিটার পর্যন্ত পানি ফিল্টার করা সম্ভব। কিছুটা বড় আকৃতির অদ্রবনীয় পার্টিক্যাল, কিছু কিছু প্রোটোজোয়া, সামুদ্রিক প্লাংকটন, সামুদ্রিক প্রাণির ডিম, লার্ভা, পোনা ইত্যাদি এ ফিল্টারে আটকা পড়ে। কিন্তু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অধিকাংশ প্রোটোজোয়া, কিছু কিছু সামুদ্রিক প্লাংকটন এ ফিল্টারে আটকায় না। প্রকৃতপক্ষে এসব ফিল্টার সুইমিং পুলের পানি পরিষ্কার রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিংড়ি হ্যাচারিকে আগে এ ধরনের ফিস্টারের ব্যবহার প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে এ প্রবণতা অনেকটা কমে এসেছে । 

চিত্র-২.৩: ট্রাইটন হাইব্রেট প্রেসার ফিল্টার

Content added By

হ্যাচারিতে সমুদ্রের পানির মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ধীর গতির বাণির ফিল্টার-এর পরে কার্টিজ ফিল্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ফিল্টারে এফআরণি নির্মিত বাকেটের অভ্যন্তরে ১০-১৫ মাইক্রন আকৃতির কার্টিজ সামগ্রীর সাহায্যে পানি ফিল্টার কোন আকৃতির কার্টিজ সামগ্রীর সাহায্যে পানি ফিল্টার করা হয়। এ ফিল্টারে পানির সর্বোচ্চ ক্লোরেট ৩,৫০০-৪,৫০০ লিটার/মিনিট। কার্টিজ ফিল্টার সাধারণত ওভারহেড ট্যাংকের সাথে ব্যবহার করা হয়। তবে ফ্লোরেট বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কার্টিজ ফিল্টারের সাথে অনেক সময়ে মানানসই শক্তির পাম্প ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

চিত্র-২.৪: কার্টিজ ফিল্টার

Content added By

পলিয়েস্টার বা অন্যান্য সিনথেটিক ফাইবারের তৈরি (৩০ সেমি৮৫ সেমি) ১-১০ মাইক্রনের ব্যাগ কিন্টার হ্যাচারিতে ব্যবহার করা হয়। সামুদ্রিক ফাইটোপ্লাংকটন বা মুল্লাংকটন, ক্ষুদ্র প্রাণি, ডিম ও লার্জ ভাসমান বালিকণা, কর্ণযন্ত্রে এবং অন্যান্য ভাসমান অদ্রবণীয় পদার্থ ফিল্টার ব্যালে আটকা পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষুদ্রাকৃতির প্লাংকটন, ক্ষুদ্রাতিক্ষুর বালিকণা, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া এ ব্যালে আটকা পড়ে না। ফিল্টার ব্যাপের ফ্লোরেট খুব কম। হঠাৎ করে পানি প্রবাহের গতি বেড়ে গেলে পিছন দিকের খোলা প্রান্ত দিয়ে ব্যালের ভিতরের পানি বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণ পরিশ্রত পানির গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়ার আশঙ্কা থাকে। বড় বা মাঝারি আকারের বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে ব্যাপকভাবে পানি ফিল্টারের ক্ষেত্রে ফিল্টার ব্যাগ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সীমিত আঙ্গিকে আর্টনিয়া হ্যাচিং ট্যাংক, বহিরাঙ্গনে প্লাংকটনের চাষ, নার্সারি বা ভিরালা ট্যাংকে পরিশুদ্ধ পানি প্রবেশ ইত্যাদি কাজে কিপ্টার ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।

চিত্র-২-৫: ব্যাগ ফিল্টার

Content added By

পানিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ফ্লোরিন প্রয়োগের পাশাপাশি ইউভি স্টোরিলাইজার ব্যবহার করা সমীটান। ইউরি স্টোরিলাইজারের সাহায্যে পানি থেকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ও ফাংগাস ইত্যাদি সকল প্রকার জীবাণু সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব। ইউভি স্টরিলাইজারের পাইপের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পানিতে অতিবেগুনী রশ্মি (ultra violet ray) বিচ্ছুরিত হয়। ফলে এর মধ্যে অবস্থিত সব ধরনের জীন পদার্থের জীবকোষের ডিএনএ অকার্যকর (de-activated হয়ে যায় এবং পানি সম্পূৰ্ণৰূপে জীবাণুযুক্ত হয়। ইউডি স্টেরিলাইজারের কার্যকারিতা নিম্নলিখিত ৩টি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে।

-জীবাণুর আকৃতি,

- নিঃসৃত বিকিরণের মাত্রা, এবং

-প্রবাহিত পানিতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি সঠিকভাবে প্রবেশ করার নিশ্চয়তা।

পানিতে উপস্থিত জীবাণুর আকৃতি যত বড় হয়, এদের উপরে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির কার্যকারিতাও তত কম হয়ে থাকে। ৩৫,০০০ মাইক্রো-ওয়াট/সেকেন্ড/বর্গ সেমি মাত্রার বিকিরণের সাহায্যে অধিকাংশ ভাইরাস, জীবাণু নিধন করা সম্ভব। তাই পানিকে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির সন্তোষজনক বিকিরণ মাত্রা ৩৫,০০০ মাইক্রো-ওয়াট সেকেন্ড/বর্গ সেমি হওয়া প্রয়োজন। আদর্শ পরিস্থিতিতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির বিকিরণ সম্ভবত ৫ সেন্টিমিটার অপেক্ষা অধিক পুরু প্রয়োজন পানির স্তর ভেদ করতে পারে না। এছাড়া পানিতে ভাসমান অথবা দ্রবীভূত জৈব/অজৈব পদার্থের উপস্থিতি বা ঘোলাত্বের কারণে বিকিরণের মাত্রা আরও কমে যেতে পারে। তাই একই মাত্রার আলট্রাভায়োলেট রশ্মির বিকিরণ পরিষ্কার স্বাদু পানি অপেক্ষা অজৈব আয়নের ঘনত্ব সম্পন্ন অর্থ-লবণাক্ত পানিতে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর হয়ে থাকে। পানিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ইউডি স্টেরিলাইজার ব্যবহার করার সময়ে এসব বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

Content added By

অণুজীবের সাহায্যে এলআরটি-এর পানি পরিশাধেনের উদ্দেশ্যে হ্যাচারিতে বায়োফিল্টারের মাধ্যমে পানি পুনঃসঞ্চালন করা হয়। বদ্ধ-হ্যাচারি পরিচালনা পদ্ধতিতে বায়োফিল্টার অত্যাবশ্যক। বায়োফিল্টার স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবহৃত পানিকে পরিশোধন এবং পুনঃসঞ্চালন করে বার বার ব্যবহার করা যায়। ফলে পানির সাশ্রয় হয়। এলআরটি-এর পানিতে লার্ভার বর্জ্য পদার্থ, অব্যবহৃত খাদ্য ও মৃত লার্ভা, আর্টিমিয়া ইত্যাদির পচনের ফলে পানিতে অনায়নিত অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে পানি লার্ভার জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠে। বায়োফিল্টারে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ক্ষতিকর অনায়নিত অ্যামোনিয়া প্রথমে কম ক্ষতিকর নাইট্রাইটে এবং পরবর্তীতে নিরপেক্ষ নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়। ফলে ট্যাংকের পানি লার্ভার জন্য উপযোগী হয়ে পড়ে। বায়োফিল্টার নিম্নলিখিত কার্যাদি সম্পন্ন করে

১. পানি থেকে অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইট দূর করে,

২. পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে,

৩. দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়,

৪. কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমায়, ও

৫. ট্যাংকের পানিতে উপস্থিত বিভিন্ন অদ্রবণীয় কণা অপসারন করে।

Content added By

বায়োফিল্টারের আয়তন সাধারণত এলআরটি-এর ১০% এবং উচ্চতা এলআরটি-এর সমান হতে হবে। প্রতিটি এলআরটি-এর জন্য পৃথক বায়োফিল্টার প্রয়োজন। এর মোট উচ্চতা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন পানিপূর্ণ অবস্থায় বায়োফিল্টার এবং এলআরটি-এর উপরের ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত খালি থাকে। জীবাণুমুক্ত করে ধৌত করার পরে ১ মিটার উচ্চতার একটি বায়োফিল্টারে ৮৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা পর্যন্ত মিডিয়া দেয়া যেতে পারে। বায়োফিল্টার স্থাপনের পূর্বে পাথর, ঝিনুক, নেট, ড্রাম, পাইপ, এয়ার স্টোন ইত্যাদি ১৫০ পিপিএম ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে জীবাণুমুক্ত স্বাদু পানি দিয়ে ভালাভাবে ধুয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে। বায়োফিল্টারের নিচের দিকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার সাইজের পাথর দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। ২য় স্তরে ১৫ সেমি ঝিনুক, ৩য় স্তরে ২০ সেমি পাথর, ৪র্থ স্তরে ৫ সেমি ঝিনুক, ৫ম স্তরে ২০ সেমি পাথর ও ৬ষ্ঠ স্তরে ১০ সেমি ঝিনুক পর্যায়ক্রমে সাজাতে হবে এবং উপরের ১৫ সেমি খালি জায়গা রাখতে হয় থেকে বায়োফিল্টারে পানি প্রবেশ করার পাইপ স্থাপন করতে হবে এবং বায়োফিল্টার থেকে এলআরটি-তে শোধিত পানি পুনঃসঞ্চালনের জন্য নুড়িপাথরের নিচ পর্যন্ত পাইপ স্থাপন করে বাতাসের পাইপ ও এয়ার স্টোন স্থাপন করতে হবে।

Content added By

প্রথমে স্বাদু পানি দিয়ে বায়োফিল্টার ভর্তি করে ২৫০ পিপিএম হারে ফরমালিন দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বায়ুসঞ্চলন করার পর সমস্ত পানি ফেলে দিয়ে প্রথমে জীবাণুমুক্ত স্বাদু পানি এবং পরে ১২ পিপিটি লবণাক্ত পানি দিয়ে উত্তমরূপে পরিষ্কার করতে হবে। বায়োফিল্টারে পরিশোধিত ১২ পিপিটি লবণ পানি দিয়ে ঝিনুকের উপর ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত পানি দিয়ে এতে বায়ুসঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে হবে। অতঃপর ১.৫ মিলি তরল অ্যামোনিয়া যোগ করতে হবে। ২০-২৫ দিন বায়ুসঞ্চালনের পর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। যদি এ অবস্থায় অ্যামোনিয়া না পাওয়া যায় তবে পুনরায় অ্যামোনিয়া দিতে হবে এবং ৩-৪ দিন পর পুনরায় অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে অ্যামোনিয়ার অনুপস্থিতি বায়োফিল্টারের ১০০ ভাগ কার্যক্ষম নির্দেশিক। বায়োফিল্টারে অ্যামোনিয়ার অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বিলীন না হওয়া পর্যন্ত লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকের সাথে এর সংযোগ দেয়া যাবে না।

Content added By

বায়োফিল্টার স্থাপন করে সাথে সাথে তা এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করা যাবে না। বায়োফিল্ডারকে সক্রিয় করার পূর্বে এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করা হলে প্রতিপালন ট্যাংকের পানি অ্যামোনিয়াজনিত বিষাক্ততা থেকে মুক্ত হবে না বিধায় লার্ভার জন্য বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনটি পদ্ধতিতে বায়োফিল্টার সক্রিয় করা যায়।

প্রথম পদ্ধতিঃ নতুন বায়োফিল্টারে নুড়ি স্থাপনপূর্বক নির্ধারিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি প্রবেশের পরে ১.৫ মিলি অ্যামোনিয়া যোগ করতে হবে। এরপর ২০-২৫ দিন বায়ুসঞ্চালন করা হলে নুড়িপাথরের গায়ে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে হেটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। যাহোক ২০-২৫ দিন পরে পানিতে অ্যামেনিয়ার  পরিমাণ কমে গেলে বা অনুপস্থিত থাকলে এদের উপস্থিতির মাধ্যমে বায়োফিল্টারের সক্রিয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: কোনো সক্রিয় বায়োফিল্টার থেকে কিছু নুড়িপাথর এনে নতুনভাবে প্রস্তুতকৃত বায়োফিল্টারে দিয়ে ৮-১০ দিন বায়ুসঞ্চালন করা হলে নুড়িপাথরের পায়ে হেটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং বায়োফিল্টার সক্রিয় হয়ে যায়।

তৃতীয় পদ্ধতি: বায়োফিল্টার স্থাপনের পরে এর ১২ পিপিটি লবণাক্ত পানিতে কিছু তেলাপিয়া ছেড়ে ২-৩ সপ্তাহ পালন করা হলে নুড়িপাথরের গায়ে হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেবে এবং বায়োফিল্টার সক্রিয় হবে। বায়োফিল্টার সক্রিয় হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হলে ট্যাংক থেকে তেলাপিয়া মাছ সরিয়ে নিয়ে। বায়োফিল্টারকে এলআরটি-এর সাথে সংযুক্ত করে দেয়া যাতে পারে।

বায়োফিল্টারের কার্যকারিতা: তিনটি পর্যায়ের মাধ্যমে বায়োফিল্টারের কার্যকারিতা বর্ণনা করা যায়।

১ম পর্যায়: অ্যামোনিফিকেশান বা মিনারেলাইজেশান

বায়োফিল্টারে স্থাপিত নুড়িপাথরের গায়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এসব হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা এলআরটি-এর পানিতে লার্ভার মৃতদেহ, মলমূত্র প্রয়োগকৃত খাদ্যের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি পচনের ফলে লার্ভার জন্য চরম ক্ষতিকর আয়নিত ও অনায়নিত অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। এ প্রক্রিয়াকে অ্যামোনিফিকেশান বা মিনারেলাইজেশান বলা হয়।

২য় পর্যায়: নাইট্রিফিকেশান

১ম পর্যায়ে হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষতিকর আয়নিত ও অনায়নিত অ্যামোনিয়া নাইট্রোসোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে অক্সিডেশান প্রক্রিয়ায় প্রথমে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর নাইট্রাইটে পরিণত হয়। পরবর্তীতে পুনরায় এ নাইট্রাইট আবার নাইট্রোব্যাক্টারের মাধ্যমে সর্বাধিক কম ক্ষতিকর নাইট্রেটে পরিণত হয়। এর ফলে এলআরটি-এর পানি ক্ষতিকর অজৈব নাইট্রোজেনজনিত বিষাক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে লার্ভার জীবনধারণের উপযোগী হয়। নাইট্রিফিকেশান পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য ৬টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এগুলো নিম্নরূপ:

১ বায়োফিল্টারে পানিতে যে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের অনুপস্থিতি

২ বায়োফিল্টারের পানির তাপমাত্রা ২৮-৩০° সেন্টিগ্রেড থাকা বাঞ্ছনীয়;

৩. বায়াফিল্টারের পানির পিএইচ ৭.৫-৮.৫ মাত্রার মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়;

৪. বায়োফিল্টারের পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৪ পিপিএম এর বেশি থাকা বাঞ্ছনীয় ; 

৫. বায়োফিল্টারের পানির লবণাক্ততা ১০-১৫ পিপিটি এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়, এবং

৬. বায়োফিল্টারে স্থাপিত নুড়িপাথর ও ঝিনুকের পরিমাণ বেশি হলে অধিক পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এবং নাইট্রিফিকেশানের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।  বায়োফিল্টারের প্রত্যাশিত সক্রিয়তা প্রাপ্তির জন্য এসব নুড়িপাথর ও ঝিনুক ছোট আকারের এবং অমসৃণ পৃষ্ঠ সম্পন্ন হলে ভালো হয়।

৩য় পর্যায়: ডিসিমিলেশান বা ডি-নাইট্রিফিকেশান 

বায়োফিল্টারের নুড়িপাথরের নিচে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এরা পানিতে উপস্থিত নাইট্রেটকে ভেঙে নাইট্রাইট, মুক্ত নাইট্রোজেন, মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি গ্যাস তৈরি করে। এর ফলে বায়োফিল্টারের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। এ প্রক্রিয়াকে ডিসিমিলেশান বা ডি- নাইট্রিফিকেশান বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় পানিতে উপস্থিত নাইট্রেটের পরিমাণ কমলেও বায়োফিল্টারে তা ব্যাপকভাবে চলতে দেয়া ঠিক নয়। কারণ এর ফলে পানিতে ক্ষতিকর অ্যাসিড সৃষ্টি হয়। তাই বায়োফিল্টারে নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিছু পানি পরিবর্তন করে দেয়া উচিত। বায়োফিল্টারের নুড়িপাথরের নিচে বায়ুসঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ডি-নাইট্রিফিকেশানের পরিমাণ কমানো সম্ভব।

Content added By
  • যে কোনো হ্যাচারি তৈরির সময় প্রাথমিকভাবে যে ট্যাংকগুলো নির্মাণ করা হয় সেগুলো হলো- প্রজনন ট্যাংক, মজুদ ট্যাংক, লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক, পোস্ট লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক, মিঠা ও লবণাক্ত পানির ট্যাংক, পরিশুদ্ধ পানির ট্যাংক, ব্রুডস্টক প্রতিপালন ট্যাংক ইত্যাদি।
  •  ডিমওয়ালা চিংড়ি প্রতিপালন ট্যাংকঃ সংগৃহীত চিংড়ি হ্যাচারিতে আনার পর এই ট্যাংকে এদের প্রতিপালন করা হয়। ট্যাংকের আকৃতি গোলাকার, বর্গাকার, আয়তাকার হতে পারে। উচ্চতা সাধারণত ১.২-২.০ মিটার এবং ধারণ ক্ষমতা ৫-৪০ টন হয়। যদিও ট্যাংকের আকার, আয়তন হ্যাচারির পোনা উৎপাদনের সক্ষমতার ওপর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ট্যাংকে পানি অপসারণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে করে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করে পুনরায় নতুন পানি সঞ্চালন করা যায়।
  • প্রজনন ট্যাংকঃ এই ট্যাংকগুলো সমতল বিশিষ্ট অথবা কোণাকার তল বিশিষ্ট হতে পারে। ফাইবার- গ্লাস, প্লাস্টিক, প্লেস্টি গ্লাস ইত্যাদি দ্বারা তৈরি করা হয়। এদের পানি ধারণ ক্ষমতা ৫০ লিটার থেকে ১.৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। লবণাক্ততা ২৮-৩২ পিপিটি এবং তাপমাত্রা ৩০°° সে এর কাছাকাছি রাখতে হয় এবং সবসময় পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
  • লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকঃ সদ্য ডিম ফোটানো লার্ভা প্রতিপালেনের জন্য দুই ধরনের ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। একটি ছোট আয়তনের অন্যটি বড় আয়তনের। তবে আমাদের দেশে সাধারণত ৩টন ক্ষমতার লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক ব্যবহৃত হয়। নগ্নিকে খাবার প্রদান করা হয় না। তবে প্রোটোজোয়া পর্যায়ে পৌঁছানোর পর থেকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইটোপ্লাংকটন, ঈষ্ট, এলজি, ডায়াটম এসব সরবরাহ করা হয়। ডায়াটমের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা অপসারণের ব্যবস্থাও করতে হয়। নিয়মিত পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। পানির নিয়ামকগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা উচিত এতে পানির গুণগত মান বজায় থাকে।
  • পোস্ট লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকঃ পোষ্ট লার্ভা প্রতিপালনের ট্যাংকগুলোতে একটি স্তর হিসেবে পলিথিন জাল প্রদান করা হয়। লার্ভা পালনের এই পর্যায়ে পানির গুণগত মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসময় ৩০-৪০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করা হয় এতে অক্সিজেনের ঘনত্ব, অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব (০.১ পিপিএম এর কম) নিশ্চিত করা যায়। অতিরিক্ত খাদ্য, বিপাকীয় বর্জ্য এবং মৃত শৈবাল অপসারণের জন্য ট্যাংকের নিচের পানি সাইফনিং করা হ্যাচারির একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নিয়মিত কাজ। লালন পালনের ৫০% পানি নিষ্কাশন হয়ে গেলে ২-৩ ঘন্টার জন্য টাটকা সমুদ্রের পানির অবিরাম প্রবাহ বজায় রাখা হয়। এতে আটকে থাকা কঠিন কণাগুলো নিষ্কাশন হয় এবং পানির স্বচ্ছতা বজায় থাকে। যখন ট্যাংকের নিচে পলি জমে পুরু স্তর হয় তখন পোষ্ট লার্ভাগুলোকে অন্য ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয়। পোষ্ট লার্ভাকে রোগের সংক্রমন থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
Content added By

ডিমের বর্ণ কালচে ধূসর বা ছাই বর্ণের হলে হ্যাচিং ট্যাংকের স্থানান্তর করা হয়। হ্যাচিং ট্যাংকের পানির পুণ নিম্নরুপ হতে হবে।

তাপমাত্রা------------ ২৮-৩১° ° সেলসিয়াস
পিএইচ --------------৭.৫-৮.৫
লৌহ ----------------০.০পিপিএম
ক্লোরিন  ----------------০.০ পিপিএম
দ্রবীভূত অক্সিজেন ----------- ৪-৫ পিপিএম

নাইট্রাইট নাইট্রোজেন------------০.১ পিপিএম এর কম
অ্যামোনিয়া--------------০.১ পিপিএম এর কম
হাইড্রোজেন সালফাইড
হ্যাচিং ট্যাংকে প্রতি বর্গমিটারে ৩-৪টি ডিমওয়ালা চিংড়ি মজুদ রাখতে হবে। হ্যাচিং ট্যাংকে উপযুক্ত ডিমওয়ালা চিংড়ি স্থানান্তরের পরে পরিশোধনকৃত ১২ পিপিটি লবণাক্ত পানির সাথে স্বাদু পানি মিশিয়ে হ্যাচিং ট্যাংকের পানির লবণাক্ততা ৪-৫ পিপিটি করতে হবে। হ্যাচিং ট্যাংকের পানিতে ১০ পিপিএম ইডিটিএ এবং ০.০৫ পিপিএম ট্রাফলান প্রয়োগ করা যেতে পারে। ডিমওয়ালা চিংড়ির আশ্রয়স্থল হিসেবে হ্যাচিং ট্যাংকে ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা সাইজের ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ পরিমাণমত দেয়া যেতে পারে। পানির উচ্চতা  ১.৫-২ ফুট রাখতে হবে। হ্যাচিং ট্যাংকে খাদ্য সরবরাহ করা ঠিক নয়। কারণ খাদ্যের মাধ্যমে লার্ভার শরীরে সংক্রমনের সম্ভবনা থাকে।

Content added By

গলদা চিংড়ির ডিম সর্বদা রাতের বেলায় ফুটে, কখনও দিনের বেলায় ফুটে না। সকাল বেলা ১২০ মিলি মাইক্রন স্কুপ নেটের সাহায্যে হ্যাচিং ট্যাংক থেকে লার্ভা সংগ্রহ করতে হয়। হ্যাচিং ট্যাংক থেকে লার্ভা সংগ্রহ করার জন্য ২০-৫০ মিলি আয়তনের কয়েকটি বীকার, ৪-৫ পিপিটি মাত্রার পরিশ্রুত ও জীবাণুমুক্ত পানি, বালতি, মগ, গামলা, ফরমালিন ইত্যাদি উপকরণ প্রয়োজন হয়। লার্ভা সংগ্রহ করার পূর্বে কালো পলিথিন দিয়ে হ্যাচিং ট্যাংক ঢেকে দিতে হবে। হ্যাচিং ট্যাংকের বায়ু সঞ্চালন বন্ধ করে এক পার্শ্বে একটি বাল্ব জ্বালিয়ে দিলে লার্ভা গুলো আলোর কাছে চলে আসবে। এরপর খুব ধীরে ধীরে স্কুপ নেটের সাহায্যে লার্ভা সংগ্রহ করে গামলার পানিতে ছাড়তে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী বার বার এ প্রক্রিয়া চালিয়ে লার্ভা পৃথক করতে হবে। অতঃপর ২৫-৩০ লিটার পরিমাপের গামলায় হ্যাচিং ট্যাংক থেকে ৮-১০ লিটার পানি নিয়ে বায়ু সঞ্চালন দিয়ে সংগৃহীত লার্ভা রাখতে হবে। লার্ভা সংগ্রহের কাজ শেষ হলে প্রথমে গামলায় সংগৃহীত লার্ভি থেকে সাইফনিং করে ময়লা দূর করতে হবে। তারপর গামলার ভিতরে ১২ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি ১ থেকে ২ মগ ছিটিয়ে দিতে হবে অথবা শরু পাইপের সাহায্যে সরবরাহ করতে হবে।

এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আধা ঘণ্টা পর পর ১২ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি গামলায় সরবরাহ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যে গামলা পানির লবণাক্ততা ১২ পিপিটি আনতে হবে। ১২ পিপিটি লবণাক্ততায় আসার পর উক্ত লার্ভার গামলায় ২০০-২৫০ পিপিএম ফরমালিন (প্রতি ২৫ লিটার পানিতে ৫ মিলি) প্রয়োগ করে আধাঘন্টা বায়ু সঞ্চালন পূর্বক পরিশোধন করতে হবে এবং আধাঘন্টা পর ৫০% পানি ফেলে দিয়ে পুনরায় ২ মগ ১২ পিপিটি পানি গামলায় আস্তে আস্তে ঢালতে হবে। প্রতি ২৫-৩০ লিটারের গামলায় ১,০০,০০০-১,৫০,০০০টি লার্ভা রাখা যায়। এভাবে সংগৃহীত লার্ভা এলআরটি-তে নির্ধারিত ঘনত্বে মজুদ করতে হয়। প্রতিপালন ট্যাংকে ১ টন পানিতে সাধারণত ১ লক্ষ লার্ভা মজুদ করা যায়। সেজন্য লার্ভা গণনা করা প্রয়োজন। প্রথমে লার্ভা সহ গামলার মোট পানির পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। একটি ছোট বীকারে গামলা থেকে লার্ভাসহ অল্প পানি নিয়ে তার পরিমাণ জেনে লার্ভার সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।

নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে গামলায় লার্ভা আনুমানিক সংখ্যা জানা যেতে পারে। লার্ভা সংখ্যা = (ছোট বীকারে লার্ভার সংখ্যা + ছোট বীকারের পানির আয়তন) x গামলার পানির মোট আয়তন।
এলআরটি-তে লার্ভা মজুদের সময় এদেরকে এলআরটি-এর পানির সাথে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে মজুদ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে প্রথমে পরিশোধিত লার্ভার গামলাটি ফরমালিন মিশ্রিত পানি দিয়ে তলাসহ চতুর্দিক পরিষ্কার করতে হবে অতঃপর লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকের সাথে লার্ভা ভর্তি গামলার পানির তাপমাত্রা ঠিক করার জন্য এলআরটি-এর পানি দুই মগ করে লার্ভার গামলায় ১০ মিনিট পর পর ছিটিয়ে অথবা পাইপের সাহায্যে ধীরে ধীরে সরবরাহ করতে হবে এবং গামলাটি লার্ভা এলআরটি-এর পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে।

উভয় পানির তাপমাত্রা সমান হলে আস্তে আস্তে প্রতিপালন ট্যাংকের পানিতে লার্ভা ছাড়তে হবে। রাত ৮.০০ টা থেকে ৯.০০ টার মধ্যে এলআরটিতে লার্ভা ছাড়ার কাজ সম্পন্ন করা ভাল।

Content added || updated By

হ্যাচিং ট্যাংক থেকে সদ্য ফুটা লার্ভা সংগ্রহ শোধন ও গণনাপূর্বক নির্ধারিত মজুদ ঘনত্বে লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক বা এলআরটি-তে মজুদ করা হয়। এ ট্যাংকেই লার্ভার ১১টি পর্যায় অতিক্রম করে এরা পোস্টলার্ভা পিএল-এ রূপান্তরিত হয়। এর জন্য পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও অন্যান্য বিষয়াদির উপরে নির্ভর করে প্রায় ২৫-৩৫ দিন সময়ের মধ্যে লার্ভা পিএল-এ রূপান্তরিত হয়। এই সময়টি লার্ভার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। উৎপাদন কর্মকাণ্ডের সর্বাপেক্ষা সংবেদনশীল অংশ এখানে অনুশীলন করা হয়। গলদা চিংড়ির লার্ভা প্রতিপালনে এলআরটি ব্যবস্থাপনায় নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডগুলো সম্পন্ন করা হয়:

১. এলআরটি-তে নির্দিষ্ট সংখ্যক লার্ভা সঠিক পদ্ধতিতে শোধনপূর্বক এলআরটি-এর পানির সাথে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানোর পর মজুদ করা 

২. লার্ভার জন্য জীবিত প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে আর্টিমিয়া নগ্নি সরবরাহ করা এবং এজন্য নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরিমাণ আটিমিয়া সিস্ট হ্যাচিং-এর ব্যবস্থা করা

৩. নির্ধারিত সময় থেকে লার্ভার জন্য পরিমিত পরিমাণে কাস্টার্ড খাদ্য সরবরাহ করা এবং এজন্য নিয়মিত, প্রয়োজনীয় পরিমাণ কাস্টার্ড খাদ্য তৈরি করা

৪. কাস্টার্ড খাদ্য প্রয়োগের পাশাপাশি এ খাদ্যের মোট চাহিদা ও কাস্টার্ড সরবরাহের পরিমাণের সাথে সমন্বয় সাধন করে লার্ভার জন্য নিয়মিত ফরমুলেটেড খাদ্য পরিবেশন করা

৫. এলআরটি থেকে লার্ভার পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্ট খাদ্য দৈনিক ১ অথবা ২ বেলা সাইফনের সাহায্যে নিয়মিত অপসারণ করা

৬. এলআরটি-এর দেয়াল ও মেঝেতে জমে থাকা ময়লা নিয়মিত ব্রাশ করে পরিষ্কার করা এবং সাইফনের সাহায্যে অপসারণ করা

৭. পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে পরিচালিত হ্যাচারিতে পানি পুনঃসঞ্চালনের উদ্দেশ্যে বায়োফিল্টার স্থাপন, বায়োফিল্টার সক্রিয়করণ, এলআরটি-এর সাথে বায়োফিল্টারের সংযোগ স্থাপন এবং বায়োফিল্টার পরিচালনা করা

৮. বায়োফিল্টার পরিচালিত হতে থাকলে নিয়মিত এলআরটি-এর পানিতে আয়নিত ও অনায়নিত অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট ও নাইট্রেটের পরিমাণ নির্ধারণ এবং এলআরটি-এর পানিতে এসবের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা

৯. খোলা-পানি পদ্ধতিতে পরিচালিত হ্যাচারিতে প্রতিদিন সমগুণাবলি সম্পন্ন পানি দ্বারা এলআরটি- এর ২৫-৩০% পানি পরিবর্তন করা

১০. এলআরটিতে পানির গভীরতা, তাপমাত্রা, পি.এইচ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি, পানিতে ফেন সৃষ্টি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা;

১১. পানিতে বায়ুসঞ্চালন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা

১২. লার্ভার রূপান্তর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা

১৩. নিয়মিত লার্ভার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা, এর চলাফেরা, নড়াচড়া, খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা ও অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা

১৪. লার্ভার নিয়মিত আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে এর শরীরে ক্ষতিকর রোগজীবাণু আছে কিনা পরীক্ষা করা

১৫. এলআরটি-এর পানিতে ক্ষতিকর রোগজীবাণুর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা

১৬. লার্ভার রোগজীবাণু প্রতিরোধে নিয়মিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপযুক্ত রাসায়নিক সামগ্রী ও ঔষধপত্র নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করা

১৭. লার্ভার রোগ সনাক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা

১৮. লার্ভার রোগ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ ট্যাংকে উচ্চ ক্লোরিন প্রয়োগপূর্বক সম্পূর্ণ ট্যাংকে রোগাক্রান্ত লার্ভা ধ্বংস করে সতর্কতার সাথে নিষ্কাশন করা এবং ট্যাংকটি জীবাণুমুক্ত করে ধুয়ে রাখা

১৯. এলআরটি-তে প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা হলে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা

২০. এলআরটি ইউনিটের মেঝে, নর্দমা, পাইপলাইন ও অন্যান্য অবকাঠামো নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার রাখা

২১. এলআরটি থেকে পোনা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপিত বিকার ও পাত্রের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করা, এবং

২২. এলআরটি ইউনিটে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও তৈজসপত্র নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করে ধৌত করা।

গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে এলআরটি ব্যবস্থাপনা কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে কাজের ধরণ অনুযায়ী উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোকে কয়েকটি প্রধান শিরোনামের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যেমন-

১. এলআরটি-তে পার্ভার খাদ্য ব্যবস্থাপনা

২. এলআরটি-এর পানি ব্যবস্থাপনা

৩. এলআরটি পরিষ্কারকরণ ও

৪. লার্ভা স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং রোগজীবাণু নিয়ন্ত্রণ।

Content added By

এই ট্যাংকগুলো সাধারণত ১-২০ টনের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে হ্যাচারির চিংড়ি চাষের পরিমাণের ওপর এই ট্যাংকগুলোর আয়তন নির্ভর করে। এগুলো ফাইবার গ্লাস, পলিথিন, পাতলা কাঠ, কংক্রিট প্রভৃতি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। চাষের প্রাণিগুলোকে নিয়মিত খাবার প্রদান করা হয় এবং ট্যাংকগুলোতে পানি সরবরাহ ও অপসারণের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলো পরিষ্কার করা হয় এতে ফলন বৃদ্ধি পায়।

Content added By

লার্ভার সর্বশেষ ধাপ হলো পোস্ট লার্ভা। এসময় গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভাগুলোকে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চায় স্থানান্তর করা হয় এবং এসব চৌবাচ্চার আকার আয়তন লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকের সদৃশ হয়ে থাকে। পোস্ট লার্ভাকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক, কৃত্রিম এবং জীবন্ত খাদ্য সরবরাহ করা হয়। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আর্টেমিয়া জাতীয় প্রাণিকণা দেয়া হয়। এছাড়াও ডায়াটম, মাইক্রোএলজি, জমাট শুকনো খাদ্য ( Spirulina powder), মাইক্রোএনক্যাপসুলেটেড আর্টেমিয়া, শামুক, মাছের উচ্ছিষ্টের কিমা করে খাওয়ানো হয়। এর ফলে গলদার পোনার দ্রুত বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি যোগ করতে হয়। ফলে ট্যাংকের পানির তাপমাত্রা, অক্সিজেনের ঘনত্ব, অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে থাকে। পানির গুণগত মান রক্ষা করতে সার্বক্ষণিক বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক। এছাড়াও রোগ জীবাণুর সংক্রমন প্রতিরোধ করতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। উপরোক্ত ব্যবস্থাপনাগুলো গলদা চিংড়ির সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করে।

Content added By

তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন চিংড়ি খামার পরিদর্শন কর যেখানে চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্যাবহারের জন্য ব্রুড চিংড়ি পালন করা হয়। এর কর্ম পরিবেশ ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে নিম্নোক্ত ছকে তোমার মতামত দাও।

পরিদর্শনকৃত চিংড়ি হ্যাচারির নাম 
ঠিকানা 
হ্যাচারিতে কীভাবে পুরুষ ও স্ত্রী গলদা চিংড়ি সনাক্ত  করা হয়? 
হ্যাচিং ট্যাংক থেকে লার্ভা সংগ্রহ করতে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হয়? 
খামারে কর্মী সংখ্যা কত? 
কর্মীগণ কাজের সময় কী কী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করে। 
মৎস্য খামারে কর্মপরিবেশ সম্পর্কে মতামত দাও 
তোমার নাম
শ্রেণি
রোল নং
প্রতিষ্ঠানের নাম
শ্রেণি শিক্ষকের নাম
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখ
শিক্ষকের স্বাক্ষর
Content added By

চিংড়ি খামারে নিরাপদ কাজ করতে তোমরা কোন কাজে কী ধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিবে তা ছকে লিখ।

ক্রম কাজের নামনিরাপত্তামূলক গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ
১ হ্যাচারিতে জাল টেনে চিংড়ি বাছাইকরণভালো ফল লাভে প্রতি ১৫দিন অন্তর জীবাণু নাশক প্রয়োগ করতে হবে
   
 
 
Content added By

পারদর্শিতার মানদণ্ড

  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষা পোশাক পরিধান করা।
  •  চিংড়ি হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করা
  •  চিংড়ি হ্যাচারির কোন অংশের কি কাজ তা করে শেখা।
  • শ্রেণি বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে এটা কোন ধরনের হ্যাচারি তা নির্ণয় করা।
  • দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনে বিভিন্ন অংশের কাজগুলো বারবার অণুশীলন করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

মাস্ক

গ্লাভস্

স্যানিটাইজার

অ্যাপ্রন

গামবুট

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

পি এইচ মিটার

অক্সিজেন মিটার

থার্মোমিটার স্প্রিং ব্যালেন্স


(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

একটি সচল চিংড়ি হ্যাচারি

খাতা, পেন্সিল, কলম

প্রয়োজনীয় যানবাহন

(ঘ) কাজের ধারা:

১। বিদ্যালয় হতে নিকটতম দূরত্বের কোন সচল হ্যাচারি মালিকের সাথে শিক্ষকের সহায়তায় যোগাযোগ করে হ্যাচারি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করে রাখো।

২। হ্যাচারির বিভিন্ন অংশের বিবরণ সম্বলিত বই এর তাত্ত্বিক অংশ ব্যবহারিক অনুশীলনের আগে ভালভাবে বুঝার চেষ্টা করো।

৩। নির্দিষ্ট তারিখে শ্রেণি শিক্ষকসহ হ্যাচারিতে গমন করো।

৪। হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ বা অবকাঠামাগুলো এক এক করে পর্যবেক্ষণ করো।

৫। প্রতিটি অংশ পৃথক পৃথকভাবে সনাক্ত করি এবং ঐ অংশের কার্যক্রম সরজমিনে প্রত্যক্ষ করো। 

৬। চিংড়ি প্রজনন কার্যক্রমের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলোর সাথে হ্যাচারির সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর সম্পর্ক চিহ্নিত করো।

৭। গৃহীত কার্যক্রমগুলো চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করো।

কাজের সতর্কতা

  •  হ্যাচারি পরিদর্শন ও কাজের সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও যথাযথ পোষাক তথা অ্যাপ্রন, পামবুট, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। 
  • হ্যাচারিতে ব্রুড চিংড়ি বা যন্ত্রপাতি দ্বারা যেন কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন

চিংড়ি হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ ও সনাক্তকরণে দক্ষতা অর্জিত হযেছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে

Content added By

পারদর্শিতার মানদন্ড

  • উপকরণ সনাক্ত ও চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা।
  • উপকরণ কি কাজে ব্যবহৃত হয় তা করে দেখা।
  • দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনে উপকরণ ব্যবহার বারবার অনুশীলন করা। 
  •  যন্ত্রপাতির চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা।
  •  তালিকা অনুযায়ী শর্ত মোতাবেক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা।
  • একই যন্ত্রপতি একাধিকবার ব্যবহারের অনুশীলন করে দক্ষতা অর্জন করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরজ্ঞাম

মাস্ক

স্যানিটাইজার

অ্যাপ্রন

গামবুট
 

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

মাইক্রোস্কোপ (Microscope)

ব্যালান্স (Balance)

ক্যাথেটার (Catheter) টিস্যু হোমোজেনাইজার (Tissue homogeniser)

সেন্ট্রিফিউজ (Centrifuge)

সিরিঞ্জ (Syringe)

ডিসেক্টিং বক্স (Dissecting box)

থার্মোমিটার (Thermometer)

রিফ্লাক্টোমিটার (Refractometer)

পিএইচ মিটার (pH meter)

অক্সিজেন মিটার (Oxygen meter)

রেফ্রিজারেটর (Refrigerator)

ডিপ ফ্রিজার (Deep freezer )

এ্যারেটর (Aerator)

জেনারেটর (Generator)

বৈদ্যুতিক চুলা (Electric heater)

অক্সিজেন সিলিন্ডার (Oxygen cylinder)

সেকি ডিস্ক (Secchi disk )

প্লাংকটপ গণনাকারী এসআর সেল (Plankton counting SR. cell)

ট্রলি / পিক-আপ

হ্যাক 'স' করাত (Hack saw)

ব্লেন্ডার (Blender)

ডেসিকেটর (Desiccator)

হ্যাক কীট (Hach kit)

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

একটি সচল চিংড়ি হ্যাচারি

খাতা, পেন্সিল, কলম

প্রয়োজনীয় যানবাহন

 মেজারিং টেপ

(ঘ) কাজের ধারা

১. নিকটস্থ কোনো চিংড়ি হ্যাচারিতে গমন করো।

২. হ্যাচারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতিগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করো।

৩. হ্যাচারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসমূহ পর্যবেক্ষণ কালে এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বা পরিচালনা সম্বন্ধে হ্যাচারি ব্যবস্থাপকের নিকট থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করো।

৪. হ্যাচারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লেখ।

কাজের সতর্কতা:

  • হ্যাচারি পরিদর্শন ও কাজের সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও যথাযথ পোষাক তথা অ্যাপণ, গামবুট, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
  •  হ্যাচারিতে ব্রুড মাছ বা যন্ত্রপাতি আমার দ্বারা যেন কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

আত্মপ্রতিফলন:

চিংড়ি হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ ও সনাক্তকরণে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added || updated By

পারদর্শিতার মানদন্ডঃ

  • উপযুক্ত উৎস নির্ধারণ করা।
  • পারদর্শী কর্মীকে নিয়োগ দিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে পোনা সংগ্রহ।
  • পরিবেশবান্ধব সকল সরঞ্জাম ব্যবহার করে পোনা সংগ্রহ।
  • পোনাকে সুষ্ঠুভাবে হস্তান্তর করা।
  •  পরিমাণমত বরফ ও পানি ব্যবহার করা ।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করা।

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুপমেন্টস, মেশিন)

(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল

ঘ) কাজের ধারাঃ

১। প্রাকৃতিক উৎস থেকে গলদা পোনা সংগ্রহ করো।

২। সংগ্রহের পর সঠিকভাবে গণনা করো।

৩। দুটি পলিথিন ব্যাগের (৩ x ২ ফুট) একটিকে আরেকটির মধ্যে ভরে নাও

৪। এরপর পানি দিয়ে দেখতে হবে কোন ছিদ্র আছে কি না।

৫। ব্যাগে ৪-৫ লিটার পানি ভরে নিতে হবে। পানি ভর্তি ব্যাগে ২-২.৫ হাজার পোনা ছাড়ো।

৬। পোনা ছাড়ার পরই পলিথিন ব্যাগের বাকি অংশ অক্সিজেন দিয়ে পূর্ণ করে ব্যাগের মুখ রাবার ব্যান্ড দ্বারা ভালভাবে আটকে দাও।

৭। আরেকটি পলিথিন ব্যাগে কয়েক টুকরো বরফ দিয়ে তার ভিতর পোনাসহ পলিথিন ব্যাগটি প্রবেশ করাও। 

৮। সবশেষে ইনসুলেটেড বাক্সে পোনাসহ পলিথিন ব্যাগগুলো বসিয়ে বাক্সটিতে আরও কয়েক টুকরো বরফ এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে দাও।

কাজের সতর্কতা-

পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

পানির লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

সকাল অথবা বিকালে পোনা পরিবহণ করা উচিত। পরিবহনের আগে পোনাকে খাদ্য সরবরাহ করা যাবে না।

মেঘলা দিনে বা অতিরিক্ত রৌদ্রে পোনা পরিবহন করা উচিত নয়।

পোনা এমনভাবে পরিবহন করতে হবে যাতে এর উপাঙ্গগুলো যথাযথ থাকে।

আত্মপ্রতিফলনঃ

গলদা চিংড়ির পোনা প্যাকিং এবং পরিবহণ কৌশল সম্পর্কে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।

Content added By

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১. চিংড়ি হ্যাচারি সাধারনত কয় ভাগে বিভক্ত?

২. চিংড়ির পোনা উৎপাদনের জন্য কত পিপিটি পানি প্রয়োজন?

৩. হ্যাচারিতে ব্যবহৃত স্বাদু পানির মাত্রা কত?

৪. পানি ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে গলদা হ্যাচারিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?

৫. গলদা হ্যাচারির জন্য ভুগর্ভস্থ পানির পিএইচ-এর মাত্রা কত হতে হবে?

 ৬. ব্রাইনের পরিমাণ নির্ধারণের সূত্রটি লেখ।

৭. হ্যাচারিতে সাধারণত কত ধরনের সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করা হয়?

৮. আর্টিমিয়া সিস্ট থেকে নগ্নি উৎপাদনের পদ্ধতি কয়টি?

৯. গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনায় কত পিপিটি এর ব্রাইন ব্যবহার করা হয়?

 ১০. ব্রাইন সংগ্রহের উপযুক্ত সময় কখন?

১১. বায়োফিল্টারের পানির তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত?

১২. বায়োফিল্টারের পানির পিএইচ কত হওয়া উচিত?

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

১. হ্যাচিং ট্যাংক বলতে কী বোঝ?

২. কোন কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গলদা হ্যাচারি ডিজাইন করা হয় লেখ।

৩. লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

৪. আর্টিমিয়া কী?

৫. ডিমওয়ালা চিংড়ি খাপ খাওয়ানো বলতে কী বোঝ?

৬. বাংলাদেশে ব্রাইনের প্রাপ্তিস্থানগুলোর নাম লেখ। 

৭. গলদা হ্যাচারিতে বায়োফিল্টারের কাজগুলো লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন:

১. গলদা হ্যাচারির স্থান নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়গুলো বর্ণনা করো।

২. গলদা হ্যাচারিতে ব্যবহার্য বিভিন্ন ট্যাংকের বর্ণনা দাও। 

৩. গলদা হ্যাচারির হ্যাচিং ট্যাংক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বর্ণনা করো।

৪. গলদা হ্যাচারির লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংকে খাদ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বর্ণনা করো।

৫. লার্ভা প্রতিপালন ট্যাংক পরিষ্কারকরণ ও জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি বর্ণনা করো

Content added By

Promotion