On This Page
এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে গলদা চিংড়ির চাহিদা ও মূল্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে চিংড়ি চাষ এলাকা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে দেশে কমপক্ষে ১ লক্ষ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা সম্ভব।

গলদা চিংড়ি উৎপাদন ও সম্প্রসারণে উদ্ভূত সমস্যাবলি সমাধান করা গেলে দেশের সার্বিক গলদা চিংড়ির উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। চিংড়ি খামারের আয়তন ১৯৮৪-৮৫ সালে ৬৪,০০০ হেক্টর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ১৪০,০০০ হেক্টরে।

দেশে চিংড়ির শতকরা প্রায় ২৩% উৎপাদন গলদা চিংড়ি থেকে পাওয়া যায়। এটি একটি বিকাশমান কৃষিভিত্তিক শিল্প। গলদা চিংড়ির সুবিধাগুলো হচ্ছে-

  • চাষ পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে সহজ,
  • গলদা চিংড়ি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়,
  • প্রায় সকল আকারের বাজারজাত উপযোগী। তবে ১২-৩০ গ্রেডের চিংড়িতে লাভ বেশী,
  • উচ্চ বাজার মূল্য,
  • স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ এবং ৬-৮ মাসে সম্পূর্ণ চিংড়ি বাজারজাত করা যায়,
  • অগভীর পুকুর/ঘেরে চাষাবাদ সম্ভব (১-১.৫ মিটার পানির গভীরতা),
  • মৌসুমী পুকুরেও গলদা চিংড়ির চাষ করা যায়,
  • পলদার সাথে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ একত্রে করা যায়,
  • উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় সারাবছর পোনা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, 
  •  উপকূলীয় জেলাগুলোর স্থায়ী জলাবদ্ধতাকে কাজে লাগানো যায়,
  • ধানক্ষেতেও গলদা চাষ করে বাড়তি আয় করা সম্ভব,
  • অমেরুদন্ডী কাঁটা বিহীন এবং খাদ্য হিসেবে ঝামেলামুক্ত বলে সকলের কাছে প্রিয় এবং 
  •  বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গলদা চিংড়ির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
Content added By

বাংলাদেশে স্বাদুপানিতে যে সকল প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায় তার মধ্যে গলদা চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অত্যধিক। বাংলাদেশে প্রায় ২৭ প্রজাতির স্বাদু পানির চিংড়ি পাওয়া যায় এর মধ্যে গলদার আকার-আকৃতি সর্ববৃহৎ। প্রাকৃতিকভাবে গলদা চিংড়ির পিএল, জুভেনাইল এবং পরিপক্ব চিংড়ি সাধারনত দেশের দক্ষিনাঞ্চলে আধালবণাক্ত পানিতে পাওয়া যায়। গলদা আধালবণাক্ত পানিতে ডিম ছাড়ে এবং লার্ভা এ এলাকায় প্রতিপালিত হয়। পরবর্তীতে প্রাকৃতিক নিয়মেই চিংড়ি পোনা খাল, বিল, প্লাবনভূমিতে বা প্লাবিত ধানক্ষেতে প্রবেশ করে এবং সেখানেই বড় হয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বর্তমানে দেশের নদ-নদীতে গলনা চিংড়ি বা গলদার চিংড়ির পোনা কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে গলদা চিংড়ির চাহিদা ও মূল্য ক্রমাগতভৰে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে গলদা চিংড়ি চাষ এলাকা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গলদা চিংড়ি বাজারজাতকরণে প্রায় ৮-৯ মাস সময় লাগে । দেশে গলদা চিংড়ির বর্তমান গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪০০-৭০০ কেজি। এ উৎপাদন অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম। 

Content added By

গলদা চিংড়ি (Macrobrachium rosenbergil)

প্রাপ্তিস্থান : বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র মিঠাপানিতে এই চিংড়ি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোসহ মেঘনা বিধৌত জেলাসমূহ যেমন- কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, নেত্রকোনা প্রভৃতি জেলার নদ-নদী, খাল-বিলে এই চিংড়ি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ ছাড়া বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলার হাওর এলাকায় গলদা চিংড়ির বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায় ।

চিত্র-২.১: গলদা চিংড়ি (Macrobrachium rosenbergi)

দৈহিক বৈশিষ্ট্যঃ

  • গলদা চিংড়ি দেখতে সাধারনত হালকা নীল কিংবা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে,
  • এই চিংড়ির ক্যারাগেসের খোলসে ২-৫টি কালচে আড়াআড়ি লম্বা ও বাঁকানো দাগ থাকে,
  • রোস্ট্রামের উপরিভাগে ১১-১৪টি এবং নিচের অংশে ৮১৪ টি খাঁজ বা দাঁত থাকে,
  • অন্যান্য চিংড়ির তুলনায় গলদা চিংড়ির শিরোক্ষ (Cephalothorax) অংশ বেশ বড়,
  •  এই চিংড়ির দ্বিতীয় চলনপদ তুলনামূলকভাবে বড় এবং নীল ও কিছুটা কালচে রঙের হয়ে থাকে, এবং 
  • গলদা চিংড়ির উদরের গ্লিউরা প্রথম ও তৃতীয় প্লিউরাকে আংশিকভাবে আবৃত করে রাখে।

ছটকা চিংড়ি (Macrobracium malcomsonii)

প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র বিশেষ করে ময়মনসিংহ, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, নরসিংদী, রংপুর, ফরিদপুর, রাজশাহী, ফেনী ও চট্টগ্রামে এই চিংড়ি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

চিত্র-২.২: ছটকা চিংড়ি (Macrobrachium malcomsoni

দৈহিক বৈশিষ্ট্যঃ

  •  এই চিংড়ির পৃষ্ঠদেশ ও তলদেশ হালকা নীল কিংবা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে,
  • দেহে বানামি কিংবা কমলা বর্ণের ফ্যাকাশে হালকা টান টান দাপ থাকে,
  • রোস্টামের পোড়া উত্তল, এবং
  • রোস্টামের উপরিভাগে ৯-১৪টি ও নিচের দিকে ৫-৯ টি দাঁত থাকে।
Content added By
Please, contribute to add content into গলদা চিংড়ির চাষ পদ্ধতির ধরণ.
Content

বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। চাষ ব্যবস্থা, খামারে পোনা মজুদের হার ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। সমগ্র বিশ্বে চিংড়ি চাষ পদ্ধতিকে প্ৰধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: 

(১) সনাতন চাষ পদ্ধতি

(২) আধানিবিড় চাষ পদ্ধতি ও 

(৩) নিবিড় চাষ পদ্ধতি।

 

(ক) সনাতন চাষ পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে অন্য স্থানে যেমন- লবণ বা ধানের সাথে পর্যায়ক্রমে চিংড়ি চাষ করা হয় । চিংড়ি চাষের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে এটি সবচেয়ে পুরাতন এবং কম ঝুঁকিপুর্ণ । এই চাষ পদ্ধতিতে সবচেয়ে কম পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত উপায়ে চিংড়ি চাষ করা হয় না বা খামার নির্মাণ করা হয় না। খামারের সুনির্দিষ্ট কোনো আকার নেই এবং এর তলদেশ অসমতল এবং পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। খামারের পানি ও খাদ্য সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই চাষ চলাকালে খামারে কোনো বাড়তি খাবার প্রয়োগ করা হয় না। এ পদ্ধতিতে খামারের মাটি ও পানির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য চুন বা সার প্রয়োগ করা হয় না এবং পানি ব্যবস্থাপনারও কোনো সুব্যবস্থা থাকে না।

সনাতন চাষ পদ্ধতিতে খামারে চিংড়ির সাথে অন্যান্য মাছও একত্রে চাষ করা হয়। চাষের জন্য জমির চার পাশে ৩-৪ ফুট করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। মাঘী পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানি ঢুকিয়ে খামার পানিতে পূর্ণ করা হয়। জোয়ারের এই পানির সাথে গলদা সহ অন্যান্য চিংড়ি ও মাছের পোনা খামারে প্রবেশ করে। এর সাথে উপকূলীয় নদী থেকে সংগৃহীত পোনা মজুদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে সাধারণত প্রতি বর্গমিটারে ১-১.৫টি হারে চিংড়ির মজুদ করা হয় এবং হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি থেকে ২৫০ কেজি চিংড়ি উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট চিংড়ি খামারে প্রায় ৮৫-৯০ ভাগ এই চাষ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।

(খ) স্বল্প উন্নত চাষ পদ্ধতি: এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ, অধিক লাভজনক, কম প্রযুক্তি নির্ভরশীল এবং মধ্যম বিনোয়োগ সম্পন্ন চিংড়ি চাষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মাটি ও পানির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য চুন ও সার প্রয়োগ করে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত জলজ প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাধারণত খামারে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এই চাষ পদ্ধতির খামারের আয়তন মাঝারি, আয়তকার এবং খামারের তলদেশে সমতল ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থকে। এই জাতীয় খামারে প্রতি বর্গমিটারে ৩-৫টি হারে পোনা মজুদ করে হেক্টর প্রতি ৪০০-৫০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব।

পানির লবণাক্ততা ও পোনার প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে একই জমিতে দুটি ফসল উৎপাদন করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫-২০% জমিতে এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত জলজ প্রাণী দমনের জন্য জোয়ারের পানি খামারে ঢুকানোর সময় সূক্ষ্ম নেটের সাহায্যে পানি ছেঁকে ঢুকানো হয়। এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ কম প্রযুক্তি নির্ভরশীল হওয়ায় এটা বাংলাদেশের জন্য অধিক উপযোগী।

(গ) আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে সর্তকতার সাথে চিংড়ি চাষ করতে হয়। এই পদ্ধতিতে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয় এবং অধিক দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হয়। এই চাষ ব্যবস্থাপনার পুকুর সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং চিংড়ি পোনার উপযুক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য পরিমিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করা হয়। পাম্প মেশিনের সাহায্যে পানি মজুদ ও শোধন করে খামারে পানি সরবরাহ করা হয় এবং খামারের পানিতে হালকা স্রোত সৃষ্টি করা ও পুকুরের তলদেশ পরিষ্কার রাখার জন্য প্যাডেল হইল ও এয়ার ইনজেক্টর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা হয়।

খামারে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত ক্ষতিকর জলজ প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নিয়ন্ত্রিতভাবে পানি ঢুকানো হয় এবং অনেক সময় মহুয়া বীজের খৈল ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে চাষ ব্যবস্থাপনায় খামারের আয়তন ২ হেক্টরের কম হওয়া উচিত এবং সাধারণত প্রতি বর্গমিটারে ৭-১৫টি হারে চিংড়ি পোনা মজুদ করা হয়। আধানিবিড় চাষ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি ৩-৫ টন চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। পানির গুনাগুণ যেমন-লবণাক্ততা, তাপমাত্রা, ঘোলাত্ব, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রেখে এই চাষ পদ্ধতিতে কাঙ্খিত পর্যায়ে চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব।

(ঘ) নিবিড় চাষ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল এবং নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হয় । নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ

  • সাধারণত ০.২৫-১.০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট আয়তকার পুকুর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • পুকুরে পানি প্রবেশ ও নিষ্কাশনের জন্য ইনলেট ও আউটলেট গেইট ব্যবহার করা হয় এবং এজন্য পানি সরবরাহ খাল ও পানি নিষ্কাশন খাল থাকে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহের সুবিধার্থে পাইপ লাইন থাকে।
  •  পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য পেডেল হুইল এবং পুকুরের তলদেশ পরিষ্কারের জন্য এয়ার ইনজেক্টর ব্যবহার করা হয়।
  • প্রতি বর্গমিটারে ২০-২৫ টি চিংড়ি মজুদ করা হয়।
  •  সম্পূরক খাদ্যের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। নিবিড় চাষ পদ্ধাতিতে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ১০-২০ টন চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের প্রয়োজনীয় পোনার শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ পোনা প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। ফলে নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পোনা সরবরাহ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
Content added By

বাংলাদেশে ২ টি পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়। একক চাষ পদ্ধতি ও মিশ্র চাষ পদ্ধতি।

একক চাষ পদ্ধতি: এ পদ্ধতির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গলদা চিংড়ির পিএল ঘের বা পুকুরে ছাড়া হয়। এ সাথে অন্য কোনো প্রজাতির মাছ বা চিংড়ি ছাড়া হয় না।

সুবিধাঃ 

  • এ পদ্ধতিতে চিংড়ি দ্রুত বৃদ্ধি পায়
  • পরিচর্যা করা সহজ যায়,
  • বড়গুলো সহজেই ধরে নেয়া যায়,
  • খাদ্য প্রয়োগ সহজ হয়।

অসুবিধাঃ  এ পদ্ধতিতে পুকুরের সকল স্তরের খাদ্য ব্যবহৃত হয় না।

মিশ্র চাষ পদ্ধতি: একই জলাশয়ে একই সময়ে যখন গলদা চিংড়ির সাথে অন্যান্য এক বা একাধিক প্রজাতির মাছ এক সাথে চাষ করা হয় তখন তাকে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষ বলে। এ জাতীয় চাষ পদ্ধতিতে জলাশয়ের খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যাপারে কেউ কারও প্রতিযোগী হয় না।

সুবিধাঃ

  • পুকুরের সর্বস্তরের খাবারের ব্যবহার নিশ্চিত হয়,
  • তুলনামূকভাবে লাভজনক,
  • রোগব্যাধি কম হয়।

অসুবিধাঃ

  • গলদার সাথে চাষযোগ্য কার্পের প্রজাতির নির্বাচন সঠিক না হলে কাঙ্খিত লাভ নাও হতে পারে।
  • মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় অধিক মনোযোগী হতে হয় বিধায় চাষির পক্ষে চাষ সম্ভবনাও হতে পারে।
Content added By

গলদা চিংড়ির সাথে সিলভার কার্প ও কাতলা মিশ্র চাষে ব্যবহার করা যায়। সতর্ক থাকতে হবে যে পুকুরের তলায় বসবাসকারী ও খাদ্যগ্রহণকারী কোনো মাছের প্রজাতির গলদা চিংড়ির সাথে মিশ্রভাবে ব্যবহার যাবে না।

প্রজাতি নির্বাচন: মাছ ও চিংড়ি উৎপাদনের মূলভিত্তি হচ্ছে পুকুর বা ঘেরের পানিতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ততা। পুকুর বা ঘেরের পানির উপরস্তর, মধ্যস্তর ও তলার স্তরে আলাদা আলাদা প্রাকৃতিক খাবার জন্মায়। অন্যদিকে পুকুরে যে সব প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি চাষ করা হয় এদের খাদ্য অভ্যাস ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কেবলমাত্র সরপুঁটি ও গ্রাসকার্প মাছ পানির সকল স্তরে বিচরণ করে। সে কারণে পুকুরে যদি শুধুমাত্র কোনো একন্তরে বসবাসকারী মাছ বা চিংড়ি ছাড়া হয় তাহলে এরা ঐ স্তরের খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে কিন্তু অন্য স্তর অব্যবহৃত অবস্থায় থেকে যায়। তাই পোনা মজুদের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পুকুরের সকল স্তরের খাদ্যের পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এ ধরনের চাষকে মিশ্র চাষ বলে যা একক চাষের চেয়ে লাভজনক।

শুধু কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষে ৬-৭ প্রজাতির পোনা মজুদ করা গেলেও কার্প-চিংড়ি মিশ্রচাষে মৃগেল, কার্পিও বা মিরর কার্পের পোনা মজুদ করা ঠিক নয়। কারণ এরা খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য চিংড়ির সাথে প্রতিযোগিতা করে। চিংড়ির সাথে মিশ্রচাষের জন্য কাতলা, সিলভার কার্প ও রুই হচ্ছে সবচেয়ে উপযোগী প্রজাতি। তবে বিগহেড এবং সরপুঁটিও লাভজনকভাবে চাষ করা যায়। চিংড়ির সাথে চাষের জন্য উপরিল্লিখিত প্রজাতিগুলোর এলাকাগত প্রাপ্যতা বিবেচনা করেই প্রজাতি নির্বাচন করতে হয়। 

Content added By

পুকুরের সকল স্তরে নির্দিষ্ট সংখ্যক মাছের পোনা ও জুভেনাইল মজুদের উপর মাছ ও চিংড়ির বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বহুলাংশে নির্ভর করে। অতি ঘনত্বে মাছের পোনা ও চিংড়ির পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করলে এদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, অক্সিজেন ও বাসস্থানের তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে এদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে ও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। যার কারণে আশানুরূপ উৎপাদন এবং লাভ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক পোনা ও জুভেনাইল মজুদ করলেও মোট উৎপাদন কমে যায়। সে কারণে পুকুরের সার্বিক অবস্থায় ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে পোনার মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করতে হয়। লাভজনকভাবে মাছ ও চিংড়ি উৎপাদনের জন্যে সঠিক মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণের বিবেচ্য বিষয়সমূহ উল্লেখ করা হলো।

Content added By

মাটি ও পানির গুনাগুণ ভেদে কোনো একটি জলাশয়ে মাছের পোনা ও চিংড়ির জুভেনাইলের মজুদ ঘনত্ব কম বেশি হতে পারে। যেমন- বেলে ও এঁটেল মাটির উৎপাদনশীলতা দো-আঁশ মাটির চেয়ে কম। ফলে দো-আঁশ মাটির পুকুরে তাদের মজুদ ঘনত্ব অন্যান্য মাটির পুকুরের তুলনায় কিছুটা বেশি হবে।

Content added By

যদি নির্দিষ্ট সময়ে বড় আকারের মাছ ও চিংড়ি উৎপাদন করতে (৫-৬ মাসে মাছ ৫০০ গ্রাম - ১ কেজি এবং চিংড়ি ৮০ গ্রাম) হয় তবে কম ঘনত্বে পোনা ও জুভেনাইল মজুদ করা উচিত। মজুদ ঘনত্ব বেশি হলে একই সময়ে মাছ ও চিংড়ির গড় ওজন কম হবে। 

Content added By

পুকুরে বড় আকারের পোনা ও জুভেনাইল (মাছ ১০-১৫ সেমি এবং চিংড়ি ৫-৭ সেমি) মজুদ করা হলে কম সময়ে বেশি উৎপাদন পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মজুদের সময় বড় আকারের পোনা ও জুভেনাইল পাওয়া যায় না; ফলে ছোট আকারের পোনা ও জুভেনাইল কিছুটা বেশি ছাড়া যায়। বড় আকারের পোনা ও জুভেনাইলের ক্ষেত্রে মজুদ ঘনত্ব ২৫% কম হতে পারে ।

Content added By

পুকুরের ধরনের উপরও মাছ ও চিংড়ির মজুদ ঘনত্ব নির্ভর করে। সে কারণে মৌসুমী ও বাৎসরিক পুকুরের মজুদ ঘনত্ব ভিন্ন হয়ে থাকে।

Content added By

চাষের ধরন যেমন- একক ও মিশ্র চাষে মজুদ ঘনত্ব ভিন্ন হয়ে থাকে।

Content added By

পুকুরে শুধুমাত্র সার ব্যবহারে মজুদ ঘনত্ব কিছু কম এবং সার ও খাদ্য দুই-ই ব্যবহারে মজুদ ঘনত্ব বেশি হতে পারে। আবার জলাশয়ে আংশিক পানি বদল ও বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা থাকলে আরও অধিক ঘনত্বে মজুদ করা যেতে পারে। কোনো পুকুরে পোনা মজুদ ঘনত্ব মজুদ হার প্রকৃতই উহার ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলি, চাষ ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলির আলোকে পুকুর এবং ঘেরে চাষের জন্য নিচে একক ও মিশ্রচাষের কিছু নমুনা উল্লেখ করা হলো-

ক. মৌসুমী পুকুর

একক চাষঃ গলদা চিংড়ি-৫৫ টি পোনা / শতাংশ। তবে খাদ্য ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে এই মজুদ ঘনত্ব দেড় থেকে দুই গুণ বাড়ানো যায়।

মিশ্র চাষঃ ঘনত্ব/শতাংশ

প্রজাতিনমুনা-১নমুনা-২
গলদা৩০ টি ৩০ টি 
সিলভার কার্প২০ টি ২০ টি 
সরপুঁটি৫ টি ৫ টি 
মোট৫৫ টি ৫৫ টি 

 

খ) বাৎসরিক পুকুর

একক চাষঃ গলদা চিংড়ি ৫০-৭০টি/শতাংশ। প্রতিপালনের সময় ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে এই মজুদ ঘনত্ব আরও দেড় থেকে দুইগুণ বৃদ্ধি করা যায়। গলদা-কার্প মিশ্রচাষে গ্রাস কার্প মজুদ না করাই ভালো।  যদি মজুদ করতে হয় তবে প্রতিদিন গ্রাসকর্পের ওজনের নির্দিষ্ট মাত্রায় সবুজপাতা জাতীয় খাদ্য অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে।

কার্প-চিংড়ি মিশ্র চাষ- মজুদ ঘনত্ব/শতাংশ

প্রজাতিআকার (সেমি)নমুনা-১নমুনা-২নমুনা-৩নমুনা-৪
গলদা চিংড়ি৩-৫৩৫-৫৫৩৩-৩৬৩৩-৩৪৩৪-৩৫
কাতলা৭-১০২-৩১০-১১-৪-৫
সিলভার কার্প ৭-১০৯-১০-৯-১০৫-৬
বিগ্রেড ৭-১০-২-৩-
রুই ৭-১০৪-৫৫-৬৫-৬৫-৬
গ্রাসকার্প১০-১৫-১-২১-২২-৩
সরপুঁটি৩-৫---
মোট ৫০-৫০৫০-৫০৫০-৫০৫০-৫০

মন্তব্য- চিংড়ির আকার ৬-৮ সেমি হওয়ার পর ১০-১৪ সেমি আকারের কার্প পোনা মজুদ করতে হবে। 

 

গ) ঘের

ঘেরে বিভিন্ন কৌশলে পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করে চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে সে কারণে মজুদ ঘনত্বের তারতম্য দেখা যায়। নিয়ে বিভিন্ন কৌশলের উপর ভিত্তি করে মজুদ ঘনত্বের নমুনা উল্লেখ করা হলো- 

(ক) ঘেরটি যখন পুরোপুরি বড় চিংড়ি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় 

 (খ) ঘেরটি প্রথমে নার্সারি ও পরে মজুদ কাজে ব্যবহৃত হলে ৮০-১০০টি পিএল/শতাংশ

 (গ) ঘেরটি পুরোপুরি নার্সারি হিসেবে ব্যবহৃত হলে ১,০০০-২,০০০টি পিএল/ শতাংশ 

প্রজাতিআকার (সেমি)পরিমাণ (প্রতি শতাংশে)
গলদা ৩-৫৫০-৬০
কাতলা৭-১০৬-৮
সিলভার কার্প ৭-১০৬-৮
রুই ৭-১০৪-৬
গ্লাস কার্প ৭-১০০-১
 মোট৬৫-৮০
Content added By

শুধু সঠিক সংখ্যায় পোনা ও পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করলেই ভালো উৎপাদন পাওয়া যাবে না। কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়ার জন্যে সঠিক মজুদ ঘনত্বের পাশাপাশি ভালো মানসম্পন্ন সুস্থ সবল পোনা ও পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করতে হবে। পোনা ও পিএল বা জুভেনাইলের উৎস এবং হ্যান্ডলিং এদের গুণগত মানকে প্রভাবিত করে। যে কোনো কারণেই গুণগত মান খারাপ হোক না কেন ঐ সমস্ত পোনা ও পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করা হলে চাষি বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। যথাযথ মানসম্পন্ন পোনা ও জুভেনাইল মজুদ করা না হলে-

  •  মজুদের পর ব্যাপক হারে পোনা মারা যেতে পারে,
  • বৃদ্ধির হার কম হয়,
  •  সময়মতো বিক্রয়যোগ্য না হওয়ায় বাজার মূল্য কম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সে কারণে পুকুরে মজুদের পূর্বে এদের যথাযথ গুণগতমান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ভালো ও খারাপ পোনা ও জুভেনাইল শনাক্তকরণের বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো-

চিংড়ির জুভেনাইল 

  • ভালো জুভেনাইলের দেহ নীলাভ-সাদা ছাই রংয়ের হয়,
  • ভালো জুভেনাইলের অ্যান্টেনা ও উপাঙ্গসমূহ ভাঙ্গা থাকে না, 
  • ভালো জুভেনাইলের খোলস পরিষ্কার হয়,
  • ভালো মানের জুভেনাইলের খাদ্যথলি পরিপূর্ণ, খারাপ মানের জুভেনাইলের খাদ্যথলি আংশিক পূর্ণ বা খালি থাকে।

চিত্র-২.৩: গলদা চিংড়ি জুভেনাইল

Content added By

মাটির গুণাগুন ও উর্বরতার ওপর পানির গুণাগুণ ও উর্বরতা নির্ভরশীল আর পানির উর্বরতার ওপর চিংড়ির উৎপাদন নির্ভরশীল। তাই খামার বা পুকুর নির্মাণের স্থান নির্বাচনের পূর্বে মাটির গুণাগুণ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটি পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক বস্তু বিশেষ। ক্ষরীভূত শিলা ও খনিজের সাথে জৈব পদার্থ ও পানির মিশ্রণের ফলে মাটি তৈরি হয়। কঠিন, তরল ও বায়বীয় আকারের খনিজ দ্রব্য এবং জলীয় ও বায়বীয় অংশ সমন্বয়ে মাটি গঠিত। চিংড়ি চাষে মাটির গুণাগুণগুলো নিম্নরূপ: 

মাটির ৪টি গঠন দ্রব্য-খনিজ, জৈব, বায়ু ও পানি সমন্বিতভাবে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। মাটিতে পানির পরিমাণের ওপর বায়ুর পরিমাণ নির্ভরশীল অর্থাৎ মাটিতে পানির পরিমাণ বাড়লে বায়ুর পরিমাণ কমে যায় এবং পানির পরিমাণ কমলেও বায়ু চলাচল বেড়ে যায়। আবার মাটিতে খনিজ দ্রব্যের আকার বড় হলে এবং নুড়ি বা স্কুল বালি কণার পরিমাণ বেশি হলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। মাটিতে কাদার পরিমাণ বেশি হলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মাটিতে বায়ু চলাচল কমে যায়। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি হলে মাটির গুণাগুণ উন্নত হয় এবং মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়।

মাটির রাসায়নিক উপাদান

মাছ বা চিংড়ি চাষের জন্য বদ্ধ জলাশয়ের পানির উপযোগিতা মাটির পিএইচ, ফসফরাস, নাইট্রোজেন, জৈব পদার্থ ইত্যাদি উপাদানের মাত্রার ওপর নির্ভরশীল। মাছ চাষের জন্য মাটির উপরোক্ত উপাদানগুলোর মাত্রা নিম্নরূপ হলে ভালো হয়-

Content added By

পুকুরের উর্বরতা বা জৈব উৎপাদন নির্ভর করে পুকুরের পানির ভৌত- রাসায়নিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ওপর। পুকুরের ভৌত-রাসায়নিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে এমন উপাদানগুলো নিম্নরূপ-

Content added By

পানির গভীরতাঃ উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের গভীরতার কারণে সূর্যালোকের প্রভাবে পানিতে তিনটি স্তরের সৃষ্টি হয়। যথা- ইপিলিমনিয়ন (উপরের স্তর), থার্মোক্লাইন (মধ্য স্তর) এবং হাইপোলিয়নিয়ন (নিচের স্তর)। বাংলাদেশের অধিকাংশ পুকুরগুলোর গভীরতা ২-৩ মিটার। ফলে হাইপোলিমনিয়ন স্তরটি দেখা যায় না। উপরের স্তরই মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক। নার্সারি পুকুরের গভীরতা বেশি হলে চিংড়ির পিএল পানির চাপ সহ্য করতে পারে না। পিএল অগভীর পানিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নার্সারি পুকুরের গভীরতা ৭৫-৯০ সেমি (২.৫-৩.০ ফুট) হলে ভালো হয়।

তাপমাত্রাঃ পানির তাপমাত্রার সাথে পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদন এবং গলদা চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি সরাসরি সম্পর্কিত। গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সহায়ক তাপমাত্রা ২৫-৩১° সে.।

সূর্যালোকঃ সূর্যালোকের প্রাপ্যতা ও প্রখরতার ওপর সালোকসংশ্লেষণ নির্ভরশীল যা থেকে পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদন ও অক্সিজেন সৃষ্টি হয়। গলদা নার্সারি পুকুরে দৈনিক কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা সূর্যালোক পড়া আবশ্যক।

Content added By

অক্সিজেনঃ পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের উৎস প্রধানত দুটি-

  • পানি সংলগ্ন বাতাস ও
  • সালোকসংশ্লেষণ ।

তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, অন্যান্য গ্যাসের আংশিক চাপ বাড়ার সাথে সাথে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। বায়ু চাপ বাড়লে অক্সিজেনের দ্রবণীয়তা বাড়ে। নার্সারি পুকুরের অক্সিজেনের মাত্রা ৫-৭ পিপিএম হলে ভালো হয়।

অ্যামোনিয়াঃ মাছ ও চিংড়ির বর্জ্য, অভুক্ত খাদ্য, বিভিন্ন দ্রব্যের পচন ইত্যাদির ফলে অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। যার আধিক্য গলদা নার্সারির জন্য ক্ষতিকর। অআয়নিত অ্যামনিয়ার মাত্রা ০.০২৫ মিগ্রা/লিটারের বেশি হওয়া উচিত নয়।

নাইট্রাইটঃ এটি ব্যাকটেরিয়া দহনের ফলে অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইটের মধ্যবর্তী অবস্থা। পুকুরের তলার পচা পদার্থ বেড়ে গেলে অক্সিজেনহীন অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রেটকে নাইট্রাইটে পরিণত করে। নাইট্রাইটের খুব স্বল্পমাত্রাও গলদা চিংড়ির জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত। পানিতে নাইট্রাইটের মাত্রা ০.১ মিগ্রা/লিটারের কম থাকা উচিত।

কার্বন ডাই-অক্সাইডঃ পানিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উৎস প্রধানত জৈব পদার্থের পচন ও জলজ জীবের শ্বাস প্রশ্বাস। মুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড পানির পিএইচ এর মান ৪.৫ পর্যন্ত নামাতে পারে। পানিতে ১২ মিগ্রা/লি যুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গলদা চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর নয়। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিষাক্ততা অক্সিজেনের মাত্রার ওপর নির্ভশীল। পানিতে এ গ্যাস বেশি থাকলে জলজ প্রাণির অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যায়।

ক্ষারত্ব ও খরতাঃ পানিতে উপস্থিত কার্বনেট, বাই কার্বনেটের ঘনত্বই ক্ষারত্ব এবং ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর যৌথ ঘনত্বই হচ্ছে খরতা। গলদা চিংড়ি চাষের জন্য হালকা খর পানি সবচেয়ে ভাল। পানির ক্ষারত্ব ও খরতার মান ২০ মিগ্রা/লি কম বা খুব বেশি বেড়ে গেলে বাফারিং ক্ষমতা কমে যায়, প্রাথমিক উৎপাদন কমে যায়, সারের কার্যকারিতা কমে যায়, গলদা চিংড়ি সহজেই অম্লতা ও অন্যান্য বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ক্ষারত্ব ও ক্ষরতার মান ৪০-২০০ মি.গ্রা./লি হওয়া উচিত।

পিএইচঃ পিএইচ হচ্ছে কোন বস্তুর অম্লতা ক্ষারত্বের পরিমাপক। পানির পিএইচ বলতে পানির অম্লতা বা ক্ষারত্বের অবস্থা বুঝায় যা ১ হতে ১৪ পর্যন্ত বিস্তৃত। নিরপেক্ষ মান ৭ দ্বারা নির্দেশিত হয়। পিএইচ এর মান ৭ এর কম হলে অম্লতা এবং ৭ এর বেশি হলে ক্ষারত্ব নির্দেশ করে। গলদা চিংড়ির নার্সারির ক্ষেত্রে পিএইচ এর মান খুই গুরুত্বপূর্ণ। গলদা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে পানির পিএইচ এর মান ৭.৫-৮.৫ এর মধ্যে থাকা সবচেয়ে ভালো।

লবণাক্ততাঃ গলদা চিংড়ি মিঠা পানির চিংড়ি, তবে অল্প লবণাক্ততায় গলদা চিংড়ির চাষ হয়। চাষের ক্ষেত্রে পানির লবণাক্ততা ০-৪ পিপিটি হওয়া উচিত।

Content added By

মাছ ও চিংড়ি চাষের বেশ কিছু ঋতুভিত্তিক ঝুঁকি থাকে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এমন কি অনেক সময় সমস্ত চাষ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে। ঝুঁকি গুলো হচ্ছে-

(১) বর্ষাকালীন ঝুঁকিঃ বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় সমস্ত মাছ ও চিংড়ি ভেসে যেতে পারে। তাই সময়ের আগেই বিক্রয়যোগ্য মাছ ও চিংড়ি আহরণ করা উচিত।

(২) শুষ্ক মৌসুমের ঝুঁকিঃ শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নীচে নেমে যেতে পারে বা পানির গভীরতা কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় পানি তাড়াতাড়ি গরম হয়ে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। ফলে সমস্ত মাছ ও চিংড়ি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

(৩) শীতকালীন ঝুঁকিঃ শীতকালীন ঝুঁকির অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে মাছের ক্ষতরোগ। এ রোগ সাধারণত নভেম্বর- ফেব্রুয়ারি মাসেই বেশি দেখা যায়। এ সময়ে পুকুরে জীবভর বেশি থাকলে এ রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সে কারণে এ সময়ের আগেই বড় মাছ ও চিংড়ি পুকুরের জীবভর কমিয়ে দেওয়া উচিত।

(৪) চুরিঃ এটি সামাজিক ঝুঁকি। পুকুরে মাছ ও চিংড়ি বড় হলে এ ঝুঁকি বেড়ে যায়। সে কারণে বড় মাছ ও চিংড়ি আংশিক আহরণ করলে চুরির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। 

Content added By

গলদা চিংড়ি চাষের উপযোগী পরিবেশ বলতে এমন একটি পরিবেশকে বুঝায় যেখানে অবকাঠামোগত সুবিধা, পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পানির প্রাপ্যতা উৎপাদন সামগ্রীর সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিত চিংড়ির সঠিক গুণগতমান বজায় রেখে চিংড়ি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানি নিশ্চিত করা যায়।

চিত্র ২.৪: গলদা চিংড়ি খামার

Content added By

লাভজনকভাবে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খামার নির্মাণের লক্ষ্যে স্থান নির্বাচনের সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে-

মাটির গুণাগুণ: এঁটেল মাটি, এঁটেল দো-আঁশ কিংবা বেলে দো-আঁশ মাটি পুকুর নির্মাণের জন্য সবচেয়ে ভালো। অ্যাসিড সালফেট যুক্ত কিংবা বেলেযুক্ত মাটি পুকুর নির্মাণের জন্য উপযুক্ত নয়।

পানির গুণাগুণ: পানির গুণাগুণের ওপর চিংড়ির উৎপাদন নির্ভরশীল। গলদা খামারের জন্য এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন স্বাদু পানি সহজেই পাওয়া যায়। স্বাদু বা মিঠা পানিতে সাধারণত গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়। তবে ৪ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ত পানিতে গলদা চাষে কোনো সমস্যা হয় না। পানির তাপমাত্রা ১৮+ সে এর নিচে এবং ৩৫° সে এর ঊর্ধ্বে হলে চিংড়ির মৃত্যু ঘটে। পানির তাপমাত্রা ২৪° সে এর নিচে নামলে এবং ৩১° সে এর বেশি হলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।

বন্যা, প্লাবন ও দূষণমুক্ত এলাকা: হঠাৎ বন্যা, প্লাবন বা ঢলে খামার যেন তলিয়ে না যায় এমন স্থানে খামার স্থাপন করতে হবে। শহরের ময়লা আবর্জনা এবং শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীর পানিতে মিশে পানি দূষণ করে। এই পানি গলদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। এছাড়া কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানি গলদা খামারে ব্যবহার করা উচিত নয়।

পানির উৎস: বৃষ্টির পানি, নদী-খাল বা ভূগর্ভস্থ নলকূপ থেকে পানি গলদার খামারে সরবরাহ করা যায়। খামার এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যেখানে স্বচ্ছ, দূষণমুক্ত ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ মিঠা পানি সহজেই পাওয়া যায়। নদী বা খালের পানিতে জৈব ও অজৈব ভাসমান পদার্থ কম থাকতে হবে। নলকূপের পানিতে সাধারণত লৌহ বা ভারী ধাতুর পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এসব উৎসের পানি থিতানোর পর খামারে সরবরাহ করা উচিত।

চাষ উপকরণাদির প্রাপ্যতা: পলদা খামার এমন জায়গায় স্থাপন করা উচিত যেখানে চিংড়ির পোনা সহজে সংগ্রহ করা যায় এবং চিংড়ি চাষের বিভিন্ন উপকরণ যেমন, চুন, সার, খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণাদি সহজে সংগ্রহ ও ব্যবহার করা যায়।

অবকাঠামোগত সুবিধাদি: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সড়ক যোগাযাগে, বাজার ও বিপণন ব্যবস্থা ইত্যাদির অবকাঠামোগত সুবিধাদি আছে এমন এলাকায় চিংড়ি খামার স্থাপন করতে হবে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য খামার এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা দরকার। চিংড়ি খামারে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিতকরতে খামার এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা প্রয়াজেন।

দক্ষ জনশক্তি: দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনশক্তি ছাড়া সফলভাবে চিংড়ি চাষ করা যেমন সম্ভব নয় ঠিক তেমনিভাবে চাষের নিবিড়তা বৃদ্ধি করাও সম্ভব নয়। এজন্য সহজে দক্ষ জনশক্তি পাওয়া যায় এবং  নিয়োগকৃত কর্মচারীগণ যেন বসবাসের ভালো পরিবেশ পায় এমন স্থানে খামার স্থাপন করা উচিত।

বিবিধ: নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ, চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা খামার স্থাপনকালে বিবেচনায় রাখা উচিত।

Content added By

খামারের উপযুক্ত নকশা প্রণয়ন এবং অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পিত চাষ ব্যবস্থাপনার পূর্বশর্ত। গলদা চিংড়ি খামারে উৎপাদন, লক্ষ্যমাত্রা, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করতে হয়। চাষ সুবিধার জন্য খামারে সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসম্মত পানি সঞ্চালন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকা দরকার। এছাড়া পানির গভীরতা ও চাষকৃত চিংড়ির পরিচর্যার জন্য খামারে বিভিন্ন প্রকার পুকুর নির্মাণ করতে হবে। একটি আধুনিক খামারের নকশা চূড়ান্তকরণের পূর্বে নিম্নোক্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করা দরকার । 

(১) পানি সরবরাহের উপযুক্ত ব্যবস্থা

(২) পানি নিকাশনের সুবিধা,

(৩) বলা বা প্লাবনের সময় পানির সর্বোচ্চ উচ্চত

(৬) বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান  

(৫)মাটির পানি ধারণক্ষমতা ইত্যাদি।

Content added By

গলদা চিংড়ি চাষের জন্য দুই ধরনের পুকুর আবশ্যক, যথা- নার্সারি পুকুর ও মজুদ পুকুর। হ্যাচারি বা নদী থেকে পিএল এনে সরাসরি ঘের বা পুকুরে মজুদ করা উচিত নয় এক্ষেত্রে গলদা পোনা বা পিএল অনেক মারা যায় ও কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া যায় না, তাই গলদা পোনা প্রথমে নার্সারি পুকুরে ৩০-৪০ দিন লালন পালন করে মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়।   

Content added By

বাংলাদেশের অধিকাংশ থামারে নার্সারি পুকুর রাখা হয় না। বর্তমানে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা সরাসরি গলদা চাষের পুকুরে মজুদ করা হয়। এর ফলে পোনার মৃত্যু হার অনেক বেশি হয় এবং চিংড়ি চাষি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা নার্সারি পুকুরে প্রতিপালনের পর মজুদ পুকুরে মজুদ করলে উৎপাদন বেশি হয়। চাষ এলাকার ১০-১৫% এলাকার নার্সারি পুকুর স্থাপন করা থেকে পারে। বর্গাকার বা আয়তকার নার্সারি পুকুরের আয়তন ৫০০ বর্গমিটার থেকে ১০০০ বর্গমিটার হতে পারে এবং সাধারণত প্রতি বর্গমিটারে ৩০ থেকে ৫০টি পোনা মজুদ করা যায়। নার্সারি পুকুরে পোনার বাঁচার হার প্রায় ৭০%। 

 

চিত্রঃ নার্সারি পুকুর তৈরী 

নার্সারি পুকুরে পোনা প্রতিপালনের পর মজুদ পুকুরে ৪-৫ মাস প্রতিপালন করে বছরে কমপক্ষে ২টি ফসল উৎপাদন করা যায়। নার্সারি পুকুর ছাড়াও বর্তমানে পেন নার্সারি, ভাসমান নার্সারি বা ট্যাংক নার্সারিতে পোনা প্রতিপালন করা হচ্ছে। নার্সারিতে পানির সঞ্চালন ও গুণাগুণের প্রতি লক্ষ্য রেখে পোনার চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।

Content added By

পালন পুকুর একটি খামারের প্রধান অবকাঠামো যেখান থেকে চিংড়ি চাষের লাভ ও ক্ষতি নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে পালন পুকুর বর্গাকার বা আয়তকার হলে ভালো হয়। পালন পুকুরের আয়তন ০.৫ হেক্টর থেকে ১.৫ হেক্টর হলে ব্যবস্থাপনার সুবিধা হয়। নির্মাণ খরচ কমানারে জন্য অনেকে ২-৩ হেক্টর আয়তনের পুকুরও নির্মাণ করে থাকে।

চিত্র ২.৬: পালন বা মজুদ পুকুর

Content added By

গলদা চাষের সফলতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খামারের অবকাঠামো সঠিক পদ্ধতিতে নির্মাণের উপর নির্ভরশীল। সঠিকভাবে খামারের অবকাঠামো নির্মাণ করা না হলে একটু ভুলের কারণে মোট ফসলই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই গলদা খামারের অবকাঠামো সঠিক পদ্ধতিতে করা বাঞ্জনীয়। চাষ সুবিধার জন্য খামারে মূল অবকাঠামোর ব্যবহার ও নির্মাণ পদ্ধতি নিম্নে বর্ণিত হলো-

Content added By

সাধারণত চাষ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে গলদা চাষের পুকুরের আয়তন নির্ধারণ করা হয়। সনাতন চাষ পদ্ধতিতে পুকুরের আকারের বা আয়তনের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মিশ্র চাষ ও আধানিবিড় চাষ পদ্ধতিতে ০.২৫-২.০ হেক্টরের পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয় এবং নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে ০.২৫-১.০ হেক্টর আয়তনের পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়।

Content added By

খামারের প্রতিটি পুকুরে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন গেইট থাকা প্রয়োজন। পুকুরের তলদেশ ক্রমান্বয়ে নিষ্কাশন গেইটের দিকে ঢালু থাকা উচিত। এর ফলে প্রয়োজন অনুসারে পুকুরের পানি সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশন করা সহজ হয়।

Content added By

পুকুরের পাড় থেকে ৩ মিটার দুরে পুকুরের ভিতরের দিকে ২ মিটার প্রশস্থ ও ০.৫ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট একটি খাল পাড়ের চারপাশে এবং পুকুরের মাঝ বরাবর দু'পাড়ের খালের সংযোগের জন্য খাল নির্মাণ করা হয়। এই খাল চিংড়ির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুকুর থেকে চূড়ান্তভাবে চিংড়ি ধরার সময় এসব খাল ব্যবহার করা যায়।

Content added By

পানি সরবরাহের জন্য যে সমস্ত খামার বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল সেসব খামারে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন খাল নির্মাণের প্রয়াজেন নেই। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির অভাব হলে চিংড়ি চাষে বিঘ্ন ঘটে। এজন্য প্রয়োজনে যে কোনো সময় খামারে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা দরকার। আর এই আপদকালীন সময়ে পানি সরবরাহের জন্যই খামারে পানি সরবরাহ খাল নির্মাণ করা হয়। আবার কোনো কোনো সময় পানি প্রাপ্তির উৎস থেকে সরাসরি পানি পুকুরে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে পানি সরবরাহ খালের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। পুকুরে সরবরাহের সময় যাতে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি পুকুরে সুইস গেইট থাকা দরকার। আবার যেসব খামারে শোধনকৃত পানি সরবরাহ করা হয় সেসব খামারে পুকুরের বাঁধের উপর নির্মিত নালার মাধ্যমে অভিকর্ষ পদ্ধতিতে পুকুরে পানি সরবরাহ করা হয়।

Content added By

পুকুর শুকানো এবং পানির গুণাগুণ সঠিক মাত্রায় রাখার জন্য পুকুরের পানি নিষ্কাশন করা হয়। নিষ্কাশন খালের মাধ্যমে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করা হয়। এই নিষ্কাশন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পুকুরের তলদেশ পানি প্রবেশ করানোর গেইটের দিক থেকে নিষ্কাশন গেইটের দিকে ঢালু হতে হবে। সাধারণত পুকুরের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন খালের মাধ্যমে অভিকর্ষ পদ্ধতিতে পুকুর থেকে নিষ্কাশন করা হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে খামারের বাইরের পানির উচ্চতা বেশি থাকে বিধায় অনেক সময় খালের মাধ্যমে পানি অভিকর্ষ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ গলদা খামারেই পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে খামারের উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং চিংড়ির নানা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Content added By

পালন পুকুরে পানির গভীরতা ১-২ মিটার রাখা দরকার। এজন্য পুকুর পাড় থেকে পুকুরের তলার পানির গভীরতা ১.৫ মিটার হলে ভালো হয়।

Content added By

বাঁধের উচ্চতা পুকুরের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে ৩.৬০ মিটার উঁচু থাকা দরকার। বেষ্টনী বাঁধ, পুকুর বা খালের বাঁধ যাই নির্মাণ করা হোক তা অবশ্যই ভালাভোবে আঁটসাঁট বা কমপ্যাক্ট করে নির্মাণ করতে হবে। সঠিকভাবে কমপ্যাক্ট করা না হলে বাঁধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং পুকুরের পানি ধরে রাখতে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।

Content added By

বাঁধের উচ্চতা, মাটির ধরন এবং পানির ঢেউ ও স্রোতের ওপর নির্ভর করে বাঁধের ঢাল নির্ধারণ করা হয়। বেলে দো-আঁশ মাটির পুকুরের বাঁধের বাইরে ও ভিতরে উভয় দিকে ৩:১ এবং এঁটেল মাটিতে ২:১ হারে ঢালু হওয়া প্রয়োজন। এঁটেল মাটির ক্ষেত্রে বাঁধের ঢাল পুকুরের ভিতরের দিকে ১:১ রাখা যায়। একটি বাঁধের উচ্চতা নিম্নবর্ণিত সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়ঃ

এখানে-

ক = সংগৃহীত তথ্য মোতাবেক সর্বোচ্চ জোয়ারের উচ্চতা

খ = চাষের জমির উচ্চতা থেকে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতার পার্থক্য এবং

প = বাঁধ কতটুকু অতিরিক্ত উঁচু করা হবে তার পরিমাণ।

যে কোনো খামারে কোনো বাঁধ নতুনভাবে তৈরি করতে কি পরিমাণ মাটির প্রয়োজন হবে তা সহজেই নিচের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।
মোট মাটির পরিমাণ =১/২ (উপরিতলের প্রশস্ততা + ভূমির প্রশস্ততা) × উচ্চতা × মোট দৈর্ঘ্য।

যদি একটি পুকুরের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার, প্রস্থ ৪০ মিটার, বাঁধের ভূমির প্রশস্ততা ৩ মিটার এবং বাঁধের উপরিভাগের প্রশস্ততা ১ মিটার এবং উচ্চতা ২ মিটার হয় তাহলে তলের বাঁধের মোট দৈর্ঘ্য হবে ২৮০ মিটার। অতএব মোট মাটির পরিমাণ = ১/২(১+৩) × ২ × ২৮০ ঘনমিটার = ১১২০ ঘনমিটার। 

Content added By

গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি গলদা খামারের পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা পানি সরবরাহ, পানি শোধন, পানি সরবরাহ খাল ও পানি নিষ্কাশন খাল সমন্বয়ে গঠিত। সাফল্যজনকভাবে চিংড়ি উৎপাদনের জন্য খামারে পরিকল্পিত ও উন্নতমানের পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। পুকুরে পরিকল্পিত ও নিয়মিত পানি সঞ্চালনের মাধ্যমে চিংড়ি উৎপাদনের হার বৃদ্ধি করা যায়।

Content added By

গলদা চিংড়ি চাষের জন্য তিনটি উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করা যায়। উৎস তিনটি হচ্ছে-

(ক) বৃষ্টির পানি,

(খ) নদী বা খালের থিতানো দূষণমুক্ত পানি ও

(গ) ভূগর্ভস্থ ভারী ধাতুমুক্ত পানি।

গলদা খামারে বর্ষাকালে সাধারণত বৃষ্টির পানি সরবরাহ করা হয় এবং শুষ্ক মৌসুমে অন্য কোনো উৎস থেকে খামারে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা ভালো। চিংড়ি চাষ পদ্ধতি এবং পুকুরে চিংড়ির মজুদ সংখ্যার ওপর নির্ভর করে পুকুরে পানি সরবরাহের পরিমাণ। যে সমস্ত পুকুরে বাইরে থেকে খাদ্য সরবরাহ করা হয় সে সমস্ত পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরী।

Content added By

খাল বা নদীর পানি পুকুরে সরবরাহের পূর্বে থিতিয়ে নেয়া ভালো, কারণ এ পানিতে দ্রবীভূত ভাসমান জৈব ও অজৈব পদার্থ থাকে যা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। তাছাড়া এই পানিতে অবাঞ্ছিত প্রাণী, প্রাণির ডিম, লার্ভা ইত্যাদি থাকে যা পানির সাথে পুকুরে প্রবেশ করে চিংড়ির উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তাই এই পানি পুকুরে সরবরাহের পূর্বে সরবরাহ খাল বা জলাধারে তা থিতিয়ে ফিল্টার বা ২৫০ মাইক্রন নেটের মাধ্যমে ছেকে পুকুরে সরবরাহ করা উচিত। এর ফলে অবাঞ্ছিত প্রাণির প্রবেশ রোধ করা যায়। ভূগর্ভস্থ পানিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভারী ধাতু মিশ্রিত থাকে। পানির ভারী ধাতু চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর। এই জন্য ভূগর্ভস্থ পানি পুকুরে সরবরাহের পূর্বে তা সরবরাহ খাল বা জলাধারে পর্যাপ্ত বায়বীয় (Aeration) করে নেওয়া উচিত।

Content added By

চিংড়ি চাষের জন্য খামারে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দমন করে খামারটিকে মজুদের উপযোগী করে তোলাই হচ্ছে খামার প্রস্তুতকরণ। অর্থাৎ পুকুরে চিংড়ি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাই হচ্ছে খামার প্রস্তুতকরণের প্রধান উদ্দেশ্য। খামার প্রস্তুতকরণের প্রধান পদক্ষেপগুলো হচ্ছে: পুকুরের পাড় মেরামত, ফ্লুইস গেইট মেরামত, আগাছা দমন, পুকুর শুকানো, রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দমন, চুন প্রয়োগ ও পানি সংগ্রহ।

Content added By

চিংড়ি চাষের জন্য পুরাতন পুকুর বা ঘেরে কখনও কখনও পাড় মেরামত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কারণ পুকুরের ভাঙা পাড় মেরামত না করলে নিম্নবর্ণিত সমস্যা দেখা দিতে পারে- 

  • বাইরে থেকে রাক্ষুসে প্রাণী ও অবাঞ্ছিত মাছ প্রবেশ করতে পারে
  •  বর্ষা বা অতিরিক্ত বৃষ্টির সময় মাছ ও চিংড়ি ভেসে যেতে পারে,
  •  বাইরের দুষিত পানি পুকুরে প্রবেশ করতে পারে ও
  •  ভেতরের খাদ্যযুক্ত উর্বর পানি বের হয়ে যেতে পারে।

চিত্র-২.৭: গলদা খামারের পাড় মেরামত

Content added By

গলদা চিংড়ির পুকুরে পানি সরবরাহ খালে ছোট ছোট রুইস গেইট স্থাপন করা থাকে। এসব ফ্লুইস গেইট ভেঙে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো মেরামত বা পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নতুৰা পুকুরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটবে। ফলে চিংড়ি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

চিত্র-২.৮: গলদা খামারের ফ্লুইস গেট

Content added By

জলজ উদ্ভিদ বলতে অতি ক্ষুদ্র শেওলা যা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায় সে রকম উদ্ভিদ থেকে কচুরিপানা, কলমিলতা পর্যন্ত সব উদ্ভিদকে বুঝায়। পুকুরে অল্প পরিমাণ উদ্ভিদ চিংড়ি চাষের সহায়ক হলেও এর পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হলে তা চিংড়ি চাষের জন্য অনেক সময় মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। পুকুরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের সহাবস্থান প্রয়োজন। তবে চিংড়ি চাষের জন্য আগাছা সীমিত পর্যায়ে রাখতে এর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গলদা চিংড়ির পুকুরে জলজ উদ্ভিদের ক্ষতিকর দিকসমূহ নিম্নরূপ:

  •  চিংড়ির আশ্রয়স্থল দখল করে ফেলে,
  • রাক্ষুসে মাছের আবাসস্থল সৃষ্টি করে,
  • পুকুরের পানি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে পানির উর্বরা শক্তি কমিয়ে ফেলে,
  •  অবাঞ্ছিত প্রাণী যেমন- সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়,
  • জলজ উদ্ভিদ পুকুর থেকে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে,
  •  পানিতে সূর্যালোক পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করে, ফলে সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া ব্যাহত হয়,
  • জলজ উদ্ভিদ পঁচে পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে,
  • চিংড়ির চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি করে ও
  • চিংড়ি আহরণে বাঁধার সৃষ্টি করে।

বৃদ্ধি, স্বভাব ও বাসস্থলের প্রকৃতি অনুসারে জলজ উদ্ভিদকে নিচের কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

 

(১) শেওলা জাতীয় উদ্ভিদ: অণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ, তন্তু জাতীয় উদ্ভিদ এবং দলবদ্ধ উদ্ভিদ শেওলা জাতীয় উদ্ভিদের অন্তর্গত। শেওলা সাধারণত পানির উপরিভাগে অবস্থান করে। পুকুরে সাধারণত তিন ধরনের শেওলা দেখা যায়। যথা

ক) শাখাযুক্ত শেওলা এই জাতীয় শেওলা শাখাযুক্ত এবং পুষ্পবাহী উদ্ভিদের মতো। এই শেওলার কোনো অংশ পানির উপরিভাগের উপর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় না। যথা-চারা, নিটেলা ইত্যাদি।

খ) তন্তু জাতীয় শেওলা: এই জাতীয় শেওলা খালি চোখে দেখা যায়। পুকুরের পাড় ও তলদেশে এরা জন্মায় এবং পরে পানির উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন- ইউলোম্ব্রিক্স, স্পাইরোগাইরা, ক্লাডোফোরা ইত্যাদি।

গ) এককোষী বা দলবদ্ধ শেওলা : অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এই জাতীয় শেওলা ভালোভাবে দেখা যায়। এই জাতীয় শেওলা পানির উপরিভাগে জন্মায় যা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই শেওলার আধিক্য পানিতে সূর্যালোক পৌঁছাতে বাধা দেয়। যেমন- ইউগ্লেনা, ডায়াটম, ভলভক্স ইত্যাদি।

চিত্র ২.৯: শাখাযুক্ত শেওলা, তত্ত্বযুক্ত শেওলা ও এককোষী শেওলা

(২) নিমজ্জনশীল উদ্ভিদ: এই জাতীয় উদ্ভিদের কান্ড ও পাতা পানির তলদেশে জন্মায়। এ জাতীয় উদ্ভিদকে ভুবন্ধ উদ্ভিদ বলা হয়। এগুলি থাকলে চিংড়ি বা মাছের স্বাভাবিক চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। যেমন- পাতা ঝাঝি, ক'টা মাৰি ইত্যাদি।

চিত্র ২.১০: নিমজ্জনশীল উদ্ভিদ

(৩) ভাসমান উদ্ভিদ: এ জাতীয় উদ্ভিদের শিকড় ও পাতা পানির উপরে ভাসতে থাকে। আবার কিছু উদ্ভিদের শিকড় পুকুরের তলদেশে মাটিতে থাকে। এগুলো প্রকৃতপক্ষে জলজ আগাছা হিসেবে পরিচিত। যথা- কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি।

চিত্র ২.১১: ভাসমান উদ্ভিদ 

 

(৪) নির্গমনশীল উদ্ভিদ: এই উদ্ভিদের শিকড় পুকুরের তলদেশে মাটির সাথে সংযুক্ত থাকে। এই উদ্ভিদের অংশ বিশেষ পানির উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। যেমনঃ বিষকাটালি, আড়াইন ইত্যাদি।

চিত্র ২.১২ : নির্গমনশীল

(৫) লতানো উদ্ভিদ: এই জাতীয় উদ্ভিদের শিকড় পুকুরের পাড়ে থাকে কিন্তু এদের কান্ড ও পাতা পানির উপরিভাগে থাকে এবং পানির উপরিভাগকে প্রায় আবৃত করে ফেলে। যেমন- কলমিলতা, হেলেঞ্চা, কেশরদাম ইত্যাদি

চিত্র ২.১৩: লতানো উদ্ভিদ 

Content added By

জলজ উদ্ভিদ পানিতে সূর্যালোক প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে ফলে পানিতে অক্সিজেনের অভাব হয়। তাই চিংড়ি চাষের পুকুরে আগাছা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না রাখলে খুব অল্প সময়েই একটি পুকুর অনাবাদী বদ্ধ জলাভুমিতে পরিণত হতে পারে। পুকুরের আগাছা দমন ও নিয়ন্ত্রণ চারটি উপায়ে করা যায়। যথা-

ক) কায়িক শ্রম পদ্ধতি: পুকুরের যাবতীয় আগাছাকে দা বা কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে হাত দিয়ে তুলে ফেলা যায়। কখনো কখনো পুকুরে দড়ি টেনে আগাছার শিকড় আলাদা করে পরে টেনে তোলা যায়।

খ) যান্ত্রিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে জলজ আগাছা নিয়ন্ত্রণ বেশ ব্যয়বহুল ও শ্রমসাধ্য। স্টিল ক্যাবল দিয়ে শেওলা ছাড়া সব ধরনের জলজ আগাছা পরিষ্কার করা যায়। পক্ষান্তরে উইডস' দিয়ে কেবল নরম জাতীয় নিমজ্জনশীল উদ্ভিদ দমন করা যায়।

গ) জৈবিক পদ্ধতি: জলজ আগাছা দমনের জন্য জৈবিক পদ্ধতি অধিক নিরাপদ, কার্যকর ও খরচ অনেক কম। এই পদ্ধতিতে আগাছা দমনের জন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না। এই পদ্ধতিতে আগাছা দমনের জন্য রাজহাঁস ও পাতিহাঁস এবং গ্রাসকার্প, তেলাপিয়া, সরপুঁটি প্রভৃতি মাছ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঘ) রাসায়নিক পদ্ধতি: পুকুরে চিংড়ি থাকা অবস্থায় কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা উচিত নয়। এই পদ্ধতিতে আগাছা দমনের পূর্বে কোনো মৎস্যবিজ্ঞানী বা নিকটবর্তী মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কপার সালফেট, সোডিয়াম আরসেনাইট, ২-৪ ডি, এ্যাকুয়াথল গ্লাস প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থ বিভিন্ন প্রকার জলজ আগাছা দমনে ব্যবহার করা হয়।

ঙ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি: পুকুরে ডুবন্ত উদ্ভিদ থাকলে বেশী পরিমাণ অজৈব সার প্রয়োগ করে তা দমন করা যায়। পুকুরে যদি ডুবন্ত উদ্ভিদ যেমন- নাজাজ থাকে তাহলে প্রতি শতাংশে ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে ২-৩ দিনের মধ্যে পুকুরে সবুজ স্তরের সৃষ্টি হয়। ফলে সূর্যোলোক না পাওয়ায় অল্প কয়েক দিনের ভেতর নাজাজ মারা যায়।

Content added By

জলজ আগাছা দমনের পরে পুকুর/গলদা খামার হতে অবশ্যই মৎস্যভূক ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করতে হবে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দমন করা হয়ে থাকে। আধুনিক চিংড়ি চাষ পদ্ধতিতে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণী মুক্ত খামারই উন্নত খামার ব্যবস্থাপনার পূর্বশর্ত। রাক্ষুসে মাছ এবং অবাঞ্ছিত মাছ ও প্রাণির ক্ষতিকর দিকসমূহ-

  • এরা গলদা চিংড়ি খেয়ে ফেলে,
  •  গলদা চিংড়ির জন্য সরবরাহকৃত খাবারে ভাগ বসায়,
  • এরা চিংড়ির আবাসস্থল দখল করে,
  • পুকুরের পানির ভৌত ও রাসায়নিক অবস্থার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে,
  • এরা রাগে জীবাণু ছড়ায় ও
  • পুকুরের পাড়ে গর্ত করে পাড় নষ্ট করে ফেলে।

পুকুর শুকিয়ে অথবা নানা ধরনের জৈব ও অজৈব পেস্টিসাইড ব্যবহার করে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য অবাঞ্ছিত প্রাণী দমন করা যায়। অবাঞ্ছিত প্রাণী দমনের বিভিন্ন পদ্ধতি হলো-

 

Content added By

বাংলাদেশে সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পুকুর শুকানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়। কারণ এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও খুব কম থাকে। সম্পূর্ণভাবে পানি নিষ্কাশন করার পর পুকুর ভালোমত শুকাতে ২-৫ সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন হয়। পুকুরের তলদেশ সূর্যালোকে এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে মাটিতে ৪-৫ সেমি ফাটল সৃষ্টি হয়। তবে মাটিতে অ্যাসিড বা কষ থাকলে ফাটল সৃষ্টি না করাই উত্তম। তাছাড়া পুকুরের তলদেশ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গেলে যদি ৩-৫ সেমি এর বেশি গর্ত না হয় তবে এতেও শুকানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।
যে সব পুকুরের পানি সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশন করা সম্ভব নয় সে সব পুকুরের পানি এমন পরিমাণে নিষ্কাশন করতে হবে যেন পুকুরের তলদেশ পর্যন্ত প্রচুর সূর্যরশ্মি পৌঁছতে পারে। যে সব পুকুরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবিরামভাবে চিংড়ি চাষ করা হয়েছে অথবা পুকুরের তলদেশে যদি কালো রঙের জৈব তলানি সৃষ্টি হতে দেখা যায় তবে পুকুরের তলদেশ কিছুদিন শুকানোর পর ৫-১৫ সেমি গভীর করে ভালোভাবে চাষ দিতে হবে এবং রৌদ্রে আবারও ভালোভাবে শুকাতে হবে। পুকুর শুকানোর উপকারিতা-

  • পুকুরের তলদেশ ভালোভাবে শুকানোর ফলে সব ধরনের রাক্ষুসে মাছ, ও অন্যান্য প্রাণী দুরীভূত হয় ।
  • পুকুরের তলদেশে বিদ্যমান জৈবিক পদার্থসমূহ আলো বাতাসের প্রভাবে মাটিতে মিশে যায়। 
  • ফলে মাটিতে পুষ্টিকারক উপাদানের পর্যাপ্ততা ঘটে এবং এতে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • মাটিতে বিদ্যমান হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসসমূহ দূরীভূত হয়। 
  •  পুকুরের তলদেশ শুকানোর ফলে মাটিতে বিদ্যমান অনেক ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগজীবাণু ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
  •  পুকুরের তলদেশ শুকানোর ফলে মাটির গাঠনিক কাঠামো মজবুত হয়। ফলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতাবৃদ্ধি পায়। মাটি শুকানোর ফলে তলদেশের মাটি পচনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
Content added By

প্রাণী রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের জৈব ও অজৈব বা রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু পেস্টিসাইড আছে যেগুলো প্রয়োগের ফলে মৃত মাছ খাওয়ার অনুপযাগেী হয়ে পড়ে এবং পুকুরের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাছাড়া এসব পেস্টিসাইডের বিষক্রিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ থাকে। এতে চিংড়ি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য বারবার জাল টেনে মাছ ধরে ফেলা এবং পুকুর শুকানো সবচেয়ে ভাল। যদি পুকুর সম্পুর্ণরূপে শুকানো সম্ভব না হয় তবে সে ক্ষেত্রে জৈব পেস্টিসাইড হিসেবে রোটেনন, মহুয়ার খৈল, চা বীজ খৈল, তামাকের গুঁড়া প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়। জৈব পেস্টিসাইড ব্যবহারে সুবিধাসমূহ নিচে দেয়া হলো-

  • পোনা মজুদের পূর্বে জৈব পেস্টিসাইড ব্যবহারের ফলে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ এবং ক্ষতিকর পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
  •  জৈব পেস্টিসাইড মাছের ফুলকার কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ফলে মাছ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় এবং মাছের দেহে কোনো বিষ ক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না। এভাবে মৃত মাছ খেলে কোনো ক্ষতির আশঙ্খা থাকে না
  • এদের বিষক্রিয়া অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে এরা জৈব সার হিসেবে কাজ করে। ফলে চিংড়ি চাষির আর্থিক সাশ্রয় হয়।

জৈব পেস্টিসাইড প্রয়োগ মাত্রা: পুকুরের পানির আয়তন ও গভীরতা জেনে সুবিধামতো পেস্টিসাইড নির্বাচন করে নিম্নবর্ণিত ছক অনুযায়ী পরিমাণ জেনে নির্দেশিত উপায়ে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। পানিতে জৈব পেস্টিসাইড ব্যবহারের মাত্রা-

পেস্টিসাইডকেজি/হে/মিকেজি/একর/মিগ্রাম/শতক/মিগ্রাম/ঘনমিটারগ্রাম/ঘনফুট
১. রোটেনন২০-৩০৮-১২৮-১২২-৩০.০৭
২. চা বীজ খৈল৪০১৬১৬০০.১১
৩. তামাকের গুঁড়া২০০-৪০০৮০-১৬০৮০০-১৬০০২০-৪০০.৮৫

ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ মাত্রা: মাছ ও অন্যান্য প্রাণী দমনের জন্য ৫ নিযুতাংশ হারে ক্লোরিন প্রয়োগ করা যায়। ব্লিচিং পাউডারে ৩০-৬০% ক্লোরিন থাকে। নিচে বর্ণিত ছক অনুযায়ী ব্লিচিং পাউডার পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।

পানির আয়তন (শতাংশ)পানির গড় গভীরতাপাউডারের পরিমাণ
৩০ সেমি (১ ফুট)৯০০ গ্রাম
১০৩০ সেমি (১ ফুট)৯ কেজি
৩৩১.৫ মিটার (৫ ফুট)১৫০ কেজি
৫০১.৫ মিটার (৫ ফুট)২৫০ কেজি

 

Content added By

পুকুরে পেস্টিসাইড ব্যবহারের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে চুন প্রয়োগ করা। মাটির উর্বরতা শক্তির ওপর চিংড়ির ফলন নির্ভরশীল বিধায় মাটির শোধন ও উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য পুকুরে চুন প্রয়োগকরা দরকার। মাটিতে চুন প্রয়োগের উপকারিতা নিম্নরূপ:

(১) চুন মাটির অম্লত্বকে কমিয়ে আনে ফলে মাটির ক্ষারীয় গুণ বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ মাটির পিএইচ বৃদ্ধি পায়।

(২) চুন বাফার দ্রবণ হিসেবে মাটি বা পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে

(৩) চুন প্রয়োগের ফলে মাটিতে বিদ্যমান ক্ষতিকর জীবসহ পরজীবী, ব্যাকটেরিয়া এবং তাদের মাধ্যমিক পোষক মারা যায়।

(৪) মাটিতে চুন প্রয়োগকরলে মাটি থেকে পুষ্টিকারক উপাদানের নিঃসরণ ত্বরান্বিত হয়। ফলে মাটির গঠন প্রকৃতি উন্নত হয় এবং উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।

(৫) চুন প্রয়োগের ফলে মাটির ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের বিষাক্ততা দূরীভূত হয় এবং পানিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে জলজ পরিবেশ থেকে জটিল যৌগসমূহ গ্রহণ উপযোগী হয়ে ওঠে।

(৬) চুন প্রয়োগে পানির ঘোলাত্ব দূর হয়। ফলে পুকুরে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

(৭) পুকুরে চিংড়ির চাষের অন্তরায় তন্তুময় শেওলা চুন প্রয়োগ করে দমন করা যায়।

(৮) চুন থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম ও কার্বনেট চিংড়ির খোলস তৈরির একটি অন্যতম উপাদান। ক্যালসিয়ামের অভাবে অনেক সময় চিংড়ির খোলস বদল হয় না বা বদল বিলম্বিত হয়। এমনকি খোলস বদল হলেও তা শক্ত হতে দেরি হয়। ফলে চিংড়ির দেহ দীর্ঘক্ষণ নরম থাকে। এর ফলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়। চুনের ক্যালসিয়াম চিংড়ির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

(৯) চুন পানি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে কার্বন-ডাই- অক্সাইড সরবরাহ করতে পারে।

(১০) চুনের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম পুকুরে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের চুন পাওয়া যায়। এর সবগুলোই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। আমাদের দেশের স্থানীয় বাজারে যেসব চুন পাওয়া যায় সেগুলো হলো- পাথুরে চুন, কলি চুন, পাড়ো চুন, ডলামোইট ও জিপসাম। পচা কাদাযুক্ত পুকুরে ডলোমাইট জাতীয় চুন ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। কারণ পচা কাদাযুক্ত পুকুরে এই চুনের কার্যকারিতা সবেচেয়ে বেশি। তবে এই চুন আমাদের দেশের স্থানীয় বাজারে এখনও সহজ প্রাপ্য নয়।

চুন প্রয়োগের মাত্রা: মাটির পিএইচ এর ওপর নির্ভর করে চুন প্রয়োপেরমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মাটির পিএইচ এর মান ৭.০ এর বেশি হলে সেখানে চুন প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই। এরূপ মাটি চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে মাছ চাষের সাধারণ মাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মাত্রায় চুন প্রয়োগ করা উচিত। এর ফলে জলীয় পরিবেশ সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত হয় এবং মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা ফিরে আসে। যেসব পুকুরের তলদেশে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি সেখানে বেশি পরিমাণে চুন প্রয়োগ করা দরকার।

চিংড়ি চাষ কালে পানির পিএইচ ৭.৫ এর নিচে নেমে গেলে অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিএইচ এর তারতম্য ০.৫ এর বেশি হলে পানিতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট (ডলোমাইট) জাতীয় চুন প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের পানির পিএইচ ৮.৫ এর বেশি হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে এবং পরিবর্তনের পরপরই চুন প্রয়োগ করতে হবে। মূল কথা প্রতিবার পুকুরের পানি পরিবর্তন অথবা অতিবৃষ্টির পরপরই পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

Content added By

উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও মাছের খাদ্য তৈরিতে সহায়তা করার জন্য পুকুরে সার প্রয়োগ করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য থেকে মাছ তাদের আমিষ চাহিদার ৪০-৭০% পূরণ করতে পারে। কার্প জাতীয় মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য হচ্ছে প্লাংকটন। প্লাংকটন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, পুকুরের তলার কীট প্রভৃতি মাছের প্রিয় খাদ্য। এসকল প্লাংকটন ও জীবের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য পুকুরে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকারক উপাদান সরবরাহ করতে হয়।

পুষ্টিকারক উপাদানসমূহের মধ্যে কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব পদার্থ বাজারে সরাসরি পাওয়া যায় না। তবে বাণিজ্যিক ভাবে দু'ধরণের যৌগাকারে সার হিসেবে পাওয়া যায়। যেমন- জৈব সার ও অজৈব বা রাসায়নিক সার। জীবদেহ হতে প্রাপ্ত সারকে জৈব সার বলে। যেমন- গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্টা প্রভৃতি। সুনির্দিষ্ট উপাদান সমৃদ্ধ যেসব সার কৃত্রিম উপায়ে কারখানাতে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে তাদেরকে অজৈব বা রাসায়নিক সার বলে। যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ ইত্যাদি। পুকুরে সার প্রয়োগের মাত্রা নিম্ন লিখিত বিষয়ের ওপর নির্ভরশীলঃ

  • মাটির অবস্থা,
  • পানির মধ্যকার শেওলার পুষ্টি চাহিদা,
  • পরিবেশের ভারসাম্য,
  • সারের গুণাগুণ, এবং
  • মাছের ঘনত্ব।

সার প্রয়োগের উপকারীতা: পুকুরে সার প্রয়োগ করলে নিম্ন লিখিত উপকার পাওয়া যায়।

  • সার প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরের পানিতে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা হয়। এসব পুষ্টি উপাদানসমূহ মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করে,
  • পুকুরে নিয়মিত সার প্রয়োগ করলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়,
  •  সম্পূরক খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়,
  • জৈব সার বিশেষ করে গোবরে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে। পুকুরে ব্যবহার করলে এ আঁশ ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া জৈবসার রুই ও তেলাপিয়া মাছ সরাসরি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, এবং
  •  পরিশেষে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
Content added By
Please, contribute to add content into বিভিন্ন ধরণের সার.
Content

ক) কম্পোস্ট সার: মাটির গর্তে গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা প্রভৃতির সাথে কচুরিপানা, কলমিলতা, ঝাঝি জাতীয় উদ্ভিদ নানা ধরনের শেওলা রেখে দিলে পচন ক্রিয়ার ফলে যে মিশ্র সার তৈরি হয় তাকে কম্পাস্টে সার বলে। মাছ চাষে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার করা যায়। তবে একসাথে বেশি পরিমাণ কম্পোস্ট সার পুকুরে ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। কারণ এতে অক্সিজেন এর ঘাটতির আশঙ্কা থাকে।

খ) খৈলজাতীয় সার: সরিষার খৈল, বাদামের খৈল, তিসির খৈল, তিলের খৈল প্রভৃতি শস্যবীজের খৈল পুকুরে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে সাধারণত সরিষার খৈল জৈব সার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সরিষার খৈলে সাধারণত ৪.৭% নাইট্রোজেন, ২.৫% ফসফরাস ও ১.০% পটাসিয়াম থাকে।

Content added By

কলকারখানায় কৃত্রিম উপায়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে অজৈব বা রাসায়নিক সার বলে। যথা- ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ইত্যাদি। এই রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই পুকুরে নানা ধরনের উদ্ভিদ কণা বা ফাইটোপ্লাংকটন জন্মায় ও পুকুরের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

ক) নাইট্রোজেনজাতীয় সার: নাইট্রোজেনজাতীয় সার বাজারে ইউরিয়া হিসেবে পাওয়া যায়। এই সার অল্প মাত্রায় প্রয়োগ করলে পুকুরে নাইট্রোজেনের ঘাটতি দূর হয় ও পুকুরের উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি পায়। এবং পানিতে দ্রবীভূত হতে সময় কম লাগে।

খ) ফসফেট জাতীয় সার: ফসফরাসজাতীয় সার বাজারে সিঙ্গেল সুপার ফসফেট (এসএসপি), ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), রক ফসফেট প্রভৃতি হিসেবে পাওয়া যায়। এই সার অল্প মাত্রায় প্রয়োগ করলে পুকুরে ফসফেটের ঘাটতি দূর হয় ও পুকুরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এই সার দেখতে ছাই রঙের এবং পানিতে দ্রবীভূত হতে একটু সময় লাগে। এজন্য ফসফেট জাতীয় সার পানিতে গুলিয়ে তারপরে পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়।

গ) পটাশ জাতীয় সার পটাশ জাতীয় সার হিসেবে পটাসিয়াম অক্সাইড, পটাসিয়াম সালফেট, পটাসিয়াম নাইট্রেট প্রভৃতি বাজারে পাওয়া যায়। এসব সারের মধ্যে পটাসিয়াম অক্সাইড বা মিউরেট অব পটাশ (এমপি) সার পুকুর প্রস্তুতকালে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এই সার দেখতে দানাদার এবং লাল রঙের।

ঘ) অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান : কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান যেমন-জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, লোহা, বোরন, মলিবডেনাম, আয়োডিন প্রভৃতি মাটিতে খুব অল্প মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। এদের যে কোনো একটির অভাব দেখা দিলে মাটি তথা পুকুরের উর্বরতা শক্তি কমে যায়। পুকুরে উদ্ভিদকণা ও প্রাণিকণা উৎপাদনে এসব ট্রেস উপাদান এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

সার রোগের মাত্রাঃ স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনায় মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুর প্রতুতকালীন এবং মজুদ পরবর্তী প্রয়োগের মাত্রা নিয়ে উল্লেখ করা হল।

পুকুর প্রস্তুতকালীন সার প্রয়োগ মজুদ পরবর্তী সার প্রয়োগ 
সারের নামপরিমান পরিমান পরিমান
প্রতি শতাংশে শতাংশ/দিন শতাংশ/ সপ্তাহ 
কম্পোস্ট ১০ কেজি ২০০ গ্রাম ৭ কেজি 
ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম ৫ গ্রাম ২০০ গ্রাম 
টিএনপি ৭৫ গ্রাম ৩ গ্রাম ১০০ গ্রাম 

চিত্র ২.১৪: বিভিন্ন প্রকারের সার

সার প্রয়োগে সতর্কত

  • পুকুরে আগাছা থাকলে সারের কার্যকারীতা কমে যায়,
  • পুকুরে পানির স্থায়িত্ব কম হলেও সারের কার্যকারীতা কমে যাবে,
  • মেঘলা দিনে অথবা বৃষ্টির মধ্যে সারের ব্যবহার খুব কার্যকর নয়, ও 
  •  চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর সার প্রয়োগ করা উচিত।
Content added || updated By

সার দেওয়ার ৫-৭ দিন পরে পুকুরের পানি পরীক্ষা করতে হয়। যদি হালকা সবুজ কিংবা বাদামী সবুজ হয় তবে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাবার তৈরী হয়েছে এবং এখন মাছ ছাড়ার উপযোগী হয়েছে। পুকুরের প্রাকৃতিক খাবার বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করা যায়- (ক) সেকি ডিস্কের মাধ্যমে ও (খ) হাত দ্বারা পরীক্ষার মাধ্যমে।

সূর্যালোকিত ও বৃষ্টিমুক্ত দিনের বেলায় সকাল ১০-১২ টার মধ্যে পানির প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করতে হবে। হাত কনুই পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে হাতের তালু দেখুন, যদি তালু দেখা না যায় তবে বুঝতে হবে পানিতে খাবার আছে। আর যদি তালু দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে পানিতে পর্যাপ্ত খাবার নেই এবং খাবারের জন্য সার প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসের মাধ্যমে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা যায়। গ্লাসের মধ্যে পুকুরের পানি নিয়ে যদি ৮-১০ টা প্রাণিকণা দেখা যায় তবে বুঝা যাবে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাবার আছে। এর চেয়ে কম সংখ্যক দেখা দিলে বুঝতে হবে পানিতে প্রাকৃতিক খাবার কম আছে এবং সার প্রয়োগ করতে হবে।

Content added || updated By

লাভজনক চিংড়ি চাষের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুকুরে সুস্থ ও সবল পোনা মজুদ করা। সুতরাং পলদার ভাল উৎপাদন পেতে হলে পোনা মজুদের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সম্পাদন করা প্রয়াজেন। গলদা চিংড়ির পোনা মজুদের ক্ষেত্রে পোনা শনাক্তকরণ, পোনা সংগ্রহ ও পরিবহন পদ্ধতি, মজুদ হার নির্ধারণ ও মজুদ করার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।

Content added By

প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত গলদা চিংড়ির পোনা অন্যান্য চিংড়ির পোনা থেকে পৃথক করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। গলদা চিংড়ির রোস্টামের উপরের দিকে ১২-২৫টি এবং নিচের দিকে ৮-১৪ টি খাঁজ থাকে। মাথার ক্যারাপেস অঞ্চলের খোলসে ২-৫টি কালচে আড়াআড়ি দাগ থাকে। এছাড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে গলদা চিংড়ির পোনা চেনার আরেকটি উপায় হচ্ছে গলদা চিংড়ির রেণু স্রোতের বিপরীত দিকে সাঁতার কাটতে থাকে এবং কখনও কখনও চিৎ হয়ে সাঁতার কাটতে থাকে। এই রেণু পোনার পিঠে কালো দাগ থাকে। সুস্থ ও সবল পোনা চেনার উপায় হলো-

  • সুস্থ ও সবল পোস্ট লার্ভার রং সাধারণত হালকা বাদামি বা স্বচ্ছ হয়ে থাকে। তবে দুর্বল ও পীড়িত পোনার রং লালচে বা নীল বর্ণের হয়ে থাকে।
  • সুস্থ ও সবল পোনা সক্রিয়ভাবে সাঁতার কাটতে পারে। এসব পোনা পাত্রের ছায়াযুক্ত স্থান ও ট্যাপের পানির প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়। রোগাক্রান্ত পোনা পাত্রের মধ্যে সাধারণত সক্রিয় থাকে না এবং পাত্রের মাঝখানে জমাট বেঁধে থাকে।
  • একটি প্লাস্টিক গামলা বা অ্যালুমিনিয়াম পাত্রের পানিসহ পোনা রেখে হাত দিয়ে পানিতে ঘূর্ণন সৃষ্টি করলে যদি পোনা পাত্রের মাঝখানে জমা হয় তবে বুঝতে হবে পোনা দুর্বল।
  • পোনা রাখা পাত্রের পায়ে টোকা দিলে সবল পোনা খুব দ্রুত সরে পড়ে এবং অনেক সময় লাফ দিয়ে পাত্রের বাইরে পড়ে যায়।
  • সুস্থ ও সবল পোনা নিয়মিতভাবে খোলস পাল্টায় ফলে গাত্রবর্ণ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার দেখায়।
  • সবল পোনার পেটে খাদ্য দৃশ্যমান হয়।
  • দুর্বল পোনা নোংরা থাকে এবং মাঝে মধ্যে কালো দেখা যায়।
Content added By

প্রাকৃতিক উৎস বা হ্যাচারি থেকে সংগৃহীত পিএল সরাসরি পুকুরে মজুদ করা উচিত নয়। চিংড়ির পোনা সরাসরি উৎপাদন পুকুরে মজুদ করলে পোনার মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যায় এবং সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এজন্য নার্সারিতে গলদা চিংড়ির পোনা প্রতিপালন করে কিশোর চিংড়ি বা বড় পোনা পুকুরে মজুদ করলে চিংড়ির সন্তোষজনক উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়।
চিংড়ি পোনা সাধারণত পরিবেশের সামান্য তারতম্যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবহন জনিত পীড়নের ফলে চিংড়ি পোনা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শ্বাসকষ্টে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সব অসুস্থ দুর্বল পোনা সরাসরি মজুদ পুকুরে ছাড়া হলে সাধারণত অধিকাংশ পোনা মারা যায়। মজুদ পুকুরে চিংড়ির উৎপাদন নিশ্চিত করতে নার্সারিতে পোনা প্রতিপালনের উপকারিতা নিম্নরূপ-

  • নতুন পরিবেশের সাথে পোনা সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে,
  • পোনার মৃত্যুর হার কমানো যায়,
  • পরিবেশের তারতম্যের কারণে সৃষ্ট পীড়ন বা শ্বাসকষ্ট রোধ করা যায়,
  • অল্প সময়ে পোনাকে সবল ও বড় করা যায়,
  • ক্ষতিকর ও রাক্ষুসে প্রাণির আক্রমণ থেকে পোনাকে রক্ষা করা যায়, 
  • অন্যান্য ছোট প্রজাতির চিংড়ি থেকে গলদা চিংড়ির পোনা সহজেই বাছাই করা যায়,
  • পোনার বেঁচে থাকার হার সহজেই অনুমান করা যায় ও
  • মজুদ পুকুরের উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়।

নার্সারি পুকুর: খামারের মোট আয়তনের সাধারণত ১০-১৫% এলাকায় নার্সারি পুকুর করা উচিত। সাধারণত মজুদ পুকুরের মধ্যে বাঁধ দিয়ে অথবা ঘন জালের বেড়া দিয়ে ছোট আকারের নার্সারি পুকুর তৈরি করা যায়। নার্সারি পুকুর অপেক্ষাকৃত ছোট হলে ভালো হয়। নার্সারি পুকুরের আয়তন ২-৩ বিঘা হলে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। এঁটেল মাটি, এঁটেল দো-আঁশ কিংবা বেলে দো-আঁশ মাটি নার্সারি পুকুর নির্মাণের জন্য সবচেয়ে ভালো। অ্যাসিড সালফেট যুক্ত কিংবা বেলেযুক্ত মাটি নার্সারি পুকুর নির্মাণের জন্য উপযুক্ত নয়। পাড়ের উচ্চতা বন্যামুক্ত হতে হবে এবং পাড়ের ঢাল ২:১ অথবা ৩:১ এর মধ্যে রাখতে হবে। পুকুরের গভীরতা বর্ষাকালে ৯০-১০০ সেমি এবং শুকনা মৌসুমে ৭০-৮০ সেমি হলে ভালো হয়। পুকুরের তলদেশ সমতল হওয়া বাঞ্ছনীয়।

নার্সারি পুকুরের পানির গুণাবলিঃ পুকুর প্রস্তুতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চিংড়ির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। চিংড়ি সাধারণত প্রাকৃতিক পরিবেশে প্লাংকটন, ছোট পোকা-মাকড় ও পচা জৈব পদার্থ খেয়ে বড় হয়। এ সব অণুজীব ও ছোট প্রাণী পানিতে একটি বিশেষ পরিবেশে জন্মায়। এই উপযুক্ত পরিবেশের জন্য পানিতে নিম্নবর্ণিত গুণাবলি থাকা বিশেষভাবে প্রয়াজেন।

পানির গুণাগুণমাত্রা
তাপমাত্রা২৫-৩০ সেমি
অক্সিজেন৫.০-৮.৫ পিপিএম
পিএইচ৭.৫-৮.৫
পানির স্বচ্ছতা২৫-৩৫ সেমি

নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির নিয়মাবলি: পোনা মজুদের পূর্বে পুকুর প্রস্তুতির পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃ

  • সমস্ত জলজ আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
  • রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দমন করতে হবে। 
  • পুকুরের পুরাতন পানি নিষ্কাশন করে পুকুরের তলদেশ ৬-৭ দিন রোদে শুকাতে হবে।
  • পুকুরের পাড় ভালোভাবে মেরামত করতে হবে এবং পাড়ে কোনো গর্ত থাকলে তা ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে।
  • পুকুরের তলদেশে হালকা চাষ দিতে হবে।
  • চাষ দেওয়ার পর প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

পুকুরে চিংড়ির পোনার আবাসস্থলের উন্নয়ন করতে হবে। আবাসস্থল উন্নয়নের লক্ষ্যে পুকুরের তলায় বাঁশের কঞ্চি বা নারকেল গাছের ডাল কাত করে পুঁতে দিতে হবে। চিংড়ির পোনা ছোট অবস্থায় ডালপালার সাথে আকড়িয়ে থাকতে পছন্দ করে। তাছাড়া গাছের ডালপালা খাদ্য যোগাতে সহায়তা করে থাকে। সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর নির্ধারিত হারে পোনামজুদ করতে হবে। নার্সারি পুকুরে ৭০-৯০ সেমি পানি রাখতে হয়।

পোনা মজুদের হার: চিংড়ি খামারের মাটির উর্বরতা, পানির গুণাগুণ, সম্পূরক খাবার প্রয়োগ ও পানি ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে পুকুরে পোনামজুদের হার নির্ধারণ করা হয়। চাষ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে পোনা মজুদের হার নিচে বর্ণনা করা হলো-

চাষ পদ্ধতিপ্রতি শতাংশে পোনা মজুদের হার
প্রচলিত চাষ পদ্ধতি১০,০০০-৩০,০০০ টি
সম্প্রসারিত চাষ পদ্ধতি৪০,০০০ ৮০,০০০ টি
আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতি৯০,০০০-১,৫০,০০০ টি

নার্সারি পুকুরে খাবার সরবরাহ: প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি পোনা মজুদের প্রথম সপ্তাহে পুকুরে সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করা উচিত। কারণ এই সম্পূরক খাবার চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত সহায়ক। তবে কোনাক্রমেই পুকুরে যাতে অতিরিক্ত খাবার সরবরাহ করা না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত খাবারের পচন ক্রিয়ার ফলে পানি দূষিত হয়ে পড়ে এবং পীড়ন ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে পোনা অতি অল্প সময়ে মারা যায়। চাউলের কুঁড়া, গমের ভুষি, মাছের চূর্ণ, ছোট আকারের চিংড়ির শুটকি, ছোট প্রজাতির মাছ, জীবের রক্ত, সরিষার খৈল, সয়াবিনের খৈল, ভিটামিন ইত্যাদি একত্রে মিশিয়ে চিংড়ির সম্পূরক খাবার তৈরি করা যায়।

খাবার পিলেট, সেমাই অথবা মন্ড তৈরি করে পুকুরে প্রয়োগ করলে খাবারের অপচয় কম হয় এবং খাদ্যের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। ফিডিং ট্রে বা অন্য যে কোনো পাত্রের মাধ্যমে খাদ্য প্রয়োগ করলে খাদ্য প্রয়োগের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা সহজ হয়। চিংড়ি যদিও সর্বভুক প্রাণী তথাপি এরা প্রাণিজ আমিষ জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে। চিংড়ির খাদ্যে নিম্নবর্ণিত হারে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান থাকা আবশ্যক :

উপাদানের নামশতকরা পরিমাণ
আমিষ৩০-৪০ ভাগ
স্নেহ চর্বি৫-৭ ভাগ
শর্করা৩০-৩৫ ভাগ
ভিটামিন/মিনারেলস১-২ ভাগ।

খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ: ১ বিঘা বা ৩৩ শতাংশের একটি নার্সারি পুকুরে ৩৩,০০০-৩৫,০০০ পোনা (পিএল ১২-১৫) মজুদ করা যায়। পোনা মজুদের ১ম সপ্তাহে নিম্নবর্ণিত হারে সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করতে হবে।

লালনকালপ্রতিদিন
১ম সপ্তাহে৪০০ গ্রাম
২য় সপ্তাহে৮০০ গ্রাম
৩য় সপ্তাহে১০০০ গ্রাম
৪র্থ সপ্তাহে১৩০০ গ্রাম

এক মাসের পোনার নমুনা সংগ্রহ করে মোট ওজনের শতকারা ৪-৫ ভাগ হিসেবে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। মোট পোনার পরিমাণ বেঁচে থাকার হার (৭৫%) – ২৪,৭৫০ টি (প্রায়)

প্রতিটির গড় ওজন - ১.৭৫ গ্রাম (প্রায়)
মোট পোনার ওজন - ৪৫ কেজি (প্রায়)
পোনার মোট ওজনের- ৪-৫% হিসেবে প্রতিদিন
খাদ্যের প্রয়োজন - ২.২৫ কেজি

এভাবে সপ্তাহভিত্তিক খাবার সরবরাহের পরিমাণ নিম্নরূপঃ

লালনকালপ্রতিদিন
১ম সপ্তাহে৪০০ গ্রাম
২য় সপ্তাহে৮০০ গ্রাম
৩য় সপ্তাহে১০০০ গ্রাম
৪র্থ সপ্তাহে১৩০০ গ্রাম

এভাবে ১ বিঘার নার্সারি পুকুরে ৩৩-৩৫ হাজার পোনা ছেড়ে ৬০ দিন লালন করতে প্রায় ১৪০ কেজি সম্পূরক খাদ্যের প্রয়াজেন হয়। এই দুই মাস প্রতি পালনের পর পোনা বিক্রয় যোগ্য হয় অথবা মজুদ পুকুরে ছাড়ার উপযুক্ত হয়। নার্সারি পুকুরে পোনা প্রতিপালনের সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়ের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা একান্ত দরকার।

  • ক্ষতিকর ও রাক্ষুসে প্রাণির অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা,
  • পানির গভীরতা ঠিক রাখা,
  • নিয়মিতভাবে পানির গুণগতমান পরীক্ষা করা,
  • নিয়মতিভাবে পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা,
  • প্রয়োজনে পুকুরের পানি পরিবর্তন করা,
  • বিভিন্ন প্রাণী কর্তৃক পুকুরের পাড়ে সৃষ্ট গর্ত তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা,
  • গ্রীষ্মকালে পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করা ও
  • পোনা যাতে চুরি না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখা।
Content added By

বাংলাদেশে গলদা চিংড়ির পোনা সরবরাহের প্রধান উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক উৎস। প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণ করেই গলদা চিংড়ি পোনার চাহিদা বহুলাংশে পূরণ করা হয়। পোনা আহরণ স্থল থেকে পুকুরে মজুদ করা পর্যন্ত প্রায় ৫০% পোনা মারা যায় বলে অনুমান করা হয়। চিংড়ি পোনার পরিবহন পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চললে পোনা এ মৃত্যুর হার বহুলাংশে কমানো সম্ভব। অনেক পোনা এক সাথে হ্যাচারি কিংবা প্রাকৃতিক উৎস থেকে দূর-দূরান্তে পরিবহনের জন্য পোনার সুষ্ঠু প্যাকিং একান্ত প্রয়োজন। সুষ্ঠুভাবে প্যাকিং করে পানির তাপমাত্রা ও দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই পোনার প্যাকিং সঠিকভাবে করা না হলে অধিকাংশ পোনা পরিবহন কালে মারা যেতে পারে। বাংলাদেশে সাধারণত দুইভাবে পোনা পরিবহন করা যায়-

Content added By

এই পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে পোনা পরিবহন করা হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা পোনা পরিবহন: আমাদের দেশে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে পলিথিন ব্যাগে চিংড়ির পিএল এবং সনাতন পদ্ধতিতে ড্রাম বা অ্যালুমিনিয়ামের হাড়িতে গলদা চিংড়ির পোনা পরিবহন করা হয়ে থাকে। তবে সুযোগ থাকলে আধুনিক পদ্ধতিতে চারা পোনা ও জুভেনাইল পরিবহন অধিক নিরাপদ। সনাতন পদ্ধতিতে পরিবহনকালে ড্রাম বা অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ির পায়ে ধাক্কা লেগে পোনার দেহে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে এবং পাত্রের পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে, এমন কি ব্যাপক হারে পোনা মারা যেতে পারে। পক্ষান্তরে অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহনকালে অক্সিজেনের অভাব হয় না ও পোনার শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না।
অক্সিজেনসহ পলিথিন ব্যাগে লিটার প্রতি ৫০০টি হারে ছোট পোনা পরিবহন করা যায়। একটি ৬০ × ৪০ সে. মিটার ব্যাগের ৬-৮ লিটার পানিতে অক্সিজেন দিয়ে ৩,০০০-৪,০০০ টি ১০-১৫ দিন বয়সের পোনা ১২ ঘণ্টার জন্য পরিবহন করা যায়।
পোনা পরিবহন ঘনত্ব: পরিবহন ঘনত্ব মূলত নির্ভর করে পিএল, জুভেনাইল ও চারা পোনার আকার, ওজন এবং পরিবহন দূরত্বের উপর। সাধারণভাবে ৩৬ ইঞ্চি × ২০ ইঞ্চি আকারের পলিথিন ব্যাগ পিএল বা পোনা পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। চিংড়ির পোনার আকার ও দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে পরিবহন ঘনত্ব নিম্নরূপ-

পোনার আকার/ধরনপরিবহন ঘনত্ব/লিটারপরিবহন সময় (ঘণ্টা)পরিবহন পদ্ধতি
পোস্ট লার্ভা-২০৫০০-১০০০ ১২-১৬ অক্সিজেনসহপলি ব্যাগ
পোস্ট লার্ভা-৩০-৩৫৩৫০-৫০০ঐ 
জুভেনাইল (৫-৭ সেমি)১০-২০৩-৬ ঐ 

 

Content added By

এই পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়া অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে পোনা পরিবহন করা হয়।

Content added By

গলদা চিংড়ির পোনা অত্যন্ত কোমল, স্পর্শকাতর এবং খুব সহজেই পীড়িত হয়ে পড়ে বিধায় প্যাকিং-এর সময় এদেরকে খুব যত্ন সহকারে নড়াচড়া করতে হয়। নিচে পোনার প্যাকিং পদ্ধতিটি বর্ণনা করা হলো।

  • পোনা পরিবহনের কমপক্ষে ২ ঘণ্টা পূর্বে পোনাকে খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে।
  • এরপর পোনা একই লবণাক্ততা ও তাপমাত্রা বিশিষ্ট পরিষ্কার পানিতে রাখতে হবে।
  • একটি পলিথিন ব্যাগ একই আকারের আরেকটি পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ব্যাগের নিচের দুই কোনা রাবারের ব্যান্ড দিয়ে মুড়িয়ে বেঁধে দিতে হবে।
  • পলিথিন ব্যাগের এক তৃতীয়াংশ ৮-১০ লিটার একই পরিবেশের পানি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এরপর পরিবহনের দূরত্ব ও পোনার আকার অনুযায়ী ১,০০০-৫,০০০ পোনা গণনা করে ব্যাগের মধ্যে রাখতে হবে। ব্যাগের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ অক্সিজেন দ্বারা পূর্ণ করে ব্যাগের মুখ ভালোভাবে মুড়িয়ে রাবার ব্যান্ড দিয়ে শক্ত করে বাঁধতে হবে। 
  • পরিবহনকালে ব্যাগের পানির তাপমাত্রা ২২° সে. এর কাছাকাছি রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি ১০ লিটার পানিতে প্রতি ঘণ্টার পরিবহন দূরত্বের জন্য ১০০ গ্রাম বরফ পলিথিন ব্যাগে করে পরিবহন পাত্রের ভিতর রাখতে হবে।
Content added By

প্যাকিংসহ অথবা প্যাকিং ছাড়া পোনা পরিবহন করা যেতে পারে। কম দূরত্বে অথবা সময় কম লাগলে মুখ খুলে পাত্রে সীমিত পরিমাণ পোনা মাথায় বা গাড়িতে করে খামার পর্যন্ত পরিবহন করা যায়। পানিতে বেশি অক্সিজেন দ্রবীভূত হওয়ার জন্য পরিবহন কালে পাত্রটি ঝাঁকুনি দেয়া ভালো। গাড়ির চলার পথেও ঝাঁকুনিতে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ হয়।

পানির ট্যাংকে পোনা পরিবহন: এই পদ্ধতিতে একসাথে অনেক বেশি পোনা সহজে পরিবহন করা সম্ভব। পোনা পরিবহনের জন্য ফাইবার গ্লাস মেটারিয়ালের সাহায্যে হাইড্রোট্যাংক নির্মাণ করা যায়। ব্যাটারি চালিত এ্যারেটর বা প্রেসার ট্যাংক থেকে হাইড্রোট্যাংকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।

Content added By

দূর-দূরান্ত থেকে পরিবহনকৃত পোনা সরাসরি খামারে মজুদ করা উচিত নয়। পরিবহনকৃত পোনা সরাসরি মজুদ করলে পোনার ব্যাপক মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা থাকে। ফলে চিংড়ির উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে। এজন্য খামারে পোনা মজুদ করার পূর্বে পরিবহনকৃত পোনা পুকুরের পানির লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে আস্তে আস্তে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। পরিবহনের পর স্টাইরোফোম বক্স থেকে পলিথিন ব্যাগে করে নিয়ে পুকুরের পানিতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ভাসিয়ে রাখতে হবে যাতে পলিথিন ব্যাগের পানির তাপমাত্রা এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রার সমতা আসে। পলিথিন ব্যাগ ৩০ মিনিট পানিতে ভাসিয়ে রাখার পর ব্যাগের মুখ খুলে থার্মোমিটার দিয়ে ব্যাগের পানির ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা মেপে নিতে হবে।

Content added By

পুকুরে ছাড়ার আগে এদেরকে নতুন পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত করে নিলে মৃত্যুহার অনেকাংশে রোধ করা যায়। পরিবহন পাত্রের পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রায় সমতা আনয়নই হচ্ছে অভ্যস্তকরণ। নতুন পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত করে পুকুরে পোনা বা পিএল বা জুভেনাইল ছাড়ার ধারাবাহিক কাজগুলো নিম্নরূপ-

  • পরিবহন পাত্র অন্তত ১৫-২০ মিনিট পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে।
  • ব্যাগ বা পাত্রের মুখ খোলার পর আস্তে আস্তে পাত্র ও পুকুরের পানি অদল বদল করে পানির তাপমাত্রায় সমতায় আনতে হবে
  • হাত দিয়ে মাঝে মাঝে পরিবহন পাত্র এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রার ব্যবধান পরীক্ষা করতে হবে।
  • লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পানির তাপমাত্রার ব্যবধান ১-২ ডিগ্রি সে. এর বেশি না হয় ।
  • উভয় পানির তাপমাত্রা সমান হলে পাত্রের মুখ কাত করে ধরে বাইরে থেকে ভেতরের দিকে স্রোতের ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় দিনের যে কোনো সময়ে পুকুরে মাছের পোনা ছাড়া যায়। তবে সকাল অথবা বিকালে পোনা ছাড়াই উত্তম।


চিত্র ২.১৫: গলদা পোনা খাপ খাওয়ানো ও অবমুক্তকরণ

Content added By

পোনা মজুদের পর পুকুরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা চিংড়ি উৎপাদনের পূর্বশর্ত। পোনা সজ্জুদ পরবর্তী সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছাড়া চিংড়ির কাংক্ষিত উৎপাদন সম্ভব নয়। পোনা মজুদের পর গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা বিষয়গুলো হচ্ছে 

Content added By

পোনা ছাড়ার ৬-৮ ঘন্টা পর পাড়ের কাছাকাছি পোনার চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দুর্বল পোনা পাড়ের কাছাকাছি এলোমেলোভাবে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। তাছাড়া পোনা মারা গেছে কিনা তা দেখতে হবে। মৃত পোনা পুকুর পাড়ের খুব কাছাকাছি ভাসতে থাকে। মৃত পোনার পরিমাণ নির্ধারণ করে সেই পরিমাণ গোনা পুনরায় মজুদ করতে হবে।

Content added By

পানির গুণাগুণ সঠিক মাত্রায় বজায় রাখা চিংড়ি চাষের সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। সাধারণত পানি ব্যবস্থাপনা তথা পানির গুণাগুণ বজায় রাখার প্রধান কারণ হচ্ছে চিংড়ির বেঁচে থাকার হার বাড়ানো এবং দৈহিক বৃদ্ধি। পুকুরের পানির ভালো অবস্থা বলতে সাধারণত পানিতে পরিমিত অক্সিজেন ও অতিরিক্ত বর্জ্যের (Metabolistic) পুঞ্জীভূত হওয়াকে বুঝায়। পানির গুণগতমান বজায় রাখার উত্তম পদ্ধতি হলো নিয়মিতভাবে পুকুরের পানি পরিবর্তন করা। এর ফলে পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ বজায় থাকে, বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত শেওলা ইত্যাদি দূরীভূত হয় এবং নতুন পানির সাথে নতুন পুষ্টিকর পদার্থসমূহ পুকুরে সঞ্চালিত হয়।

চিংড়ি পোনা মজুদের পর এক সপ্তাহ কোন পানি পরিবর্তন করার প্রয়াজেন হয় না। তবে প্রথম মাসে অমাবস্যা, পূর্ণিমার সময় একবার বা দুইবার পানি পরিবর্তন করা ভাল। চিংড়ি চাষের পুরো সময়ে পোনা মজুদের ঘনত্ব, পানির গুণগতমান, লবণাক্ততা, প্লাংকটনের ঘনত্ব, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ, রোগের প্রাদুর্ভাব, খাদ্য প্রয়োগের পদ্ধতি ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পানি পরিবর্তনের মোট পরিমাণ নির্ধারণ করে। সাধারণত প্রত্যেকবার পানি পরিবর্তন করা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ মাসে ৩-৫ দিন অন্তর পানি পরিবর্তন করা ভাল। অনেক সময় প্রয়োজন অনুসারে প্রতিদিন ১০% পানি পরিবর্তন করা হয়। নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে প্রতিদিনই ৩০% পানি Flow through পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা হয়।

প্রচলিত চাষ পদ্ধতিতে ভাটার সময় প্রয়োজনে পুকুরের অর্ধেক পানি বের করে দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকানো হয়। সাধারণত জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করে মাত্র ৫-৬ দিনে ৫০-১০০% পানি পরিবর্তন করা সম্ভব। আধা নিবিড় বা নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে পানি পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন রকমের পাম্প ব্যবহার করা হয়। এবং জোয়ারের পানির ওপর কম নির্ভর করা হয়। আধানিবিড় চাষ পদ্ধতিতে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকভাবে পানি পরিবর্তন করা হয়, তবে ভাটার সময় প্রয়োজনে পাম্প ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে পানি দুইভাবে পরিবর্তন করা যায়। প্রথম পদ্ধতিতে প্রয়োজন মতো কিছুটা পানি বের করে দেয়া হয় এবং পরে সেই পরিমাণ পানি ঢুকানো হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে একদিক দিয়ে পানি প্রবেশ এবং অপর দিক দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হয়। এভাবে পানি পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে Flow through system বলা হয়।

অধিক বৃষ্টিপাতের সময় পানি পরিবর্তন না করে পানি নিষ্কাশন গেটের মুখে ঘনজাল স্থাপন করে পুকুরের উপরের স্তরের পানি বের করে দেয়া উত্তম। এতে লবণাক্ততা হ্রাসের ঝুঁকি কমে যায়।

Content added By

পানির গুণাগুণ রক্ষার জন্য প্রধানত তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পানির লবণাক্ততা, অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট, নাইট্রেট, খরতা ও ক্ষারত্ব, পিএইচ, হাইড্রোজেন সালফাইড প্রভৃতির ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়। গলদা চাষের পুকুরের পানির সহনীয় গুণাবলীগুলো নিম্নরূপ:

গুনাগুণপরিমিত মাত্রা
তাপমাত্রা২৬-৩০ ডিগ্রি সে. 
দ্রবীভূত অক্সিজেন৪ পিপিএম এর বেশি
পিএইচ৭.৫-৮.৫
লবণাক্ততা০-৪০ পিপিটি
সম্পূর্ণ হার্ডনেস১০০ পিপিএম এর কম
লৌহ১.০ পিপিএম এর কম
হাইড্রোজেন সালফাইড০.০৩ পিপিএম এর কম
অনায়োনিত অ্যামোনিয়া০.১ পিপিএম এর কম
নাইট্রাইট (NO2)০.১ পিপিএম এর কম
নাইট্রেট (NO3)২০ পিপিএম এর কম

 

Content added By

সম্প্রসারিত পদ্ধতির চাষাবাদে সার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান দেয়া হয়। পুকুরে সার প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য ফাইটোপ্লাংকটন উৎপাদিত হয়। সেকি ডিস্কের দৃশ্যমানতা ৩০-৩৫ সেমি এর বেশি হলেই সার প্রয়োগ করা উচিত। পুকুরের পানিতে সেকি ডিস্কের দৃশ্যমানতার ভিত্তিতে সার প্রয়োগের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত সম্প্রসারিত পদ্ধতির চাষাবাদে শতাংশ প্রতি ৮০-১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০-৩০ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই মাত্রায় সার প্রয়োগের ৫-৬ দিনের মধ্যে সেকি ডিস্কের দৃশ্যমানতা না কমলে উপরাক্তে মাত্রার অর্ধেক পরিমাণ সার আবার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত এই পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর অন্তর অর্থাৎ প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় পানি পরিবর্তনের পর সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আধানিবিড় ও নিবিড় পদ্ধতির চাষে প্রথম ২ মাস প্রতিবার পানি পরিবর্তনের পর অল্প মাত্রায় ইউরিয়া ও টিএসপি সার প্রয়োগ করা ভাল।

Content added By

চিংড়ির জীবনধারণ, দৈহিক বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য খাদ্যের বিশেষ প্রয়োজন। উন্নত ব্যাপক পদ্ধতির চাষাবাদে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কিছু সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আধানিবিড় ও নিবিড় পদ্ধতির চাষাবাদ মূলত সম্পূরক খাদ্য বা পিলেটের উপর নির্ভরশীল। চিংড়ি খামারে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত মাত্রায় খাদ্য প্রয়াগে করলে অব্যবহৃত খাদ্য পচে পানি দূষিত করে ফেলে। এতে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। চিংড়ির গড় ওজন ও তাপমাত্রার উপর চিংড়ির খাদ্যের পরিমাণ নির্ভর করে। চিংড়ির ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের হার কমানো উচিত। চিংড়ির গড় ওজনের ভিত্তিতে খাদ্য প্রয়োগের হার নিচে দেয়া হলো:

 চিংড়ির গড় ওজন  (গ্রাম)দৈনিক খাদ্যের হার ( মোট দৈনিক ওজনের % )
নার্সারি পুকুর / পালন পুকুর০.২-০.১১৫.১৩ 
১.০-২.০১৩.১১ 
২.০-৩.০১১-৯ 
৩.০-৩.৫৯-৭ 
৫.০-১৩.০৭-৫ 
১৩.০-২০.০ ৫-৩ 
২০.০-৩০.০৩.২-৫ 

খাদ্য দাণির মাধ্যমে পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করলে খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় এবং সঠিকভাবে খাদ্যের মাত্রা নির্ণয় করা যায়। গলদা চিংড়ি দিন-রাত সব সময় খাদ্য খেয়ে থাকে তবে সন্ধ্যা ও রাতে চিংড়ি সবচেয়ে বেশি খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। সূর্যালোকের প্রখরতা বাড়ার সাথে সাথে চিংড়ির খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা আপেক্ষিকভাবে কমে যায়।

Content added By

চিংড়ির স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি, খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য নিয়মিতভাবে নমুনা সংগ্রহ করা দরকার। সাধারণত খেপলা জালের সাহায্যে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা সংগ্রহের পর চিংড়ির স্বাস্থ্য ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখার দরকার যে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হয়েছে কিনা। যদি রোগাক্রান্ত হয় তবে জরুরি ভিত্তিতে নিরাময়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নমুনা সংগ্রহের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে চিংড়ির সংখ্যা ও গড় ওজন হিসাব করে বের করা। কারণ চিংড়ির গড় ওজনের ভিত্তিতেই খামারে খাদ্য প্রয়াগ করা হয়।

Content added By

সাধারণত অস্বাস্থ্যকর জলীয় পরিবেশ, মজুদ ঘনত্ব বেশি, খাদ্যাভাব ইত্যাদি কারণে চিংড়ির শরীরে নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়। এজন্য চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। চিংড়ির ঘনত্ব বেশি হলে খাদ্যাভাবও প্রকট হয়। তাছাড়া অধিক ঘনত্বের কারণে জলীয় পরিবেশও দূষিত হয়ে পড়ে। চিংড়ির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো- পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, নির্ধারিত মজুদ ঘনত্ব বজায় রাখা, অনাকাঙ্খিত প্রাণির অনুপ্রবেশ রোধ, খামারে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ও আহরণ সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে পুকুরে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার না করাই উত্তম। তবে একান্তভাবেই যদি রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করতে হয়, সেক্ষেত্রে এর ব্যবহারের মাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখতে হবে।

Content added By

সঠিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পানি সরবরাহ ও নির্গমন ব্যবস্থা যাতে ঠিকমত থাকে সেজন্য পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন গেট নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে। গেটের পার্শ্বে বা তলা দিয়ে পানি চলাচল করলে তা সাথে সাথে বন্ধ করতে হবে। অবাঞ্ছিত প্রাণী নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত নেট নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে এবং গেটের মুখে স্থাপিত পাটা ঠিকমত আছে কিনা তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে। বাঁধে কোন প্রকার ত্রুটি থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করতে হবে। খামারের অবকাঠামোসমূহ সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে।

Content added By

সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর অধিক এবং লাভজনক উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ভালো ব্যবস্থাপনার পরও চাষকালীন সময়ে মাছ ও চিংড়ি চাষের পুকুরে বেশ কিছু কারিগরি সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে ব্যাপক হারে চিংড়ি উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থাকে। নিচে মাছ ও চিংড়ি চাষের পুকুরের এরূপ কিছু সাধারণ কারিগরি সমস্যা সম্পর্কে আলাচেনা করা হলো- 

ক) রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছের প্রবেশ: পুকুর শুকানো অথবা বিষ প্রয়োগ করার পরও অনেক সময় পুকুর বা ঘেরে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ থেকে যেতে পারে। এছাড়াও বর্ষাকালে পানির সাথে বা বাচ্চাদের দ্বারা যে কোন সময় বাইরে থেকে শোল, টাকি, কৈ, শিং, মাগুর, চান্দা, তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছ পুকুরে প্রবেশ করতে পারে। এতে ব্যাপকভাবে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন কমে যেতে পারে।

প্রতিকার: পাখি, জাল, বৃষ্টির পানির স্রোত বা মানুষের মাধ্যমে এরা প্রবেশ করে। তাই এ সমস্ত উৎস থেকে সতর্ক থাকতে হবে। নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উল্লিখিত সমস্যার প্রতিকার করা যেতে পারে। পুকুরে বা ঘেরে বাইরের পানি ঢুকতে দেয়ার সময় ছাঁকনির মাধ্যমে প্রবেশ করানো উচিত। প্রয়োজনে পুকুরের চারদিকে ৩০-৪০ সেমি উঁচু মশারী বা জালের বেড়া দেয়া।

খ) পানির উপর ঘন সবুজ স্তর: অতিরিক্ত শেওলার জন্য পানির রং ঘন সবুজ হয়ে যায়। ফলে রাতের বেলায় পানিতে অক্সিজেন কমে যায় এবং দিনের বেলায় পিএইচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া শেওলা মরার পর পুকুরের তলায় জমা হয় এবং পচে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মাছ ও চিংড়ি পানির উপরিতলে খাবি খায় এবং কখনও কখনও ব্যাপক হারে মারা যায়।

প্রতিকার: তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুকুরে বা ঘেরে অগভীর নলকূপের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে ভাল হয়। সে সাথে পুকুরে বা ঘেরে খাদ্য ও সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়াও কিছু সিলভার কার্পের পোনা ছেড়ে জৈবিকভাবে অতিরিক্ত উদ্ভিদকণার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

গ) পানির উপর লাল স্তর: অতিরিক্ত লৌহ অথবা লাল শেওলার জন্যে পানির উপর লালস্তর পড়তে পারে। ফলে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না। এজন্যে পুকুরে খাদ্য ও অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়।

প্রতিকার: ধানের খড় বা কলাপাতা পেঁচিয়ে দড়ি বানিয়ে পানির উপর থেকে টেনে তুলে ফেলা যায়।

ঘ) অ্যামোনিয়া পুঞ্জীভবন: উচ্চতর পিএইচ এ অ্যামোনিয়া চিংড়ির জন্য অত্যন্ত মারাত্মক। পুকুরে ফাইটোপ্লাংকটন বেড়ে গেলে পানির পিএইচ দ্রুত বেড়ে যায়। ফলে ব্যাপক সংখ্যায় মাছ ও চিংড়ি মারা যায়। অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে রক্ত পরিবহনতন্ত্র দ্রুত আক্রান্ত হয়।

প্রতিকার: মজুদ ঘনত্ব কমিয়ে সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখা, সম্ভব হলে ৩০-৫০% পানি বদল ও পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করা।

ঙ) খাবি খাওয়া: সাধারণত ভোর বেলার দিকে মাছ ও চিংড়ি পানির উপর ভেসে উঠে খাবি খেতে থাকে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণে এটা ঘটে। অক্সিজেন স্বল্পতা যদি খুব বেশি ও দীর্ঘমেয়াদি হয় তবে মাছ ও চিংড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায়। 

প্রতিকার: প্রাথমিক অবস্থায় সাময়িকভাবে সার ও খাদ্য প্রয়াগে বন্ধ রেখে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানিতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিপদজনক অবস্থায় পুকুরে পরিষ্কার নতুন পানি সরবরাহ বা স্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে একই পুকুরের পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

চ) রাক্ষুসে প্রাণির উপদ্রব: সাপ, ব্যাঙ, কাকড়া, উদ মাছ ও চিংড়ি খেয়ে উৎপাদন অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।

ছ) অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ: প্রায় সব চাষিই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ করে। ফলে এসব খাদ্যের একটা বড় অংশ তলায় জমা হয়ে পানির পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে। এতে মাছ ও চিংড়ি সহজেই রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

প্রতিকার: খাদ্য প্রয়োগের পূর্বে খাদ্যের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। মাঝে মাঝে খাদ্য প্রয়োগ স্থানের মাটিতে জমে থাকা অতিরিক্ত কাদা অপসারণ করতে হবে।

জ) তলার কালো কাদা: অতিরিক্ত খাদ্য ও জৈব পদার্থ পুকুরের তলায় জমা হয়ে তলার মাটি কালো দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। এর ফলে বিষাক্ত গ্যাস তলায় জমা হয়ে মাছ ও চিংড়ির মড়ক দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও চিংড়ির দেহ কালো হয়ে বাজার মূল্য হ্রাস করে।

প্রতিকার: চিংড়ি ছাড়ার পূর্বে তলার অতিরিক্ত কালো কাদা তুলে ফেলতে হবে। চাষকালীন সময়ে চিংড়ির মড়ক দেখা দিলে দ্রুত পানি বদল, মজুদ ঘনত্ব হ্রাস এবং সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।

ঞ) স্বজাতিভোজিতা: স্বভাবগত কারণে চিংড়ি স্বজাতিভুক প্রাণী। যখন এদের খাদ্যাভাব দেখা দেয় তখন এরা ছোট ও দুর্বল আকৃতির চিংড়ি গুলিকে ধরে খায়।

প্রতিকার: মজুদকালীন সময়ে পুকুরে সমান আকৃতির পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত সার ও সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করে পুকুরে খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে।

ট) বৃষ্টির পর ভেসে উঠা: পিএইচ কমে যাওয়ার ফলে এটা ঘটে থাকে। পিএইচ কমে গেলে ক্ষতিকর হাইড্রোজেন সালফাইডের বিষক্রিয়া বেড়ে যায়।

প্রতিকার: বৃষ্টির পরপরই পানির পিএইচ পরিমাপ করতে হবে। প্রতিবার ভারী বৃষ্টির পর শতাংশ প্রতি ৭৫- ৮০ গ্রাম হারে পোড়া চুন/ডলোমাইট প্রয়োগ করতে হবে।

ঠ) অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় রাতে পাড়ে চলে আসা: অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথিতে রাতের বেলায় চিংড়ি পাড়ের ওপর চলে আসতে পারে। ফলে শিয়াল বা অন্য কোনো নিশাচর রাক্ষুসে প্রাণী দ্বারা চিংড়ি আক্রান্ত হতে পারে।

প্রতিকার: অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় অতিরিক্ত সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা করা। তবে পুকুরের পানির পরিবেশ ভালো থাকলে এ অবস্থা দেখা যায় না। পাড়ে মশারীর জাল দিয়ে বেড়া দেয়া যেতে পারে।

Content added || updated By

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সমন্বিত চিংড়ি চাষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমন্বিত চিংড়ি চাষ এদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মিঠা পানির গলদা চিংড়ি বাংলাদেশের প্রায় সব বন্ধ জলাশয়েই রুইজাতীয় মাছের সাথে চাষ করা সম্ভব। কার্প ও গলদার মিশ্র চাষ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সকল মিঠা পানির পুকুরেই করা হচ্ছে। গলদা চিংড়ির পোনার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে বাঁধ দেয়া নিচু ধানক্ষেত, অগভীর পুকুর, বাঁওড়ের অগভীর অংশ, রাস্তা ও রেললাইনের পাশের খাল, সেচ খাল, ইত্যাদি মিঠাপানির জলাশয়ে গলদা চিংড়ি কার্প জাতীয় মাছের সাথে চাষ করা যায়।
মিশ্র চাষের সুবিধা :

  • পুকুরের সকল স্তরের খাদ্যের সদ্বব্যহার হয়।
  • চিংড়ির দাম বেশি বিধায় আনুপাতিক লাভ বেশি।
  •  অগভীর পুকুর এবং মৌসুমী পুকুরেও চিংড়ি লাভজনকভাবে চাষ করা যায়।
  • প্রয়োজন অনুসারে ধানক্ষেতে খাল কেটে এক মৌসুমে মাছ ও চিংড়ি এবং অন্য মৌসুমে ধান চাষ করা যায়। 
  • ৪-৫ মাসের মধ্যেই চিংড়ি বাজারজাত করা যায়।

সাধারণত দুই ধরনের পুকুরে কার্প ও গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষ করা যায়। যথা- বাৎসরিক পুকুর ও ঘের। তবে মৌসুমী পুকুরেও মিশ্র চাষ করা সম্ভব।

Content added By

সাধারণত যে কোনো ধরনের বাৎসরিক পুকুর অথবা কম গভীর পুকুরেই গলদা চিংড়ি ও কার্প মাছের মিশ্র চাষ করা যায়। মিশ্র চাষের জন্য পুকুর নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।

(১) পুকুরের আয়তন ২০-২৫ শতাংশ এবং বর্ষাকালে পানির গভীরতা ১.৫-২.০ মিটারের মধ্যে থাকা উচিত।

(২) পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুর্যালোকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পুকুরের পাড়ে যেন বড় গাছপালা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

(৩) পুকুর পাড়ের ঢাল ১ : ২ এবং তলদেশ সমান হতে হবে। পুকুরের তলায় ২০ সেমি এর বেশি পচা কাদা থাকা মিশ্র চাষের জন্য ভালো নয়।

(৪) পুকুরের পাড় মূল ভূমি থেকে কমপক্ষে ৩০ সেমি উঁচু থাকা ভালো। এর ফলে বর্ষাকালে বৃষ্টি ধোয়া পানি পুকুরে প্রবেশ করতে পারবে না ।

(৫) মিশ্র চাষের জন্য দো-আঁশ মাটির পুকুর সবচেয়ে ভালো। এঁটেল মাটির পুকুরের পানি ঘোলা থাকে। ফলে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা অত্যন্ত কম বিধায় চিংড়ি বা মিশ্ৰ চাষের জন্য বেলে মাটির পুকুর ভালো নয়।

Content added By

ঘের বলতে এমন এক খন্ড জমিকে বুঝায় যার ভেতর খাল কেটে চারদিকে বাঁধ দিয়ে বর্ষাকালে চিংড়ি ও কার্পের মিশ্র চাষ এবং শীতকালে ধান চাষ করা হয়। মিশ্র চাষের এসব খামারকে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘের বলা হয়। ভাল ঘেরের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-

(১) ৫০-৬০ শতাংশ আয়তনের আয়তকার ঘের ব্যবস্থাপনার জন্য ভালো,

(২) ঘের ৪টি অংশে বিভক্ত, যথা-পাড়, বকচর, খাল ও সমতল ভূমি বা ধানচাষ এলাকা। পুকুরের মাটি আয়তনের ২৫-৩০% পাড়, ৫% বকচর, ২৫-৩০% খাল এবং ৩৫-৪৫% সমতল ভূমি বা ধান চাষ এলাকা থাকা উচিত। দো-আঁশ বা এঁটেল মাটি ঘেরের জন্য সবচেয়ে ভালো,

(৩) বন্যামুক্ত ও সূর্যালোকিত স্থান ঘেরের জন্য উত্তম,

(৪) এসব ঘেরে সাধারণত জুলাই-আগস্ট মাসে চিংড়ি ও কার্পের পোনা মজুদ করা হয়ে থাকে এবং অক্টোবর/নভেম্বর মাস থেকে চিংড়ি ও মাছ আহরণ করা হয়। চাষকালে ঘেরের ভেতর মাটি ১.৫ মিটার পানি থাকা বিশেষ প্রয়োজন তবে ধানক্ষেতে ০.৫ মিটারের বেশি পানি থাকা উচিত নয়,

(৫) নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে ধানক্ষেত থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর ঘেরে ধান চাষ করা যায়। ঘেরের একই জমি থেকে চিংড়ি, মাছ ও ধান এবং পাড়ে শাকসবজি উৎপাদন করা যায়।

মিশ্র চাষে প্রজাতি নির্বাচনঃ গলদা ও কার্পের মিশ্র চাষে সব মাছই লাভজনক নয়। মিশ্র চাষে কার্পের প্রজাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ :

  • পুকুরে বসবাসযাগ্যে এবং প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহারে সক্ষম হতে হবে,
  •  মিশ্র চাষের জন্য নির্বাচিত প্রজাতিগুলো দ্রুত বর্ধনশীল হতে হবে,
  • খাদ্য ও বাসস্থলের ব্যাপারে যেন প্রজাতিগুলো একে অপরের প্রতিযাগেী না হয়,
  • অরাক্ষুসে স্বভাবের এবং রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হতে হবে ও
  •  বাজারে চাহিদা থাকতে হবে এবং বাজার মূল্য ভালো হতে হবে।

এসব বিষয় বিবেচনায় মিশ্র চাষে চাষযোগ্য কার্প প্রজাতিগুলো হচ্ছে দেশি কার্প ও কাতলা, রুই, মৃগেল, কালিবাউশ/বাটা বিদেশি কার্প ও সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, বিগহেড কার্প, কার্পিও ও সরপুঁটি। মিশ্র চাষের উপযাগেী বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস নিচে বর্ণনা করা হলো:

মাছ প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্যখাদ্যাভ্যাস
কাতলা প্লাংকটনউপর ও মধ্যস্তর
সিলভার কার্প ফাইটোপ্লাংকটনউপরন্তর
গ্লাস কার্প প্রধাণত জলজ উদ্ভিদউপরন্তর ও সর্বস্তর
বিগ্রেড জুপ্লাংকটনউপরন্তর ও সর্বস্তর
রুই জুপ্লাংকটন, পচা জৈব পদার্থউপরন্তর ও সর্বস্তর
মৃগেল জুপ্লাংকটণ, পচা জৈব পদার্থ, তলদেশের কীট মধ্য ও নিমন্তর
কালিবাউশজুপ্লাংকটন, পচা জৈব পদার্থ, তলদেশের কীট নিমন্তর
মিরর কার্প/কার্পিওজুপ্লাংকটন, পচা জৈব পদার্থনিমন্তর
সরপুঁটিজুপ্লাংকটন ও ফাইটোপ্লাংকটনমধ্য ও নিমন্তর

সাধারণত কার্প জাতীয় মাছের বৃদ্ধি ২৮° - ৩১°সে. তাপমাত্রায় ভালো হয়। তবে ১১° সে. তাপমাত্রার নিচে মাছ কম খায় এবং ৯° সে. তাপমাত্রার নিচে মাছ খাদ্য গ্রহণ একেবারেই বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের তাপমাত্রার উপযুক্ত সহনশীল মাত্রা নিম্নরূপ-

প্রজাতিতাপমাত্রার সহনশীল মাত্রা (°সে.)
কাতলা, রুই, মৃগেল২০° - ৩৮°সে
সিলভার কার্প, গ্রাসকাপ২৫° - ৩৫°সে.
কার্পিও২০° - ৩০° সে

মিশ্র চাষে পানির গুণাগুণ: মাছ ও চিংড়ির বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধির জন্য পানির গুণাগুণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে পানির গুরুত্বপূর্ণ গুণাগুণ গুলোর উত্তম মাত্রা নিম্নরূপ

পানির গুণাগুণমাত্ৰা
পিএইচ৭-৯
তাপমাত্রা২৮ - ৩১°সে.
খরতা৪০-২০০ পিপিএম
ক্যালসিয়াম১০-১২ পিপিএম
লৌহ<০.০২ পিপিএম
ঘোলাত্বশূন্য
অক্সিজেন৫-৭ পিপিএম
ফসফরাস০.১৫ পিপিএম
মোট দ্রবীভূত পদার্থ৩০০ পিপিএম
Content added By

মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে চাষ পদ্ধতি ৩ ধরনের হতে পারে; যথা- ব্যাপক পদ্ধতির চাষাবাদ, আধানিবিড় পদ্ধতির চাষাবাদ ও নিবিড় পদ্ধতির চাষাবাদ। গলদা চিংড়ি-কার্প ব্যবস্থাপনাকে প্রধানত ৩টি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে; যথা- মজুদপূর্ব ব্যবস্থাপনা, মজুদকালীন ব্যবস্থাপনা ও মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা।

Content added By

পোনা মজুদের আগেই পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সাধারণভাবে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণের কাজটি কয়েকভাবে করা যায়। বাদামি সবুজ পানি মিশ্র চাষের জন্য ভালো তবে ঘোলা, ঘন সবুজ তামাটে লাল বা স্বচ্ছ পানি মিশ্র চাষের জন্য ভালো নয়। পানির রং ঠিক আছে কিনা তা নিজের চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

পুকুরে পোনা মজুদের ১-২ দিন আগে পানির বিষক্রিয়া পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পানিতে কোন প্রকার বিষক্রিয়া আছে কিনা তা জানার জন্য পুকুরে একটি হাপা টাঙ্গিয়ে তার মধ্যে ১০-১৫ টি পোনা ছেড়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি এই সময়ের মধ্যে পোনা মারা না যায়, তবে বুঝতে হবে পানি বিষক্রিয়া মুক্ত এবং এভাবে বালতি বা হাড়িতেও পানির বিষক্রিয়া পরীক্ষা করা যায়।

খোলস পরিবর্তন করে চিংড়ি বড় হয়। খোলস পরিবর্তনের সময় চিংড়ি দুর্বল থাকে বলে এ সময় চিংড়ির আশ্রয়স্থলের প্রয়োজন হয়। পুকুরের তলায় কিছু উদ্ভিদ থাকলে সেগুলো চিংড়ির আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এসব আশ্রয়স্থল চিংড়ি ও মাছকে চোরের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে থাকে। পুকুরের তলায় উদ্ভিদ না থাকলে আশ্রয়স্থল হিসেবে পুকুরে তাল, নারিকেল বা খেজুর গাছের শুকনো পাতা, বাঁশ, গাছের ডালপালা আশ্রয়স্থলের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চিংড়ির আশ্রয়স্থলের উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের টুকরা, ইটের টুকরা, ভাঙা কলস ইত্যাদিও ব্যবহার করা যায়।

Content added By

পোনা মজুদ ব্যবস্থাপনা মূলত ৬টি পর্যায়ে বিভক্ত। এই কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে পোনার মৃত্যুহার বহুলাংশে কমানো সম্ভব। এর ফলে সন্তোষজনক উৎপাদন নিশ্চিত হয়। পোনা মজুদ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কাজগুলো নিচে বর্ণনা করা হল-

ক) প্রজাতি ও পরিমাণ নির্ধারণ: নিম্নোক্ত বিষয়গুলির ভিত্তিতে পোনার মজুদ ঘনত্ব ও প্রজাতি নির্ধারণ করা হয়।
পোনার প্রাপ্যতা: এলাকাগত প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে কার্পের পোনার জাত নির্বাচন করা উচিত। একইভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে এবং যেখানে গলদা চিংড়ির হ্যাচারি আছে সেখানে গলদার পোনা পাওয়া যায় অর্থাৎ পোনার প্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করেই মিশ্র চাষের জন্য প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে।

পোনার আকার ও ঘনত্ব:

সারণি: মাছ ও গলদা চিংড়ির পোনা মজুদ ঘনত্ব (শতাংশ প্রতি)

খ) পোনা শনাক্তকরণঃ চাষযাগ্যে নতুন প্রজাতি হিসেবে গলদা চিংড়ির পোনা শনাক্তকরণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই গলদা চিংড়ির পোনার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। গলদা চিংড়ির রোস্টামের উপরের দিকে ১২-২৫টি এবং নিচের দিকে ৮-১৪ টি খাঁজ থাকে। মাথার ক্যারাপেস অঞ্চলের খোলসে ২-৫টি কালচে আড়াআড়ি দাগ থাকে। এছাড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে গলদা চিংড়ির পোনা চেনার আরেকটি উপায় হচ্ছে গলদা চিংড়ির রেণু স্রোতের বিপরীত দিকে সাঁতার কাটতে থাকে এবং কখনও কখনও চিৎ হয়ে সাঁতার কাটতে থাকে। এই রেণু পোনার পিঠে কালো দাগ বা ফোঁটা থাকে।

গ) পোনা শোধন: রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পুকুরে মজুদ করার আগে পোনাগুলো জীবাণুমুক্ত করা দরকার। একটি পাত্রের মধ্যে ১০ লিটার পানিতে ১ চা চামচ পরিমাণ পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা ২০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে। প্যাকিং করার আগে উক্ত দ্রবণে পোনাগুলোকে ১ মিনিট গোসল করাতে হবে। পোনাকে গোসল করানোর আগে পাত্রটির মধ্যে একটি ঘন জাল রেখে তার ওপর পোনা ছাড়তে হয়। উক্ত দ্রবণে প্রতিবার ৩০০-৫০০ টি করে পোনা প্রায় ৫ বার গোসল করানো যায়।

ঘ) পোনা ছাড়ার সময়: মৃদু ঠান্ডা আবহাওয়ায় অর্থাৎ সকাল বা বিকেল বেলায় পুকুরে পোনা মজুদ করা ভালো। রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরে, মেঘলা দিনে বা ভ্যাপসা আবহাওয়ায় পোনা ছাড়া উচিত নয়। চিংড়ির পোনা সাধারণত সন্ধ্যার পর ছাড়া সবচেয়ে নিরাপদ।

Content added By

পুকুরে পোনা মজুদের পর বেশ কিছু কাজ করতে হয় যা মিশ্র চাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পোনা মজুদের পর এই সমস্ত কাজকে ৬টি ধাপে ভাগ করা যায়। যথা-

ক) পোনার বেঁচে থাকা পর্যবেক্ষণ: পরিবহন পীড়নের কারণে দুর্বল বা রোগাক্রান্ত হয়ে পোনা মারা যেতে পারে। পোনা মারা গেলে পুকুরের তলদেশে পড়ে যায় আবার অনেক সময় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মড়া পোনা পানির ওপরে ভেসে উঠে। এসব মৃত পোনা ঢেউ এর ধাক্কায় পাড়ের কাছাকাছি চলে আসে। পুকুরে পোনা মজুদের ৬-৮ ঘণ্টা পর পাড়ের কাছাকাছি পোনার চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এভাবে মৃত পোনার পরিমাণ বের করে সমসংখ্যক পোনা মজুদের ব্যবস্থা করতে হবে।

খ) সার প্রয়োগ:
সারণিঃ মজুদ পরবর্তী দৈনিক সার প্রয়োগের মাত্রা (শতাংশে) প্রয়োগের

সারমাত্রা
কম্পোষ্ট৩০০-৪০০ গ্রাম
ইউরিয়া৪-৫ গ্রাম
টিএসপি৩ গ্রাম

গ) সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ: খাদ্য দানির মাধ্যমে খাদ্য প্রয়োগ করে খাদ্যের অপচয় কমানো সম্ভব। কার্পের খাদ্য দেয়ার সময় খাদ্যদানি পানির উপরিভাগের ৩০ সেমি নিচে এবং গলদার খাদ্য দেয়ার সময় তা পুকুরের তলায় ৩০ সেমি ওপরে স্থাপন করা ভালো।
গ্রাস কার্প ও সরপুঁটির খাদ্য বাঁশের তৈরি আয়তকার ভাসমান ফ্রেমের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। ভাসমান ফ্রেমটি পুকুরের পাড় থেকে ১-২ মিটার দূরত্বে পুকুরের অভ্যন্তরে স্থাপন করতে হয়। পাতা জাতীয় উদ্ভিদ টুকরো করে কেটে ফ্রেমের মধ্যে সরবরাহ করতে হয়। এই ফ্রেমের মধ্যে সরবরাহকৃত খাদ্য শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবার খাদ্য দিতে হয়। মিশ্র চাষে কার্পের খাদ্য দিনের বেলায় সকাল ১০-১১ টার মধ্যে এবং চিংড়ির খাদ্য সন্ধ্যা ও রাতে প্রয়োগ করতে হয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পুকুরের নির্দিষ্ট জায়গায় খাদ্য সরবরাহ করা উচিত।

ঘ) মাছ ও চিংড়ির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ: প্রজাতিভেদে সাধারণত মাছের গড় দৈনিক বৃদ্ধির হার ২-৫ গ্রাম এবং গলদা চিংড়ির বৃদ্ধি ০.৫-১%। মাছ ও চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করা ভালো। মোট মজুদকৃত মাছ ও চিংড়ির ৮০% বেঁচে থাকার হার ধরে তাকে নমুনার জন্য সংগৃহীত মাছ ও চিংড়ির গড় ওজন দিয়ে গুণ করে মোট পড় ওজন বের করতে হবে। এই গড় ওজনের ভিত্তিতে খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়।

ঙ) আহরণ: একই সময় একই আকারের মাছ ও চিংড়ির পোনা মজুদ করলেও এদের বৃদ্ধি একই রকম হয় না। পোনা মজুদের ৩-৪ মাসের মধ্যে কিছু মাছ ও চিংড়ি অন্যান্য গুলির চেয়ে বড় হয়ে যায়। যেমন- চিংড়ির পোনা মজুদের ৩-৫ মাসের মধ্যে কিছু চিংড়ির ওজন ৮০-১০০ গ্রামে পৌঁছে যায়। আবার ৪-৬ মাসের মধ্যে কিছু মাছের ওজন ৫০০ গ্রামের উপরে পৌঁছে যেতে পারে। এজন্য একসাথে সব মাছ ও চিংড়ি না ধরে বড় আকারের মাছ ও চিংড়িগুলো ধরা লাভজনক। এর ফলে অপেক্ষাকৃত ছোট মাছ ও চিংড়ি পরবর্তীতে দ্রুত বাড়ার সুযোগ পায়। মিশ্র চাষের ফসল দুইভাবে আহরণ করা যায়, যথা- (১) আংশিক আহরণ, ও (২) সম্পূর্ণ আহরণ।

চ) বাজারজাতকরণ: চিংড়ি আহরণের পরও চিংড়ি বেশ কিছু সময় বেঁচে থাকে। চিংড়ি আহরণের পর বাজারজাত করতে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে চৌবাচ্চার পানিতে এদেরকে কয়েকদিন রাখা যায়। এতে চিংড়ির ক্ষতির কোনো আশঙ্কা থাকে না। তবে আহরণের পরপরই এদের বাজারজাত করা উত্তম। চিংড়ির গুনগতমান বজায় রাখা এবং ভালো বাজার দর পাওয়ার জন্য স্বল্প পরিমাণে চিংড়ি আহরণ করে মাথাসহ চিংড়ি পরিবহন করতে হবে। চিংড়ি ধরার পরপরই এদের ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে এবং টিউবওয়েলের পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে বরফজাত করতে হবে। 

Content added By

Promotion