এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। চাষ ব্যবস্থা, খামারে পোনা মজুদের হার ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। সমগ্র বিশ্বে চিংড়ি চাষ পদ্ধতিকে প্ৰধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: 

(১) সনাতন চাষ পদ্ধতি

(২) আধানিবিড় চাষ পদ্ধতি ও 

(৩) নিবিড় চাষ পদ্ধতি।

 

(ক) সনাতন চাষ পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে অন্য স্থানে যেমন- লবণ বা ধানের সাথে পর্যায়ক্রমে চিংড়ি চাষ করা হয় । চিংড়ি চাষের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে এটি সবচেয়ে পুরাতন এবং কম ঝুঁকিপুর্ণ । এই চাষ পদ্ধতিতে সবচেয়ে কম পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত উপায়ে চিংড়ি চাষ করা হয় না বা খামার নির্মাণ করা হয় না। খামারের সুনির্দিষ্ট কোনো আকার নেই এবং এর তলদেশ অসমতল এবং পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। খামারের পানি ও খাদ্য সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই চাষ চলাকালে খামারে কোনো বাড়তি খাবার প্রয়োগ করা হয় না। এ পদ্ধতিতে খামারের মাটি ও পানির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য চুন বা সার প্রয়োগ করা হয় না এবং পানি ব্যবস্থাপনারও কোনো সুব্যবস্থা থাকে না।

সনাতন চাষ পদ্ধতিতে খামারে চিংড়ির সাথে অন্যান্য মাছও একত্রে চাষ করা হয়। চাষের জন্য জমির চার পাশে ৩-৪ ফুট করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। মাঘী পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানি ঢুকিয়ে খামার পানিতে পূর্ণ করা হয়। জোয়ারের এই পানির সাথে গলদা সহ অন্যান্য চিংড়ি ও মাছের পোনা খামারে প্রবেশ করে। এর সাথে উপকূলীয় নদী থেকে সংগৃহীত পোনা মজুদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে সাধারণত প্রতি বর্গমিটারে ১-১.৫টি হারে চিংড়ির মজুদ করা হয় এবং হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি থেকে ২৫০ কেজি চিংড়ি উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট চিংড়ি খামারে প্রায় ৮৫-৯০ ভাগ এই চাষ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।

(খ) স্বল্প উন্নত চাষ পদ্ধতি: এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ, অধিক লাভজনক, কম প্রযুক্তি নির্ভরশীল এবং মধ্যম বিনোয়োগ সম্পন্ন চিংড়ি চাষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মাটি ও পানির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য চুন ও সার প্রয়োগ করে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত জলজ প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাধারণত খামারে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এই চাষ পদ্ধতির খামারের আয়তন মাঝারি, আয়তকার এবং খামারের তলদেশে সমতল ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থকে। এই জাতীয় খামারে প্রতি বর্গমিটারে ৩-৫টি হারে পোনা মজুদ করে হেক্টর প্রতি ৪০০-৫০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব।

পানির লবণাক্ততা ও পোনার প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে একই জমিতে দুটি ফসল উৎপাদন করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫-২০% জমিতে এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত জলজ প্রাণী দমনের জন্য জোয়ারের পানি খামারে ঢুকানোর সময় সূক্ষ্ম নেটের সাহায্যে পানি ছেঁকে ঢুকানো হয়। এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ কম প্রযুক্তি নির্ভরশীল হওয়ায় এটা বাংলাদেশের জন্য অধিক উপযোগী।

(গ) আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে সর্তকতার সাথে চিংড়ি চাষ করতে হয়। এই পদ্ধতিতে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয় এবং অধিক দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হয়। এই চাষ ব্যবস্থাপনার পুকুর সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং চিংড়ি পোনার উপযুক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য পরিমিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করা হয়। পাম্প মেশিনের সাহায্যে পানি মজুদ ও শোধন করে খামারে পানি সরবরাহ করা হয় এবং খামারের পানিতে হালকা স্রোত সৃষ্টি করা ও পুকুরের তলদেশ পরিষ্কার রাখার জন্য প্যাডেল হইল ও এয়ার ইনজেক্টর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা হয়।

খামারে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত ক্ষতিকর জলজ প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নিয়ন্ত্রিতভাবে পানি ঢুকানো হয় এবং অনেক সময় মহুয়া বীজের খৈল ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে চাষ ব্যবস্থাপনায় খামারের আয়তন ২ হেক্টরের কম হওয়া উচিত এবং সাধারণত প্রতি বর্গমিটারে ৭-১৫টি হারে চিংড়ি পোনা মজুদ করা হয়। আধানিবিড় চাষ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি ৩-৫ টন চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। পানির গুনাগুণ যেমন-লবণাক্ততা, তাপমাত্রা, ঘোলাত্ব, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রেখে এই চাষ পদ্ধতিতে কাঙ্খিত পর্যায়ে চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব।

(ঘ) নিবিড় চাষ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল এবং নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হয় । নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ

  • সাধারণত ০.২৫-১.০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট আয়তকার পুকুর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • পুকুরে পানি প্রবেশ ও নিষ্কাশনের জন্য ইনলেট ও আউটলেট গেইট ব্যবহার করা হয় এবং এজন্য পানি সরবরাহ খাল ও পানি নিষ্কাশন খাল থাকে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহের সুবিধার্থে পাইপ লাইন থাকে।
  •  পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য পেডেল হুইল এবং পুকুরের তলদেশ পরিষ্কারের জন্য এয়ার ইনজেক্টর ব্যবহার করা হয়।
  • প্রতি বর্গমিটারে ২০-২৫ টি চিংড়ি মজুদ করা হয়।
  •  সম্পূরক খাদ্যের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। নিবিড় চাষ পদ্ধাতিতে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ১০-২০ টন চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের প্রয়োজনীয় পোনার শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ পোনা প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। ফলে নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পোনা সরবরাহ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
Content added By