On This Page
এসএসসি(ভোকেশনাল) - রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

রিলে এক ধরনের স্টার্টিং সুইচ বা ডিভাইস। যে ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসের সাহায্যে মোটরের স্টার্ট কয়েলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটানো যায় তাকে রিলে বলে। এর সাহায্যে সহজে মোটরের স্টার্টিং টর্ক সৃষ্টি হয়। মোটর চালু হয়ে প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ পতি প্রাপ্ত হবার পর রিলে স্টার্টিং-এ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। স্প্লিট ফেজ, স্টার্ট (Start) ও রান (Run) ক্যাপাসিটর বিশিষ্ট সিঙ্গেল ফেজ মোটরকে স্টার্ট করতে রিলের প্রয়োজন।

রিলের কাজ 

সিঙ্গেল ফেজ মোটরের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এটিকে সব ক্ষেত্রে শুধু মেইন বা রানিং কয়েল দিয়ে চালু করা যায় না। তাই একে চালু করার জন্যে সাহায্যকারী ব্যবস্থা বা স্টার্টিং কয়েলের দরকার হয়। মোটরের কয়েলে দ্রুত ও ব্যাপক ক্ষতি হয় তাই এই স্টার্টিং কয়েলকে নিরাপদে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রিশের দরকার হয়। মোটর চালু করার সময় রিলে প্রধানত যে কাজগুলো করে তা হল -

১) কারেন্ট কয়েল রিলে: স্টার্টিং কয়েলে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে তা বন্ধ করে; 

২) পটেনশিয়্যাল রিলে: স্টার্টিং ক্যাপাসিটরের লাইন অফ করে; 

৩) পিটিসি রিলে: কারেন্ট কমিয়ে স্টার্টিং কয়েলকে রক্ষা করে; 

৪) সেন্টিফিউগ্যাল সুইচ: মোটর চালু হয়ে প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ গতি প্রাপ্ত হওয়ার পর মোটরের স্টার্টিং কয়েলে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়; 

৫) হট ওয়্যার রিলে: স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তামূলক সুইচ হিসেবে ওভার লোড প্রটেক্টরের মতো কাজ করে । 

৬) টাইম ডিলে রিলে: কোন কোন সময় টাইম ডিলে করে মোটরকে পুনরায় চালু করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

 

রিলের প্রকারভেদ 

বিভিন্ন প্রকার মোটরের বিভিন্ন রকমের স্টার্টিং ব্যবস্থা রয়েছে। এ স্টার্টিং ব্যবস্থার মধ্যে রিলেই প্ৰধান । বিভিন্ন রকমের রিলেও ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে কাজ করে। বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে রিলে সাত প্রকার । যথা-

ক. কারেন্ট কয়েল রিলে (Current Coil Relay) 

খ. হট ওয়্যার বা বাইমেটালিক রিলে (Hot Wire or Bimetallic Relay) 

গ. পটেনশিয়াল রিলে (Potential Relay) 

ঘ. থার্মিস্টর বা পিটিসি রিলে (Thermistor or PTC Relay) 

ঙ. সলিড টেস্ট ইলেট্রনিক রিলে (Solid State Electronic Relay ) 

চ. ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রিলে (Electromagnetic Relay) 

ছ. লক-আউট রিলে ( Lock Out Relay)

 

বিভিন্ন প্রকার রিলের বর্ণনা 

ক) কারেন্ট কয়েল রিলে (Current Coil Relay) 

এই রিলে বিদ্যুৎ প্রবাহের মাধ্যমে পরিচালিত হয় । এতে একটা ম্যাগনেটিক কয়েল থাকে । সার্কিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে রিলের এই কয়েল হয়ে মোটরের রানিং ওয়াইন্ডিং-এ বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য উক্ত কয়েলে চুম্বকের সৃষ্টি হয় । ফলে সলিনয়েড লিভার উপরে উঠে স্টার্ট পয়েন্ট সংযোগ দেয়াতে মোটরের স্টার্টিং ওয়াইন্ডিং-এ বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটে। মোটর প্রায় ৭৫% গতি প্রাপ্ত হলে ব্যাক ইএমএফ বা বিপরীত ভোল্টেজ তৈরি হওয়াতে রানিং ওয়াইন্ডিং-এ বিদ্যুৎ কমে যায় এবং কম চুম্বকত্বের সৃষ্টি হয়। ফলে লিভার স্টার্ট পয়েন্ট হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্টার্ট ওয়াইন্ডিং-এর বিদ্যুৎ প্রবাহ অফ করে দেয়। রানিং ওয়াইন্ডিং সর্বদা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়াতে মোটরটি চলতে থাকে।

 

খ) হট ওয়্যার বা বাইমেটালিক রিলে (Hot Wire or Bimetallic Relay) 

এই রিলে বিদ্যুৎ প্রবাহজনিত তাপ দিয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে । সার্কিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে মোটরের উভয় ওয়াইন্ডিং-এ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এবং মোটর চালু হয় । মোটরের স্টার্টিং কয়েলে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে স্টার্টিং বাইমেটালিক পাত বাঁকা হয়ে স্টার্টিং কন্ট্যাক্ট পয়েন্ট বিচ্ছিন্ন করে দেয়। রানিং কয়েলের মাধ্যমে মোটর চলতে থাকে । রিলের রানিং পয়েন্টের সাথে লিভারের সাহায্যে হিটিং এলিমেন্ট যুক্ত থাকে । রানিং কয়েলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে হিটিং এলিমেন্ট (বাইমেটাল পাত) বাঁকা হয়ে সরবরাহ বন্ধ করে মোটরকে রক্ষা করে। অর্থাৎ এটি ওভার লোড প্রটেক্টরের কাজও করে। তাই এ প্রকার রিলের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ওভার লোড প্রটেক্টর ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না ।

 

গ) পটেনশিয়াল রিলে (Potential Relay) 

এই রিলে চৌম্বক শক্তির সাহায্যে কাজ করে । রিলে কন্ট্রাক্ট পয়েন্টদ্বয় সাধারণ অবস্থায় লাগানো (অন করা ) থাকে। বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে একই সঙ্গে কন্ট্রাক্টদ্বয়ের মাধ্যমে স্টার্টিং ও রানিং ওয়াইন্ডিং বিদ্যুতায়িত হয় এবং মোটর চলতে থাকে । এর স্টার্টিং পয়েন্টের সাথে একটা ম্যাগনেটিক কয়েল থাকে। মোটর চালু হবার পরই কয়েলে চৌম্বকত্বের সৃষ্টি হয়। ফলে এ চুম্বক শক্তি কষ্ট্যাক্ট পয়েন্টের লিভারকে টেনে স্টার্টিং ক্যাপাসিটরের লাইনকে অফ করে দেয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হলে কয়েলের চুম্বক শক্তি বিলোপ পায় । ফলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ১, ২ ৪, ও ৬ নম্বরের টার্মিনাল থাকে । মোটর স্টার্টের জন্য এদের ১, ২ ও ৫ চিহ্নিত টামিনাল তিনটিতে সংযোগ দেয়া হয় । বাকি ৪ নং টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন লাইনে সংযোগ দেয়া হয় । তাই ৩, ৪ ৬ নং টার্মিনাল গুলো জাংশন বা কানেক্টর পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে । এই রিলের প্রধান অংশগুলোর নাম হল- ১ । মুভিং কন্টাক্ট, ২। মুভিং ব্লেড, ৩ । কন্ট্রাক্ট স্ক্রু, ৪। আর্মেচার লিটার, ৫। স্থির কন্টাক্ট, ৬। স্থির ব্লেড, ৭। আর্মেচার, ৮ । কোর, ৯ । স্প্রিং ।

 

ঘ) থার্মিস্টর বা পিটিসি রিলে (Thermistor or PTC Relay) 

এই রিলকে পজিটিভ টেম্পারেচার কো-ইফিসিয়েন্ট (P.T.C Positive Temperature = Coefficient) রিলে বলে । এ রিলের স্টার্টিংয়ের সাথে একটা থার্মিস্টর থাকে । এ থার্মিস্টর ঠান্ডা অবস্থায় সুপরিবাহী হিসাবে স্টার্টিং ওয়াইন্ডিং এ সহজে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে দেয়। মোটর স্টার্ট হবার পর কিছুক্ষণের মধ্যে এটি গরম হয়ে অর্ধপরিবাহিতে পরিনত হয়। সরবরাহ পথে রোধ সৃষ্টি হওয়ায় স্টার্টিং ওয়াইন্ডিং এ বিদ্যুৎ প্রবাহ কমে যায় ৷ বর্তমানে পিটিসি একটি বহুল ব্যবহৃত রিলে। এর প্রধান অংশ হলো- ১। কন্ট্রাক্ট পয়েন্ট, ২ । বডি ও ৩। ষ্টোন বা পাথর

 

ঙ) সলিড টেস্ট ইলেকট্রনিক রিলে (Solid State Electronic Relay)

হারমেটিক কম্প্রেসর মোটর চালু করার জন্য প্রচলিত রিলের পরিবর্তে সলিড স্টেট ট্রানজিস্টর, ডায়াড, সিলিকন, রেক্টিফায়ার ডায়াক, ট্রায়াক ব্যবহার করা হয়। হারমেটিক মোটর চালু হবার মুহূর্তে এবং পূর্ণ গতি অর্জনের ঠিক আগে ইলেকট্রনিক রিলে স্টার্টিং ওয়াইন্ডিং এ বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়। ৬০ হতে ২৫০ ওয়াটের হারমেটিক মোটরে একই মানের ও সাইজের রিলে ব্যবহৃত হয় ।

 

চ) ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রিলে (Electromagnetic Relay) 

এই রিলের মধ্যে একটা কয়েল ও একটা আর্মেচার থাকে । সকল প্রকার সংযোগাদি সুসম্পন্ন করে যখন বর্তনীতে সরবরাহ দেয়া হয় তখন কয়েলে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক আর্মেচারকে স্থানান্তর করে। তখন ডিভাইসের স্টার্টিং বর্তনী বা পয়েন্ট সংযোগ প্রাপ্ত হয় এবং স্টার্ট হয়ে মোটর চলতে থাকে। মোটর পূর্ণ গতিতে আসার পর স্টার্টিং কয়েলে সরবরাহ কমতে থাকে। ফলে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তিও কমতে থাকে। অবশেষে স্প্রিং আর্মেচারকে টেনে আগের অবস্থায় আনে। এতে স্টার্টিং এ সরবরাহ বন্ধ হয়। এই রিলে ট্রান্সফরমার যুক্ত ও ট্রান্সফরমার বিহীন হয়ে থাকে। সাধারণ অবস্থায় এটি কন্টাক অবস্থায় থাকে। একে ফ্যান রিলেও বলে ।

 

ছ) লক আউট রিলে (Lock Out Relay) 

এই রিলে মোটরের নিরাপত্তামূলক ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার হয়। এটি কন্টাক্টরের সাথে লাগানো থাকে । কন্টাক্টরের কয়েল ভোল্টেজ এবং রিলে ভোল্টেজ সমান থাকে। এর সংযোগটি সাহায্যকারী সংযোগ হিসেবে কাজ করে। সার্কিটে কন্টাক্টরের কয়েলের সাথে রিলের কয়েল প্যারালাল এবং কন্টাক্টরের কয়েলের সাথে রিলের কন্টাক্ট পয়েন্ট সিরিজ অবস্থায় থাকে । তবে রিলের কয়েল ও রিলের কন্টাক্ট পয়েন্ট পরস্পর সমান্তরালে থাকে । প্রেশারকাট আউট, ওভারলোড ও অন্যান্য সেফটি ডিভাইস মোটরকে বন্ধ করে দিলেও পুনরায় মোটর বৈদ্যুতিক শক্তি প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত লক আউট রিলে মোটরকে চালু রাখে।

বিভিন্ন প্রকার রিলের পরীক্ষা পদ্ধতি 

রিলে পরীক্ষা বলতে রিলের কার্যকারিতা পরীক্ষা বোঝায়। বিভিন্ন প্রকার রিলের পরীক্ষা পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। রিলে সাধারণত তিন প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা করা হয়। পদ্ধতি তিনটির বর্ণনা নিচে আলোচনা করা হল-

১। প্রদর্শন ও শব্দ পদ্ধতি 

ক. প্রথমেই রিলের বাইরের আবরণ ভালো থাকলে বাতি খুলে অভ্যন্তরীণ সংযোগাদি সঠিক আছে কিনা দেখতে হবে। 

খ. কারেন্ট কয়েল রিলে ঝাঁকুনি দিয়ে শব্দের সৃষ্টি করলে বুঝতে হবে প্রাথমিকভাবে এটি কার্যক্ষম আছে । 

গ. পিটিসি রিলে ঝাঁকুনি দিয়ে শব্দ সৃষ্টি না করলে বুঝতে হবে প্রাথমিকভাবে এটি কার্যক্ষম আছে। 

ঘ. হট ওয়্যার রিলের বডি খুলে হট ওয়্যার লিভার হাত দিয়ে চাপ দিলে মুভ করে পূর্বস্থলে ফিরলে বুঝতে হবে প্রাথমিকভাবে এটি কার্যক্ষম আছে। 

ঙ. পটেনশিয়াল রিলের বডি খুলে ম্যাগনেটিক লিভার হাত দিয়ে চাপ দিলে মুভ করে পূর্বস্থলে ফিরলে বুঝতে হবে প্রাথমিকভাবে এটি কার্যক্ষম আছে।

রিলের ব্যবহার

 

 

Content added By

Promotion