এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

অধিক উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খ দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যদ্রব্যকে সম্পূরক খাদ্য বলা হয়। চাউলের কুঁড়া, গমের ভূষি সরিষার খৈল, ইত্যাদি মাছের সম্পুরক খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 

চিত্র-৩.৩: বিভিন্ন ধরনের সম্পূরক খাদ্য

Content added By

আমাদের দেশে মাছ অথবা চিংড়ি চাষে ব্যবহৃত কিছু প্রচলিত খাদ্য উপকরণ বহুল পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। এই সকল খাদ্য উপকরণই মূলত গলদা চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শর্করা, আমিষ, চর্বি ও অনান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে। এই সকল খাদ্য উপাদানের উপর পবেষণা করে দেখা গেছে এদের মধ্যে উচ্চমানের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। গবেষণায় প্রাপ্ত গলদা চিংড়ির কিছু খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমান নিচের সারণিতে উল্লেখ করা হলোঃ

সারণি: গলদা চিংড়ির কিছু খাদ্য উপকরণের নাম ও তার পুষ্টিমান

উপাদানের নাম

পুষ্টিমান (%)

আমিষ 

শর্করা 

স্নেহ 

চালের কুঁড়া১১.৮৮ ৪৪.৪২ ১০.৪৫ 
গমের তুষি১৪.৫৭ ৬৬.৩৬ ০৪.৪৩ 
সরিষার খৈল৩০.৩৩ ৩৪.৩৮ ১৩.৪৪ 
ভিলের খৈল২৭.২০ ৩৪.৯৭ ১৩.১৮ 
ফিসমিল-এ গোড৫৬.৬১ ৩.৯৭ ১১.১২ 
ফিসমিল বি-গ্রেড৪৪.৭৪ ১৬.৬২ ৭.৮৭ 
ব্লাডমিল৬৩.১৫ ১.৫৯ ০.৫৬ 
আটা১৭.৭৮ ৭৫.৬০ ৩.৯০ 
চিটাগুড়৪.৪৫ ৮৩.৬২ 
ক্ষুদিপানা১৪.০২ ৬০.৮৮ ১.৯২ 
কুটিপানা১৯.২৭ ৫.০.১৯ ৩.৪৯ 

চিংড়ির খাদ্যের পুষ্টিমান নির্ণয়ে মূলত আমিষের মাত্রা হিসেব করা হয়। সাধারণ ঐকিক নিয়মে একাধিক উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি খাদ্যের পুষ্টিমান সহজেই নিরূপণ করা যায়। নিচে একটি উদাহরণের সাহায্যে খাদ্যে আমিষের মাত্রা নিরূপণ পদ্ধতি দেখানো হলো। ধরা যাক ফিসমিল, সরিষার খৈল, গমের ভুষি এবং বাইন্ডার হিসেবে আটা ব্যবহার করে ১ কেজি খাদ্য তৈরি করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের অনুপাত হবে ফিসমিল ২৫%, সরিষার খৈল ২৫%, গমের ভুষি ৪০% ও আটা ১০% ।

সারণি: তৈরি খাদ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের নাম ও মোট আমিষের পরিমাণ

উপকরণ

বিদ্যমান আমিষের পরিমান 

(%)

ব্যবহার মাত্রা
(%)

প্রয়োজনীয় পরিমাণ 

(গ্রাম)

সরবরাহকৃত আমিষ 

(%)

ফিসমিল৫৬.৬১২৫ ২৫০ ১৪.১৫
সরিষার খৈল৩.০.৩৩২৫ ২৫০ ৮.৩৩
গমের ভুষি১৪.১৭৪০ ৪০০ ৫.৮২ 
আটা১৭.৭৮১০ ১০০ ১.৭৮ 
খনিজ লবণ১ চা চামচ 
 মোট ১০০১০০০ ৩০-০৮ 

 

Content added By

চিংড়ির খাদ্য তৈরির জন্য কম মূল্যের উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য উপকরণ এমনভাবে বেছে নিতে হবে যাতে এদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, খাদ্যের মান বজায় থাকে এবং খাদ্য প্রয়োগ বাবদ পুঁজি বিনিয়োগ কম হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্য উপকরণ, যেমন- খৈল, কুঁড়া, গমের ভুষি, ফিসমিল, আটা, চিটাগুড় ইত্যাদি ব্যবহার করেই চিংড়ির পুষ্টি চাহিদা পূরণে সক্ষম এমন সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে। নিচে চাষির আর্থিক সামর্থ্য ও পুষ্টি চাহিদা বিবেচনা করে কার্প-চিংড়ি মিশ্রচাষের পুকুরে প্রয়োগের জন্য খাদ্য তৈরিতে উপকরণ ব্যবহারের নমুনা নিম্ন সারণীতে উল্লেখ করা হলো-

সারণি: মিশ্রচাষের জন্য তৈরিকৃত সম্পুরক খাদ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের অনুপাত

উপাদানের নাম

নমুনা-১

নমুনা-২ 

ব্যবহার মাত্রা (%)

গ্রাম/কেজি খাদ্য

ব্যবহার মাত্রা (%)

গ্রাম/কেজি খাদ্য

ফিসমিল৩০ ৩০০ ৩০ ৩০০ 
সরিষার খৈল৪০ ৪০০ ৩০ ৩০০ 
হাড়/ঝিনুকের গুঁড়া - ৫০৫০ 
পলিস কুড়া/গমের ভুষি২০ ২০০ ২০ ২০০ 
আটা৯ ৯০ ১০ ১০০ 
চিটাগুড়১ ১০ ৫ ৫০ 
খনিজ লবণ১ চা চামচ১ চা চামচ
ভিটামিন প্রিমিক্স১ চা চামচ১ চা চামচ
মোট১০০ ১০০০ ১০০ ১০০০ 

 

Content added By

চিংড়ি চাষিরা সাধারণত চালের কুঁড়া, গমের ভুষি, ফিসমিল, মুরগীর নাড়িভূড়ি, সরিষার বা তিলের খৈল ইত্যাদি খাদ্য উপাদান বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরি করে থাকে। তবে চিংড়ি চাষিরা খামারে যে সম্পূরক খাদ্য তৈরি করে তা বিজ্ঞানসম্মত হয় না। কারণ চাষিরা খাদ্যের গুণগত মান ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। খামারে দেশিয় খাদ্য উপাদান দিয়ে বিভিন্ন অনুপাতে গলদা চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির কয়েকটি নমুনা নিচে দেয়া হলো-

সারণি: বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে গলদা চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির কয়েকটি নমুনা

উপাদাননমুনা-১নমুনা-২নমুনা-৩
সয়াবিন খৈল২০%৫% 
মৎস্য চূর্ণ২০%৩০% ১০% 
চিংড়ি চুর্ণ২০%১৫% ২৫% 
চালের গুঁড়া২০%২২% 
ময়দা১৪% ১৫% 
বার্লি৫% ৫% ৫% 
ভিটামিন মিশ্রণ১% 
সরিষার খৈল১০% ৫%  
চালের কুঁড়া২৫% ২৫% 
মাছের তৈল ৩% 
মোট১০০% ১০০% ১০০% 

উপরোক্ত যে কোনো একটি নমুনা অনুসারে সম্পূরক খাদ্য তৈরি করে গলদা চিংড়ির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। উপরোক্ত নমুনায় নির্দেশিত হারে পরিমাণমত উৎকৃষ্ট খাদ্য উপাদানসমূহ আলাদা আলাদাভাবে মেপে নিতে হবে এবং অল্প অল্প করে একটি বড় পাত্রে শুকনা অবস্থায় উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশাতে হবে। খাদ্য উপাদানগুলো ভালোভাবে মেশানোর পর অল্প অল্প করে পানি দিয়ে সমস্ত মিশ্রণটি একটি আঠালো মন্ড বা পেস্টে পরিণত করতে হবে। তারপর এই মণ্ডকে হাত দিয়ে ছোট ছোট বল বানিয়ে ভেজা খাদ্য হিসেবে সরাসরি খামারে প্রয়োগ করা যায়। আবার এই খাদ্য মেশিনে পিলেট বানিয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে দানাদার খাদ্যও তৈরি করা যায়।

Content added By

চিংড়ির পুকুরে অতি সতর্কতার সাথে খাদ্য প্রয়াগ করা হয়। খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা বেশি হলে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বেশি হয় অন্যদিকে পানি দূষণেরও সম্ভাবনা থাকে। একটি পুকুরে কী পরিমাণ খাদ্য প্রয়াগ করা হবে তা নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যে নির্ধারণ করা যায়।

প্রতিদিন প্রদেয় খাবারের পরিমাণ= (মোট মজুদকৃত চিংড়ি) × { বেঁচে থাকার হার (%) × প্রতিটি চিংড়ির গড় ওজন × খামারে প্রয়োগের মাত্রা (%) } উদাহরণস্বরূপ, একটি পুকুরে

মোট মজুদকৃত চিংড়ির পরিমাণ = ১,০০,০০০টি বেঁচে থাকার হার = ৭০%; প্রতিটি চিংড়ির গড় ওজন = ২০ গ্রাম, খাবার প্রয়োগের মাত্রা = ৬% (মোট চিংড়ির ওজনের)

এক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রদেয় খাবারের পরিমাণ = ১,০০,০০০ × ৭০ গ্রাম × ২ × ৬/১০০  = ৮৪,০০০ গ্রাম = ৮৪ কেজি

গলদা চিংড়ি নিশাচর। এরা অন্ধকারে চলাচল ও খাদ্য গ্রহণ করতে পছন্দ করে। সেজন্যে কার্প-চিংড়ি মিশ্রচাষের পুকরে প্রতি দিনের প্রয়োজনীয় খাবার দুইভাগে ভাগ করে এক ভাগ সকাল ৬ টার আগে এবং আরেকবার সন্ধ্যা ৬ টার পরে প্রয়াগে করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেকবার প্রয়োগের পূর্বে খাবারকে আবার দুইভাগ করে অর্ধেক ফিডিং ট্রে এবং বাকী অর্ধেক পুকুরের কয়েকটি জায়গা পাট কাঠি দ্বারা চিহ্নিত করে সেখানে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, চিংড়ির জন্য খাদ্য দেয়ার সময় পুকুরের তলদেশ থেকে এক ফুট উপরে ফিডিং ট্রে স্থাপন করতে হবে।

ফিডিং ট্রে পর্যবেক্ষণের পর চিংড়ির খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে গেলে খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ কমাতে হবে এবং কী কারণে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে গেল তা জেনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবস্থার উন্নতি হলে খাবার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন কারণে চিংড়ির খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যেতে পারে। কারণগুলো নিম্নরূপঃ

  •  পুকুরে হঠাৎ ফাইটোপ্লাংকটন অধিক মাত্রায় মারা গেলে,
  • দীর্ঘদিন পুকুরের পানির পরিবর্তন করা না হলে,
  • পুকুরের পানির পিএইচ মাত্রা কমে গেলে,
  • পুকুরের তলদেশের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেলে,
  • চিংড়ি রোগাক্রান্ত হলে,
  • চিংড়ি খোলস পাল্টালে,
  • দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ২.৫ পিপিএম এর নিচে নেমে গেলে, এবং
  • পানির তাপমাত্রা ৩০° সে. এর উর্ধ্বে বা ২০° সে. এর নিচে নেমে গেলে।

খাদ্য প্রয়োগে সতর্কতা

  • প্রতিদিন একই সময়ে একই জায়গায় খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে;
  • মাঝে মাঝে ফিডিং ট্রে উঠিয়ে খাবার গ্রহণের পরিমাণ যাচাইপূর্বক প্রয়োগ মাত্রা পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে' এবং 
  • পানি অতিরিক্ত সবুজ হলে খাদ্য প্রয়োগ মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে বা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে।
Content added By