এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

মূলত অণুজীবের কর্মতৎপরতা ও দেহাভ্যন্তরস্থ জৈব পদার্থে বিদ্যমান এনজাইমের বিক্রিয়ার ফলে চিংড়ির মৃত্যুর পর পচনক্রিয়া শুরু হয়। আর এ জন্য আহরণের পরপরই পচন রোধের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তাই চিংড়ি আহরণের পর যথাযথ পরিচ্ছন্নতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কার্যকলাপ রহিতকরণ এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকরণের মাধ্যমে গুণগতমান অক্ষুন্ন রাখা এবং সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়া চিংড়ি পণ্যকে বাতাসের আর্দ্রতা, পোকা-মাকড়, ধুলা বালি ইত্যাদি থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই ভালভাবে প্যাকেজিং করা উচিত। ভাল প্যাকেজিং করে না রাখলে চিংড়ি পণ্যের গুণগতমান অতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

Content added By

মাছ বা চিংড়ির মৃত্যুর পর যে প্রক্রিয়ায় এর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যেমন- স্বাভাবিক গঠন, স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ ইত্যাদির ব্যাপক অবনতি ঘটে তাকে পচনক্রিয়া বলে। পচন দুইভাবে হতে পারে যথা: 

(১) রাসায়নিক পচন বা ব্যাকটেরিয়া ছাড়া পচন, এবং 

(২) ব্যাকটেরিয়াজনিত পচন।

(১) রাসায়নিক পচন বা ব্যাকটেরিয়া ছাড়া পচন: এটি দুইভাবে হয়ে থাকে, যথা-দৈহিক এনজাইমঘটিত পচন ও র‍্যানসিডিটি। জীবিত অবস্থায় যেসব এনজাইম বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে সেগুলো মাছের মৃত্যুর পর প্রোটিন, চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট এর ব্যাপক ভাঙন ঘটায়, ফলে দেহে সাধারণ পচন শুরু হয়। এই পচনকে স্বয়ংক্রিয় পচনও বলে। দৈহিক এনজাইমের স্বয়ংক্রিয় কার্যকলাপের মাধ্যমে পেশীকে দুর্বল করে ফেলে এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ ও বৃদ্ধিতে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
চর্বিযুক্ত মাছের ক্ষেত্রে এই ধরনের র‍্যানসিডিটি পচন ঘটে। মাছের চর্বি অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড দ্বারা গঠিত হওয়ায় বাতাসের অক্সিজেনের উপস্থিতিতে এগুলো জারিত হয় ফলে মাছ হালকা খয়েরী বর্ণ ধারণ করে। র‍্যানসিডিটির ফলে অনেক সময় মাছের পেট ফেটে যায় এবং জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হতে থাকে।

(২) ব্যাকটেরিয়াজনিত পচন: সদ্য আহরিত চিংড়ির পেশিতে এবং দেহ রসে সাধারণত কোনো ব্যাকটেরিয়া থাকে না। তবে মাছ বা চিংড়ির ফুলকা, অন্তর ও ত্বকীয় শ্লেষ্মায় প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে। ব্যাকটেরিয়া মাছ পচনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা মাছ বা চিংড়িকে খাদ্যের সম্পূর্ণ অনুপযোগী করে তোলে। জলীয় পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া সহজে বিস্তার লাভ করে। আহরণের সময়ই প্রচুর ব্যাকটেরিয়া মাছের দেহের বিভিন্ন অংশে আশ্রয় লাভ করে। চিংড়ির পচনে সহায়ক কয়েকটি ব্যাকটেরিয়ার হলো- অ্যারোমাব্যাক্টার, সিউডোমোনাস, ফ্লাভোব্যাকটেরিয়াম, মাইক্রোকক্কাস, অ্যারোমোনাস, ক্লস্ট্রিডিয়াম ইত্যাদি।

Content added By

চিংড়ি মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় খাদ্য। কিন্তু আহরণের পর খুব সহজেই এর খাদ্যমান নষ্ট হয়ে যায়। আর এ জন্য আহরণের পরপরই পচন রোধের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সাধারণভাবে চিংড়ির পচন দুইটি কারণে ত্বরান্বিত হয়, যথা- সময় ও তাপমাত্রা। চিংড়ি আহরণের পর থেকে বাজারজাত বা প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যবর্তী সময় যত বেশি হবে চিংড়ির পচন তত বেশি হবে। সে কারণে চিংড়ি আহরণের পরে পরিবহন ও বাজারজাতকরণে যত কম সময় ব্যয় হয় ততই চিংড়ি বেশি টাটকা বা তাজা থাকবে। সুতরাং চিংড়ি সংরক্ষণের মূলনীতি হলো এমন সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যার দ্বারা পচন সহায়ক কারণসমূহকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিংড়ির পচন রোধে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা হয়।

ক) পরিচ্ছন্নতা: পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করার উদ্দেশ্য হলো আহরিত চিংড়ি যেন পচনশীল অন্য কোনো বস্তুর সংস্পর্শে এসে দুষিত না হয় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেন চিংড়িকে কলুষিত করতে না পারে। আহরিত চিংড়ি অবতরণ কেন্দ্রে আনার সময় এদের খাদ্যনালী, দেহ গহবরে ও ফুলকায় প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে। এছাড়া শরীরের বাহিরাংশে শ্লেষ্মায়ও প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে। নড়াচড়া বা পরিচর্যাকালে ধুলাবালি, কাদা- ময়লা ও অপরিষ্কার পানি বা বরফ ইত্যাদির দ্বারা চিংড়ি কলুষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ পরিচর্যা চিংড়ির পচনকে ত্বরান্বিত করে। সুতরাং চিংড়িকে উত্তমরূপে ধৌতকরণে এবং ফুলকা ও অগ্ন অপসারণের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ অনেকটা হ্রাস করা সম্ভব। সুতরাং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে মাছ বা চিংড়ির পচনকে অনেকটা কমানো যায়।

খ) ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কার্যকলাপ রহিতকরণ: এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন কৌশলে চিংড়ির দেহের বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কার্যকলাপকে থামিয়ে দিয়ে চিংড়িকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে কৌশলসমূহ নিম্নরূপ-

পচন রোধে নিম্ন তাপের ব্যবহারঃ বরফ দিয়ে বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চিংড়ির দেহের তাপমাত্রা হ্রাসের মাধ্যমে এনজাইম ও ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা ব্যাহত করা হয়। যেমন- শীতলীকরণ ও হিমায়িতকরণ।

আর্দ্রতা অপসারণের মাধ্যমে পচন রোধঃ এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে মাছের দেহের পানি অপসারণ বা কমিয়ে ফেলা হয়। এটা প্রাকৃতিকভাবে যেমন- সূর্যালাকে বা কৃত্রিম উপায়ে বা রাসায়নিক পদ্ধতিতে করা হয়। চিংড়ির শরীরের আর্দ্রতা এমন এক মাত্রায় কমানো হয় যেখানে ব্যাকটেরিয়া ও এনজাইমের কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় হয়। যেমন- লবণায়ন, শুষ্ককরণ বা শুটকিকরণ, ধূমায়িতকরণ ও নিরুদিকরণ প্রভৃতি পদ্ধতির মাধ্যমে চিংড়ির পচন রোধ করা যায়।

সংরক্ষক দ্রব্য প্রয়োগের মাধ্যমে পচন রোধঃ বিভিন্ন সংরক্ষক দ্রব্য প্রয়োগের মাধ্যমে চিংড়িকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করা যায় বা সংরক্ষিত চিংড়ির সংরক্ষণ সময় দীর্ঘায়িত করা যায়। চিংড়ির সংরক্ষক হিসেবে ভিনেগার ও লবণ ব্যবহার করা হয়। তাজা বা হিমায়িত চিংড়ি সাধারণ তাপমাত্রায় এনে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। এ চিংড়িকে ৫-১০% অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও ১০-১৫% লবণের দ্রবণে এক সপ্তাহ বা বেশি সময় ডুবিয়ে রাখা হয়। এ অবস্থায় চিংড়ির আমিষ জমাট বেঁধে যায়। এসব চিংড়ি তখন ১-২% অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও ২-৪% লবণ দ্রবণে চূড়ান্তভাবে বোতলজাত করা হয়। এভাবে বোতলজাত চিংড়িকে ০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় কমপক্ষে ৩ মাস ভালো অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়।

গ) ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকরণের মাধ্যমে সংরক্ষণ: এই পদ্ধতিতে আহরিত মাছ বা চিংড়িকে পরবর্তীকালে ব্যবহারের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে গুণগতমান সম্পন্ন রাখার জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় বায়ুরোধক পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। এই পদ্ধতিকে টিনজাতকরণ পদ্ধতি বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, মোল্ড সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয় এবং বায়ুরোধক পাত্রে রাখার কারণে নতুন করে কোনো প্রকার ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের সুযোগ পায় না। এই প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত মাছ বা চিংড়ির স্বাভাবিক মৌলিক স্বাদের কিছুটা পরিবর্তন হলেও গুণাগুণের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

Content added By

তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে নিম্ন তাপমাত্রায় মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।

Content added By

স্বল্প সময়ের জন্য চিংড়ির সজীবতা রক্ষার্থে শীতলীকরণ অত্যন্ত সুবিধাজনক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে চিংড়ির তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি আনা হয়, তবে হিমাঙ্কের নিচে নয়। এ পদ্ধতি খুব দ্রুত ও দক্ষতার সাথে পরিচালনার মাধ্যমে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণে শীতলীকরণ পদ্ধতি অনুপযোগী। আহরণের পরপরই যদি চিংড়িকে অন্তর্বর্তীকালীন সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়, যেমন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ, অবতরণ কেন্দ্র থেকে বাজারে বা প্রক্রিয়াজাত কারখানায় প্রেরণের প্রয়োজন হয় তবে এ পদ্ধতি অবলম্বনে ভালো ফল পাওয়া যায়। শীতলীকরণের প্রধান লক্ষ্য হলো মাছের তাপমাত্রাকে ০ ডিগ্রি সে. এর কাছাকাছি নিয়ে আসা। শীতলীকরণের উপায়সমূহ হলো-

ক) বরফ ব্যবহার করেঃ নিম্ন তাপমাত্রায় মাছ সংরক্ষণের একটি স্বল্পকালীন পদ্ধতি। স্বাদু পানি থেকে উৎপাদিত টুকরো বা গুঁড়ো বরফ ব্যবহার করে চিংড়িকে আচ্ছাদিত করা হয়। ফলে মাছের পচন সাময়িকভাবে রাখে করা যায়। কারণ সঠিকভাবে চিংড়ির তাপমাত্রা (০° সে. ৪ ডিগ্রি সে.) কমিয়ে আনার ফলে এনজাইম, জারণ ও ব্যাকটেরিয়াজনিত পরিবর্তন কমিয়ে দেয় এবং বরফগলা পানি চিংড়ির উপর দিয়ে প্রবাহিত করে এবং ব্যাকটেরিয়া, রক্ত, শ্লেষ্মা ইত্যাদি ধৌত করে।

খ) সংরক্ষক ও বরফ ব্যবহার করেঃ অনেক সময় সংরক্ষিত মাছের গুণাগুণ ভালো রাখার জন্য ও বরফের গুণাগুণ উন্নয়নের জন্য বরফের সাথে কিছু ব্যাকটেরিয়ানাশক বা অন্য যে কোনো ধরনের সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়। এ কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যগুলারে নাম হলো- সোডিয়াম বেনজোয়েট, ফিউমারিক অ্যাসিড, কার্বন ডাই অক্সাইড, ডাই সোডিয়াম ফসফেট, বেনজোয়িক অ্যাসিড, সোডিয়াম নাইট্রাইট, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ইত্যাদি।

গ) শীতল সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করেঃ বরফ ব্যবহারের বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে ঠান্ডা সামুদ্রিক পানিতে চিংড়িকে ডুবিয়ে রেখে শীতলীকরণ করা যায়। সামুদ্রিক ট্রলারে এই পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়। ট্রেলারের মধ্যে কোনো সুবিধাজনক পাত্র বা ট্যাংকে সমুদ্রের পানি যান্ত্রিকভাবে কমপ্রেসর এবং কুলিং পাইপের সাহায্যে বা বরফ মিশ্রিত করে ২ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় নিয়ে আসা হয়। বৃহৎ ফ্রিজিং ট্রলারে আহরিত মাছকে হিমায়িতকরণের পূর্বে এভাবে শীতলীকরণ করা হয়।

Content added By

হিমায়িতকরণ পদ্ধতি শীতলীকরণ পদ্ধতি হতে অধিক কার্যকর। চিংড়িকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। হিমায়িতকরণ পদ্ধতিতে মাছ বা মৎস্যজাত দ্রব্যের দেহের তাপমাত্রা হিমায়ন যন্ত্র ব্যবহার করে -৮ ডিগ্রি সে. বা তারও কম রাখা হয়। সাধারণত চিংড়িকে -৩০ ডিগ্রি সে. থেকে ৪০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় হিমায়িত করা হয়।

মাছের শরীরে প্রচুর পানি থাকে যা ০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয় না। কারণ এ পানির সাথে লবণ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ থাকে। মাইনাস ১ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় মাছের দেহের পানি জমতে শুরু করে এবং মাইনাস ৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় প্রায় ৮০% পানি বরফে পরিণত হয়। এ অবস্থায় অহিমায়িত পানিতে লবণের ঘনত্ব ক্রমে বাড়তে থাকে। ফলে মাছ পূর্ণ হিমায়িত হতে আরও বেশি তাপমাত্রা কমানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ও মাছের ভিতরের ১০% পানি অহিমায়িত থাকে, বিধায় মাইনাস ৩৫-৪০° সে. পর্যন্ত তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়। চিংড়ি হিমায়িতকরণে তিনটি স্তরে তাপমাত্রা নিচের দিকে নামে।

প্রথম স্তরে তাপভাত্রা খুব দ্রুত এবং ভালভাবে ০ ডিগ্রি সে. বা এর সামান্য নিচ পর্যন্ত নামে। দ্বিতীয় স্তরে তাপমাত্রা ০° থেকে -১৭°সে পর্যন্ত নামে ঐখানে প্রায় স্থির থাকে। তৃতীয় পর্যায়ে এসে তাপমাত্রা আরও নিচে নামে এবং অবশিষ্ট অহিমায়িত অংশ হিমায়িত হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হিমায়িতকরণের দ্বিতীয় স্তরে, সবচেয়ে সময় বেশি লাগে এবং ঐ সময়ে তাপমাত্রা সহজে নিচে নামে না বা খুব সামান্য নিচে নামে। এই স্তর বা সময়টাকে হিমায়িতকরণের সংকটকাল বলা হয়। কারণ ভালোভাবে চিংড়িকে হিমায়িত করতে হলে এ সময়টা অতি দ্রুত অতিক্রম করতে হবে। তা না হলে হিমায়িত চিংড়ির গুণাগুণে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তৃতীয় স্তরে এসে তাপমাত্রা আরও নিচে নামে এবং অবশিষ্ট অহিমায়িত অংশ হিমায়িত হয়।

Content added By

মাছ বা চিংড়ির হিমায়িতকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের হিমায়ক যন্ত্র বা ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিয়ে কয়েকটি হিমায়ক যন্ত্রের বর্ণনা দেয়া হলো-

ক) এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারঃ এ ধরণের ফ্রিজারের ভিতর দিয়ে ঠান্ডা বাতাসের বাষ্প প্রবাহিত করে মাছ বা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যকে হিমায়িত করা হয়। এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-

(১) অনবরত ফ্রিজারঃ এ প্রকার ফ্রিজারে হিমায়িতকরণের সময় দ্রব্য বা Product ঘুরতে থাকে। হিমায়কের ভিতর এক পাশ থেকে মাছ বা দ্রব্যাদি ঢুকানো হয় এবং অন্য পাশ দিয়ে হিমায়িত উপাদান বের করা হয়।

(২) ব্যাচ ফ্রিজারঃ ব্যাচ ফ্রিজারে মাছ বা চিংড়ি বা দ্রব্য প্রবেশ করানো হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে হিমায়িত করা হয়।
বিভিন্ন প্রকার ফ্রিজারের মধ্যে এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। কারণ এর ব্যবহারে সুবিধাগুলো হচ্ছে- এ জাতীয় ফ্রিজার বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা হয়, এ জাতীয় ফ্রিজারে হিমায়িতকরণে কম খরচ করা হয় এবং হিমায়তকরণের সময় কম পরিচর্যা করলেই চলে।

খ) কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজারঃ এ ধরনের হিমায়ক যন্ত্রে চিংড়িকে সরাসরি হিমায়িত প্লেটের ওপর রেখে হিমায়িত করা হয়। কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার চার প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- প্লেট ফ্রিজার, ব্যান্ড ফ্রিজার, রোটারি ফ্রিজার এবং ড্রাম ফ্রিজার। এগুলোর মধ্যে প্লেট ফ্রিজার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ফ্রিজারে চিংড়িকে ফাঁপা ধাতুর প্লেটের মধ্যে রাখা হয় যার মধ্যে শীতলীকরণের জন্য রেফ্রিজারেন্ট প্রবাহিত করা হয়। 

বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার তাপ নিরোধক পৃথক রুমে ( Insulated room) স্থাপিত থাকে যেখানে মাছকে প্যাকেট বা ব্লক সংযুক্ত আকারে হিমায়িত করা হয়। প্রতিটি মাছ বা চিংড়ির ব্লক ৫০-৬০ মিলিমিটার পুরু হয়। ব্লক তৈরির জন্য প্লেটগুলোতে সংযুক্ত পাম্পের সাহায্যে ঠান্ডা লবণ পানি (Cold brine), অ্যামোনিয়া বা রেফ্রিজারেন্ট ১২ বা ২২ প্রবাহিত করা হয়। ফলে মেটাল প্লেটের তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রি সে. হয়ে থাকে। মৎস্যজাত দ্রব্য দ্রুত হিমায়িতকরণের জন্য কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়। সাধারণত চিংড়ি ও অন্যান্য ছোট ছোট মাছ ব্লক আকারে এই প্রকার ফ্রিজে হিমায়িত করা হয়।

গ) ইমারসন ফ্রিজার: এ ক্ষেত্রে মাছকে নিম্ন তাপমাত্রায় তরল পদার্থে ডুবানো বা নিমজ্জিত করা হয়। এভাবে সরাসরি ঠান্ডা তরলের মধ্যে রেখে মাছের দেহের তাপমাত্রা কমানোর পদ্ধতি এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারে ঠান্ডা বাতাস প্রয়োগ থেকে উৎকৃষ্ট। পানির ফ্রিজিং পয়েন্টের চেয়ে এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত তরল পদার্থের ফ্রিজিং পয়েন্ট অনেক বেশি হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ইমারসন ফ্রিজারের কোনো আদর্শ নকশা নেই এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যবহারের জন্য বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। সাধারণত ঠান্ডা লবণ পানি অথবা কোন রেফ্রিজারেন্ট বাম্পকে পাম্প এর সাহায্যে ক্রমাগত মৎস্যজাত দ্রব্যের ওপর প্রবাহিত করা হয় অথবা মৎস্যজাত দ্রব্যকে একমুখী ঠান্ডা দ্রবণের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। মাছ ধরার ট্রলারে চিংড়ি হিমায়িতকরণে ইদানিংকালে লবণ পানির দ্রবণের সাথে ২০% গ্লুকোজ এবং ২০% খাবার লবণ যোগ করে সাফল্যজনকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইমারসন ফ্রিজারে মাছ ধরার ট্রলারে প্যাকেটকৃত নয় (Unpacked) এমন মাছের হিমায়িতকরণের জন্য উপযুক্ত।

ঘ) শার্প ফ্রিজার: শার্প ফ্রিজার একটি পৃথক ইনসুলেটেড বা তাপ নিরোধক ঘর যার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সে. রাখা হয়। এ ফ্রিজারে বিভিন্ন আকারের কয়েল দ্বারা তৈরি সেলফ থাকে যার ভিতর দিয়ে ঠান্ডা লবণ পানি, অ্যামোনিয়া বা অন্যান্য রেফ্রিজারেন্ট প্রবাহিত করা হয়। হিমায়িতকরণের সময় মাছ বা চিংড়িকে সরাসরি সেলফে বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি প্যানের ওপর রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে তাপমাত্রার পরিবর্তন খুব ধীর গতিতে হয়। কারণ মৎস্যদ্রব্যের সম্পূর্ণ উপরিভাগ (surface) ফ্রিজারের পাইপের সংস্পর্শে থাকতে পারে না। এবং ফ্রিজারের ভিতর বায়ু চলাচল সীমিত। এ প্রকার হিমায়ন পদ্ধতি ধীরগতি সম্পন্ন ও পুরাতন বিধায় এর ব্যবহার বর্তমানে অত্যন্ত সীমিত। 

Content added || updated By