এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বাংলাদেশে প্রায় ৭০ ধরনের ফল জন্মে । বহুল প্রচলিত ফলের মধ্যে কলা, আম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, পেঁপে, লেবু, বাতাবিলেবু, লিচু, কুল এবং নারিকেল উল্লেখযোগ্য । অন্যদিকে কামরাঙ্গা, লটকন, সাতকরা, তৈকর, আতা, শরিফা, জলপাই, আমড়া, কদবেল, আমলকি, জাম, ডালিম, সফেদা, জামরুল, গোলাপজাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য অপ্রচলিত ফল । বাংলাদেশে বহু রকম ফল উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও মাথাপিছু দৈনিক ফলের প্রাপ্যতা ৩০-৩৫ গ্রাম যা পুষ্টিবিজ্ঞানীদের সুপারিশকৃত ন্যূনতম চাহিদা মাত্রার ৮৫ গ্রাম থেকে ও কম । বিশ্ব খাদ্য সংস্থার হিসাব মতে এক জন মানুষের গড়ে ১০০-১২০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত । বর্তমানে (২০০৬-০৭) বাংলাদেশে ১ লাখ ৪৪ হাজার ২ শত ষাট হেক্টর জমি থেকে ৪১ লাখ ৩১ হাজার ১ শত ৩০ টন ফল উৎপাদন হয় । অথচ দৈহিক ১১৫ গ্রাম হারে দরকার ৬২.৯৬ লাখ টল । ফলের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় ২১.৫ লাখ টন কম । জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ফল প্রাপ্তির পরিমাণও বাড়াতে হবে । ২০০৬-০৭ সালে বাংলাদেশে ১৪৪.২৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফল চাষ করা হয় । এই জমির পরিমাণ উক্ত সময়ের মোট আবাদি জমির শতকরা মাত্র ০.৭৫ ভাগ। এতে প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে ফল চাষের জমির পরিমাণ খুবই নগণ্য । ফল চাষের জমির পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়ছে । তবে এই বৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম । ১৯৭১-৭২ সালে ১৩০ হাজার হেক্টর, ১৯৯০-৯১ সালে ১৬৭.৭১, হাজার হেক্টর, ১৯৯৪-৯৫ সালে এই জমির পরিমাণ ১৭৬.৫১ হাজার হেক্টর এবং ২০০৬-০৭ সালে ১৪৪.২৬ হাজার হেক্টের । তবে এ সময় জমির পরিমাণ কমলেও হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধি পায় । বাংলাদেশের অধিকাংশ আবাদি জমিতে মূলত দানাজাতীয় শস্যের আবাদ বেশি । সেই সাথে আলু, আম ও পাটের আবাদ লক্ষণীয় । এরপরও ফলের আবাদি এলাকা যথেষ্ট পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে । বিগত ১৫-১৬ বছরে দানা জাতীয় শস্য এবং ফল উৎপাদনের জমির পরিমাণের তুলনামূলক একটি পরিসংখ্যান সারণি -১ এ দেয়া হলো:

সারণি -১ বাংলাদেশের মোট আবাদি জমির পরিমাণ ও বিভিন্ন ফলের বিপরীতে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ জমির পরিমাণ ০০০ হেক্টর

উপরোক্ত তালিকাতে হতে দেখা যায় যে, মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এবং দানাজাতীয় ফসলের জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমেছে এবং ধীরে ধীরে ফল চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। ফল চাষের জমির পরিমাণ ২০০৬-০৭ সালে শতকরা হারে দাঁড়িয়েছে শতকরা ০.৭৫ ভাগ যা মোটেই সন্তোষজনক নয় । অথচ এই সময়েই দানাজাতীয় ফসলের আওতায় জমির পরিমাণ শতকরা হার ছিল ৫৯.১৯ ভাগ । ইতিমধ্যে ফলের চাহিদা বৃদ্ধি এবং তুলনামূলক হেক্টর প্রতি উৎপাদন হার বৃদ্ধি পেয়েছে । তথাপি ফল উৎপাদনের এলাকা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ফলের আওতায় জমির পরিমাণ

বাংলাদেশে ফল চাষের আওতায় জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা খুবই কঠিন । এর প্রধান কারণ হচ্ছে দুএকটি প্রধান ফসল ছাড়া অধিকাংশ ফলই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পরিকল্পিত বাগান আকারে বেশি পরিমাণ জমিতে চাষ করা হয় না । তাছাড়া ক্ষেতের বিভিন্ন আইল, রাস্তাঘাট, অফিস আদালত প্রাঙ্গনে ও বসত বাড়ির আশে পাশে জন্মানো বিভিন্ন ফল গাছের সংখ্যা, জমির পরিমাণ ও মোট উৎপাদন সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয় । তবুও বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতি বছর অনুমানের উপর ভিত্তিতে করে বিভিন্ন ফলের অধিনস্থ জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ নির্ণয় করে থাকে । বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্টাটিসটিকস এর তথ্য অনুযায়ী ২০০০ ২০০১ - ২০০৬-০৭ পর্যন্ত ফল চাষের আওতায় মোট জমির পরিমাণ, উৎপাদন এবং হেক্টর প্রতি ফলন সারনি ২ এ দেয়া হলো ।

সারণি:- ২ বাংলাদেশে ফলের আওতায় জমির পরিমাণ, মোট উৎপাদন এবং হেক্টর প্রতি ফলন ।

উপরোক্ত সারনি হতে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে বর্তমান ফল চাষের আওতায় মোট জমির পরিমাণ ১৪৪.২৬ হাজার হে:, মোট ফল উৎপাদনের পরিমাণ ৪১৩১.১৩ হাজার টন । ফল চাষের অন্তর্ভুক্ত উক্ত জমি মোট চাষাবাদ যোগ্য জমির মাত্র শতকরা ০.৭৫ ভাগ । এ হতে এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় বাংলাদেশে ফল চাষের আওতায় জমির পরিমাণ ক্রমশ হ্রাসবৃদ্ধি হচ্ছে । তবে এ হ্রাস বৃদ্ধির হার তেমন উল্লেখযোগ্য নয় । উপরের সারণিতে দেখা যায় যে, ২০০০-০১ সনে মোট জমির পরিমাণ ছিল ১৯১,৬৬ হাজার হে: যা কমে ২০০৬-০৭ সনে হয়েছে ১৪৪.২৬ হাজার হে: এবং ফলের মোট উৎপাদন ১৪৮৪,৩১ হাজার টন হতে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪১৩১.১৩ হাজার টন । মোট জমির পরিমাণ কমলেও উৎপাদিত ফলের পরিমাণ বেড়েছে । দুঃখের বিষয় হেক্টর প্রতি ফলন বাড়লেও জমির পরিমাণ কমে গেছে। ২০০০-০১ সনে যেখানে ফলন ছিলো ৭.৭৪ টন/হেঃ সেখানে ২০০৬-০৭ সনে উৎপাদন পাওয়া গেছে ২৮.৬৩ টন/হেঃ । এই সারণি-১ হতে বুঝা যায় ফল চাষে কৃষকের তেমন আগ্রহ নেই । উপযুক্ত পরিচর্যা, উন্নত প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহারে হেক্টর প্রতি ফলের উৎপাদন বাড়লেও বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ, কৃষকের দরিদ্রতা, কৃষি ঋণের অভাব, উপকরনের দুর্মূল্য, পরিবহনের সুযোগের অভাব, বাজার ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে ফল চাষের আওতায় জমি কমে যাচ্ছে ।

অঞ্চলভিত্তিক ফল চাষের জমির পরিমাণ

এলাকাভিত্তিক পছন্দ – অপছন্দ, পরিবেশ, জলবায়ু এবং আবহাওয়াগত পার্থক্যের কারণে ঐতিহ্যগতভাবে এক - এক অঞ্চলে এক এক রকমের ফল ফলাদি উৎপাদন বা চাষাবাদ হয়ে থাকে। সব রকমের ফল সকল অঞ্চলে সমভাবে চাষ হয় না । যেমন- উত্তর বঙ্গে উৎপাদিত আম বা লিচু বরিশাল অঞ্চলে চাষাবাদ হয় না । অপরদিকে ঢাকা অঞ্চলের কাঁঠাল অন্য অঞ্চলে সমভাবে সমমাণ সম্পন্ন হয় না । একইভাবে নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা বরিশাল এবং খুলনা অঞ্চলে যেমন চাষ হয় অন্য অঞ্চলে তেমন হয় না। বাংলাদেশের এটা সার্বিক চিত্র। তারপরও গবেষণা এবং উন্নতর প্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে এক অঞ্চলের ফল অন্য অঞ্চলেও প্রসার লাভ করছে । যেমন- সিলেট অঞ্চলের কমলার চাষ পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করছে। উল্লেখ্য যে, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট অঞ্চলভিত্তিক ফল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারা দেশে ৭৩টি হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে ফল চাষ সম্প্রসারণ এবং অনেক বেসরকারি নার্সারি উন্নত জাতের চারা কলম উৎপাদনের মাধ্যমে ফল চাষের এলাকা ও উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । বর্তমানে বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগে ফল চাষের আওতায় জমির পরিমাণ, উৎপাদন ও ফলন সারণি - ৪ এ দেয়া হলো ।

সারণি- ৪ বিভাগ ওয়ারী ফলের চাষের জমির পরিমাণ ও মোট উৎপাদন

(জমির পরিমাণ ০০০ হে: এবং ফলন ৩০০ টনে)

উপরের সারণি হতে দেখা যায় বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগে ফল চাষের অন্তর্ভুক্ত জমি ও উৎপাদনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই । তাছাড়া ঐ বিভাগগুলোতে বিগত কয়েক বছর ফলের জমি ও উৎপাদন মাটামুটিভাবে একই অবস্থানে আছে। আরও লক্ষণীয় যে, ফলের জমির দিক থেকে চট্টগ্রাম বিভাগ বরারই প্রথম স্থানে ও সিলেট বিভাগ সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বাধিক জমিতে ও সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম জমিতে ফল উৎপাদন হয় ।

ফল চাষ বৃদ্ধিতে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি প্রণয়ন

বাংলাদেশে ফল চাষ, ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ফলের মানান্নেয়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। দেশের খাদ্য চাহিদা পুরণে ও পুষ্টি সমস্যা সমাধানে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম । খণ্ড খণ্ড পতিত ও অব্যবহৃত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে বেশি বেশি উৎপাদন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে এবং শিল্পের বিকাশ ঘটাতে ফল চাষ সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে । আমাদের দেশে জনসংখ্যার চাপে চাষযোগ্য জমি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে । চাষের নিবিড়তা বাড়িয়ে অল্প জমি থেকে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব ।

কোন ফলের চাষ করে একই পরিমাণ জমি হতে নির্দিষ্ট সময়ে বেশি পরিমাণ পুষ্টিকর ফল পাওয়া যায় তা নির্ণয় করা দরকার । তবে সাধারণভাবে দেখা যায় যে বাংলাদেশের সর্বত্র কম বেশি কলার চাষ হয় এবং এটি উচ্চ ফলনশীল ফসল হিসেবে সুপরিচিত। কলার চাষ করে প্রতি হেক্টরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অন্যান্য অনেক ফসলের চেয়ে বেশি পরিমাণে ফলন ও পুষ্টি উপাদান পাওয়া সম্ভব। একই ভাবে পেঁপে এবং পেয়ারা চাষ করেও অল্প সময়ে বেশি লাভবান হওয়া যায় । আমাদের দেশে ফলের বার্ষিক চাহিদা (জনসংখ্যা ১৫ কোটি ও ফলের চাহিদা দৈনিক ১১৫ গ্রাম ধরে) ৬২,৯৬ লাখ মেঃ টন। অথচ বর্তমানে বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৪১.৩১ লাখ মেঃটন । এ জন্য ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে হলেও আমাদের ফল উৎপাদন আরও ২১, ৬৫ লাখ টন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন । জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ চাহিদা ক্রমান্বয়ে আরও বৃদ্ধি পাবে । এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ২০২ হেক্টর জমি চাষের আওতা বহির্ভূত হয়ে যাচ্ছে ।

বাংলাদেশে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। ভূমির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বিজ্ঞানভিত্তিক ফসল বিন্যাস, উন্নত চাষাবাদ, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি, এলাকাভিত্তিক ফসল বিন্যাস, এলাকাভিত্তিক উৎপাদন পরিস্থিতি ও চাহিদা নির্ণয় এবং প্যাকেজিং ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা, কো-অপারেটিভ পদ্ধতি, সরকারী নীতি প্রণয়ন করে ফলের আওতায় জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ময়মনসিংহের গারো পাহাড়, সিলেট, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা, বৃহত্তর দিনাজপুরের উঁচু ভূমি, সড়ক ও রেলপথের পাশে, অফিস আদালত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের অব্যবহৃত স্থানসমূহে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফলের চাষ করা সম্ভব । রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, কুষ্টিয়ার চর এলাকা এবং খোলা চরাভুমিতে আরও দ্রুত বর্ধনশীল ফলের চাষ সম্ভব।

ফল উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলে সামগ্রিকভাবে দেশের কি উপকার হতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো

ক) খাদ্য ঘাটতি পূরণ ও পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ

বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বছরই সচরাচর ১৫-২৫ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি বিরাজ করে । প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কারণে এ ঘাটতি আরও বেশি হতে পারে । খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার সাধারনত শতকরা প্রায় ১.৮ ভাগ । অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় শতকরা ২.১৭ ভাগ । মাথাপিছু জমির স্বল্পতা এবং আবাদযোগ্য জমি কমে যাওয়া, সেচ সুবিধার অভাব এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা, কারিগরি জ্ঞানের অভাব ও উপকরনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা, দানাজাতীয় শস্যের হেক্টর প্রতি ফলন কম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে কেবল দানা জাতীয় শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করে খাদ্য এবং পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয় ।

মাণব দেহকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ প্রধান । পুষ্টি উপাদানের সবচেয়ে সহজ ও সস্তা উৎস হলো ফল। বাংলাদেশে ফলের ঘাটতি আছে । অপরদিকে পুষ্টিহীনতা বিরাট সমস্যা । তাই ফল উৎপাদন বৃদ্ধি করে পুষ্টিহীনতা দূর করা সম্ভব।

(খ) কৃষকের আয় বৃদ্ধি

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শস্য জাতীয় ফসল আবাদের চেয়ে ফল চাষ বেশী লাভজনক। যেমন- এক হেক্টর জমিতে কলা । চাষ করে বছরে পঞ্চাশ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব । উন্নত জাতের কুলের একটি গাছ হতে (৬ মিটার ৬ মিটার জমিতে) বছরে ১০০০/- টাকা পর্যন্ত কুল বিক্রি করা যায় । এক হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ করে বছরে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব । অনুরূপভাবে তরমুজ, বাঙ্গি বা ফুটি, পেয়ারা ইত্যাদি চাষ করে অধিক আয় করা সম্ভব । দানাজাতীয় শস্য চাষ করে এত বেশি লাভ করা সম্ভব নয় । নিচের সারণিতে তা দেখানো হলো।

সারণি -৫ দানা শস্য ও ফল চাষের আনুপাতিক আয় (ফলন টনে, লাভ টাকায়)

২.৮% উৎস: বেনসন এটেলজ/৯৮

(গ) কর্মসংস্থান: দ্রুত বর্ধনশীল ফলের চাষে শ্রমিক বেশি লাগে । ফল চাষে কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের পরিচর্যার প্রয়োজন হয় । যেমন সাকারকাটা, ফল পাতলা করা, অঙ্গ ছাটাই, গর্ত তৈরি ইত্যাদি । জমি তৈরি হতে শুরু করে সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, ফলের চারা ও কলম উৎপাদন, দীর্ঘ সময় ধরে ফল সংগ্রহ, প্যাকিং, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কাজে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে ।

(ঘ) শিল্পের বিকাশ: অধিকাংশ ফলের উৎপাদন মৌসুম ভিত্তিক। এ জন্য এক এক মৌসুমে এক এক ফল সীমিত সময়ের মধ্যে পেকে যায় এবং অন্য সময় তা পাওয়া যায় না। এ অবস্থা বিবেচনায় পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহ হিমাগার প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রক্রিয়াজাত করে ফল সংরক্ষণের জন্য শিল্প গড়ে তুলেছে। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে এর বহুবিধ ব্যবহার এবং সংরক্ষণের জন্য আমাদের দেশেও শিল্প গড়ে তালোর সুযোগ আর ফল সংগ্রহাত্তের গ্রেডিং ও প্যাকিং, ফলের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য তৈরি করা ইত্যাদি । উদাহরণ হিসাবে বলা যায় - নারিকেল ও বাদাম হতে তেল তৈরির কারখানা, নারিকেলের ছোবরা হতে দড়ি ও গদি তৈরি এবং ছাবেরা নার্সারিতে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়াও পেয়ারা, আনারস, আম, কমলা, চালকুমড়া ইত্যাদি ফল দ্বারা জ্যাম, জেলী, জুস, মারব্বা, শরবত ইত্যাদি পুষ্টিকর এবং উপাদেয় দ্রব্যদি তৈরির কারখানা স্থাপন করা যায়।

(ঙ) বৈদেশিক মুদ্রা আয় : সঞ্চয় ও বিদেশে টাটকা ও প্রক্রিয়াজাত করা ফলের যথেষ্ট চাহিদা আছে। আমদাি নকারক দেশের চাহিদা অন্যায়ী উৎপাদন ও গ্রেডিং করা ফল পরিষ্কারকরণ, প্যাকেজিং ও টাটকা অবস্থায় পরিবহণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফল বিদেশ থেকে আমদানী করা হয় । দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদেশের চাহিদা মোতাবেক দেশীয় প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলসমূহের চাষ বৃদ্ধি করে আমদানীর পরিমাণ কমিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচে যাবে এবং বাড়তি আয়ও করা যাবে ।

(চ) জমির সদ্ব্যবহার: জমির আইলে তাল, খেজুর, সুপারি গাছ লাগানো যায় । এতে প্রধান ফসলের ক্ষতি ছাড়াই বাড়তি ফসল পাওয়া সম্ভব । এছাড়াও আমাদের দেশে অনেক পতিত জমি আছে, যেখানে ধান বা অন্য কোন দানাজাতীয়, তৈলজাতীয় বা অন্য কোন ফসল করা সম্ভব হয় না। অথচ এসব পতিত জমি অঞ্চল ভেদে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ফল চাষের মাধ্যমে পতিত জমি ব্যবহার উপযোগী করা যায় এবং সেই সাথে ফলের উৎপাদন ও বৃদ্ধি করা সম্ভব ।

(ছ) ঔষধ হিসেবে ব্যবহার: আমলকি, বেল, হরিতকি, পেঁপে, কমলালেবু, ডালিম, বেদানা, পেয়ারা, আম ইত্যাদি ফল ঔষধ হিসেবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ফলের রস অপরিহার্য । পেটের পীড়ার জন্য বেল ও পেঁপে, চক্ষু প্রদাহের জন্য কঁচা আম, যকৃতের জন্য পাকা আম, অজীর্নতা ও কার্ভি রোগের জন্য আমড়া; বলকারক টনিক তৈরিতে আমলকি, হরিকতি ও বয়রা; ডায়ারিয়ার জন্য ডাব ইত্যাদি কাজ করে । এছাড়া অনেক ফল গাছের পাতা, ছাল, শিকড় ইত্যাদি অনেক রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

(জ) পরিবেশের উন্নয়ন: প্রচুর পরিমাণে ফল গাছ লাগানো হলে পরিবেশের উন্নয়নে যথেষ্ট সহায়ক হবে । যেমন পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হবে, মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়বে, ভূমিক্ষয় কমে যাবে, পাখির আবাসস্থল বৃদ্ধি পাবে ইত্যাদি। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের পাখি ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফসল ও পরিবেশের উপকার করে ।

(ঝ) সৌন্দর্যবর্ধক: কিছু কিছু ফল গাছ আছে যেগুলো দেখতে সুন্দর । আবার অনেক গাছের ফল নানা আকারের ও নানা রংয়ের হয়ে থাকে। যেমন- করমচা, জামরুল, ডালিম, আঙ্গুর, লিচু ইত্যাদি ।

ফল চাষ বৃদ্ধির কৌশল

ফলের চাষ বৃদ্ধি করতে হলে প্রধানত: তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে । যেমন- 

ক) বর্তমানে যেসব গাছ রয়েছে সেগুলোর পরিচর্যার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা । 

খ) নতুন করে ফলগাছ লাগানো এবং 

গ) জাত উন্নয়ন করা।

ক) যে সব গাছ বর্তমানে ফল উৎপাদনশীল রয়েছে সেগুলোর পুষ্টির অভাব দূরীকরণ, পরগাছার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ, মৃত বা রোগাক্রান্ত ডালপালা ছাটাই করা, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ, সেচ, নিকাশ এবং সার প্রয়োগ ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় না। এসব কারণে অধিকাংশ গাছ উপযুক্ত পরিমাণে ফলন দিতে পারে না । নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উৎপাদন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা অনেকাংশে সম্ভব ।

(খ) নতুন করে ফল গাছ রোপণের ব্যাপারে কয়েকটি নীতি অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন । যেমন- 

(১) যে সব এলাকায় অনাবাদি জমি রয়েছে সেখানে বাগান আকারে ফলের চাষ করতে হবে। ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ফল চাষের উপযাগী প্রচুর জমি রয়েছে । এসব এলাকায় আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, লিচু, লেবু, কলা জাতীয় ফল, কাজু বাদাম, আমড়া, আঙ্গুর ইত্যাদি ফল গাছের চাষ করা যেতে পারে। এসব এলাকার কৃষকদেরকে শর্ত সাপেক্ষে পাহাড়ি জমি বন্দোবস্ত দেয়া এবং ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তুলতে সহযোগিতা দেয়া যেতে পারে । 

(২) বসতবাড়ির আশেপাশে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য ফল গাছ লাগানো হয়। এ ব্যাপারে উপযুক্ত ফল গাছ। নির্বাচন করা দরকার। বিভিন্ন ফল গাছ এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে পরিবারের খাওয়ার জন্য সারা বছর ফল পাওয়া যায়। স্বল্পমেয়াদি ফল গাছ এজন্য সবচেয়ে উপযোগী। যেমন- কলা, পেঁপে, আঙ্গুর, তরমুজ। পারিবারিক বাগানের জন্য বাড়ির পাশে এ ধরনের ৫-৬ টি ফলের গাছ লাগানো যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি গাছ লাগানোর সুযোগ থাকলে বিভিন্ন ধরনের ফলের সমন্বয় করে যথা আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কুল, সফেদা, ডালিম, জলপাই ইত্যাদি লাগানো যেতে পারে। কেউ যদি একই জাতীয় ফল ২-৩ টি লাগাতে চায় তাহলে আমের যেমন আগাম হিসেবে গুটির আম, মধ্যম হিসেবে ফজলি এবং নাবি হিসেবে আশ্বিনা লাগাতে পারে । অনুরূপভাবে অন্যান্য ফলের বেলায়ও আগাম, মধ্যম ও নাবি জাত নির্বাচন করে লাগাতে পারে ।

(৩) মাঠ ফসল বা সবজির চেয়ে ফল চাষে বেশি সময় লাগে। বাগান আকারে দীর্ঘমেয়াদি ফলের চাষ করতে চাইলে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। জমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও বাড়তি আয়ের জন্য ফল গাছের মাঝে স্বল্প মেয়াদি ফসল উৎপাদন করা যেতে পারে । 

(৪) ফলের জাত ও ফসল নির্বাচন, লাগানো ফসলের পরিচর্যা, আন্তফসল উৎপাদন এবং বাগান ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে তারা সঠিকভাবে ফুল চাষ করে লাভবান হতে পারে । 

(৫) বাংলাদেশের আবহাওয়াতে জন্মানো সম্ভব এমন সব ফলের চারা কৃষকের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা অসম্ভব নাও হতে পারে । এগুলোর চারা সরকারিভাবে উৎপাদন করে আগ্রহী কৃষকদের জন্য সহজলভা করা যেতে পারে। 

(৬) ফল বাজারজাতকরণের জন্য বাজার সৃষ্টি এবং ফল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় খামার যন্ত্রপাতি কৃষকদের সহজলভ্য করার লক্ষে অঞ্চলভিত্তিক কৃষক সমবায় কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। এ সুযোগ সৃষ্টি করা হলে ফল বিক্রির জন্য কৃষকরা দালাল বা ফড়িয়াদের হয়রানির হাত থেকে অব্যহতি পাবে এবং সহজে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে পারবে । 

(গ) উন্নত জাতের গাছ নির্বাচন করে নতুনভাবে লাগাতে হবে । গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবন ও শনাক্ত করতে হবে । সেগুলোর চারা ও কলম তৈরি করে দ্রবত কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করতে হবে ।

ফল চাষ বৃদ্ধিতে করণীয়

বাংলাদেশে মাথাপিছু ফলের উৎপাদন অত্যন্ত কম। তাই মাথাপিছু ফলের উৎপাদন বাড়াতে, পুষ্টির যাগোন দিতে, পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার । যা ফল চাষ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে । যেমন 

১। জমির উচ্চতা নিরূপণ করে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ফল চাষের জন্য এলাকা চিহ্নিতকরণ । 

২। অঞ্চলভেদে ফলের জাত নির্বাচন ও চাষের জন্য সুপারিশ করা । 

৩। ফলের উন্নত জাত উদ্ভাবন । 

৪ । সুস্থ চারা কলম উৎপাদন এবং সকল এলাকায় সহজে পাওয়ার ব্যবস্থাকরন 

৫। ফলের গুরুত্ব এবং পুষ্টিমাণ সম্পর্কে জনগণকে অবহিতকরণ । 

৬। উন্নত প্রথায় ফল চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ । 

৭ । ফল উৎপাদনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কৃষকদের বীমার ব্যবস্থাকরণ । 

৮। ফল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের সুষ্ঠ ব্যবস্থাকরণ। 

৯। ফলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার ব্যবস্থাকরণ। 

১০। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাকরণ। 

১১ । ফল উৎপাদনের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান । 

১২। যে সব গাছ ফল দেয় না সেগুলোর পরিচর্যা করা । 

১৩ । ভাল ফল উৎপাদনকারীকে উৎসাহ প্রদানের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাকরণ ।

১ । জমির উচ্চতা নিরূপন করে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ফল চাষের জন্য এলাকা চিহ্নিতকরণ উঁচু জমি, বৃষ্টিপাত কম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় লিচু ভালো জন্মে। পানির কাছে এবং লবণাক্ত পানি এলাকায় নারিকেল ভালো জন্মে । পানিতল কাছে অথচ জলাবদ্ধতা হয় না এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি সেখানে পেয়ারা, দেওফল, ডুমুর ভালো জন্মে। জমি উঁচু মাটি লালচে এবং বৃষ্টিপাত বেশি অথচ পানি দাঁড়ায় না সেখানে সুপারি, আনারস, কাঁঠাল জাম ইত্যাদি ভাল জন্মে। তাই এভাবে বিভিন্ন ফল ভিত্তিক এলাকা গিতি করে ফল চাষের জন্য সুপারিশ করতে হবে ।

২। ফলের জাত বাছাই: যে সব জাতে ফল তাড়াতাড়ি ধরে এবং বেশি পরিমাণে হয় সেগুলো বাছাই করে চাষ করা উচিত। যেমন

ফলেরজাত উন্নত জাত
আমফজলি, আম্রপালী, লক্ষৌ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, মল্লিকা, গোপালভোগ, তাসমিরা
পেয়ারাকাজী, স্বরুপকাঠি, আঙ্গুর, পেয়ারা
লিচুচায়না-৩, বোম্বাই, মোজাফরপুরী, বেদানা
কলামেহের সাগর, সবরী, করবী
আনারসক্যালেন্ডার (জায়েন্ট কিউ), হানিকুইন, ঘোড়াশাল
নারিকেলটিপিকা সবুজ, টিপিকা বাদামি ও পেয়ার্ক (ভিয়েতনাম)

৩। ফলের উন্নত জাত উদ্ভাবন: গবেষণার মাধ্যমে ছোট গাছে বেশি ফল ধরে, প্রতি বছর প্রচুর ফল দিতে পারে বা বছরে একের অধিক বা ফল দিতে পারে, ফলের পুষ্টিমাণ বেশি, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে ইত্যাদি গুণাগুণ সম্পন্ন জাত উদ্ভাবন করা । 

৪। সুস্থ চারা কলম উৎপাদন এবং সকল এলাকায় সহজে পাওয়ার ব্যবস্থাকরণ: সাধারণত কৃষকরা গুণগত চারা উৎপাদন করতে পারে না। তাই বিভিন্ন এলাকায় অভিজ্ঞ লাকে দ্বারা চারা কলম উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে । নার্সারি স্থাপনকারীদেরকে উৎসাহিত করার জন্য জমি বন্দোবস্ত ও ঋণ সুবিধা দেওয়া উচিত । এ সুবিধা সৃষ্টি করা হলে কৃষকরা নিজ এলাকায় সহজে উন্নতজাতের চারা/কলম পাবে এবং ফল চাষে আগ্রহী হবে । চারার । চেয়ে কলমের গাছে তাড়াতাড়ি ফল ধরে এবং ফল সংগ্রহ ও অন্যান্য পরিচর্যা করা সহজ হয়। এর ফলে কৃষকরা উৎসাহিত হবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা সহজ হবে। বাংলাদেশের আবহাওয়াতে জন্মাতে পারে এমন বিদেশি অপ্রধান ফলের চারা কৃষকদের পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না । এসব ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে চারা সংগ্রহ করে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিতরণ করতে হবে । 

৫। ফলের গুরুত্ব এবং পুষ্টিমান সম্পর্কে জনগণকে অবহিতকরণ: বাংলাদেশে পুষ্টি সমস্যা খুব বেশি । এদেশে প্রািেটনের যথেষ্ট ঘাটতি আছে । প্রািেটনের অভাবে শতকরা ৫০ ভাগ শিশু স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । পাঁচ বছরের বয়সের নিচের শিশুদের শতকরা ৭৫ ভাগই অপুষ্টির শিকার । শতকরা ৭৬ ভাগ পরিবার ক্যালরি এবং শতকরা ৯০ ভাগ পরিবার ভিটামিন “এ”- এর অভাবে ভুগছে । শতকরা ৭৫ ভাগ মহিলা ও শিশু রক্তশূন্যতায় ভুগছে এবং ১০ লক্ষ লাক গলাফোলা রোগে আক্রান্ত। ভিটামিন “সি” রাইবাফ্লোবিন এবং ফলিক এসিডের ঘাটতিও খুব বেশি । এদেশে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি । ফল চাষ বৃদ্ধি করা হলে ও বেশি করে ফল খাওয়ার অভ্যাস করা হলে অপুষ্টিজনিত সমস্যা সহজে দুর করা সম্ভব ।

৬। উন্নত প্রথায় ফুল চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ: সফলভাবে ফল চাষ করার জন্য উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত । যাতে তারা নিজ এলাকায় তা বাস্তবায়ন করতে পারে।যেমন- উন্নত জাত নির্বাচন, চারা তৈরি, গর্ত খনন, চারা রোপণের পূর্বে এবং পরে সার প্রয়োগ সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি, বিভিন্ন ধরনের আন্ত পরিচর্যা, ফল পাড়া, বাছাই, সংরক্ষণ ইত্যাদি । সময়মত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং এলাকার উপযোগী কলাকৌশলের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে কৃষকরা ফল চাষ বৃদ্ধিতে উৎসাহ পাবে। বেশি সময় ধরে ফল পাওয়ার জন্য আমের আগাম হিসেবে গুটি আম, মধ্যম হিসেবে ফজলি, নাবি হিসেবে আশ্বিনা আম । চাষ করা যেতে পারে। রসা বা গালা কাঁঠাল আগে পাকে, আধা রসা বা আধাগলা কাঁঠাল কিছুটা পরে পাকে এবং চাউলা কাঁঠাল দেরিতে পাকে। আগাম, মধ্যম ও নাবিতে পাকে এভাবে ফল নির্বাচন করে চাষ করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে কুল, জাম, লেবু ইত্যাদিও চাষ করা যেতে পারে।

৭। ফল উৎপাদনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কৃষকদের ঝুঁকি বীমার ব্যবস্থাকরণ: কৃষকদেরকে ফল উৎপাদনকালে নানাবিধ ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। যেমন ঝড়ঝঞ্জা, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ, বন্যা বা খরা, বাজারজাতকরণ সমস্যা ইত্যাদি । এ অবস্থায় কৃষকরা যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হলে তারা বেশি করে ফল চাষে আগ্রহী হবে।

৮। ফল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা: আমাদের দেশের অধিকাংশ ফলই মৌসুমী ফল । তাই নির্দিষ্ট মৌসুমে নির্দিষ্ট ফল একসাথে পাকে। যার ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিক্রয় করতে হয়।কোন কারণে বিলম্ব হলে প্রচুর ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। সরকারিভাবে বা প্রতিটি ফল উৎপাদন এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দ্বারা বা ফল চাষীদের দ্বারা ফল চাষী সমবায় করা যায়। এর মাধ্যমে মৌসুমে অতিরিক্ত ফল সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা হলে কৃষকরা ফল চাষে আগ্রহী হবে। অনুরূপভাবে ফল চাষীদের উৎপাদিত ফল বিক্রয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও তারা বেশী করে ফল চাষ করবে।

৯। কৃষকদের ফলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ: প্রায়শই দেখা যায় যে ফড়িয়া বা দালাল দ্বারা ফল উৎপাদনকারী কৃষকগণ প্রতারিত হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার ত্রুটি এবং এলাকাভিত্তিক ফলের ক্রয়কেন্দ্র না থাকায় কৃষকরা অনেক সময় ফল উৎপাদন করে বিপাকে পড়ে । যার ফলে কম দামে ফল বিক্রি করতে হয় । তাই ফল বিক্রয় ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে কৃষকরা তার পন্যের উপযুক্ত মূল্য পাবে এবং ফল চাষ বৃদ্ধিতে উৎসাহিত হবে ।

১০। কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাকরণ: ফলচাষ করতে বেশি টাকার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও ফলের বাগানে আন্ত পরিচর্যার র্যার জন্য দামি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় । যা আমাদের দেশের গরীব কৃষকদের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব না । বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি ফলের বাগান হতে ১০ হতে ১২ বছর পর উৎপাদন পাওয়া যায়। আমাদের দেশের গরিব কৃষকদের পক্ষে ১০ হতে ১২ বছর জমি ফেলে রাখা অসম্ভব। তাই এসব ক্ষেত্রে উৎপাদন শুরু না হওয়া পর্যন্ত সুদবিহীন ঋণ দেয়া উচিত । এতে কৃষকরা বেশি করে ফল চাষে আগ্রহী হবে ।

১১। কৃষকদেরকে ফল উৎপাদনের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান: মাঝে মাঝে ফল বাগানের মাটিতে সেচের পানিতে নানাবিধ সমস্যা হয় । এমনকি নানাবিধ রোগ, পোকামাকড়েরও প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উপযুক্ত পরামর্শ দেয়া প্রয়োজন ফলের গাছের পরিচর্যার জন্য ভাড়া ভিত্তিতে মেশিনারী সরবরাহের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে, যা ফল চাষীদের আগ্রহ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে । এমনকি এগুলো হাতে কলমে করে দেখানো হলে তা দেখে অন্যান্য কৃষকরা উৎসাহিত হবে ।

১২। যে সব প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ বিভিন্ন কারণে ফল দেয় না সেগুলোর পরিচর্যা করা: গাছের পুষ্টির অভাব থাকলে সার প্রয়োগ করা দরকার। গাছে পরগাছা, অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ও রোগ পোকামাকড়ের আক্রমণ থাকলে তা কেটে হেঁটে পরিষ্কার করে দিতে হবে । প্রয়োজনীয় পরিচর্যার মাধ্যমে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব ।

১৩ । ভালো ফল উৎপদানকারীকে উৎসাহ প্রদানের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাকরণ বিভিন্ন সময়ে ফল প্রদর্শনীর আয়াজেন করে বা কমিটির মাধ্যমে ভালো ফল চাষীদের নির্বাচন করে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে । এতে চাষীরা উৎসাহ পাবে এবং ফল চাষে আগ্রহী হবে।

ফল চাষের সার্বিক অবস্থা

বাংলাদেশে বর্তমানে(২০০৬-০৭) ১৪৪.২৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফলের চাষ করা হয়ে থাকে। হিসাব অনুযায়ী এ জমির পরিমাণ মোট চাষযোগ্য জমির মাত্র শতকরা ০.৭৫ ভাগ। বিগত দশ এগার বছরে ফলের জমি কমেছে ১১৪.৭৪ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন সে তুলনায় খুব সামান্যই বেড়েছে। নিচের সারনিতে (সারণি-৮) উলেখিত তথ্য মোতাবেক দেখা যাচ্ছে যে, এদেশে দ্রুত বর্ধনশীল ফলই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ উৎপন্ন হয়। দ্রুত বর্ধনশীল ফলের মধ্যে কলা, পেঁপে, আনারস ও তরমুজই প্রধান। ২০০৬-০৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এদেশের মোট উৎপাদিত ফলের প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ হচ্ছে দ্রুত বর্ধনশীল ফল । আবার দ্রুত বর্ধনশীল ফলের শতকরা ৭০ ভাগই হচ্ছে কলা ।

দেশে ৪১৩১.১৩ হাজার মেট্রিক টন ফল উৎপন্ন হচ্ছে । কিন্তু আমাদের মোট চাহিদা হচ্ছে ৬২৯৬.২৫ হাজার মেট্রিক টন । সে মোতাবেক ফলের উৎপাদন কমপক্ষে ২/৩ গুণ বৃদ্ধি করা প্রয়াজন ।

পেঁপে, লিচু, লেবু জাতীয় ফল, কুল, পেয়ারা, তাল ও অন্যান্য ফলের আওতায় জমির পরিমাণ খুবই কম । আবার লিচু, কুল, পেয়ারা, নারিকেল ও লেবু জাতীয় ফলের গড় ফলন অত্যন্ত কম । উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, এদেশে ফলের উৎপাদন বাড়ানোর এখনো যথেষ্ট সুযাগ আছে ।

বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটি ফল চাষের জন্য অনুকুল থাকায় ফলের উৎপাদন বাড়ানার বেশ সুযোগ রয়েছে । অনেক বিদেশি ফল যেমন রাম্বুটান, ম্যাঙ্গাস্টিন, আঙ্গর, স্টবেরি, এভাকেডো, কাজুবাদাম প্রভৃতি ফল এদেশে জন্মানো সম্ভব । উত্তরাঞ্চলে অনেক পতিত জমি, চট্টগ্রাম, ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কিছু পাহাড়িয়া অঞ্চল, বড় বাস্তার ধারে, পুকুর পাড়, বিভিন্ন অফিস সংলগ্ন মাঠ, আদালত প্রাঙ্গণ, রেললাইনের পাশ, বতসবাড়ির আশেপাশে এবং অনুরূপ আরও অনেক জমিতে অধিক সংখ্যায় ফল গাছ লাগিয়ে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ ও সম্ভাবনা এদেশে এখনও বিদ্যমান আছে ।

তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইতিপূর্বে রোপিত ফল গাছ সমূহের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে । বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফলের হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৬০-৭০ টন । সেখানে আমাদের দেশে তা মাত্র ৭ টনের মত । এ থেকে অনুমাণ করা যায় যে আমাদের দেশে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কত বেশি ।

ফল চাষীদের সমস্যাও কিন্তু কম নয়। জমির স্বল্পতা ও নিম্ন উৎপাদনশীলতা, উৎপাদন উপকরণের দুষপ্রাপ্যতা ও দুমূল্য, লাগসই প্রযুক্তির অভাব, কৃষকের শিক্ষার ও প্রশিক্ষণের অভাব, দারিদ্র্য ও ঋণগ্রস্ততা, প্রাকৃতিক দুযোর্গ, আর্থিক ঝুঁকির আশংকা, ফল সংরক্ষনে অসুবিধা, পরিবহন সমস্যা, প্রক্রিয়াজাতকরন শিল্পের অভাব, বিপনন সমস্যা, শস্যবীমার অনুপস্থিতি ইত্যাদি নানাবিধ কারণ কৃষকের ফল চাষে আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে ।

ফল চাষীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে সরকারি অঙ্গীকার ও সাহায্য সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জনগণের সচেতনতা ও সদিচ্ছা ফলের উৎপাদন বাড়াতে পালন করতে পারে ।

সারণি-৩ হতে দেখা যায় স্বল্প মেয়াদি ফল সমূহ যেমন, কলা, পেঁপে, আনারস, তরমুজ ইত্যাদি ফলই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়। দীর্ঘমেয়াদি ফলের মধ্যে আম চাষে অন্তর্ভুক্ত জমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি । তাছাড়া কাঁঠাল, সুপারি, নারিকেল ইত্যাদি ফলের আওতায়ও বেশ কিছু পরিমাণ জমি আছে । ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান উপলদ্ধি করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি দেশের তুলনামূলক গড় উৎপাদন সারনি-৮ তুলে ধরা হলো ।

সারণি-৬ বাংলাদেশ ও অন্যান্য কয়েকটি দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ফলের তুলনামূলক উৎপাদন(০০০টন)

Content added By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১ । আমাদের দেশে মাথাপিছু দৈনিক ফলের প্রাপ্যতা কত ? 

২। দেশের মোট আবাদি জমির কতটুকু জমিতে ফল চাষ করা হয় ? 

৩ । বাংলাদেশে প্রতিদিন কত জমি চাষের আওতা বহির্ভূত হয়ে যাচ্ছে ? 

সংক্ষিত প্ৰশ্ন 

১ । বাংলাদেশে ফল চাষের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা কর । 

২। বাংলাদেশে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ? 

৩ । বাংলাদেশে ফল চাষ বৃদ্ধির কৌশল ব্যাখ্যা কর । 

৪ । বাংলাদেশে ফল চাষের মাধ্যমে কৃষকের আয় কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় আলোচনা কর । 

৫ । বাংলাদেশে ফলের আওতায় মোট জমির পরিমাণ ও মোট ফল উৎপাদন লিপিবদ্ধ কর। 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১। বাংলাদেশে ফল চাষের আওতায় জমির পরিমাণ অতীত ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর । 

২। বাংলাদেশে বিভিন্ন ফলের উৎপাদন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা কর । 

৩ । বাংলাদেশে বিভিন্ন ফলের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন সম্বন্ধে বর্ণনা কর । 

৪ । বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগে ফল চাষের আওতায় জমির পরিমাণ ও উৎপাদন সম্পর্কে বিবরণ দাও । 

৫ । বাংলাদেশে ফল চাষের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা কর । 

৬ । বাংলাদেশে ফল চাষের সর্বাধিক অবস্থা ব্যাখ্যা কর ।

Content added By