এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বাংলাদেশে ফল উৎপাদনের চলমান সমস্যা বহুবিধ। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের সমস্যার চেয়ে বাংলাদেশে ফল উৎপাদনের সমস্যা জটিল ও বহুবিধ। তবে অধিকাংশ সমস্যাই কৃষি বিষয়ক অন্যান্য সমস্যার সাথে ওতপ্রাতেভাবে জড়িত । আদিকাল হতে এ সমস্যা পুরুষানুক্রমে চলে আসছে । বিজ্ঞানের চরম উন্নতি ঘটলেও বাংলাদেশে এসব সমস্যা সমাধানের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি । এসব কারনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলের জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ যে হারে বাড়ানো উচিত ছিল আজ পর্যন্ত সে হারে বাড়েনি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অব্যাহত চাপের মুখে তাই বাড়তি জনগণের চাহিদা পূরণ ও অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূরীকরণে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাষের কৌশল বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে। চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সাথে যুক্ত হচ্ছে আরো নতুন নতুন সমস্যা । তবে সমস্যাগুলোকে সম্মিলিত ভাবে সমাধান করে এদেশের ফলের উৎপাদন বহুগুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

ফল চাষের সমস্যাসমূহ

ফল চাষের সমস্যাগুলোকে সম্মিলিত ভাবে বিবেচনায় রেখে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- 

১। আর্থ সামাজিক সমস্যা 

২। আর্থিক ও কারিগরি সমস্যা 

৩। আইনগত সমস্যা

উপরোক্ত সমস্যাগুলোকে আবার কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১। আর্থ-সামাজিক সমস্যা: দেশের প্রচলিত চাষাবাদ ব্যবস্থা বিবেচনায় আর্থ-সামাজিক সমস্যাকে নিয়ে বর্ণিত শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন- 

ক) জমির স্বল্পতা 

খ) কৃষকের দারিদ্রতা বা অর্থের অভাব 

গ) আর্থিক ঝুঁকির আশঙ্কা 

ঘ) পরিবহন সমস্যা 

ঙ) বিপণন বা বাজারজাতকরণ সমস্যা 

চ) উৎপাদন উপকরণের ও যন্ত্রপাতির মূল্য বেশি 

ছ) গতানুগতিক প্রথায় চাষাবাদ ও প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতা

২। আর্থিক ও কারিগরি সমস্যা: এলাকা ভেদে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক অবস্থা, জমির প্রকৃতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি। বিষয় বিবেচনা করে এ সমস্যা টিকে নিম্নোক্ত ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । যেমন- 

ক) নিম্ন উৎপাদনশীলতা 

খ) জমির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা কম 

গ) জমির উপযুক্ততা কম(স্থান, পরিবেশ) 

ঘ) উৎপাদনের উপকরণের অভাব (ফল বাগানের জন্য যন্ত্রপাতি, চারা কলম উৎপাদনের দ্রব্যাদি, প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার এর দুষপ্রপ্যতা ইত্যাদি)

ঙ) ফল সংরক্ষণের সুযোগ সুবিধা ও কারিগরী জ্ঞানের অভাব 

ছ) প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের অভাব 

জ) ফলের গুণাগুণ বিচার করা হয় না 

ঝ) প্রাকৃতিক দুযোর্গ (বন্যা, অতিবৃষ্টি, খরা, ঘূর্ণিঝড়, কুয়াশা ইত্যাদি) 

ঞ) জলাবদ্ধতা ও জমিতে লবণাক্ততা 

ট) ব্যাংক ঋণের অভাব/মূলধনের অভাব

৩। আইনগত: উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আইনগত দিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আইনগত দিক প্রণয়ন ও গ্রহনে নিম্ন বর্নিত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। যথা- 

ক) কৃষি অঞ্চল চিহ্নিতকরণের ওপর ভিত্তি করে ফল চাষে বাধ্যকরণ 

খ) ফল উৎপাদনে ও ফল পাকানোর কাজে নিষিদ্ধ ঔষধ ব্যবহার ও ঔষধের অপপ্রয়োগ রোধ করা 

গ) রফতানি নীতি প্রনয়ন 

ঘ) রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ধর্মঘট পরিহার 

ঙ) ফল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মধ্যবর্তী কালে ফড়িয়া-দালালদের দৌরাত্ম্য রোধ

ফল চাষের প্রধান প্রধান সমস্যা

বাংলাদেশের ফল চাষের যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ফল চাষ করতে গিয়ে অনেক ধরনের বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । সমস্যাগুলোর কিছু কিছু উতরানো সম্ভব হলেও এমন কিছু সমস্যা আছে যা খুবই জটিল এবং সমাধান সময় সাপেক্ষ। ফল চাষের প্রধান প্রধান সমস্যা নিম্নলিখিত ভাবে চিহ্নিত করা যায় । যেমন- 

১। জমির স্বল্পতা ও নিম্ন উৎপাদনশীলতা ২। ব্যবহারিক জ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিল্পের অভাব 

৩। উৎপাদন উপকরণের দুষপ্রাপ্যতা ও দুমূল্য এবং কৃষকের দারিদ্রতা 

৪ । প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আর্থিক ঝুঁকির সম্ভাবনা 

৫। ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের অভাব 

৬। ফল পরিবহন ও বিপণন সমস্যা 

৭। বাজার ব্যবস্থার অপ্রতুলতা

১। জমির স্বল্পতা ও নিম্ন উৎপাদনশীলতা ।

ফল চাষের জন্য তুলনামূলক ভাবে উঁচু জমি দরকার । চাষাবাদ যোগ্য সব জমিতেই ফল চাষ করা যায় না । ফল চাষের জন্য এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। কলা, পেঁপে, আনারস, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, আঙ্গুর, তরমুজ, ফুটি ইত্যাদি ফল চাষের জন্য বেশ উর্দু জমির দরকার । বাস্তব ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এরুপ উঁচু জমির পরিমাণ এমনিতেই কম । যার কারনে ইচ্ছা থাকলেও নিচু এলকায় সার্থক ভাবে ফল চাষ করা যায় না। জনসংখ্যার ক্রমাগত চাপে জমি বিভক্ত হয়ে জমির আকার ছোট হয়ে আসছে ফলে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে । বাংলাদেশে চাষাবাদযোগ্য মোট জমির শতকরা ৭৫ ভাগ জমিতে ফল চাষ করা হয় । এর প্রধান কারন হলো বিপুল জনগাষ্ঠেীর খাদ্য ঘাটতি মিটানা েও দারিদ্র্য দূর করার জন্য দানা জাতীয় খাদ্যশস্য বেশি করে চাষ করা । এ ছাড়াও বর্তমানে জমিতে বেশ কিছু খাদ্য উপাদান বিশেষত গৌণ খাদ্য উপাদানের যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে । মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ও প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফলে জমির উৎপাদনশীলতা কমে ফল উৎপাদনের হার কমে গেছে।

আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফল চাষ হয় না বিধায়, উৎপাদন খুব কম । বাংলাদেশে ফলের গড় ফলন ৭.৮ টন/হেঃ। যেখানে বিশ্ব উৎপাদন ৩০ টন মাত্রায় টন/হেঃ। ফল বাগানে সঠিক সময়ে উপযুক্ত পরিমাণ সার ব্যবহার না করা, উপযুক্ত সময় ও মাত্রায় কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ না করা, বাগানে ঘটাইসহ সঠিক আন্তঃ পরিচর্যা না করার কারণে ফলের উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পায় ।

(২) ব্যবহারিক জ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষার অভাব

আমাদের দেশে যারা ফল চাষের সাথে জড়িত তারা প্রায় নিরক্ষর ও কৃষি শিক্ষা সম্পর্কে অঙ্গ। ফল চাষের ব্যবহারিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্বন্ধে তারা একেবারেই অজ্ঞ। পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নতুন প্রযুক্তি উ দ্ভাবন যেমন তাদের পক্ষে সম্বব হয় না ঠিক তেমনি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কৃত ব্যবহারিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্রহনে তাদের অনীহা দেখা যায় অথবা তারা এ ব্যাপারে তেমন সাড়া প্রদান করেন না। পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন বারমাসী আমের নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাপান, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তান উন্নত ও মিষ্টি জাতের আঙ্গুর উদ্ভাবন করেছে। থাইল্যান্ড ভাইরাস প্রতিরোধক এবং ১০০ ভাগ স্ত্রী গাছ উৎপাদক পেঁপে বীজ শনাক্ত করতে পেরেছে । কিন্তু বাংলাদেশে এই ব্যাপারে এখনও পিছিয়ে । গবেষণার মাধ্যমে জাত উদ্ভাবনে তেমন কোন অগ্রগতির হয়নি। বিজ্ঞান ভিত্তিক ও বাস্তবমুখী ব্যবহারিক জ্ঞান এবং কলাকৌশলের অভাব গতানুগতিক ভাবে চাষের পরিবর্তে নতুন জাত ও চাষ কৌশল তেমন উদ্ভাবন করা হয় নাই । ফল চাষে কোন সময় বাগানের কি পরিচর্যা দরকার জ্ঞানের অভাবে ভাল উৎপাদন হয় না। কৃষকরা গতানুগতিক পন্থায় ফল চাষ করার ফলে উৎপাদান অনেক কম হয়। এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য ব্যবহারিক জ্ঞান, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আধুনিক শিক্ষার বিস্তার দরকার ।

(৩) উৎপাদন উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতা ও মূল্য এবং কৃষকের দারিদ্রতা

আমাদের দেশে ফল উৎপাদনের অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে প্রয়োজনীয় উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতা ও দুর্মূল্য এবং কৃষকের দারিদ্রতা। উৎপাদন উপকরন বলতে বীজ, সার, সেচ যন্ত্রপাতি, কীটনাশক, চারা/কলম ও পরিচর্যারজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বুঝায়। বাংলাদেশে ফল চাষের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ মান সম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য বীজ বা চারা কলম পাওয়া যায় না। আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক দরিদ্র । ফল চাষে প্রাথমিক ভাবে অনেক মূলধন লাগে যা অধিকাংশ কৃষকের নেই । ফল চাষীরা প্রয়োজন ও চাহিদা মোতাবেক ফলের বীজ, চারা ও কলম পায় না অথবা পেলেও উন্নত মানের হয়না অথবা এদের দাম ও এত বেশি যে দরিদ্র কৃষকের পক্ষে এগুলো নগদ মূল্যে কেনা সম্ভব হয় না । ফল চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, সার ঔষধ ইত্যাদির মূল্যের উর্ধগতি কৃষককে ফল চাষে নিরুৎসাহিত করে ।

(৪) উচ্চফলনশীল জাতের অপ্রতুলতা এবং উন্নতগুণ সম্পন্ন চারা কলমের অভাব

বাংলাদেশে ফলোৎপাদনের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে উন্নত জাতের অপ্রতুলতা। প্রধান ফলের স্বল্প সংখ্যক উন্নত জাত উদ্ভাবিত হলেও অধিকাংশ অপ্রধান ফলের কোন উন্নত জাত নেই । এতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গুনগত মান সম্পন্ন ফল উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। উন্নত গুনাগুন সম্পন্ন চারা/কলম বলতে অধিক উৎপাদনশীল উন্নত জাতের রোগ বালাই মুক্ত সুস্থ, সবল ও সঠিক বয়সের চারা বুঝায়। চারা/কলম উৎপাদনের সাথে সংশিষ্ট লোকজনের প্রযুক্তি গত জ্ঞানের অভাব ও উদাসিনতার কারণে উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন চারা/কলম উৎপাদন করা যাচ্ছে না ।

সে জন্য কৃষকরা সুস্থ সবল চারা/কলম প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে উন্নতমানের ফল উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।

(৫) অপরিকল্পিত ফল বাগান সৃজন ও ফল গাছের সঠিক পরিচর্যার অভাব

কৃষকরা বসতবাড়ির আঙিনা অন্যান্য বনজ বৃক্ষের ছায়ায় ঘন করে ফল গাছ লাগিয়ে থাকে । ফল গাছ আলোর অভাবে লিকলিকে হয়ে বাড়তে থাকে এবং ফলন কম দিয়ে থাকে । কখনও কখনও কৃষকরা বাগানেও ঘন করে ফল গাছ রোপন করে । নির্দিষ্ট দূরত্বে না লাগানোর ফলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায় । নানাবিধ রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বাড়ে এবং উৎপাদনশীলতা কমে যায়। এছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক সঠিক প্রজাতি ও জাত নির্বাচন না করায় আশানুরূপ ফলন হচ্ছে না ।

কৃষকেরা সাধারণত ফল গাছের পরিচর্যা করে না । ফল গাছের পরিচর্যা করলে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সে বিষয়েও তারা বুঝতে চায় না। এর ফলে গাছে পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা যায় এবং রাগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণে বেড়ে যায়। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গাছের আয়ু কমে যায়। কখনও কখনও বিধিসম্মতভাবে পরিচর্যা না করার দরুন গাছের ক্ষতি হয় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।

(৬) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আর্থিক ঝুঁকির আশংকা

বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দেশ । প্রতি বছরই বন্যা, ঝড়, জলাচ্ছ্বোস, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, রোগ, পোকামাকড় অথবা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আবির্ভাব হয়। এতে ফলের ব্যাপক ধ্বংস লীলা সাধিত হয় । যেমন- অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বা বন্যায় পেঁপে, কলা, পেয়ারা, লেবু জাতীয় ফল, জামরুল ইত্যাদি ফল সাংঘাতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শিলাবৃষ্টি ও সাইক্লোন বা প্রবল ঝড়ে আম, কলা, পেঁপে, কুল, লিচু ইত্যাদি ফলের গাছ ভেঙে যায় এবং ফল ছিড়ে পড়ে প্রচুর ক্ষতি হয়। এছাড়া রোগ ও পোকামাকড় এবং তাপমাত্রার তারতম্যের কারনে ফলের প্রচুর ক্ষতি হয় । তা ছাড়া এদেশের দরিদ্র কৃষকের পক্ষে ফল চাষের জন্য কয়েক বছর মুলধন বিনিয়াগে করে লাভের আশায় অপেক্ষা করা একেবারেই অসম্ভব । কাজেই কৃষক ঝুঁকি নিয়ে নিবিড় মূলধনভিত্তিক ফল চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ।

(৭) ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের অভাব

ফল খুবই দ্রুত পচনশীল বলে একে সাধারণভাবে খুব বেশি সময় সংরক্ষন করা যায় না। এ পচনশীল ফলকে পচনের হাত হতে রক্ষা করার কোন উন্নত কলা কৌশল বা হিমাগারে ফল সংরণের কোন ব্যবস্থা এবং কোন । প্রক্রিয়াজাতকরন শিল্প আজ পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। অধিকাংশ ফল প্রায় একই সময়ে পাকার কারণে ফলের দাম খুব । কম হয় এবং উৎপাদিত ফলের অধিকাংশ পচে নষ্ট হয়। ফলে কৃষকরা নাম মাত্র মূল্যে ফড়িয়াদের কাছে ফল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ফলে আর্থিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আনারস, আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, তরমুজ ইত্যাদি ফলের প্রক্রিয়াজাতকরন ব্যবস্থা থাকলে অমৌসুমে বাজারজাত করা যেত। এছাড়া বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো। এতে চাষীদের মধ্যে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আগ্রহ সৃষ্টি হতো ।

(৮) পরিবহন ও বিপণন সমস্যা

আমাদের দেশের অধিকাংশ ফল গ্রামের দুর্গম এলাকায় উৎপাদিত হয়। এ সব উৎপাদন এলাকার সাথে বিপণন এলাকা তথা শহরের ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা পড়ে উঠেনি। এ কারনে উৎপাদন এলাকা হতে শহরাঞ্চলে ফল পৌঁছতে অনেক সময় লাগে। খরচও বেশি পড়ে যায়। তাছাড়া ফলের গুনগত মান কমে যায় এবং অনেক সময় ফল পঁচে যায়। অনেক সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হরতাল ও পরিবহন ধর্মঘটের ফলে ফল উৎপাদনকারীগন যথাসময় উৎপাদিত ফল বাজারজাত করতে পারে না। রফতানিকৃত দ্রব্য রেলস্টশনে, সমুদ্র বন্দরে, ট্রাক স্ট্যান্ডে, লঞ্চ বা নৌকা ঘাটে, বিমান বন্দরে দীর্ঘ সময় আটকা পড়ে থেকে নষ্ট হয় যায় । এতে অনেক সময় রাস্তা ঘাটের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ফল বিক্রয় করতে হয় বলে ফলের পচন ত্বরান্বিত হয়, ফলের অপচয় হয় এবং কৃষকরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ফল বিপণনের সাথে জড়িত রয়েছে সম্পূর্ণ ফড়িয়া ও অন্যান্য মধ্যস্বত্বভোগি সুবিধাবাদি গোষ্ঠি । ফল চাষের লভ্যাংশ এই সব ফড়িয়াদের হাতে চলে যায় । কৃষকের নাম মাত্র মুল্যে ফল বিক্রির করতে হয় বলে মূলধন অনেক সময় উঠেনা । তাই কৃষকও ফল চাষে তেমন গুরুত্ব দেয় না ।

উপরোক্ত সমস্যাবলী ছাড়াও ভালো জাতের অভাব, ঋন সংক্রান্ত সমস্যা সেচ সুবিধার অভাব, কৃষি সমবায়ের অনুপস্থিতি, কৃষি সম্প্রসারণ ও গবেষনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, ত্রুটিপূর্ণ কৃষি বাজার ব্যবস্থা, ফড়িয়া দালালদের দৌরাত্ম, শস্য বীমার অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণে ফলোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ।

Content added By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১। বাংলাদেশে ফলের গড় ফলন কত ? 

২ । কোন দেশে ভাইরাস প্রতিরোধক ১০০ ভাগ স্ত্রী গাছ উৎপাদক পেঁপে বীজ শনাক্ত করতে পেরেছে ? 

৩ । ফল চাষের জন্য সাধারণত কি ধরনের জমি দরকার ?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১। ফল চাষের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোর তালিকা তৈরি কর । 

২ । ফল চাষে জমির অভাব ও নিম্ন উৎপাদনশীলতা সমস্যা সম্পর্কে বর্ণনা কর । 

৩ । উৎপাদন উপকরের দুর্মূল্য ও দুষপ্রাপ্যতা সম্পর্কে লেখ । 

৪ । ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করন সমস্যা বর্ণনা কর । 

৫ । ফল চাষে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আর্থিক ঝুঁকি ব্যাখ্যা কর ।

রচনামূলক প্রশ্ন 

১ । ফল উৎপাদনের সমস্যা সমাধানের উপায়গুলো লিপিবদ্ধ কর । 

২। বাংলাদেশে ফল চাষের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোর বিবরন দাও। 

৩ । ফল পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সমস্যা বর্ণনা কর । 

৪ । মানসম্পন্ন চারা ও উচ্চফলন শীল জাতের অভাব এবং অপরিকল্পিত বাগান ও ফল বাগানের সঠিক পরিচর্যা জ্ঞানের অভাব সম্পর্কে আলোচনা কর ।

Content added By