এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

কোন জমিতে প্রধান ফসলের সাথে অন্য কোন ফসল চাষ করার প্রক্রিয়াকে আন্তঃফসল চাষ আর অতিরিক্ত যে ফসল চাষ করা হয় তাকে সাথী ফসল বলে । মাথাপিছু আবাদি জমির স্বল্পতা, মাটির উর্বরতা, কৃষকের আর্থিক অস্বচ্ছলতা, জনসংখ্যাধিক্য, সহজলভ্যতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ফলের বাগানে সাথী ফসল চাষের জন্য খুবই উপযোগী । আমাদের দেশে ফল বাগান করলে প্রাথমিক ভাবে বেশ কয়েক বছর লেগে যায় ফল পেতে এবং সম্পূর্ণ জায়গা পূরণ করতে । এই সময় যদি বাগানে আতফসলের চাষাবাদ করা যায় তবে বেশ কিছু টাকা আয় করা যায় । তাছাড়া বাগানে আগাছা জন্মে না । লিগুম জাতীয় আনতফসল চাষ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় । ভুমি ক্ষয়রোধ হয়। আচ্ছাদন জাতীয় সাথী আন্তঃফসল চাষ করলে বাগানের আর্দ্রতা সংরক্ষিত হয়। ফল বাগানে আফসল চাষ করতে গেলে ফসল নির্বাচনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সাথী ফসল যেন বাগানের মাটিকে অনুর্বর ও অনুৎপাদনশীল করে না তুলে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।

সাথী ফসল নির্বাচনের জন্য বিবেচ্য বিষয়াবলি

সাথী ফসল নির্বাচন ও চাষ করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়াবলি বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন ।

১। সাথী ফসল কোন সময়ই মূল বা প্রধান ফসলের সাথে পানি ও খাদ্য উপাদানের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে না । 

২। সাথী ফসল বাগানে পোকা মাকড় ও রোগ বালাইয়ের উৎস হিসেবে কাজ করবে না । 

৩। সাথী ফসল মূল ফসলের জন্য আন্তঃপরিচর্যা, প্রনিং, সেচ, ঔষধ ছিটানো, সার প্রয়োগ ইত্যাদি কাজে কোন বাধা সৃষ্টি করবে না । 

৪ । মূল ফসলের ফুল ফল ধারণে সাথী ফসল কোন ক্ষতি করবে না । 

৫। সাধারণভাবে সাথী ফসল হিসেবে বহুবর্ষজীবী ফসল অপেক্ষা একবর্ষজীবী বা কম সময়ের ফসলকে প্রধান্য দেওয়া উচিত । 

৬। সাথী ফসল কোন সময় প্রধান ফসলের ফুল, ফল ধারণ, বৃদ্ধি ও পরিপক্বতা এবং গুণগত মানের ক্ষতি করবে না । 

৭ । ফল বাগান থেকে আগাম অর্থিক সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে সাথী ফসল চাষ করা হয় সেহেতু সাথী ফসল হিসেবে তুলনামূলকভাবে দামি ফসলকে নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় বাজারের চাহিদা ও দামের ওপর নির্ভর করে সাথী ফসল নির্বাচন করা উচিত । 

৮। সাধারণভাবে লিগিউম বা সীম জাতীয় ফসলসহ যাদের ভালো বাজার মূল্য আছে সেগুলোর চাষ করা উচিত । কারন সীম জাতীয় ফসল আর্থিক সহায়তার সাথে সাথে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমান বাড়ায় ।

৯। সাথী ফসল মূল ফসলের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার সাথে সাথে কেটে ফেলতে হবে । আমাদের দেশে স্বল্পমেয়াদি ফল বাগানে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজী, তেল ও ডালজাতীয় ফসলের চাষ করা হয় । অন্য দীর্ঘ মেয়াদী ফল বাগানে স্বল্পমেয়াদি ফল গাছ যেমন- পেঁপে, কলা, আনারস, লেবু, আতা, শরীফা ইত্যাদি ফলের চাষ করা হয় ।

সাথী ফসল আবাদের পদ্ধতি

বাগানে সাথী ফসল বা আন্তঃফসল চাষ করতে হলে সাথী ফসলের বৈশিষ্ট্য ও ফল বাগানে গাছের বৃদ্ধি বা বাড়ন্ত অবস্থা লক্ষ্য করে সাথী ফসল আবাদের জন্য নির্বাচন করতে হয় । সাথী ফসল যাতে বাগানের মাটিকে অনুৎপাদক বা অনুর্বর না করে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আবাদ করতে হয়। দীর্ঘমেয়াদি ফল বাগানে কী ধরনের সাথী ফসল করা যাবে সেগুলোর সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো:

আবাদের জন্য সাথী ফসলের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে ফসলগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যেমন

ক) অধিক সূর্যালোক পছন্দকারী- কলা, পেঁপে, পেয়ারা, টমেটো, মরিচ, বেগুন, বীট, গোল আলু, গাজর, লেটুস, পালংশাক, মুলা, পেয়াজ ইত্যাদি 

খ) মাঝারী সূর্যালোক পছন্দকারী - লেবু, আনারস, ডালিম, পেয়ারা, জামরুল, জাম্বুরা, করমচা, স্ট্রবেরী, মিষ্টি আলুশাক, কলমিশাক ইত্যাদি । 

গ) কর্ম সূর্যালোক পছন্দকারী -- আদা, হলুদ, মানকচু, ওলকচু, মেটে আলু ইত্যাদি ।

বাগানে নতুন অবস্থায় উপরোক্ত বিষয় বিবেচনা করে কয়েক বছর সূর্যালোক ও মাঝারি সূর্যালোক পছন্দকারী ফসল সাথী ফসল হিসেবে সফলভাবে জন্মানো যায়। পরবর্তীতে ফল গাছ লাগানোর জমিতে ছায়া পড়ে গেলে কম সুর্যালােেক জন্মিতে পারে এমন ফসল গুলো চাষ করা উচিত। স্বল্পমেয়াদি কলা, পেঁপে, ডালিম, জামরুল ইত্যাদির সাথে ডালজাতীয়, সরিষা, মুলাশাক, লালশাক, ডাটাশাক, কলমীশাক, ধনেপাতা, ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদি ফল বাগানে সাথী ফসল হিসাবে চাষ করা যায়। স্বল্পমেয়াদি ফলও বাগানে চাষ করা যাবে। এমনকি স্বল্প মেয়াদী ফল গাছ গুলোকে দীর্ঘমেয়াদি ফল বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যাবে ।

প্রধান মূল জাতীয় প্রধান ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে গুচ্ছ মূল জাতীয় ফসল নির্বাচন করতে হবে। যেমন পেয়ারা, ডালিম, কমলা, নাশপাতি ইত্যাদির সাথে পিয়াজ, লেটুস, গিমাকলমী, ইত্যাদি। তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রধান মূলজাতীয় প্রধান ফসলের সাথে স্বল্পমেয়াদি প্রধান মূল জাতীয় ফসল কোন কোন ক্ষেত্রে জন্মানো যায় । যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু, জামের সাথে ডালিম জামরুল পেঁপে ইত্যাদি। গভীর মূলজাতীয় ফসলের সাথে অগভীর মূলজাতীয় ফসল নির্বাচন করতে হবে। যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, ইত্যাদির সাথে কলা, আনারস পেঁপে ইত্যাদি। সাথী ফসল হিসাবে চাষ করা যেতে পারে।

কলা, পেঁপে, ডালিম, পেয়ারা, শরিফা, আতা, জামরুল, লেবু, ইত্যাদির সাথে লালশাক, গালে আলু, মুলা, পটল, মিষ্টি আলু, তরমুজ, ফুটি ইত্যাদি সাথী ফসল হিসাবে চাষ করা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী বা বহুবর্ষজীবী ফসলের সাথে স্বল্পমেয়াদি বা এক বর্ষজীবী ফসল নির্বাচন করতে হবে। যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল লিচু ইত্যাদির সাথে কলা, পেঁপে, আনারস, স্ট্রবেরি, বেগুন ইত্যাদি ।

উপরোক্ত পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করে ফলবাগানে সাথী ফসল চাষ করা হলে দেশের ফলের ঘাটতি পূরণ করে কৃষকের আর্থিক অস্বচ্ছলতা দূর করা যায়। মাটির উর্বরতা রক্ষার লক্ষ্যে ফলের বাগানের খালি জমিতে আগাম ফসল করে বেশি লাভ করা যায় এবং লোকের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা যায় ।

সাথী ফসল চাষে জমির সদ্ব্যবহার ও আর্থিক সুবিধা

ফল বাগানে গাছ লাগানোর পর এর পরিপূর্ণ বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য বেশ কিছু সময়ের দরকার হয় । এই অন্তর্বর্তী সময়ে দু গাছের মাঝখানের জমি খালি থাকে । এ খালি জমিতে অস্থায়ী ফসল লাগিয়ে বাগান থেকে বেশ কিছু আগাম অর্থ উপার্জন করা যায় । এই অস্থায়ী ফসলটি হলো সাথী ফসঙ্গ । বাংলাদেশে মাথা পিছু জমির স্বল্পতা, মাটির উর্বরতা, কৃষকের আর্থিক অচ্ছলতা, জনসংখ্যাধিক্য, সহজলভ্যতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ফলের বাগানে সাথী ফসল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আমাদের দেশে ফল বাগানের সাথী ফসল চাষের বিশেষ সুযাগ ও সম্ভাবনা রয়েছে । কারন যে কোন দীর্ঘমেয়াদি ফলের বাগান করলে প্রাথমিক ভাবে বেশ কয়েক বছর লেগে যায় ফল পেতে এবং সম্পূর্ণ জায়গা পূরণ করতে । এই সময় যদি বাগানে আন্তঃফসলের চাষ করা যায় তবে কিছু টাকা আয় করা যায় । যার দ্বারা কৃষক বা সুবিধাভাগেী অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারে। যেমন- কলা ও পেঁপে বাগানে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি সরিষা ও ডাল জাতীয় সাথী ফসলের চাষ করা হয় । অপর দিকে দীর্ঘমেয়াদি ফল গাছের..সাথী ফসল চাষের ফলে বাগানে আগাছা জন্মাতে পারে না । লিম জাতীয় আতঃ উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ভূমি ক্ষয় রোধ হয়। আচ্ছাদন জাতীয় সাথী আন্তঃফসল চাষ করতে গেলে ফসল নির্বাচনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সাথী ফসল যেন বাগানের মাটিকে অনুর্বর ও অনুৎপাদক করে না তুলে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।

ছকে জমির সদ্ব্যবহার ও আর্থিক সুবিধার জন্য ফল বাগানে চাষযোগ্য সাথী ফসলের বর্ণনা দেওয়া হলো ।

Content added By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১ । লিগুম জাতীয় আন্ত ফসল চাষ করলে জমির কিকি উপকার হয় ? 

২। দীর্ঘমেয়াদি ফল বাগানে রোপণযোগ্য স্বল্পমেয়াদি ফল গাছের নাম লেখ । 

৩ । কম সূর্যালোক পছন্দকারী কয়েকটি সাথী ফসলের নাম লেখ । 

৪ । এক বর্ষজীবী কয়েকটি ফসলের নাম লেখ ? 

৫ । ফল বাগানে কি কি সাথী ফসল আবাদ করা যাবে ?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১ । সাথি ফলের চাষ বলতে কী বোঝায় ? 

২। সাথী ফসল ও ফসল পর্যায়ের মধ্যে পার্থক্য কী? 

৩ । সাথী ফসল চাষের সুবিধা ও অসুবিধা লেখ । 

রচনামূলক প্রশ্ন। 

১। সাথী ফসল নির্বাচনের নিয়মাবলি লেখ । 

২ । সাথী ফসল আবাদের পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর । 

৩ । সাথী ফসল চাষে জমির সদ্ব্যবহার ও আর্থিক সুবিধা সম্পর্কে লেখ । 

৪ । ছকের মাধ্যমে ফল বাগানে চাষকৃত সাথী ফসলের বর্ণনা কর ।

Content added || updated By