এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বিজ্ঞানসম্মত ফল বাগান স্থাপন করতে হলে বাগানে গাছ লাগানোর জন্য নকশা তৈরি করা অবশ্যই প্রয়োজন । বিভিন্ন পদ্ধতিতে ফল বাগানের নকশা বা পরিকল্পনা করা হয়। এ পদ্ধতিগুলো হলো:- ১। আয়তকার পদ্ধতি ২ । বর্গাকার পদ্ধতি ৩ । ত্রিভুজাকার পদতি ৪ । ষড়ভুজী পদ্ধতি ৫। কুইনকাংশ পদ্ধতি ৬ । সমচাল পদ্ধতি এবং সিড়ি পদ্ধতি ।

ফল গাছ চাষের জন্য নকসা তৈরি ও গাছের সংখ্যা নির্ণয় ।

বর্গাকার পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর নকশা ও গাছের সংখ্যা নির্ণয় ।

প্রাসঙ্গিক তথ্য 

জমি সমতল কিনা তা প্রথমে জানতে হবে । কেননা পাহাড়ী জমিতে বর্গাকার, আয়তকার, ত্রিভুজাকৃতি বা ষড়ভুজী পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় । এছাড়া জমি সমতল অথচ জমির আইল আঁকাবাকা বা অসমান, সেক্ষেত্রে জমির ম্যাপ দেখে কাগজে প্রথমে নকশা করে নিতে হবে। জমির আইল আঁকাবাকা বা জমি অনিয়মিত আকারের হলে সে ক্ষেত্রে অনেক সময় গাছ হতে গাছের দূরত্ব পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে ।

উপকরণ 

(১) সাদা কাগজ 

(২) পেনসিল, রাবার 

(৩) ত্রিকোণী (সেট ও মিটার স্কেল) 

(৪) শক্ত খুঁটি বা কাঠি 

(৫) মাপার ফিতা, রশি বা সূতলী 

(৬) ফল গাছ রোপনের জন্য চিহ্নিত স্থানে স্থাপনের জন্য চিকন কাঠি ।

কাজের ধাপ 

(১) জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মাপ নিতে হবে । 

(২) এরপর কাগজে জমির নকশা মোতাবেক মাপ লিপিবদ্ধ করতে হবে । 

(৩) কাগজে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মোতাবেক লাইন টানতে হবে। এভাবে দুই দিকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ লাইন টানলে একটি আরেকটির উপর লম্ব তৈরি হবে। এভাবে জমির নকশা অনুযায়ী কাগজে জমির চারদিকের বাউন্ডারী বা সীমানা লাইন টানতে হবে। 

(৪) এরপর বাউন্ডারী রেখা জমির ভিতর দিকে সারি হতে সারির দূরত্বের অর্ধেক দূরত্ব বাদ দিয়ে গাছ লাগানোর রেখা (মূল রেখা ও মুক্ত রেখা টানতে হবে । 

(৫) এভাবে মুলরেখা টানার পর ঐ রেখার একপ্রান্ত হতে গাছ হতে গাছের যে দূরত্ব হবে তার দূরত্বের অর্ধেক দূরত্ব বাদ দিয়ে প্রথম গাছ লাগানোর চিহ্ন দিতে হবে। এরপর গাছ হতে গাছের যে দূরত্ব হবে তা পর পর চিহ্নিত করতে হবে

(৬) মূল রেখা টানার পর এর সমান্তরাল করে সারি হতে সারির দূরত্ব চিহ্নিত করে লাইন টানতে হবে । 

(৭) জমির কিনারা হতে মূলরেখা (সারি হতে সারির দূরত্বের অর্ধেক দূরত্ব বাদ দিয়ে) টানার পর ঐ সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব নিয়ম মোতাবেক চিহ্নিত করতে হবে । এ সকল চিহ্ন হতে লম্ব টানা হলে (মুক্ত রেখার অন্যান্য সমান্তরাল রেখার ওপর যেখানে অতিক্রম করবে সেখানে চিহ্ন দিতে হবে । 

(৮) মূল রেখার সমান্তরাল রেখার ওপর লম্বাভাবে অতিক্রম করা স্থানগুলো চিহ্নিত করে যাগে করলে এক একটি বর্গক্ষেত্র তৈরি হবে । 

(৯) এভাবে কাগজের নকশা অনুযায়ী জমির সীমনা হতে একদিকে গাছ লাগানোর জন্য সরল লাইন তৈরি করতে হবে । এই লাইনের সাথে অন্য লাইনের লম্ব তৈরির জন্য রশি নিয়ে ৩:৪:৫ অনুপাতে চিহ্নিত করতে হবে । এরপর দুইদিকে রশির লাইন প্রসারিতি করলে একটি ৯০° কোণ তৈরি হবে । এই প্রসারিত লাইন জমির শেষ পর্যন্ত নিতে হবে । এখন দুইদিকের প্রসারিত লাইনে (গাছ হতে গাছ এবং সারি হতে সারি) গাছ লাগানোর দূরত্বে প্যানটিং বোর্ড বা খুঁটি পুতে চারা রোপনের স্থানগুলো চিহ্নিত করা যাবে । 

(১০) রশির দুইদিকের লাইনের প্রতিটি চিহ্ন হতে পরস্পর লম্ব রেখা বরাবর রশি নিয়ে জমির অপর প্রান্ত পর্যন্ত যেতে হবে । 

(১১) এভাবে উভয়দিকের পরস্পর লাইনের উপর হতে নেয়া রশির সংযুক্তি স্থানগুলোতে কাঠি পুতে চিহ্নিত করতে হবে । এই চিহ্নিত স্থানগুলো গ্রাফ পেপারে অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের মত দেখাবে । 

(১২) এভাবে সারা জমিতে বর্গাকার পদ্ধতিতে মাঠে গাছ লাগানোরে স্থান চিহ্নিত করা যাবে ।

ক) বর্গাকার পদ্ধতিতে জমিতে গাছের সংখ্যা নির্ণয়

এ পদ্ধতিতে গাছ হতে গাছ এবং সারি হতে সারির দূরত্ব সমান থাকবে । কোন নির্দিষ্ট জমিতে গাছের সংখ্যা নির্ণয় পদ্ধতি (বর্গাকার বা আয়তকার পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর জন্য কেবল প্রযোজ্য): -

প্রতি হেক্টরে গাছের সংখ্যা = এক হেক্টর জমি (১০,০০০ বর্গ মিটার) । লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ।

উদাহরণ: আম গাছ রোপণের দূরত্ব ও সারি থেকে সারি ১০ মিটার এবং গাছ থেকে গাছ ১০ মিটার । তাহলে এক হেক্টরে কয়টি চারা লাগানো যাবে তা নির্ণয় কর।

আম গাছের সংখ্যা = ১০,০০০ বর্গ মিটার । ১০ মিটার ×১০ মিটার = ১০০ টি 

অর্থাৎ বর্গাকার পদ্ধতিতে এ হেক্টর জমিতে প্রতি হেক্টর ১০০ টি আমের চারা লাগানো যাবে।

উদাহরণ: কাঁঠাল গাছ রোপনের দূরত্ব ও সারি হতে সারি ১৫ মি. এবং গাছ হতে গাছ ১৫ মিটার তাহলে এক হেক্টর জমিতে কয়টি কাঁঠাল গাছ লাগানোর যাবে নির্ণয় কর।

হেক্টর প্রতি গাছের সংখ্যা = ১০,০০০ বর্গ মিটার বা ১৫ মিটার×১৫ মিটার =88 

অর্থাৎ বর্গাকার পদ্ধতিতে এক হেক্টর জমিতে ৪৪ টি (প্রায়) কাঁঠাল গাছ লাগানো যাবে ।

খ) আয়তক্ষেত্রে পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর নকসা ও গাছের সংখ্যা নির্ণয়: 

এ পদ্ধতি বর্গাকার পদ্ধতির মতই। কেবল পাশাপাশি গাছ হতে গাছের দূরত্বের সাথে সারি বা সারির গাছের দূরত্বের প্রভেদ থাকবে । আয়তকার পদ্ধতিতেও একদিকের লাইনে গাছের দূরত্বের চিহ্ন এবং অপরদিকে সারির দূরত্বের চিহ্ন দিতে হয়। উভয় দিকের প্রসারিত লাইনের সংযুক্তি স্থানে কাঠি পুঁতে গাছ লাগানোর স্থান চিহ্নিত করা হয় ।

উদাহরণ: কাঁঠাল বাগানে গাছ রোপনের দূরত্ব সারি থেকে সারি ১০ মিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৮ মিটার । তাহান্সে এক হেক্টর জমিতে কয়টি চারা লাগানো যাবে তা নির্ণয় কর ।

প্রতি হেক্টর জমিতে গাছের সংখ্যা = এক হেক্টর (১০,০০০ বর্গ মিটার) । সারি থেকে সারির দূরত্ব গাছ থেকে । গাছের দূরত্ব = ১০,০০০ মিটার । ১০ মিটার ×৮ মিটার = ১২৫

অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে ১২৫ টি কাঁঠাল চারা লাগানো যাবে ।

গ) ত্রিভুজ পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর নকশা তৈরি ও গাছের সংখ্যা নির্ণয়

প্রাসঙ্গিক তথ্য: এ পদ্ধতিতেও মুক্ত রেখা ও মুক্ত রেখার সমান্তরাল রেখা এবং মুক্ত রেখার উপর লম্ব রেখা টানতে হবে । (বর্গাকার পদ্ধতির অনুরূপ)

উপকরণ

  • বর্গাকার পদ্ধতির অনুরূপ ।

কাজের ধাপ

(১) প্রথমে বর্গাকার পদ্ধতির ন্যায় ১ থেকে ৫নং পর্যন্ত একই কাজ করতে হবে। 

(২) উভয় দিকের লাইন টেনে মুক্ত রেখায় গাছ হতে গাছের নির্ধারিত দূরত্বে (মাপ মোতাবেক) চিহ্ন দিতে হবে (প্রথম সারিতে বর্গাকার পদ্ধতির ন্যায় গাছ লাগানোর স্থানে চিহ্ন দিতে হবে)। 

(৩) সারি সংখ্যা বেজোড় হলে প্রতিটি বেজোড় সারিতে অর্থাৎ মুক্ত রেখা বা প্রথম সারির ন্যায় বেজোড় সারিগুলোতে চিহ্ন দিতে হবে। 

(৪) সারি সংখ্যা জোড় হলে প্রথম সারির দুই গাছের জন্য চিহ্নিত স্থানের মাঝ বরাবর প্রতিটি জোড় সারিতে মূল গাছের জন্য স্থান চিহ্নিত করতে হবে । 

(৫) প্রথম সারিতে দুটি চিহ্নিত স্থানের সাথে পরবর্তীতে জোড় সারিতে মাঝ বরাবর বা বর্গকার পদ্ধতির ন্যায় চিহ্নিত স্থান ধরে মাঝখানে যাগে হবে। এতে ৩টি গাছ মিলে একটি ত্রিভুজ সৃষ্টি করবে। তবে জোড় সারির এক প্রান্ত হতে গাছের জন্য প্রথম চিহ্নিত স্থানটি গাছ হতে গাছের দূরত্বের পূর্ণ দূরত্বে চিহ্ন হবে । 

(৬) নকশা অনুযায়ী বর্গাকার পদ্ধতির ন্যায় জমিতে সীমানা ও গাছ লাগানোর লাইন তৈরি করতে হবে। প্রথম সারির এক প্রাতে গাছ হতে গাছের রোপিত দূরত্বের অর্ধেক বাদ দিয়ে প্রথম চিহ্ন দিতে হবে। একই নিয়মে বেজোড় সারিতে চিহ্নিত করতে হবে। এতে সমস্ত বেজোড় সারিগুলোতে প্রথম সারির সাথে সমান্তরাল (লম্বভাবে টানা রেখার) সারিতে একই লাইন চিহ্নিত হবে । আর জোড় সারিগুলোতে প্রথম সারির দুগাছের মাঝ বরাবর চিহ্নিত হবে। জোড় সারিগুলো একাত্তর সারি হিসেবে গণ্য হবে এবং এতে একটি করে গাছ কম হবে।

গাছের সংখ্যা নির্ণয়

ত্রিভুজ পদ্ধতিতে জমিতে গাছের সংখ্যা নির্ণয় = (প্রথম সারিতে গাছের সংখ্যা মোট সারির সংখ্যা)- একান্তর ক্রমিক সারির সংখ্যা ।

উদাহরণ: কোন জমির দৈর্ঘ্য ২০ মিটার এবং প্রস্থ ১৫মিটার। যদি ঐ জমিতে ৪ মিটার দূরে দূরে লাইন এবং ৩ মিটার দূরে দূরে গাছ লাগানো হয় তবে ঐ জমিতে মোট কতটি গাছ লাগানো যাবে ।

মোট লাইন সংখ্যা = জমির দৈর্ঘ্য: লাইনের দূরত্ব = ২০ মিটার ৪ মিটার = ৫টি। প্রথম লাইনে গাছের সংখ্যা = জমির প্রস্থ : গাছের দূরত্ব = ১৫ মি: ৩ মিঃ = ৫টি সুতরাং গাছের সংখ্যা = (৫×৫) - ( ৫-১-২) = ২৫-২ = ২৩টি অর্থাৎ মোট ২৩টি গাছ লাগানো যাবে ।

উদাহরণ: কোন নির্দিষ্ট জমিতে ১২মিটার দৈর্ঘ্যের ৭টি লাইন করা গেলে এবং প্রতিটি লাইনে ৪ মিটার দূরত্বে গাছ । লাগানো হলে ঐ জমিতে মোট কতটি গাছ লাগানো যাবে ।

গাছের সংখ্যা = (১২৪×৭) - (৭-১২) একান্তর ক্রমিক সারির সংখ্যা

= মোট সারির সংখ্যা-১:২

= (৩×৭)-৩=২১-৩= ১৮টি

অর্থাৎ মোট ১৮টি গাছ লাগানো যাবে ।

Content added By