নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - অর্থনীতি - অর্থনীতি পরিচয় | NCTB BOOK

বিষয়ের সমন্বয়ে অর্থনীতি বিষয় এখন অনেক উন্নত বা সমৃদ্ধ । প্রথমে যারা অর্থনীতি বিষয়ে উপস্থাপন করেছেন এদের মধ্যে অ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং জন স্টুয়ার্ট মিল অর্থনীতিকে সম্পদের উৎপাদন ও বণ্টনের বিজ্ঞান বলে মনে করেন। এদের মধ্যে অ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয় । অর্থনীতির এই ধারা ক্লাসিক্যাল অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত । তখন অর্থনীতি বা Economics -এর নাম ছিল রাজনৈতিক অর্থনীতি বা Political Economy।
অ্যাডাম স্মিথের প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা : “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান, যা জাতিসমূহের সম্পদের ধরণ ও কারণ অনুসন্ধান করে ।” ‘সম্পদকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি গড়ে ওঠে । তাই সম্পদ আহরণ ও উৎপাদনই মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল উদ্দেশ্য। স্মিথের সংজ্ঞার দুর্বলতা হলো : ১. অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাবকে কীভাবে সীমিত সম্পদ দিয়ে মেটাবে, এই সংজ্ঞায় তার উল্লেখ নেই । ২. এই সংজ্ঞায় জাতীয় সম্পদের উপর অধিক জোর দেওয়া হলেও ব্যক্তি মানুষ ও তার কাজ-কর্মকে অবহেলা করা হয়েছে । ৩. সম্পদ আহরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও কী উপায়ে সম্পদ যোগাড় করা হবে তা বলা হয়নি । ৪. এই সংজ্ঞায় সম্পদ বলতে দ্রব্যকেই বোঝানো হয়েছে কিন্তু সেবা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি ।

অধ্যাপক মার্শাল কর্তৃক প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা
অধ্যাপক আলফ্রেড মার্শাল সম্পদের চেয়ে মানবকল্যাণের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন । তিনি বলেন, “অর্থনীতি মানবজীবনের সাধারণ কার্যাবলি আলোচনা করে ।” অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় মানুষের অর্থ উপার্জন এবং অভাব মোচনের জন্য সেই অর্থের ব্যয় । অর্থাৎ অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ সাধন ।
মার্শাল শুধু মানুষের বাস্তব কল্যাণ সাধন করা নিয়েই আলোচনা করেছেন । বর্তমানে সম্পদের স্বল্পতার সমস্যাই অর্থনীতির মূল সমস্যা । মার্শালের সংজ্ঞায় মানুষের এ মৌলিক সমস্যাটি বিবেচনা করা হয়নি ।

অধ্যাপক এল. রবিন্স প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা
অধ্যাপক এল. রবিন্স অর্থনীতির অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন । তাঁর মতে, “অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান, যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য দুষ্প্রাপ্য উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী কার্যাবলি আলোচনা করে ।” এ সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
১. মানুষের অভাব অসীম এবং অভাবের প্রকৃতি ও পরিমাণ বিভিন্ন রকমের । ২. অভাব পূরণকারী সম্পদ ও সময় খুবই সীমিত । ৩. অসীম অভাবকে কীভাবে সীমিত সম্পদ দ্বারা সমন্বয় সাধন করা যায়, তা অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় । ৪. সম্পদের যোগান সীমিত বলে একই সম্পদ দ্বারা আমাদের বিভিন্ন অভাব পূরণের চেষ্টা করতে হয়। ৫. অভাবের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা পূরণ করতে হয় । এসব কারণে এ সংজ্ঞাটিকে অধিকতর সুনির্দিষ্ট এবং গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয় ।
রবিন্সের সংজ্ঞাটির সমালোচনা : ১. রবিন্স অর্থনীতির বিষয়বস্তুকে বেশি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন । ২. মানুষ তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এমন কিছু পছন্দ করে, যা অর্থনীতিতে আলোচনা হয় না । 9. অর্থনৈতিক কাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য যে মানবকল্যাণ তার উল্লেখ নেই । ৪. রবিন্সের সংজ্ঞায় অর্থনীতির সামাজিক পছন্দকে আলোচনা করা হয়নি । ৫. আধুনিক বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার সংজ্ঞায় আসেনি । ৬. রবিন্স অর্থনীতিতে শুধু মূল্য নিয়ে আলোচনা করেছেন কিন্তু জাতীয় আয়, নিয়োগব্যবস্থা, বিনিয়োগ, বণ্টন ইত্যাদি আলোচনা করেননি। সবশেষে বলা যায় রবিন্সের সংজ্ঞা অপেক্ষাকৃত বিমূর্ত । অর্থনীতিতে কোনো তত্ত্বই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তাই ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার পরেও রবিন্সের সংজ্ঞাটি অধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ এটি অর্থনীতির প্রধান সমস্যাটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছে।