এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

আলুর জাত

বাংলাদেশের চাষ করা আলুর স্থানীয় জাতসমূহ হচ্ছে-

  • আউশা 
  • শিল 
  • বিলাতি 
  • চলিশা 
  • সূর্যমুখী 
  • দোহাজারি লাল 
  • দেশি সাদা 
  • ফেটা শিল 
  • দোহাজারি সাদা
  • পাটনাই ঝাউ 
  • বিলাতি সাদা ইত্যাদি। 

বাংলাদেশে গবেষণা থেকে কয়েকটি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। যেমন- হীরা, আইলসা, ধীরা, আনোলা, বিনেলা, রাজা, চমক ইত্যাদি। তবে উচ্চ ফলনশীল করেকটি জাত দীর্ঘদিন যাবৎ চাষ হচ্ছে। যেমন: ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, মুষ্টা, কৃষ্ণরি সিন্দুরী, ওরাইলো, বেনজি, মন্ডিরাল ইত্যাদি।

চিত্রঃ গোল আলুর বীজবদ থেকে উৎপন্ন রাইজোম ও বৃদ্ধিশীল কন্দ এবং পাতা

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

জমি তৈরি : বেলে দোঁআশ মাটি আলু চাষের জন্য সবচেয়ে উত্তম। বর্ষার পর জমিতে তো আসলে ৫/৬টি চাষ 'ও মই দিয়ে জমি উত্তমরুপে তৈরি করতে হয়। মই দিয়ে জমি সমতল করে সারির মাথা বরাবর লম্বা নালা তৈরি করতে হয়, যাতে সেচে পানি সহজে পড়ারে বের হয়ে যেতে পারে। আলুর জমি ১৫-২০ সেমি. গভীর চাখ ওরা উচিত। মাটিতে যাতে পিঁপড়া বা উই পোকা না থাকে সেজন্য ফিপরোনিল, ইমিডাক্লোপিড, পামেট্রিন তরুণ ১.৫ লিটার/দানাদার ১৬-২০ কেজি প্রতি হেক্টর জমিতে প্রয়োগ করতে হয়।

সার প্রয়োগ ও সারের পরিমাণ : আলু চাষে নিচে উল্লেখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন ।

সারের নাম

সারের পরিমাণ/হেক্টর

গোবর ৭-১০ কেজি
ইউরিয়া২২০-২৫০ কেজি
 টিএসপি১২০-১৫০ কেজি
এমওপি২২০-১৫০ কেজি
জিপসাম৮-১০ কেজি
জিঙ্ক সালফেট১০০-১২০ কেজি
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট৮০-১০০ কেজি
বোরন৮-১০ কেজি।

সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ ইউরিয়া ব্যতিত সব গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট রোপণের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ শেষ চাষের সময় ৫০% ইউরিয়া বীজ গজানোর ১৫-২০ দিনপর এবং বাকি ইউরিয়া এর ৩০ দিন পর অর্থাৎ বীজ গজানোর ১.৫ মাস পর দ্বিতীয় বার মাটি তোলার সময় প্রয়োগ করতে হবে। অম্লীয় বেলে মাটির জন্য ম্যাগনেসিয়াম সালফেট এবং বেলে মাটির জন্য বোরন প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

বীজ/চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা

বীজ রোপণের জন্য সঠিক আকারের নিরোগ বীজ আলু বাছাই করা, তা গজানো ও সঠিক নিয়মে রোপণ করতে হয়। বৈজ্ঞানিক মতে ২-৩ সেমি (২০ গ্রাম) আকারের বীজ আলু আস্ত, ৩-৪ সেমি. (৩০ গ্রাম) আকারের বীজ দু'টুকরা এবং ৪ সেমি (৪০ গ্রাম)- এর বড় আলুকে দু'এর অধিক টুকরা ছুরি বা দা দিয়ে লম্বালম্বিভাবে করতে হয়। বীজ কাটার পর দু'তিন দিন ছায়াময়, পরিষ্কার ও ঠান্ডা স্থানে রেখে খড়ের ছাই মাখিয়ে ক্ষত শুকিয়ে রোপণ করা ভালো। কাটা দিকে ছাই লাগায়ে শুকিয়ে নিলে সেখানে পচনের বা পিঁপড়ার আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না । বীজ কাটা ছুরি বা দা মাঝে মাঝে রোগ নিরোধক ঔষধ বা ডেটল/সেভলন দিয়ে শোধন করে নিতে হয়। বীজের পুরাতন বড় অঙ্কুরে শক্তিশালী গাছ জন্মায় না। তাই কাটার সময় পূর্বে গজানো অঙ্কুরগুলো ভেঙ্গে দেওয়া এবং খড়কুটা দ্বারা জাগ দিয়ে নতুন ও শক্তিশালী অঙ্কুর গজানোর ব্যবস্থা করা উচিত। বীজ আলুর আকার ও রোপণ দূরত্ব যে হেক্টরে এক থেকে দেড় টন বীজ রোপণ করা হয়। তবে মাঝারি আকারের বীজ লাগানো উত্তম।

বীজ রোপণ- গোটা বা টুকরা আলু বীজ নিম্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে লাগাতে হয়। 

দূরত্ব : সারি থেকে সারি : ৬০ সেমি.- ৭৫ সেমি. 

আলু বীজ থেকে আলু বীজ ও ২০ সেমি. ২৫ সেমি. 

নালার গভীরতাঃ ৫-৭ সেমি,

রোপণ পদ্ধতিঃ সাধারনত সমতল ও তেলি পদ্ধতিতে আলু বীজ রোপণ করা হয়ে থাকে। 

(ক) সমতল পদ্ধতিঃ এ পদ্ধতিতে চারা গজানোর পর জমিতে সেচ ও সার প্রয়োগ এবং গোড়ায় মাটি উঠায়ে দিতে হয় না। বীজ রোপণের সময়েই সবটুকু সার প্রয়োগ করা হয়। মাটিতে রস সংরক্ষণ ও আগাছা দমনের উদ্দেশ্যে বীজ লাগানো পর পরই খড় বা শুকনা কচুরীপানা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। সেচ সুবিধাহীন নিচু জমিতে এ পদ্ধতি বেশি অনুসরণ করা হয়। এতে গাছের আলো বাতাস পেতে ও অন্তবর্তী পরিচর্যার অসুবিধা হয় এবং রোগ বালাই ও জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা থাকে। তবে যেসব জমি হতে দেরিতে পানি সরে যায় এবং জমি প্রস্তুতের সময় থাকে না সে সব জমিতে এ পদ্ধতিতে আলু বীজ রোপণ করা হয়।

(খ) ভেলী পদ্ধতিঃ এটি আধুনিক পদ্ধতি ও পৃথিবীর সব দেশে অনুসরণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে চারা গজানোর পর দু'সারির মাঝখানের মাটি ২-৩ কিস্তিতে উঠায়ে গাছের গোড়ায় ভেলি তৈরি করা হয়। এতে দু'সারির মাঝখানে নালার সৃষ্টি হয়। পানি সেচ ও নিষ্কাশন, সারের উপরি প্রয়োগ এবং অন্তবর্তী পরিচর্যার সুবিধা হয়। তাছাড়া গাছকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ও পর্যাপ্ত আলো বাতাস পেতে সহায়তা করে এবং ফলন বাড়ায় । চারা বা গাছ ১০-১৫ সেমি. উঁচু হলে প্রথমবার এবং এর ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয়বার মাটি উঠায়ে দেয়া উত্তম।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ ২-৩ বার গোড়ায় মাটি দেওয়া প্রয়োজন। বপনের সময় ভেলি করে মাটি তুলে দিতে হয়। ১ম বার চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর এবং ২য় বার ১ম উপরি প্রয়োগের ১ মাস পর ২য় উপরি প্রয়োগ করতে হয়। তবে প্রতিবার সার প্রয়োগের পর সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। গাছের সারির দু পাশ দিয়ে সার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে আবার ভেলি বেঁধে দিতে হয়।

দেশি আলুর উন্নয়ন কৌশলঃ অতীতে বিদেশে থেকে যেসব আলুর জাত এদেশে এসেছে তা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে এখনো চাষাবাদে আছে। এসব জাতই বর্তমানে দেশি জাত হিসেবে পরিচিত।

পোকামাকড় ও রোগ দমন

পোকামাকড় দমনঃ আলুর কাটুই পোকার আক্রমণ ও কাটুই পোকার কীড়া বেশ শক্তিশালী এবং এর পিঠ কালচে বাদামি। কাটুই পোকার কীড়া চারা গাছ কেটে এবং আলুতে ছিদ্র করে ফসলের ক্ষতি করে থাকে।

কাটুই পোকা দমন 

ক. কাটা আলু গাছ দেখে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা উচিত। 

খ. প্রতি লিটার পানির সাথে ডারসবান ২০ ইসি ৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি ভিজিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায় ।

আলুর সুতলি পোকার আক্রমণ ও কীড়া আলুর মধ্যে লম্বা লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে থাকে। বাংলাদেশে কেবল বাড়িতে সংরক্ষিত আলুতে এ পোকা ক্ষতি করে ।

সুতলি পোকা দমন

ক. বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুড়া দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। 

খ. আলু সংরক্ষণ করার আগে সুতলি পোকা দ্বারা আক্রান্ত আলু বেছে ফেলে দিতে হয়।

আলুর মোজাইক রোগঃ পাতায় উজ্জ্বল হলুদ ছিটে দাগ পড়ে, পাতা বিকৃত ও ছোট হয়ে যায়।

মোজাইক রোগ দমন

ক. জাবপোকা দমন করতে হয়। 

খ. টমেটো, তামাক এবং কতিপর সোলানেসি গোত্রভূক্ত আগাছা এ ভাইরাসের বিকল্প পোষক। সুতরাং আশেপাশে এ ধরনের আগাছা থাকলে ধ্বংস করতে হবে।

আলুর হলদে রোগ  স্থানীয় জাতের আলুতে এ রোগ হয়। পাতা কুঁচকে মুড়িয়ে যায় ও ছোট ছোট দাগ দেখা যায়।

হলদে রোগ দমন

ক. রোগিং করে আক্রান্ত গাছ উঠিরে ফেলতে হয়। 

খ. কীটনাশক প্রয়োগে পাতা ফড়িং দমন করা, ডায়াজিনন ৬০ ইসি ৭-১০ দিন পর পর ছিটানো হয়।

আলুর মড়ক বা নাবি ধ্বসা রোগ : পাতায়, ডগায় এবং কাণ্ডে ছোট ভেজা দাগ পড়ে। ক্রমে দাগ বড় হয়ে সমর্থ পাতা, ডগা এবং কাণ্ডের কিছু অংশ নষ্ট হয়। পরিবেশ অনুকূল হলে, অর্থাৎ বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যেই জমির সমস্ত ফসল আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

ক. রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা অথবা যে জমিতে মড়ক রোপ হয়েছে সে জমির আলুর বীজ হিসেবে ব্যবহার না করা । 

খ. জমির যে এলাকায় এ রোগ মারাত্মক হয়, সে জায়গায় গাছ মাটির উপর থেকে কেটে অন্যত্র পুড়িয়ে ফেলতে হয়। গ. ছত্রাকনাশক ১০-১২ দিন পর পর ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। যেমন- রিডোমিল (০.২%) ডাইথেন এম ৪৫ (০.২%) ইত্যাদি।

আলুর আগাম ধ্বসা বা আরলি ব্লাইট রোগ : নিচের পাতায় ছোট ছোট বাদামি দাগ পড়ে। গাছ হলুদ হওয়া, পাতা ঝরে পড়া এবং অকালে গাছ মরে যাওয়া এ রোগের লক্ষণীয় উপসর্গ। আক্রান্ত টিউবারে গাঢ় কালচে বাদামি রঙের দাগ পড়ে ।

প্রতিকার 

ক. সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মতো সেচ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হয়। 

খ. রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হয়। ডাইথেন এম-৪৫, ০.২% হারে প্রয়োগ করতে হয়। 

গ. আগাম জাতের আলু চাষ করতে হয়।

আলুর সগ্রহোত্তর এবং গুদামজাত রোগ দমন ব্যবস্থাপনা

আলুর শুকনো পচা রোগ : আলুর গায়ে কিছুটা গভীর কালো দাগ পড়ে। আলুর ভেতরে গর্ত হয়ে যায় ।

শুকনা পঁচা রোগ দমন

ক. শতকরা ২ ভাগ ডাইথেন এম-৪৫ দ্রবণ দ্বারা বীজ আলু শোধন করতে হয়। 

খ. প্রতি কেজিতে ২ গ্রাম টেকটো ২% গুড়া দিয়ে আলু শোধন করতে হয়।

আলুর নরম পঁচা রোগঃ আক্রান্ত অংশ পচে যায়। পচা আলুতে এক ধরনের উগ্র গন্ধ সৃষ্টি হয়।

নরম পঁচা রোগ দমন

ক. উচ্চ তাপ এড়ানোর জন্য আগাম চাষ করতে হয়। 

খ. ভালোভাবে বাছাই করে আলু সংরক্ষণ করতে হয়। 

গ. শতকরা ১ ভাগ বিচিং পাউডার দ্রবণে বীজ আলু শোধন করতে হয়।

আলুর রোগ 

আলুর গাছ অনেক সংক্রামক রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। নিচে এগুলোর বিবরণ দেয়া হলো।

ভাইরাসজনিত রোগঃ 

আলুর ভাইরাস জনিত রোগের সংখ্যা অনেক। এর মধ্যে পোকাবাহিত পাতা মোড়ানো ভাইরাস, ভাইরাস ওয়াই, ভাইরাস এ, ভাইরাস এম খুব গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিকারঃ রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ ও ভাইরাসবাগী পোকা দমন করতে হয়।

আলুর পাতা মোড়ানো ভাইরাস রোগ : আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে গুটানো হয়। আগার পাতার রঙ হাল্কা সবুজ হয়ে যায়। কখনো আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুণী রঙের হয়।

উপযোগী স্থানে রেখে সপ্তাহখানেক শুকাতে হয়। শুকানো শেষ হলে ছোট বড় আলাদা করে পাতলা চটের বস্তায় ভর্তি করে শুকনো ও ঠান্ডা স্থানে রাখতে হয়। আগাম বাজার ধরার জন্য পুরোপণরি পরিপক্ক হওয়ার আগেই সংগ্ৰহ করা চলে। বক্স ভর্তি করা আলুতে যেন রাদে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উন্নত জাতের আলু হেক্টরে ২০-৩০ টন এবং দেশি জাত ১০-১২ টন জনে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ৪০ টন পর্যন্ত ফলন হতে দেখা গেছে। যখন আলু স্তূপীকৃতভাবে ঝুড়িতে সংরক্ষণ করা হয়, নিশ্চিত হতে হবে যে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণের বায়ু চলাচল এবং গুদামে নিম্ন তাপমাত্রা রয়েছে।

গুদামজাতকালে ব্যবস্থাপনা

গুদামজাত করার সময় রোগ প্রতিরােেধর ব্যবস্থা নিতে হয়। নিম্নের উপায়গুলোর মাধ্যমে সাধারণত গুদামজাতকরণ অবস্থায় রোগাক্রান্ত ফসলের ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভবঃ

(১) আগাম বীজ বপন, ফসল উত্তোলন এবং সংরক্ষণ । 

(২) মাটি যখন ভেজা থাকে না তখন ফসল উত্তোলন করতে হয়। ফসল উত্তোলনের পূর্বে অধিক বৃষ্টিপাত হলে যদি সম্ভব হয় তবে মাটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। যদি ফসল উত্তোলন কোনক্রমেই এড়ানো সম্ভব না। হয়। তাহলে আলু ওঠাবার পর প্রচুর বায়ু চলাচল স্থানে ছায়ার ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। আলুর গুদামজাত করার সময় যেগুলো ভেজা থাকে এমনকি ভালোভাবে শুকাবার পরও সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় সে সব খাবার হিসেবে ব্যবহার করে ফেলাই উচিত। 

(৩) কখনো আলু বা কন্দসমূহকে রৌদ্রে দীর্ঘ সময়ের জন্য ফেলে রাখা উচিত নয়।

গুদামজাতকরণ ও গুদামের ধরণ

আলু সুপ্তবস্থায় গুদামজাতকরণ সাধারণতঃ প্রাকৃতিক বায়ু সঞ্চালিত গুদামে সুপ্তাবস্থায় থাকাকালে টিউবার সমুহকে সাধারণভাবেই গুদামজাত করা যায়, যেখানে শ্বসন তাপ বের হওয়ার জন্য বায়ু চলাচল উপযোগী ব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রচলিত পাত্র যেমন-ঝুড়ি বা ডালে ব্যবহার করা যেতে পারে। সংরক্ষণ পাত্রের তলদেশ এমনভাবে তৈরি হতে হবে যাতে আলুর ভেতর বায়ু সহজে চলাচল করতে পারে।

ঘরের মেজেতেও আলু রাখা যায় যদি আলুর ভুগ ১ মিটার পুরু ও ২ মিটারের বেশি প্রশস্ত না হয় এবং যথেষ্ট বায়ু চলাচলের সুযোগ থাকে। রাত্রে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করে নিতে হবে যখন তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে।

মনে রাখতে হবে যে, আলুর সুপ্তাবস্থা আরম্ভ হয় যখন শস্য মাঠে পরিপক্ক হয়ে উঠে। ইহা। আলু গুদামজাত রাখার কিছু দিন পূর্বেও হতে পারে। অবশিষ্ট সুপ্তাবস্থার সময় নির্ধারিত হয়ে থাকে আলুর গুদামজাতকরণের সময়কাল । অঙ্কুরিত আলু প্রায় ১ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।

বীজ আলুর গুদামজাতকরণ

বীজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য টিউবারসমূহকে অঙ্কুর গজানো শুরু হওয়া থেকেই আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সেগুলোকে তাকে অথবা মেঝেতে রাখতে হবে, ২টি বা ৩টি টিউবার একটি স্থানে প্রবিষ্ট করতে হবে যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো না পড়ে। দিবালাকে অঙ্কুরকে ১০-১৫ মি. মি. বেশি দীর্ঘ হতে বাধা দেয়। বীজ টিউবারগুলো এইভাবে কিছু দিনের জন্য রাখা হয় এবং গুদামজাত ও রোপণের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পোকার আক্রমণ দমন করতে হবে। বীজ আলু হিমাগারে রাখতে হলে ২-৩ক্ক সে. তাপমাত্রা প্রয়োজন হয় এবং খাবার

আলুর জন্য ১০-১৫ক্ক সে. তাপমাত্রা প্রয়োজন ।

গুদামজাত অবস্থায় পোকামাকড় দমন

আলুর মথ সুতলী পোকা দমন- 

* টিউবার সংগ্রহের পর টিউবারগুলো সুতলী পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য তাড়াতাড়ি মাঠ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে । 

* গুদামজাতকরণের পূর্বে টিউবারগুলোকে সতর্কতার সাথে পরখ ও বাছাই করতে হবে। সুতলী পোকা আক্রান্ত সকল আলুকে সরিয়ে ফেলতে হবে। একমাত্র আক্রমণমুক্ত আলু গুদামে রাখতে হবে। 

* সকল গুদামজাতকরণের আধারের তলদেশে কীট দূরীভূতকারক উদ্ভিদের একটা স্তর বিছিয়ে রাখতে হবে (নিম পাতা, তামাকগুড়া, বিষকাঁটালী)। 

* কীট দূরীভূতকারক উদ্ভিজ্জ চারিদিকে বিছিয়ে দেয়া যায়। যেমন-নিম পাতা, নিম তেল, বিশ কাটালী এবং নিশিন্দা ইত্যাদি। 

* গুদামজাত আলু নিয়মিতভাবে পরখ করতে হবে। যদি পোকার আক্রমণ অনুমিত হয় তাহলে পিরিমিফস মিথাইল নামক [যেমন-এসিটেলিক) কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

বিঃ দ্রঃ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃতব্য আলুতে কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত নয় ।

Content added By

এক কথায় উত্তর 

১. শিল বিলাতি কোন দেশের আলুর জাত? 

২. ইমিডাক্লোপিড দ্বারা কোন পোকা দমন করা হয় ? 

৩. কত সেমি. সাইজের আস্ত আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয় ? 

৪. কাটা বীজ আলু কী দিয়ে শোধন করে নেয়া হয় ? 

৫. আলু চাষে কোন রোপণ কৌশল পৃথিবীর সব দেশে অনুসরণ করা হয় ? 

৬. আলুর মোজাইক রোগের জন্য ১টি বিকল্প পোষক গাছের নাম লেখ । 

৭. আলুর নরম পঁচা রোগ হলে কী ধরনের গন্ধ সৃষ্টি হয় ? 

৮. গুদামে আলু সংরক্ষণে কীট দূরীভূতকারক হিসেবে কিসের পাতা ব্যবহার করা হয় ? 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. আলু চাষে সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে লেখ। 

২. আলু বীজ রোপণের জন্য প্রস্তুতকরা ও রোপণ দূরত্ব সম্পর্কে লেখ। 

৩. আলু রোপণ পদ্ধতি বর্ণনা কর । 

৪. আলুর মড়ক রোগ ও তার দমন পদ্ধতি বর্ণনা কর । 

৫. বিনা চাষে কীভাবে আলু উৎপাদন করা যায় তা উল্লেখ কর । 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. আলু চাষে জমি তৈরি, সার প্রয়োগ, রোপণ দূরত্ব, অনন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা সম্পর্কে আলোচনা কর ।

Content added By