এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

মুখীকচুর চাষ

মুখীকচুর জাতঃ বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে মুখীকচু বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- ছড়াকচু, গুড়িকচু, বিন্নীকচু, ঝুমের মুখী, বিলাসী ইত্যাদি। 

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ 

জমি তৈরিঃ দোআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি ও সুনিষ্কাশিত অবস্থায় চাষ করলে মুখীকচু ভালো জন্মে। মুখি কচুর জমি খুব ভালোভাবে চাষ করতে হয়। তাই পুনঃ পুনঃ চাষ ও মই দিয়ে জমি পরিপাটি করে ৬০-৭৫ সে.মি দূরত্বে লাঙ্গল দিয়ে জুলি অর্থাৎ অগভীর নালা তৈরি করে সেই নালাতে কচুর বীজ রোপণ করতে হয়। সেচ সুবিধাযুক্ত জমিতে ফাল্গুন মাসে জমি তৈরি করে এবং সেচ সুবিধা না থাকলে বৈশাখ মাসে প্রথম বৃষ্টিপাতের পরই জমি তৈরি করে বীজ রোপণ করতে হয়। মুখী কচুর জমির মাটি চেপে গেলে এবং বৃষ্টির পানি কোথাও বেধে থাকলে সেখানে কচুর বৃদ্ধি দারুনভাবে ব্যাহত হয়। এমনকি গাছ মারাও যায় । পানি বদ্ধস্থানে কচুর গাছের ছড়া ছাড়ে না, নতুন কুঁশি হয় না । 

সার প্রয়োগ 

মুখী কচু চাষে সার ব্যবহার অত্যাবশ্যক। মুখী কচুতে নিম্নোক্ত পরিমাণ সার দেওয়া যায়।

সারের নাম

হেক্টর প্রতি পরিমাণ

প্রয়োগের সময়

পঁচা গোবর/আবর্জনা পচা সার১০-১২ টনসবটুকু জমিতে শেষ চাষের সময় দিতে হবে।
ইউরিয়া১২০-১৫০ কেজি

৫০% বীজ লাগানোর ৩০/৩৫দিন পর বাকী 

৫০% বীজ লাগানোর ৮০/৯০ দিন পর

টিএসপি১১৫-১২৫ কেজিসবটুকু জমিতে শেষ চাষের আগে
এমওপি১৪০-১৬৫ কেজি৫০% জমির শেষ চাষের আগে ৫০% ইউরিয়া ১ম উপরি প্রয়োগের সময়

ইউরিয়া ও এমওপি সার বীজ লাগানোর পর ১ম ও ২য় উপরি প্রয়োগের সময় কচুর আইলের পাশ দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে কোদাল দিয়ে মাটি হালকাভাবে নড়াচাড়া করে আইলে মাটি উঠিয়ে দিতে হয়।

চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা

জমি চাষের পর ৬০-৭৫ সে.মি. দূরত্বে জুলি/নালা টেনে নালাতে ২৫-৩০ সে.মি. পর পর ১০-১৫ গ্রাম ওজনের কচুর বীজ মুখী রোপণ করতে হয়। জমিতে যদি জৈব পদার্থ সঠিক মাপে ব্যবহার করা যায় এবং বীজের আকার ২০-২৫ গ্রাম হয় তাহলে ৪৫ সে.মি. পর পর মুখী কচুর বীজ রোপণ করতে হয়। মুখী কচুর বীজ রোপণ পর দু'পাশের মাটি দিয়ে হালকাভাবে বীজগুলো ঢেকে দিতে হয়। মুখীগুলো রোপণ প্রায় ১ মাস আগে স্তূপাকারে রেখে খড়কুটা দিয়ে ঢেকে পানি ছিটিয়ে দিলে বীজ গজায়ে যায়। সামান্য গজানো মুখী রোপণ করা ভালো। হেক্টরে ৬০০ ৮০০ কেজি বীজ লাগে।

অন্তবর্তী পরিচর্যা- বীজ গজায়ে মাটির উপরে উঠলে সম্ভব হলে খড়কুটা বিছিয়ে হালকাভাবে থেকে দেয়া যায় । মুখী কচুর জমির আগাছা বাছাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে বীজ রোপণের পর প্রথম ২-৩ মাস আগাছামুক্ত রাখা খুবই জরুরি। আনুমানিক ৩ মাস বয়সে সমস্ত জমি পাতায় ঢেকে যায়। সার প্রয়োগের পর প্রতি বারেই কোদাল দিয়ে বীজ রোপণের আইলে বা সারিতে মাটি উঠিয়ে দিতে হয়। কচুর বয়স ৩ মাসের পর হতে পাতা ও গাছ ছোট হতে থাকে। তখন জমি কিছুটা ফাকা হতে দেখা যায়। এ সময় মুখীগুলো বড় হতে থাকে। অন্যদিকে জমি ফাঁকা হওয়ার কারণে আগাছাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই পুনারায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। অর্থাৎ মুখী কচুর জমি সব সময়ই আগাছামুক্ত রাখতে হয়।

সেচ ও নিকাশ- মুখী কচুর জমিতে পানি জমলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়, এমনকি গাছ মারা যায়। তাই সেচের বা নিকাশের নালা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আবার পানি সেচের সুবিধা থাকলে আগাম রোপণ করা যায় এবং আগাম ফসল সংগ্রহ করা যায়।

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ

বীজ রোপণের প্রায় ৬ মাস পর গাছের পাতা হলুদ হয়ে ধীরে ধীরে গাছ মরতে থাকে, তখন মুখী কচু সংগ্রহ করা যায়। কোদাল দিয়ে আইল ভেঙ্গে মুখী সংগ্রহ করার পর ২-৩ দিন ছায়ায় ও বায়ু চলাচলের সুবিধাযুক্ত স্থানে রেখে শুকায়ে নিতে হয়। এরপর ছোট-বড়, আঘাতপ্রাপ্ত বা কাঁটাগুলোকে বাছাই করে শ্রেণী বিভক্ত করতে হয়। পরিপুষ্ট মুখী ৪-৫ মাস ঘরে রাখা যায়। বস্তায় করে দূরবর্তী বাজারে পাঠানো যায় ।

ফলন : হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০ টন ফলন হয়। তবে এর ৬০-৭৫% মুখী এবং বাকীটা গুড়িকন্দ হয়।

লতিরাজ বা পানি কচুর চাষ

লতি কচুর 

চাষ লতিরাজ কচুর জাতঃ লতির আকার ও রঙের ওপর ভিত্তি করেও বহুজাতের পানি কচু দেখা যায়। তবে পানি কচুর জাত হলো নারকেলী, গজারী, কাজলী, লতিরাজ, শোলাকচু, বাঁশকচু, খামাকচু ইত্যাদি।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ 

জমি তৈরিঃ লতিরাজ কচু প্রধানত লতির জন্য চাষ করা হয়। পানি শুকায় না বা সহজে পানি দেওয়া যাবে এমন মজা পুকুর, টিউবওয়েলের পানি গিয়ে জমে এমন নিচু জমি বা সব সময়ই সামান্য পানি থাকে বা ভেজা থাকে এ ধরনের জমি থকথকে কাদাময় করে তৈরি করতে হয়। জমির উর্বরতাভেদে ৬০-৭৫ সে.মি দূরে দূরে সারি তৈরি করতে হয়। লতিরাজ কচুর জমি খুব বেশি গভীর করে নরম করতে হয় না। কেননা তাতে চারা লাগানোর পর গাছ হেলে পড়ে যেতে পারে। চারা যাতে কাদায় হালকা গভীর করে রোপণের পর দাঁড়ায়ে থাকতে পারে। সেজন্য আধা শক্ত অবস্থা রেখে জমি তৈরি করতে হয়।

সার প্রয়োগঃ পানি কচু চাষে জমি উর্বর না হলে সার প্রয়োগ করতে হয়। জমি কাদা করার শেষ সময় গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সার প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপণের ২০-৩০ দিন পর ১ম কিস্তিতে ৮০ কেজি ইউরিয়া ও চারা রোপণের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে ২য় কিন্তিতে ৭০ কেজি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়। তবে ইউরিয়া সারের ২য় কিন্তুির সময় অতিরিক্ত ৬০ কেজি এমওপি সার দেয়া যায়।

সারের নাম ও সার প্রয়োগের নিয়ম :

সারের নাম

সারের পরিমাণ/হেক্টর

গোবর  

ইউরিয়া 

টিএসপি 

এমওপি

জিপসাম 

জিঙ্ক

১০-১৫ টন  

১৪০-১৬০ কেজি 

১২০-১৩০ কেজি 

১৫০-১৭০ কেজি 

১৯০ কেজি ৮ কেজি

চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা 

পানি কচুর চারা রোপণ করা যায়। এ চারা পানিকচুর বড় গাছের গোড়া থেকে ছোট ছোট চারা আকারে বের হয়। এ চারাকে তেউড় বলা হয়। ৪-৬টি পাতা বিশিষ্ট চারা রোপণের জন্য সবচেয়ে ভালো। এ জাতীয় তেউড়ের মাঝের ২/১টি পাতা রেখে অন্যান্য সমস্ত পাতা ও শিকড় ছেটে এবং কাণ্ডের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। চারা যদি ৩০ সে.মি এর বেশি লম্বা হয় তাহলে ডাঁটাসহ অর্ধেক অংশ কেটে ফেলতে হয়। চারা প্রস্তুত করে রোপণে দেরি হলে ভিজা ও ছায়াযুক্ত স্থানে, খোলাভাবে বিছিয়ে সপ্তাহ খানেক রাখা যায়। তবে আঁটি বেঁধে রাখলে চারা পঁচে যেতে পারে। ৬০-৭৫ সেমি. দূরত্বে সারি করে সারিতে ৪৫-৫০ সেমি. পর পর ৫-৭ সে.মি. গভীরে ১টি করে চারা রোপণ করতে হয়। হেক্টর প্রতি ২৭০০০-৩৮০০০টি চারার প্রয়োজন হয়।

অন্তবর্তী পরিচর্যা 

পানি কচুর জমিতে কচুর গাছের গোড়ায় দাঁড়ানো পানি রাখতে হয় । তবে মাঝে মাঝে পানি নাড়াচাড়া করে কাদাময় করে দিতে হয়। পানি কচুতে সারের উপরিপ্রয়োগের আগে জমির পানি বের করে নিলে ভালো হয়। সার প্রয়োগ করে মাটি নাড়াচাড়া করে দিয়ে ৪৮ ঘন্টা পর পুনরায় পানি দিতে হয়।

গাছ হতে লতি বের হওয়ার আগ পর্যন্ত জমিতে ৫-৬ সে.মি করে দাঁড়ানো পানি রাখতে হয়। সার প্রয়োগের সময় মাটি নাড়াচাড়া করে সার মিশিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে আগাছা থাকলে তা মাটির মধ্যে পুঁতে দিতে হয়। জমি থেকে পানি বের করার সুযোগ না থাকলে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে ২-৩ দিন পর মাটি হাতিয়ে নাড়াচাড়া করে দিতে হয়। কচুর লতির সংখ্যা বেশি এবং মোটা করার জন্য জমিতে দাঁড়ানো পানি না রেখে শুধু ভেজা রাখতে হয়। লতি বের হওয়ার পর ২ সপ্তাহ পানি সরিয়ে ভেজা বা শুকনোভাব করে রাখতে হয়। আবার নির্দিষ্ট মাত্রায় পানি দিতে হয়। এভাবে ৩-৪ বার পানি দেওয়া ও বের করা হলে লতি লম্বা ও মোটা হয়

অন্তবর্তী পরিচর্যায় রোগ ও পোকামাকড় দমন

লতিরাজ কচুতে মাকড় ও লেদা পোকার আক্রমণ কিছুটা দেখা যায় ।

মাকড়- পাতার নিচে ছোট ছোট মাকড় থাকে এবং পাতার রস চুষে খায়। থিয়োভিট, কুমুলাস, ওমাইট যেকোন বালাইনাশক ব্যবহার করে মাকড় (মাইট) দমন করা যায়। 

লেদা পোকা- ছোট ও কালচে বা মেটে রঙের পোকা পাতা খেয়ে ফেলে। পাতায় গাদা অবস্থায় থাকতে তুলে নিউরোন, মেরে ফেলতে হয়। সাইপারমেথ্রিন/ ম্যালথিয়ন স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। রোগ- পাতার দাগ রোগ- প্রথমে পাতায় বাদামি দাগ পড়ে। পরে তা বৃত্তাকার হয়ে পচে যায়। কপার মিশ্রিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।

সেচ ও নিকাশ

 অন্তবর্তী পরিচর্যায় লতিরাজ কচুর পানি সেচ ও নিকাশ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ফসল সংগ্রহ, সক্ষণ ও বাজারজাতকরণ 

লতিরাজ কচু রোপণের ৩ মাস হতেই লতি সংগ্রহ করা যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর অনেক আগে হতেই সংগ্রহ শুরু হয়। পরিচর্যা ঠিকমত করলে ৭/৮ মাস পর্যন্ত লতি সংগ্রহ করা যায়। লতি উঠানো শুরু করলে ৮-১০ দিন পর পর উঠানো যায়। উঠাতে দেরি করলে লতির অগ্রভাগে পাতা গজাতে শুরু করে। লতি সংগ্রহ করে ছোট ছোট মুঠি বেঁধে বাজারে পাঠাতে হয়। তবে বাজারে পাঠানোর আগে পলিথিনের মোড়কে বা ভিজা বস্তা দিয়ে মুড়ে দিতে হয়। এতে লতি সতেজ থাকে। কেননা খোলা অবস্থায় এবং শুকনো স্থানে রাখলে লতি শুকায়ে শক্ত হয়ে যায় । 

ফলন- হেক্টর প্রতি ১৮-২০ টন পর্যন্ত লতি পাওয়া যেতে পারে।

Content added By

এক কথায় উত্তর 

১. মুখিকচুর ১টি জাতের নাম লেখ । 

২. মুখি কচুর কতগ্রাম ওজনের বীজ লাগাতে হয় ? 

৩. লতিরাজ কচুর ১টি জাতের নাম লেখ। 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর 

১. মুখি কচু চাষে সারের মাত্রা উল্লেখ কর। 

২. লতিরাজ কচুর অন্তবর্তী পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ। 

রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর

 ১. মুখি কচুর চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর। 

২. লতিরাজ কচুর চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর

Content added By