এসএসসি(ভোকেশনাল) - মেকানিক্যাল ড্রাফটিং উইথ ক্যাড-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

২.১ রিভেট ও রিভেট জোড়াঃ

রিভেট হল এক ধরনের ধাতব রড বা দত্ত, একাধিক বস্তুর সংযোগস্থল জোড়া দিতে ব্যবহার করা হয়। যার শীর্ষে রয়েছে একটি বিশেষ সাখা, যা সাধারণত গোলাকার হয় (তবে বিভিন্ন আকারেও তৈরি করা যায়)। এর বিশেষত্ব হলো এটি একবার লাগানো হলে তাহা পরবর্তিতে আর খোলা যায় না। তাই এটিকে স্থায়ী বন্ধনী বলে।

উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, রেল লাইন এর বিভিন্ন রকমের পাত রিভেটের মাধ্যমে জোড়া দেয়া হয়। এছাড়া কলমের নিপ, মোবাইলের কেচিং সহ বিভিন্ন প্লাষ্টিক সমগ্রী রিজেটের মাধ্যমে জোড়া দেয়া হয়। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।

 

২.১.১ রিভেট ও রিভেট জোড়া ড্রইং করার পদ্ধতি- 

নিম্নোক্ত চিত্রের মত রিভেট ড্রইং করার জন্য আমাদেরকে ড্রইং কাগজ, পেন্সিল, বোর্ড, ইরেজার ইত্যাদি সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে।

রাইট, লেফট, টপ অথবা সাইড প্লেনে অংকনের জন্য প্রথমে টপ ভিউ অংকন করো। 

চিত্র অনুযায়ী টপ ভিউতে একটি সার্কেল অংকন করো। 

সার্কেল টির ব্যাস ১০ মিমি নাও । 

১০০ সিমি লম্বা নাও ।

অবজেক্টের মাথায় একটি হাফ রাউন্ড সার্কেল নিয়ে চিত্রের মতন করে অংকন করো।

রিজেটের নিচের দিকের যে সারফেস আছে সেখানে একটি সার্কেল নিয়ে, তাতে চিত্রের মতন একটি হোল করো ।

২.২ পুলিঃ পুলি একটি সাধারণ যান্ত্রিক বন্ধনী বা ব্যবস্থা যা বেল্টের মাধ্যমে গতি স্থানান্তর করতে সহায়তা করে। যে ব্যবস্থায় বেল্টের মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা হয় তাকে গুলি বলে। চাল ভাঙা মেশিন, ট্রলার ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা পুলির ব্যবহার দেখতে পাই ।

পুলির প্রকারভেদঃ

  • ফিক্সড পুলি 
  • মুভেবল পুলি 
  • কম্পাউন্ড পুলি

সলিড পুলি 

 সলিড পুলির একটি বাহুতে একই ব্যাসের একাধিক অথবা একটি খাঁজ থাকে। আর এই খাঁজকে কেন্দ্র করে শক্তি এক শ্যাফট থেকে অন্য শ্যাফটে পরিবহন হয়ে থাকে। শ্যাফট বলতে আমরা একটি লম্বা ধাতব দণ্ডকে বুঝি। যেই দন্ডটি ঘূর্ণনের মাধ্যমে শক্তি পরিবহন করতে সহয়তা করে থাকে।

স্টেপড পুলিঃ 

স্টেপড গুলির একটি বাহুতে বিভিন্ন ব্যাসের বেশ কয়েকটি পুলি থাকে। এটি এমনভাবে সাজানো থাকে যাতে এটি একটি ধাপের মতো দেখায়, তাই পুলিটির নামকরণ করা হয়েছে স্টেপড পুলি।

পুলি ডইং করার কৌশলঃ 

নিম্মোক্ত চিত্রের মত পুলির ড্রইং করার জন্য আমাদেরকে ড্রইং কাগজ, পেন্সিল, বোর্ড, ইরেজার ইত্যাদি সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে।

চিত্রানুসারে প্রয়োজনীয় ডায়ামেটার যেমন ১৩০মিমি, ১২০মিমি ইত্যাদি দিয়ে টপ ভিউ অংকন করো। সঠিক পরিমাপ দিয়ে প্যারালাল বার ও টা স্কোয়ার ব্যবহার করে ফ্রন্ট ভিউ অংকন করো।

তৰে চিত্র আঁকার সময় মনে রাখতে হবে যে, কাজের শুরুতে যে প্লেনে কাজ শুরু করা হবে, সেই প্লেনেই সকল প্রকার রেফারেন্স প্লেন নিতে হবে এবং কাজটি ২ডিতে সম্পন্ন করতে হবে

২.২.১  কাপলিং

কাপলিং এমন একটি যন্ত্র যা শক্তি প্রেরণের উদ্দেশ্যে দুটি ঘূর্ণায়মান অংশ/শ্যাফটকে তাদের প্রান্তে একত্রে সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। কাপলিংএর উদ্দেশ্য হল সরঞ্জামের দুটি টুকরোকে এমনভাবে জোড়া দেওয়া যাতে এরা কিছু ডিগ্রী মিসলাইনমেন্ট বা নড়াচড়া করতে পারে।

মাফ কাপলিং 

মাফ কাপলিং হল এক ধরনের অনমনীয় কাপলিং, যা ঢালাই লোহা দিয়ে তৈরি। এটি খাদের মতো একই অভ্যন্তরীণ ব্যাস সহ একটি ফাঁপা সিলিন্ডার দিয়ে তৈরি। দুটি শ্যাক্টের প্রান্তে এটিকে ফিট করার জন্য একটি কম্পোজড চাবি ব্যবহার করা হয়। একটি চাবি এবং হাতার সাহায্যে এক শ্যাফট থেকে অন্য শ্যাফটে শক্তির সঞ্চালন হয়।

ফ্লাঞ্জ কাপলিং 

কোনো প্রাইম মুভার ও জেনারেটর শ্যাফট দুইটির মধ্যবর্তী স্থানে ধাতব, রাবার, ফাইবার ইত্যাদি পাত সংযোগের সময় নাট-বোল্টের সমন্বয়ে ফ্লেঞ্জ কাপলিং তৈরী করা হয়। সাধারণত ছোট বা কম ক্ষমতা সম্পন্ন শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের ইউনিটে ফ্লেঞ্জ কাপলিং ব্যবহার করা হয়।

 

২.৩ ওয়েল্ডিং

একই ধাতুর তৈরি দুটি অংশ বা দুটি ধাতব/অধাতব বস্তুকে গলিত বা অর্ধগলিত অবস্থায় চাপ প্রয়োগে বা বিনা চাপে স্থায়ীভাবে জোড়া দেওয়ার পদ্ধতিকে ওয়েল্ডিং বলে।

ওয়েল্ডিং এর শ্রেণীবিভাগঃ 

ওয়েল্ডিং পদ্ধতি প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ 

১। ফিউশন ওয়েল্ডিং 

২। নন-ফিউশন ওয়েল্ডিং

১। ফিউশন ওয়েল্ডিং 

যখন দুইটি ধাতব খন্ডকে গলন তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে গলিত অবস্থায় কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ ছাড়া জোড়া দেওয়া হয় তাকে ফিউশন ওয়েল্ডিং বলে। এই পদ্ধতিতে ফিলার মেটাল ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ আর্ক ওয়েল্ডিং, গ্যাস ওয়েল্ডিং।

ক) আর্ক ওয়েল্ডিং ওয়েল্ডিং এর যে পদ্ধতিতে ইলেকট্রোড এবং কার্য বস্তুর মধ্যে বৈদ্যুতিক আর্ক সৃষ্টি করে উৎপন্ন তাপের সাহায্যে বস্তু কে পূর্ণ গলিত অবস্থায় এনে জোড়া দেওয়া হয় তাকে আর্ক ওয়েল্ডিং বলে।

ল্যাপ জয়েন্টঃ 

ল্যাপ জয়েন্ট হল এমন একটি জয়েন্ট যেখানে জোড়স্থান একে অপরের উপরে ওভারল্যাপিং অবস্থায় থাকে । মানে এটি ধাতব পাত বা অধাতব পাত একত্রিত করে জোড়া দেয়া হলে তাকে ল্যাপ জয়েন্ট বলে।

বাট জয়েন্টঃ 

বাট জয়েন্ট হল এমন একটি জয়েন্ট যেখানে জোড়স্থান প্রান্তগুলিকে একসাথে রেখে দুটি টুকরো উপাদান যুক্ত করা হয়। এরপর ওয়েল্ডিং করা হয়ে থাকে । 

খ) গ্যাস ওয়েল্ডিং দুইটি গ্যাসের জ্বলন্ত মিশ্রন হইতে সরবরাহকৃত উত্তাপের মাধ্যমে যে ওয়েল্ডিং করা হয় তাহাকে গ্যাস ওয়েল্ডিং বলে। গ্যাস ওয়েল্ডিংএ Oxygen এর সাথে যেকোন একটি অন্য গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

২। নন-ফিউশন ওয়েল্ডিং 

যখন দুইটি ধাতব খন্ডকে গলন তাপমাত্রার নীচে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পর্যন্ত উত্তপ্ত করে অর্ধগলিত অবস্থায় চাপ প্রয়োগে জোড়া দেওয়া হয় তাকে নন ফিউশন ওয়েল্ডিং বলে। যেমনঃ ফোর্জ ওয়েল্ডিং, রেজিষ্টেন্স ওয়েল্ডিং ইত্যাদি।

সুবিধা সমূহ (Advantage)

১) একটি সুন্দর ও নিখুঁত ওয়েল্ডিং জোড়া মূল ধাতুর মত বা তার চাইতে শক্ত হতে পারে। 

২) সাধারনত ওয়েল্ডিং পদ্ধতির সরঞ্জামাদি তেমন ব্যয়বহুল নয়। 

৩) ওয়েল্ডিং পদ্ধতির সরঞ্জামগুলি স্থানান্তরযোগ্য। 

৪) যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের জটিল গঠনে জোড়ার কাজ সম্পাদন করা যায় যা হয়ত অন্য পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। 

৫) নিশ্ছিদ্র জোড়া দেওয়া সম্ভব যা অন্য পদ্ধতিতে দেওয়া সম্ভব নয়।

অসুবিধা সমূহ (Disadvantage) 

১) ওয়েল্ডিং পদ্ধতি ক্ষতিকারক আলোক বিকিরণ করে।

 ২) ওয়েল্ডিং পদ্ধতির জোড়া স্থান অমসৃণ হয়। 

৩) উত্তম সতর্কতা এবং দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন হয়। 

৪) শারীরিক ও পরিবেশের ক্ষতি করে। 

৫) শুধুমাত্র ওয়েল্ডেবল মেটেরিয়ালস এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

 

২.৪ প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিংস

প্লাম্বিং 

প্লাম্বিং বলতে কোনো ভবনের পাইপ ফিটিংস এবং অন্যান্য সাজ-সরঞ্জামের সাহায্যে পানি বা অন্য কোনো তরল পদার্থ সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে বুঝায়। এক কথায় বলতে গেলে বুঝায় যে, পানি বা অন্য কোনো তরল সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য পাইস, ফিক্সার, ফিটিংস এবং অন্যান্য সাজ-সরঞ্জাম স্থাপনের বা রক্ষনাবেক্ষন করার কলা কৌশলই প্লাম্বিং।

প্লাম্বার ঃযে ব্যক্তি প্লাম্বিং এর কাজ করে থাকেন তাকে প্লাম্বার বলে

পাইপ ফিটিংসঃ 

পাইপ লাইনে পাইপ সংযোজন, পাইপ লাইনের দিক পরিবর্তন, প্রধান পাইপ লাইন হতে শাখা লাইন বের করা, বড় আকারের পাইপের সঙ্গে ছোট আকারের পাইপের সংযোজন বা বিয়োজন ইত্যাদি করতে যে সাজ-সরঞ্জাম প্রয়োজন হয় এ সরজ্ঞামগুলোই পাইপ ফিটিংস নামে পরিচিত।

পাইপ ফিটিংস ড্রইং করার কৌশলঃ প্রথমে আমরা সাধারন একটি পাইপের ড্রইং করবো। নিম্নোক্ত চিত্রের মত ড্রইং করার জন্য আমাদেরকে ড্রইং কাগজ, পেন্সিল, বোর্ড, ইরেজার ইত্যাদি সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে।

পুর্বের ন্যায় ফ্রন্ট ভিউ ও সাইড ভিউ অংকন করি। প্রয়োজনীয় ডাইমেনশন প্রয়োগ করে নিম্মোক্ত ড্রইংটি অংকন কর।

পাইপ ফিটিংস এর প্রয়োজনীয়তাঃ

ক) পাইপ লাইনে পাইপকে সংযোজন করার জন্য । 

(খ) পাইপ লাইনের দিক পরিবর্তন করার জন্য। 

(গ) প্রধান পাইপ লাইন হতে বিভিন্ন শাখা লাইন বের করার জন্য । 

(ঘ) বড় ব্যাসের পাইপের সংগে ছোট ব্যাসের পাইপের সংযোগ করার জন্য । 

(ঙ) ছোট ব্যাসের পাইপের সংগে বড় ব্যাসের পাইপের সংযোগ করার জন্য। 

(চ) পাইপ লাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। 

(ছ) পাইপ লাইনে বিভিন্ন প্রকার ফিচার বসানোর জন্য। 

(জ) পাইপ লাইনে প্রবাহমান তরল বা গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

 

ওয়ার্কিং ড্রইং সম্পর্কে ধারনা

ওয়ার্কিং ড্রইং কিঃ ওয়ার্কিং ড্রইং হলো একটি পণ্যের তৈরিকৃত রেফারেন্স বা নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ওয়ার্কিং ড্রইং এর প্রধান লক্ষণীয় বিষয়ঃ ওয়ার্কিং ড্রইং এর প্রধান লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে কাজটি নিখুত পরিমাপ সম্পূর্ণ হবে। যেহেতু ওয়ার্কিং ড্রইং ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত খুব সহজেই সংগ্রহ করা যায় সেহেতু কাজটি সাবধানতা অবলম্বন করে সম্পর্ণ করতে হবে।

ওয়ার্কিং ড্রইং এর ব্যবহারঃ এটি প্রায়শই প্রকৌশল ও স্থাপত্যকে নির্দেশ করে তবে কাজের অংকন গুলি নির্মাণের বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। এই অংকন গুলি শিল্পের মান অনুযায়ী গঠিত হয়। যাতে সমস্ত তথ্য সহজে এবং পরিষ্কার ভাবে বুঝা যায়।

ওয়ার্কিং ড্রইং এর প্রধান লক্ষণীয় বিষয়ঃ ওয়ার্কিং ড্রইং এর প্রধান লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যন্ত্রাংশ নিখুতভাবে উৎপাদনের জন্য সকল পরিমাপ এবং চিত্র প্রদান করা হয়ে থাকে। যেহেতু ওয়ার্কিং ড্রইং ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত খুব সহজেই সংগ্রহ করা যায় সেহেতু কাজটি যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করা সহজ হয় ।

ওয়ার্কিং ড্রইং এর ব্যবহারঃ এটি প্রয়শই প্রকৌশল ও স্থাপত্যকে নির্দেশ করে তবে কাজের অংকন গুলি নির্মাণের বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। এই অংকন গুলি শিল্পের মান অনুযায়ী গঠিত হয়। যাতে সমস্ত তথ্য সহজে এবং পরিষ্কার ভাবে বুঝা যায়।

ওয়ার্কিং ড্রইং এর প্রয়োজনীয়তাঃ ওয়ার্কিং ড্রইং এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। এটি দ্বারা যে কোন বস্তুর বিভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গি দেখা যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন পরিমাপ ইত্যাদি পাওয়া যায়। করিগর বা মেশিন অপারেটর বস্তু তৈরির সময় ওয়ার্কিং ড্রইং ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারে। ড্রইং কে এক ধরণের ভাষা বলাই ভাল। দুজন মানুষ যেমন উভয়ের পরিচিত ভাষার মাধ্যমে সহজে ভাবের আদান প্রদান করে, দুজন প্রকৌশলীও (তিনি যে ভাষার, যে দেশেরই হন না কেন) "ড্রইং" ভাষার মাধ্যমে তাদের কাজের তথ্যের আদান প্রদান করতে পারেন। প্রকৌশল বিদ্যায় যুগযুগে "ড্রইং" একমাত্র ও সার্বজনীন ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ভাব প্রকাশের ভাষার মতো ‘ড্রইং’ নির্মাণশৈলীর তথ্য সরবরাহ ও বক্তব্য উপস্থাপনের ভাষা । একজন প্রকৌশলী সেই ভাষাতেই তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তাই নিজেকে প্রকৌশলী হিসেবে তৈরি করতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর এই ভাষাটি (ড্রয়িং) ভালভাবে রপ্ত করতে হয়। এই ভাষাতে যিনি যত ভাল হবেন, প্রকৌশলী হিসেবে তার বক্তব্য তত স্পষ্ট হবে ও তিনি সবার মাঝে উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন।

কোন বস্তু (Object) সম্পর্কে সঠিকভাবে বোঝা বা সেটিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য প্রথমেই দরকার ঐ বস্তুর গঠন, পরিমাপ ও উপাদান সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারণা। ড্রয়িং এর মাধ্যমে কোন বস্তুকে তুলে ধরা হলে সেটিকে ওই বস্তুর ডিজাইন বলা হয়।

কর্মক্ষেত্রে যেকোনো মেশিন স্থাপন, দালান তৈরি, অন্যান্য স্থাপনা তৈরি, ইত্যাদি কাজে, সকল ধরনের প্রয়োজন ও অবকাঠামো বিবেচনা করে প্রথমে তৈরি করা দরকার হয় ড্রইং ডিজাইন। এই ড্রইং করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে প্রয়োজনীয় সকল বস্তুর সব ধরণের পরিমাপ, স্থাপনের জন্য কি ধরনের বা কতটুকু অবকাঠামো প্রয়োজন, ইত্যাদি। ড্রয়িং এর মাধ্যমে ক্রমশ পরিকল্পনাটি পরিপক্ব হয়ে বাস্তবের কাছাকাছি চলে আসে। ডিজাইনে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা ছাড়াও অন্যান্য প্রকৌশলীর পক্ষে সেটি নিরীক্ষণ করা সহজ হয়। এর পর সেই ড্রয়িং এর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করে থাকে।

পৃথিবীর সকল ভাষার যেমন নিজস্ব নিয়মকানুন বা ব্যাকরণ রয়েছে, ড্রয়িং ভাষারও তেমন নিয়ম কানুন ব্যাকরণ রয়েছে। এসকল নিয়মকানুন ভালভাবে রপ্ত করার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলন দরকার।

প্রসঙ্গত আসে কম্পিউটার এইডেড ড্রয়িং এর কথা। বর্তমান সময়ে ড্রইং সহজ করার জন্য কম্পিউটার এইডেড ড্রয়িং এর প্রচলন হয়েছে। এখন কম্পিউটারের কল্যাণে প্রকৌশলীদের জীবন অনেক সহজ হয়েছে। একজন প্রকৌশলী আগের চেয়ে অনেক কম সময়ে অনেক নিখুঁত ভাবে অনেক বেশি ডিজাইন করতে পারেন। বিশেষকরে সংশোধন, পরিবর্ধন, পরিমার্জনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান অসাধারণ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কম্পিউটার শুধু ড্রয়িং কে সহজ করার জন্য, পুরো কাজটি করে দেবার জন্য নয়। যিনি ড্রয়িং ভাল জানেন, কম্পিউটার শুধু তার কাজকে সহজ করে। যিনি ড্রইং ভালোমতো জানেন না, কম্পিউটার তাকে বিশেষ সাহায্য করতে পারবে না। তাই ভাল প্রকৌশলী হবার জন্য হাতে কলমে ড্রইং শিখতে মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি কম্পিউটারে সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের ড্রইং করার কলা কৌশল আয়ত্ব করতে হবে।

 

 

Content added By