এসএসসি(ভোকেশনাল) - আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ - NCTB BOOK

ভূমিকা

একজন ব্যবসা উদ্যোক্তাকে কর্মীদের মাধ্যমে কাজ আদায় করে নিতে হয়। একজন কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা যতই থাকুক না কেন, কর্মস্পৃহা না থাকলে সে কোনো কাজই সুনির্দিষ্টভাবে সম্পন্ন করতে পারবে না। যে সমস্ত উপাদান একজন কর্মীর কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম সেগুলোই হলো প্রেষণা । প্রেষণা একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় । মানুষের কাজের সাথে প্রেষণা সংশ্লিষ্ট । তাই প্রত্যেক মানুষের কর্মে চাই প্রেষণা । কেননা প্রেষণাই মানুষকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে কাজ করতে অনুপ্রেরণা জোগায় । আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা কার্যক্রম কর্মীদের কাজে উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।

Content added By

আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা কার্যক্রমে কর্মীদের কাজে উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত । ইংরেজি ‘Motivation' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো প্রেষণা । এ ইংরেজি শব্দটি ল্যাটিন ‘Movere’ শব্দ হতে এসেছে যার অর্থ হলো 'to move' অর্থাৎ চালনা করা বা গতিশীল করা ।

সাধারণ অর্থে মানুষের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলার আগ্রহ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকেই প্রেষণা বলে।

ব্যাপক অর্থে প্রেষণা হলো প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের কর্মক্ষমতা ব্যবহারের লক্ষ্যে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত ও প্ররোচিত করার প্রক্রিয়া ।

প্রেষণা এমন কিছু বিষয় যা একজন ব্যক্তিকে একটি কার্য উত্তমরূপে সম্পাদন করতে মানসিক শক্তি জোগায় । যেমন- পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের উত্তর সুন্দরভাবে লিখতে পারলে শিক্ষক ভালো নম্বর দেন, সংশ্লিষ্ট ছাত্রের প্রশংসা করে এবং পুরষ্কারস্বরূপ বই, খাতা, কলম উপহার দেন। এগুলো অর্জনের প্রত্যাশায় ছাত্র- ছাত্রীকে লেখাপড়ায় মনোযোগী ও পরিশ্রমী হতে এবং পাঠ উত্তমরূপে তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ বা প্রাণোদিত করে মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে । এ মানসিক শক্তিই প্রেষণা ।

Content added By

প্রেষণা চক্র (Motivation Cycle)

জন্মগতভাবে মানুষ অভাবজনিত প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। তার একটি অভাব বা চাহিদা পূরণ হওয়ার পর আরেকটি অভাব বা চাহিদা সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে । প্রেষণা চক্র হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যাতে কর্মীরা উৎসাহিত হয়ে কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে ব্রতী হয় এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারে। চক্রের আকারে এ প্রক্রিয়া আবর্তিত হয় বলে একে প্রেষণা চক্র বলে । প্রেষণা তিনটি পর্যায়ে চক্রাকারে আবর্তিত হয় ।

যেমন- (১) অভাববোধ, (২) উদ্দেশ্যমূলক আচরণ, (৩) লক্ষ্যবস্তু অর্জন বা উদ্দেশ্য সাধন । প্রেষণা একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া। মানুষের অভাববোধ কখনো শেষ হয় না। একটি অভাব পূরণ হলে আবার নতুন অভাবের সৃষ্টি হয় । আবার সে অভাবটি পূরণ হলে আর একটি অভাব সৃষ্টি হয় । এভাবে জীবনব্যাপি চক্র আবর্তিত হতে থাকে । আর প্রেষণা আছে বলেই মানুষের মধ্যে নতুন নতুন কর্মের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং কর্ম প্রেষণায় উদ্বুদ্ধ হয় ।

চিত্রে প্রেষণা চক্রটি উপস্থাপন করা হলো-

উপরোক্ত প্রেষণার স্তরগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো

১। অভাব বোধ (Need): প্রেষণা জৈবিক ও সামাজিক দুই প্রকারের হয়ে থাকে । মানুষের জৈবিক তাড়নায় যেসব প্রেষণার উদ্ভব ঘটে তাকে জৈবিক প্রেষণা বলে। যেমন- ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যৌনতা প্রভৃতি। সামাজিক প্রেষণা হচ্ছে কৃতিত্ব, প্রভাব-প্রতিপত্তি, খ্যাতি, মর্যাদা ইত্যাদি । মানুষের সমাজসভ্যতা, সাংস্কৃতিক জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে একজন ব্যক্তির জীবনে এসব প্রেষণা সৃষ্টি হয় । 

২। উদ্দেশ্যমূলক আচরণ: অভাব বোধ দূরীকরণের জন্য মানুষ সক্রিয়ভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। প্রয়োজন মেটানোর জন্য কার্যে প্রবৃত্ত করে। এ প্রবৃত্তিকরণকেই উদ্দেশ্যমূলক আচরণ বলে । যেমন- মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়ি-ঘর তৈরি করে । শিশু ক্ষুধার্ত হলে খাবারের জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে । 

৩। উদ্দেশ্য সাধন: মানুষ ক্ষুধার্ত হলে তা নিবৃত্ত করার জন্য কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং এ লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা চালায় এবং শেষ পর্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যটি সম্পাদিত করে। প্রেষণার জন্যই মানুষ নিজের শক্তিকে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভিমুখে চালনা করে থাকে ।

কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্ব (Achievement motivation theory)

শিল্পোদ্যোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রেষণা তত্ত্বগুলোর মধ্যে কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্ব সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য । প্রফেসর ম্যাকলিল্যান্ড ও তার সহযোগী অ্যাটকিনসন কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্বের জনক । কৃতিত্বার্জন প্রেষণা বলতে কোনো একটি কাজ উত্তমরূপে করার প্রবল ইচ্ছাকে বোঝায় ।

নিম্নে কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্বের উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদত্ত হলো : 

১। ম্যাকলিল্যান্ডের মতে, 'কৃতিত্বার্জন প্রেষণা হচ্ছে একটি শিক্ষণীয় প্রেষণা যা ব্যক্তিকে উঁচুমানের কার্য- সম্পাদনে প্রেষিত করে। 

২। অধ্যাপক ম্যানফোর্ড-এর মতে, 'কৃতিত্বার্জন প্রেষণা প্রাণীর সঞ্জীবনী শক্তি, যা তাকে কাজ-কর্মে উচ্চমানের পরিচয় দিতে তাগিদ দেয়'।

SWOT বিশ্লেষণ

১৯৬৯ সালে Business Policy - Tex and Cases বইটিতে প্রথম SWOT বিশ্লেষণের ধারণাটি উপস্থাপন করা হয় । ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবসায় উদ্যোক্তা তার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি আগেই বিশ্লেষণ করে জেনে নিতে পারে। যে পদ্ধতির মাধ্যমে এসব বিষয়ের অনুসন্ধান করা হয় তাকে সামর্থ দুর্বলতা সুযোগ ঝুকি বিশ্লেষণ বলে ।

Pearce & Robinson-এর মতে, ‘SWOT' বিশ্লেষণ হলো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও দুর্বলতা এবং বাহ্যিক সুযোগ ও ঝুকি সমূহকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করার এবং এগুলোর মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টির একটি কৌশল ।

SWOT মডেলে S মানে Strength, W মানে Weakness, O মানে Opportunity, T মানে Threat নিম্নে রেখাচিত্রের মাধ্যমে ‘SWOT' কে দেখানো হলো-

১। Strength (শক্তি বা ক্ষমতা): প্রতিটি ব্যবসায় এমন কিছু অভ্যন্তরীণ উপাদান রয়েছে যা ব্যবসায় কার্যক্রমের অনুকূলে কাজ করে সফলতা অর্জনে সহায়তা করে । এ উপাদানগুলোকে ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় । যেমন : দক্ষ শ্রমিকের নিশ্চয়তা, উদ্যোক্তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, আর্থিক সংগতি ইত্যাদি।

২। Weakness (দুর্বলতা): একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা চালানোর জন্য নানাবিধ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। এ সকল উপাদানকে দুর্বলতা বলা হয়। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এ সকল দুর্বলতা অবশ্যই দূর করার চেষ্টা করতে হবে । যেমন-

(ক) উদ্যোক্তার অনভিজ্ঞতা মূলধনের সমস্যা অদক্ষ শ্রমিক ইত্যাদি

৩। Opportunity (সুযোগ): একজন ব্যবসা উদ্যোক্তা পরিবেশ থেকে যত বেশি সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন, তিনি তত বেশি সফলতার সাথে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন । যেমন -

(ক) নতুন পণ্যের উদ্ভাবন নতুন প্রযুক্তির সুযোগ সরকারী নীতি ইত্যাদি ।

৪ । Threat (হুমকি): ব্যবসায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো ব্যবসা উদ্যোক্তার করার কিছুই নেই । যেমন- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি।

পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত চারটি উপাদান বিশ্লেষণের মাধ্যমে একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক সুবিধাজনক কৌশলটি গ্রহণ করে থাকেন ।

Content added By

পেশা নির্বাচনে উচ্চ কৃতিত্বার্জন প্রেষণা মানুষের প্রেষণা উন্নয়নের একটি বিশেষ গুণ। উচ্চ কৃতিত্বার্জন প্রেষণা ধারণকৃত ব্যক্তির মধ্যে লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

১। চরম উৎকর্ষের প্রতি অঙ্গীকার: উচ্চ কৃতিত্বার্জন প্রেষণা সংবলিত ব্যক্তিগণ চরম উৎকর্ষের মূল্য দিয়ে থাকেন । এরা সব সময় নিজেদের কাছ থেকে অধিক কার্য সম্পাদন আশা করেন। তারা অল্প কর্মে সন্তুষ্ট হন। না। ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক কাজ করাই তাদের উদ্দেশ্য। তাদের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য তারা আন্তরিকভাবে জোর প্রচেষ্টা চালান। কাজের সফলতার মধ্যে তারা আনন্দ পান ।

২। কাজের প্রতি অঙ্গীকার: উচ্চ কৃতিত্বার্জন প্রেষণা সংবলিত ব্যক্তিরা কোনো কাজ করতে অঙ্গীকার করলে ঐ কর্মে নিজেকে পুরাপুরি নিয়োগ করেন এবং কখনই কর্মকে ভুলে যান না। তারা কাজ অসমাপ্ত রাখতে পছন্দ করেন না। ব্যর্থতায় এ ধরনের ব্যক্তিরা ভেঙে পড়েন না। তারা বিশ্বাস করেন যে বড় সাফল্য রাতারাতি আসে না ।

৩। পরিমিত ঝুঁকি গ্রহণে আগ্রহী: এরা খুব সাহসী, অভিমানী এবং যে কোনো কাজে পরিমিত ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে । এসব ব্যক্তি তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও মনোবল সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং সব সময় ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করে । 

৪ । সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ: এ ধরনের গুণসম্পন্ন ব্যক্তিরা সুযোগ সন্ধান করতে ও সুযোগ গ্রহণ করতে বেশ দক্ষ । এরা সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে । সফলতা লাভের জন্য তারা সুযোগগুলোকে বাস্তব কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করেন এবং অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার সাথে বাস্তবায়িত করেন । 

৫। পরামর্শ গ্রহণে আগ্রহী: এসব ব্যক্তি অত্যন্ত বাস্তবমুখী । প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণে তারা কখনও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করেন না। সাহায্যের প্রয়োজন হলে তারা বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের কাছে না গিয়ে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেন এবং তার পরামর্শ গ্রহণ করেন । তারা অন্যের পরামর্শ গ্রহণ করলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিজেরা যথেষ্ট সাহসী হন । 

৬। সময় জ্ঞান: উচ্চ কৃতিত্বার্জন প্রেষণাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সময় জ্ঞান অত্যন্ত তীক্ষ্ণ । এরা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করতে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হন । এ ধরনের ব্যক্তিগণ চ্যালেঞ্জিং কাজের মধ্যেই সর্বাধিক আনন্দ পেয়ে থাকেন । 

৭। নতুন ও অপরিচিত অবস্থায় আশাবাদ: কৃতিত্বার্জন প্রেষণাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অপরিচিত অবস্থায় সব সময় আশাবাদী থাকেন । নিজের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা দিয়ে সার্বিক অবস্থা ও সংশ্লিষ্ট উপাদানসমূহকে বুঝতে চেষ্টা করেন এবং পরিশেষে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হন । পরিশেষে বলা যায় যে, কৃতিত্বার্জন প্রেষণা মূলত একটি সামাজিক প্রেষণা । সমাজে শিক্ষা গ্রহণের সাথে সাথে মানুষ সমাজ হতে এই প্রেষণা লাভ করে থাকে । 

৮। দক্ষ ও অভিজ্ঞ: উচ্চ কৃতিত্বার্জন প্রেষণা সংবলিত ব্যক্তিগণ তাদের নিজের কাজে যথেষ্ট দক্ষ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয় । এ সমস্ত ব্যক্তি সাহসের সঙ্গে উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয় ।

Content added || updated By

পেশা নির্বাচনের জন্য একজন ব্যক্তিকে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা করা আবশ্যক

১। পেশা নিশ্চিত করাঃ কর্মসংস্থানের জন্য নিজের শিক্ষা, দক্ষতা, পারিবারিক ইচ্ছা, ঝোঁক প্রবনতা, আর্থিক চাহিদা এবং আর্থিক সংগতির বিষয়গুলি বিবেচনা করে চাকুরীভিত্তিক অথবা আত্মকর্মসংস্থান মুলক পেশা নির্ধারণ করতে হবে।

২। নিজের সামর্থ-দূর্বলতা সূযোগ-ঝুঁকি নির্ধারণ করাঃ বিশেষ করে যদি আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশা নির্বাচন করা হয় সেক্ষেত্রে নিজের সামর্থ এবং দূর্বলতা চিহ্নিত করে পেশা নির্বাচন করলে তা কল্যানকর ও সাফল্যের বুনিয়াদ রচনা করে,সেইসাথে বাহ্যিক সুযোগ এবং ঝুঁকিসমূহ যথাসময়ে চিহ্নিত করা আবশ্যক। এসব বিষয় বিবেচনা করে পেশা নির্ধারণ করলে তা যথার্থ হবে মর্মে আশা করা যায়।

৩। আর্থিক সুবিধা ও নিরাপত্তা বিবেচনা করাঃ পেশা নির্বাচনে আর্থিক সুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ন, তাই চাকুরী করার ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা বিবেচনা পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। স্বনিয়োজিত পেশায় নিয়োজিত হলে আর্থিক বিনিয়োগের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

৪। সামাজিক মর্যাদা ও স্বীকৃতিঃ যে কোনো পেশা নির্বাচনে সামাজিক স্বীকৃতি ও মর্যাদার বিষয়টি অগ্রগন্য এবং এবিষয়টি যেকোনো পেশায় অংশগ্রহনকারীকে বিবেচনা তথা পেশায় অংশগ্রহনের জন্য একটি অনিবার্য শর্ত হিসেবে কাজ করে।

৫। ভবিষৎ উন্নতি এবং কেরিয়ার সম্ভাবনাঃ যে কোনো পেশা গ্রহনে কেরিয়ার সম্ভাবনা একটি বিশেষ বিবেচনার বিষয়। তাই পেশা শুরুর আগেই সংশ্লিষ্ট পেশায় অংশগ্রহনকারীকে ভবিষতের সম্ভাবনার বিষয়টি একটি বিশেষ বিবেচ্য হিসেবে গন্য করা হয়।

Content added || updated By

সঠিক পেশা নির্বাচনে যেসব তথ্য সামগ্রির ব্যবহার করা হয়, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

(ক) তথ্য : মানুষের জীবনে বহুমুখী চাহিদা রয়েছে। এর চাহিদা পূরণের জন্য কাজের বিনিময়ে অর্থ ও সুযোগ-সুবিধা পেতে চায় । প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে সকল প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা প্রদত্ত হয় তাকে আর্থিক প্রেষণা বলে ।

১। ন্যায্য বেতন: কাজের বিনিময়ে শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট হারে যে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে তাকে বেতন বলে । 

২। বোনাস: বছরের শেষে অথবা কোনো উৎসবের সময় নিয়মিত বেতন ছাড়াও অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দেওয়া হলে তাকে বোনাস বলে। বোনাস হলো একধরনের আর্থিক সুবিধা। এ সুবিধা পেলে কর্মীদের মধ্যে কাজ করার উদ্দীপনা জাগে । 

৩। বাসস্থান সুবিধা: বাসস্থান মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত । তাই প্রেষণা দানের অন্যতম উপায় হলো কর্মীদের মৌলিক অভাব পূরণে বাসস্থান সুবিধা প্রদান করা । 

৪। চিকিৎসা সুবিধা: কর্মীদের সুস্বাস্থ্য উচ্চ মনোবলের পক্ষে অপরিহার্য। তাই কর্মীদের এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তার পরিবারের চিকিৎসা প্রদান কর্মীদের উদ্দীপ্ত করার একটি উল্লেখযোগ্য উপায় । 

৫। পরিবহন সুবিধা: অনেক শ্রমিকই কর্মক্ষেত্র হতে দূরে অবস্থান করে। তাই কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার জন্য পরিবহন সুবিধা প্রদান করা হলে কর্মীরা উৎসাহিত হয় । 

৬। রেশন সুবিধাঃ নির্দিষ্ট সমায়ান্তে কম মূল্যে রেশন প্রদানের মাধ্যমে কর্মীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের মাধ্যমেও কর্মীদের উৎসাহিত করা যায় । 

৭। আর্থিক নিরাপত্তা: ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশন, যৌথ বিমা, কল্যাণ তহবিল ইত্যাদি ব্যবস্থা করতে পারে। এ ব্যবস্থা করলে কর্মীরা উৎসাহ সহকারে কাজ করে । 

৮। চাকরির নিরাপত্তা: সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও চাকরির নিরাপত্তা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকলে কর্মীর মনোযোগ নষ্ট হয়। সুতরাং কোনো কর্মীর কাজের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে হলে তার চাকরির নিরাপত্তা থাকা প্রয়োজন । 

৯। সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ: কাজের উপযোগী সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ কর্মীকে কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলে ও তার কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করে ।

১০। আকর্ষণীয় কাজ: কাজে তৃপ্তি না পেলে কর্মী উৎসাহিত হয় না। তাই কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ করে দক্ষতা অনুযায়ী কার্যভার অর্পণ করতে হবে । এতে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কর্মী কাজ করবে ।

১১। প্রশিক্ষণের সুযোগ: প্রশিক্ষণ কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এতে যে কোনো সমস্যা সমাধানে কর্মীর মনোবল বৃদ্ধি পায় । ফলে কর্মী আগ্রহ ও উৎসাহ সহকারে কাজ করে ।

১২। শ্রমিক সংঘ গঠন করার সুযোগঃ শ্রমিক সংঘ গঠন করার অধিকার বর্তমানকালে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে শ্রমিকদের অন্যতম দাবি হিসেবে বিবেচিত হয় । তাই শ্রমিক সংঘ গঠন করার সুযোগও কর্মীদের উৎসাহের একটি কারণ । 

১৩। প্রতিষ্ঠানের সুনাম: কর্মী যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তার সুনাম কর্মীদের মাঝে উৎসাহ জোগায় । ভালো প্রতিষ্ঠান কর্মীরা সহজে ছাড়তে চায় না । বরং তা তাদের গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় । 

১৪। সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের চাহিদা পূরণের পর প্রত্যেক কর্মী সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় । এমতাবস্থায় কর্মীকে সম্মানজনক পদমর্যাদা দান করলে উৎসাহের সাথে কাজ করবে ।

Content added By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. প্রেষণা কী? 

২. প্রেষণাকে কোনো ব্যক্তির আচরণের চালিকাশক্তি বলা হয় কেন ? 

৩. প্রেষণা চক্র কী ? 

৪. প্রেষণা চক্রটি রেখাচিত্রের মাধ্যমে দেখাও । 

৫. প্রেষণার স্তর কয়টি? 

৬. কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্বের জনক কাকে বলা হয় ?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. SWOT কী ? 

২. প্রেষণা চক্র বলতে কী বোঝায়? 

৩. কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্ব আলোচনা কর । 

৪. প্রেষণার স্তর কয়টি ও কী কী উল্লেখ কর । 

৫. SWOT বিশ্লেষণ কৌশলটি আলোচনা কর ।

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. ব্যবসায় উদ্যোগে প্রেষণার গুরুত্ব আলোচনা কর । 

২. প্রেষণা চক্র চিত্রসহ বর্ণনা কর । 

৩. SWOT বিশ্লেষণ কর ।

Content added By