এসএসসি(ভোকেশনাল) - আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ - আত্মকর্মসংস্থান | NCTB BOOK

১। শিল্পোদ্যোক্তা (Industrial entrepreneur): যে সমস্ত উদ্যোক্তা রাষ্ট্রীয় সম্পদের রূপগত পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উদ্দেশ্যে কারবার বা শিল্প প্রতিষ্ঠান গঠন পরিচালনা করে থাকে তাদেরকে শিল্পোদ্যোক্তা বলে। দেশে বৃহদায়তন কারবার গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব উদ্যোক্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন ।

২। বাণিজ্যিক উদ্যোক্তা (Commercial entrepreneur): এ ধরনের উদ্যোক্তা শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের বণ্টন প্রণালির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এরা উৎপাদকের কাছ থেকে ব্যাপক হারে পণ্য দ্রব্য ক্রয় করে ভোক্তাদের কাছে বিক্রয় করে। খুচরা বা পাইকারি ব্যবসায়ী এ শ্রেণির উদ্যোক্তার অন্তর্ভুক্ত।

। সেবা পরিবেশন উদ্যোক্তা (Entrepreneurship to serve the service): যে সকল উদ্যোক্তা মানুষের জনকল্যাণমূলক এবং অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে সেবাকর্মের সৃষ্টি ও সেগুলোর বিতরণের উদ্দেশে কারবার গঠন করেন তাকে সেবা পরিবেশক উদ্যোক্তা বলে । যথা-ব্যাংক, পরিবহন সংস্থা, বিজ্ঞাপনী সংস্থা ইত্যাদি ।

সংজ্ঞা ও পরিধি 

ক্ষুদ্র ব্যবসা: অপেক্ষাকৃত কম পুঁজি বিনিয়োগ করে ক্ষুদ্র পরিসরে পণ্যদ্রব্য বা সেবা প্রদান অথবা পণ্যদ্রব্য ও সেবাসামগ্রী ক্রয় করে কাছে বিক্রয় কার্যে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে ক্ষুদ্র ব্যবসা বলে । বাংলাদেশে সরকারিভাবে স্বল্প পুঁজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র ব্যবসা বলে গণ্য করা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসার পরিধি ব্যক্তি পর্যায়েই সর্বাধিক বাস্তবায়িত হয় তবে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার আলোকে ক্ষুদ্র বা ব্যক্তীকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়।

ক্ষুদ্র ব্যবসার সুবিধাসমূহ ( Advantage of Small Business)

নিম্নে ক্ষুদ্র ব্যবসার সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো : 

১। সহজ গঠনপ্রণালী: ক্ষুদ্র ব্যবসা গঠন করা খুব সহজ। যে কোনো লোক তার পছন্দ মতো ক্ষুদ্র ব্যবসা সংগঠিত করে ব্যবসায়িক কার্য পরিচালনা করতে পারে । 

২। মূলধন গঠনের সুবিধা: ক্ষুদ্র ব্যবসা স্বল্প পুঁজির প্রয়োজন হয়। ফলে এর মালিক সহজেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মূলধনের সংস্থানের মাধ্যমে ব্যবসা গঠন করতে পারে।

৩। আইনের জটিলতামুক্ত: ক্ষুদ্র ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার জন্য আইনগত কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না । তাই সহজে এরূপ ব্যবসা গঠন করা যায় । 

৪। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: ক্ষুদ্র ব্যবসায় সাধারণত এক মালিকানার ভিত্তিতে সংগঠিত হয়। মালিক নিজেই ব্যবসার সকল সম্পত্তির মালিক বিধায় এরূপ ব্যবসা যে কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় । 

৫। পরিবর্তনশীলঃ ভোক্তাদের রুচির সাথে তাল মিলিয়ে যে কোনো সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা সম্ভব । এতে ব্যবসায়ীর পক্ষে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয় । 

৬। তত্ত্বাবধান: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের মালিক নিজেই ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন । এতে তার পক্ষে ব্যবসায়ের যাবতীয় বিষয় ব্যক্তিগতভাবে তত্ত্বাবধান করা সহজ হয় । 

৭। ভোক্তাদের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এর মাধ্যমে ভোক্তাদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপিত হয় । ফলে ভোক্তাদের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা যায়।

৮। ব্যক্তিগত দক্ষতার বিকাশ: ক্ষুদ্র ব্যবসার মালিককে ব্যবসায়িক বিভিন্ন কার্যক্রম নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করতে হয় । এতে ব্যবসাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়, যা তার ব্যবসায়িক দক্ষতা পরিচায়ক । 

৯। ভোক্তাদের সুবিধা: ক্ষুদ্র ব্যবসা যে কোনো স্থানে গঠন করা যায়। এ ধরনের ব্যবসা ভোক্তাদের আবাসিক এলাকার আশপাশেই সাধারণত গড়ে ওঠে। এতে ভোক্তারা তাদের চাহিদামাফিক পণ্য ক্রয়ের সুযোগ পায় । 

১০। ব্যক্তিগত উদ্যোগ: ক্ষুদ্র ব্যবসার অর্জিত সুফল সবটুকুই মালিকের নিজের প্রাপ্য। তাই ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন ও সুনাম বৃদ্ধির জন্য মালিকের প্রচেষ্টার অভাব দেখা দেয় না ।

ক্ষুদ্র ব্যবসার অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Small Business)

ক্ষুদ্র ব্যবসা হতে অর্জিত সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে । যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১। মূলধনের অপর্যাপ্ততা: ক্ষুদ্র ব্যবসার মূলধনের স্বল্পতা একটি প্রধান অসুবিধা । মূলধনস্বল্পতার কারণে এটি অনেক সময় ব্যবসায়িক সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না । 

২। স্থায়িত্বের অভাব: ক্ষুদ্র ব্যবসার অস্তিত্ব মালিকের অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল । যে কোনো কারণে মালিকের অস্তিত্ব বিলীন হলে ব্যবসারও বিলোপ ঘটে । 

৩। অসীম দায়: ক্ষুদ্র ব্যবসার মালিককে ব্যবসায়ের সমুদয় দায় বহন করতে হয়। কোনো কারণে ব্যবসায় দেনা হলে মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও দায়বদ্ধ হয় । 

৪। আয়তনগত সীমাবদ্ধতা: স্বল্প মূলধন নিয়ে এ ধরনের ব্যবসা গঠিত হয় বিধায় সীমিত পরিসরে এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে এর মাধ্যমে কখনও বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধা ভোগ করা যায় না।

৫। কর্মচারীদের অসুবিধা: ক্ষুদ্র ব্যবসার আয়তন ছোট হওয়ার দরুণ এ কারবারে নিযুক্ত কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা যেমন পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হয় না এতে দক্ষ কর্মচারী অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায় । 

৬। মালিকের খামখেয়ালিপনা: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের মালিকের খামখেয়ালিপনার জন্য কর্মচারীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় । অনেক সময় বিনা কারণে কর্মচারীদের বিদায় করে দেওয়া হয় ।

Content added By